খ্রিস্টের পুনরুত্থানের উৎসব ইস্টার সানডে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ইস্টার এগ(ডিম) হাতে ইস্টার বানি(খরগোশ)

ইস্টার এগ(ডিম) হাতে ইস্টার বানি(খরগোশ)

  • Font increase
  • Font Decrease

খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদের পথপ্রদর্শক ছিলেন যিশু খ্রিষ্ট। নিজের সমগ্র জীবন নানারকম চড়াই উতরাই পাড় করেছেন যিশু। বার বার দিতে হয়েছে নানারকম পরীক্ষা। তার জীবনেরই এক বিশেষ অংশ হলো ইস্টারসানডে। এই দিনেই তিনি মানুষের মধ্যে পুনরায় ফিরে এসেছিলেন। মৃত্যুকে টেক্কা দিয়ে মহাপুরুষ যিশু তার মাহাত্ম্য প্রমাণ করেন।  

ইহুদীরা ছিলেন খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসীদের কট্টর বিরোধী। তাদের শাসন ব্যবস্থা ছিল কুসংষ্কারে পরিপূর্ণ। প্রায় ২ হাজার বছর আগে তাদের বিরোধিতা করে যিশু খ্রিস্ট, খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার শুরু করেন। তাই বিপথগামী ইহুদী ধর্মাবলম্বীরা গুড ফ্রাইডে তে যিশুকে হত্যা করে। ক্রশবিদ্ধ করে তার প্রাণ কেড়ে নেওয়া হয়। ৩ দিন পর যিশুর পুনরুত্থাপন ঘটে। এই ঘটনা ঘটেছিল রবিবার। সেই থেকে গুড ফ্রাইডে’র পরের রবিবার পালন করা হয় ইস্টার সানডে হিসেবে।

খ্রিস্টানদের জন্য তাই এই দিনটি অন্যতম বিশেষ দিন। পরিবার, আত্মীয় এবং বন্ধুদের নিয়ে ইস্টার সানডে পালন করেন তারা। বড়দিনের মতো প্রতিবছর নির্দিষ্ট দিনে ইস্টার সানডে পালিত হয় না। প্রতি বছর ২১ মার্চের পরের পূর্ণিমার পর প্রথম যে রবিবার আসে, তাকেই ইস্টার সানডে মানা হয়।

এই দিনে চার্চে গিয়ে গডের কাছে প্রার্থনা করেন খ্রিষ্টরা। এছাড়া বয়সে ছোটদেরকে ইস্টার এগ দেওয়ারও নিয়ম রয়েছে। বিশ্বাস করা হয় ইস্টার বানি এই উপহার দেয়। এই দিনে জীবনকে সুন্দর করে সাজিয়ে ন্যায় এবং সত্যের জন্য উৎসর্গ করার প্রতিজ্ঞা করে খ্রিষ্টধর্মীরা। সুন্দর সাজসজ্জ্বা এবং নানারকম খাবারের বয্বস্থা করা হয়। এরকম বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে এই উৎসবে মেতে ওঠেন  খ্রিস্টানরা।

তথ্যসূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস 

   

ওই আকাশে লুকিয়ে আছে মা



সহিদুল আলম স্বপন, লেখক জেনেভা সুইজারল্যান্ড
ওই আকাশে লুকিয়ে আছে মা

ওই আকাশে লুকিয়ে আছে মা

  • Font increase
  • Font Decrease

তো ১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকের কথা, তখন সুইস কোম্পনী ফাদসা এস এ তে চাকরী করি। হঠাৎ একদিন কোম্পানীর মালিক মশিউয়্যু মিশেল লাসের (বাংলায় জনাব মিশেল ল্যাসার) তার অফিসে ডেকে পাঠালেন।আমিতো ভয়ে দিশেহারা, ভাবলাম ফ্রেন্স ভাষা না জানার কারণে আমার মনে হয় এবার চাকরীটাই গেল। বলে রাখা ভালো, সুইজারল্যান্ডের চারটি সরকারী ভাষার(ফরাসী, সুইস জার্মান, ইতালীয়ান এবং রোমন্স - রোমান নয়)মাঝে জেনেভা ফরাসী ভাষাভাষী।নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে একটা ভ্যানিশিং ক্রিমের পাবলিসিটি ছিল-ম্যানোলা সিবোঁ ভ্যানিশিং ক্রিম নিয়ে এলো ফরাসী সৌরভ। পরে জেনেছি সিবোঁ ফরাসী শব্দ যার অর্থ খুব ভালো (হয়তো বাংলায় বুঝাতে চেয়েছেন সুগন্ধময়)-আর এটাই শুধু আমার ফরাসী ভাষার ভান্ডার।

যাই হোক, ভয়ে ভয়ে তাঁর খাস কামরায় হাজির হলাম।দেখি কামরায় সোফার এককোনে প্যাট্রিক(আমার সুইস সহকর্মী আমার চেয়ে বছর দুয়েক এর ছোট হবে)আর লরেতা মার্টিনি এইচ আর হেড বসে আছে। বুঝতে আর দেরী হলোনা, এখনি বস বলবেন ইউ আর ফায়ার এবং প্যাট্রিককে তোমার সব কাজগুলো বুঝিয়ে দাও।

কোথায় ফায়ার তা না বলে মশিউয়্যু লাসের বললেন মাই ডিয়ার, আগামী সপ্তাহে প্যাট্রিক আর আলম (আমি) তোমরা দুজনে রটারডাম যাচ্ছো ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিং এর জন্য। আলম তুমি কাল ভোরে বার্ণ(সুইজারল্যান্ডের রাজধানী)যাবে নেদারল্যান্ডের ভিসা করাতে। লরেতা তোমাকে সব বুঝিয়ে দেবে। বলে রাখা ভালো তখনো আমি সুইস নাগরিক হয়ে উঠিনি, আর মশিউয়্যু মিশেল লাসের ই আমাকে সুইজারল্যান্ডে স্হায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছিলেন।

রটারডাম উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের রাষ্ট্র নেদারল্যান্ডসের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর( আমস্টারডামের পরেই)।এটি ইউরোপের বৃহত্তম ও বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর।নেদারল্যান্ডসের দক্ষিণ হল্যান্ড প্রদেশে, উত্তর সাগরের তীরে, রাইন নদীর মোহনায় অবস্থিত এই বন্দর শহরকে প্রায়শই "ইউরোপের প্রবেশদ্বার" নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে।

তো যেই কথা সেই কাজ, সমস্ত আনুষ্ঠিকতা শেষে সপ্তাহান্তে কেএলএম রয়্যাল ডাচ এয়ারলাইন্সে চেপে জেনেভা থেকে আমস্টারডামের শিফল বিমানবন্দরে এসে পৌঁছলাম। আমস্টারডাম শিফল বিমানবন্দর থেকে ট্রেনে রটারডাম সেন্ট্রাল ট্রেন ষ্টেশনে এসে নামলাম। সেখান থেকে টেক্সীকরে সরাসরি রটারডাম ম্যারিয়ট হোটেলে।রটারডাম স্কুল অফ ম্যানেজমেন্ট, ইরাসমাস ইউনিভার্সিটি (আরএসএম) ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় বিসনেস স্কুলগুলির মধ্যে একটি, এখানেই আমাদের কোর্স। বাংলাদেশ আর নেদারল্যান্ডসের মাঝে চার পাঁচ ঘন্টার পার্থক্য। প্রতিদিন বাবা -মা সাথে কথা হয়। বাবা আমার জ্ঞানের পাগল। ৬০ বছর বয়সে উনি তাঁর মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। কিন্তু বাবা মা দুজনের কেউ মানতে পারছিলেন না আমি বিদেশে থাকি। দেশে থাকতে মা এর আহাজারীতে বাবা বিভিন্ন কায়দায় বাংলাদেশ মিলিাটারী একাডেমী থেকে আমায় ছাড়িয়ে এনেছিলেন। রাতে ঘুমাতে যাবার আগের মা কে ফোন করে ঘুমাই। বরাবরের মতে ১৮ ই ফেব্রুয়ারি রাতে মার সাথে কথা বলছি, মা আমার প্রাইমেরীর গন্ডি পেরুনো কিন্তু শিক্ষার প্রতি তাঁর পরম শ্রদ্ধা। গান-নাটক সংস্কৃতির পাগল আমি। মা আমার প্রতিদিন ই জিজ্ঞেস করেন কেমন চলছে গান-বাজনা। অনেক গুলো নূতন গানের ক্যাসেট কিনে রেখেছেন তিনি, সুইজারল্যান্ডে ফিরলেই ডাকযোগে পাঠিয়ে দিবেন, আমার প্রিয় কুমিল্লার খদ্দরের হাউয়াই শার্টসহ। আরো কত কথা, শেষ হয়েও হয়না শেষ। মায়ের প্রতিটি কথায় সেকি এক অনুপ্রেরণা। আজ বাংলাদেশে শেষ রোজা। পরদিন ১৯ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার রোজার ঈদ।

পরদিন ক্লাস নেই, ভেবে রেখেছি সকালে ব্রেকফাস্ট না করে লম্বা একটা ঘুম দিয়ে ফ্রেস হয়ে তারপর সারাদিন ঘুরে বেড়াবো, দেখবো বিশ্বের সবচেয়ে উদ্ভাবনী বন্দর, রটারডাম চিড়িয়াখানা, রিমাস্টারড" ডিজিটাল আর্ট অডিওভিজ্যুয়াল, ইউরোমাস্ট টাওয়ার, কিউব হাউস ইত্যাদি আর রাতে যাবে বাইয়্যাবীচ ক্লাবে নাচতে।

হোটেল রুমের সাইড টেবিলে রাখা ফোনটা সাত সকালেই আজ চিৎকার করে কান্না করে চলেছে, ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং……। ফোনটা যেন পাগল হয়ে গেছে। বিরক্ত হয়েই মিনিট খানেক পর আঁধো বোজা চোখে ফোনটা কানের কাছে নিয়ে বললাম, হোয়াট দ্যা হেল প্যাট্রিক, লেট মি গেট সাম স্লিপ । ফোনের ঐ প্রান্ত থেকে ভেসে এলো ভাইয়া আমি ফরিদ(আমার ছোট বোন পান্নার বর), এক নি:শ্বাসে বলে চলছেন, ভাইয়া আমরা এই মাত্র কবরস্তান থেকে আসলাম, সব কিছুই ঠিক ছিল, দাফন- কাফন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে, কেঁদে আর কি করবেন, আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, এইযে আব্বার সাথে কথা বলেন, আম্মাতো কাউকে কষ্ট দেননি, আল্লাহর কাছে আম্মার রুহের মাগফিরাত কামনা করে নামাজ পড়ুন যেন উনাকে আল্লাহ জান্নাতে স্হান করে দেন।চোখের জলে বালিশ ভিজেঁ যাচ্ছে আমি আজো প্রতিনিয়ত গেয়ে চলছি - " সবাই বলে, "ওই আকাশে লুকিয়ে আছে" "খুঁজে দেখ, পাবে দূর নক্ষত্রমাঝে"রাতের তারা, আমায় কি তুই বলতে পারিস কোথায় আছে, কেমন আছে মা? ভোরের তারা, রাতের তারা, মা-কে জানিয়ে দিস অনেক কেঁদেছি আর কাঁদতে পারি না।

;

১২ মে: আন্তর্জাতিক মা দিবস, মায়েদের ত্যাগের স্বীকৃতির দিন



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মা পৃথিবীর সবচেয়ে মায়াবী শব্দ। এটি কেবল একটি ডাক নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে হাজারও আবেগ, সুখ-দুঃখ, ব্যথা, আনন্দ, আকাঙ্ক্ষা, অভিযোগ- না জানি আরো কত কত অনুভূতি!

হাদিসে বলা আছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। সনাতন ধর্মের পুরাণে লিখিত রয়েছে- জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী অর্থাৎ মা এবং জন্মভূমি স্বর্গের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এমনকী অন্যান্য ধর্মগ্রন্থেও জন্মদাত্রী মায়ের প্রতি অশেষ ভক্তি, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও সম্মান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷

অশেষ কষ্ট সহ্য করে আমাদের লালন-পালন করেন জন্মদাত্রী মা। তাদের কষ্ট উপলব্ধি করতে উদযাপন করা হয়, আন্তর্জাতিক মা দিবস। এই বিশেষ দিনে মা এবং মাতৃসমতুল্যদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়। সারাবিশ্বের অনেক দেশে মে মাসের দ্বিতীয় রোববার উদযাপিত হয়, আন্তর্জাতিক মা দিবস। এই দিনটি ‘মাদারিং সানডে’ নামেও পরিচিত। এ বছর ১২ মে পড়েছে মা দিবস।

মা দিবসের আদি ইতিহাস
আন্তর্জাতিক মা দিবসের ইতিহাস বিষয়ে উইকিপিডিয়ায় লেখা হয়েছে, মা দিবস বা মাতৃ দিবস হলো একটি সম্মান প্রদর্শনের অনুষ্ঠান যা, মায়ের সম্মানে এবং মাতৃত্ব, মায়ের প্রতি ঋণ হিসেবে এবং সমাজে মায়েদের ভূমিকার জন্য উদযাপন করা হয়। বিশ্বের অনেক অঞ্চলে বিভিন্ন দিনে, সাধারণত মার্চ, এপ্রিল বা মে মাসে উদ্‌যাপন করা হয়।

বিশ্বের সবখানে মায়ের এবং মাতৃত্বের অনুষ্ঠান উদযাপন করতে দেখা যায়। এগুলির অনেকই প্রাচীন উৎসবের সাক্ষ্য। যেমন- সিবেল গ্রিক ধর্মানুষ্ঠান, হিলারিয়ার রোমান উৎসব, যা গ্রিকের সিবেল থেকে আসে অথবা সিবেল এবং হিলারিয়া থেকে আসা খ্রিস্টান ‘মাদারিং সানডে’ অনুষ্ঠানের মতোই।

একটি গোষ্ঠীর মতে, এই দিনটির সূত্রপাত প্রাচীন গ্রিসের মাতৃ আরাধনার প্রথা থেকে, যেখানে গ্রিক দেবতাদের মধ্যে এক বিশিষ্ট দেবী সিবেল-এর উদ্দেশে পালন করা হতো। এশিয়া মাইনরে মহাবিষুবের সময়ে এবং তারপর রোমে আইডিস অব মার্চ (১৫ মার্চ) থেকে ১৮ মার্চের মধ্যে এই উৎসবটি উদযাপন করা হতো।

প্রাচীন রোমানদের ম্যাত্রোনালিয়া নামে দেবী জুনোর প্রতি উৎসর্গিত আরো একটি ছুটির দিন ছিল। সেদিন মায়েদের উপহার দেওয়া হতো। মাদারিং সানডে-তে ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যে অনেক দিন আগে থেকেই বহু আচারানুষ্ঠান ছিল, যেখানে মায়েদের এবং মাতৃত্বকে সম্মান জানানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট রোববারকে আলাদা করে রাখা হতো।

মাদারিং সানডের অনুষ্ঠান খ্রিস্টানদের অ্যাংগ্লিকানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পঞ্জিকার অঙ্গ। ক্যাথলিক পঞ্জিকা অনুযায়ী, এটিকে বলা হয়, ‘লেতারে সানডে’ যা লেন্টের সময়ে চতুর্থ রোববার পালন করা হতো ভার্জিন মেরি বা কুমারী মাতার ও প্রধান গির্জার সম্মানে।

প্রতি বছরের মে মাসের দ্বিতীয় রোববার পৃথিবীর সব মায়ের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি জানানোর দিন, গ্রাফিকস- সংগৃহীত

প্রথানুযায়ী, দিনটিতে প্রতীকী উপহার দেওয়া এবং কৃতজ্ঞতাস্বরূপ রান্না আর ধোয়ামোছার মতো মেয়েদের কাজগুলো বাড়ির অন্য কেউ করার মাধ্যমে উদযাপন করা হতো।

জুলিয়া ওয়ার্ড হোই রচিত ‘মাদার্স ডে প্রোক্লেমেশন’ বা ‘মা দিবসের ঘোষণাপত্র’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবস উদযাপনের গোড়ার দিকের চেষ্টাগুলির মধ্যে অন্যতম।

আমেরিকান গৃহযুদ্ধ ও ফ্রাঙ্কো-প্রুশীয় যুদ্ধের নৃশংসতার বিরুদ্ধে ১৮৭০ সালে রচিত ‘হোই’-এর মা দিবসের ঘোষণাপত্রটি ছিল একটি শান্তিকামী উদ্যোগ। রাজনৈতিক স্তরে সমাজকে গঠন করার ক্ষেত্রে নারীর একটি দায়িত্ব ও ভূমিকা আছে, হোই-এর এই নারীবাদী বিশ্বাস ঘোষণাপত্রটির মধ্যে নিহিত ছিল।

ঘোষণা
১৯১২ সালে আনা জার্ভিস ‘মাদার'স ডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোশিয়েশন (আন্তর্জাতিক মা দিবস সমিতি) প্রতিষ্ঠা করেন।

জানা যায়, ভার্জিনিয়ায় অ্যান নামে একজন শান্তিবাদী সমাজকর্মী ছিলেন। অ্যান ছিলেন খুবই ধর্মপ্রাণ এবং নারী অধিকার নিয়ে কাজ করতেন। তিনি ‘মাদারস ডে ওয়ার্ক ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছোট ছোট ওয়ার্ক ক্লাব বানিয়ে সমাজের পিছিয়েপড়া নারীদের এগিয়ে নেওয়ার জন্য চেষ্টা চালাতেন। নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য তিনি উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিতেন।
অ্যানের একটি মেয়ে ছিল। তার নাম ছিল- আনা মারিয়া রিভস জার্ভিস।

একদিন ছোট মেয়ের সামনেই অ্যান হাত জোড় করে বলেছিলেন, আমি প্রার্থনা করি, একদিন কেউ না কেউ, কোনো মায়েদের জন্য একটা দিন উৎসর্গ করুক। কারণ, মায়েরা রোজ মনুষ্যত্বের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে চলেছেন। একটি দিন উৎসর্গ করা তাদের অধিকার।

মায়ের সেই প্রার্থনা হৃদয়ে নাড়া দিয়ে যায় আনার। অ্যানের মৃত্যুর দিনটিকে সারাবিশ্বের প্রতিটি মায়ের উদ্দেশে উৎসর্গ করেন তিনি। তার পর থেকে মায়েদের প্রতি সম্মানে উদযাপিত হয়ে আসছে, আন্তর্জাতিক মা দিবস হিসেবে।

১৯১৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে ‘মা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকে প্রতিবছরের মে মাসের দ্বিতীয় রোববার আন্তর্জাতিক মা দিবস উদযাপন করা হয়ে থাকে।

;

মা দিবস

ছেলে রাখে না সাথে, তবু মায়ের দোয়া ছেলের জন্যই



মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম,ফেনী
শাহেনা আক্তার, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ছবি: বার্তা২৪.কম

শাহেনা আক্তার, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ফেনী পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মী শাহেনা আক্তার। বয়স প্রায় ৫৫ বছর। অভাবের তাড়নায় গত ৩০ বছর ধরে তিনি সংসারে জন্য কাজ করছেন। এই বয়সেও প্রতিরাতে কাজ করে যান তিনি। স্বামী মারা যাওয়ার পরে একমাত্র সন্তানই অবলম্বন হওয়ার কথা থাকলেও ছেলে স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা থাকেন। পাশাপাশি দুই ঘরে বসবাস করলেও আলাদা রান্না করে খান মা-ছেলে। তবু ছেলের জন্য সব করছেন, এমনকি জায়গাও কিনে রেখেছেন। তার আশা একটাই, সন্তান যেন ভালো থাকে। বলছেন, আমি তাকে (ছেলেকে) বিরক্ত করি না। নিজের অদম্য ইচ্ছায় এখনও কাজ করে যাচ্ছেন এ সংগ্রামী 'মা'।

রোববার (১২ মে) আন্তর্জাতিক মা দিবস। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের উদযাপিত হচ্ছে দিবসটি। মা দিবসে বার্তা২৪.কমের সাথে আলাপকালে নিজের জীবনের আক্ষেপসহ একাকী জীবনের পথচলার নানা কথা জানান শাহেনা আক্তার।

প্রতিদিন রাত ১১টা বাজলেই কাজ শুরু হয়ে যায় শাহেনা আক্তারের। শহরের ট্রাংক রোড দোয়েল চত্বর থেকে জেল রোড অবধি রাস্তার দুই পাশ পরিষ্কারের কাজ করেন তিনি। তার একমাত্র ছেলে পৌরসভায় চাকরি করে। তবে বিয়ের পর থেকে মায়ের সাথে থাকে না। মায়ের ভরণপোষণের দায়িত্বও নেয়নি ছেলে। স্বামীহারা এ নারীর আশা এখনো মারা যাওয়ার পর এক ছেলেই তার কবরে মাটি দেবে।

মা দিবসে কথা হয় শাহেনা আক্তারের সাথে। তুলে ধরেন তিনি জীবন-সংগ্রামের নানা গল্প।

নিজের জীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে এ মা বলেন, আমার পরিবারে আমার ছেলে আর ছেলের বউ আছে এবং তাদের ৩ সন্তান রয়েছে। আমার স্বামী ৭ বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ছেলের ভবিষ্যতের জন্য আমরা স্বামী-স্ত্রী দুইজন পৌরসভায় চাকুরি নিয়েছিলাম, আমি এখনও করছি। ছেলে বড় হওয়ার পর সেও কাজ করে। তবে এখন ছেলে আমাকে সাথে রাখে না। বিয়ের পর তার বউ রাখতে দেয় না। ছেলের বউয়ের ব্যবহার খারাপ, আমাকে সহ্য করে না। তাই আমি আলাদা থাকি। নিজে উপার্জন করে খাই।

নিজের জীবনে নানা প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, পৌরসভা থেকে আমি প্রতিমাসে ৪ হাজার টাকা পাই। দুইটা রোড এ আমি ময়লা পরিষ্কার করি। কাজ শেষ করতে কোনদিন বেশি সময় লাগে, কোনদিন কম লাগে। জেল রোড থেকে ট্রাংক রোড দোয়েল চত্বরের দুইপাশ আমি পরিষ্কার করি। এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছে। এরমধ্যে মেয়র সাহেব, দোকানদাররা আমাকে নানাভাবে সহযোগিতা করে। তা দিয়ে চলে যায়।


বৃদ্ধ বয়সে ছেলে পাশে না থাকার আক্ষেপ করে এ মা বলেন, আমার বাসা সহদেবপুর। আমার ঘরের পাশেই তার ঘর। মাঝেমধ্যে কথা হয়। নাতি-নাতনিরা কাছে আসে, আদর করি; ভালো লাগে। মনে আক্ষেপ থাকলেও তাদের জন্য দোয়া করি, তারা যাতে ভালো থাকে। আমার জন্য বিরক্ত যাতে না হয় সেটা আমি খেয়াল রাখি।

তিনি বলেন, খেয়ে সে বাঁচুক, আমি মারা গেলে মাটি দেবে, সে আশায় বসে আছি। বউ-ছেলে নিয়ে সে সুখে থাকুক এটাই আমার চাওয়া। আমি তার জন্য ৯ ডেসিমেল জায়গা নিয়ে রাখছি। আমি মারা গেলে সে এগুলো পাবে।

শাহেনা আক্তার বলেন, ছেলের বউয়ের কার্যকলাপে ছেলে অতিষ্ঠ হয়ে আমাকে আলাদা রাখছে। বউ আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতো। তার ৩ ছেলে আছে। তারা আসে আমার কাছে। তাদের নিয়ে সময় কেটে যায়। ছেলের খারাপ লাগে কিনা জানি না, তবে আমার খারাপ লাগলেও সেটা প্রকাশ করি না। গরিব ঘরের সন্তান হলেও আমার এখন সবকিছু আছে। কর্ম করে সব জোগাড় করেছি। শুধু ছেলে আমার পাশে নেই।

বৃদ্ধ বয়সে ছেলে পাশে নেই এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছেলে আমাকে দেখে না এটা খারাপ লাগে না যে তা না। সব মাই তো আশা করে সন্তান তার খেয়াল রাখবে। ভালোভাবে রাখবে। এখন আমার স্বামী নেই, একা মানুষ, আলাদা ঘরে থাকি। ছেলের সাথে থাকলে জীবনটা আরও সুন্দরভাবে যেতে পারত। এখন কী করব। কাজ করতে হয়। কাজ না করলে খাব কীভাবে। বুড়া বয়সে আমাকে খাওয়াবে কে?

তিনি বলেন, আমি কারও বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। আমি মারা গেলেও যাতে আমার ছেলে ভালো থাকে আমার দোয়া এটাই। আমাকে এখন ছেলে ফিরিয়ে নেবে, এ আশা আমি করি না। আমি নিজে কর্ম করে চলতে পারছি, এটাই আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া। আমি এখন কর্ম করতে পারছি, যখন আরও বয়স হয়ে যাবে তখন তো পারব না। এখন কিছু আয় উপার্জন করে রাখলে ভবিষ্যতে কাউকে বললেও অন্তত ভাত দুইটা আমাকে রান্না করে দেবে। তবে টাকা না থাকলে তো ভিক্ষা করে খেতে হবে। সেটা আমি চাই না।

সব ছেলের উদ্দেশে এই মা বলেন, আমার মতো এমন জীবন কারও না হোক। সকল মায়ের কাছে তার সন্তান থাকুক, এ দোয়া করি। সন্তানরা মায়ের খেয়াল রাখলে মায়ের আয় রোজগার করতেও শান্তি লাগে।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়'র সভাপতি মঞ্জিলা আক্তার মিমি বলেন, অনেক মায়ের সন্ধান আমরা পাই যাদেরকে সন্তানরা দেখভাল করে না। বৃদ্ধবয়সে একজন মায়ের চাওয়া একটাই থাকে তার সন্তানরা তাকে ভালো রাখবে। হাসিখুশি ভাবে শেষ জীবনটা কাটাতে চায়। কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় বহু মা সংগ্রামের জীবন পার করছেন, কেউ অভাবে কেউবা বাধ্য হয়ে। এসব মানুষগুলোর বিষয়ে সকল স্তরের মানুষদের চিন্তা করা উচিত, বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে কিংবা সমাজ ব্যবস্থায় মাকে রাখার বাধ্যতামূলক করে দেওয়া গেলে মায়েরা ভালো থাকবে।

শাহেনা আক্তারের মতো এমন জীবন সমাজে অনেক মায়ের রয়েছে। আন্তর্জাতিক মা দিবসে পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। সন্তানরা মায়ের যত্ন নিক, আদরে গড়ে তোলা সন্তান বিপথে না গিয়ে মায়ের সেবা যত্ন করুক, মাকে ভালোবেসে সম্মানে নিজের পাশেই রাখুক, এমনটাই প্রত্যাশা সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের।

;

বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস ২০২৪

পরিযায়ী পাখি সুরক্ষায় কীটনাশকের ব্যবহার পরীক্ষা জরুরি



সাদিকুর রহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
পরিযায়ী পাখি সুরক্ষায় অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার পরীক্ষা জরুরি

পরিযায়ী পাখি সুরক্ষায় অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার পরীক্ষা জরুরি

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে পাওয়া পাখিদের আবাসিক এবং অনাবাসী হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। বেশিরভাগ পরিযায়ী পাখিদেরই অনাবাসী হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়।

বাংলাদেশে প্রায় ৭১২ প্রজাতির পাখি রয়েছে। তাদের মধ্যে ৩২০ প্রজাতি পরিযায়ী। তাদের কিছু শীতকালে উড়ে আসে; আবার কিছু প্রজাতি সারা বছরই থাকে।

সরকারিভাবে মে মাসের দ্বিতীয় শনিবার বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস হিসেবে পালিত হয়। সে ধারাবাহিকতায় বৈশ্বিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণকারীরা আজকের দিনটিকে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালন করছে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়, ‘পোকামাকড় রক্ষা করো, পাখি রক্ষা করো’।

তাই, পাখির স্থানান্তরের বর্তমান প্রবণতা, পোকামাকড়ের ওপর তাদের নির্ভরতা এবং ব্যাপকভাবে কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব, বিশেষ করে বাণিজ্যিক কৃষিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করা সময়োপযোগী বলে ধারণা করা হয়।

এ-বছর ফেব্রুয়ারিতে, কনভেনশন অন দ্য কনজারভেশন অব মাইগ্রেটরি স্পিসিস অফ ইল্ড অ্যানিমেলস (সিএমএস) একটি যুগান্তকারী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে জাতিসংঘের জীববৈচিত্র্য চুক্তি নিয়ে একটি সতর্কতামূলক পর্বও ছিল।

প্রতিবেদনে পরিযায়ী পাখির মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে বলে নির্দেশ করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন, বন উজাড়, পাখি শিকারকে এর পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে পরিযায়ী পাখিদের জন্য একটি স্বাগতিক দেশ হওয়ার কারণে প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কতা বলে মনে হয়েছে।

গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকায় কৌশলগত অবস্থান এবং এর গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ পরিযায়ী পাখিদের জন্য বেশ উপযুক্ত। বাংলাদেশ একটি আবাসযোগ্য স্থান হিসেবে বিবেচিত। বিশেষ করে জলপাখি এবং তীরে বসবাসকারী পাখিদের জন্য বাংলাদেশের প্রকৃতি ভীষণ অনুকূল পরিবেশ এবং আবাসযোগ্য স্থান হিসেবে বিবেচিত।

এই পাখিরা বিশ্রাম এবং প্রজননের জন্য শীতকালীন স্থানগুলোর মধ্যে নির্দিষ্ট রুট মেনে চলে, যা ফ্লাইওয়ে নামে পরিচিত। বাংলাদেশ দুটি প্রধান পরিযায়ী পাখির ফ্লাইওয়ের মধ্যে অবস্থিত; পূর্ব-এশীয় অস্ট্রেলিয়ান ফ্লাইওয়ে এবং মধ্য এশিয়ান ফ্লাইওয়ে।

গত বছর প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, টাঙ্গুয়ার হাওর পরিযায়ী পাখিদের আবাসনের জন্য অন্যতম প্রধান জলাভূমি। কিন্তু এখান থেকেও ধীরে ধীরে অনেক জলপাখি হারিয়ে যাচ্ছে।

শিকার এবং চোরাচালানকে বাংলাদেশের পরিযায়ী পাখিদের জন্য একটি বিরাট হুমকি বলে সমর্থন করে অসংখ্য সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে পরিযায়ী প্রজাতির পাখিদের খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। তাই এ কারণটিও আরেকটি বড় হুমকি হিসেবে স্বীকৃত হওয়া উচিত বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের একজন অনুষদ এবং ওয়াইল্ডটিম বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী প্রফেসর মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, পাখিদের খাদ্য শৃঙ্খলকে ভারসাম্যহীন করার জন্য বিষাক্ত কীটনাশক এবং কীটনাশকের চিন্তাহীন প্রয়োগ দায়ী।

পাখিরা বিভিন্ন ধরনের খাবার খায়। খাদ্যাভ্যাসের ওপর নির্ভর করে। পাখিদেরকে ফ্রুগিভোরাস, ফলিভোরাস, হারবিভোরাস, নেক্টারিভোরাস এবং কীটপতঙ্গ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। তাদের খাদ্যাভ্যাস যাই হোক না কেন, প্রতিটি পাখি অবশ্যই পোকামাকড়ের ওপর নির্ভরশীল। পোকামাকড় হল প্রোটিনের সর্বোত্তম উৎস। অন্তত বাচ্চাদের লালন-পালন করার জন্য একটি মা পাখির পোকামাকড় খাওয়ানোর প্রয়োজন হয়। মাছি, মৌমাছি, শামুক, মাকড়সা, সেন্টিপিডস, মিলিপিডস, কাঁকড়া এবং পতঙ্গের মতো অমেরুদণ্ডী বা অ্যার্থ্রোপোডা পর্বের বিভিন্ন প্রাণি পাখিদের পছন্দের খাবারের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু প্রতি বছর ০.৯২ শতাংশ এবং প্রতি ১০ বছরে ৮ দশমিক ৮১ শতাংশ হারে পোকামাকড় হ্রাস পাচ্ছে, যার ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে পরিযায়ী পাখি ও প্রকৃতি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সাজেদা বেগম উল্লেখ করেন, পোকার প্রাচুর্য কমে যাওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে কৃষিক্ষেত্রে কীটনাশক, কীটনাশক ও বিষাক্ত সারের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার।

একজন প্রাযুক্তিক পর্যালোচক হিসেবে তিনি বাংলাদেশে আইইউসিএন রেড লিস্ট অফ বার্ডস তৈরিতে অবদান রেখেছিলেন। তিনি উল্লেখ করেন, কীটনাশকের সংস্পর্শে থেকেও বেঁচে থাকা পোকামাকড় খাওয়ার ফলে পাখির প্রজনন চক্র ব্যাহত হতে পারে। পাখির ছানারাও তীব্র বিষাক্ততায় ভুগতে পারে।

শীতকালে বাংলাদেশে আগত পরিযায়ী পাখিদের কীটনাশক কীভাবে প্রভাবিত করে?
পরিযায়ী পাখিরা সাধারণত উত্তর মেরু, সাইবেরিয়া, ইউরোপ, এশিয়ার কিছু অংশ এবং হিমালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে উড়ে আসে। বাংলাদেশকে তাদের প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার না করা সত্ত্বেও কীটপতঙ্গের প্রাচুর্য তাদের সুস্বাস্থ্য ও প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

সাজেদা বেগম ব্যাখ্যা করে বলেন, পরিযায়ী পাখিরা প্রোটিন হিসেবে পোকামাকড় খায়। তাদের প্রকৃত বাসস্থান ফিরে পাওয়ার পর তারা প্রজননের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করে। সেসময় পোকামাকড় খেয়ে তারা শক্তি সঞ্চয় করে। অনেক পরিযায়ী পাখি বিশেষ করে জলজ প্রজাতি পোকামাকড়ের ওপর খুব বেশি নির্ভর করে। জলাভূমিতে আশ্রয় এবং উপকূলে চারণের পাশাপাশি পোকামাকড়ই তাদের শক্তি, গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

সাজেদা বেগম আরও বলেন, জলাশয়ের বিষাক্ত দূষণ জলজ পোকামাকড়দের ধ্বংস করে যা দিনশেষে পরিযায়ী পাখিদেরও প্রভাবিত করে। কৃষিক্ষেত্র এবং শিল্প অঞ্চল থেকে বিষাক্ত উপাদান শেষ পর্যন্ত যেন জলাভূমিতে না মিশে, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

এক সমীক্ষায় দেখা যায়, কীটনাশক ব্যবহারকারীদের মধ্যে সঠিক জ্ঞানের অভাব ব্যাপক এবং অত্যধিক কীটনাশক প্রয়োগের প্রবণতা রয়েছে। সমীক্ষাটির ১৭ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, কীটনাশক উপকারী পোকামাকড় এবং প্রাণিদের হত্যা করে। অন্যদিকে, ৬ শতাংশ উত্তরদাতা বিশ্বাস করেন কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) কীটনাশক সম্পর্কে বলে, কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে পানি দূষিত হয়; যার ফলে উপকারী পোকামাকড়ের ক্ষতি হতে পারে। কীটনাশক মাটিকে দূষিত করে জীববৈচিত্র্য এবং বাস্তুতন্ত্রকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।

আশার সংবাদ হলো, সম্প্রতি খাদ্য ও কৃষি সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে কীটনাশক ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে সুপারিশমালা প্রদান করেছে। এই বছরের মার্চ মাসে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কাছে সে সুপারিশমালা হস্তান্তর করা হয়।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার স্বার্থে সুপারিশগুলো কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবেন বলে এখন আশা করা যায়।

;