ওয়াট রঙ খুন মন্দিরের ইতিহাস



অঞ্জনা দত্ত
-লেখক

-লেখক

  • Font increase
  • Font Decrease

(পূর্বপ্রবাশের পর)

কতদিন ধরে মনের মধ্যে পুষে রাখা যায় বলুন? তাই একবারে উগড়ে দিয়েছি। থাইল্যান্ড ভ্রমণের এই ইতিবৃত্ত পড়ার পরে আপনার মনে হবে যাই একবার ঘুরে আসি। থাইল্যান্ড তো আমাদের দেশ থেকে বেশি দূরে নয়।

‘ওয়াট’ শব্দের অর্থ থাই ভাষায় টেম্পল বা মন্দির। মসজিদকে Mosque বলা হয়। এটি থাইল্যান্ড এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলির বৌদ্ধ মন্দিরগুলিকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। বিশ শতকের শেষ দিকে, ওয়াট রং খুনের পূর্ববর্তী কাঠামো প্রায় ধ্বংসস্তূপে ছিল এবং বড় ধরনের মেরামতের প্রয়োজন ছিল। পুরানো মন্দিরের অনেক রেকর্ড পাওয়া যায়নি। এর পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছিল, তবে তহবিলের অভাবে এটি সম্পূর্ণ করা যায়নি।

তখন চিয়াং রাইয়ের একজন শিল্পী, চালেরমচাই কোসিটপিপাট, মন্দিরটিকে সম্পূর্ণরূপে পুনর্নির্মাণ করার এবং ব্যক্তিগতভাবে এই প্রকল্পে অর্থায়ন করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৯৭ সালে নির্মাণ শুরু হয়েছিল এবং এখনও চলছে। মন্দিরটি ২০১৪ সালের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল, তারপরে প্রকৌশলীদের একটি দল এটিকে নিরাপদ ঘোষণা না করা পর্যন্ত মন্দির বন্ধ ছিল।

হোয়াইট টেম্পল বা সাদা মন্দির বা ওয়াট রং খুন থাইল্যান্ডের সমকালীন, প্রচলিত ঐতিহ্যবিরোধী, ব্যক্তিমালিকানাধীন বৌদ্ধ মন্দিরের দৃষ্টিনন্দন এক শৈল্পিক উপস্থাপন। চালেরমাই কোসিটপিপাট প্রচলিত ধারণা ভেঙে এটিকে অন্য ধাঁচে নির্মাণ করার কথা ভাবেন। বিশেষ করে রঙের ব্যবহারে। মন্দিরের বাইরের অংশটি একটি উজ্জ্বল তুষার-সদৃশ সাদা, যা বিশুদ্ধতার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য এবং মন্দিরের উজ্জ্বলতা বা বুদ্ধের শিক্ষাকে বিশ্বে প্রতিফলিত করার আকাঙ্ক্ষার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল।

সাদা রঙ থাই বৌদ্ধ মন্দিরের জন্য একটি অত্যন্ত অস্বাভাবিক রঙ। কেননা বৌদ্ধ মন্দিরগুলো সাধারণত ঐতিহ্যগতভাবে সোনালি (অনেকসময় সোনাও ব্যবহার করে থাকে) বা লাল রঙের হয়ে থাকে। তবে শিল্পী মনে করেন সোনা খুব ঘনিষ্ঠভাবে লোভ বা লালসার সাথে জড়িত। সাদা রঙের শক্তিশালী ব্যবহার মন্দিরের মিশনের সাথে আলোকিত হওয়ার প্রতীক।

মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল ৬.৪ একর জমিতে। এ পর্যন্ত মন্দিরটি নির্মাণে চালেরমাচাই এর চল্লিশ মিলিয়ন থাই বাথ ব্যয় হয়েছে। তিনি মন্দির সংলগ্ন এলাকাটি শিক্ষা ও ধ্যানের কেন্দ্র এবং গৌতম বুদ্ধের শিক্ষাগ্রহণের সুফল লাভের উপযোগী করে গড়ে তুলতে চেয়েছেন। কোসিটপিপাট মন্দিরটিকে বুদ্ধের প্রতি নিবেদন বলে মনে করেন এবং বিশ্বাস করেন যে এই প্রকল্পটি তাঁকে মানুষের মাঝে অমর করে রাখবে। কোসিতপিপাটের কাজের জন্য নিবেদিত একটি ছোট জাদুঘর মন্দিরের পাশেই অবস্থিত।

মন্দিরের মধ্যে স্থাপিত শিল্পটি থাই বৌদ্ধ এবং হিন্দু ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ প্রদর্শন করে। শিল্পের সামগ্রিক চেহারা প্রায়শই এর জটিল বিবরণ এবং সাবধানে ফিলিগ্রেড প্রান্তের কারণে বিস্তৃত অলঙ্করণ হিসাবে বর্ণনা করা হয়। এটি পরাবাস্তবতার কিছু বৈশিষ্ট্যও প্রদর্শন করে এবং নাটকীয় চিত্রকল্পের ব্যাপক ব্যবহার করে। শৈল্পিক পছন্দগুলি অর্থের সমালোচনা এবং আধুনিক সমাজের সমস্যাগুলির মধ্যে নোঙর করা হয়। কোসিটপিপাট চায় মানুষ গ্রহে যে হিংসাত্মক প্রভাব ফেলছে তা প্রতিফলিত করুক।

মন্দিরের প্রবেশপথে, একটি পুকুর এবং একটি সরু সাদা সেতু রয়েছে যা মূল ভবনে যায়। এটি একটি খুব অলঙ্কৃত কাঠামো, প্রচুর ধর্মীয় চিত্র সমন্বিত। এটি কিন্নরদের দুটি মূর্তি দ্বারা সুরক্ষিত,থাই পৌরাণিক কাহিনীর অর্ধ-মানুষ এবং অর্ধ-পাখি প্রাণী যা মানুষকে রক্ষা করে বলে বিশ্বাস করা হয়। হোয়াইট টেম্পল ব্রিজের নকশার উপাদানগুলি যা ওয়াট রং খুনের মূল কাঠামোর দিকে নিয়ে যায় সেগুলির অনেকগুলি আধ্যাত্মিক নকশার উপাদান রয়েছে। সামগ্রিকভাবে, সেতুটি পেটুক অভ্যাস এবং লোভ এবং পেটুকতার সাথে যুক্ত পাপের পূর্বোক্ত প্রতীক।

মন্দিরের সামনে প্রদীপ কুমার দত্তের সঙ্গে লেখক

আরও পড়ুন: অসাধারণ এক ভ্রমণক্লান্ত দিবসের কাহিনি 

মন্দিরটির বিভিন্ন স্ট্রাকচার বিভিন্নধরনের অর্থ বহন করে আগেই বলেছি। যেমন সাদা মন্দিরের মূল ভবন উবোসোটে একটি ছোট হ্রদের উপরিস্থিত সেতু অতিক্রম করে যেতে হয়। সেতুটির সামনে অসংখ্য প্রসারিত হাত মানুষের অবারিত আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। সেতুটি লোভ, মোহ ও কামনা অতিক্রান্ত করে সুখলাভের শিক্ষা দেয়। হ্রদের সম্মুখভাগে বৌদ্ধ পুরাণের অর্ধ নরদেহ ও অর্ধ পক্ষিদেহ বিশিষ্ট দুজন কিন্নর দণ্ডায়মান আছে।

অনেক দর্শনার্থী খোদাই করা এবং ঊর্ধ্বমুখী হাতের দ্বারা গভীরভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয় যা মনে হয় সেতুটিকে ঘিরে রেখেছে যখন এটি মূল মন্দির কাঠামোর পথে একটি সেতু অতিক্রম করে। অনেকের জন্য,বেদনাদায়ক হাত নরকের দীর্ঘকাল ধরে রাখা মানসিক চিত্রগুলিকে উস্কে দেয়। তারা খালি খাবারের বাটি ধরে রাখে এবং যন্ত্রণায় চিৎকার করছে। অন্যরা একটি প্রসারিত মধ্যম আঙুল প্রদর্শন করে একটি পেরেক দিয়ে লাল আঁকা। কিছু দাতব্য এবং অপূর্ণ চাহিদা প্রতিনিধিত্ব করে।

স্বর্গের দ্বার: সেতু পার হয়ে দর্শনার্থীরা স্বর্গের দ্বারে এসে পৌঁছান। দ্বারটি মৃতের ভাগ্যনির্ধারণকারী মৃত্যু ও রাহু দ্বারা প্রহরাধীন। এছাড়া উবোসোট এর সামনে বেশ কয়েকটি ধ্যানমগ্ন বুদ্ধমূর্তি রয়েছে।

উবোসোট (গর্ভগৃহ): দর্পণ ও কাঁচ দ্বারা বহির্ভাগ সজ্জিত করা সম্পূর্ণ সাদা রঙের উবোসোট মন্দিরটির মূল স্থাপনা। এতে থাইল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের প্রতিফলন ঘটেছে, যেমন ত্রিকোণাকার ছাদ এবং যত্রতত্র পৌরাণিক নাগ এর প্রতিকৃতি। মন্দিরের অভ্যন্তরে সাজসজ্জা শুদ্ধ সাদারং থেকে ক্রমশ উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে থাকে। ম্যুরালে কমলা রঙের অগ্নিশিখা ও দানবের মুখ চিত্রায়িত হয়েছে।

মন্দিরের মূল ভবনটি একটি কাঠের ছাদ সহ একটি সাধারণ কংক্রিটের ফ্রেমযুক্ত কাঠামো। বাইরের সমস্ত অংশ কাঁচের সন্নিবেশ সহ সাদা প্লাস্টারে আবৃত ছিল। কাঁচটি বুদ্ধের জ্ঞানের প্রতীক হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল এবং সাদা রঙ দেবতার বিশুদ্ধতার প্রতিনিধিত্ব করে। ছাদ এবং দেয়ালে প্রচুর অলঙ্কার এবং অলঙ্করণের পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী থাই স্থাপত্য উপাদান রয়েছে, যেমন তিন-স্তর বিশিষ্ট ছাদ এবং প্রান্তে স্টাইলাইজড সাপ।

সোনালি ভবন: এটি সোনালি রঙের একটি বহিঃস্থিত স্থাপনা। এটি একটি সুসজ্জিত সোনালি দালান, যা দেহের প্রতীক এবং সাদা উবোসোটটি মনের প্রতীক। সোনালি রং মানুষের ঐহিক কামনা-বাসনা ও টাকার লোভ বুঝিয়ে থাকে। সাদা ভবনটি নশ্বর সম্পদের মোহ দূর করে মনের প্রতি মনোযোগী হওয়ার তাৎপর্য বহন করে। থাই নাগরিকদের জন্য বিনামূল্যে প্রবেশের ব্যবস্থা আছে, এবং অ-থাই নাগরিকদের জন্য প্রবেশ ফি ১০০ বাথ। প্রকল্পে কেউ অনুদান দিতে পারবেন, তবে তা ১০০০০ বাথের বেশি নয়। চালেরমাচাই বৃহৎ দাতাগোষ্ঠী দ্বারা প্রভাবিত হতে চান না।

আর একটি কথা উল্লেখ না করলেই নয় ভারতীয় উপমহাদেশের সাথে তুলনা করলে তাহলো প্রত্যেকটি মন্দিরে (এটি ছাড়াও) ওয়াশরুমের খুব ভালো ব্যবস্থা রয়েছে। হোয়াইট টেম্পলে পাঁচ বাথ করে টিকেট কাটতে হয়। কোনো কোনো মন্দিরে তাও লাগে না। অথচ পরিচ্ছন্নতার কোনো ঘাটতি নেই।

আমাদের দেশে দেখার মতো মন্দির আছেই বা কয়টা? কিন্তু ভারতবর্ষ এই ব্যাপারে অনেক পিছিয়ে আছে। কমপ্লেক্সে শুধুমাত্র একটি বিল্ডিং আছে যেটি সাদা নয়, এবং সেখানেই শৌচাগার রয়েছে। অর্থ এবং ঐশ্বর্য নিয়ে মানুষের সাধারণ আবেশের সমালোচনা হিসাবে এটিকে সোনালি রঙ দেওয়া হয়েছে।

হোয়াইট টেম্পল দেখা শেষ হলে (শেষ কী আর হয়!) এলিসা ( ট্যুর গাইডের নাম) আমাদের লাঞ্চ সেরে নিতে বলল। তখন প্রায় বারোটা বাজে। এই অঞ্চলের লোকেরা ঠিক বারোটায় তাদের লাঞ্চ সেরে নেয়। এটি সিঙ্গাপুরেও দেখেছি। বেইজিং এও। ভিয়েতনামের কথা ঠিক মনে নেই। এবারের গন্তব্য গোল্ডেন ট্রায়াংগেল। তবে এককালের আফিমের চাষের জন্য বিখ্যাত গোল্ডেন ট্রায়াংগেল নিয়ে পরে লিখব।

এই পর্যন্ত ভারতীয় উপমহাদেশে এবং শ্রীলঙ্কা, মায়ানমারে, থাইল্যান্ডে এবং অন্যান্য জায়গায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির ও বৌদ্ধ মন্দিরের মধ্যে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে  Shwedagon  এর পরে চিয়াংরাই এর নীল বৌদ্ধ মন্দির অকল্পনীয় সৌন্দর্যমন্ডিত। আমার দেখা ভারতের কোনো মন্দিরের সাথে তুলনা করতে পারব না। তবে এটা ঠিক যে ভারতীয় মন্দিরগুলো যে ভাবধারাকে আশ্রয় করে নির্মিত হয়ে থাকে, বৌদ্ধ মন্দিরের থিম ভিন্ন ধর্মের।

উষ্ণ জলে পা ভেজানো ভ্রমণে নতুন মাত্রা আনে

আবার অনেকেই গৌতম বুদ্ধকে সনাতনধর্মের একজন অবতার মনে করেন। এটা মনে হয় ঠিক নয়। শাক্যমুনী তো সম্পূর্ণ অন্য ধর্মের প্রচার করেছিলেন। যার সাথে সনাতন ধর্মের তেমন কিছু মিল নেই। শুধু নির্বাণ লাভ বা মোক্ষ লাভের কথা বলা হয় দুই ধর্মে। এটি নিজেদের ভগবানের কাছে সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করে, তাঁর ওপর বিশ্বাস রেখে প্রতিটি কাজে ঈশ্বরের ওপর আস্থা রেখে কাজ করে গেলে আশা করা যায় একদিন সে বা তিনি নির্বাণ বা মোক্ষ লাভ করবেন।

এবারে চিয়াংমাইতে সনাতন ধর্ম এবং বৌদ্ধ ধর্মের মধ্যে একধরনের ককটেল আবিষ্কার করেছি৷ এই প্রথম দেখলাম বৌদ্ধ মন্দিরে আমাদের সিদ্ধিদাতা গণেশ বাবাজির ছবি এবং মা লক্ষ্মীর মূর্তি। দেখে খুব চমৎকৃত হলাম। বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে যারা সন্ন্যাস জীবনকে বেছে নেন... নানারকম পর্যায়ে হতে হয়। বেশ কষ্টের কিন্তু এই পথ।

কিন্তু আমাদের মতো আমজনতা মার্কা ধর্মপালনকারীরা বুঝে গিয়েছে জাগতিক পৃথিবীতে ধনদৌলত ছাড়া কোনো কাজ  হয় না। তাই মনে হয় বৌদ্ধ মন্দিরে গণেশ বাবাজী এবং মা লক্ষীর স্থান হয়েছে৷ বৌদ্ধদের মধ্যে অন্য কারণ থাকলে সেটি উল্লেখ করতে পারেন। তবে স্বীকার করতেই হবে সেই মন্দিরগুলোর স্থাপত্যশৈলী অনবদ্য, দৃষ্টিনন্দন।

ব্লু টেম্পল (ওয়াট রং সুয়া টেন) হল চিয়াং রাইয়ের সবচেয়ে নতুন মন্দির। রিমকক জেলার চিয়াং রাই শহর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ২০০৫ সালে এই ধরনের মন্দির নির্মাণ করার কথা হয়েছিল। এটি ২০১৬ সালে সম্পন্ন হয়েছিল। (সমাপ্ত) 

লেখক: কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও পরিব্রাজক

   

বিলের মাঝে উড়োজাহাজ! দেখতে আসেন সবাই!



ছাইদুর রহমান নাঈম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজীপুর (কাপাসিয়া) থেকে ফিরে: দূর থেকে দেখে হবে, ধানের জমির মাঝে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে, এক উড়োজাহাজ। কাছে গেলেই দেখা যাবে, কাগজ দিয়ে তৈরি উড়োজাহাজের আদলে তৈরি একটি ডিজাইন।

ভুল ভাঙবে তখন, যখন ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে, আসলে এটি একটি রেস্টুরেন্ট, উড়োজাহাজ নয়! গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার তরগাঁও ইউনিয়নের পূর্ব খামের গ্রামের রফিক নামে এক তরুণ তৈরি করেছিলেন এই ‘বিমান বিলাশ রেস্টুরেন্ট’টি।

কয়েক বছর আগে এই রেস্টুরেন্ট-মালিক প্রবাসে চলে গেলে এটিও বন্ধ হয়ে যায়। তারপরেও এটিকে একনজর দেখার জন্য বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখানে ছুটে আসেন। উড়োজাহাজ আকৃতির এই দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন তারা।

সরেজমিন দেখা যায়, পলিথিন দিয়ে কারুকার্য করে তৈরি করা এটিতে রয়েছে জানালা ও একটি দরজা। কাঠের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হয়। এখানে শিশুদের আনাগোনাই বেশি। বড়দের হাত ধরে এসে এই দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে বাড়ি ফিরে যায় তারা।

গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ধানক্ষেতের মাঝে উড়োজাহাজ আকৃতির রেস্তরাঁ । নাম- 'বিমান বিলাশ রেস্টুরেন্ট' , ছবি- বার্তা২৪.কম

এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে এটি দেখার জন্য অনেক মানুষ এখানে ছুটে আসেন। এছাড়াও আশপাশের জায়গাগুলোও বেশ মনোরম। প্রকৃতির ছোঁয়া পাওয়া যায়। সে কারণে সবসময়ই লোকজন এখানে বেড়িয়ে যান।

প্রথম যখন উড়োজাহাজ আকৃতির এই রেস্টুরেন্টটি তৈরি করা হয়, তখন এটি দেখতে আরো বেশি সুন্দর ছিল। রাতেও মানুষজন আসতেন। গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এটি দেখে আসল উড়োজাহাজে চড়ার স্বাদ নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়।

;

শিশু রায়হানের শ্রমেই মা-নানার মুখে দুমুঠো ভাত ওঠে!



শাহজাহান ইসলাম লেলিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নীলফামারী
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

আমার বাবা মারা গেছেন দুই বছর আগে! আমার বাবা মারা যাওয়ার পরে আমাকে আর মাকে চাচারা বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আমার নানা বৃদ্ধ মানুষ। নানী মারা গেছে। আমরা তার বাড়িতে থাকি।

আমার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে আর আমি স্কুল শেষে হাসপাতালে এসে খেলনা ও বেলুন বিক্রি করি। আমার টাকা দিয়ে চাল কিনি। আমার মায়ের টাকা দিয়ে তরকারি কিনি, বার্তা২৪.কমের সঙ্গে আলাপচারিতায় এমন কথা বলছিল পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া রায়হান ইসলাম।

রায়হান ইসলাম নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের নিতাই ইউনিয়নের মৃত আবু বক্কর আলীর ছেলে ও স্থানীয় নিতাই ডাঙাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে রায়হানকে খেলনা ও বেলুন বিক্রি করতে দেখা যায়। এসময় হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজনেরা তাদের সন্তানদের আবদার পূরণ করতে রায়হানের কাছ থেকে এসব খেলনা কিনছেন।

দারিদ্র্যের কষাঘাতে বাস্তবতা যেন বুঝতে শিখেছে রায়হান। প্রচণ্ড দাবদাহে ও তাপপ্রবাহের মধ্যেও রোদে পুড়ে মায়ের আর বৃদ্ধ নানার মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে যেন রায়হানের চেষ্টার শেষ নেই।

খেলার বয়সে খেলনা আর বেলুন হাতে ছোটে বিক্রি করতে। মাঝে-মধ্যে কোনো ক্রেতা না থাকলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই রাস্তায় দাঁড়িয়ে খেলনা আর বেলুন বিক্রি করে রায়হান। খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকার কথা থাকলেও বাধ্য হয়ে এই বয়সে ছুটতে হয় পথেঘাটে। দারিদ্র্য রায়হানকে ঠেলে দেয় কাঠফাঁটা রোদের জগতে।

খেলার বয়সে খেলনা বিক্রি করতে ছোটে অসুস্থ মায়ের মুখে দুটো ভাত তুলে দিতে, ছবি: বার্তা২৪.কম

রায়হান বলে, আমি পড়ালেখা করে বড় কিছু করে আমার মায়ের কষ্ট দূর করতে চাই! আমাদের খবর কেউ নেয় না। আমার মা অসুস্থ! মানুষের বাসায় বেশি কাজও করতে পারে না। আমি এগুলো বিক্রি করে রাতে বাজার নিয়ে যাই।

আমাদের কেউ সাহায্য করে না! আমি যে টাকা আয় করি, তা দিয়ে আমার মা আর নানার জন্য চাল, ডাল কিনি। মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন জিনিসও কিনতে হয় এই টাকা দিয়ে। সব কিছু এই বিক্রির টাকা থেকেই কিনি!

এবিষয়ে নিতাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোত্তাকিমুর রহমান আবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছিলাম। তবে বিষয়টা সেভাবে ভাবিনি! আগামীতে কোনো সুযোগ এলে আমি তাদের তা দেওয়ার চেষ্টা করবো।

কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম আশিক রেজা বলেন, খোঁজখবর নিয়ে তাকে যেভাবে সাহায্য করা যায়, আমরা সেটি করবো।

বিদায় নিয়ে আসার আগে রায়হান বলে, আমাদের নিজের একটা বাড়ি করবো। আমার মাকে নিয়ে সেখানে সুখে থাকবো। পরে সারাক্ষণ শুধু কানে বাজতেই থাকে- আমাদের নিজের একটা বাড়ি করবো। আমার মাকে নিয়ে সেখানে সুখে থাকবো! আমাদের নিজের…!

;

তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ

২৯ এপ্রিল: আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস



প্রমা কান্তা, ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে
তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ।
তারি সঙ্গে কী মৃদঙ্গে সদা বাজে
তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ’॥

কিংবা-
‘সৃজন ছন্দে আনন্দে নাচো নটরাজ
হে মহকাল প্রলয়–তাল ভোলো ভোলো।।
ছড়াক তব জটিল জটা
শিশু–শশীর কিরণ–ছটা
উমারে বুকে ধরিয়া সুখে দোলো দোলো’।।

রবিঠাকুর বা কাজী নজরুল ইসলামের কলমে ছন্দ তোলা এ পংক্তি যেন মনের ভাব প্রকাশের এক অনন্য শিল্প। এ গানগুলো শুনলেই আনমনে আমরা নেচে উঠি।

নাচ বা নৃত্য আনন্দ প্রকাশের চেয়েও আরো বেশি কিছু; শুদ্ধ শিল্প চর্চার পরিশীলিত রূপ। নৃত্যের মুদ্রার শিল্পে মনের পর্দায় প্রকাশ পায় অব্যক্ত ভাব ও ভাষা। নৃত্য প্রাচীন সংস্কৃতির অংশ এবং ভাষার বাহনও বটে। সেটির আরো শিল্পিতরূপ তুলে ধরে ক্ল্যাসিক ধারার নৃত্য। প্রণয়ীর কাছে প্রণয়িনীর কিংবা প্রণয়িনীর কাছে প্রণয়ীর আত্মনিবেদনের চিরায়ত ধারা কিংবা সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে নিবেদন নৃত্যের ভাষা। মনের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ নৃত্যের মুদ্রার ভাষায় ভেসে ওঠে।

নৃত্যের মাহাত্ম্য ও প্রয়োজনীয়তার বার্তা ছড়িয়ে দিতে উদযাপন করা হয়- আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস। প্রতিবছর ২৯ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী নিজের পছন্দের নৃত্যের মুদ্রার মাধ্যমে উদযাপনে মেতে ওঠেন বিভিন্ন দেশের নৃত্যশিল্পীরা। নৃত্য বিনোদন ও আনন্দ প্রকাশের সবচেয়ে পরিশীলিত শিল্প মাধ্যম।

আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস উপলক্ষে বার্তা২৪.কমের সঙ্গে নিজের আবেগ আর অনুভূতি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহকারী পরিচালক জুয়েইরিয়াহ মৌলি (প্রোগ্রাম প্রোডাকশন- নৃত্য)।

মৌলি বলেন, নৃত্য শুধু বিনোদন বা পরিবেশনার বিষয় নয়। নৃত্যের তাত্ত্বিক দিকটিও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নৃত্য নিয়ে গবেষণার প্রচুর সুযোগ আছে। পেশাগত জায়গা থেকে নৃত্য সমাজে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত হোক!

তিনি বলেন, শুদ্ধ নৃত্য চর্চার মাধ্যমে শিল্পীরা নিজের এবং সমাজের কথা তুলে ধরুক। আজকের দিনে এটাই আমার প্রত্যাশা!

ধ্রুপদী নৃত্য, ছবি- সংগৃহীত

সৃষ্টির শুরু থেকেই তাল ও ছন্দের অস্তিত্ব রয়েছে প্রকৃতিতেও। আকাশে মেঘের আন্দোলন, বাতাসে দুলে ওঠা গাছের পাতা, দল বেঁধে পাখিদের উড়ে চলা, ফুলে মৌমাছির মধু বা প্রজাপতির গরল আহরণ, পানিতে মাছেদের ছলছল চলা, এমনকী বৃষ্টির আগমনে ময়ূরের পেখম তুলে দুলে ওঠা, সবাই যেন ছন্দে নেচে মেতে ওঠে আনন্দে।

আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসের উদযাপনের বিষয়ে উইকিপিডিয়াতে বলা হয়েছে- ফরাসি নৃত্যশিল্পী তথা আধুনিক ব্যালের রূপকার জ্যাঁ-জর্জেস নভেরের জন্মদিন উপলক্ষে ইউনেস্কোর 'পারফর্মিং আর্টস'-এর প্রধান সহযোগী আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইনস্টিটিউটের (আইটিআই) নৃত্য কমিটির উদ্যোগে প্রতিবছর ২৯ এপ্রিল এই দিনটি উদযাপন করা হয়।

আইটিআই ও ইন্টারন্যাশনাল ডান্স কমিটি ১৯৮২ সালে প্রথমবার ‘আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস’ উদযাপন শুরু করে।

;

এক ঘরেই তিন বলী



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

  • Font increase
  • Font Decrease

চুল থেকে দাড়ি-সবই সফেদ। হাঁটাচলায় মন্থর। স্বাভাবিকভাবেই প্রবীণের বয়সটা আঁচ করা যায় প্রথম দেখাতেই। কিন্তু তার ষাটোর্ধ্ব বয়সটা যেন কেবল ক্যালেন্ডারের হিসাব। বয়স যতই ছোবল বসানোর চেষ্টা করুক না কেন-তিনি যেন এখনো ২৫ এর টগবগে তরুণ। সেই বলেই তো ফুসফুসের রোগবালাইকে তুড়ি মেরে ঐতিহাসিক আবদুল জব্বারের বলীখেলা এলেই হাজির হয়ে যান রিংয়ে। এক দুবার নয়, এবার কিনা পূর্ণ হলো সুবর্ণজয়ন্তী!

চট্টগ্রামের অন্যতম আবেগের ঠিকানা ঐতিহাসিক এই বলীখেলার বড় বিজ্ঞাপন হয়ে ওঠা এই বলীর নাম খাজা আহমদ বলী। ৫০ বছর ধরে বলীখেলায় অংশ নিয়ে দর্শকদের আনন্দ দিয়ে যাওয়া এই বলীর এখন পড়ন্ত বয়স। ফুসফুসে বাসা বেঁধেছে রোগ। কানেও শোনেন কম। খাজা আহমদ বুঝে গিয়েছেন, তার দিন ফুরাচ্ছে। কিন্তু তিনি যে বলীখেলার স্মৃতি থেকে সহজেই মুছে যেতে চান না। সেজন্যই উত্তরসূরী হিসেবে এরই মধ্যে গড়ে তুলেছেন নিজের দুই ছেলেকে। বাবার পাশাপাশি দুই ভাইও এখন বলীখেলার নিয়মিত প্রতিযোগী।

খাজা আহমেদ বলীর বাবাও বলীখেলায় অংশ নিতেন। বাবার সঙ্গে বলীখেলায় এসে ১৯৭৪ সালে শখের বসে খেলতে নামেন খাজা আহমেদও। বয়স তখন ১২ বছরের আশপাশে। সেই শুরু, আর কোনোদিন মিস করেননি বলীখেলায় অংশ নেওয়া। একবার চ্যাম্পিয়নের গৌরবও অর্জন করেছিলেন। বহু বছর ধরে খাজা আহমেদ বলী ও সত্তরোর্ধ্ব মফিজুর রহমানের ‘বলীযুদ্ধ’ জব্বারের বলীখেলার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে এই দ্বৈরথ হয়তো আর দেখা যাবে না। দুই বছর আগে উৎপত্তি হওয়া ফুসফুসের রোগটা ইদানিং যে খাজা আহমদকে বেশিই ভোগাচ্ছে। সেজন্য গতবছর অবসরের ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এবার দুই ছেলেকে নিয়ে বলীখেলায় এসে আবেগ সামলাতে পারেননি খাজা আহমেদ। ছেলেদের সঙ্গে নিজেও নেমে পড়েন রিংয়ে। সেজন্য আরও একবার মফিজুর রহমান-খাজা আহমেদের লড়াই দেখল হাজারো দর্শক। যদিওবা যৌথ বিজয়ী ঘোষণা করে দুজনের মুখেই হাসি ফুটিয়েছেন রেফারি।

প্রতিপক্ষ মফিজুর রহমানের সঙ্গে বলী-যুদ্ধে খাজা আহমদ

কেন অবসর ভাঙলেন এমন প্রশ্নে হাসি খেলা করে যায় খাজা আহমেদ বলীর মুখে। বলতে থাকেন, ‘বয়সের কারণে শরীর দস্ত। ফুসফুসও ঠিকঠাক কাজ করছে না। সেজন্য অবসর নিয়েছিলাম। কিন্তু বলীখেলায় আসার পর দেখলাম দর্শকেরা সবাই অনুরোধ করছেন। সেজন্য মন বলল, না খেললে দর্শকদের প্রতি অন্যায় হবে। আর আবেগ ও ভালোবাসার কাছে বয়স-রোগ পেরেছে কবে?’

তবে এখানেই সব শেষ, বলে দিয়েছেন খাজা আহমেদ বলী। বলেছেন, ‘বয়স হয়ে গেছে। মনে হয় না আর খেলতে পারব। অসুখটা বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে। সেজন্য মনে মনে মেনে নিয়েছি এটাই আমার শেষ অংশগ্রহণ। বাকিটা আল্লাহর হাতে।’

তিন ছেলে ও এক মেয়ের বাবা খাজা আহমদের বাড়ি চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায়। কৃষিকাজ করেই চলে সংসার। তবে বলীখেলা এলে সব কাজ বাধ। কয়েকদিন ধরে চলে প্রস্তুতি। নিজের স্মৃতি ধরে রাখতে এরই মধ্যে খাজা আহমেদ নিজের দুই ছেলেকে গড়ে তুলেছেন বলী হিসেবে। ২০১২ সাল থেকে বলীখেলায় নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন তার বড় ছেলে মো. সেলিম। গত বছর থেকে যোগ দিয়েছেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। এখন বলীখেলার আগে দুই ছেলেকে নিয়ে চলে খাজা আহমদের প্রস্তুতি।

জানতে চাইলে সেলিম বলেন, ‘বাবার কাছ থেকে আমরা বলীখেলা শিখেছি। বয়সের কারণে বাবা এখন অসুস্থ। হয়তো আর খেলা হবে না। সেজন্য তার উত্তরসূরী হিসেবে আমরা বলীখেলায় অংশ নেব সামনের দিনগুলোতে। এটা শুধু পরিবারের বলীর প্রজন্ম ধরে রাখার জন্য নয়, তরুণদের মাদক-সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেকে দূরে রাখতে উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগও।’

বাবাকে পাশে রেখে একই কথা বললেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। বলেন, ‘হয়তো বাবা আর খেলবেন না। তবে তিনি না খেললেও যতদিন বেঁচে থাকবেন বলীখেলা দেখতে আসবেন। রিংয়ের নিচে দাঁড়িয়ে আমাদের উৎসাহ দিয়ে যাবেন।’

ছেলের কথা শুনে আবেগ খেলে যায় খাজা আহমেদ বলীর মনে। কাঁধের গামছাটা হাতে তুলে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘না খেললেও যতদিন বাঁচি এখানে, এই বলীর মাঠ লালদীঘি ময়দানে ছুটে আসব। এটা থেকে দূরে থাকতে পারব না।’

খাজা আহমেদ যখন কথা বলছিলেন দূরে কোথাও তখন মাইকে বাজছিল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই অমর গান। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় অক্লান্ত গলায় গেয়ে চলেছেন, যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে...

;