শেবাচিমে আইসিইউ বেড ও জনবল সংকট, ভোগান্তিতে রোগীরা
![বার্তা ২৪.কম](https://imaginary.barta24.com/resize?width=800&height=450&format=webp&quality=85&path=uploads/news/2021/Apr/09/1617964265821.jpg)
বার্তা ২৪.কম
বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চলের চিকিৎসা সেবায় একমাত্র ভরসাস্থল হল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসাপাতাল। এই বিভাগের ৬ জেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলার মানুষও এখানে চিকিৎসা নিতে আসে। এই আট জেলার প্রায় দেড় কোটি মানুষের বসবাস থাকলেও বরিশাল বিভাগে করোনা চিকিৎসার জন্য শুধু মাত্র শেবাচিমে ১২ টি আইসিইউ বেড সচল রয়েছে। যা করোনায় আক্রান্ত রোগীর তুলনায় নামমাত্র। আর এসব বেড সচল থাকলেও এগুলো পরিচালনার জন্য চিকিৎসক ও আইসিইউ স্পেশালিস্ট জনবলের সংকট রয়েছে। পাশাপাশি সংকট রয়েছে করোনা ওয়ার্ডের আইসোলেশন বেড। ফলে আইসিইউ ও আইসোলেশন বেড এবং করোনা ওয়ার্ডে জায়গা সংকটের কারণে চিকিৎসা না পেয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে করোনা আক্রান্ত রোগীরা।
শেবাচিম হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে মাত্র ১২ টি আইসিইউ বেড রয়েছে। যেখানে একটি আইসিইউ বেডের অনুকূলে প্রায় ২০/২৫ জন মুমূর্ষু করোনা রোগী শ্বাসকষ্ট নিয়ে চিকিৎসা নিতে অপেক্ষায় থাকে। আর কাগজে-কলমে ১৫০ টি আইসোলেশন বেড থাকলেও রয়েছে ৬০/৭০ টি বেড।
আরো জানা গেছে, করোনা সংকট মোকাবিলায় গত বছর শেবাচিমে ৪০ জন ডাক্তার সংযুক্ত করা হয়৷ কিন্তু কয়েক মাস পড়েই চিকিৎসকরা নিজেদের পছন্দমতো স্থানে বদলি হয়ে গেছেন। তারপর করোনা ওয়ার্ডের জন্য আর নতুন করে চিকিৎসক, নার্স, আয়া,পরিচ্ছন্নতাকর্মী সংযুক্ত করা হয়নি।তাই জরুরি বিভাগের কমসংখ্যক ডাক্তার ও অন্যান্য নার্সদের নিয়ে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষের৷ তবুও তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে করোনা রোগীর চিকিৎসা দিতে।
পটুয়াখালীর বাউফল থেকে করোনা আক্রান্ত বাবা কে নিয়ে শেবাচিমে আসা মোঃ আবুয়াল হাসান বার্তা২৪.কম কে জানান, তার বাবার গত রোববার করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে। তারপর বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে ডাক্তারের পরামর্শে বাবা কে শেবাচিমের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করি। বাবার শ্বাসকস্টের কারণে আইসিইউ বেড দরকার হলেও কর্তৃপক্ষ বারবার বেড দিবে বলে আমাদের ঘুরিয়ে রাখছে।
বরিশাল নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান বার্তা২৪.কম কে জানান, প্রায় দেড় কোটি মানুষের চিকিৎসার ভরসাস্থল শেবাচিম হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা সেবায় মাত্র ১২টি আইসিইউ বেড সচল রয়েছে৷ এছাড়া জোড়াতালি দিয়ে চলছে করোনা ইউনিট।
হাসপাতালের ইনডোর ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. সুদীপ হালদার জানান, প্রতিদিনই করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে রোগীরা ভর্তি হচ্ছে শেবাচিমে। চিকিৎসাধীন ও ভর্তি রোগীর মধ্যে অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন রোগী রয়েছেন যাদের আইসিইউতে রাখা জরুরি। কিন্তু হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে আইসিইউ বেড রয়েছে মাত্র ১২ টি। বেড সংকট থাকায় তাদের কে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাছাড়া করোনা ওয়ার্ডসহ পুরো হাসপাতালে মোট ২২টি আইসিইউ বেড থাকলেও আইসিইউ স্পেশালিস্টের সংকট রয়েছে। মাত্র একজন ডাক্তারের নেতৃত্বে কয়েকজন নার্স আইসিইউ ইউনিট পরিচালনা করে।
শেবাচিম হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. আব্দুর রাজ্জাক জানান, শেবাচিমের করোনা ওয়ার্ডে আইসিইউ বেড রয়েছে মাত্র ১২টি। কিন্তু আমাদের হাতে অতিরিক্ত আরও ২৪টি আইসিইউ বেড রয়েছে। সেগুলো বসানোর জন্য এক্সপার্ট পাঠাতে এবং আইসিইউ বেডসহ নানা সমস্যা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে । বাকি আইসিইউ বেডগুলো বসালে সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান হবে।
উল্লেখ,বরিশাল বিভাগে গত ২৪ ঘন্টায় তিন জনের মৃত্যুর পাশাপাশি ১০২ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হযেছে। এনিয়ে এই বিভাগে গত ১২ মাসে মোট ১২ হাজার ২৫০ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে ২২৩ জনের। এতে সুস্থ হয়েছেন ১০ হাজার ৭৬৭ জন ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন এক হাজার ৪৮৩ জন। এর মধ্যে শুক্রবার (৯ এপ্রিল) সকাল পর্যন্ত শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে আইসিইউসহ আইসোলেশন ও মেঝে ভর্তি আছেন ১২৭ জন রোগী।