হারিয়ে যাচ্ছে বিহারি ঐতিহ্যের কারচুপি-জারদৌসি শিল্প



রেদওয়ান আহমদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রামের বিহারিপল্লীতে একসময় কারচুপি ও জারদৌসি কারিগরদের বেশ হাঁকডাক ছিল। কোনো যন্ত্র ছাড়াই সুঁই-সুতায় নিপুণ হাতের কারুকাজে রঙ-বেরঙের পোশাকে বাহারি নকশা তোলায় তাদের দক্ষতার সুনাম ছিল জগত জুড়ে।

বিশেষ করে কারচুপি ও জারদৌসি কাজে রয়েছে, বিশেষ খ্যাতি। তবে হাতে তৈরি এ শিল্পটি এখন ভেঙে পড়েছে প্রায়! দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, বিদেশি পোশাকের আমদানি ও সরকারি বিনিয়োগের অভাবে অনেক কারিগর ও মালিক এই পেশা ছেড়েছেন। আবার অনেকেই শত বছরের পুরোনো এই শিল্পকে নানাভাবে টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।

কারিগররা জানিয়েছেন, জরি, সুতা, পুঁতি, চুমকি, পাথর দিয়ে মূলত বিভিন্ন পোশাকে নকশায় কারচুপি ও জারদৌসি কাজ হয়ে থাকে। এখানকার বাহারি নকশার পোশাক চলে যেতো চট্টগ্রামের বিভিন্ন শপিংমলে।

কাপড়ে কারচুপি ও জারদৌসির কাজ করছেন একজর কারিগর

তবে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ডিজাইনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিদেশি কাপড়ের আধিপত্য বাড়ায় ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে এই শিল্প। গত কয়েক বছরে অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। আবার অনেকেই কারখানা ছোট করে কোনোরকমে ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন। তাদের দাবি, সরকারি বিনিয়োগ পেলে এই শিল্প থেকে দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন সম্ভব।

বিহারিপল্লীর কয়েকটি কারখানায় এখনও হাতেগোনা কারচুপি-জারদৌসি কারিগরের দেখা পাওয়া যায়। তবে নেই আধুনিকতার ছোঁয়া! ঝাউতলার এই বিহারিপল্লীর একটি গলির ভেতর ঢুকে সামান্য হাঁটলে দোতলাবিশিষ্ট একটি কারখানার সন্ধান পাওয়া যায়।

সেখানে কথা হয়, পাপ্পু বুটিকস হাউজের মোহাম্মদ আসিফ নামের একজন কারিগরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, এখানে পাঞ্জাবি, কামিজ, থ্রি-পিস, শাড়ি, আবায়া ও বোরকাসহ বিভিন্ন পোশাকে ডিজাইন তৈরি করে দেওয়া হয়। কারচুপি ও জারদৌসি এ দুটো সম্পূর্ণই হাতের কাজ, যা মেশিন দিয়ে কখনোই সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, এ কাজগুলো কাঠের ফ্রেমে নকশা আঁকা কাপড় রেখে পাথর ও বিভিন্ন সুতা দিয়ে করা হয়। সাধারণত, মোগল স্থাপত্যরীতির একটা ছাপ স্পষ্টভাবেই ফুটে ওঠে এতে। মোগল আমলের মিনার-কলকি জারদৌসি কাজের মূল বৈশিষ্ট্য। সিল্ক, মসলিন, জর্জেট ও ভেলভেটের কাপড়ে জারদৌসি পূর্ণরূপে ফুটে ওঠে। জরি, সুতা, পুঁতি, চুমকি, পাথর ইত্যাদি কারচুপি ও জারদৌসির মূল কাঁচামাল। মূলত ভারত ও পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আসে। কিন্তু এসবের দাম এখন অনেক বেড়ে গেছে।

কারচুপি ও জারদৌসির কাজ চলছে কারখানায়, ছবি: বার্তা২৪.কম

আড়ি, রেশম, চুমকি, জরির সংমিশ্রণে জারদৌসির কাজে মোগল মোটিফ তুলে ধরা হয় বলে জানিয়ে মোহাম্মদ আসিফ বলেন, পোশাকে উৎসব এবং আভিজাত্য, এই দুইয়ের প্রতীক হিসেবে ধরা হয় ‘জারদৌসি’কে। নকশা করার সময় এর সঙ্গে আরো যুক্ত হয় মুক্তা, মিনা আর কুন্দন।

তিনি বলেন, নিজের সৃজনশীলতার সঙ্গে হাতের কৌশলের সমন্বয় করে একজন কারিগর সম্পন্ন করেন একেকটি জারদৌসির কাজ। তবে কারচুপির কাজটা একটু ভিন্ন। এখানে জারদৌসির চেয়ে পরিশ্রম কিছুটা কম। তবে এই দুটি নকশা যেন সহোদর! একটি ছাড়া আরেকটি নকশা সম্পূর্ণ হয়ে ওঠে না!

যেকোনো কাপড়েই জারদৌসি-কারচুপির কাজ ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়। সেজন্য চাই, মানানসই কাপড়। ওড়নার চারদিকে জরির পাড় বসাতে বসাতে একই পল্লীর কারিগর মোক্তার বললেন, পিওর সিল্ক, মসলিন, জর্জেট ও ভেলভেটের কাপড়ে জারদৌসি ফুটে ওঠে পূর্ণরূপে।

পাশাপাশি ওড়না ও সালোয়ারের দিকেও দিতে হয় বিশেষ নজর। কামিজের ছাঁটটা সোজা হলে এর সঙ্গে মানায় সোজা বা স্ট্রেইট কাটের একটু পা উঁচু সালোয়ার। হালকা ঢোলা কামিজের সঙ্গে ঘারারা সালোয়ারও মানাবে বেশি। এ ধরনের সালোয়ারের নিচে থাকতে পারে জারদৌসির নকশা। তবে সালোয়ার, কামিজের কাটছাঁট যেমনই হোক না কেন, ওড়নাটা একটু বড় হওয়া চাই। আর ওড়নার চারদিকে জরির পাড় বসিয়ে নিলে পুরো পোশাকটিই হয়ে ওঠে আভিজাত্যের প্রতীক।

সুনিপুণ দক্ষতায় কাজ করতে হয় কারচুপি ও জারদৌসিতে, ছবি: বার্তা২৪.কম

পাপ্পু বুটিকস হাউজের মালিক মো. খালিদ জাফর পাপ্পু বলেন, ‘এই কাজটা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, ঢাকা আর উত্তরবঙ্গে হয়। আমি করছি, প্রায় ২৬ বছর ধরে। আমাদের কাজ কম-বেশি পুরো বছরই থাকে। তবে, ঈদে একটু চাপ বাড়ে। অর্ডার অনুযায়ী, মাসে ৩০ থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়। দেশ ও দেশের বাইরে এ কাজের ব্যাপক চাহিদা। তবে, দেশে এ শিল্প এখন দুর্বল হয়ে পড়েছে। কারিগররাও চলে যাচ্ছেন অন্য কাজে। আগে এখানে প্রায় দু’শ কারখানা ছিল। কিন্তু এখন আছে মাত্র, ১০ থেকে ১৫টা। সরকার যদি আমাদের এই কাজটার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়, তাহলে আমরা কাজটাকে আরো ছড়িয়ে দিতে পারতাম’!

পাপ্পুর বড় মেয়ে ওয়ারলেস ঝাউতলা কলোনি উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়ে। পড়ালেখার পাশাপাশি সেও তার বাবার সঙ্গে মাঝেমধ্যে কারচুপি-জারদৌসির কাজ করে। তার ইচ্ছে, ভবিষ্যতে ফ্যাশন ডিজাইনে পড়ে এই শিল্পটা নিয়ে কাজ করা।

ওয়ারলেস ঝাউতলা কলোনি উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া এই শিক্ষার্থী বার্তা২৪.কমকে বলে, ‘আমার জারদৌসির কাজ করতে অনেক ভালো লাগে! পড়ালেখার পাশাপাশি বাবার সঙ্গে এ কাজটা আমি করি'।

বাংলাদেশের এই কাজ জগদ্বিখ্যাত! এর মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি সম্ভব। শুধু কারিগরের অভাব। ভবিষ্যতে ফ্যাশন ডিজাইনে পড়ালেখা করার ইচ্ছা আমার। কারণ, এ শিল্পটাকে আমি দেশ এবং দেশের বাইরে ছড়িয়ে দিতে চাই।

এটা এমন এক শিল্প, যেটি ঘরে বসেও মেয়েরা করতে পারবে। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারবে, যার কারণে সরকারের উচিত মেয়েদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে এ শিল্পে বিনিয়োগ করা!’

ঝাউতলার একটি গলির ভেতর ঢুকে সামান্য হাঁটলে সেমিপাকা ভবনে একটি কারখানার সন্ধান পাওয়া যায়। সেখানে কথা হয়, ঊর্দুভাষী মো. ইমরান হোসেনের সঙ্গে।

                               হারিয়ে যাচ্ছে বিহারি ঐতিহ্যের কারচুপি-জারদৌসি শিল্প (ভিডিও)

বার্তা২৪.কমকে ইমরান বলেন, ‘সবাই এ কাজটা ছেড়ে দিচ্ছে। আমাদের এখানে কাজের চাহিদা আগের চাইতে বেশি। কেবল কারিগরের সংখ্যা কম। আমাদের এ কারখানায় পাঁচ বছর আগেও প্রতিদিন ১০ জন কারিগর কাজ করতেন। কিন্তু এখন মাত্র দুইজন। কারিগর খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘শুধু এখানেই নয়, সব কারখানাতেই এখন কারিগর সংকট। কাজের অনেক চাহিদা, কিন্তু কারিগর না থাকার কারণে কাজ কম হচ্ছে। এ কাজে টাকা কম। তাই, কারিগররা এ কাজ ছাড়ছেন’।

ইমরান আরো বলেন, ‘আমাদের এ কাজটা নিয়ে সরকার যদি আগাতো, তাহলে অনেক ভালো হতো। এদিকে, বাংলাদেশে অনেক শিল্প বাড়তো। অনেক লাভবান হতো। কেননা, ভারত বাংলাদেশ ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন আরব দেশগুলোতে এ কাজের প্রচুর চাহিদা। বিশেষ করে বোরকা ও আবায়ার চাহিদা ব্যাপক। কিন্তু সবকিছুর দাম বাড়চ্ছে, যার কারণে লাভের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এ কাজটা ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাবে’।

   

বান্টি গ্রাম: উড়ছে রং-বেরঙের কাপড়



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বান্টি গ্রামের মাঠে শুকাতে দিচ্ছেন বাটিকের রং করা কাপড়/ছবি: নূর এ আলম

বান্টি গ্রামের মাঠে শুকাতে দিচ্ছেন বাটিকের রং করা কাপড়/ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশেই বান্টি গ্রাম। বাটিকের গ্রাম বলেই এর পরিচিতি। এখানে ঘরে ঘরে বাটিক-ব্লকের কাজ চলে। গ্রামজুড়ে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৫০০ কারখানা। এই গ্রামে দিনরাত কাজ করেন হাজারো শ্রমিক। এই কাজে তাদের সংসার চলে। বান্টি গ্রামের কর্মময় জীবন চিত্র তুলে এনেছেন বার্তা২৪.কম এর ফটো এডিটর নূর এ আলম। 

বান্টি গ্রামে থ্রিপিস, ওড়না, সালোয়ার, কামিজ, বিছানার চাদর ও বালিশের কাভারে বাটিকের কাজ করা হয়/ছবি: নূর এ আলম


 

দূরদূরান্ত থেকে পাইকাররা এসব কিনতে আসেন। তাদের হাত ধরেই এসব কাপড় চলে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে


কাপড় রং করার আগে প্রতিটি কারখানায় গরম পানিতে রং প্রস্তুত করা হয়/ছবি: নূর এ আলম

 

কাপড়ের রং পাকা করতে সেদ্ধ করা হচ্ছে।/ছবি: নূর এ আলম


কয়েক ধাপে চলে কাপড়ে বাটিকের করার কাজ/ছবি: নূর এ আলম


রং মেশানোর প্রক্রিয়াটা ঠিক আছে কিনা হাত দিয়ে দেখছেন একজন/ছবি: নূর এ আলম


গ্রামে কাপড়ে রঙ মেশানোর কাজ ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলে/ছবি: নূর এ আলম


বাটিকের গ্রামের অনেক বাড়িতে বসানো হয়েছে লুম মেশিন। এই মেশিন দিয়ে নানান ধরনের নকশা করা হয়/ছবি: নূর এ আলম


লুম মেশিনে চলছে কাপড় বুননের কাপড়/ছবি: নূর এ আলম


কাপড়ে রঙ করা শেষে শুকাতে দেওয়ার আগে পানি ঝরিয়ে ফেলা হয়/ছবি: নূর এ আলম


রং করা কাপড় শুকাতে দিচ্ছেন এক নারী শ্রমিক/ছবি: নূর এ আলম


বান্টি গ্রামের নারী পুরুষ সবাই ব্লক বাটিক ও প্রিন্টের সঙ্গে জড়িত/ছবি: নূর এ আলম

রং করা কাপড় ছাদে ও মাঠে শুকাতে দেওয়া হয়/ছবি: নূর এ আলম


কড়া রোদে শুকানোর পর তা কারখানায় নিয়ে আসেন শ্রমিকরা।/ছবি: নূর এ আলম


প্রচন্ড তাপদাহে বাটিকের চাহিদা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। /ছবি: নূর এ আলম


;

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

  • Font increase
  • Font Decrease

‘পথের কেনারে পাতা দোলাইয়া করে সদা সঙ্কেত/ সবুজে হদুদে সোহাগ ঢুলায়ে আমার ধানের ক্ষেত/ ছড়ায় ছড়ায় জড়াজড়ি করি বাতাসে ঢলিয়া পড়ে/ ঝাঁকে আর ঝাঁকে টিয়ে পাখিগুলে শুয়েছে মাঠের পরে/ কৃষাণ কনের বিয়ে হবে, তার হলদি কোটার শাড়ী/ হলুদে ছোপায় হেমন্ত রোজ কটি রোদ রেখা নাড়ি/ কলমী লতার গহনা তাহার গড়ার প্রতীক্ষায়/ ভিনদেশী বর আসা যাওয়া করে প্রভাত সাঁঝের নায়।’ পল্লীকবি জসীম উদদীনের ‘ধান ক্ষেত’ কবিতার অপূর্ব চিত্রায়ন কৃষকের শ্রম-ঘাম আর প্রকৃতির তরফে। কাব্যে-পঙক্তির বিমূর্ত চিত্র মূর্ত হয়েছে বিস্তীর্ণ মাঠে। কিষান-কিষানির বুক ভরা আশার সার্থক রূপায়ন হতে চলেছে এ-মৌসুমে।

এখন ভরা বৈশাখ। এ-সময়টা বোরো ধানের। বোরো ধান দেশের খাদ্যচাহিদার অন্তত ৫৫ শতাংশ মিটিয়ে থাকে। দেশের হাওরভুক্ত ৭টি জেলা সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওরে এই বোরোর চাষ বেশি হয়ে থাকে। এই ধান অতিবৃষ্টি, বন্যা ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে দেশের খাদ্যচাহিদায় ঘাটতি পড়ে না। তাই এই ধান চাষ থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তোলা পর্যন্ত অনুকূল আবহাওয়া, বিশেষ করে রোদের উপস্থিতি অতি জরুরি। বর্তমানে সে পরিস্থিতি চলছে।

সিলেট অঞ্চলের মানুষ বলে এই অঞ্চলের মানুষের চাওয়া-পাওয়া, হতাশা-উচ্চাশার সঙ্গে আমি পরিচিত। তাদেরকে উদাহরণ হিসেবে টানছি। তাদের সঙ্গে থেকে জেনেছি, বোরো মৌসুমে নির্বিঘ্নে ঘরে ফসল তোলা কতটা জরুরি। গবাদি পশুর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে জরুরি খড় সংরক্ষণও। তীব্র রোদ এখানে সমস্যার নয়, এটা বরং আনন্দের। কারণ এই রোদ গা পোড়ালেও বুক ভরা আশার সার্থক বাস্তবায়নের পথ দেখায়। দেশের যে খাদ্যচাহিদা, যে খাদ্যনিরাপত্তা সেটা এই বোরো ধানের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই চাষ থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে দরকার হয় প্রকৃতির সহায়তা। এবার এখন পর্যন্ত সে সহায়তা আছে, যদিও এ মাসের শুরুর দিকে একবার ঝড়বৃষ্টিসহ শঙ্কার কালমেঘ হাতছানি দিয়েছিল। সেটা আপাতত দূরে সরেছে।

কিষান-কিষানির দরকার এখন তীব্র রোদ। তারা এটা পাচ্ছে। দেশে তীব্র তাপদাহ। এখানেও এর ব্যতিক্রম নয়। তবু তারা এই রোদের প্রার্থনায় রয়েছে। বৃষ্টি এখন তাদের কাছে দুর্যোগ-সম। কারণ এই বৃষ্টি এবং অতি-বৃষ্টিসৃষ্ট বন্যা তাদের স্বপ্নসাধ গুঁড়িয়ে ভাসিয়ে নিতে পারে সব। ২০১৭ সালের দুঃসহ স্মৃতি এখনও বিস্মৃত হয়নি সুনামগঞ্জের কৃষকেরা। সে বছর সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ১৩৭ হাওরের ফসল বন্যায় এবার ভেসে গিয়েছিল। গতবার কৃষক নির্বিঘ্নে ফসল ঘরে তুলেছেন। এরআগের বছর অন্তত ২০টি হাওরের ফসলহানি হয়েছিল বন্যায়।

প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল ক্ষেতের ফসল, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা। এখানে প্রচণ্ড তাপদাহ তাই প্রভাব ফেলে সামান্যই। রোদে পুড়ে, প্রয়োজনে ছাতা মাথায় দিয়ে কিষান-কিষানিরা স্বপ্ন তোলেন ঘরে। তারা বৃষ্টির জন্যে প্রার্থনা না করে বরং রোদ আরও কিছুদিন অব্যাহত রাখার প্রার্থনায় বসেন। কৃষকেরা পরিমিত বৃষ্টি চায় চৈত্র মাসে, বৈশাখে চায় খাঁ খাঁ রোদ্দুর, কারণ এই রোদে সোনালী ধান ঘরে ওঠে। লোককথার প্রচলিত, ধান তোলার মৌসুমে ঝড়বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য হাওরবাসীরা তন্ত্রসাধক বা ‘হিরাল’ ও ‘হিরালি’-দের আমন্ত্রণ জানাতেন। তারা এসে মন্ত্রপাঠ করে ঝড়বৃষ্টি থামানোর জন্য চেষ্টা করতেন। লোকায়ত বিশ্বাস থেকে আগেকার মানুষজন এমন আচার পালন করতেন। এসবে সত্যি কাজ হতো কিনা সেটা বিতর্ক এবং ব্যক্তি-বিশ্বাসসাপেক্ষ, তবে এই হিরাল-হিরালিদের আমন্ত্রণ বলে বৈশাখে একদম বৃষ্টি চায় না হাওরের কৃষক।

হাওরপারের মানুষেরা যখন রোদ অব্যাহত থাকার প্রার্থনায়, তখন দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহে পুড়তে থাকা মানুষেরা আছেন বৃষ্টিপ্রার্থনায়। দেশের জায়গায়-জায়গায় বৃষ্টি প্রার্থনায় ইস্তিস্কার নামাজ পড়া হচ্ছে, গণমাধ্যমে সচিত্র সংবাদ আসছে এর। কোথাও প্রবল বিশ্বাসে কেউ কেউ ‘ব্যাঙের বিয়ে’ দিচ্ছেন, এটাও বৃষ্টি প্রার্থনায়। সামাজিক মাধ্যমে গরমের তীব্রতার আঁচ মিলছে, বৃষ্টি নাকি ধান—কোনটা জরুরি এই প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ। কেবল তাই নয়, বাংলাদেশের প্রচণ্ড তাপদাহ নিয়ে বিশ্বমিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে দেশের মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, এএফপি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া। গণমাধ্যমগুলো বলছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে টানা দ্বিতীয় বছর বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের ঘোষণাও এসেছে। বৃষ্টি-প্রার্থনায় নামাজের আয়োজনের কথাও এসেছে বিশ্বমিডিয়ায়।

একদিকে প্রচণ্ড তাপদাহ, অন্যদিকে খাদ্যনিরাপত্তার প্রধান উপকরণ ধান ঘরে তোলার অনিশ্চয়তা—তবু অনেকের কাছে সাময়িক স্বস্তিই যেন মুখ্য। অথচ আর দিন দশেক বেরো আবাদ-এলাকায় বৃষ্টি না নামলে ধানগুলো ঘরে ওঠত কৃষকের। নিশ্চিত হতো খাদ্যনিরাপত্তার।

প্রকৃতির ওপর আমাদের হাত নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই; তবু মনে করি আমাদের আকাঙ্ক্ষার প্রকাশে কৃষকদের গুরুত্ব থাকা উচিত। আমাদের চাওয়ায় হয়তো প্রকৃতির রীতি বদলাবে না, তুমুল রোদ্দুরের দেশে হঠাৎ বৃষ্টি নামবে না, তবে ধান ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত রোদ্দুর কামনায় কৃষক স্বস্তি পাবে; ভাবতে পারবে এই দেশ আছে তাদের সঙ্গে।

কৃষকের জয় হোক। অন্তত বোরো-এলাকায় প্রকৃতি কৃষকের সঙ্গে থাকুক।

;

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;