ব্রেন চিপ টেকনোলজি: ভবিষ্যৎ স্নায়ু বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ-সম্ভাবনা



সানজিদা খান, নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মানব মস্তিষ্ক বিশ্ব তথা মহাবিশ্বের সবচেয়ে জটিল এবং শক্তিশালী কম্পিউটার। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) বদৌলতে এই মানব মস্তিষ্ককে আরো শক্তিশালী করার চেষ্টা চলছে। মানব মস্তিষ্ক আর এআইয়ের মেলবন্ধনে এক সুপার হিউম্যান ইন্টারফেস তৈরির প্রচেষ্টা বহুকাল ধরেই চলে আসছে, যেখানে এই দুইয়ের সমন্বয়ে ডিভাইস ছাড়াই মানব মস্তিষ্ক টেলিপ্যাথির মাধ্যমে যোগাযোগের সক্ষমতা অর্জন করবে। যেখানে একটি সুপার কম্পিউটার ইতোমধ্যে প্রতি সেকেন্ডে ২,০০,০০০ ট্রিলিয়ন গণনা করতে পারে, তাহলে ভাবুন যদি আমাদের চিন্তাভাবনাগুলো সরাসরি মেশিনের সাথে সংযুক্ত হয়, তাহলে এটি মানুষের চিন্তার বিকাশকে কোথায় নিয়ে যাবে!

শুনতে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর মতো লাগলেও এটাই বাস্তব। 'দ্য ম্যাট্রিক্স' চলচ্চিত্র কিংবা 'রেডি প্লেয়ার ওয়ান' এবং 'নিউরোম্যান্সার' বইগুলোতে লেখা কল্পকাহিনীতে কম্পিউটারের সাথে মানুষের মস্তিষ্ককে সংযুক্ত করার যে ধারণা আমরা পড়ে এসেছি, তা নিছকই কল্পনা নয়। বলা হয়ে থাকে, আজকে যেটা কল্পনা, আগামীকাল সেটাই বাস্তব। আর তাই সিনেমা, বইয়ে লেখা গল্পই আজ বাস্তবে রূপ পেয়েছে।

ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস প্রযুক্তি যা 'ব্রেন চিপ' টেকনোলজি নামেও পরিচিত। প্রযুক্তির বিকাশে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে এআই। সম্প্রতি, সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মানব মস্তিষ্কে ব্রেন-চিপ স্থাপনে সফল হয়েছে ইলন মাস্কের কোম্পানি ইউরালিংক। তবে কি শিগগিরই আমরা আমাদের মন দিয়ে টাইপ করতে পারব কিংবা কোনো ডিভাইসকে কমান্ড অথবা কন্ট্রোল করতে পারবো! ঠিক তাই! বহুকাল আগে থেকে মানুষ এবং মেশিনের মধ্যে সেতুবন্ধনের যে মিশন শুরু হয়েছিল, তারই সফল বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে এবার। চলুন জেনে নেয়া যাক, এর ভবিষ্যৎ সফলতা সম্পর্কে।

ব্রেন চিপ প্রযুক্তির মাধ্যমে মস্তিষ্ক ও কম্পিউটারের মধ্যে সরাসরি একটি যোগাযোগের পথ তৈরি হবে। যারা তাদের অঙ্গ-প্রতঙ্গ হারিয়েছেন, তাদের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহারকে অনেক সহজ করে দেবে এই ডিভাইসটি। এটি শুধু চিন্তা দ্বারাই কোনোরকম ডিভাইস ছাড়া আপনার ফোন বা কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। শুধু তাই নয়, এটা মস্তিস্কের ক্ষমতা বাড়িয়ে মানুষ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মধ্যে এমন একটি সম্পর্ক তৈরি করতে পারে, যেখানে দুজনেই একসঙ্গে বড় ধরনের কিছু করতে পারবে।

ইলন মাস্কের নিউরালিংক চিপ টেকনোলজি 

মৃত্যুকে জয়ের যে স্বপ্ন বিজ্ঞানীরা এতদিন ধরে দেখে এসেছেন, তা এবার বাস্তবায়নের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যেভাবে দ্রুতগতিতে ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস গবেষণা এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে ধারণা করা হচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে আমরা এক স্নায়ু বিপ্লবের সম্মুখীন হতে যাচ্ছি। আর তার শুরু ইলন মাস্কের প্রথম নিউরালিংক স্থাপনের মাধ্যমে হয়েছে।

গবেষকরা বলছেন, আগামী ১০ বছরের মধ্যে এই প্রযুক্তি লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌছে যাবে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ২০৪০ সালের মধ্যে ইমপ্ল্যান্টগুলো পক্ষাঘাতগ্রস্তদের হাঁটতে সাহায্য করবে। এমনকী স্নায়ুর জটিল রোগও সারিয়ে তুলবে ধীরে ধীরে। আবার এটি মানুষকে টেলিপ্যাথিক করে তুলবে। এতে কোনোরকম শব্দ ব্যবহার না করেই শুধুমাত্র চিন্তার মাধ্যমে কথোপকথন করতে পারবে অর্থাৎ ভিজ্যুয়াল কল্পনাকে ডিজিটাল সিগন্যালে অনুবাদ করতে পারবে। সহজভাবে বলতে গেলে আপনি যে চিত্রটি ভাবছেন, তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি কম্পিউটার স্ক্রিনে দেখতে পারবেন।

এই প্রযুক্তির সবচেয়ে সফল ব্যবহার নিশ্চিত হবে সামরিক ক্ষেত্রে। ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড-এর ইউহিরো সেন্টার ফর প্র্যাক্টিক্যাল এথিকসের ডেপুটি ডিরেক্টর ড. হান্না মাসলেন বলেছেন, এর মাধ্যমে সৈন্যরা নিজেদের মধ্যে নীরব যোগাযোগ করতে পারবেন। এমনকী সরঞ্জামগুলোকে মনে মনে কমান্ড দিয়ে সক্রিয় করতে পারবেন।

গবেষকরা বলছেন, এই প্রযুক্তির ব্যবহার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কাছে আগে পৌঁছাবে। তারা ধারণা করছেন, আগামী ১০ বছরে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার ব্যক্তিরা এই প্রযুক্তির গ্রাহক হবেন আর আগামী ২০ বছরের মধ্যে এটি নন-মেডিকেল মানুষদের কাছে পৌছে যাবে। এছাড়াও মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রিত গাড়ি ড্রাইভিংয়ের কল্পনাও বাস্তবে পরিণত হবে। মস্তিষ্ক থেকে মস্তিষ্কের যোগাযোগ, উন্নত স্মৃতি এবং অসীম জ্ঞানভাণ্ডার মানব ইতিহাসে এক যুগান্তর সৃষ্টি করবে।

প্যারালাইসিস রোগীদের ব্রেন ইমপ্ল্যান্টের মাধ্যমে চিকিৎসা 

তবে এতসব সম্ভাবনার মাঝেও বিশেষজ্ঞরা এর চ্যালেঞ্জ নিয়েও বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। যুক্তরাজ্যের গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান রয়েল সোসাইটির এক প্রতিবেদনে এই ব্রেন ইমপ্ল্যান্টের সম্ভাব্য ঝুঁকির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। একইসাথে এই প্রযুক্তি ব্যবহারে নৈতিক সমস্যাগুলোকেও তুলে ধরা হয়েছে।

সেখানে বলা হয়েছে, ব্রেন চিপ ইমপ্ল্যান্ট ডিভাইসগুলো অনেক ব্যয়বহুল হওয়ায় ধনী দেশগুলোতে এটা বিলাসবহুল আইটেম হয়ে উঠতে পারে। এতে করে দরিদ্র দেশগুলো প্রযুক্তিগত দিক থেকে পিছিয়ে পড়বে। এছাড়া ডিভাইসগুলো সরাসরি মস্তিষ্কে প্লাগ করা হলে, মানুষের গোপন তথ্যগুলোর নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। বর্তমানে সাইবার ক্রাইম যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে ভবিষ্যতে এর অপব্যবহারে ব্যক্তির গোপনীয়তা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।

এছাড়াও ব্রেন চিপ ব্যবহারে মানব মস্তিষ্কে স্মৃতিশক্তির পরিমাণ ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পাবে। ফলে সাধারণভাবে আমরা কোনো কিছু মনে করতে চাইলে যেমন মস্তিষ্কে চাপ অনুভূত হয়, তেমনি এত বিপুল পরিমাণ ডাটা থেকে কোনো কিছু রিকল করা বা স্মরণ করতে চাইলে তা কয়েকগুণ বেশি চাপের সৃষ্টি করবে, যা মানুষের শারীরিক ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় মানবজীবনে যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটছে এবং আগামীতেও ঘটবে, এ বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। আমরা এমন একটি যুগে চলে যাচ্ছি, যেখানে আমরা আর শতভাগ ১০০ মানুষ হিসেবে থাকবো না। মানুষ এবং মেশিনের সংমিশ্রণে এক সুপার হিউম্যান ইন্টারফেস এ পরিণত হবো। একইসাথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং জিন-এডিটিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেকে ডিজাইন করবে।

(মার্কিন সামরিক বাহিনীর ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি) সম্প্রতি একজন ব্যক্তিকে চিপ করেছে, যাতে সে টেলিপ্যাথিকভাবে একাধিক ড্রোন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটা তো কেবল শুরু! এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে ব্রেন-চিপ টেকনোলজির সূত্র ধরে মানুষ বৈজ্ঞানিক কল্পরাজ্যের বাস্তব দ্রষ্টা হয়ে উঠবে। তবে এই সম্ভাবনার পেছনে যেসব চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে, সেগুলোও মোকাবিলা করতে হবে। প্রযুক্তির সফল ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলেই তা আগামী শতাব্দীর মানব ইতিহাসকে পাল্টে দিতে পারবে বলে আশা করা যায়।

   

এক ঘরেই তিন বলী



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

  • Font increase
  • Font Decrease

চুল থেকে দাড়ি-সবই সফেদ। হাঁটাচলায় মন্থর। স্বাভাবিকভাবেই প্রবীণের বয়সটা আঁচ করা যায় প্রথম দেখাতেই। কিন্তু তার ষাটোর্ধ্ব বয়সটা যেন কেবল ক্যালেন্ডারের হিসাব। বয়স যতই ছোবল বসানোর চেষ্টা করুক না কেন-তিনি যেন এখনো ২৫ এর টগবগে তরুণ। সেই বলেই তো ফুসফুসের রোগবালাইকে তুড়ি মেরে ঐতিহাসিক আবদুল জব্বারের বলীখেলা এলেই হাজির হয়ে যান রিংয়ে। এক দুবার নয়, এবার কিনা পূর্ণ হলো সুবর্ণজয়ন্তী!

চট্টগ্রামের অন্যতম আবেগের ঠিকানা ঐতিহাসিক এই বলীখেলার বড় বিজ্ঞাপন হয়ে ওঠা এই বলীর নাম খাজা আহমদ বলী। ৫০ বছর ধরে বলীখেলায় অংশ নিয়ে দর্শকদের আনন্দ দিয়ে যাওয়া এই বলীর এখন পড়ন্ত বয়স। ফুসফুসে বাসা বেঁধেছে রোগ। কানেও শোনেন কম। খাজা আহমদ বুঝে গিয়েছেন, তার দিন ফুরাচ্ছে। কিন্তু তিনি যে বলীখেলার স্মৃতি থেকে সহজেই মুছে যেতে চান না। সেজন্যই উত্তরসূরী হিসেবে এরই মধ্যে গড়ে তুলেছেন নিজের দুই ছেলেকে। বাবার পাশাপাশি দুই ভাইও এখন বলীখেলার নিয়মিত প্রতিযোগী।

খাজা আহমেদ বলীর বাবাও বলীখেলায় অংশ নিতেন। বাবার সঙ্গে বলীখেলায় এসে ১৯৭৪ সালে শখের বসে খেলতে নামেন খাজা আহমেদও। বয়স তখন ১২ বছরের আশপাশে। সেই শুরু, আর কোনোদিন মিস করেননি বলীখেলায় অংশ নেওয়া। একবার চ্যাম্পিয়নের গৌরবও অর্জন করেছিলেন। বহু বছর ধরে খাজা আহমেদ বলী ও সত্তরোর্ধ্ব মফিজুর রহমানের ‘বলীযুদ্ধ’ জব্বারের বলীখেলার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে এই দ্বৈরথ হয়তো আর দেখা যাবে না। দুই বছর আগে উৎপত্তি হওয়া ফুসফুসের রোগটা ইদানিং যে খাজা আহমদকে বেশিই ভোগাচ্ছে। সেজন্য গতবছর অবসরের ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এবার দুই ছেলেকে নিয়ে বলীখেলায় এসে আবেগ সামলাতে পারেননি খাজা আহমেদ। ছেলেদের সঙ্গে নিজেও নেমে পড়েন রিংয়ে। সেজন্য আরও একবার মফিজুর রহমান-খাজা আহমেদের লড়াই দেখল হাজারো দর্শক। যদিওবা যৌথ বিজয়ী ঘোষণা করে দুজনের মুখেই হাসি ফুটিয়েছেন রেফারি।

প্রতিপক্ষ মফিজুর রহমানের সঙ্গে বলী-যুদ্ধে খাজা আহমদ

কেন অবসর ভাঙলেন এমন প্রশ্নে হাসি খেলা করে যায় খাজা আহমেদ বলীর মুখে। বলতে থাকেন, ‘বয়সের কারণে শরীর দস্ত। ফুসফুসও ঠিকঠাক কাজ করছে না। সেজন্য অবসর নিয়েছিলাম। কিন্তু বলীখেলায় আসার পর দেখলাম দর্শকেরা সবাই অনুরোধ করছেন। সেজন্য মন বলল, না খেললে দর্শকদের প্রতি অন্যায় হবে। আর আবেগ ও ভালোবাসার কাছে বয়স-রোগ পেরেছে কবে?’

তবে এখানেই সব শেষ, বলে দিয়েছেন খাজা আহমেদ বলী। বলেছেন, ‘বয়স হয়ে গেছে। মনে হয় না আর খেলতে পারব। অসুখটা বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে। সেজন্য মনে মনে মেনে নিয়েছি এটাই আমার শেষ অংশগ্রহণ। বাকিটা আল্লাহর হাতে।’

তিন ছেলে ও এক মেয়ের বাবা খাজা আহমদের বাড়ি চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায়। কৃষিকাজ করেই চলে সংসার। তবে বলীখেলা এলে সব কাজ বাধ। কয়েকদিন ধরে চলে প্রস্তুতি। নিজের স্মৃতি ধরে রাখতে এরই মধ্যে খাজা আহমেদ নিজের দুই ছেলেকে গড়ে তুলেছেন বলী হিসেবে। ২০১২ সাল থেকে বলীখেলায় নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন তার বড় ছেলে মো. সেলিম। গত বছর থেকে যোগ দিয়েছেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। এখন বলীখেলার আগে দুই ছেলেকে নিয়ে চলে খাজা আহমদের প্রস্তুতি।

জানতে চাইলে সেলিম বলেন, ‘বাবার কাছ থেকে আমরা বলীখেলা শিখেছি। বয়সের কারণে বাবা এখন অসুস্থ। হয়তো আর খেলা হবে না। সেজন্য তার উত্তরসূরী হিসেবে আমরা বলীখেলায় অংশ নেব সামনের দিনগুলোতে। এটা শুধু পরিবারের বলীর প্রজন্ম ধরে রাখার জন্য নয়, তরুণদের মাদক-সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেকে দূরে রাখতে উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগও।’

বাবাকে পাশে রেখে একই কথা বললেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। বলেন, ‘হয়তো বাবা আর খেলবেন না। তবে তিনি না খেললেও যতদিন বেঁচে থাকবেন বলীখেলা দেখতে আসবেন। রিংয়ের নিচে দাঁড়িয়ে আমাদের উৎসাহ দিয়ে যাবেন।’

ছেলের কথা শুনে আবেগ খেলে যায় খাজা আহমেদ বলীর মনে। কাঁধের গামছাটা হাতে তুলে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘না খেললেও যতদিন বাঁচি এখানে, এই বলীর মাঠ লালদীঘি ময়দানে ছুটে আসব। এটা থেকে দূরে থাকতে পারব না।’

খাজা আহমেদ যখন কথা বলছিলেন দূরে কোথাও তখন মাইকে বাজছিল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই অমর গান। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় অক্লান্ত গলায় গেয়ে চলেছেন, যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে...

;

চাকরি ছেড়ে বসের সামনেই ঢোল বাজিয়ে নাচলেন যুবক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নিত্যদিনের অফিসের কর্মপরিবেশে অনেকের মধ্যেই 'বিরক্তি' চলে আসে। তবুও ধৈয্য নিয়ে সব সহ্য করে টিকে থাকার জন্য চালিয়ে যান লড়াই। তবে এ যাত্রায় সকলের দ্বারা টিকে থাকা সম্ভব হয় না। অফিসের 'বিষাক্ত' কর্মপরিবেশে অনেকেই ভোগেন মানসিক সমস্যায় কিংবা ব্যক্তিজীবনে। এমন পরিবেশ থেকে বাঁচতে একেক জন একেক পন্থা অবলম্বন করে থাকেন।

তবে অনিকেত নামের এক যুবক এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে যা করেছেন নেট দুনিয়ায় তা রীতিমতো ভাইরাল। এসব থেকে মুক্তি পেতে চাকরিটাই ছেড়ে দিয়েছেন এই যুবক। এতেই ক্ষান্ত হননি তিনি, বসের সামনেই ঢাকঢোল বাজিয়ে নেচে উদযাপন করেছেন এমন মুহূর্তের।

ঘটনাটি ভারতের পুনে রাজ্যের। অনিকেত নামের ওই যুবক বিক্রয় সহযোগী হিসেবে চাকরি করতেন।

তার এমন উদযাপনের একটি ভিডিও ইন্সটাগ্রাম শেয়ার করেছেন অনীশ ভগত।

ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, গত তিন বছর ধরে এই কোম্পানির সাথে কাজ করেও বেতন খুব একটা বাড়েনি। এছাড়াও অফিসের বসের দ্বারাও তাকে বিভিন্ন সময়ে অপমানিত হতে হয়েছে।

তাই তার কাজের শেষ দিনে বন্ধুরা অফিসের বাইরে ঢোল নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন এবং নেচেছিলেন। ভিডিওতে দেখা গেছে, এ ঘটনায় তার বস অনেক উত্তেজিত হয়েছেন। পাশাপাশি তার বস লোকজনকে ধাক্কা দিয়েছেন এবং চিৎকারও করেছেন।

ভিডিওটির ক্যাপশনে ভগত লিখেছেন, আমি মনে করি আপনারা অনেকেই এর সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারবেন। আজকাল বিষাক্ত কাজের সংস্কৃতি খুব বেশি দেখা যায়। সম্মান এবং অধিকারের অভাব খুবই সাধারণ। অনিকেত তার পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। আমি আশা করি এই গল্প মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।

পোস্ট করা ভিডিওটি এক মিলিয়নেরও (১০ লাখের বেশি) বেশি ভিউ পেয়েছে। পোস্টটিতে অসংখ্য লাইক ও কমেন্টও রয়েছে।

একজন ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি জানি না কেন এটি আমাকে এত সন্তুষ্ট করেছে।'

আরেকজন লিখেছেন, 'নাচটি আমাকে অন্য মাত্রার তৃপ্তি দিয়েছে।'

'আপনি সত্যিই আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে ইতিবাচক এবং উত্সাহী ব্যক্তি'- তৃতীয় একজন ঠিক এভাবেই নিজের অনুভূতি জানিয়েছেন।

তথ্যসূত্র: হিন্দুস্থান টাইমস 

;

অভয়ারণ্যে মানুষ যখন বন্দিখাঁচায়



প্রমা কোয়েল, ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চিড়িয়াখানা, নানানরকম পশুপাখি ও প্রাণীর বন্দিশালা। কেবল রং-বেরঙের চিড়িয়াই নয়; বাঘ, সিংহ, ভালুক, বানর, গণ্ডারসহ কত বন্যপ্রাণীই না খাঁচায় বন্দি থাকে!

চিড়িয়াখানায় রাখতে বন্য প্রাণীদের প্রকৃতির স্বাধীন জীবন থেকে ছিনিয়ে আনা হয়। তাদের খাঁচায় বন্দি করা হয় যেন, মানুষ তাদের দেখে আনন্দ পায়। অনেক প্রাণীর জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি খাঁচাতেই কেটে যায়।

ছোট থেকে বড় সব বয়সের মানুষই চিড়িয়াখানায় ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন। শিশুরা না হয় অবুঝ! তবে যারা প্রাপ্তবয়স্ক তারাও চিড়িয়াখানায় এই বন্দি প্রাণীদের জীবনকে গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারেন না।

এশিয়ার বড় দেশ চীনে রয়েছে, এক অদ্ভুত চিড়িয়াখানা। চংকিংয়ে অবস্থিত সেই চিড়িয়াখানার নাম ‘লেহে লেদু বন্যপ্রাণী চিড়িয়াখানা’। একে ‘রিভার্স জু’ (বিপরীত চিড়িয়াখানা) বলেও ডাকা হয়।

এখানেও মানুষ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে পশু দেখতে আসেন। তবে একেবারেই ভিন্ন উপায়ে। মূলত, একটি খাঁচা রয়েছে, যেখানে মানুষদের সেই খাঁচায় পুরা হয়। তারপর সেই খাঁচাবন্দি মানুষদের নিয়ে রাখা হয়, অভয়ারণ্যে। সেখানে বন্য প্রাণীরা মানুষের খাঁচার চারপাশে অবাধে ঘুরতে থাকে। চিড়িয়াখানায় বন্দি প্রাণীদের বন্দিজীবনের এক প্রতীকী দৃশ্য!

অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষদের জন্য এটি এক নতুন অভিজ্ঞতা!

অভয়ারণ্যে খাঁচায় বন্দি মানুষ, ছবি-সংগৃহীত

খুব কাছে থেকে হিংস্র বন্যপ্রাণীদের মুক্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যেমন লোমহর্ষক, ঠিক তেমনই আতঙ্কজনকও হতে পারে। বিপরীতধর্মী এই চিড়িয়াখানাটি সবার জন্য প্রথম উন্মুক্ত করা হয়, ২০১৫ সালে। তখন বিশ্বের সংবদমাধ্যমের শিরোনাম কেড়েছিল এ চিড়িয়াখানাটি।

একটি শক্ত লোহার খাঁচাবেষ্টিত দর্শনার্থীদের একটি ট্রাকে তুলে অভয়ারণ্যে রেখে দেওয়া হয়। সেখানে তাদের ঘিরে ধরে ঘুরতে থাকে বাঘ, ভালুক, সিংহ ইত্যাদি হিংস্র প্রাণী।

এ বিষয়ে চিড়িয়াখানার প্রধান চ্যান লিয়াং বলেন, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা রক্ষার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। খাঁচার ফাঁকা অংশ দিয়ে হাতের আঙুলও বের না করার নির্দেশনা দেওয়া থাকে।

তবে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই চিড়িয়াখানাটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে অনেক। এর নৈতিকতা নিয়ে অনেকে প্রশ্নও তুলেছেন।

অনেকে মনে করেন, এরকম ব্যবস্থাপনায় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। কারণ, শিকারী প্রাণীগুলো প্রচণ্ড হিংস্র। তাই, সে কারণে যে কোনো সময় বিপজ্জনক ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

আবার এরকম চিন্তাভাবনার প্রশংসাও করেছেন অপর একটি পক্ষ। তাদের বক্তব্য, পৃথিবীটা কেবল মানুষদের নয়। প্রকৃতিতে সব প্রাণীদের একটা ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন। তাদের বন্দি করে রাখা মানুষের উচিত নয়। কারণ, মুক্ত প্রকৃতিতে বিরাজ করার অধিকার সব প্রাণীরই রয়েছে।

তাদের মন্তব্য, আমরা প্রাণীদের আবাসস্থল বনজঙ্গল সব উজাড় করেছি। সে কারণে তাপমাত্রাও অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। আবার প্রাণীদের বন্দি রেখে তাদের জীবন চরম দুর্বিষহ করে তুলি।

চাইলে এবং সুযোগ পেলে এই ধরনের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিতে চিড়িয়াখানাটি ঘুরে আসতে পারেন বৈকি!

তথ্যসূত্র: এনিমেল অ্যারাউন্ড দ্য গ্লোব

;

৫ বছরের শিশুর বিস্ময়কর প্রতিভা!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বয়স সবে ৫ কিংবা ৬। এই বয়সেই তার প্রতিভা দেখে অবাক হবে যে-কেউ!

গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সের (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভিডিওটি ১ মিলিয়নের (১০ লাখের বেশি) বেশি মানুষ দেখেছেন। খবর এনডিটিভি। 

ভিডিওতে রিলি নামের ওই শিশুটিকে প্রথমে শ্বাস নিতে দেখা যায়। তারপর সে একটি শক্তিশালী গর্জন দিয়ে শ্বাস ছাড়ে। ওই গর্জনটি হুবুহ সিংহের গর্জনের অনুরূপ।

রিলির মা অ্যামি ভিডিওটি এক্সে শেয়ারের পরই তা ভাইরাল হয়ে যায়। শিশুটির এমন নিখুত দক্ষতা দেখে মুগ্ধ দর্শকরা। ভিডিওটিতে অনেকেই নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, এত অল্প বয়সে এমন বাস্তবসম্মত গর্জন তৈরি করার রিলির ক্ষমতার বিস্ময় প্রকাশ করে।

আরেকজন লিখেছেন, শিশুরা খুব দ্রুত শিখে। তার এমন প্রতিভা সত্যিই অবাক করার মতো।

;