বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) পরিচালিত সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেথা যায়, বিশ্বব্যাপী এক বিলিয়নেরও বেশি অর্থাৎ ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ স্থূলতায় আক্রান্ত রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত তিন দশক ধরে (৩২ বছরের মধ্যে) শিশুদের মধ্যে স্থূলতার হার চারগুণ বেড়েছে এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বেড়েছে দ্বিগুণ।
গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৯৯০ সাল থেকে ২০২২ সালের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের স্থূলতার হার দ্বিগুণেরও বেশি এবং ৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে এই হার চারগুণেরও বেশি। একই সময়ের মধ্যে কম ওজন হিসাবে বিবেচনা করা মেয়ে, ছেলে এবং প্রাপ্তবয়স্কদের অনুপাত যথাক্রমে এক-পঞ্চমাংশ, এক-তৃতীয়াংশ এবং অর্ধেক কমে গেছে।
নতুন এই গবেষণায় ১৯০ টিরও বেশি দেশের ২২০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের ওজন এবং উচ্চতার পরিমাপের বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, কীভাবে ১৯৯০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) পরিবর্তিত হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সাথে এনসিডি রিস্ক ফ্যাক্টর সহযোগিতার গবেষণাটিতে প্রায় ১ হাজার ৫০০ গবেষক অবদান রেখেছেন।বৃহস্পতিবার বিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যানসেটে এই গবেষণা প্রকাশিত হয়। বিশ্বজুড়ে ১৯০ টিরও বেশি দেশে ২২০ মিলিয়নেরও বেশি লোকের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এই গবেষণাপত্রটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী মেয়েদের জন্য, স্থূলত্বের হার ১৯৯০ সালের ১ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২২ সালে এসে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ হয়েছে। ছেলেদের জন্য, একই সময়ের মধ্যে বৃদ্ধি ছিল ২ দশমিক ১ শতাংশথেকে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ।
নারীদের জন্য, বিশ্বব্যাপী স্থূলতার হার একই সময়ে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ এবং পুরুষদের জন্য ৪ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে ১৪ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে, শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের জন্য কম ওজনের মানুষের হার কমেছে, যার অর্থ হল স্থূলতা বিশ্বের অনেক দেশে অপুষ্টির সবচেয়ে সাধারণ রূপ।
গবেষণাপত্রের সিনিয়র লেখক এবং ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক মজিদ ইজ্জাতি বলেন, ‘বহুসংখ্যক মানুষ স্থূলতার সাথে বসবাস করছে। যদিও অনেক ধনী দেশে স্থূলতার হার হয় কিছুটা কমেছে বা স্থির রয়েছে, তারপরও বিশ্বের অন্যত্র স্থূলতা দ্রুত বাড়ছে। এছাড়া কম ওজনের বিষয়টি বিশ্বব্যাপী কমতে থাকলেও অনেক দেশেই স্থূলতা এখনও একটি তাৎপর্যপূর্ণ সমস্যা হিসেবেই রয়ে গেছে।’
ডব্লিউএইচওর পুষ্টি প্রধান ফ্রান্সেস্কো ব্রাঙ্কা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘অতীতে, আমরা স্থূলতাকে কেবল ধনীদের সমস্যা হিসেবে ভাবতাম। মূলত স্থূলতা পুরো বিশ্বের জন্যই সমস্যা।’
ইজ্জাতি শিশুদের মধ্যে স্থূলত্বের হার বৃদ্ধিকে ‘খুবই উদ্বেগজনক’ বলে অভিহিত করেছেন। একই সময়ে তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষের এখনও পর্যাপ্ত খাবার নেই।
গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুয়ায়ী, ৮৮০ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক এবং ১৫৯মিলিয়ন শিশু স্থূলতায় আক্রান্ত। টোঙ্গায়, আমেরিকার সামোয়া এবং নাউরুতে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ হারের বেশি স্থূলতায় আক্রান্ত মানুষ রয়েছে।
ইজ্জাতি বলেন, ‘একই সময়ে, কয়েক মিলিয়ন মানুষ এখনও অপুষ্টিতে আক্রান্ত, বিশেষ করে বিশ্বের কিছু দরিদ্র অংশে। উভয় প্রকারের অপুষ্টিকে সফলভাবে মোকাবেলা করার জন্য স্বাস্থ্যকর, পুষ্টিকর খাবারের প্রাপ্যতা এবং ক্রয়ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
ডব্লিউএইচও এর মহাপরিচালক ড. টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস বলেছেন: ‘স্থূলতা রোধে বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পথে ফিরে আসার জন্য সরকার ও সম্প্রদায়ের মানুষজনকে ডব্লিউএইচও এবং জাতীয় জনস্বাস্থ্য সংস্থার প্রমাণভিত্তিক নীতি দ্বারা সমর্থিত কাজ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, স্থূলতার হার মোকাবিলায় উচ্চ চিনি রয়েছে এমন পণ্যের ওপর কর আরোপ এবং স্কুলে স্বাস্থ্যকর খাবার দেওয়ার মতো ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। এর জন্য বেসরকারি খাতের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। কারণ তাদের পণ্যের কারণে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর যে প্রভাব পড়ে সেটার জন্য তাদের দায়বদ্ধ হতে হবে।
ইংল্যান্ডের শিশু এবং তরুণদের জন্য কাজ করা জাতীয় ক্লিনিকাল ডিরেক্টর প্রফেসর সাইমন কেনি বলেছেন: ‘এই পরিসংখ্যানগুলো পিতামাতার জন্য ততটাই উদ্বেগজনক হবে যতটা এনএইচএসের জন্য। স্থূলতা প্রতিটি মানব অঙ্গের সিস্টেমকে প্রভাবিত করে। এটি অল্প বয়সে একটি শিশুর জীবনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। তাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং অন্যান্য অনেক অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়ায়, যা আয়ু কমিয়ে দেয় এবং অসুস্থতার কারণ হতে পারে।’