চোখের সামনে থেকেও অচেনা মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ও শেষ শহীদের সমাধিসৌধ



খন্দকার আসিফুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবিঃ বার্তা২৪.কম

ছবিঃ বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

যানবাহনের যানজট আর মানুষের ভিড়ে ব্যস্ত মৌচাক মোড়ের ঠিক মধ্যভাগে চোখে পড়বে সাদা টাইলসের মোড়ানো একটি স্তম্ভ। এই মোড় দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের যাতায়াত। কিন্তু ৯০ ভাগ মানুষই জানেন না এই স্তম্ভটি আসলে কিসের এবং কেন! স্তম্ভটি মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ ফারুক ইকবাল এবং শেষ শহীদ তসলিম উদ্দিনের সমাধিস্থল।

দুই শহীদের সমাধিস্থলের তিন পাশ দিয়ে চলাচল করা সাধারণ মানুষেরও বা কি দোষ। খুব কাছে গিয়ে না দেখলে সাধারণ চোখে স্থানটি দেখে বুঝারও উপায় নেই এখানেই শুয়ে আছেন মুক্তিযুদ্ধের প্রথম এবং শেষ শহীদ। সমাধিসৌধের আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ময়লা আবর্জনা আর মোটরসাইকেল পার্কিং দেখে মনে হবে যেন এটি একটি অবহেলিত সাধারণ নির্মাণ।

১৯৭১ সালের ৩ মার্চ, পাকিস্তানের পরাধীনতা থেকে মুক্তি পেতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে ছাত্র-জনতার মিছিল নিয়ে ঢাকার রামপুরায় অবস্থান করছিলেন আবুজর গিফারী কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছাত্রলীগ নেতা ফারুক ইকবাল। উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে সেখানেই তাকে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। শহীদ হন ফারুক ইকবাল। সেসময় মৌচাক মোড়ে সমাহিত করা হয় তাকে।

ফারুক ইকবালের পাশেই সমাহিত করা হয় মুক্তিযুদ্ধের শেষ শহীদ কিশোর তসলিম উদ্দিনকে। সিদ্ধেশ্বরী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র থাকা অবস্থায় যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। যুদ্ধ শেষে বাড়ি ফেরার পথে ১৭ই ডিসেম্বর ঘাতকদের হাতে নিহত হন।

মুক্তিযুদ্ধের ৩৭ বছর পর ২০০৮ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন শহিদদের সমাধিস্থলে নির্মাণ করেন সমাধিসৌধ। তবে সমাধিসৌধটি দেখভালের দায়িত্ব কাউকে না দেওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে সেটি পড়ে আছে অযত্ন আর অবহেলায়।

এই দুই বীর শহিদের স্মৃতি এবং তাদের সমাধিসৌধের বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা হয় শহীদ ফারুক ইকবালের বড় ভাই এএনএম জুলফিকার হারুন ও শহীদ তসলিম উদ্দিনের ভাই জাহাঙ্গীর হাসান মানিকের সাথে।

শহীদ ফারুকের বড় ভাই জুলফিকার হারুন বার্তা২৪-এর সাথে আলাপকালে ভাইয়ের সে সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ফারুক যেদিন শহীদ হয় পল্টন ময়দানে সেদিন ছাত্রলীগের মিটিংয়ে বঙ্গবন্ধুর আসার কথা ছিল। সেই মিটিং অরগানাইজ করার জন্যই সে নাস্তা না করেই সকাল সকাল বাসা থেকে বের হয়ে যায়। আবুজর গিফারী কলেজের সামনে থেকে ফারুক যখন মিছিল নিয়ে রামপুরার দিকে রওনা হয় তখন আমি সেখানেই ছিলাম। আমি বাসায় চলে আসলাম। একটু পর একজন এসে বলল রামপুরায় একজনকে পাকিস্তানি বাহিনী গুলি করেছে। এই কথা আম্মা শুনে বলে উঠল ‘আল্লাহ জানেন কোন মায়ের বুক জানি খালি হল’। আমি বাসা থেকে বের হয়েই দেখি একটা ছেলে ফারুকের পায়ের জুতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি দেখেই বুঝে ফেললাম ঘটনা কি! এটাই ছিল ফারুককে আমার শেষ দেখা। এভাবেই ভাই ফারুকের শহীদ হওয়ার ঘটনা বলছিলেন হারুন। এবং জানান সেদিন ফারুকের জানাজায় ছাত্রনেতা বীরবিক্রম মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আ স ম আব্দুর রব, নূরে আলম সিদ্দিকী, আব্দুল কুদ্দুস মাখনসহ অনেক নেতা উপস্থিত ছিলেন।

মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম না থাকা নিয়ে জুলফিকার হারুন বলেন, পরিবার থেকে আমরা কখনও আবেদন করিনি তালিকায় নাম তোলার জন্য। এরশাদ সরকারের আমলে একবার একটা ফরম দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আব্বা আবেদন করতে দেননি। আব্বার একটাই কথা ‘আমার ছেলে শহীদ হইছে, এটাই সম্মানের। এর বিনিময়ে সরকার থেকে আমরা কোনো সুবিধা নেব না। এরপর আর আবেদন করা হয়নি। সরকার থেকেও আমাদের সাথে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। শুধুমাত্র ৩ মার্চ এলেই সমাধিসৌধে ফুল দিয়ে, একটু আলোচনা সভা করে সবাই আবার ভুলে যায়। তবে তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদকে তুলে ধরার জন্য সরকার যদি কোনও ব্যবস্থা নিতো তাহলে সবাই তার ব্যপারে জানতে পারতো।

৩ মার্চ যখন শহীদ ফারুক ইকবালের মরদেহ বাড়িতে আনা হয় তখন কফিনের সামনে পেছনে হাজার হাজার মুক্তিকামি মানুষের মিছিল। কে জানতো বাড়ির উঠানে তখন অবস্থান করছিল দেশ প্রেমিক আরেক শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ তসলিম উদ্দিন- ঠিক এভাবেই নিজের ভাইয়ের গল্পটা শুরু করলেন জাহাঙ্গীর হাসান মানিক।

শহীদ তসলিম উদ্দিনের ভাই জাহাঙ্গীর হাসান মানিক বলেন, হাজার হাজার জনতা যখন স্লোগান দিতে দিতে ফারুক ভাইয়ের (শহীদ ফারুক ইকবাল) মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসলো এই দৃশ্য দেখেই আমার ১৩ বছরের ভাই মাকে বলে ‘দেখ মা, ফারুক ভাই কত ভাগ্যবান! হাজার হাজার জনতা তাঁর মরদেহ নিয়ে মিছিল করছে! তাঁর মৃত্যু নতুন ইতিহাসের সূচনা করছে!’ মা ধমক দেয়, "চুপ কর! কী সব অলুক্ষণে কথা কস!" মায়ের ধমকে ভাই তখন চুপসে যায়।

২৫ মার্চ রাতে ঢাকা শহরে শুরু হয় পাকবাহিনীর বর্বরতা, শুরু হয় নিধনযজ্ঞ। সে রাতে ঢাকার যে আগুন তসলিম দেখেছে, সেই আগুনই তসলিমের মধ্যে জন্ম নেয় আগ্নেয়গি। মা-বাবা লক্ষ করলো কেমন জানি চুপচাপ হয়ে গেল সে। আগের মত তার মধ্যে চঞ্চলতা নেই, আবার কারো সঙ্গে ঠিক মত কথাও বলেনা। জানতে চাইলেও ভাই মা-বাবাকে কিছু বলেনি। এভাবে চলতে থাকার মধ্যে মার্চ কিংবা এপ্রিলে হঠাৎ একদিন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তসলিমকে। বিভিন্ন জায়গায় অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। এর কয়েকদিন পরই জানা যায়, তৎকালীন আমাদের এলাকারই আলাউদ্দিন সুইট- এর ম্যানেজার আজিম খোকন, বাচ্চ্‌ ও তসলিমকে যুদ্ধে পাঠাতে সহযোগিতা করে।

১৩ বছরের তসলিম যুদ্ধের ময়দানে যুদ্ধ করছে। সে বাসায় না থাকায় এদিকে শহরের রাজাকারদের সন্দেহ তসলিম মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে। তাই ক'দিন পরপরই বাসায় পাকিস্তানি আর্মি নিয়ে এসে আব্বাকে খুব বিরক্ত করতো। ৮ বার আব্বাকে আর্মিরা তুলেও নিয়ে গেছিল। তসলিমের কোনও খোঁজ না পাওয়ায় আমাদের বাসা জ্বালিয়েও দিয়েছিল। আমাদের অন্যত্র গিয়ে থাকতে হয়েছে এই পাকিস্তানিদের অত্যাচারে।

রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষ হয়। তসলিমরা জয়ী হয়। একটি নতুন সকাল ১৬ ডিসেম্বর। দেশ আজ স্বাধীন। জনতার বিজয়ের উল্লাসের সাথে পৃথিবীর সব খুশি যেন বাবার মধ্যে। বাবার অপেক্ষা শেষ হয় ১৭ ডিসেম্বর। মুক্তিযোদ্ধাদের বরণ করতে এলাকার মানুষ বিজয় স্লোগান দিচ্ছে। একে একে তসলিমদের দলের প্রধান মোশাররফসহ আরও অনেকেই ফিরে এসেছে। কিন্তু তসলিম আর ফিরল না।

যে ফারুক ভাইয়ের মরদেহ দেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তসলিম, মৌচাক মোড়ে সে ফারুক ভাইয়ের কবরের পাশেই তাকে কবর দেওয়া হয়- বলেই চোখের পানি মুছলেন শহীদ তসলিম উদ্দিনের ভাই জাহাঙ্গীর হাসান মানিক।

এভাবেই ঢাকার মৌচাক মোড়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম এবং শেষ শহিদের সমাধিস্থল পাশাপাশি।

তবে ফারুক-তসলিমের সমাধিসৌধের বর্তমান অবস্থা দেখে কিছুটা আক্ষেপ নিয়েই দুই শহীদের দুই ভাই জানান, যদি সরকার থেকে সমাধিসৌধের সঠিক ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ না করা হয় তাহলে দুই পরিবার থেকেই যতটুকু সম্ভব করা হবে। অন্তত সমাধিসৌধের স্থানটিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে সেখানে বড় করে দুই শহীদের নামফলক লাগাবেন। যাতে মানুষ দূর থেকেই দেখতে পারে এবং ফারুক-তসলিম সম্পর্কে জানতে পারে।

   

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

  • Font increase
  • Font Decrease

‘পথের কেনারে পাতা দোলাইয়া করে সদা সঙ্কেত/ সবুজে হদুদে সোহাগ ঢুলায়ে আমার ধানের ক্ষেত/ ছড়ায় ছড়ায় জড়াজড়ি করি বাতাসে ঢলিয়া পড়ে/ ঝাঁকে আর ঝাঁকে টিয়ে পাখিগুলে শুয়েছে মাঠের পরে/ কৃষাণ কনের বিয়ে হবে, তার হলদি কোটার শাড়ী/ হলুদে ছোপায় হেমন্ত রোজ কটি রোদ রেখা নাড়ি/ কলমী লতার গহনা তাহার গড়ার প্রতীক্ষায়/ ভিনদেশী বর আসা যাওয়া করে প্রভাত সাঁঝের নায়।’ পল্লীকবি জসীম উদদীনের ‘ধান ক্ষেত’ কবিতার অপূর্ব চিত্রায়ন কৃষকের শ্রম-ঘাম আর প্রকৃতির তরফে। কাব্যে-পঙক্তির বিমূর্ত চিত্র মূর্ত হয়েছে বিস্তীর্ণ মাঠে। কিষান-কিষানির বুক ভরা আশার সার্থক রূপায়ন হতে চলেছে এ-মৌসুমে।

এখন ভরা বৈশাখ। এ-সময়টা বোরো ধানের। বোরো ধান দেশের খাদ্যচাহিদার অন্তত ৫৫ শতাংশ মিটিয়ে থাকে। দেশের হাওরভুক্ত ৭টি জেলা সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওরে এই বোরোর চাষ বেশি হয়ে থাকে। এই ধান অতিবৃষ্টি, বন্যা ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে দেশের খাদ্যচাহিদায় ঘাটতি পড়ে না। তাই এই ধান চাষ থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তোলা পর্যন্ত অনুকূল আবহাওয়া, বিশেষ করে রোদের উপস্থিতি অতি জরুরি। বর্তমানে সে পরিস্থিতি চলছে।

সিলেট অঞ্চলের মানুষ বলে এই অঞ্চলের মানুষের চাওয়া-পাওয়া, হতাশা-উচ্চাশার সঙ্গে আমি পরিচিত। তাদেরকে উদাহরণ হিসেবে টানছি। তাদের সঙ্গে থেকে জেনেছি, বোরো মৌসুমে নির্বিঘ্নে ঘরে ফসল তোলা কতটা জরুরি। গবাদি পশুর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে জরুরি খড় সংরক্ষণও। তীব্র রোদ এখানে সমস্যার নয়, এটা বরং আনন্দের। কারণ এই রোদ গা পোড়ালেও বুক ভরা আশার সার্থক বাস্তবায়নের পথ দেখায়। দেশের যে খাদ্যচাহিদা, যে খাদ্যনিরাপত্তা সেটা এই বোরো ধানের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই চাষ থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে দরকার হয় প্রকৃতির সহায়তা। এবার এখন পর্যন্ত সে সহায়তা আছে, যদিও এ মাসের শুরুর দিকে একবার ঝড়বৃষ্টিসহ শঙ্কার কালমেঘ হাতছানি দিয়েছিল। সেটা আপাতত দূরে সরেছে।

কিষান-কিষানির দরকার এখন তীব্র রোদ। তারা এটা পাচ্ছে। দেশে তীব্র তাপদাহ। এখানেও এর ব্যতিক্রম নয়। তবু তারা এই রোদের প্রার্থনায় রয়েছে। বৃষ্টি এখন তাদের কাছে দুর্যোগ-সম। কারণ এই বৃষ্টি এবং অতি-বৃষ্টিসৃষ্ট বন্যা তাদের স্বপ্নসাধ গুঁড়িয়ে ভাসিয়ে নিতে পারে সব। ২০১৭ সালের দুঃসহ স্মৃতি এখনও বিস্মৃত হয়নি সুনামগঞ্জের কৃষকেরা। সে বছর সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ১৩৭ হাওরের ফসল বন্যায় এবার ভেসে গিয়েছিল। গতবার কৃষক নির্বিঘ্নে ফসল ঘরে তুলেছেন। এরআগের বছর অন্তত ২০টি হাওরের ফসলহানি হয়েছিল বন্যায়।

প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল ক্ষেতের ফসল, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা। এখানে প্রচণ্ড তাপদাহ তাই প্রভাব ফেলে সামান্যই। রোদে পুড়ে, প্রয়োজনে ছাতা মাথায় দিয়ে কিষান-কিষানিরা স্বপ্ন তোলেন ঘরে। তারা বৃষ্টির জন্যে প্রার্থনা না করে বরং রোদ আরও কিছুদিন অব্যাহত রাখার প্রার্থনায় বসেন। কৃষকেরা পরিমিত বৃষ্টি চায় চৈত্র মাসে, বৈশাখে চায় খাঁ খাঁ রোদ্দুর, কারণ এই রোদে সোনালী ধান ঘরে ওঠে। লোককথার প্রচলিত, ধান তোলার মৌসুমে ঝড়বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য হাওরবাসীরা তন্ত্রসাধক বা ‘হিরাল’ ও ‘হিরালি’-দের আমন্ত্রণ জানাতেন। তারা এসে মন্ত্রপাঠ করে ঝড়বৃষ্টি থামানোর জন্য চেষ্টা করতেন। লোকায়ত বিশ্বাস থেকে আগেকার মানুষজন এমন আচার পালন করতেন। এসবে সত্যি কাজ হতো কিনা সেটা বিতর্ক এবং ব্যক্তি-বিশ্বাসসাপেক্ষ, তবে এই হিরাল-হিরালিদের আমন্ত্রণ বলে বৈশাখে একদম বৃষ্টি চায় না হাওরের কৃষক।

হাওরপারের মানুষেরা যখন রোদ অব্যাহত থাকার প্রার্থনায়, তখন দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহে পুড়তে থাকা মানুষেরা আছেন বৃষ্টিপ্রার্থনায়। দেশের জায়গায়-জায়গায় বৃষ্টি প্রার্থনায় ইস্তিস্কার নামাজ পড়া হচ্ছে, গণমাধ্যমে সচিত্র সংবাদ আসছে এর। কোথাও প্রবল বিশ্বাসে কেউ কেউ ‘ব্যাঙের বিয়ে’ দিচ্ছেন, এটাও বৃষ্টি প্রার্থনায়। সামাজিক মাধ্যমে গরমের তীব্রতার আঁচ মিলছে, বৃষ্টি নাকি ধান—কোনটা জরুরি এই প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ। কেবল তাই নয়, বাংলাদেশের প্রচণ্ড তাপদাহ নিয়ে বিশ্বমিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে দেশের মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, এএফপি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া। গণমাধ্যমগুলো বলছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে টানা দ্বিতীয় বছর বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের ঘোষণাও এসেছে। বৃষ্টি-প্রার্থনায় নামাজের আয়োজনের কথাও এসেছে বিশ্বমিডিয়ায়।

একদিকে প্রচণ্ড তাপদাহ, অন্যদিকে খাদ্যনিরাপত্তার প্রধান উপকরণ ধান ঘরে তোলার অনিশ্চয়তা—তবু অনেকের কাছে সাময়িক স্বস্তিই যেন মুখ্য। অথচ আর দিন দশেক বেরো আবাদ-এলাকায় বৃষ্টি না নামলে ধানগুলো ঘরে ওঠত কৃষকের। নিশ্চিত হতো খাদ্যনিরাপত্তার।

প্রকৃতির ওপর আমাদের হাত নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই; তবু মনে করি আমাদের আকাঙ্ক্ষার প্রকাশে কৃষকদের গুরুত্ব থাকা উচিত। আমাদের চাওয়ায় হয়তো প্রকৃতির রীতি বদলাবে না, তুমুল রোদ্দুরের দেশে হঠাৎ বৃষ্টি নামবে না, তবে ধান ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত রোদ্দুর কামনায় কৃষক স্বস্তি পাবে; ভাবতে পারবে এই দেশ আছে তাদের সঙ্গে।

কৃষকের জয় হোক। অন্তত বোরো-এলাকায় প্রকৃতি কৃষকের সঙ্গে থাকুক।

;

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;