পেচ: নিভৃতে থাকা ইউরোপের এক সাংস্কৃতিক রাজধানীর গল্প!



রাকিব হাসান রাফি, বার্তা২৪.কম, স্লোভেনিয়া থেকে
ইউনিভার্সিটি অব পেচ হাঙ্গেরির সবচেয়ে পুরাতন ইউনিভার্সিটি, যার বয়স আনুমানিক ৬৫০ বছর/ছবি: সংগৃহীত

ইউনিভার্সিটি অব পেচ হাঙ্গেরির সবচেয়ে পুরাতন ইউনিভার্সিটি, যার বয়স আনুমানিক ৬৫০ বছর/ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইউরোপের কথা শুনলে আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষের মাথায় প্যারিস, লন্ডন, বার্লিন, ভিয়েনা, জুরিখ, আমস্টারডাম, মাদ্রিদ, কোপেনহেগেন— এ নামগুলো বারবার ঘুরপাক খেতে থাকে। এত সব বড় শহরের ভিড়ে ক্ষুদ্র ছোট এক শহর পেচের নাম সবসময় অগোচরে থেকে যাবে। কিন্তু আপনি কি জানেন, ২০১০ সালে তুরস্কের ইস্তাম্বুল এবং জার্মানির অ্যাসেনের পাশাপাশি ইউনেস্কো ঘোষিত ইউরোপের কালচারাল ক্যাপিটালের একটি ছিল পেচ।

ছোট পেচ শহরটির অবস্থান পূর্ব ইউরোপের দেশ হাঙ্গেরিতে। বর্তমানে পেচ হাঙ্গেরির পঞ্চম বৃহত্তম শহর এবং হাঙ্গেরির অন্যতম বিভাগ বারানিয়ার প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু। হাঙ্গেরিয়ান ভাষায় "Pécs" লেখা হলেও উচ্চারণ করা হয় পেচ। হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্ট থেকে প্রায় ২১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান পেচ শহরের। ম্যাচেক পর্বতের ঢাল ঘেঁষে গোড়াপত্তন হওয়া পেচ শহরটির অবস্থান তাই অনেকটা ক্রোয়েশিয়ার সীমানার কাছাকাছি।

ধারণা করা হয়, দ্বিতীয় শতাব্দীর কোনও এক সময় রোমানদের হাতে এ শহরটির গোড়াপত্তন হয়েছিলো যদিও রোমানদের আগমনের অনেক আগেই এ জনপদে সেল্টিক ও প্যানোনিয়ান আদিবাসীর মানুষের বসবাস ছিল। চতুর্থ শতাব্দীতে এ শহরটি ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মালম্বী মানুষদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিখ্যাত হাঙ্গেরিয়ান কবি ও খ্রিস্টান ধর্মযাজক ইয়ানুস প্যানোনিয়ুস আধুনিক পেচ শহরের গোড়াপত্তন করেন এবং তিনি এ শহরটিকে ধর্ম চর্চার পাশাপাশি হাঙ্গেরির একটি প্রধান সাংস্কৃতিক ও শৈল্পিক চর্চার পীঠস্থান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।

আনুমানিক ১৫৪৩ সালের দিকে বিখ্যাত অটোমান সেনাপতি কাশিম পাশা পেচ দখল করেন এবং সেখানে ওসমানী খেলাফতের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। প্রায় দেড়শ বছর পেচ শহরটির শাসনভার ওসমানী সুলতানদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছে। এ সময় পেচকে ওসমানী খিলাফতের স্থাপত্যকলার অনুকরণে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয় এবং শহরটির বিভিন্ন স্থানে আজও তার নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যায়। ১৬৮৬ সালের দিকে পেচ শহরটি অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্সের ভার্সাই শহরে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী, অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া হয়। পেচকে এ সময় হাঙ্গেরির সাথে সংযুক্ত করা হয়।

 টিভি টাওয়ার

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯১৮ সালের অক্টোবর মাসে হাঙ্গেরি একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেলেও এক বছর যেতে না যেতেই প্রতিবিপ্লবের কারণে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের পথে হাঙ্গেরির এ অগ্রযাত্রা থেমে যায়। সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় হাঙ্গেরিতে ১৯১৯ সালে কমিউনিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হাঙ্গেরি জার্মানির পক্ষে অবস্থান নেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানরা পরাজিত হলে হাঙ্গেরি পরিপূর্ণভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের স্যাটেলাইট রাষ্ট্রে পরিণত হয়। গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত হাঙ্গেরিসহ গোটা পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কমিউনিস্ট শাসনের প্রচলন ছিল। সোভিয়েত যুগে এক ভিন্ন পেচের দেখা পায় গোটা ধরিত্রীবাসী। পেচকে সাজানো হয় কমিউনিস্ট ভাবাদর্শে গড়ে ওঠা এক শহর হিসেবে। আজকের দিনেও পেচের বেশির ভাগ বিল্ডিং সে সাক্ষ্য বহন করে চলছে যদিও কিছুটা পরিবর্তন আনারও চেষ্টা করা হচ্ছে সোভিয়েত আমলে নির্মিত এ সকল দালানকোঠার নকশায়। তবে সোভিয়েত যুগে পেচ অর্থনৈতিকভাবে পূর্ব ইউরোপে একটি গুরত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। পেচের কাচ ও সিরামিক শিল্পের অন্য রকম কদর ছিলো পুরো কমিউনিস্ট ব্লকের দেশগুলোর কাছে। এছাড়াও ইউরেনিয়ামের খনি আবিষ্কৃত হওয়ায় সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের চোখের মণি হয়ে উঠেছিল ছোট এ শহরটি।

নব্বই পরবর্তী সময়ে হাঙ্গেরি গণতন্ত্র ও মুক্তবাজার অর্থনীতির পথে পা বাড়ালে পেচ তার জৌলুস হারাতে থাকে। শহরটির অর্থনীতি একেবারে দৈন্য দশায় পতিত হয় এবং শহরটিতে বাস করা অনেক নাগরিক সে সময় বেকার হয়ে যায়। অনেকে পেচ ছেড়ে চলে যায় রাজধানী বুদাপেস্টসহ আশেপাশের বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে। ২০০৮ সালে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা যেন সব কিছুতে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়ায়। ২০১০ সালে হাঙ্গেরির সরকার যদিও শহরটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করে তবে সে সকল উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি। ২০১০ সালে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকায় স্থান পাওয়া এ শহরটির স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি এমনকি বিভিন্ন শিল্পকর্ম ও স্থাপত্যশৈলীতে প্যাগান থেকে শুরু করে রোমান, তুরস্কের ওসমানী খেলাফত, অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্য, কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়ন সকলের ছোঁয়া লক্ষণীয় যার দরুণ ইউরোপের অন্যতম কালচারাল ক্যাপিটালের তালিকায় এ শহরটি স্থান পেয়েছে।

পেচ শহর থেকে লেখক

হাঙ্গেরির রাজা প্রথম লুইস যিনি একইসাথে ক্রোয়েশিয়ারও রাজা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন ১৩৬৭ সালের দিকে পেচে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। হাঙ্গেরির ইতিহাসে এটি প্রথম কোনও বিশ্ববিদ্যালয় এবং একইসাথে রেনেসাঁ পরবর্তী ইউরোপের অন্যতম প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি ইউনিভার্সিটি অব পেচ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। প্রায় ৬৫০ বছরের অধিক বয়স্কসম্পন্ন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর বর্তমানে হাঙ্গেরি ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করতে আসেন। তাই হাঙ্গেরির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ওরবান ভিক্টর পেচকে স্টুডেন্ট সিটি হিসেবে সাজানোর ঘোষণা দিয়েছেন। বাংলাদেশ থেকেও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছেন।

পর্যটকদের জন্য পেচের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে— পেচ ক্যাথেড্রাল, টিভি টাওয়ার, সোলনাই কালচারাল কোয়ার্টার, সেচেনি স্কয়ার, পাশা কাশিম মসজিদ এবং ম্যাচেক পর্বতমালা। টিভি টাওয়ারটি কমিউনিস্ট যুগে হাঙ্গেরির একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্প্রচার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল, বর্তমানে সে অর্থে আর এ টিভি টাওয়ারটির কার্যকারিতা নেই। তবে পেচ ক্যাথেড্রালটি মনোরম স্থাপত্যশৈলীর এক অসাধারণ নিদর্শন, বিশেষ করে এর ইন্টেরিয়র সত্যি চোখ ধাঁধানো কারুকার্যে শোভিত। পেচ শহরে দুটি মসজিদ রয়েছে এবং এ দুইটি মসজিদ অটোমান শাসনামলে নির্মিত। এদের মধ্যে পাশা কাশিম মসজিদটিকে বর্তমানে ক্যাথলিক চার্চে পরিণত করা হয়েছে এবং অন্য মসজিদটি অর্থাৎ ইয়াকোভালি হাসান মসজিদটি কেবল জুম্মার নামাজ ও দুই ঈদের নামাজের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

বর্তমানে হাঙ্গেরি যেহেতু ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য এবং একইসাথে সেনজেন তালিকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সেনজেনভুক্ত যে কোনও দেশের ভিসা কিংবা টেম্পোরারি রেসিডেন্ট থাকলে আপনি হাঙ্গেরিতে ভ্রমণ করতে পারবেন। রাজধানী বুদাপেস্টের কেলেতি পালইয়ুদভার কিংবা কেলেনফোল্ড থেকে ইন্টারসিটি ট্রেনে পেচে যাওয়া যায়। খরচ পড়ে সাড়ে চার হাজার হাঙ্গেরিয়ান ফরেন্ট অর্থাৎ প্রায় ১৭০০ বাংলাদেশি টাকা এবং বুদাপেস্ট থেকে ট্রেনে পেচ পৌঁছাতে সময় লাগে তিন থেকে চার ঘণ্টা। যদি কেউ হাঙ্গেরি ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন তাহলে বুদাপেস্ট এবং থার্মাল লেক বালাটনের পাশাপাশি পেচও একবার ঘুরে আসতে পারেন।

লেখক: রাকিব হাসান রাফি, ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন ফিজিক্স অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স (শিক্ষার্থী), ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছা, স্লোভেনিয়া

   

হারিয়ে যাওয়া বিয়ের আংটি খুঁজে পেলেন ৫৪ বছর পর!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

৫৪ বছর পর হারিয়ে যাওয়া বিয়ের আংটি খুঁজে পেয়েছেন ম্যারিলিন বার্চ (৭৬)। তিনি যুক্তরাজ্যের ওয়েলসের পন্টারডাউইর বাসিন্দা।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

ম্যারিলিন বার্চ স্কাই নিউজকে বলেন, এতো বছর পর আংটিটি খুঁজে পাওয়া সত্যিই অবাক করা বিষয়। ১৯৭০ সালে পারিবারিক খামারে গরুকে খড় খাওয়ানোর সময় আংটিটি হারিয়ে গিয়েছিল। পরে অনেক খোঁজার পরও না পেয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। ভেবে নিয়েছিলাম এটা আর কখনো পাবো না।

তবে শনাক্তবিদ কিথ ফিলিপসের মনে ছিল অন্য কিছু। তিনি খামারের লোকজনকে বিভিন্ন সময় সেখানকার ভূমি খননের পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। তাঁর হিসাবে, সেখানে মাটির নিচে অনেক মূল্যবান জিনিস থাকতে পারে।

সেখান থেকে পাওয়া বিভিন্ন মুদ্রা এবং বিটের টুকরা আমাদের দেখাতেন। কিন্তু আংটিটির খোঁজ মেলেনি। 

ম্যারিলিন বলেন, ‘এক সন্ধ্যায় ফিলিপস যখন খামার ত্যাগ করছিলেন, আমি তাঁকে ঠাট্টাচ্ছলে বলি, ফিলিপস শোনো, যেসব আবর্জনা তুমি উদ্ধার করেছ এসব ফেলো। যাও, আমার বিয়ের আংটিটি খুঁজে বের করতে পার কি না, দেখো।’

এ কথা শোনার পর তারা দুজনেই তখন হেসেছিল। তবে এক সপ্তাহ বা তারও কিছু সময় পরে ফিলিপস ম্যারিলিনের আংটিটি নিয়ে হাজির হন।

ম্যারিলিন বলেন, আংটিটিকে খামারের মাঠে মাটির প্রায় ৮ ইঞ্চি নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে সেটিকে তিনি ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করেছেন এবং তখন থেকেই তিনি এটিকে আঙ্গুল দিয়ে রেখেছেন।

মিসেস বার্চের স্বামী পিটার বার্চ গত জানুয়ারিতে ৮০ বছরে পা দিয়েছেন। সে উপলক্ষে অনুষ্ঠান করার কথা ছিল। কিন্তু এমন ঘটনার পর সব আয়োজন স্থগিত করা হয়েছে। এখন সবকিছু এই আংটিটি ঘিরেই হচ্ছে।

;

সাংবাদিকের ফেসবুকে পোস্ট: মিললো আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর, ইজিবাইক



রাকিবুল ইসলাম রাকিব, বার্তা২৪.কম, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) করেসপন্ডেন্ট
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

৭৭ বছরের বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানের স্ট্রোক হয়েছে একাধিকবার। এই বয়সে যখন তার বিছানায় শুয়ে-বসে বিশ্রাম করার কথা, তখন তাকে একটি রিকশার প্যাডেল মেরে অবিরাম ছুটে চলতে হয় ঢাকার রাস্তা-ঘাটে।

দিন শেষে যা আয় হয়, তার একটা অংশ নিজের জন্য রেখে, বাকিটা পাঠাতেন গ্রামে থাকা বৃদ্ধ স্ত্রীর কাছে। জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় এসে এভাবেই চলছিল তার দিনকাল।

হাবিবুরের ইচ্ছে ছিল, শেষ বয়সের সময়টা তিনি শহর ছেড়ে গ্রামে থাকা স্ত্রীর সঙ্গে কাটাবেন। কিন্ত সেখানে থাকার মতো ঘর ও জীবিকার নিশ্চয়তা না থাকায় বাধ্য হয়েই ঢাকায় রিকশা চালাতে হতো তাকে।

হাবিবুরের দুরবস্থার খবর জানার পর সে বিষয়ে ঢাকায় কর্মরত সাংবাদিক জ. ই. মামুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন।

সে পোস্টটি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেনের দৃষ্টিগোচর হয়। এরপর তার উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর উপহারের সুখবর পান হাবিবুর। পাশাপাশি হাবিবুরের কর্মসংস্থানের জন্য ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী তাকে একটি ইজিবাইক উপহার দেন।

এতে করে গ্রামের ফেরার ইচ্ছা ও গ্রামেই কর্মসংস্থানের সুযোগ মিলেছে এই অসহায় বৃদ্ধের।

হাবিবুর রহমানের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের সহনাটি ইউনিয়নে সোনাকান্দি গ্রামে।

বৃহস্পতিবার (২ মে) বিকেলে গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাকিল আহমেদ উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে জেলা প্রশাসকের দেওয়া উপহারের ইজিবাইকের চাবি হাবিবুর রহমানের হাতে তুলে দেন। পাশাপাশি সোনাকান্দি গ্রামে এই বৃদ্ধের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ কাজও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, বাবার মৃত্যুর পর জীবিকার তাগিদে ১৯৬৯ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে ঢাকায় এসে রিকশা চালানো শুরু করেন হাবিবুর রহমান। সংসারে তার স্ত্রী ও চার মেয়ে রয়েছে। মেয়েদের সবাই গরিব ঘরে বিয়ে হওয়ায় বাবাকে দেখার সামর্থ্য নেই তাদের। স্ত্রী থাকেন গ্রামের বাড়িতে। সেখানে মাত্র আধা শতাংশ ভিটে ছাড়া আর কিছু নেই হাবিবুর রহমানের। সে কারণে বাধ্য হয়েই ঢাকায় রিকশা চালাতেন তিনি। ঢাকায় মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় রাত্রিযাপন করতেন রাস্তায় রাস্তায়।

এদিকে, রিকশাচালক হাবিবুর রহমানের দুরবস্থা নিয়ে গত ২৫ এপ্রিল সাংবাদিক জ.ই. মামুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। পোস্টটি নজরে আসে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেনের। এরপরই নির্দেশনা আসে হাবিবুরকে তার এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার।

ওপর থেকে নির্দেশনা আসার পর গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাকিল আহমেদ সোনাকান্দি গ্রামে গিয়ে হাবিবুর রহমানের বাড়ি পরিদর্শনে করে দেখেন, তার মাত্র আধা শতাংশ জমি রয়েছে। এটুকু জমিতে ঘর নির্মাণ করা সম্ভব না হওয়ায় বিপত্তি বাধে। এ সময় হাবিবুর রহমানের জমির পাশেই দুই শতাংশ জমি দানের ঘোষণা দেন সহনাটি ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. দুলাল আহমেদ। ইতোমধ্যে, জমির দলিল সম্পাদন হয়ে গেছে। শিগগিরই ঘরের নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

হাবিবুর রহমান বলেন, সারাজীবন কষ্ট করেছি। আধা শতাংশ ভিটে ছাড়া নিজের আর কিছুই ছিল না আমার। সাংবাদিক মামুন ভাইয়ের লেখালেখির কল্যাণে এখন বাড়ি ও একটি ইজিবাইক হয়েছে। এখন স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আমার দিন ‘রাজার হালে’ কাটবে। আমি অনেক আনন্দিত ও খুশি। সেইসঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাসহ যারা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাকিল আহমেদ বলেন, বৃদ্ধ বয়সে হাবিবুর রহমানের রিকশা চালানো নিয়ে বিশিষ্ট সাংবাদিক জ.ই. মামুনের একটি পোস্ট প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মহোদয়ের দৃষ্টিগোচর হয়। তার প্রেক্ষাপটে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে হাবিবুরকে নিজ গ্রামে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তার কর্মসংস্থানের জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয় একটি ইজিবাইক উপহার দিয়েছেন। এছাড়াও হাবিবুর ও তার স্ত্রীকে বয়স্ক ভাতা দেওয়ারও উদ্যোগ নে্ওয়া হয়েছে।

 

;

টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম: রসে সেরা, স্বাদে সেরা!



আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, টাঙ্গাইল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

চমচমের কথা শুনলে কার না জিভে জল আসে! তারপরে যদি হয় সেই টাঙ্গাইলের চমচম! তাহলে তো কথাই নেই! ছোট-বড় সব বয়েসি মানুষের পছন্দের তালিকায় থাকে- টাঙ্গাইলের চমচম।

কথায় আছে, ‘চমচম, টমটম ও শাড়ি, এই তিনে টাঙ্গাইলের বাড়ি।’

টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচমের কথা তো সবারই জানা। কেবল নামেই নয়, আকৃতি আর স্বাদ-গন্ধেও এই মিষ্টি সেরাদের সেরা। ঐতিহ্য আর বাংলার লোক-সংস্কৃতির ইতিহাসের উত্তরাধিকার টাঙ্গাইল জেলা। জানা যায়, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচমের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আনুমানিক প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো ইতিহাস।

ইতিহাস বলছে, দশরথ গৌড় নামে এক ব্যক্তি ব্রিটিশ আমলে আসাম থেকে টাঙ্গাইলের যমুনা নদীর তীরবর্তী সদর উপজেলার পোড়াবাড়িতে আসেন। তিনি যমুনার পানি ও গরুর দুধ দিয়ে প্রথমে চমচম তৈরি শুরু করেন। পরে সেখানেই মিষ্টির ব্যবসা শুরু করেন তিনি। ধীরে ধীরে পোড়াবাড়িতে প্রায় অর্ধশত চমচম তৈরির কারখানা গড়ে ওঠে। এখন পোড়াবাড়ির সে জৌলুস আর নেই।

বর্তমানে ‘টাঙ্গাইল মিষ্টিপট্টি’ হিসেবে খ্যাতি পাওয়া শহরের পাচঁআনি বাজরের মিষ্টির দোকানগুলোতেও চমচম তৈরি ও বিক্রি হচ্ছে। এখানকার প্রতিটি মিষ্টির দোকানেই এখন নির্ভেজাল পোড়াবাড়ির চমচম পাওয়া যায়।

টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চম চম, স্বাদে সেরা, মানে সেরা, ছবি-বার্তা২৪.কম

এই পাঁচআনি বাজারে প্রায় অর্ধশত মিষ্টির দোকান রয়েছে। শহরের বিভিন্ন স্থানেই এখন গড়ে উঠেছে, চমচমের দোকান। চমচমের গড়ন অনেকটা লম্বাটে। হালকা আঁচে পোড় খাওয়া বলে রঙটা তার গাঢ় বাদামি। বাইরে থেকে দেখতে অনেকটা পোড়া ইটের মতো। বাইরেটা একটু শক্ত হলেও এর ভেতরের অংশ একেবারে নরম আর রসে টইটম্বুর। লালচে গোলাপি আভাযুক্ত ভেতরের নরম অংশের প্রতিটি কোষ কড়া মিষ্টিতে পূর্ণ। ঘন রস আর টাটকা ছানার গন্ধমাখা এ মিষ্টির স্বাদ অতুলনীয়। সুস্বাদু চমচম তৈরির মূল উপাদান দুধ, চিনি, পানি, সামান্য ময়দা ও এলাচ দানা।

বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশে এই পোড়াবাড়ির মিষ্টির সুনাম রয়েছে। বড় বড় মিষ্টির দোকানগুলোতে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ থেকে ১০ মণ চমচম তৈরি হয়। বর্তমানে মিষ্টি শিল্পে টাঙ্গাইলের ঘোষ ও পাল সম্প্রদায় বংশানুক্রমিকভাবে নিয়োজিত আছে। তবে দে, নাগ ইত্যাদি উপাধিধারী অনেকেও মিষ্টান্ন তৈরিতে নিয়োজিত হয়েছেন।

টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের ভৌগলিক নিদের্শক ইউনিট ভৌগলিক নিদের্শক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন-২০১৩ অনুয়ায়ী, চলতি বছরের (৯ জানুয়ারি) টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচমকে জিআই (জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এ স্বীকৃতি পাওয়ায় খুশি চমচম ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিন দেখা যায়, এই সুস্বাদু চমচম তৈরির কাজে জড়িত শত শত কারিগর কাজ করছেন। আগুনের তাপে তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে জ্বাল হচ্ছে চমচমের। নিজেদের তৈরি চমচম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় কারিগররাও খুশি।

বর্তমানে চমচম বিক্রি হচ্ছে, মান ভেদে তিনশ থেকে চারশ টাকা কেজি দরে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা লোকজন ছুটে আসেন মিষ্টির দোকানগুলোতে ঐতিহ্যবাহী চমচমের স্বাদ নিতে।

মিষ্টি কিনতে আসা সাগর বার্তা২৪.কমকে বলেন, টাঙ্গাইলের মিষ্টি আমাদের ঐতিহ্য ও আমাদের গর্বের। টাঙ্গাইলের পাঁচআনি বাজারে আসলে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের জন্য মিষ্টি কিনে নিয়ে যাই। ছোট বড় সবাই টাঙ্গাইলের মিষ্টি পছন্দ করেন।

মিষ্টি কিনতে আসা আরেকজন হরিপদ সরকার বলেন, টাঙ্গাইলের মিষ্টির সুনাম শুধু দেশেই নয়, সারাবিশ্বে ছড়িয়ে গেছে। আমি যেমন টাঙ্গাইলের মিষ্টির জন্য এসেছি, আমার মতো অনেকেই টাঙ্গাইলের মিষ্টি নিতে এসেছেন। এই মিষ্টির স্বাদ অন্যরকম! না-খেলে বোঝা যাবে না।

মিষ্টি ব্যবসায়ী গৌরাঙ্গ কর্মকার বলেন, আমাদের টাঙ্গাইলের ঐতিহ্য পোড়াবাড়ির চমচম। প্রায় দুইশ বছর আগে থেকেই টাঙ্গাইলে পোড়াবাড়ির মিষ্টি তৈরি হয়ে থাকে। টাঙ্গাইলের মিষ্টির সুনাম দেশ ও দেশের বাইরে রয়েছে। আমাদের পোড়াবাড়ির চমচমে ভেজাল কোনো কিছু যুক্ত করা হয় না। চমচম স্বাদ হওয়ার কারণ খাঁটি দুধ, ছানা ও ময়দা দিয়ে পোড়াবাড়ির চমচম তৈরি করা হয়। এজন্য এত স্বাদ! প্রতিদিন দোকানগুলিতে ৫ থেকে ১০ মণ মিষ্টি তৈরি করা হয়।

টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম তৈরিতে ব্যস্ত কারিগরেরা, ছবি- বার্তা২৪.কম 

মিষ্টি ব্যবসায়ী কালাচাঁদ বলেন, আমি ৪০-৪৫ বছর ধরে মিষ্টি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

তিনি বলেন, টাঙ্গাইলের মিষ্টি স্বীকৃতি পাওয়ায় আমাদের জন্য ভালো হয়েছে। মিষ্টির স্বীকৃতি পাওয়ায় আমাদের সুনাম সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। আমাদের মিষ্টি দেশের বাইরে পাঠাতে পারবো। আমাদের মিষ্টি চাহিদা আরো বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে আমাদের আগ্রহও বেড়ে যাবে।

সরকারের কাছে দাবি, বিদেশে এই মিষ্টি রফতানি করার ব্যবস্থা করলে আমাদের বিক্রি আরোও বাড়বে। তখন আমরা আরো বেশি বেশি মিষ্টি তৈরি করতে পারবো।

টাঙ্গাইল জেলা রেস্তোরাঁ ও মিষ্টি ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি স্বপন ঘোষ বলেন, সারাদেশে এই পোড়াবাড়ির মিষ্টির সুনাম রয়েছে। জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা মিষ্টি ব্যবসায়ীরা অনেক খুশি। এই মিষ্টি যদি বিদেশে রফতানি করা যায়, তাহলে আমাদের ব্যবসা আরো প্রসার পাবে।

তিনি বলেন, আমার বাবা মিষ্টির ব্যবসা শুরু করেন। বাবার হাত ধরেই মিষ্টির ব্যবসায় আসা। আমি করছি। আমার ছেলেও এই পেশায় আছে। পোড়াবাড়ির চমচমের ইতিহাস প্রায় দুইশ বছরের। টাঙ্গাইলের চমচম সুস্বাদু হওয়ার একটা কারণ হচ্ছে, গাভির দুধ চরাঞ্চল থেকে আসে। এখানকার দুধ অনেক ভালো হয় আর জলেরও একটা বিষয় আছে! দুধ, জল ও কারিগরের সমন্বয়েই এই মিষ্টির স্বাদ হয় অন্যরকম। মিষ্টিগুলো খুবই প্রাকৃতিক। এই মিষ্টি তৈরিতে কোনো ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না।

;

আধুনিকতার ছোঁয়ায় কমেছে শ্রমিকের কদর, কমেছে আয়

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’



অভিজিত রায় কৌশিক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
আধুনিকতার ছোঁয়ায় কমেছে শ্রমিকের কদর, কমেছে আয়/ছবি: নূর এ আলম

আধুনিকতার ছোঁয়ায় কমেছে শ্রমিকের কদর, কমেছে আয়/ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও কৃষি কাজে ও কলকারখানায় ব্যবহৃত হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। প্রযুক্তি ছোঁয়া বিভিন্ন সেক্টরে আমুল পরিবর্তন ঘটেছে। তবে পরিবর্তন হয়নি শ্রমজীবী মানুষের জীবনমানে। বরং কর্মক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহারে কমছে তাদের কাজের সংকুলান। কমেছে আয়-রোজগারও।

রাজধানীর গাবতলী ও আমিনবাজার সংলগ্ন তুরাগ নদী। এই নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে বালি ও কয়লা ভিত্তিক ব্যবসা। এক সময়ের জনপ্রিয় ও বহু লোকের কর্মসংস্থানের এই ব্যবসাতেও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। মানুষের পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে উন্নত প্রযুক্তির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। বালু লোডিং-আনলোডিং-এ যান্ত্রিকীকরণের কারণে কাজ হারিয়েছেন শ্রমিক। ফলে কমেছে শ্রমজীবী মানুষের কদর; প্রসার ঘটেছে উন্নত যন্ত্রাংশের।

কুমিল্লার বাসিন্দা মো. হান্নান। দীর্ঘদিন ধরে গাবতলীতে বালু ও কয়লা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। হান্নান জানালেন আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার তার উপার্জনের প্রভাব ফেলেছে।

যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ায় বেড়েছে শ্রমিকের কদ/ছবি: নূর এ আলম


এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘চার বছর এখানে এই কাজ করি। আগে ভালই ইনকাম হতো। এখন আর সেরকম ইনকাম হয় না। আগে এতো মেশিন ছিলো না সব কাজ আমরা করতাম। আর এখন সব মেশিনে করা হয়। শুধু যেগুলো মেশিন দিয়ে করা যায় না সেগুলো আমরা করি।’

তিনি আরও যোগ করেন, তাছাড়া আগে শ্রমিক কম ছিল। তখন মেশিনও ছিলো না। শ্রমিকদের চাহিদা ছিলো। কিন্তু এখন শ্রমিক বেশি, মেশিনও এসেছে। এক মেশিনে অনেক কাজ হয়; তাই চাহিদা কম। ইনকামও কম।

‘আগে দৈনিক দিন ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা ইনকাম করতে পারতাম। আর এখন সারাদিন কষ্ট করে কোন দিন ৫০০ কোন দিন ৬০০ টাকা ইনকাম করি। আবার কোন কোনদিন এর থেকে কমও ইনকাম হয়।’- বলেন এই শ্রমিক।

পাবনার বেড়ার কামরুজ্জামান ২০০৮ সালে ঢাকায় আসেন। টানা ১৬ বছর ধরে গাবতলী বালু ও কয়লার ঘাটে খালাসি শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন।

কঠোর পরিশ্রমের পর দিনশেষে যে মজুরি পান তা দিয়ে কোন রকমে চলে তাদের সংসার/ছবি: নূর এ আলম

‘এক একটা টালি মেরে ২ টাকা ৪ আনা হিসেবে টাকা পাই। এখন যন্ত্র আসাতে লেবারের কোন কাজ কাম নেই। সব মাল এখন মেশিনে ওঠায়। এজন্য লেবারের কাজ কমে গেছে। টালির এখন আর রেট নেই। কাজ না করেও উপায় নেই কি করবো? ঢাকা শহরে আছি কাম না করলে চলবো ক্যামনে।’- বলেন কামরুজ্জামান।

তিনি বলেন, এখন দিনে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা ইনকাম করতে পারি। আগে ভালোই ইনকাম হতো। কিন্তু এখন ৫০০ টাকা ইনকাম করতেই কষ্ট হয়ে যায়। হবে না আগে যেখানে একটি বাল্কহেড থেকে বালু খালাস করতে ১৫০ জন শ্রমিকের দুই দিন সময় লাগতো। সেখানে শুধুমাত্র একজন ক্রেন অপারেটর এবং চার-পাঁচজন শ্রমিক কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই করে ফেলে।’

মেহনতি এই মানুষটার কাছে শ্রমিক দিবস সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, আমাদের সব দিবসই সমান। কাম করলে টাকা, না করলে কোন টাকা নাই। এই জন্য আমাগো কোন ছুটির দিনও নেই। কাম করাই লাগে। এমনও মানুষ আছে ঘুম থেকে উঠে ভোরে কামে আসে। কাম না করলে সংসারই চলে না।

মূল্যস্ফীতি এখন লাগামহীন অবস্থায় আছে বলে মনে করে দেশের অন্যতম বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাচ্ছে। জিনিসপত্রের বাড়তি দাম মানুষের ওপর বোঝা হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় শ্রমজীবী মানুষের জীবন ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

তীব্র রোদ ও গরমে মাথায় করে বালু টানছে শ্রমিকরা/ছবি: নূর এ আলম


তীব্র রোদ ও গরমে মাথায় করে বালু টানছে নাজমা বেগম। তার ও স্বামীর উপার্জনে কোন রকমে সংসার চলে নাজমার।

এই নারী শ্রমিক বলেন, ‘এই গরমে কাজ করা যায় না। সারাদিন কাজ করলেও খুব বেশি ইনকাম হয় না। জিনিসের যা দাম বেড়েছে তাতে। এই ইনকামের টাকায় পরিবার চালানো অনেক কষ্টের। তাই আপনাগো ভাই সারাদিন রিকশা চালায় আর আমি এই কয়লা-বালি টানার কাজ করি।’

আগের মতো আয় নেই জানিয়ে শ্রমজীবী এই নারী বলেন, ‘আগেতো ভালই ইনকাম করতাম। কিন্তু এখন আর পারি না। এখন বেশিরভাগ মালিক মেশিন দিয়ে মালামাল নামায় তাই আমাদের লাগে না। আর সেভাবে ইনকামও হয় না। এখন কোন দিন ৩০০ টাকা, কোন দিন ৪০০ টাকা ইনকাম করি।’

এ বিষয়ে শ্রমিক নেতা ও ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের সদস্য সিরাজুল ইসলাম রনি বার্তা২৪.কম বলেন, ‘বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি, সে হারে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়েনি। সব সেক্টরে ন্যূনতম মজুরি অনুযায়ী বেতন-ভাতা না দিলে শ্রমিক বাঁচবে না। বিশেষ করে দিনমজুরদের অবস্থা করুণ। তাদের শ্রমের দামের বিষয়টি নিয়ে কেউ ভাবে না।’

;