কবি আফজাল চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকীতে লন্ডনে দোয়া মাহফিল



সাঈদ চৌধুরী
কবি আফজাল চৌধুরী

কবি আফজাল চৌধুরী

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান কবি প্রফেসর ও প্রিন্সিপাল আফজাল চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী ছিল ৯ জানুয়ারি। এ উপলক্ষে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিশেষ কর্মসূচি পালন করেছে। লন্ডনে সংলাপ সাহিত্য-সংস্কৃতি ফ্রন্টের উদ্যোগে কবির স্মরণে আলোচনা, খতমে কোরআন ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ইস্ট লন্ডনের গ্রীনলেন আদম মসজিদে অনুষ্ঠিত মোনাজাতে অংশ গ্রহণ করেন সংলাপ চেয়ারম্যান ও সময় সম্পাদক সাঈদ চৌধুরী। মোনাজত পরিচালনা করেন মুফতি গোলাম কিবরিয়া । ওলামায়ে কেরাম ও বিশিষ্টজনের মধ্যে অংশগ্রহণ করেন শায়েখ আহমদ নাজির, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, শাহিন আহমদ, হামিদ হোসেন প্রমুখ। প্রিয় কবির জান্নাতুল ফেরদৌস কামনা করেন উপস্থিত কবি প্রেমিক ও মুসল্লিগণ।

কবি আফজাল চৌধুরী (১৯৪২-২০০৪) তাওহীদবাদী নান্দনিক সাহিত্য রচনা করে এক নবতর ধারার সৃষ্টি করেছেন। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী কিছু কবিতা ও ফররুখ আহমদের ইসলামী সাহিত্য সম্ভার এই ধারায় ছিল প্রাণপ্রবাহ। ষাটের দশকে অনিকেত গোষ্ঠির বিপরীতে সুনিকেত বৃত্তির এই নতুন মাত্রা বেগবান হয়।

সেসময় বিশ্বব্যাপী কমিউনিজমের ধ্বজাধারী কায়েমি স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক-লেখক ও পৌত্তলিকতার দ্বারা প্রভাবিত ও অনুপ্রাণিত লেখকগোষ্ঠী অবিভক্ত বাংলার সাহিত্যস্রষ্টা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তখন রাশিয়ান বলয়ে এবং কলকাতাকে কেন্দ্র করে যারা লেখেন তাদের বিপরীতে ঢাকা কেন্দ্রিক বিশ্বাসী কবিদের চেতনাগত সংঘাত চলছিল। দুটি শক্তির মোকাবেলায় দাঁড়ানো শুধু সাহসের ব্যাপার ছিল না, সাহিত্যে অভাবনীয় দক্ষতা ও পারদর্শিতার পরিচয়ও দিতে হয়েছে। কবি আল মাহমুদ, কবি আফজাল চৌধুরী প্রমুখ এই ধারায় নেতৃত্ব দেন।

কবি আফজাল চৌধুরী শুধু চেতনাগত পার্থক্য নয়, শব্দ প্রয়োগেও ভিন্নতার সৃষ্টি করেন। তিনি আমাদের সাহিত্যে মূর্তিপূজা বা প্রতিমাপূজার আচার ও বিশ্বাস থেকে ফিরিয়ে বাঙালি মুসলিম মধ্যবিত্তের স্বকীয় ভাবনা প্রকাশে সচেষ্ট হন। এটা এতোটাই কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল, তার প্রেরণায় উজ্জীবিত হলেও সাহিত্য চর্চার উপাত্ত সংগ্রহের জন্য নতুন লেখিয়েরা বিশ্বাসের বিপরীত ধারায় বসবাস করতে হত।

তখনকার কবিদের লেখায় গ্রেকো রোমান বহুদেববাদ রুপকভাবে ব্যবহৃত হত। ইউরোপ এবং উত্তর আফ্রিকায় খ্রিস্টান ধর্মের প্রসারের আগে বহু ঈশ্বরবাদী সংস্কৃতির ব্যবহার ছিল। এটি ব্যাপক অর্থে প্রসারিত সমকালীন ধর্মগুলোতে বিশেষত অধিকাংশ পূর্বাঞ্চলীয় ধর্ম এবং আমেরিকা, মধ্য এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকার আদিবাসী সমাজেও বিদ্যমান ছিল।

কবি আফজাল চৌধুরী প্রচলিত পৌত্তলিকতা ও নাস্তিক্যবাদের বিপরীতে সংলাপ সাহিত্য-সংস্কৃতি ফ্রন্ট নামে একটি সাহিত্য আন্দোলনের যাত্রা করেন।অল্পদিনের মধ্যে নিজস্ব বিশ্বাসের আলোকে নতুন কমিটমেন্ট নিয়ে একঝাক তরুণকে স্বকীয় ভাবনা প্রকাশে উজ্জীবিত করতে সক্ষম হন।

আমি নিজেও সংলাপের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম। আফজাল চৌধুরী চেয়ারম্যান এবং আমি সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। সংলাপের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকেই এখন জাতীয় ভাবে প্রতিষ্ঠিত।

কল্যাণব্রতের কবি খ্যাত শিক্ষাবিদ আফজাল চৌধুরী বিচিত্র রচনায় সমৃদ্ধ করে গেছেন বাংলা সাহিত্যের ভান্ডার। শিল্প-সাহিত্যের নানা অঙ্গনে তিনি অসংখ্য কালজয়ী রচনা সৃষ্টি করেছেন। তিনি একজন বিশ্বাসী কবি কন্ঠ। আধুনিক মুসলিম সাহিত্যের এক মহারাজ। বীরদর্পে বাংলা সাহিত্যের সব শাখায় সফল বিচরণ করে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।

আফজাল চৌধুরী শুধু আদর্শবাদী শিল্পীই ছিলেন না, তিনি সমাজ সংস্কারকও ছিলেন। তিনি সংস্কার চেয়েছিলেন সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মাধ্যমে। তিনি ছিলেন অসীম প্রাণ স্ফূর্তির অধিকারী অদম্য সাহসী মানুষ। পলায়নপরতা ও হতোদ্যম তার স্বভাবে ছিল না। তিনি ছিলেন একক এবং সমষ্টিগতভাবে নিরন্তন গতিশীল।

‘কল্যাণব্রত’ আফজাল চৌধুরীর প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ‘বলিও আমার প্রেম ঈশ্বরের ভষ্ম নয় ভূমা/ আলোকিত কোলাহলে সমতল আত্মার সঙ্গীত/ রাশি রাশি পুলকের বিন্দু বিন্দু বোধের অতীত/ অন্য এক বোধ আর স্পন্দমান আলোর উপমা/ আলোক সে নির্ভুলের আন্তরিক বলীয়ান ক্ষমা/ বলিও আমার প্রেম ঈশ্বরের ভষ্ম নয়-ভুমা।’

কবি আফজাল চৌধুরীর কবিতায় অবেগ-অনুভূতি সহজ কথা ও ছন্দে পরিস্ফুটিত। এর উচ্চারণ বলিষ্ঠ এবং প্রত্যয়ী। জীবন-বিশ্বাসের গভীর থেকে উত্থিত।
’মৃত্যুর মোহন নৃত্য বার বার চোখ বুঁজে দেখি,/ পরলোকে ছায়া ফেলে এই কুঞ্জে দাঁড়াই যখনি/ খুলে দাও দাও খুলে রহস্যের নিখিল দরোজা,/ তোমার গৃহস্থ যারা তাদের স্বচ্ছন্দ বিচরণে/ নিভৃত এ কুঞ্জ হোক ওপারের বিমূর্ত আঙিনা/ শিরা উপশিরাগামী রক্তস্রোত নাশ করে স্নায়ু/ এবং গোগ্রাসে গিলে শতাব্দীর মস্ত অজগর’
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ ‘কল্যাণব্রত’ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পর ত্রৈমাসিক ‘কন্ঠস্বর’ (কবিতা সংখ্যা-১৯৭০)এ লিখেছেন “আমাদের কাব্যক্ষেত্রে ষাটের অঙ্গন যেসব উদ্যোগী তরুণের আশান্বিত পদপাতে সরব হয়েছিল, আফজাল চৌধুরী তাদের অন্যতম। অন্য লোকের মত আমরাও যারা সেই নতুন কবিতা-চেষ্টার প্রতিটি অনিবার্য ও সজীব প্রবণতাকে উদগ্রীব প্রত্যাশা নিয়ে লক্ষ্য করে চলছিলাম সে সময়, নিশ্চিতভাবে অনুভব করেছিলাম, আফজাল চৌধুরীর অপরাগ হাত এমন কিছু উল্লেখযোগ্য উপহার দেবার প্রতিশ্রুতি দেখাচ্ছে যা সজীব ও প্রাণবন্ত এবং যা আগামী সময়ের আকাঙ্খিত দিনগুলোয় কবিতার স্বচ্ছল প্রয়াসে আমাদের কাব্য-ভাঁড়ারকে সমৃদ্ধ করবে।

আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ আরো বলেন, ‘কল্যাণব্রত’ পাঠের সময় এই কাব্যের যে গুণটি বড় হয়ে পাঠকের চোখে ভাসে তা হলঃ এর স্বকীয়তা। আফজাল চৌধুরীর কন্ঠস্বর আলাদা ও স্বকীয়, স্বাদে ও চরিত্রে গতানুগতিক কবিতা থেকে আলাদা। তার কবিতার ডালে ডালে শব্দের যে অবাক বিস্ময় গুচ্ছ গুচ্ছ হয়ে ফুটে আছে, তা যে কোন পাঠককেই আকর্ষণ করবে।

আফজাল চৌধুরীর প্রাণস্পর্শী প্রজ্ঞাদীপ্ত বক্তৃতা-ভাষণ ছিল সাহিত্য আসরে বিরল বিস্ময়। তার কন্ঠের যাদুকরী উচ্চারণে দর্শক শ্রোতা সম্মোহিত ও আকৃষ্ট হতেন। কবিতার ধ্বনিসঙ্গীতে নিপিড়িত মানুষের কথা তিনি বলতেন। তার বহুমাত্রিক সাহিত্য সম্ভার সমকালীন কবি সাহিত্যিকদের ভাবনায় ফেলে দিয়েছিল। মোকাবেলায় কোন পথ না পেয়ে তাদের পছন্দের কাগজ সমূহে তাকে বর্জনের চেষ্টা করা হয়েছে অত্যন্ত জঘন্যভাবে।

কবিতার পাশাপাশি কাব্যনাট্যেও শক্তিমান এক পুরুষ হিসেবে আফজাল চৌধুরী নিজের লেখনীর প্রমান দিয়েছেন। ‘হে পৃথিবী নিরাময় হও’ কাব্যনাটকে বিষয় ও প্রকরণগত সৃজন শৈলীতে বহু মাত্রিকতার সংযোজন ঘটিয়েছেন তিনি।

বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ এ কাব্যনাট্য সম্পর্কে বলেন, ‘হে পৃথিবী নিরাময় হও’ কাব্যনাট্য এক অসাধারণ নাট্যগুণ আর প্রতিবাদগুণ সম্পন্ন গ্রন্থ। প্রতিবাদ প্রচলিত সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে কলুষ কালিমার বিরুদ্ধে। এই কাব্য নাট্যখানি আমাদের সাহিত্যে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচনকারী সফল কাব্যনাট্য।

বিশিষ্ট সাংবাদিক আখতারুল আলম ‘হে পৃথিবী নিরাময় হও’ কাব্যনাট্যকে স্বতন্ত্র এক ধারার সূচনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, আমাদের সাহিত্য ক্ষেত্রে নিদারুন হৈ চৈ আর গোলযোগের মধ্যে এই গ্রন্থখানি এক আশ্চর্য ব্যতিক্রম।

কবি আল মুজাহিদী আফজাল চৌধুরীর ‘হে পৃথিবী নিরাময় হও’ কাব্যনাট্য সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে কবিকে এ শতাব্দীর সবচে প্রতিবাদী কবিকন্ঠ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

কবি আফজাল চৌধুরীর ২য় কাব্যগ্রন্থ ‘শ্বেতপত্র’ এবং তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘সামগীত দুঃসময়ের’ প্রতিটি কবিতা পুষ্প সৌরভে পাঠককে মুহিত করে। তারপর ’শবমেহেরের ছুটি’, ’নয়া পৃথিবীর জন্য’, ’বিশ্বাসের দিওয়ান’, ’এই ঢাকা এই জাহাঙ্গীরনগর’ প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থে নতুন রুপ ও গ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে। তার সনেট এবং আত্মজৈবনিক কবিতা আমাদের সাহিত্যে এক ভিন্ন মাত্রার সংযোজন।

কবি আফজাল চৌধুরী কবিতা, কাব্যনাট্য এবং প্রবন্ধের পাশাপাশি চমৎকার নাটকও লিখেছেন। হযরত শাহজালাল (র) এর সিলেট আগমনের পটভূমিতে লেখা তার নাটক ‘সিলেট বিজয়’। একটি অত্যন্ত মঞ্চ সফল নাটক। তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল ব্যতিক্রমী এই নাটক।

বার্নাবাসের বাইবেল অনুবাদ আফজাল চৌধুরীর এক অনবদ্য সৃষ্টি। ব্যাপকভাবে পাঠক সমাদৃত এই গ্রন্থ বাংলা ভাষী প্রতিটি শিক্ষিত মানুষ স্মরণে রাখতে বাধ্য। অনুবাদে তার বিশেষ দক্ষতা ও শক্তিমত্তার প্রামাণ্য দলিল এটি।

সম্পাদনার ক্ষেত্রেও উজ্জল স্বাক্ষর রেখেছেন কবি আফজাল চৌধুরী। আফগানিস্তানের অতীত বর্তমান এবং ভবিষ্যতের আবর্তকে ধারণ করে সুবিশাল গ্রন্থ ‘আফগানিস্তান আমার ভালবাসা’ তিনি ও কবি আল মাহমুদ যৌথ সম্পাদনা করেন।

‘ঐতিহ্য’ নামে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে একটি সাহিত্য ত্রৈমাসিক সম্পাদনাও তার আরেক উজ্জ্বল সুকৃতি। সত্য প্রকাশে, অন্যায়ের প্রতিবাদে, জুলুমের বিরুদ্ধে আফজাল চৌধুরী ছিলেন সোচ্চার ও বজ্রকন্ঠ। সমাজনীতি ও রাজনীতির কাব্য মঞ্চেও ছিলেন বীরের ভূমিকায়। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মিছিলে তার কলম ছিলো ক্ষুরধার ও তেজোদ্বীপ্ত।

’মানুষই সম্পূর্ণ দ্বীপমাত্র নয়/ প্রতিটি মানুষের সম্পূর্ণের অংশ মাত্র।/ মৃত্যু আমাকে খর্ব করে/ কারণ আমি জড়িত মানবতার সঙ্গে,/ সুতরাং নিজেকে জিজ্ঞেস করোনা, কার জন্যে/ মৃত্যু ঘন্টা বাজে, জেনো, সে তোমার জন্যে,/ সে তোমার জন্যে।’

’কি-রূপ নি:সঙ্গ আজ মনে হয় নিজেকে এ পার্থিব প্রবাসে/ চারপাশে এতো ভীড়, ক্রস্ত-চাপ, বিরতিবিহীন কর্মযোগে/ কোথায় আমার নিজ স্থায়ী কক্ষ, কোথায় সে অন্তিম শয়ান?/ কি আমার পরিণতি, বিজয়ী না শহীদের রক্তাপ্লুত লাশে/ যাত্রাশেষ? জানি না তা। বুঝি না এ ভঙ্গুর দেহটি চিররোগে/ ক্ষয়ে যাবে, নাকি হবে জনারণ্যে সমাদৃত নন্দিত প্রয়াণ?/

কি হবে, কি হবে ওহে, বলে দাও কোন যোগাযোগ/ আমার শুরু ও শেষ, কোথায় কোথায় মুক্তি, কোন বিনিয়োগে?/ হে সত্য, তোমার রূপ এখনও প্রচ্ছন্ন এই জীবন বিন্যাসে/ হে জীবন, পারিনি তো তোমার দারুণ ক্ষতে যথাযোগ্য ত্রাণ/ স্নেহে বিছিয়ে দিতে। সূর্যোদয় লক্ষ্য বটে এই সন্ধ্যাকাশে।/ এখনও প্রান্তিক দূর্গে যুদ্ধ চলছে; কুরবান হয়েছে এই জান/ এইটুকু বলতে পানি-জীবন ব্যয়িত নয় কেবল সম্ভোগে/ কেবল কৈবল্য যপে অঙ্ক কষাকষি নয় যোগে ও বিয়োগে।’
আফজাল চৌধুরী ১০ মার্চ ১৯৪২ সালে হবিগঞ্জের খাগাউড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০০৪ সালের ৯ জানুয়ারি ইন্তেকাল করেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি সর্বকনিষ্ঠ। বড় ভাই প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, প্রাক্তন এমএনএ ও সংসদ সদস্য মরহুম এ কে লতিফুর রহমান চৌধুরী (কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী) এবং মেঝো ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাষা সৈনিক ও রাজনীতিবিদ মরহুম আলতাফুর রহমান চৌধুরী (ইয়াকুত চৌধুরী)।

কবি আফজাল চৌধুরী হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিকুলেশন (১৯৫৯), হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক (১৯৬১), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় বিএ (অনার্স) (১৯৬৪) ও এমএ (১৯৬৫) সম্পন্ন করেন।

১৯৬৯ সালে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্য হিসেবে তার কর্ম জীবনের শুরু হয়। প্রথম কর্মস্থল ছিল রাজশাহী সরকারী ইন্টারমেডিয়েট কলেজ (১৯৬৯ -’৭০)। পরবর্তীতে সিলেট সরকারী এমসি ইন্টারমেডিয়েট কলেজ (১৯৭০-’৭২), চট্রগ্রাম সরকারী ইন্টারমেডিয়েট কলেজ (১৯৭২-৭৩), সিলেট সরকারী কলেজ (বর্তমান সরকারী এমসি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ১৯৭৫ -৮০ ও ১৯৯০-৯৫) এবং সিলেট সরকারী মহিলা কলেজে (১৯৮৯-৯০) অধ্যাপনা করেন। হবিগঞ্জ সরকারী বৃন্দাবন কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন ১৯৯৬-৯৯ পর্যন্ত। এ পদে কর্মরত থাকাবস্থায় ১৯৯৯ সালের ৯ মার্চ সরকারী চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

হবিগঞ্জ সরকারী বৃন্দাবন কলেজের প্রিন্সিপাল থাকাবস্থায় এ কলেজের উন্নয়নে তিনি প্রভুত অবদান রাখেন এবং ৭টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু করেন।
মাঝখানে ১৯৮০ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি প্রেষণে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এর ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র সিলেট ও ঢাকার যথাক্রমে ’উপ-পরিচালক’ (১৯৮০-৮১) ও ’পরিচালক’ (১৯৮২-৮৪) এবং ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার ’স্কুলসমূহের পরিদর্শক’ ছিলেন।

তিনি ছিলেন ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র সিলেটের প্রতিষ্ঠাতা ’উপ-পরিচালক’ । ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ঢাকার ’পরিচালক’ থাকাকালে সাহিত্য পত্রিকা ’ঐতিহ্য’ এর প্রকাশ ও সম্পাদনা, সেমিনার, আলোচনা সভা প্রভৃতির মাধ্যমে দেশের বরেণ্য কবি , সাহিত্যিক, সাংবাদিক সহ বুদ্ধিজীবিদের উপস্থিতিতে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নবজাগৃতির সৃষ্টি করেন।

১৯৮৩ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ওআইসি’র পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলন উপলক্ষে ’আফগানিস্তান আমরা ভালবাসি’ সংকলন গ্রন্থের প্রকাশ প্রভৃতি ছিল তার অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচায়ক।

গ্রন্থপঞ্জি : কবি আফজাল চৌধুরীর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৫টি। এরমধ্যে কাব্যগ্রন্থ ৮টি, কাব্যনাটক ১টি, নাটক ১টি, প্রবন্ধ গ্রন্থ ৪টি ও অনুবাদ গ্রন্থ ১টি। তার অপ্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৬টির ও অধিক। রচনাসমগ্র প্রকাশিত হলে তা দেড় হাজার পৃষ্ঠা ছাড়িয়ে যাবে।

প্রকাশিত গ্রন্থ : কাব্যগ্রন্থ : কল্যাণ ব্রত (১৯৬৯, দ্বি. সং. ২০০৮), শ্বেতপত্র (১৯৮৩), সামগীত দু:সময়ের (১৯৯১), শবমেহেরের ছুটি (২০০৫), নয়া পৃথিবীর জন্য (২০০৬), বিশ্বাসের দিওয়ান (২০০৭), বন্দী আরাকান ও অন্যান্য কবিতা (২০১৮), এই ঢাকা এই জাহাঙ্গীরনগর (২০১১)। কাব্যনাটক : হে পৃথিবী নিরাময় হও (১৯৭৯)। নাটক : সিলেট বিজয় (২০০৫)। প্রবন্ধ গ্রন্থ : ঐতিহ্যচিন্তা ও রসুল প্রশস্তি (১৯৭৯, ৪র্থ সং. ২০০৪), সিলেটে সূফী সাধনা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০০৮), তাঁর কাব্যালোকে সৈয়দ আলী আহসান (২০১২), মক্কার পথ (২০১৬) । অনুবাদ গ্রন্থ : বার্নাবাসের বাইবেল (১৯৯৬, দ্বি. সং. ২০০৫)।

অপ্রকাশিত রচনা : কবিতা : খোশাহাল খান খটকের জন্য পঙক্তিমালা, অন্য গোলার্ধে হৃদয়, শাশ্বতের পক্ষে কবিতা, ঐতিহাসিক মর্সিয়া ও অন্যান্য কবিতা, অনুবাদ কবিতা : জালালুদ্দীন রুমির কবিতা (২০১৪), আলী শরীয়তীর কবিতা, কাব্যনাটক : বাঁশী, গীতিনকশা : সবুজ গম্বুজে ঢাকা ফুল, নাটক : ক্ষুধিত ক্যাম্পাস, প্রবন্ধ গ্রন্থ : কবিতার সংসারে জটিলতা, প্রতিশ্রুত কথকতা, সমকালীন সাহিত্যের ধারা, নান্দনিক ভুবন, মুহম্মদ আসাদের মহাজীবন প্রভৃতি।
কবি আফজাল চৌধুরী ২০০১ সালে সিলেট বিভাগের মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ’রাগীব-রাবেয়া সাহিত্য পুরস্কার’ এবং ২০০৪ সালে মরণোত্তর ’কিশোর কন্ঠ সাহিত্য পুরস্কার’ লাভ করেন।

কবি আল মাহমুদের ভাষায় বলতে পারি, কবি আফজাল চৌধুরী বাংলা সাহিত্যে এবং কাব্যলোকে অনন্য নকীবের ভূমিকায় সরব ছিলেন। যতদিন বেঁচে ছিলেন এক অসাধারণ মেধা, প্রজ্ঞা ও প্রতিভায় নিজেকে রেখেছেন বিপুল ভাবে সক্রিয়। তার কবিতা বাংলা সাহিত্যে অমূল্য সম্পদ।

কবির একান্ত সান্নিধ্যে থাকা কবি ও সমালোচক মুকুল চৌধুরী তার জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণা মূলক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি আফজাল চৌধুরীর অপ্রকাশিত মহামূল্যবান লেখাসমূহ প্রকাশের প্রয়াস অব্যাহত রেখেছেন কবি আফজাল চৌধুরী ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে।

লেখক: লন্ডন প্রবাসী। সাংবাদিক, কবি ও কথাসাহিত্যিক।

আমিরাতে বিক্ষোভ করায় ৩ বাংলাদেশির যাবজ্জীবন, ৫৪ জনকে জেল



সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে
আমিরাতে বিক্ষোভ করায় ৩ বাংলাদেশির যাবজ্জীবন

আমিরাতে বিক্ষোভ করায় ৩ বাংলাদেশির যাবজ্জীবন

  • Font increase
  • Font Decrease

দেশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) একদল বাংলাদেশি প্রবাসী বিক্ষোভ মিছিলের ঘটনায় তিন জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) আদালত। একই সঙ্গে আরও ৫৪ জনকে ১০ এবং ১১ বছরের জেল দেয়া হয়েছে।

সোমবার (২২ জুলাই) আবুধাবি ফেডারেল আপিল আদালত এই রায় ঘোষণা করেন। কর্তৃপক্ষের বরাতে এই খবর দিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যম খালিজ টাইমস।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বাংলাদেশে চলমান অস্থিরতার মাঝে নিজ দেশের সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে ইউএই’তে বিক্ষোভের ডাক দেয়া এবং দাঙ্গা উসকে দেয়ার অভিযোগে ওই তিন বাংলাদেশিকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়েছে।

গত সোমবার (২২ জুলাই) আবু ধাবি ফেডারেল আপিল আদালত রায় ঘোষণা করে এবং এই বহিরাগতদের অবৈধ জমায়েতের জন্য শাস্তি দেয়া হয়। বিক্ষোভকারী ব্যক্তিদের স্বদেশের সরকারকে চাপ দেওয়ার লক্ষ্যে বিক্ষোভের আহ্বান ও উসকানি দেওয়ার জন্য ৩ অভিযুক্তের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড জারি করা হয়েছিল।

আদালত আরও ৫৩ জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং একজন আসামিকে অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ ও সমাবেশে অংশগ্রহণের দায়ে ১১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

এর আগে, ইউএই’র অ্যাটর্নি-জেনারেল চ্যান্সেলর ডাঃ হামাদ সাইফ আল শামসি অবিলম্বে ওই ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেন এবং সন্দেহভাজনদের একটি ‘জরুরি বিচার’র জন্য রেফার করেন।

অভিযুক্তরা এই ঘটনার ভিজ্যুয়াল এবং অডিও ক্লিপগুলিও ধারণ করে ইন্টারনেটে প্রকাশ করেছে বলে জানা গেছে। অভিযুক্তদের মধ্যে অনেকেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

এ বিষয়ে প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, বিএনপি-জামায়াতপন্থিরা বিদেশের মাটিতে বসে এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চায়। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা (আজ বুধবার) সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলব। আশা করি দ্রুতই এই সংকটের সমাধান হয়ে যাবে।

;

লন্ডনে চট্টগ্রামের 'মেজ্জান', এ যেন বাঙালির মিলনমেলা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

মেজবান বা মেজ্জান চট্টগ্রামের ঐতিহ্য। চট্টগ্রামের মানুষ অতিথিপরায়ণ। নানা উপলক্ষে অতিথি আপ্যায়নে মেজবানির আয়োজন এখন চট্টগ্রামের একটি সংস্কৃতির অংশ। দেশব্যাপী এ মেজবানের খ্যাতি রয়েছে। মেজবান এখন দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও বেশ জনপ্রিয়।

জাঁকজমক চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবান ও মিলন মেলা হয়ে গেলো লন্ডনে । পরবাসে সাদা ভাত, ৭ গরুর মাংস আর ডালের এই ভোজ আয়োজন যে কতটা উৎসবমুখর হয়ে উঠতে পারে তারও প্রমাণ মিলল চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবান আয়োজনে।

স্থানীয় সময় রোববার পূর্ব লন্ডনের মেফেয়ার হলে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে মেজবানি খাবারের পাশাপাশি ছিল মন মাতানো সাংস্কৃতিক আয়োজন। যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বৃহত্তর চট্টগ্রামবাসীর প্রতিনিধিত্বকারী ও বাংলাদেশীদের অন্যতম শীর্ষ সংগঠন ‘গ্রেটার চট্টগ্রাম অ্যাসোসিয়েশন ইউকে’ (জিসিএ) পঞ্চমবারের মতো বিশাল এই আয়োজন করে। এই সংগঠনটি প্রথম বিলাতে তথা প্রবাসে মেজবানকে বিশাল আংগিকে ও ভিন্ন আমেজে পরিচিত করেছে।

বাংলাদেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অনেক কিছুই ঠাঁই করে নিয়েছে সুদূর যুক্তরাজ্যে। পিঠা উৎসব, বৈশাখী মেলা কিংবা বাঙালির বিয়ের মতো জমজমাট আয়োজন এখন নিয়মিত দেখা যায় সেখানে। তিন হাজার মানুষ মেজবানে অংশ নেয় এবারের মেজবানে। এদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলে এই মিলন মেলা।


সংগঠনের ট্রেজারার মাসুদুর রহমানের উপস্হাপনায় অনুষ্ঠান শুরু হয় কোরান তেলাওয়াত, গীতা ও ত্রিপিটক পাঠের মাধ্যমে। অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্বটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের বর্তমান কার্যকরী কমিচির প্রেসিডেন্ট আখতারুল আলম এবং সেক্রেটারি ওসমান মাহমুদ ফয়সাল। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী, ১০৪ বছর বয়স্ক চ্যারিটি ফান্ড রেইজার দবিরুল ইসলাম চৌধুরী, সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ট্রাষ্টি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন, চ্যানেল এস'র ফাউন্ডার মাহি জলিল, বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষে ইসমাঈল হোসেন, সাবেক সভাপতি ইসহাক চৌধুরী, ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন, সিপ্লাসটিভির আলমগীর অপু, কাউন্সিলর সৈয়দ ফিরোজ গনী, আই অন টিভির পরিচালক আতাউল্লাহ ফারুক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শওকত মাহমুদ টিপু, সলিসিটর জাগির আলম প্রমুখ।

এ সময় মঞ্চে নানা পর্বের সঞ্চালনায় ছিলেন মোহাম্মদ কায়সার, মাসুদুর রহমান, শহিদুল ইসলাম সাগর, নূরুন্নবী আলী, শহিদুল ইসলাম সাগর, ডা. মিফতাহুল জান্নাত। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সার্বিক ব্যবস্হাপনায় ছিলেন মীর রাশেদ আহমেদ, শওকত মাহমুদ টিপু, আরশাদ মালেক, আলী রেজা, রাজ্জাকুল হায়দার বাপ্পী, হাসান আনোয়ার, ব্যারিস্টার শওকত আলী, টিংকু চৌধুরী, অনুপম সাহা, আবু রায়হান শাকিল, লুতফুন নাহার লীনা, আসমা আলম, ফয়সাল আনোয়ার, শেখ নাছের, ইব্রাহিম জাহান, মোরশেদ, মোহাম্মদ ইসলাম, ফসি উদ্দিন প্রমুখ।


আয়োজনটি চট্টগ্রামবাসীর হলেও যুক্তরাজ্যে বসবাসরত অন্য অঞ্চলের বাংলাদেশিরাও এতে অংশ নেয়। লন্ডনের আশপাশের শহরসহ স্কটল্যান্ড, ম্যানচেস্টার, বার্মিংহামের মতো দূরের শহরগুলো থেকেও চট্টগ্রামবাসী অনেকে ছুটে আসেন ঐতিহ্যবাহী এ আয়োজনে যোগ দিতে। আয়োজকরা বলেন, এবারের মেজবানে কয়েক হাজার লোকের জন্য খাবারের আয়োজন করা হয়। মেফেয়ার হলে খাবার পরিবেশনের কক্ষের পেছনের দরজায় ভোজনপ্রেমীদের দীর্ঘ লাইন। এক ব্যাচ খেয়ে সামনের দরজা দিয়ে বের হচ্ছেন। আর পেছন দরজা দিয়ে ঢুকছেন আরেক ব্যাচ। মেজবানের চিরাচরিত টেবিল দখলের দৃশ্যও এখানে বাদ যায়নি। পরিবার-পরিজন নিয়ে একসঙ্গে বসতে টেবিল দখলের প্রচেষ্টাও ছিল লক্ষণীয়।

দিনব্যাপী মেজবানি খাবারের পাশাপাশি চলে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাসী আঞ্চলিক গান, নাচ ও নানা ধরনের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ফকির শাহাবুদ্দিন , হিমাংশু গোস্বামী , পাঞ্জাবিওয়ালা খ্যাত শিরিন জাওয়াত , আতিক হাসান , লাবণী বড়ুয়া , এম এ মোস্তফা , তাহমিনা শিপু , আই অন বাংলা স্কুল , পার্পল নাইট ব্যান্ডের জাওয়াদ, রুবেল, জয়, নাবিল , আয়ুস সাহাসহ স্থানীয় শিল্পীবরা। কৌতুক পরিবেশন করেন মিরাকাল কমেডিয়ান আরমন ।

বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী বলেন, মেজবানের খাবার বিশ্বের সেরা খাবার। তিনি চট্টগ্রামের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন বলেন, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চট্টগ্রামবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করে নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক যোগযোগ বৃদ্ধির জন্যই এই মেজবানের আয়োজন। চট্টগ্রামবাসীসহ অন্যান্য জেলার লোকদের মধ্যে এবারের মেজবান যে সাড়া ফেলেছে, তাতে ভিড় সামলাতে হয়তো ভবিষ্যতে খোলা কোনো মাঠে এই আয়োজন করতে হবে।

;

মালয়েশিয়ায় যৌন বিনোদনকেন্দ্রে বাংলাদেশি নারী-পুরুষ আটক



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ব্যাংকক, থাইল্যান্ড
মালয়েশিয়ায় যৌন বিনোদনকেন্দ্রে বাংলাদেশি নারী-পুরুষ আটক

মালয়েশিয়ায় যৌন বিনোদনকেন্দ্রে বাংলাদেশি নারী-পুরুষ আটক

  • Font increase
  • Font Decrease

মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের ক্লাং ভ্যালির একটি যৌন বিনোদন কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে ৭৫ জনকে আটক করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ১১ জন বাংলাদেশি নারী এবং ৮ জন বাংলাদেশি পুরুষ। বিদেশি যৌন কর্মীদের এটি একটি বড় সিন্ডিকেট বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ।

মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক দাতুক রুসলিন জুসোহ বলেন, গত শুক্রবার বেলা ২টায় এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পুত্রজায়া হেডকোয়ার্টারের একটি বিশেষ দল এই অভিযান পরিচালনা করে। এই অভিযানের আগে দুই সপ্তাহ ধরে গোয়েন্দা তৎপরতা চালানো হয় এবং স্থানীয়দের থেকে তথ্য নেয়া হয়।

অভিযানে মোট ৫৭ জন নারীকে আটক করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে ৩২ জন ইন্দোনেশিয়ান, ১১ জন বাংলাদেশি, ৮ জন ভিয়েতনামিজ এবং ৬ জন ভারতীয়।

এছাড়াও অভিযানে ১০ জন পুরুষ আটক হয়েছেন। যাদের বয়স ১৭ থেকে ৪৬ এর মধ্যে। যার মধ্যে রয়েছেন ৭ জন বাংলাদেশি, ২ জন মিয়ানমারের নাগরিক এবং একজন ইন্দোনেশিয়ান।

অভিযানে ৭ জন স্থানীয় পুরুষ এবং একজন নারীকে আটক করা হয়। যাদের বয়স ২৩ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে।

অভিযানে আটক ১৩ জন ইন্দোনেশিয়ান নারী এবং ৪ জন ভিয়েতনামিজ নারীর কাছে বৈধ পাসপোর্ট পাওয়া যায়। এছাড়া ২ জন ইন্দোনেশিয়ান নারী এবং একজন ভিয়েতনামিজ নারীর ভিসার মেয়ার পূর্ণ হয়েছে।

বাকি কারো কাছেই মালয়েশিয়া থাকার বৈধ কাগজপত্র পাওয়া যায়নি।

অভিযানে একটি মোবাইল ফোন, ১৫টি ইন্দোনেশিয়ান পাসপোর্ট, পাঁচটি ভিয়েতনামিজ পাসপোর্ট, ১ হাজার ৭৫০ রিঙ্গিত নগদ, একটি কম্পিউটার এবং ১০টি গ্রাহক বই জব্দ করা হয়েছে।

;

মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক খাদ্য ও পানীয় মেলায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ব্যাংকক, থাইল্যান্ড
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক খাদ্য ও পানীয় মেলায় দ্বিতীয়বারের মতো অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। ২-৪ জুলাই দুই দিনব্যাপী মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের মাইটেক কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত 'ফুড অ্যান্ড ড্রিংকস মালয়েশিয়া বাই সিয়াল’ নামে এ মেলায় বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করে। মেলায় বাংলাদেশসহ ২২টি দেশ অংশগ্রণ করে এবং ৩৩০টি বুথ এবং একটি বিশেষ আন্তর্জাতিক লাউঞ্জে পণ্য প্রদর্শন করা হয়।

মেলার উদ্বোধন করেন মালয়েশিয়ার প্ল্যান্টেশন অ্যান্ড কমোডিটিস বিষয়ক উপমন্ত্রী দাতুক চ্যান ফুং হিন। বাংলাদেশ হাইকমিশনের তত্ত্বাবধান ও সহযোগিতায় মেলায় অংশ নিয়েছে বাংলাদেশের ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানি প্রাণ ফুডস লিমিটেড। ⁠মেলায় নির্ধারিত বুথের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক লাউঞ্জে অন্য ৭টি দেশের (কানাডা, ইউক্রেন, ভিয়েতনাম, ব্রিটেন এবং আয়ারল্যান্ড, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া) সাথে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাদ্য ও পানীয় পণ্য প্রদর্শন করা হয়।

উদ্বোধনের দিন আন্তর্জাতিক লাউঞ্জ এর বাংলাদেশ কর্নার এবং বাংলাদেশি পণ্যের বুথ পরিদর্শন করেন প্ল্যান্টেশন এবং কমোডিটিস বিষয়ক উপমন্ত্রী দাতুক চ্যান ফুং হিন এবং সাবাহ রাজ্যের শিল্প উন্নয়ন মন্ত্রী দাতুক ফুং জিন ঝে।

সমাপনী দিন বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই ) মেলা এবং বাংলাদেশী স্টল পরিদর্শন করেন মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান।

এসময় হাইকমিশনার উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি পণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষাপটে হাইকমিশন বাংলাদেশের পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের জন্য বিভিন্ন বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণসহ অন্যান্য পরিকল্পনা নিয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ⁠রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণের অংশ হিসেবে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি অন্যান্য পণ্য বেশি করে রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘অর্থনৈতিক কূটনীতি’ অনুসরণের ধারাবাহিকতায় এ ধরনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণ করে যাচ্ছে।

পরিদর্শনের সময় আয়োজক কোম্পানি কমেক্সপোসিয়াম এশিয়া পেসিফিক এর পরিচালক হেনরি তান, একই কোম্পানির এসিস্টেন্ট মার্কেটিং ম্যানেজার কিয়েন এনজি ও স্মৃতিকা সিভানেসসহ হাইকমিশনের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং প্রবাসী সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।

মালয়েশিয়া সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ও মাইসেব, ম্যাট্রেড, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়, পিকেএনএস, মালয়েশিয়া বিজনেস গ্রুপ, সাবাহ এমআইপিই,মালয়েশিয়া কোকো বোর্ড ও মালয়েশিয়া স্পাইস বোর্ডের সহায়তায় আয়োজিত বিশ্বের ব্র্যান্ড এবং শিল্প উদ্যোক্তাদের অংশ হিসেবে এ মেলার আয়োজন করা হয়। বিশ্বব্যাপী বাজার অন্বেষণে শিল্প উদ্যোক্তা ও অর্থনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ, ব্যবসায়িক সমঝোতা, উদ্ভাবনী সমাধানে ব্যবসাকে শক্তিশালী করতে প্রতি বছর এ বাণিজ্য সম্মেলন ও মেলার আয়োজন করা হয়।

;