যুদ্ধবিরতির হলে সুবিধা পাবে রাশিয়া : জেলেনস্কি
রাশিয়া হামলা জোরদার করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কি।
রয়টার্স জানিয়েছে, পশ্চিমাদের দ্রুত সমাধানের আহ্বানের প্রেক্ষিতে শুক্রবার (১৭ মে) এক সাক্ষাতকারে তিনি আরো বলেছেন, ‘কিয়েভ কেবল ন্যায্য শান্তি চায়।’
জেলেনস্কি আরো আকাশ প্রতিরক্ষা এবং যুদ্ধজাহাজ পাঠাতে মিত্রদের কাছে ফের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘রাশিয়ার জন্যে সবচেয়ে সুবিধাজনক বিষয় হলো রুশ অঞ্চলে পশ্চিমাদের দেওয়া অস্ত্র ব্যবহারে ইউক্রেনের ওপর নিষেধাজ্ঞা।’
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাশিয়ার সেনাদের ধীরে ধীরে অগ্রসর হওয়ার প্রেক্ষাপটে জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেন তার প্রতিরক্ষা লাইন ধরে রাখবে এবং রাশিয়ার বড়ো ধরনের যেকোনো অভিযান থামিয়ে দেবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘কেউ হাল ছেড়ে দিতে যাচ্ছে না।’
এদিকে অলিম্পিকের জন্যে সাময়িক যুদ্ধবিরতির যে আহ্বান ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ জানিয়েছেন, তা প্রত্যাখ্যান করেছেন জেলেনস্কি।
তিনি বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি হলে সুবিধা পাবে রাশিয়া। যুদ্ধবিরতির সুযোগে সেনা ও গোলাবারুদ পাঠানোর আরো সুযোগ পেয়ে যাবে মস্কো।’
জেলেনস্কি আগামী মাসে সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে চীন ও উন্নয়নশীল বিশ্বের অনেক দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘চীনের মতো বিশ্ব খেলোয়াড়দের রাশিয়ার ওপর প্রভাব রয়েছে। এই ধরনের দেশগুলো যতো আমাদের পাশে থাকবে, রাশিয়াকে ততোটাই মূল্য চুকাতে হবে।’
জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা চাই ন্যায্য শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ হোক। পশ্চিমারা চাচ্ছে যতো দ্রুত সম্ভব যুদ্ধ শেষ হোক। তাদের কাছে সময় এবং আমাদের এটাই চাওয়া।’
রুশ আগ্রাসনের মুখে খারকিভ থেকে হাজার হাজার লোক পালাতে বাধ্য হয়েছে।
এ প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘খারকিভের পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে। তবে সেখানে স্থিতিশীলতা নেই।’
সাক্ষাতকারে জেলেনস্কি আকাশ প্রতিরক্ষা প্রসঙ্গে বলেন, ‘দেশ রক্ষায় প্রয়োজনের তুলনায় ইউক্রেনের কেবল ২৫ শতাংশ আকাশ প্রতিরক্ষা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদের ১২০ থেকে ১৩০টি এফ-১৬ যুদ্ধ বিমান দরকার।’ তিনি এসব যুদ্ধাস্ত্র দিতে পশ্চিমাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
গাজায় ১০ দিন ধরে চিকিৎসা সামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে না
গাজা উপত্যকায় গত ১০ দিন ধরে কোন চিকিৎসা সামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের নতুন হামলা চালানোর প্রেক্ষাপটে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও) শুক্রবার (১৭ মে) এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
ডব্লিওএইচও’র মুখপাত্র তারিক জাসারেভিক বলেছেন, ইসরায়েল কর্তৃক রাফা ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়ায় কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বশেষ চিকিৎসা সামগ্রী পেয়েছি ৬ মে’র আগে।’
উল্লেখ্য, হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গত ৭ মে রাফাহতে প্রবেশ করে ইসরায়েলি বাহিনী। এরপর তারা মিসরের সাথে গাজার সীমান্ত রাফা ক্রসিং বন্ধ করে দেয়।
এই রাফাহ ক্রসিং মানবিক সরবরাহের জন্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রসিং হিসেবে বিবেচিত।
এদিকে, গাজা দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির মুখে রয়েছে বলে সতর্ক করে আসছে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা। এ প্রেক্ষিতে ইসরায়েলের দিক থেকে গাজার কেরাম শালোম এবং এরেজ ক্রসিং কার্যত বন্ধ রয়েছে।
জাসারেভিক বলেন, ‘ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলো চালানোর মতো প্রয়োজনীয় জ্বালানি নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ রয়েছে। গাজার হাসপাতালগুলোর প্রতিমাসে ১৮ লাখ লিটার জ্বালানি প্রয়োজন হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাফাহ ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়ার পর কেবল এক লাখ ৫৯ হাজার লিটার জ্বালানি গাজায় প্রবেশ করেছে, যা স্পষ্টত খুবই কম।’
ফিলিস্তিনী সংগঠন হামাস গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আকস্মিক বড়ো ধরনের হামলা চালায়।
এ সময়ে তারা প্রায় এক হাজার ১৭০ ইসরায়েলীকে হত্যা এবং ২৫০ জিম্মি করে। এখনও তাদের কাছে ১২৮ জিম্মি আটক রয়েছে।
জবাবে ৭ অক্টোবর ইসরায়েল গাজায় প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলা শুরু করে, যা এখনও চলছে। গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত এ হামলায় ৩৫,৩০০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
কেজরিওয়ালের ব্যক্তিগত সচিব বৈভব গ্রেফতার
ভারতের দিল্লির রাজ্যসভা সাংসদ স্বাতী মালিওয়াল শারিরিক হিনস্থার দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ব্যক্তিগত সচিব বৈভব কুমারকে।
এনডিটিভি জানিয়েছে, শনিবার (১৮ মে) দুপুরে দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে তাকে আটক করার কথা জানানো হয়।
এর পর পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আম আদমি পার্টির (আপ) সাংসদ স্বাতীর দায়ের করা এফআইআরের প্রেক্ষিতে গ্রেফতার করা হয়েছে বৈভবকে।
দিল্লি পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, এমসে স্বাতীর মেডিক্যাল পরীক্ষার রিপোর্টও তাদের হাতে পৌঁছেছে। তাতে আপ সাংসদের ডান গাল এবং বাঁ পায়ে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। জখম রয়েছে চোখের নিচেও।
শনিবার দুপুরে এই ঘটনার নতুন ভিডিও প্রকাশ করেছে আপ। সকালে দিল্লি পুলিশকে ট্যাগ করে এক্স হ্যান্ডল পোস্টে আপ প্রধান কেজরিওয়ালের বাড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিকৃত করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন স্বাতী।
তারপরেই ভিডিও প্রকাশ করে পদক্ষেপ করে আপ। প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, মুখ্যমন্ত্রী কেজরির বাসভবন থেকে পুলিশি ঘেরাটোপে বেরিয়ে আসছেন স্বাতী।
এর আগে স্বাতীর অভিযোগের তথ্যপ্রমাণ এবং নমুনা সংগ্রহে শুক্রবার (১৮ মে) কেজরিওয়ালের বাসভবনে গিয়েছিলেন দিল্লি পুলিশ এবং ফরেন্সিক দল।
তারপরেই আপ নেত্রী তথা দিল্লির মন্ত্রী অতিশী প্রথম ভিডিও ফুটেজটি প্রকাশ করে দলেরই সাংসদ স্বাতীর বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলেছিলেন। এরপরেই স্বাতী অভিযোগ তোলেন যে, ভিডিওটি বিকৃত করা হয়েছে। এক্স পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমার কাছে তথ্য আছে যে, ওই লোকেরা এখন বাড়ির সিসিটিভিতে কারসাজি করছে।’
আপ প্রকাশিত কেজরিওয়ালের বাসভবনের প্রথম ফুটেজে স্বাতীকে সোফায় বসে নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে উচ্চৈঃস্বরে বাক্যবিনিময় করতে শোনা যায়। তারপরেই স্বাতীর পক্ষ থেকে সিসিটিভি জালিয়াতির অভিযোগ তুলে পোস্ট করা হয়।
স্বাতীর দাবি, গত ১৩ মে কেজরিওয়ালের সঙ্গে দেখা করতে তার বাসভবনে গিয়েছিলেন তিনি। সে সময়ই তাকে শারীরিক হেনস্থা করেন কেজরিওয়ালের ব্যক্তিগত সচিব বৈভব কুমার। আপ সাংসদের দাবি, বৈভব তাকে ৭-৮টি চড় এবং পেটে লাথি মারেন।
গত বৃহস্পতিবার দিল্লি পুলিশের কাছে এফআইআর দায়ের করেন স্বাতী। ওই দিন রাতেই স্বাতীর মেডিক্যাল পরীক্ষাও করানো হয়েছিল দিল্লির এমসে। শুক্রবার ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৬৪ ধারার জবানবন্দি দেন স্বাতী।
তার পরেই স্বাতী এই ঘটনা নতুন মোড় নেয়। এই ঘটনায় দলের পুরনো অবস্থান থেকে সরে গিয়ে শুক্রবার বিকালে আপ মন্ত্রী অতিশী দাবি করেন, স্বাতী বিজেপির এজেন্ট হয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরীওয়ালকে ফাঁসাতে গিয়েছিলেন। কেজরিওয়ালে সেদিন বাসভবনে না থাকায় তিনি মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বৈভবকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছেন বলে দাবি করেন অতিশী।
অথচ গত ১৪ মে আপের রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় সিং বিবৃতি দিয়ে বৈভবের হাতে স্বাতীর হেনস্থা হওয়ার কথা স্বীকার করেছিলেন।
বৃহস্পতিবার বৈভবের নামে এফআইআর দায়ের হয়েছিল। শুক্রবার স্বাতীর বিরুদ্ধে দিল্লির সিভিল লাইন থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বৈভব। বিজেপির সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ প্রসঙ্গে স্বাতী বলেন, ‘দুই দিন আগে দল আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল। আসলে বৈভব দলকে শাসিয়েছেন, যদি তিনি গ্রেফতার হন, তাহলে দলের সব গোপন তথ্য ফাঁস করে দেবেন।’
ইসরায়েলের অস্ত্র ভর্তি জাহাজ বন্দরে ভিড়তে দেয়নি স্পেন
ইসরায়েলের অস্ত্র আমদানির একটি জাহাজ বন্দরে ভিড়তে দেয়নি স্পেন। অস্ত্র ভর্তি ওই জাহাজটি স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত কার্টেজেনা বন্দরে ভিড়তে চেয়ে আবেদন জানায়। কিন্তু সে আবেদন প্রত্যাখান করে দেশটি।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) দেশটির যোগাযোগ মন্ত্রী ওসকার পুয়েন্তে এ তথ্য জানান। বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এক্স বাতায় পুয়েন্তে বলেন, মারিয়েন ড্যানিকা নামের একটি জাহাজে করে ইসরায়েলের জন্য অস্ত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ওই জাহাজটি আগামী ২১ মে কার্টেজেনা বন্দরে ভিড়তে চেয়ে আবেদন জানায়।
স্প্যানিশ পত্রিকা এল পাইস জানিয়েছে, ড্যানিশ পতাকাবাহী জাহাজটি ২৭ টন বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ে ভারতের মাদ্রাজ থেকে ইসরায়েলের হাইফা বন্দরে যাচ্ছে।
এদিকে ইসরায়েলের জন্য অস্ত্র বহনকারী জাহাজকে নিজেদের বন্দরে নোঙ্গর করতে দেয়নি বলে জানিয়েছেন স্প্যানিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল আলবারেস। কী কারণে এমনটি করা হয়েছে সে বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি জাহাজটির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানও।