কবি আফজাল চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকীতে লন্ডনে দোয়া মাহফিল



সাঈদ চৌধুরী
কবি আফজাল চৌধুরী

কবি আফজাল চৌধুরী

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান কবি প্রফেসর ও প্রিন্সিপাল আফজাল চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী ছিল ৯ জানুয়ারি। এ উপলক্ষে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিশেষ কর্মসূচি পালন করেছে। লন্ডনে সংলাপ সাহিত্য-সংস্কৃতি ফ্রন্টের উদ্যোগে কবির স্মরণে আলোচনা, খতমে কোরআন ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ইস্ট লন্ডনের গ্রীনলেন আদম মসজিদে অনুষ্ঠিত মোনাজাতে অংশ গ্রহণ করেন সংলাপ চেয়ারম্যান ও সময় সম্পাদক সাঈদ চৌধুরী। মোনাজত পরিচালনা করেন মুফতি গোলাম কিবরিয়া । ওলামায়ে কেরাম ও বিশিষ্টজনের মধ্যে অংশগ্রহণ করেন শায়েখ আহমদ নাজির, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, শাহিন আহমদ, হামিদ হোসেন প্রমুখ। প্রিয় কবির জান্নাতুল ফেরদৌস কামনা করেন উপস্থিত কবি প্রেমিক ও মুসল্লিগণ।

কবি আফজাল চৌধুরী (১৯৪২-২০০৪) তাওহীদবাদী নান্দনিক সাহিত্য রচনা করে এক নবতর ধারার সৃষ্টি করেছেন। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী কিছু কবিতা ও ফররুখ আহমদের ইসলামী সাহিত্য সম্ভার এই ধারায় ছিল প্রাণপ্রবাহ। ষাটের দশকে অনিকেত গোষ্ঠির বিপরীতে সুনিকেত বৃত্তির এই নতুন মাত্রা বেগবান হয়।

সেসময় বিশ্বব্যাপী কমিউনিজমের ধ্বজাধারী কায়েমি স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক-লেখক ও পৌত্তলিকতার দ্বারা প্রভাবিত ও অনুপ্রাণিত লেখকগোষ্ঠী অবিভক্ত বাংলার সাহিত্যস্রষ্টা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তখন রাশিয়ান বলয়ে এবং কলকাতাকে কেন্দ্র করে যারা লেখেন তাদের বিপরীতে ঢাকা কেন্দ্রিক বিশ্বাসী কবিদের চেতনাগত সংঘাত চলছিল। দুটি শক্তির মোকাবেলায় দাঁড়ানো শুধু সাহসের ব্যাপার ছিল না, সাহিত্যে অভাবনীয় দক্ষতা ও পারদর্শিতার পরিচয়ও দিতে হয়েছে। কবি আল মাহমুদ, কবি আফজাল চৌধুরী প্রমুখ এই ধারায় নেতৃত্ব দেন।

কবি আফজাল চৌধুরী শুধু চেতনাগত পার্থক্য নয়, শব্দ প্রয়োগেও ভিন্নতার সৃষ্টি করেন। তিনি আমাদের সাহিত্যে মূর্তিপূজা বা প্রতিমাপূজার আচার ও বিশ্বাস থেকে ফিরিয়ে বাঙালি মুসলিম মধ্যবিত্তের স্বকীয় ভাবনা প্রকাশে সচেষ্ট হন। এটা এতোটাই কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল, তার প্রেরণায় উজ্জীবিত হলেও সাহিত্য চর্চার উপাত্ত সংগ্রহের জন্য নতুন লেখিয়েরা বিশ্বাসের বিপরীত ধারায় বসবাস করতে হত।

তখনকার কবিদের লেখায় গ্রেকো রোমান বহুদেববাদ রুপকভাবে ব্যবহৃত হত। ইউরোপ এবং উত্তর আফ্রিকায় খ্রিস্টান ধর্মের প্রসারের আগে বহু ঈশ্বরবাদী সংস্কৃতির ব্যবহার ছিল। এটি ব্যাপক অর্থে প্রসারিত সমকালীন ধর্মগুলোতে বিশেষত অধিকাংশ পূর্বাঞ্চলীয় ধর্ম এবং আমেরিকা, মধ্য এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকার আদিবাসী সমাজেও বিদ্যমান ছিল।

কবি আফজাল চৌধুরী প্রচলিত পৌত্তলিকতা ও নাস্তিক্যবাদের বিপরীতে সংলাপ সাহিত্য-সংস্কৃতি ফ্রন্ট নামে একটি সাহিত্য আন্দোলনের যাত্রা করেন।অল্পদিনের মধ্যে নিজস্ব বিশ্বাসের আলোকে নতুন কমিটমেন্ট নিয়ে একঝাক তরুণকে স্বকীয় ভাবনা প্রকাশে উজ্জীবিত করতে সক্ষম হন।

আমি নিজেও সংলাপের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম। আফজাল চৌধুরী চেয়ারম্যান এবং আমি সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। সংলাপের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকেই এখন জাতীয় ভাবে প্রতিষ্ঠিত।

কল্যাণব্রতের কবি খ্যাত শিক্ষাবিদ আফজাল চৌধুরী বিচিত্র রচনায় সমৃদ্ধ করে গেছেন বাংলা সাহিত্যের ভান্ডার। শিল্প-সাহিত্যের নানা অঙ্গনে তিনি অসংখ্য কালজয়ী রচনা সৃষ্টি করেছেন। তিনি একজন বিশ্বাসী কবি কন্ঠ। আধুনিক মুসলিম সাহিত্যের এক মহারাজ। বীরদর্পে বাংলা সাহিত্যের সব শাখায় সফল বিচরণ করে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।

আফজাল চৌধুরী শুধু আদর্শবাদী শিল্পীই ছিলেন না, তিনি সমাজ সংস্কারকও ছিলেন। তিনি সংস্কার চেয়েছিলেন সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মাধ্যমে। তিনি ছিলেন অসীম প্রাণ স্ফূর্তির অধিকারী অদম্য সাহসী মানুষ। পলায়নপরতা ও হতোদ্যম তার স্বভাবে ছিল না। তিনি ছিলেন একক এবং সমষ্টিগতভাবে নিরন্তন গতিশীল।

‘কল্যাণব্রত’ আফজাল চৌধুরীর প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ‘বলিও আমার প্রেম ঈশ্বরের ভষ্ম নয় ভূমা/ আলোকিত কোলাহলে সমতল আত্মার সঙ্গীত/ রাশি রাশি পুলকের বিন্দু বিন্দু বোধের অতীত/ অন্য এক বোধ আর স্পন্দমান আলোর উপমা/ আলোক সে নির্ভুলের আন্তরিক বলীয়ান ক্ষমা/ বলিও আমার প্রেম ঈশ্বরের ভষ্ম নয়-ভুমা।’

কবি আফজাল চৌধুরীর কবিতায় অবেগ-অনুভূতি সহজ কথা ও ছন্দে পরিস্ফুটিত। এর উচ্চারণ বলিষ্ঠ এবং প্রত্যয়ী। জীবন-বিশ্বাসের গভীর থেকে উত্থিত।
’মৃত্যুর মোহন নৃত্য বার বার চোখ বুঁজে দেখি,/ পরলোকে ছায়া ফেলে এই কুঞ্জে দাঁড়াই যখনি/ খুলে দাও দাও খুলে রহস্যের নিখিল দরোজা,/ তোমার গৃহস্থ যারা তাদের স্বচ্ছন্দ বিচরণে/ নিভৃত এ কুঞ্জ হোক ওপারের বিমূর্ত আঙিনা/ শিরা উপশিরাগামী রক্তস্রোত নাশ করে স্নায়ু/ এবং গোগ্রাসে গিলে শতাব্দীর মস্ত অজগর’
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ ‘কল্যাণব্রত’ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পর ত্রৈমাসিক ‘কন্ঠস্বর’ (কবিতা সংখ্যা-১৯৭০)এ লিখেছেন “আমাদের কাব্যক্ষেত্রে ষাটের অঙ্গন যেসব উদ্যোগী তরুণের আশান্বিত পদপাতে সরব হয়েছিল, আফজাল চৌধুরী তাদের অন্যতম। অন্য লোকের মত আমরাও যারা সেই নতুন কবিতা-চেষ্টার প্রতিটি অনিবার্য ও সজীব প্রবণতাকে উদগ্রীব প্রত্যাশা নিয়ে লক্ষ্য করে চলছিলাম সে সময়, নিশ্চিতভাবে অনুভব করেছিলাম, আফজাল চৌধুরীর অপরাগ হাত এমন কিছু উল্লেখযোগ্য উপহার দেবার প্রতিশ্রুতি দেখাচ্ছে যা সজীব ও প্রাণবন্ত এবং যা আগামী সময়ের আকাঙ্খিত দিনগুলোয় কবিতার স্বচ্ছল প্রয়াসে আমাদের কাব্য-ভাঁড়ারকে সমৃদ্ধ করবে।

আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ আরো বলেন, ‘কল্যাণব্রত’ পাঠের সময় এই কাব্যের যে গুণটি বড় হয়ে পাঠকের চোখে ভাসে তা হলঃ এর স্বকীয়তা। আফজাল চৌধুরীর কন্ঠস্বর আলাদা ও স্বকীয়, স্বাদে ও চরিত্রে গতানুগতিক কবিতা থেকে আলাদা। তার কবিতার ডালে ডালে শব্দের যে অবাক বিস্ময় গুচ্ছ গুচ্ছ হয়ে ফুটে আছে, তা যে কোন পাঠককেই আকর্ষণ করবে।

আফজাল চৌধুরীর প্রাণস্পর্শী প্রজ্ঞাদীপ্ত বক্তৃতা-ভাষণ ছিল সাহিত্য আসরে বিরল বিস্ময়। তার কন্ঠের যাদুকরী উচ্চারণে দর্শক শ্রোতা সম্মোহিত ও আকৃষ্ট হতেন। কবিতার ধ্বনিসঙ্গীতে নিপিড়িত মানুষের কথা তিনি বলতেন। তার বহুমাত্রিক সাহিত্য সম্ভার সমকালীন কবি সাহিত্যিকদের ভাবনায় ফেলে দিয়েছিল। মোকাবেলায় কোন পথ না পেয়ে তাদের পছন্দের কাগজ সমূহে তাকে বর্জনের চেষ্টা করা হয়েছে অত্যন্ত জঘন্যভাবে।

কবিতার পাশাপাশি কাব্যনাট্যেও শক্তিমান এক পুরুষ হিসেবে আফজাল চৌধুরী নিজের লেখনীর প্রমান দিয়েছেন। ‘হে পৃথিবী নিরাময় হও’ কাব্যনাটকে বিষয় ও প্রকরণগত সৃজন শৈলীতে বহু মাত্রিকতার সংযোজন ঘটিয়েছেন তিনি।

বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ এ কাব্যনাট্য সম্পর্কে বলেন, ‘হে পৃথিবী নিরাময় হও’ কাব্যনাট্য এক অসাধারণ নাট্যগুণ আর প্রতিবাদগুণ সম্পন্ন গ্রন্থ। প্রতিবাদ প্রচলিত সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে কলুষ কালিমার বিরুদ্ধে। এই কাব্য নাট্যখানি আমাদের সাহিত্যে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচনকারী সফল কাব্যনাট্য।

বিশিষ্ট সাংবাদিক আখতারুল আলম ‘হে পৃথিবী নিরাময় হও’ কাব্যনাট্যকে স্বতন্ত্র এক ধারার সূচনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, আমাদের সাহিত্য ক্ষেত্রে নিদারুন হৈ চৈ আর গোলযোগের মধ্যে এই গ্রন্থখানি এক আশ্চর্য ব্যতিক্রম।

কবি আল মুজাহিদী আফজাল চৌধুরীর ‘হে পৃথিবী নিরাময় হও’ কাব্যনাট্য সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে কবিকে এ শতাব্দীর সবচে প্রতিবাদী কবিকন্ঠ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

কবি আফজাল চৌধুরীর ২য় কাব্যগ্রন্থ ‘শ্বেতপত্র’ এবং তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘সামগীত দুঃসময়ের’ প্রতিটি কবিতা পুষ্প সৌরভে পাঠককে মুহিত করে। তারপর ’শবমেহেরের ছুটি’, ’নয়া পৃথিবীর জন্য’, ’বিশ্বাসের দিওয়ান’, ’এই ঢাকা এই জাহাঙ্গীরনগর’ প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থে নতুন রুপ ও গ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে। তার সনেট এবং আত্মজৈবনিক কবিতা আমাদের সাহিত্যে এক ভিন্ন মাত্রার সংযোজন।

কবি আফজাল চৌধুরী কবিতা, কাব্যনাট্য এবং প্রবন্ধের পাশাপাশি চমৎকার নাটকও লিখেছেন। হযরত শাহজালাল (র) এর সিলেট আগমনের পটভূমিতে লেখা তার নাটক ‘সিলেট বিজয়’। একটি অত্যন্ত মঞ্চ সফল নাটক। তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল ব্যতিক্রমী এই নাটক।

বার্নাবাসের বাইবেল অনুবাদ আফজাল চৌধুরীর এক অনবদ্য সৃষ্টি। ব্যাপকভাবে পাঠক সমাদৃত এই গ্রন্থ বাংলা ভাষী প্রতিটি শিক্ষিত মানুষ স্মরণে রাখতে বাধ্য। অনুবাদে তার বিশেষ দক্ষতা ও শক্তিমত্তার প্রামাণ্য দলিল এটি।

সম্পাদনার ক্ষেত্রেও উজ্জল স্বাক্ষর রেখেছেন কবি আফজাল চৌধুরী। আফগানিস্তানের অতীত বর্তমান এবং ভবিষ্যতের আবর্তকে ধারণ করে সুবিশাল গ্রন্থ ‘আফগানিস্তান আমার ভালবাসা’ তিনি ও কবি আল মাহমুদ যৌথ সম্পাদনা করেন।

‘ঐতিহ্য’ নামে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে একটি সাহিত্য ত্রৈমাসিক সম্পাদনাও তার আরেক উজ্জ্বল সুকৃতি। সত্য প্রকাশে, অন্যায়ের প্রতিবাদে, জুলুমের বিরুদ্ধে আফজাল চৌধুরী ছিলেন সোচ্চার ও বজ্রকন্ঠ। সমাজনীতি ও রাজনীতির কাব্য মঞ্চেও ছিলেন বীরের ভূমিকায়। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মিছিলে তার কলম ছিলো ক্ষুরধার ও তেজোদ্বীপ্ত।

’মানুষই সম্পূর্ণ দ্বীপমাত্র নয়/ প্রতিটি মানুষের সম্পূর্ণের অংশ মাত্র।/ মৃত্যু আমাকে খর্ব করে/ কারণ আমি জড়িত মানবতার সঙ্গে,/ সুতরাং নিজেকে জিজ্ঞেস করোনা, কার জন্যে/ মৃত্যু ঘন্টা বাজে, জেনো, সে তোমার জন্যে,/ সে তোমার জন্যে।’

’কি-রূপ নি:সঙ্গ আজ মনে হয় নিজেকে এ পার্থিব প্রবাসে/ চারপাশে এতো ভীড়, ক্রস্ত-চাপ, বিরতিবিহীন কর্মযোগে/ কোথায় আমার নিজ স্থায়ী কক্ষ, কোথায় সে অন্তিম শয়ান?/ কি আমার পরিণতি, বিজয়ী না শহীদের রক্তাপ্লুত লাশে/ যাত্রাশেষ? জানি না তা। বুঝি না এ ভঙ্গুর দেহটি চিররোগে/ ক্ষয়ে যাবে, নাকি হবে জনারণ্যে সমাদৃত নন্দিত প্রয়াণ?/

কি হবে, কি হবে ওহে, বলে দাও কোন যোগাযোগ/ আমার শুরু ও শেষ, কোথায় কোথায় মুক্তি, কোন বিনিয়োগে?/ হে সত্য, তোমার রূপ এখনও প্রচ্ছন্ন এই জীবন বিন্যাসে/ হে জীবন, পারিনি তো তোমার দারুণ ক্ষতে যথাযোগ্য ত্রাণ/ স্নেহে বিছিয়ে দিতে। সূর্যোদয় লক্ষ্য বটে এই সন্ধ্যাকাশে।/ এখনও প্রান্তিক দূর্গে যুদ্ধ চলছে; কুরবান হয়েছে এই জান/ এইটুকু বলতে পানি-জীবন ব্যয়িত নয় কেবল সম্ভোগে/ কেবল কৈবল্য যপে অঙ্ক কষাকষি নয় যোগে ও বিয়োগে।’
আফজাল চৌধুরী ১০ মার্চ ১৯৪২ সালে হবিগঞ্জের খাগাউড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০০৪ সালের ৯ জানুয়ারি ইন্তেকাল করেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি সর্বকনিষ্ঠ। বড় ভাই প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, প্রাক্তন এমএনএ ও সংসদ সদস্য মরহুম এ কে লতিফুর রহমান চৌধুরী (কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী) এবং মেঝো ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাষা সৈনিক ও রাজনীতিবিদ মরহুম আলতাফুর রহমান চৌধুরী (ইয়াকুত চৌধুরী)।

কবি আফজাল চৌধুরী হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিকুলেশন (১৯৫৯), হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক (১৯৬১), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় বিএ (অনার্স) (১৯৬৪) ও এমএ (১৯৬৫) সম্পন্ন করেন।

১৯৬৯ সালে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্য হিসেবে তার কর্ম জীবনের শুরু হয়। প্রথম কর্মস্থল ছিল রাজশাহী সরকারী ইন্টারমেডিয়েট কলেজ (১৯৬৯ -’৭০)। পরবর্তীতে সিলেট সরকারী এমসি ইন্টারমেডিয়েট কলেজ (১৯৭০-’৭২), চট্রগ্রাম সরকারী ইন্টারমেডিয়েট কলেজ (১৯৭২-৭৩), সিলেট সরকারী কলেজ (বর্তমান সরকারী এমসি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ১৯৭৫ -৮০ ও ১৯৯০-৯৫) এবং সিলেট সরকারী মহিলা কলেজে (১৯৮৯-৯০) অধ্যাপনা করেন। হবিগঞ্জ সরকারী বৃন্দাবন কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন ১৯৯৬-৯৯ পর্যন্ত। এ পদে কর্মরত থাকাবস্থায় ১৯৯৯ সালের ৯ মার্চ সরকারী চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

হবিগঞ্জ সরকারী বৃন্দাবন কলেজের প্রিন্সিপাল থাকাবস্থায় এ কলেজের উন্নয়নে তিনি প্রভুত অবদান রাখেন এবং ৭টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু করেন।
মাঝখানে ১৯৮০ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি প্রেষণে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এর ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র সিলেট ও ঢাকার যথাক্রমে ’উপ-পরিচালক’ (১৯৮০-৮১) ও ’পরিচালক’ (১৯৮২-৮৪) এবং ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার ’স্কুলসমূহের পরিদর্শক’ ছিলেন।

তিনি ছিলেন ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র সিলেটের প্রতিষ্ঠাতা ’উপ-পরিচালক’ । ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ঢাকার ’পরিচালক’ থাকাকালে সাহিত্য পত্রিকা ’ঐতিহ্য’ এর প্রকাশ ও সম্পাদনা, সেমিনার, আলোচনা সভা প্রভৃতির মাধ্যমে দেশের বরেণ্য কবি , সাহিত্যিক, সাংবাদিক সহ বুদ্ধিজীবিদের উপস্থিতিতে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নবজাগৃতির সৃষ্টি করেন।

১৯৮৩ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ওআইসি’র পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলন উপলক্ষে ’আফগানিস্তান আমরা ভালবাসি’ সংকলন গ্রন্থের প্রকাশ প্রভৃতি ছিল তার অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচায়ক।

গ্রন্থপঞ্জি : কবি আফজাল চৌধুরীর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৫টি। এরমধ্যে কাব্যগ্রন্থ ৮টি, কাব্যনাটক ১টি, নাটক ১টি, প্রবন্ধ গ্রন্থ ৪টি ও অনুবাদ গ্রন্থ ১টি। তার অপ্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৬টির ও অধিক। রচনাসমগ্র প্রকাশিত হলে তা দেড় হাজার পৃষ্ঠা ছাড়িয়ে যাবে।

প্রকাশিত গ্রন্থ : কাব্যগ্রন্থ : কল্যাণ ব্রত (১৯৬৯, দ্বি. সং. ২০০৮), শ্বেতপত্র (১৯৮৩), সামগীত দু:সময়ের (১৯৯১), শবমেহেরের ছুটি (২০০৫), নয়া পৃথিবীর জন্য (২০০৬), বিশ্বাসের দিওয়ান (২০০৭), বন্দী আরাকান ও অন্যান্য কবিতা (২০১৮), এই ঢাকা এই জাহাঙ্গীরনগর (২০১১)। কাব্যনাটক : হে পৃথিবী নিরাময় হও (১৯৭৯)। নাটক : সিলেট বিজয় (২০০৫)। প্রবন্ধ গ্রন্থ : ঐতিহ্যচিন্তা ও রসুল প্রশস্তি (১৯৭৯, ৪র্থ সং. ২০০৪), সিলেটে সূফী সাধনা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০০৮), তাঁর কাব্যালোকে সৈয়দ আলী আহসান (২০১২), মক্কার পথ (২০১৬) । অনুবাদ গ্রন্থ : বার্নাবাসের বাইবেল (১৯৯৬, দ্বি. সং. ২০০৫)।

অপ্রকাশিত রচনা : কবিতা : খোশাহাল খান খটকের জন্য পঙক্তিমালা, অন্য গোলার্ধে হৃদয়, শাশ্বতের পক্ষে কবিতা, ঐতিহাসিক মর্সিয়া ও অন্যান্য কবিতা, অনুবাদ কবিতা : জালালুদ্দীন রুমির কবিতা (২০১৪), আলী শরীয়তীর কবিতা, কাব্যনাটক : বাঁশী, গীতিনকশা : সবুজ গম্বুজে ঢাকা ফুল, নাটক : ক্ষুধিত ক্যাম্পাস, প্রবন্ধ গ্রন্থ : কবিতার সংসারে জটিলতা, প্রতিশ্রুত কথকতা, সমকালীন সাহিত্যের ধারা, নান্দনিক ভুবন, মুহম্মদ আসাদের মহাজীবন প্রভৃতি।
কবি আফজাল চৌধুরী ২০০১ সালে সিলেট বিভাগের মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ’রাগীব-রাবেয়া সাহিত্য পুরস্কার’ এবং ২০০৪ সালে মরণোত্তর ’কিশোর কন্ঠ সাহিত্য পুরস্কার’ লাভ করেন।

কবি আল মাহমুদের ভাষায় বলতে পারি, কবি আফজাল চৌধুরী বাংলা সাহিত্যে এবং কাব্যলোকে অনন্য নকীবের ভূমিকায় সরব ছিলেন। যতদিন বেঁচে ছিলেন এক অসাধারণ মেধা, প্রজ্ঞা ও প্রতিভায় নিজেকে রেখেছেন বিপুল ভাবে সক্রিয়। তার কবিতা বাংলা সাহিত্যে অমূল্য সম্পদ।

কবির একান্ত সান্নিধ্যে থাকা কবি ও সমালোচক মুকুল চৌধুরী তার জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণা মূলক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি আফজাল চৌধুরীর অপ্রকাশিত মহামূল্যবান লেখাসমূহ প্রকাশের প্রয়াস অব্যাহত রেখেছেন কবি আফজাল চৌধুরী ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে।

লেখক: লন্ডন প্রবাসী। সাংবাদিক, কবি ও কথাসাহিত্যিক।

নিউইয়র্কে লায়লা হাসান’র বৈশাখী মেলা ও বাংলা বর্ষবরণের আহ্বান



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
একুশে পদক প্রাপ্ত নৃত্য শিল্পী, বীর মুক্তিযোদ্ধা লায়লা হাসান

একুশে পদক প্রাপ্ত নৃত্য শিল্পী, বীর মুক্তিযোদ্ধা লায়লা হাসান

  • Font increase
  • Font Decrease

নিউইয়র্কে শতকণ্ঠে ১৪৩০ বাংলা বর্ষবরণ, মঙ্গল শোভাযাত্রা ও বৈশাখী মেলা উদযাপনের আহ্বান করেছেন একুশে পদক প্রাপ্ত নৃত্য শিল্পী, বীর মুক্তিযোদ্ধা লায়লা হাসান।

রোববার (১৯ মার্চ) সন্ধ্যায় তিনি নিউইয়র্কে জ্যাকসন হাইটসের জুইস সেন্টারে শতকণ্ঠে বর্ষবরণের এ আয়োজনের চতুর্থ মহড়ায় অংশ নেন। এর আগে আরো তিনটি মহড়া অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানটি আয়োজন করছেন এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড, সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল লিটন জানান, এতে গান গাইবেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এবং কলকাতা থেকে অংশ নিবেন কমলিনী মুখোপাধ্যায় ও আরো অনেকে।

জ্যাকসন হাইটসের জুইস সেন্টারে শতকণ্ঠে বর্ষবরণ আয়োজনের চতুর্থ মহড়া

এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন লেখক, চিকিৎসক হুমায়ুন কবির, সংগীত পরিচালক মহিতোষ তালকদার তাপস এবং উপমহাদেশের খ্যাতনামা সঙ্গীতজ্ঞ মুত্তালিব বিশ্বাস। মুত্তালিব বিশ্বাস বলেন, “আমি মুগ্ধ হয়ে ৪ ঘণ্টার মহড়া উপভোগ করেছি। আমাদের শত বিভাজনের মধ্যে এক হওয়ার মূল মন্ত্র বাঙালিয়ানা সংস্কৃতি আমাদের একত্রিত করে। বিশাল এই আয়োজনটি সফল করতে সবার সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন।”

হুমায়ুন কবির বলেন, “আমাদের প্রথম ও শেষ কথা আমরা বাঙালি। বিশ্বব্যাপী আমাদের এই বাঙালিয়ানা প্রকাশ করার সুযোগ পাওয়া যায় এমন বৃহৎ আয়োজনে। নানান প্রভাবে আমরা মানবিকতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি, কিন্তু সংস্কৃতি আমাদের মানবিক করে তোলে। এই আয়োজন শতকণ্ঠের হলেও এখানে যুক্ত হবে কোটি কণ্ঠ এই প্রত্যাশা করি।”


আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা লায়লা হাসান বলেন, “উপমহাদেশের খ্যাতনামা সঙ্গীতজ্ঞ মুত্তালেব বিশ্বাসের উপস্থিতিতে সবাই মিলে আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন তাতে আমি সম্মানিত বোধ করছি। আহ্বায়ক হিসেবে আমি আন্তরিকভাবে কাজ করব। সবার সহযোগিতা নিয়ে ঐতিহাসিক এ আয়োজনকে সাফল্যমণ্ডিত করতে চাই।” তিনি আগামী ১৪ ও ১৫ এপ্রিলের এ উৎসবে উত্তর আমেরিকার সব অভিবাসীদের অংশগ্রহণেরও আহ্বান জানান।

;

রোমাঞ্চকর দুবাই মরুভূমির ডেজার্ট সাফারি



তোফায়েল পাপ্পু, দুবাই (সংযুক্ত আরব আমিরাত) থেকে
দুবাই মরুভূমির ডেজার্ট সাফারি

দুবাই মরুভূমির ডেজার্ট সাফারি

  • Font increase
  • Font Decrease

দারুণ স্থাপত্যের সব অট্টালিকা নিয়েই পুরোটা শহর। এটা মূলত কোন দেশ নয়। অনেকেই এই শহরটাকে কোন একটা দেশ মনে করে থাকেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি রাজ্য অর্থাৎ একটি সিটির নাম দুবাই। পুরো শহরজুড়ে উঁচু উঁচু দালান। একেকটা যেন আকাশ ছুঁতে চায়, ডিজাইনে-নান্দনিকতায় ছাড়িয়ে যাওয়ার লড়াইটাও স্পষ্ট। শহর থেকে একটু বাহিরে গেলেই দেখা মিলে ভিন্ন দৃশ্য। রাস্তার দু'পাশে দিগন্ত জোড়া বালুকাবেলা। অনেকটা আঁকা-বাকা রাস্তা। যেমনটা এখানকার রাজপথে তেমন একটা দেখা যায় না।

সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড উপভোগ

একদিকে যেমন বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু দালান দেখতে দর্শনার্থীরা ভিড় করেন এখানে, অন্যদিকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফুলের বাগান দেখতেও দর্শনার্থীদের কমতি নেই। তেমনি দুবাইয়ের মরুভূমি না দেখলে যেন মনে হবে দুবাই ভ্রমণ করা হয়নি। একটা আফসোস থেকে যাবে। বিশেষ করে আরবের দেশগুলোকে মরুভূমির দেশ বলে আখ্যায়িত করা হয়। তাই দুবাই বা সংযুক্ত আরব আমিরাতে এসে মরুভূমি না দেখলে আফসোস থেকেই যাবে। মরুভূমি দেখতে হলে যেতে হবে দুবাই শহরের বাহিরে।

মরুভূমির ডেজার্ট সাফারি

দুবাই মরুভূমি সাফারি একটি অভিনব অভিজ্ঞতা যা আপনাকে স্থানীয় জীবনধারা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে পরিচিত করে দেবে। দুবাই মরুভূমি সাফারি দেশের উত্তরপশ্চিম এলাকা থেকে শুরু হয় এবং অনেক কম বর্ষার একটি সমতল এলাকায় পরিচর্যা করা হয়।

দুবাই সাফারি মরুভূমি দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ। এটি একটি মরুভূমি সাফারি অভিজ্ঞতা যা দর্শকদের দুবাইয়ের বিশাল এবং সুন্দর মরুভূমির ল্যান্ডস্কেপ অন্বেষণ করার সুযোগ দেয়।

আমিরাতের একটি জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ

এমনিতে মরুভূমির কথা মনে হলে ছোটবেলা থেকে একটা ছবিই স্মরণ হতে পারে, অ্যরাবিয়াননাইটসের সেই আলিফ লায়লার কথা। ভোগ-বিলাসের সেই জীবনের কথা। ওমান সীমান্তের কাছে বা এর আশে পাশে রয়েছে মরু এলাকা। দুবাই শহর থেকে প্রায় ৮০-১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরে অবস্থিত ডেজার্ট সাফারি এলাকা।

মরুভূমির সূর্যাস্ত

প্রাইভেট গাড়ি, বাস অথবা ট্যাক্সি করে যেতে হবে ওখানে। সড়কের পাশে গাড়ি পার্কিং করার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ির মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া হবে মরুভূমির ভিতরে ক্যাম্পের পাশে। সাফারিটি সাধারণত একটি ৪ঢ৪ গাড়িতে একটি রোমাঞ্চকর ডুন ব্যাশিং রাইড দিয়ে শুরু হয়, যেখানে দর্শকরা বালির টিলায় উপরে এবং নীচে গাড়ি চালানোর অ্যাড্রেনালিন রাশ অনুভব করতে পারে। গাড়ি চালানো শুরু থেকে প্রায় ৩ থেকে ৪ মিনিট চড়ার মধ্যেই অনুভূত হবে এক অসাধারণ রোমাঞ্চ। মরুভূমির উপর দিয়ে উঁচু উঁচু বালুর টিলা বেয়ে গাড়ি চড়াটা যে কত আনন্দের তা সরেজমিন না গেলে বুঝার উপায় নেই। গাড়ি একবার বালির পাহাড়ে উঠে তো আবার নিচে। মনে হবে এই বুঝি উল্টে যাবে গাড়ি।এতোদিন যা হলিউডের সিনেমায় দেখেছেন তার অভিজ্ঞতাটা এখানে আসলে বুঝা যাবে। মরুভূমি পেরিয়ে উঁচু থেকে নিচুতে ছুটতে থাকা গাড়িগুলো যেন বালির সঙ্গে যুদ্ধ করছে। এই যে গাড়ি কাত হয়ে যাওয়া কিংবা প্রায় উল্টে যাওয়া এটিই এই ডেসার্ট সাফারির সেরা বিনোদন। এখানে যারা গাড়ি চালান তাদের প্রত্যেকের রয়েছে ডেজার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স। মনে মনে ভয় ঢুকে যাবে তাদের ড্রাইভিংয়ে। কিন্তু নিরাপদ থাকবেন আপনি। তবে হ্যা, হার্টে সমস্যা থাকলে এই রাইডে যাওয়ার ব্যাপারে কিছুটা বিধি-নিষেধও আছে!

 ঐতিহ্যবাহী আরব আতিথেয়তা

টিলা বাশিং রাইডের পরে, দর্শকরা একটি ঐতিহ্যবাহী বেদুঈন-স্টাইল ক্যাম্পসাইট উপভোগ করতে পারে যেখানে তারা ঐতিহ্যবাহী আরব আতিথেয়তা অনুভব করতে পারে এবং উটের চড়া, মেহেদি পেইন্টিং এবং শিশা ধূমপানের মতো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড উপভোগ করতে পারেন।

মরুভূমি সাফারি

মরুভূমি সাফারি একটি ভারী জিনিস, এবং এটি সুরক্ষিত ও কর্তব্যশীল হতে হবে। এখানে যাওয়ার পূর্বে নিশ্চিত হতে হবে যে স্থানীয় গাইডসহ সাফারি করছেন যা আপনাকে সুরক্ষা এবং জিজ্ঞাসা করতে সাহায্য করবে। মরুভূমি সাফারি আপনাকে অনেক অভিজ্ঞতা দেবে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অর্থহীন স্থানগুলো রয়েছে যেমন মরু ডেজার্ট এবং স্থানীয় বস্তুতেও অভিজ্ঞতা দেওয়া হয়। এই সাফারি পর্যটকদের সাধারণত সন্ধ্যা থেকে রাত বেলা পর্যন্ত চলে। সাফারি শুরু হয় আরব আদমির সাথে একটি জীবনযাপনে যেখানে আপনি উফানপূর্ণ আবহাওয়া এলাকার অসাধারণ দৃশ্য, শুকনো রেগিস্তান, সুন্দর সূর্যাস্ত এবং দুনিয়ার সবচেয়ে বড় স্থানীয় সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা দেখতে পারবেন।

মরুভূমির উট

সাফারির অংশ হিসেবে দুবাই রেগিস্তান সফারি, স্কি বোর্ড সাফারি, বাগি সাফারি এবং ফালকন সাফারি, হাম্বার রাইডিং, ক্যামেল সাফারি, বিভিন্ন আকর্ষণ যেমন হাই ডিজার্ট ক্যাম্প, বেলনা চালানো, ক্যামেল রাইড, বেল্ট বাজি শো এবং ট্রাডিশনাল আরবি ডিনার জমিয়ে থাকে। আপনি যদি চান তবে আপনি একটি টেন্টে থাকতে পারেন এবং শান্তি এবং সুবিধা একটি স্বপ্নসুঞ্চনীয় অভিজ্ঞতা।

দুবাইয়ের এমন রোমাঞ্চের জীবন খুঁজতে চাইলে মরুভূমিতে যেন আসতেই হবে! সামগ্রিকভাবে, দুবাই সাফারি মরুভূমি একটি অনন্য এবং অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা যা দর্শকদের ঐতিহ্যবাহী বেদুঈদ জীবনধারা এবং আরবীয় মরুভূমির সৌন্দর্যের একটি আভাস দেয়।

;

চট্টগ্রাম থেকে কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইট চালুর ঘোষণা



তাইফুর রহমান, কাতার করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম
কাতার এয়ারওয়েজ

কাতার এয়ারওয়েজ

  • Font increase
  • Font Decrease

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে অবস্থানরত প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আগামী বছরের মার্চে চট্টগ্রাম থেকে ফ্লাইট চালু করবে কাতার এয়ারওয়েজ।

এক ঘোষণায় কাতার এয়ারওয়েজ জানায়, প্রবাসীদের ভ্রমণ আরামদায়ক ও নিরবিচ্ছিন্ন করতে আগামী ২০২৪ সালের ১১ মার্চ চট্টগ্রাম থেকে কাতার সরাসরি ফ্লাইট চালু করা হবে।

এই ঘোষণায় আরও নতুন ৬টি গন্তেব্য, ১১টি রুটে পুনরায় ফ্লাইট চালু এবং ৩৫ রুটে ফ্লাইট বাড়ানোর কথা জানায় কাতার এয়ারওয়েজ।

চট্টগ্রাম ছাড়া নতুন রুটগুলো হলো-সাউথ সুদানের জুবা, কঙ্গোর কিনশাসা, ফ্রান্সের লিওঁ এবং তলুজ, ইন্দোনেশিয়ার মেদান ও তুরস্কের ট্রাবজোন।

এদিকে নতুন এই ঘোষণায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রবাসীদের মধ্যে একটি স্বস্তির সুবাতাস বইছে।

এর আগে কাতার থেকে ঢাকায় গিয়ে তারপর আবার চট্টগ্রামে পৌঁছাতে হত প্রবাসীদের। কাতার-চট্টগ্রাম সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনায় ওই অঞ্চলের প্রবাসীদেরকে আর ভ্রমণ জটিলতায় পরতে হবে না।

;

মরুর বুকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফুলের বাগান



তোফায়েল পাপ্পু, দুবাই করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম
মিরাক্কেল গার্ডেন

মিরাক্কেল গার্ডেন

  • Font increase
  • Font Decrease

কবির ভাষায় ভালোবাসা আর যত্ন দিয়ে মরুভূমিতেও ফুল ফোটানো যায়। তবে এ বিখ্যাত উক্তিটির বাস্তবতাও পাওয়া গেল দুবাইয়ে। যেখানে ভালোবাসা আর অতি যত্নে এমন অসম্ভবকেই সম্ভব করা হয়েছে। মরুভূমির উত্তপ্ত বালিতে যেখানে গাছ খুঁজে পাওয়াটা কঠিন, সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে ফুলের বাগান। যার নাম দেওয়া হয়েছে মিরাক্কেল গার্ডেন। সুন্দর চিরকাল-ই সুন্দর । কিন্তু এখানে না আসলে অদ্ভুত সুন্দর দেখা হতো না। কিছু সুন্দর, কিছু মুহূর্ত, কিছু আবেগ, ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

এমিরেটস এয়ারলাইন্সের এয়ারবাস

রাজ্যটাই যেন ফুলের। চারিদিকে ফুল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে নানা দৃশ্য। একটু উপর থেকে দেখলে মনে হয় এ যেন এক ফুলের সাগর। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফুলের বাগান এটি। এখানে প্রবেশ করে কারও বোঝার উপায় নেই মরুভূমির কোন দেশে আছি নাকি চিরসবুজ কোনো উদ্যানে আছি। চারদিকে নানা রঙের বাহারি ফুলের সমারোহ। ফুল দিয়ে যে কত অবাক করা আর দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা তৈরি করা সম্ভব তা দুবাই মিরাকল গার্ডেন না দেখলে বোঝা যাবে না। কারণ ফুল মানুষকে কতটুকু আনন্দ দিতে পারে তা দর্শনার্থীদের ভিড় দেখলেই বোঝা যায়।

রাশি রাশি ফুল গাছ

পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু দালান দুবাইয়ের বুর্জ খলিফার পরেই মিরাক্কেল গার্ডেন এখন বিশ্ব পর্যটকদের কাছে দারুণ আকর্ষণীয় এক স্থান। এাঁনে গেলে সব বয়সের মানুষের মনটাকে নিমিষেই ভালো করে দেয়। মরুভূমির দেশেও যে আরও অনেক কিছুই আছে যা আমাদের দৃষ্টি ও মনকে বিমোহিত করে চোখের পলকেই। যেদিকে চোখ যায় রাশি রাশি ফুল গাছের মনোমুগ্ধকর সব আকৃতি দিয়ে সাজানো বাগান। আরব আমিরাতের বিভিন্ন ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাহারি সব প্রাকৃতিক চিত্র কর্মের মাধ্যমে।

ফুটে আছে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল

মিরাক্কেল গার্ডেনের ফুল বাগানের মোট আয়তন ৭২ হাজার স্কয়ার মিটার। যেখানে জুড়ে আছে শত শত রকমের শুধু ফুল আর ফুল। হাঁটার রাস্তা চার কিলোমিটার। আর মিরাক্কেল গার্ডেনের অফিসিয়াল তথ্যমতে, গোটা পার্কে সবসময় ফুটে থাকে বিভিন্ন প্রজাতির দৃষ্টি নন্দন ৪৫ মিলিয়ন ফুল। তবে বর্তমানে ফুলের সংখ্যা প্রায় ৫০ মিলিয়নের কাছাকাছি। মিরাক্কেল গার্ডেনের সামনেই বাম দিকে চোখে পড়বে আরেকটি বিস্ময়। পৃথিবীর দীর্ঘতম আয়তনের এবং সবচেয়ে বড় ওয়ালের ফুলের বাগানের অপার দৃশ্যটি এখান থেকেই মুগ্ধতা ভরে দেখতে পাবেন। একারণেই মিরাক্কেল গার্ডেনটির নাম উঠেছে গিনিস বুকে।

এই বাগানে ঋতুভিত্তিক রং বদলায়

নানা রঙের ফুল দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন সাজে নানা ধরনের আকৃতিতে ফুলগুলোকে উপস্থাপন করা হয়েছে। ফুলগাছগুলোকে বিভিন্ন আকৃতি দিয়ে দর্শনার্থীদের আনন্দ দেওয়া হয়। বাগানে ফুল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে পুরনো নানা মডেলের গাড়ি, ফুলের জাহাজ, ফুলের বিছানা, ফুলের পাহাড়, ফুলের ঘোড়ার গাড়ি, ফুলের বাড়ি, ফুলের ঘর, ফুলের সাগর, বরফের ঘর, ফুলের দোলনা, ফুলের সবচেয়ে বড় দেয়াল, পিরামিড, চলমান পানির টেপ, ফুল দিয়ে তৈরি ময়ূরপঙ্খী, প্রজাপতি, ফুলের ঝর্ণাধারা মানবাকৃতিসহ বিভিন্ন আকৃতি দেওয়া হয়েছে যা ঋতুভিত্তিক রং বদলায়। কোন মানুষের মন খারাপ থাকলে এমন দৃশ্য উপভোগ করলে মুহূর্তেই ভালো হয়ে যাবে।

 নানা ধরনের আকৃতিতে ফুল

বাগানে ফুল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে আরব আমিরাতের জাতীয় পাখির আকৃতি। কলস থেকে পানির মতো করে ফুল ঝরছে এমনও অনেক চোখ জুড়ানো দৃশ্য চোখে পড়ে বাগানটিতে। এছাড়া ফুলের দূর্গ, মিকি মাউস, রয়েছে ফুল দিয়ে সাজানো এমিরেটস এয়ারলাইন্সের এয়ারবাস যা সত্যিই দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।

ফ্রেন্ডস অব আরব আমিরাত হিসেবে বিভিন্ন দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্যগত কিছু ছবি যেমন- পতাকা, ফুল, পাখি, ফল ইত্যাদি তৈরি করে রাখার সুন্দর একটি জায়গা আছে এক পাশে। যা প্রতি বছর পর্যায়ক্রমে বদল করা হয়। বাংলাদেশের পতাকা এবং শাপলাও কর্তৃপক্ষের ভালোবাসায় সেখানে স্থান পেয়েছে।

মরুর বুকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফুলের বাগান

নয়নাভিরাম এ বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বর্তমানে টিকেটের মূল্য রাখা হয়েছে বড়দের জন্য ৭৫ দিরহাম (বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় দুই হাজার দুইশত পঞ্চাশ টাকা), ছোটদের জন্য ৫৫ দিরহাম (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় এক হাজার ছয়শত পঞ্চাশ টাকা)। ২ বছরের কম বয়সিদের জন্য প্রবেশ ফ্রি। দুবাইয়ের যেকোন এলাকা থেকে প্রাইভেট গাড়ি, ট্যাক্সি, ও বাসে করেও মিরাক্কেল গার্ডেন যাওয়া যায়।

;