ভারতীয় ধনকুবেরদের উত্তরাধিকার পরিকল্পনা!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: মুকেশ আম্বানি

ছবি: মুকেশ আম্বানি

  • Font increase
  • Font Decrease

পারিবারিক ব্যবসা ভারতীয় অর্থনীতির মেরুদণ্ড। দেশটির জিডিপির প্রায় ৭৫ শতাংশেরও বেশি অবদান রাখে এসব ব্যক্তি মালিকানাধীন তথা পারিবারিক ব্যবসায়গুলো। আম্বানি, আদানি, বিরলাসহ এমন বড় বড় ব্যবসায় সাম্রাজ্যের উদাহরণ রয়েছে ভারতে।

সম্প্রতি ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার্স ইনডেএক্সের এক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে এমন ১০টি পারিবারিক ব্যবসায় রয়েছে যাদের সমষ্টিগতভাবে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৩৮২ বিলিয়ন ডলার। আর ইতিমধ্যেই এসব পরিবারের ৪০ বছর বা তার কম বয়সী উত্তরাধিকাররা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অবস্থান করছেন।

যদিও ভারতের পারিবারিক ব্যবসার জন্য বিরাট সুযোগ সামনে রয়েছে। আর এ ব্যবসায়ের পরিমাণ অভূতপূর্ব হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে পারিবারিক ব্যবসায় টিকে থাকার ক্ষেত্রেও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। পারিবারিক ব্যবসায় টিকে থাকার পেছনে কিছু কারণ রয়েছে এগুলো হল আর্থিক অব্যবস্থাপনা, পারিবারিক দ্বন্দ্ব এবং মতবিরোধ, বাহ্যিক কারণ যেমনঃ সরকারী নীতি বা প্রতিযোগিতা, নেতৃত্বের সমস্যা ইত্যাদি। অনেক পারিবারিক ব্যবসায় টিকে থাকতে না পারার একটি বড় কারণ হল উত্তরাধিকার পরিকল্পনা।

উত্তরাধিকার পরিকল্পনা হল বর্তমান মালিকদের কাছ থেকে ব্যবসার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য একটি ব্যবসার মূল অবস্থানের উত্তরসূরিদের শনাক্তকরণ এবং বিকাশ করার প্রক্রিয়া। এটি ব্যবসার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করে, পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্ব এড়াতে সাহায্য করে এবং পরিবারের উত্তরাধিকার সংরক্ষণে সহায়তা করে। আম্বানি, আদানিরা পারিবারিক দ্বন্দ্ব এড়াতে সম্পদের উত্তরাধিকার নকশা অনুযায়ী সম্পদ বণ্টনের পরিকল্পনা করে থাকেন।

আর ঠিক এ কারণেই চীনের ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যবসায়ের উত্তরসূরী থেকে ভারতীয় উত্তরাধিকার পরিকল্পনা অনেকটাই সফল।

এই উত্তরাধিকার পরিকল্পনা ও সম্পদের ব্যবধান দুই দেশের ভিন্ন ভিন্ন অর্থনৈতিক গতিপথকে প্রতিফলিত করে। যদিও দুর্বল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে চীনা স্টকগুলো হ্রাস পেয়েছে। এতে দেশটির বিলিয়নেয়ারদের ভাগ্যেও অন্ধকার নেমেছে। কিন্তু ভারতের পারিবারিক ব্যবসায়ের সফলতার দীর্ঘমেয়াদী সম্ভাবনায় আশা বাড়ছে এবং এর ইক্যুইটি বর্তমানে সর্বকালের আর্থিক উচ্চতায় লেনদেন করছে।

এতে করে ভারতীয় অর্থনীতির প্রসারিত হওয়ার পাশাপাশি ই-কমার্সের মতো নতুন নতুন ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য এসেছে।

বিশ্বের জনবহুল দেশেগুলোর বেশিরভাগই তাদের ব্যবসায়ে অল্প বয়স্ক ভোক্তাদেরকে টার্গেট করে পরিচালনা করে থাকেন। এছাড়া এসব ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের পিতৃপুরুষরা তাদের সন্তানদের যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে গড়ে তুলতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠান।

উদাহরণ হিসেবে বিরলাদের কথাই বলা যায়। বিরলা গ্রুপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজ ভারতের প্রাচীনতম ব্যবসাগুলোর মধ্যে একটি। এটি ভারতের প্রাক-স্বাধীনতার যুগে ১৬৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে পরিচালিত হয়ে আসছে। সম্প্রতি বিরলা পরিবারের বর্তমান পিতৃপুরুষ কুমার মঙ্গলম বিরলা তার উত্তরাধিকারী গায়িকা অনন্যা এবং প্রাক্তন ক্রিকেটার আর্যমান বিক্রমকে তাদের ব্যবসায়ের তিনটি বোর্ডের দায়িত্ব দিয়েছেন। সে সময় কুমার মঙ্গলম বিরলা বলেছিলেন, নতুন-যুগের ব্যবসায়িক মডেল সম্পর্কে জানতে এবং ভোক্তাদের আচরণ পরিবর্তনে এই বোর্ড নতুন শক্তি জোগাবে।

এখানে একটা বিষয় উল্লেখ্য, ভারতে পারিবারিক ব্যবসায়ের প্রতিষ্ঠাতারা ৫০ শতাংশের বা তারও বেশি মালিকানা নিজের নামে রাখে। আর পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্যদের প্রতিষ্ঠানের বোর্ড অব মেম্বার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে পরবর্তী উত্তরসূরী হিসেবে গড়ে তোলে। এটা এখানে খুব স্বাভাবিক একটি অগ্রগতি হিসাবে দেখা হয়। কিন্তু পাবলিক প্রতিষ্ঠানের বোর্ডে এমন কম বয়সীদের নিয়োগ দেয়াকে কর্পোরেট শাসনের লঙ্ঘন বলে বিবেচনা করা হয়।

উত্তরাধিকার পরিকল্পনার বিষয়ে আরেক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানি। উত্তরাধিকার পরিকল্পনার গুরুত্ব আম্বানিরা সবচেয়ে ভালো জানেন।

সম্পদের উত্তরাধিকার নকশা অনুযায়ী, মুকেশ আম্বানির দুই সন্তান সামলাবেন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের টেলিকমিউনিকেশন ও রিটেইল ব্যবসা। আর ছোট সন্তান সামলাবেন জ্বালানি ব্যবসা। তারা ইতিমধ্যে ব্যবসা সামলানোর কাজ শিখছেন।

অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা এড়াতেই আগেভাগে মুকেশ তার সম্পদের উত্তরাধিকার নকশা করে সম্পদ বণ্টনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা ধীরুভাই আম্বানির মৃত্যুর আগে সম্পত্তির কোনো উইল করে যাননি। এ কারণে তার দুই ছেলে মুকেশ ও অনিল আম্বানির মধ্যে পৈতৃক ব্যবসা নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। এ নিয়ে আইনি লড়াইয়ে নামেন দুই ভাই। পরে অবশ্য দুই ভাইয়ের সম্পর্কের উন্নতি হয়। এসব ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েছেন মুকেশ। নিজের সন্তানদের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে যেন কোনো বিরোধ না বাধে, এই ভাবনায় তিনি উত্তরাধিকার নকশা করার সিদ্ধান্ত নেন।

রিলায়েন্স গ্রুপে ইশা আম্বানিকে নেতৃত্বের পর্যায়ে নিয়ে আসাকে অনেকেই ইতিবাচকভাবে দেখছেন। দেশটিতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে নেতৃত্বের পর্যায়ে নারীদের যাওয়ার খুব একটা নজির নেই। দুই দশক ধরে তা কেবল শুরু হয়েছে। ভাইদের সঙ্গে ইশার সমঅধিকারের বিষয়টি তাই একটা নজির হয়ে থাকবে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, মেয়েদের এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে আরও অনেক দূর যেতে হবে।

হায়দ্রাবাদের ইন্ডিয়ান স্কুল অফ বিজনেসের টমাস শ্মিডিনি সেন্টার ফর ফ্যামিলি এন্টারপ্রাইজের একজন অধ্যাপক কাভিল রামচন্দ্রন এটিকে মেক-অর-ব্রেক পরিস্থিতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, অনেক উত্তরাধিকারীরই বড় কোন চাকরি কিংবা পেশাদার ট্র্যাক রেকর্ড থাকে না। তারা কেবল পারিবারিক সফলতার মই বেয়ে উপরে উঠে যায়। কিন্তু তার এ মন্তব্যের দ্বিমতও রয়েছে। অনেকেই এটাকে পারিবারিক উত্তরাধিকার পরিকল্পনার সফল প্রয়োগ হিসেবে বিবেচনা করেন।

এমনকি অতীতেও দেখা যায় সমস্ত রাজবংশই তাদের পরবর্তী প্রজন্মের সদস্যরা কীভাবে তাদের পরম্পরাকে ধরে রাখবে, কি ধরনের ভূমিকা পালন করে তা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করে। তারা তাদের সিনিয়রদের উদ্যোক্তা নেতৃত্ব এবং সাফল্য ধরে রাখতে পারে কিনা তা দেখার জন্য তাদেরকে সুযোগ দেয়া হয় এবং যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে গড়ে তোলা হয়।

   

বিলের মাঝে উড়োজাহাজ! দেখতে আসেন সবাই!



ছাইদুর রহমান নাঈম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজীপুর (কাপাসিয়া) থেকে ফিরে: দূর থেকে দেখে হবে, ধানের জমির মাঝে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে, এক উড়োজাহাজ। কাছে গেলেই দেখা যাবে, কাগজ দিয়ে তৈরি উড়োজাহাজের আদলে তৈরি একটি ডিজাইন।

ভুল ভাঙবে তখন, যখন ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে, আসলে এটি একটি রেস্টুরেন্ট, উড়োজাহাজ নয়! গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার তরগাঁও ইউনিয়নের পূর্ব খামের গ্রামের রফিক নামে এক তরুণ তৈরি করেছিলেন এই ‘বিমান বিলাশ রেস্টুরেন্ট’টি।

কয়েক বছর আগে এই রেস্টুরেন্ট-মালিক প্রবাসে চলে গেলে এটিও বন্ধ হয়ে যায়। তারপরেও এটিকে একনজর দেখার জন্য বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখানে ছুটে আসেন। উড়োজাহাজ আকৃতির এই দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন তারা।

সরেজমিন দেখা যায়, পলিথিন দিয়ে কারুকার্য করে তৈরি করা এটিতে রয়েছে জানালা ও একটি দরজা। কাঠের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হয়। এখানে শিশুদের আনাগোনাই বেশি। বড়দের হাত ধরে এসে এই দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে বাড়ি ফিরে যায় তারা।

গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ধানক্ষেতের মাঝে উড়োজাহাজ আকৃতির রেস্তরাঁ । নাম- 'বিমান বিলাশ রেস্টুরেন্ট' , ছবি- বার্তা২৪.কম

এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে এটি দেখার জন্য অনেক মানুষ এখানে ছুটে আসেন। এছাড়াও আশপাশের জায়গাগুলোও বেশ মনোরম। প্রকৃতির ছোঁয়া পাওয়া যায়। সে কারণে সবসময়ই লোকজন এখানে বেড়িয়ে যান।

প্রথম যখন উড়োজাহাজ আকৃতির এই রেস্টুরেন্টটি তৈরি করা হয়, তখন এটি দেখতে আরো বেশি সুন্দর ছিল। রাতেও মানুষজন আসতেন। গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এটি দেখে আসল উড়োজাহাজে চড়ার স্বাদ নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়।

;

শিশু রায়হানের শ্রমেই মা-নানার মুখে দুমুঠো ভাত ওঠে!



শাহজাহান ইসলাম লেলিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নীলফামারী
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

আমার বাবা মারা গেছেন দুই বছর আগে! আমার বাবা মারা যাওয়ার পরে আমাকে আর মাকে চাচারা বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আমার নানা বৃদ্ধ মানুষ। নানী মারা গেছে। আমরা তার বাড়িতে থাকি।

আমার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে আর আমি স্কুল শেষে হাসপাতালে এসে খেলনা ও বেলুন বিক্রি করি। আমার টাকা দিয়ে চাল কিনি। আমার মায়ের টাকা দিয়ে তরকারি কিনি, বার্তা২৪.কমের সঙ্গে আলাপচারিতায় এমন কথা বলছিল পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া রায়হান ইসলাম।

রায়হান ইসলাম নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের নিতাই ইউনিয়নের মৃত আবু বক্কর আলীর ছেলে ও স্থানীয় নিতাই ডাঙাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে রায়হানকে খেলনা ও বেলুন বিক্রি করতে দেখা যায়। এসময় হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজনেরা তাদের সন্তানদের আবদার পূরণ করতে রায়হানের কাছ থেকে এসব খেলনা কিনছেন।

দারিদ্র্যের কষাঘাতে বাস্তবতা যেন বুঝতে শিখেছে রায়হান। প্রচণ্ড দাবদাহে ও তাপপ্রবাহের মধ্যেও রোদে পুড়ে মায়ের আর বৃদ্ধ নানার মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে যেন রায়হানের চেষ্টার শেষ নেই।

খেলার বয়সে খেলনা আর বেলুন হাতে ছোটে বিক্রি করতে। মাঝে-মধ্যে কোনো ক্রেতা না থাকলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই রাস্তায় দাঁড়িয়ে খেলনা আর বেলুন বিক্রি করে রায়হান। খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকার কথা থাকলেও বাধ্য হয়ে এই বয়সে ছুটতে হয় পথেঘাটে। দারিদ্র্য রায়হানকে ঠেলে দেয় কাঠফাঁটা রোদের জগতে।

খেলার বয়সে খেলনা বিক্রি করতে ছোটে অসুস্থ মায়ের মুখে দুটো ভাত তুলে দিতে, ছবি: বার্তা২৪.কম

রায়হান বলে, আমি পড়ালেখা করে বড় কিছু করে আমার মায়ের কষ্ট দূর করতে চাই! আমাদের খবর কেউ নেয় না। আমার মা অসুস্থ! মানুষের বাসায় বেশি কাজও করতে পারে না। আমি এগুলো বিক্রি করে রাতে বাজার নিয়ে যাই।

আমাদের কেউ সাহায্য করে না! আমি যে টাকা আয় করি, তা দিয়ে আমার মা আর নানার জন্য চাল, ডাল কিনি। মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন জিনিসও কিনতে হয় এই টাকা দিয়ে। সব কিছু এই বিক্রির টাকা থেকেই কিনি!

এবিষয়ে নিতাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোত্তাকিমুর রহমান আবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছিলাম। তবে বিষয়টা সেভাবে ভাবিনি! আগামীতে কোনো সুযোগ এলে আমি তাদের তা দেওয়ার চেষ্টা করবো।

কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম আশিক রেজা বলেন, খোঁজখবর নিয়ে তাকে যেভাবে সাহায্য করা যায়, আমরা সেটি করবো।

বিদায় নিয়ে আসার আগে রায়হান বলে, আমাদের নিজের একটা বাড়ি করবো। আমার মাকে নিয়ে সেখানে সুখে থাকবো। পরে সারাক্ষণ শুধু কানে বাজতেই থাকে- আমাদের নিজের একটা বাড়ি করবো। আমার মাকে নিয়ে সেখানে সুখে থাকবো! আমাদের নিজের…!

;

তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ

২৯ এপ্রিল: আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস



প্রমা কান্তা, ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে
তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ।
তারি সঙ্গে কী মৃদঙ্গে সদা বাজে
তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ’॥

কিংবা-
‘সৃজন ছন্দে আনন্দে নাচো নটরাজ
হে মহকাল প্রলয়–তাল ভোলো ভোলো।।
ছড়াক তব জটিল জটা
শিশু–শশীর কিরণ–ছটা
উমারে বুকে ধরিয়া সুখে দোলো দোলো’।।

রবিঠাকুর বা কাজী নজরুল ইসলামের কলমে ছন্দ তোলা এ পংক্তি যেন মনের ভাব প্রকাশের এক অনন্য শিল্প। এ গানগুলো শুনলেই আনমনে আমরা নেচে উঠি।

নাচ বা নৃত্য আনন্দ প্রকাশের চেয়েও আরো বেশি কিছু; শুদ্ধ শিল্প চর্চার পরিশীলিত রূপ। নৃত্যের মুদ্রার শিল্পে মনের পর্দায় প্রকাশ পায় অব্যক্ত ভাব ও ভাষা। নৃত্য প্রাচীন সংস্কৃতির অংশ এবং ভাষার বাহনও বটে। সেটির আরো শিল্পিতরূপ তুলে ধরে ক্ল্যাসিক ধারার নৃত্য। প্রণয়ীর কাছে প্রণয়িনীর কিংবা প্রণয়িনীর কাছে প্রণয়ীর আত্মনিবেদনের চিরায়ত ধারা কিংবা সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে নিবেদন নৃত্যের ভাষা। মনের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ নৃত্যের মুদ্রার ভাষায় ভেসে ওঠে।

নৃত্যের মাহাত্ম্য ও প্রয়োজনীয়তার বার্তা ছড়িয়ে দিতে উদযাপন করা হয়- আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস। প্রতিবছর ২৯ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী নিজের পছন্দের নৃত্যের মুদ্রার মাধ্যমে উদযাপনে মেতে ওঠেন বিভিন্ন দেশের নৃত্যশিল্পীরা। নৃত্য বিনোদন ও আনন্দ প্রকাশের সবচেয়ে পরিশীলিত শিল্প মাধ্যম।

আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস উপলক্ষে বার্তা২৪.কমের সঙ্গে নিজের আবেগ আর অনুভূতি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহকারী পরিচালক জুয়েইরিয়াহ মৌলি (প্রোগ্রাম প্রোডাকশন- নৃত্য)।

মৌলি বলেন, নৃত্য শুধু বিনোদন বা পরিবেশনার বিষয় নয়। নৃত্যের তাত্ত্বিক দিকটিও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নৃত্য নিয়ে গবেষণার প্রচুর সুযোগ আছে। পেশাগত জায়গা থেকে নৃত্য সমাজে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত হোক!

তিনি বলেন, শুদ্ধ নৃত্য চর্চার মাধ্যমে শিল্পীরা নিজের এবং সমাজের কথা তুলে ধরুক। আজকের দিনে এটাই আমার প্রত্যাশা!

ধ্রুপদী নৃত্য, ছবি- সংগৃহীত

সৃষ্টির শুরু থেকেই তাল ও ছন্দের অস্তিত্ব রয়েছে প্রকৃতিতেও। আকাশে মেঘের আন্দোলন, বাতাসে দুলে ওঠা গাছের পাতা, দল বেঁধে পাখিদের উড়ে চলা, ফুলে মৌমাছির মধু বা প্রজাপতির গরল আহরণ, পানিতে মাছেদের ছলছল চলা, এমনকী বৃষ্টির আগমনে ময়ূরের পেখম তুলে দুলে ওঠা, সবাই যেন ছন্দে নেচে মেতে ওঠে আনন্দে।

আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসের উদযাপনের বিষয়ে উইকিপিডিয়াতে বলা হয়েছে- ফরাসি নৃত্যশিল্পী তথা আধুনিক ব্যালের রূপকার জ্যাঁ-জর্জেস নভেরের জন্মদিন উপলক্ষে ইউনেস্কোর 'পারফর্মিং আর্টস'-এর প্রধান সহযোগী আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইনস্টিটিউটের (আইটিআই) নৃত্য কমিটির উদ্যোগে প্রতিবছর ২৯ এপ্রিল এই দিনটি উদযাপন করা হয়।

আইটিআই ও ইন্টারন্যাশনাল ডান্স কমিটি ১৯৮২ সালে প্রথমবার ‘আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস’ উদযাপন শুরু করে।

;

এক ঘরেই তিন বলী



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

  • Font increase
  • Font Decrease

চুল থেকে দাড়ি-সবই সফেদ। হাঁটাচলায় মন্থর। স্বাভাবিকভাবেই প্রবীণের বয়সটা আঁচ করা যায় প্রথম দেখাতেই। কিন্তু তার ষাটোর্ধ্ব বয়সটা যেন কেবল ক্যালেন্ডারের হিসাব। বয়স যতই ছোবল বসানোর চেষ্টা করুক না কেন-তিনি যেন এখনো ২৫ এর টগবগে তরুণ। সেই বলেই তো ফুসফুসের রোগবালাইকে তুড়ি মেরে ঐতিহাসিক আবদুল জব্বারের বলীখেলা এলেই হাজির হয়ে যান রিংয়ে। এক দুবার নয়, এবার কিনা পূর্ণ হলো সুবর্ণজয়ন্তী!

চট্টগ্রামের অন্যতম আবেগের ঠিকানা ঐতিহাসিক এই বলীখেলার বড় বিজ্ঞাপন হয়ে ওঠা এই বলীর নাম খাজা আহমদ বলী। ৫০ বছর ধরে বলীখেলায় অংশ নিয়ে দর্শকদের আনন্দ দিয়ে যাওয়া এই বলীর এখন পড়ন্ত বয়স। ফুসফুসে বাসা বেঁধেছে রোগ। কানেও শোনেন কম। খাজা আহমদ বুঝে গিয়েছেন, তার দিন ফুরাচ্ছে। কিন্তু তিনি যে বলীখেলার স্মৃতি থেকে সহজেই মুছে যেতে চান না। সেজন্যই উত্তরসূরী হিসেবে এরই মধ্যে গড়ে তুলেছেন নিজের দুই ছেলেকে। বাবার পাশাপাশি দুই ভাইও এখন বলীখেলার নিয়মিত প্রতিযোগী।

খাজা আহমেদ বলীর বাবাও বলীখেলায় অংশ নিতেন। বাবার সঙ্গে বলীখেলায় এসে ১৯৭৪ সালে শখের বসে খেলতে নামেন খাজা আহমেদও। বয়স তখন ১২ বছরের আশপাশে। সেই শুরু, আর কোনোদিন মিস করেননি বলীখেলায় অংশ নেওয়া। একবার চ্যাম্পিয়নের গৌরবও অর্জন করেছিলেন। বহু বছর ধরে খাজা আহমেদ বলী ও সত্তরোর্ধ্ব মফিজুর রহমানের ‘বলীযুদ্ধ’ জব্বারের বলীখেলার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে এই দ্বৈরথ হয়তো আর দেখা যাবে না। দুই বছর আগে উৎপত্তি হওয়া ফুসফুসের রোগটা ইদানিং যে খাজা আহমদকে বেশিই ভোগাচ্ছে। সেজন্য গতবছর অবসরের ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এবার দুই ছেলেকে নিয়ে বলীখেলায় এসে আবেগ সামলাতে পারেননি খাজা আহমেদ। ছেলেদের সঙ্গে নিজেও নেমে পড়েন রিংয়ে। সেজন্য আরও একবার মফিজুর রহমান-খাজা আহমেদের লড়াই দেখল হাজারো দর্শক। যদিওবা যৌথ বিজয়ী ঘোষণা করে দুজনের মুখেই হাসি ফুটিয়েছেন রেফারি।

প্রতিপক্ষ মফিজুর রহমানের সঙ্গে বলী-যুদ্ধে খাজা আহমদ

কেন অবসর ভাঙলেন এমন প্রশ্নে হাসি খেলা করে যায় খাজা আহমেদ বলীর মুখে। বলতে থাকেন, ‘বয়সের কারণে শরীর দস্ত। ফুসফুসও ঠিকঠাক কাজ করছে না। সেজন্য অবসর নিয়েছিলাম। কিন্তু বলীখেলায় আসার পর দেখলাম দর্শকেরা সবাই অনুরোধ করছেন। সেজন্য মন বলল, না খেললে দর্শকদের প্রতি অন্যায় হবে। আর আবেগ ও ভালোবাসার কাছে বয়স-রোগ পেরেছে কবে?’

তবে এখানেই সব শেষ, বলে দিয়েছেন খাজা আহমেদ বলী। বলেছেন, ‘বয়স হয়ে গেছে। মনে হয় না আর খেলতে পারব। অসুখটা বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে। সেজন্য মনে মনে মেনে নিয়েছি এটাই আমার শেষ অংশগ্রহণ। বাকিটা আল্লাহর হাতে।’

তিন ছেলে ও এক মেয়ের বাবা খাজা আহমদের বাড়ি চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায়। কৃষিকাজ করেই চলে সংসার। তবে বলীখেলা এলে সব কাজ বাধ। কয়েকদিন ধরে চলে প্রস্তুতি। নিজের স্মৃতি ধরে রাখতে এরই মধ্যে খাজা আহমেদ নিজের দুই ছেলেকে গড়ে তুলেছেন বলী হিসেবে। ২০১২ সাল থেকে বলীখেলায় নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন তার বড় ছেলে মো. সেলিম। গত বছর থেকে যোগ দিয়েছেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। এখন বলীখেলার আগে দুই ছেলেকে নিয়ে চলে খাজা আহমদের প্রস্তুতি।

জানতে চাইলে সেলিম বলেন, ‘বাবার কাছ থেকে আমরা বলীখেলা শিখেছি। বয়সের কারণে বাবা এখন অসুস্থ। হয়তো আর খেলা হবে না। সেজন্য তার উত্তরসূরী হিসেবে আমরা বলীখেলায় অংশ নেব সামনের দিনগুলোতে। এটা শুধু পরিবারের বলীর প্রজন্ম ধরে রাখার জন্য নয়, তরুণদের মাদক-সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেকে দূরে রাখতে উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগও।’

বাবাকে পাশে রেখে একই কথা বললেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। বলেন, ‘হয়তো বাবা আর খেলবেন না। তবে তিনি না খেললেও যতদিন বেঁচে থাকবেন বলীখেলা দেখতে আসবেন। রিংয়ের নিচে দাঁড়িয়ে আমাদের উৎসাহ দিয়ে যাবেন।’

ছেলের কথা শুনে আবেগ খেলে যায় খাজা আহমেদ বলীর মনে। কাঁধের গামছাটা হাতে তুলে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘না খেললেও যতদিন বাঁচি এখানে, এই বলীর মাঠ লালদীঘি ময়দানে ছুটে আসব। এটা থেকে দূরে থাকতে পারব না।’

খাজা আহমেদ যখন কথা বলছিলেন দূরে কোথাও তখন মাইকে বাজছিল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই অমর গান। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় অক্লান্ত গলায় গেয়ে চলেছেন, যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে...

;