তেতুলিয়ায় হিমালয়ের বুকে পাখি



অধ্যাপক ড. আ ন ম আমিনুর রহমান পাখি ও বন্যপ্রাণী প্রজনন ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ
তুলসিয়া বিলের উপরে কাঞ্চনজঙ্গার বুকে একঝাঁক উড়ন্ত ধূসর-টিটি

তুলসিয়া বিলের উপরে কাঞ্চনজঙ্গার বুকে একঝাঁক উড়ন্ত ধূসর-টিটি

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশেষ দুটি লক্ষ্য নিয়ে ২০১৭ সালের ৯ নভেম্বর রাতে দেশের উত্তরাঞ্চলের শেষ সীমায় অবস্থিত পঞ্চগড় জেলার তেতুলিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। কিন্তু রাস্তা খারাপ থাকায় সময়মতো তেতুলিয়া পৌঁছুতে পারলাম না। ফলে যা হওয়ার তাই হলো। অগ্রগামী টিমের ছয়জন পক্ষী ও বন্যপ্রাণীপ্রেমী আমাদের ছাড়াই তেতুলিয়ার শালবাহান ইউনিয়নে অবস্থিত তুলসিয়া বিলে পাখি দেখার উদ্দেশ্যে চলে গেল।

কী আর করা? আমরা বাস থেকে নেমে নাস্তা সেরে সোজা রেস্ট হাউজে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ পর পঞ্চগড়ের পাখি ও বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী ফিরোজ আল-সাবাহ এলে ওর সঙ্গে বাংলাবান্ধার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। বাংলাবান্ধা যাওয়ার পথে বহু প্রতিক্ষীত প্রথম লক্ষ্য হিমালয়ের একটি শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিলল। আমার দু-চোখ যেন চকচক করে উঠল। কিন্তু পরমুহূর্তেই তা প্রখর রোদের আলোয় জ্বলে গেল। ছবিগুলো মোটেও ভালো হলো না, কেমন যেন একটা জ্বলা জ্বলা ভাব। কাজেই প্রথম দেখাতেই কিছুটা হতাশ হলাম। তবে সাবাহ-এর পরার্মশমতো পরের দিন ভোরের অপেক্ষায় থাকলাম।

বাংলাবান্ধা যাওয়ার পথে জিরো পয়েন্টের কয়েক কিলোমিটার আগে আমাদের বহনকারী অটো হাতের ডানে মোড় নিয়ে আধাপাকা রাস্তা ধরে এগিয়ে চলল। কিছুক্ষণ পর তিরইনহাট ইউনিয়নের ধাইজান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এসে পোঁছালাম। মাঠের পাশের ধানক্ষেতে বহু কাঙ্ক্ষিত কালো দোচরা (Red-naped Ibis) পাখিদের জন্য বহুক্ষণ অপেক্ষা করেও দেখা মিলল না। কাজেই ফের বাংলাবান্ধার দিকে পা বাড়ালাম। কিছুক্ষণ পর আমাদের দলের দু’জন ওদের মাথার উপর দিয়ে দুটো কালো দোচরাকে উড়ে যেতে দেখল। কিন্তু মোটর সাইকেলে থাকায় ছবি তুলতে ব্যর্থ হলো। 

তেতুলিয়া ডাকবাংলো থেকে ভোরের আলোয় হিমালয়ের কাঞ্চনজঙ্গা চূঁড়া 

যাইহোক, বাংলাবান্ধার কাছে দার্জিলিং রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার সেরে সেই অটোতেই প্রায় পনেরো কিলোমিটার দূরের শালবাহান ইউনিয়নের দিকে রওনা হলাম। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক পর রোদেলা বিকেলে শালবাহান ইউনিয়নের তুলসিয়া বিলে পৌঁছুলাম। চমৎকার বিল। পাশে দিগন্ত বিস্তৃত ধানক্ষেত। মাঝে মাঝে রয়েছে নানা প্রজাতির গাছ ও জলজ উদ্ভিদ। বিলের পানি ছেয়ে আছে পানিকলার সাদা ফুলে। অত্যন্ত সুন্দর লাগছে দেখতে। বিল ও ধানক্ষেত ছাড়িয়ে পেছনে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে ভারতের দার্জিলিংয়ের কার্সিয়াং পাহাড়। তারও পেছনে দৈত্যের মতো দাঁড়িয়ে আছে বরফময় শ্বেতশুভ্র হিমালয়ের তৃতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। এমন নৈসর্গিক সৌন্দর্যের বিল এ জীবনে খুব কমই দেখেছি।

বিল ও ধানক্ষেতজুড়ে প্রচুর আবাসিক ও পরিযায়ী পাখির সমাগম ঘটেছে। বিলের এক প্রান্তে বড় একটি গাছে পানকৌড়ি ও সাদা বকের ঝাঁক বসে আছে। বিলের ঠিক সামনে কাঁটা-ঝোপের মধ্যে লালগলা চটক (Red-throated or Taiga Flycatcher) ও টুনটুনির (Common Tailor Bird) দেখা পেলাম। 

তেতুলিয়ায় নতুন আবিষ্কৃত দারুচিনি চড়ুইয়ের স্ত্রী পাখি 

ধানক্ষেতের ধারঘেষে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকশ’ পরিযায়ী লাঙ্গইল্লা টিটি বা ধূসরমাথা হট্টিটি (Grey-headed Lapwing)। বিলের পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে সরালিসহ তিন প্রজাতির হাঁস ও জলমুরগি। শাপলা পাতার উপর হেঁটে বেড়াচ্ছে সুদর্শন জলপিপি (Bronze-winged Jacana)। শিকারের জন্য ঠায় দাঁড়িয়ে আছে কানিবক (Indian Pond Heron)। মাঝে মাঝে তিলা (Western Spotted Dove) ও ধবল ঘুঘু (Eurasian Collared Dove) আসা-যাওয়া করছে। বিলের মধ্যে একটি উঁচুমতো জায়গায় খড়ের স্তূপ রাখা আছে। স্তুপের ঠিক উপরে নীল-খয়েরি-সাদা রঙের সাদাগলা মাছরাঙা (White-throated Kingfisher) পাখি বসে ছিল। হঠাৎই একই প্রজাতির আরেকটি পাখি এসে ওর পাশে বসল। মুহূর্তের মধ্যে কী হলো কে জানে? দুটির মধ্যে শুরু হলো তুমুল যুদ্ধ। দারুণ সে দৃশ্য! একটি আরেকটিকে এই ঠোঁকর মারছে তো আবার ধাওয়া করছে। অন্যটিও থেমে নেই, সমুচিত জবাব দিচ্ছে। লাঙ্গইল্লা টিটির ঝাঁকে সাবাজ টিটি (Northern Lapwing) খুঁজতে গিয়ে যুদ্ধের পুরো চিত্র ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডারে উপভোগ করলাম। আর শাটারে সমানে ক্লিক করে গেলাম। কিন্তু পেছনে দৈত্যের মতো দাঁড়িয়ে থাকা কাঞ্চনজঙ্ঘার বুকে ওড়া কোন পাখির ছবি তুলতে পারলাম না। এটাই ছিল আমার দ্বিতীয় লক্ষ্য। 

শালবাহানের তুলসিয়া বিল; পেছনে দার্জিলিংয়ের কার্সিওং পাহাড় এবং তারও পিছনে কাঞ্চনজঙ্ঘা 

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসায় তুলসিয়া বিল পিছনে ফেলে তেতুলিয়ায় শিক্ষা বিভাগের রেস্ট হাউজের দিকে পা বাড়ালাম। তেতুলিয়া সফরে বেশ কয়েকটি পয়েন্ট থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখেছি বিভিন্ন সময়। যেমন তেতুলিয়া ডাকবাংলো, বাংলাবান্ধা, তিরইনহাট, তুলসিয়া বিল, পঞ্চগড় সদর, ঠাকুরগাঁও সদরের টাঙ্গন বেরেজ এবং দেবীগঞ্জের তেলিপাড়া চর ও মারেয়া। একেক পয়েন্ট থেকে একেক রকমভাবে দেখেছি কাঞ্চনজঙ্ঘাকে। তবে প্রায় সব পয়েন্টেই কাঞ্চনজঙ্ঘার বুকে নানা প্রজাতির আবাসিক ও পরিযায়ী পাখি উড়তে দেখেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমার দ্বিতীয় লক্ষ্য পূরণ করতে পারিনি। যাহোক পরের দিন আমার লক্ষ্যগুলো পূরণ করার প্রত্যয় নিয়ে খুব ভোরে ওঠার তাগিদে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম। 

তুলসিয়া বিলে উড়ন্ত ছোট সরালি 

এগারোই নভেম্বর খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠে আগে থেকে ঠিক করে রাখা ইঞ্জিনভ্যানে চড়ে তেতুলিয়ার ডাকবাংলোর সামনে পৌঁছুলাম। ডাকবাংলো এলাকা একেবারে নীরব, কেউ নেই, আমরাই প্রথম। ভোর সাড়ে পাঁচটায় ডাকবাংলোর সামনের কনক্রিটের বেঞ্চিতে বসে হিমালয়ের তৃতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্গার (৮,৫৮৬ মিটার) অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা শুরু করলাম। আবহাওয়া বেশ ভালো। তাই এই ভোরবেলাতেও চমৎকার ভিউ পাচ্ছি। কিন্তু অপেক্ষায় আছি সূর্যোদয়ে সূর্যের লাল আভা ওর সাদা দেহকে কতটা রাঙায় তা দেখব বলে। গত বছর দার্জিলিংয়ের বিখ্যাত টাইগার হিলে গিয়েও মেঘের কারণে ওর টিকিটিরও দেখা পাইনি। অবশ্য ঠিক দুদিন পর কালিমপংয়ের লোলেগাঁও থেকে ভোর সাড়ে পাঁচটায় মাত্র পাঁচ মিনিটের জন্য ওর দেখা পেয়েছিলাম। তবে তেতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার সঙ্গে বোনাস হিসেবে কুম্ভকর্ণ (৭,৭১১ মিটার), সিনিওলচু (৬,৮৮৮ মিটার) ও লামা আংডেন (৫,৮৬৮ মিটার) পর্বতশৃঙ্গও দেখতে পাচ্ছি। যাক, ঘড়িতে ঠিক ছয়টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই সূর্যি মামা উঁকি দিতে শুরু করল, আর মামার লাল আভা কাঞ্চনজঙ্গাকেও রাঙাতে থাকল। প্রায় বিশ মিনিট ধরে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে রাঙিয়ে ধীরে ধীরে সূর্যি মামা উপরে ওঠে গেল। আর কাঞ্চনজঙ্ঘার লালচেভাবও আস্তে আস্তে কেটে গেল। 

তুলসিয়া বিলে যাওয়ার পথে নতুন আবিষ্কৃত দারুচিনি চড়ুইয়ের পুরুষ পাখি 

আমার প্রথম লক্ষ্য চমৎকারভাবে উপভোগ শেষে ভ্যানে আবার ছুটলাম তেতুলিয়া থেকে দশ কিলোমিটার দূরের শালবাহান ইউনিয়নের তুলসিয়া বিলের দিকে দ্বিতীয় উদ্দেশ্য পূরণের জন্য। কিছুদূর যাওয়ার পর সরু খালের মতো গোবরা নদী যেখানে রাস্তা স্পর্শ করেছে সেখানকার মনোরম দৃশ্য দেখে ভ্যান থেকে নামলাম। চমৎকার আবহাওয়া, তবে রোদের তেজ একটু বেশি। নদীর আশপাশটা ঘুরে একসময় উল্টোদিকের আঁখ ক্ষেতের দিকে চোখ পড়তেই একঝাাঁক চড়ুইকে আঁখ ফুলের বীচি খেতে দেখলাম। যদিও ঘর চড়ুই (House Sparrow) থেকে কিছুটা ভিন্ন দেখাচ্ছিল, কিন্তু তীর্যকভাবে রোদ পড়ায় ও পাখিগুলো সূর্যের দিকে থাকায় পালকের রং ভালোভাবে বোঝা গেল না। 

তুলসিয়া বিলে যুদ্ধরত দুটি সাদাবুক মাছরাঙা 

দ্রুত তুলসিয়া বিলের দিকে চলে যাওয়ায় গোবরা নদীর পাড়ের পাখিগুলো নিয়ে চিন্তা করার কথা ভুলেই গেলাম। এদেশের পক্ষীতালিকায় চড়ুইটির নাম না থাকায় বিষয়টি চিন্তা করিনি। যাহোক, এরও প্রায় তিন বছর পর একটি পাখি শনাক্ত করতে গিয়ে তেতুলিয়ার ফোল্ডারটি খুলতেই চড়ুইগুলো চোখে পড়ল। এরপর ঘণ্টা দু’য়েক নানা পরীক্ষা, উত্তেজনা ও পক্ষী বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার পর দেশের পক্ষীতালিকায় নতুন একটি পাখি যোগ করতে পেরে মনটা আনন্দে ভরে উঠল। আর সেই সঙ্গে দেশের চড়ুইয়ের প্রজাতি দুটি থেকে বেড়ে হলো তিনটি। নতুন আবিষ্কৃত এই চড়ুইটির ইংরেজি নাম Russet or Cinnamon Sparrow। এর কোনো বাংলা নাম না থাকায় ইংরেজি শব্দের আভিধানিক অর্থ বিবেচনায় এর নাম দারুচিনি চড়ুই বলা যায়।

যাইহোক, আগের কথায় ফিরে আসা যাক। দেশের জন্য নতুন প্রজাতির দারুচিনি চড়ুই (যদিও তখন পর্যন্ত জানা ছিল না) পাখির ছবি তুলে সকাল আটটা নাগাদ তুলসিয়া বিলে পৌঁছুলাম। কাঞ্চনজঙ্গার এত ভালো ভিউ এখানে ছাড়া অন্য কোথা থেকেও দেখিনি! তুলসিয়া বিলে বহু প্রজাতির আবাসিক ও পরিযায়ী পাখির যেন মেলা বসেছে! বিভিন্ন প্রজাতির বক, জলপিপি, সরালি (Lesser Whistling Duck), পাতারি হাঁস (Common Teal), মরচে রঙ ভূতিহাঁস (Ferruginous Duck), হট্টিটি, ডুবালু (Little Grebe) ও জলজ পাখিতে বিলটি যেন ভরে আছে। এদের কলকাকলী ও ওড়াউড়িতে বিলের মধ্যে যেন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। ঝাঁকে ঝাঁকে সরালি ও হট্টিটি একবার পানিতে ভাসছে তো পরক্ষণেই আকাশে উড়ছে। দেখে মনে হচ্ছে যেন ওরা কাঞ্চনজঙ্গার বুকেই উড়ে বেড়াচ্ছে। অথচ তুলসিয়া বিল থেকে নেপাল ও সিকিম সীমান্তে অবস্থিত কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব কম করে হলেও ১৮০ কিলোমিটার। কাঞ্চনজঙ্গার সামনে বিশাল যে পাহাড়টি দেখা যাচ্ছে তা হলো দার্জিলিংয়ের কার্সিওং পাহাড়, তুলসিয়া বিল থেকে যার দূরত্ব প্রায় ৬১ কিলোমিটার। 

ধাইজান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের পাশে অন্যান্য পক্ষী আলোকচিত্রীর সঙ্গে লেখক 

যাহোক, আমি বহুবার চেষ্টা করে শেষমেষ কাঞ্চনজঙ্ঘার বুকে পরিযায়ী লাঙ্গইল্লা টিটির ছবি তুলতে সমর্থ হলাম। আমার দ্বিতীয় উদ্দেশ্যটি সফল হলো। তবে, এই দুটো উদ্দেশ্য পূরণের সঙ্গে বোনাস হিসেবে যা পেলাম তা হলো দেশের জন্য একটি নতুন পাখি, দারুচিনি চড়ুই।

E-mail: [email protected] , [email protected]

   

এক ঘরেই তিন বলী



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

  • Font increase
  • Font Decrease

চুল থেকে দাড়ি-সবই সফেদ। হাঁটাচলায় মন্থর। স্বাভাবিকভাবেই প্রবীণের বয়সটা আঁচ করা যায় প্রথম দেখাতেই। কিন্তু তার ষাটোর্ধ্ব বয়সটা যেন কেবল ক্যালেন্ডারের হিসাব। বয়স যতই ছোবল বসানোর চেষ্টা করুক না কেন-তিনি যেন এখনো ২৫ এর টগবগে তরুণ। সেই বলেই তো ফুসফুসের রোগবালাইকে তুড়ি মেরে ঐতিহাসিক আবদুল জব্বারের বলীখেলা এলেই হাজির হয়ে যান রিংয়ে। এক দুবার নয়, এবার কিনা পূর্ণ হলো সুবর্ণজয়ন্তী!

চট্টগ্রামের অন্যতম আবেগের ঠিকানা ঐতিহাসিক এই বলীখেলার বড় বিজ্ঞাপন হয়ে ওঠা এই বলীর নাম খাজা আহমদ বলী। ৫০ বছর ধরে বলীখেলায় অংশ নিয়ে দর্শকদের আনন্দ দিয়ে যাওয়া এই বলীর এখন পড়ন্ত বয়স। ফুসফুসে বাসা বেঁধেছে রোগ। কানেও শোনেন কম। খাজা আহমদ বুঝে গিয়েছেন, তার দিন ফুরাচ্ছে। কিন্তু তিনি যে বলীখেলার স্মৃতি থেকে সহজেই মুছে যেতে চান না। সেজন্যই উত্তরসূরী হিসেবে এরই মধ্যে গড়ে তুলেছেন নিজের দুই ছেলেকে। বাবার পাশাপাশি দুই ভাইও এখন বলীখেলার নিয়মিত প্রতিযোগী।

খাজা আহমেদ বলীর বাবাও বলীখেলায় অংশ নিতেন। বাবার সঙ্গে বলীখেলায় এসে ১৯৭৪ সালে শখের বসে খেলতে নামেন খাজা আহমেদও। বয়স তখন ১২ বছরের আশপাশে। সেই শুরু, আর কোনোদিন মিস করেননি বলীখেলায় অংশ নেওয়া। একবার চ্যাম্পিয়নের গৌরবও অর্জন করেছিলেন। বহু বছর ধরে খাজা আহমেদ বলী ও সত্তরোর্ধ্ব মফিজুর রহমানের ‘বলীযুদ্ধ’ জব্বারের বলীখেলার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে এই দ্বৈরথ হয়তো আর দেখা যাবে না। দুই বছর আগে উৎপত্তি হওয়া ফুসফুসের রোগটা ইদানিং যে খাজা আহমদকে বেশিই ভোগাচ্ছে। সেজন্য গতবছর অবসরের ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এবার দুই ছেলেকে নিয়ে বলীখেলায় এসে আবেগ সামলাতে পারেননি খাজা আহমেদ। ছেলেদের সঙ্গে নিজেও নেমে পড়েন রিংয়ে। সেজন্য আরও একবার মফিজুর রহমান-খাজা আহমেদের লড়াই দেখল হাজারো দর্শক। যদিওবা যৌথ বিজয়ী ঘোষণা করে দুজনের মুখেই হাসি ফুটিয়েছেন রেফারি।

প্রতিপক্ষ মফিজুর রহমানের সঙ্গে বলী-যুদ্ধে খাজা আহমদ

কেন অবসর ভাঙলেন এমন প্রশ্নে হাসি খেলা করে যায় খাজা আহমেদ বলীর মুখে। বলতে থাকেন, ‘বয়সের কারণে শরীর দস্ত। ফুসফুসও ঠিকঠাক কাজ করছে না। সেজন্য অবসর নিয়েছিলাম। কিন্তু বলীখেলায় আসার পর দেখলাম দর্শকেরা সবাই অনুরোধ করছেন। সেজন্য মন বলল, না খেললে দর্শকদের প্রতি অন্যায় হবে। আর আবেগ ও ভালোবাসার কাছে বয়স-রোগ পেরেছে কবে?’

তবে এখানেই সব শেষ, বলে দিয়েছেন খাজা আহমেদ বলী। বলেছেন, ‘বয়স হয়ে গেছে। মনে হয় না আর খেলতে পারব। অসুখটা বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে। সেজন্য মনে মনে মেনে নিয়েছি এটাই আমার শেষ অংশগ্রহণ। বাকিটা আল্লাহর হাতে।’

তিন ছেলে ও এক মেয়ের বাবা খাজা আহমদের বাড়ি চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায়। কৃষিকাজ করেই চলে সংসার। তবে বলীখেলা এলে সব কাজ বাধ। কয়েকদিন ধরে চলে প্রস্তুতি। নিজের স্মৃতি ধরে রাখতে এরই মধ্যে খাজা আহমেদ নিজের দুই ছেলেকে গড়ে তুলেছেন বলী হিসেবে। ২০১২ সাল থেকে বলীখেলায় নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন তার বড় ছেলে মো. সেলিম। গত বছর থেকে যোগ দিয়েছেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। এখন বলীখেলার আগে দুই ছেলেকে নিয়ে চলে খাজা আহমদের প্রস্তুতি।

জানতে চাইলে সেলিম বলেন, ‘বাবার কাছ থেকে আমরা বলীখেলা শিখেছি। বয়সের কারণে বাবা এখন অসুস্থ। হয়তো আর খেলা হবে না। সেজন্য তার উত্তরসূরী হিসেবে আমরা বলীখেলায় অংশ নেব সামনের দিনগুলোতে। এটা শুধু পরিবারের বলীর প্রজন্ম ধরে রাখার জন্য নয়, তরুণদের মাদক-সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেকে দূরে রাখতে উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগও।’

বাবাকে পাশে রেখে একই কথা বললেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। বলেন, ‘হয়তো বাবা আর খেলবেন না। তবে তিনি না খেললেও যতদিন বেঁচে থাকবেন বলীখেলা দেখতে আসবেন। রিংয়ের নিচে দাঁড়িয়ে আমাদের উৎসাহ দিয়ে যাবেন।’

ছেলের কথা শুনে আবেগ খেলে যায় খাজা আহমেদ বলীর মনে। কাঁধের গামছাটা হাতে তুলে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘না খেললেও যতদিন বাঁচি এখানে, এই বলীর মাঠ লালদীঘি ময়দানে ছুটে আসব। এটা থেকে দূরে থাকতে পারব না।’

খাজা আহমেদ যখন কথা বলছিলেন দূরে কোথাও তখন মাইকে বাজছিল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই অমর গান। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় অক্লান্ত গলায় গেয়ে চলেছেন, যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে...

;

চাকরি ছেড়ে বসের সামনেই ঢোল বাজিয়ে নাচলেন যুবক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নিত্যদিনের অফিসের কর্মপরিবেশে অনেকের মধ্যেই 'বিরক্তি' চলে আসে। তবুও ধৈয্য নিয়ে সব সহ্য করে টিকে থাকার জন্য চালিয়ে যান লড়াই। তবে এ যাত্রায় সকলের দ্বারা টিকে থাকা সম্ভব হয় না। অফিসের 'বিষাক্ত' কর্মপরিবেশে অনেকেই ভোগেন মানসিক সমস্যায় কিংবা ব্যক্তিজীবনে। এমন পরিবেশ থেকে বাঁচতে একেক জন একেক পন্থা অবলম্বন করে থাকেন।

তবে অনিকেত নামের এক যুবক এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে যা করেছেন নেট দুনিয়ায় তা রীতিমতো ভাইরাল। এসব থেকে মুক্তি পেতে চাকরিটাই ছেড়ে দিয়েছেন এই যুবক। এতেই ক্ষান্ত হননি তিনি, বসের সামনেই ঢাকঢোল বাজিয়ে নেচে উদযাপন করেছেন এমন মুহূর্তের।

ঘটনাটি ভারতের পুনে রাজ্যের। অনিকেত নামের ওই যুবক বিক্রয় সহযোগী হিসেবে চাকরি করতেন।

তার এমন উদযাপনের একটি ভিডিও ইন্সটাগ্রাম শেয়ার করেছেন অনীশ ভগত।

ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, গত তিন বছর ধরে এই কোম্পানির সাথে কাজ করেও বেতন খুব একটা বাড়েনি। এছাড়াও অফিসের বসের দ্বারাও তাকে বিভিন্ন সময়ে অপমানিত হতে হয়েছে।

তাই তার কাজের শেষ দিনে বন্ধুরা অফিসের বাইরে ঢোল নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন এবং নেচেছিলেন। ভিডিওতে দেখা গেছে, এ ঘটনায় তার বস অনেক উত্তেজিত হয়েছেন। পাশাপাশি তার বস লোকজনকে ধাক্কা দিয়েছেন এবং চিৎকারও করেছেন।

ভিডিওটির ক্যাপশনে ভগত লিখেছেন, আমি মনে করি আপনারা অনেকেই এর সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারবেন। আজকাল বিষাক্ত কাজের সংস্কৃতি খুব বেশি দেখা যায়। সম্মান এবং অধিকারের অভাব খুবই সাধারণ। অনিকেত তার পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। আমি আশা করি এই গল্প মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।

পোস্ট করা ভিডিওটি এক মিলিয়নেরও (১০ লাখের বেশি) বেশি ভিউ পেয়েছে। পোস্টটিতে অসংখ্য লাইক ও কমেন্টও রয়েছে।

একজন ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি জানি না কেন এটি আমাকে এত সন্তুষ্ট করেছে।'

আরেকজন লিখেছেন, 'নাচটি আমাকে অন্য মাত্রার তৃপ্তি দিয়েছে।'

'আপনি সত্যিই আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে ইতিবাচক এবং উত্সাহী ব্যক্তি'- তৃতীয় একজন ঠিক এভাবেই নিজের অনুভূতি জানিয়েছেন।

তথ্যসূত্র: হিন্দুস্থান টাইমস 

;

অভয়ারণ্যে মানুষ যখন বন্দিখাঁচায়



প্রমা কোয়েল, ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চিড়িয়াখানা, নানানরকম পশুপাখি ও প্রাণীর বন্দিশালা। কেবল রং-বেরঙের চিড়িয়াই নয়; বাঘ, সিংহ, ভালুক, বানর, গণ্ডারসহ কত বন্যপ্রাণীই না খাঁচায় বন্দি থাকে!

চিড়িয়াখানায় রাখতে বন্য প্রাণীদের প্রকৃতির স্বাধীন জীবন থেকে ছিনিয়ে আনা হয়। তাদের খাঁচায় বন্দি করা হয় যেন, মানুষ তাদের দেখে আনন্দ পায়। অনেক প্রাণীর জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি খাঁচাতেই কেটে যায়।

ছোট থেকে বড় সব বয়সের মানুষই চিড়িয়াখানায় ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন। শিশুরা না হয় অবুঝ! তবে যারা প্রাপ্তবয়স্ক তারাও চিড়িয়াখানায় এই বন্দি প্রাণীদের জীবনকে গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারেন না।

এশিয়ার বড় দেশ চীনে রয়েছে, এক অদ্ভুত চিড়িয়াখানা। চংকিংয়ে অবস্থিত সেই চিড়িয়াখানার নাম ‘লেহে লেদু বন্যপ্রাণী চিড়িয়াখানা’। একে ‘রিভার্স জু’ (বিপরীত চিড়িয়াখানা) বলেও ডাকা হয়।

এখানেও মানুষ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে পশু দেখতে আসেন। তবে একেবারেই ভিন্ন উপায়ে। মূলত, একটি খাঁচা রয়েছে, যেখানে মানুষদের সেই খাঁচায় পুরা হয়। তারপর সেই খাঁচাবন্দি মানুষদের নিয়ে রাখা হয়, অভয়ারণ্যে। সেখানে বন্য প্রাণীরা মানুষের খাঁচার চারপাশে অবাধে ঘুরতে থাকে। চিড়িয়াখানায় বন্দি প্রাণীদের বন্দিজীবনের এক প্রতীকী দৃশ্য!

অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষদের জন্য এটি এক নতুন অভিজ্ঞতা!

অভয়ারণ্যে খাঁচায় বন্দি মানুষ, ছবি-সংগৃহীত

খুব কাছে থেকে হিংস্র বন্যপ্রাণীদের মুক্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যেমন লোমহর্ষক, ঠিক তেমনই আতঙ্কজনকও হতে পারে। বিপরীতধর্মী এই চিড়িয়াখানাটি সবার জন্য প্রথম উন্মুক্ত করা হয়, ২০১৫ সালে। তখন বিশ্বের সংবদমাধ্যমের শিরোনাম কেড়েছিল এ চিড়িয়াখানাটি।

একটি শক্ত লোহার খাঁচাবেষ্টিত দর্শনার্থীদের একটি ট্রাকে তুলে অভয়ারণ্যে রেখে দেওয়া হয়। সেখানে তাদের ঘিরে ধরে ঘুরতে থাকে বাঘ, ভালুক, সিংহ ইত্যাদি হিংস্র প্রাণী।

এ বিষয়ে চিড়িয়াখানার প্রধান চ্যান লিয়াং বলেন, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা রক্ষার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। খাঁচার ফাঁকা অংশ দিয়ে হাতের আঙুলও বের না করার নির্দেশনা দেওয়া থাকে।

তবে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই চিড়িয়াখানাটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে অনেক। এর নৈতিকতা নিয়ে অনেকে প্রশ্নও তুলেছেন।

অনেকে মনে করেন, এরকম ব্যবস্থাপনায় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। কারণ, শিকারী প্রাণীগুলো প্রচণ্ড হিংস্র। তাই, সে কারণে যে কোনো সময় বিপজ্জনক ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

আবার এরকম চিন্তাভাবনার প্রশংসাও করেছেন অপর একটি পক্ষ। তাদের বক্তব্য, পৃথিবীটা কেবল মানুষদের নয়। প্রকৃতিতে সব প্রাণীদের একটা ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন। তাদের বন্দি করে রাখা মানুষের উচিত নয়। কারণ, মুক্ত প্রকৃতিতে বিরাজ করার অধিকার সব প্রাণীরই রয়েছে।

তাদের মন্তব্য, আমরা প্রাণীদের আবাসস্থল বনজঙ্গল সব উজাড় করেছি। সে কারণে তাপমাত্রাও অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। আবার প্রাণীদের বন্দি রেখে তাদের জীবন চরম দুর্বিষহ করে তুলি।

চাইলে এবং সুযোগ পেলে এই ধরনের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিতে চিড়িয়াখানাটি ঘুরে আসতে পারেন বৈকি!

তথ্যসূত্র: এনিমেল অ্যারাউন্ড দ্য গ্লোব

;

৫ বছরের শিশুর বিস্ময়কর প্রতিভা!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বয়স সবে ৫ কিংবা ৬। এই বয়সেই তার প্রতিভা দেখে অবাক হবে যে-কেউ!

গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সের (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভিডিওটি ১ মিলিয়নের (১০ লাখের বেশি) বেশি মানুষ দেখেছেন। খবর এনডিটিভি। 

ভিডিওতে রিলি নামের ওই শিশুটিকে প্রথমে শ্বাস নিতে দেখা যায়। তারপর সে একটি শক্তিশালী গর্জন দিয়ে শ্বাস ছাড়ে। ওই গর্জনটি হুবুহ সিংহের গর্জনের অনুরূপ।

রিলির মা অ্যামি ভিডিওটি এক্সে শেয়ারের পরই তা ভাইরাল হয়ে যায়। শিশুটির এমন নিখুত দক্ষতা দেখে মুগ্ধ দর্শকরা। ভিডিওটিতে অনেকেই নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, এত অল্প বয়সে এমন বাস্তবসম্মত গর্জন তৈরি করার রিলির ক্ষমতার বিস্ময় প্রকাশ করে।

আরেকজন লিখেছেন, শিশুরা খুব দ্রুত শিখে। তার এমন প্রতিভা সত্যিই অবাক করার মতো।

;