ছোট্ট ‘পাওয়ার ন্যাপ’ কেন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী!



মানসুরা চামেলী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছোট্ট ‘পাওয়ার ন্যাপ’ কেন স্বাস্থ্যে জন্য উপকারী!

ছোট্ট ‘পাওয়ার ন্যাপ’ কেন স্বাস্থ্যে জন্য উপকারী!

  • Font increase
  • Font Decrease

দুপুরে খাওয়ার পরই শরীরে আলস্য দেখা দেয়। ঝিমুনি বা ঘুম ঘুম ভাব কাজের গতি কমিয়ে দেয়। অনেকেই আবার এই সময়টাতে একটু ঘুমিয়ে নেন। আর এটাকেই বলে দুপুরের ‘পাওয়ার ন্যাপ’। অনেক দেশের সংস্কৃতিতে বিকেলে ঘুমানো দৈনন্দিন রীতি। যদিও কেউ কেউ এই ‘পাওয়ার নাপ’ নিতে চান না। কারণ তারা মনে করে এখন ঘুমালে রাতের ঘুমে প্রভাব পড়বে। 

বিশেষ করে স্প্যানিশরা প্রতিদিনের সিয়েস্তা (পাওয়ার ন্যাপ) উপভোগ করতে বেশি পরিচিত। জাপানি শ্রমিকরাও দুপুরের খাবারের পর একটু ঘুমিয়ে নিতে অভ্যস্ত। যা হিরুইন ‘বিকালের ঘুম’ নামে পরিচিত।

গুগল, স্যামসাং এবং ফেসবুকের মতো টেক জায়ান্ট অফিসে সকলের জন্য ন্যাপ পড (স্লিপ পড) রয়েছে। ফলে কর্মীরা কাজের ফাঁকে কিছু সময় শুতে পারেন।

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ‘পাওয়ার ন্যাপিং’ নেওয়ার দাবিটা বেশ জোরালো হচ্ছে। কিন্তু দিনের বেলা দ্রুত ক্যাটন্যাপ কি আসলে কাজ করে? স্বাস্থ্যের জন্য ‘পাওয়ার ন্যাপ’কতটা উপকারী! পাওয়ার ন্যাপ কি আপনাকে সতেজ এবং উজ্জীবিত রাখে, নাকি বেশি ক্লান্তি বোধ করায়? কতক্ষণ ঘুমানো উচিত?  দিনের কোন সময়টা এই ঘুমের জন্য ভালো!

সবশেষ বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা নিয়ে বিবিসির ফিচার বিভাগের করা একটি প্রতিবেদনে ‘পাওয়ার ন্যাপ’ স্বাস্থ্যের জন্য ভালো কিনা- এসব উত্তর খোঁজা হয়েছে।


ন্যাপিং-এর স্বাস্থ্য উপকারিতা কী কী?

গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ন্যাপ নেওয়া মস্তিষ্কের দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (ইউসিএল) এবং উরুগুয়ের ইউনিভার্সিটি অফ রিপাবলিকের গবেষকদের ২০২৩ সালের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, অভ্যাসগত ন্যাপ মস্তিষ্ককে বড় এবং এর স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।

প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ; যাদের বয়স ৪০ থেকে ৬৯ বছর; তারা ইউকে বায়োব্যাঙ্ক ও বায়োমেডিকাল ডাটাবেস বিজ্ঞাপন গবেষণা সংস্থার গবেষণায় অংশ নেন। তারা অভ্যাসগত ন্যাপারদের পূর্বের ডিএনএ স্নিপেট পর্যবেক্ষণ করেন।

যারা সপ্তাহে কয়েকবার ন্যাপ নেন, তাদের মস্তিষ্ক যারা কখনওই ন্যাপ নেননি তাদের মস্তিষ্কের তুলনায় ১৫ ঘন সেমি (০.৯ ঘন ইঞ্চি) বেশি বড়।

UCL-এর MRC ইউনিট ফর লাইফলং হেলথ অ্যান্ড এজিং-এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, প্রধান লেখক ভিক্টোরিয়া গারফিল্ড বলেন, নিয়মিত ন্যাপ নেওয়া মস্তিষ্ককে বার্ধক্যকে যেতে তিন থেকে ছয় বছর বিলম্বিত করে।

গারফিল্ড আরও বলেন, গবেষণায় বড় মস্তিষ্ক ছিল তাদের, যাারা দিনের বেলা ন্যাপ নেন। এই মস্তিষ্কের কাজের সক্ষমতা ও কার্যকারিতাও বেশি। আমরা জানি বয়স বাড়ার সাথে সাথে মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবেই সংকুচিত হয়। আর ছোট মস্তিষ্ক নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। যাদের মস্তিষ্ক ছোট তাদের স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের উচ্চ মাত্রা বা স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অনেকেরই আবার কার্ডিওভাসকুলার রোগ আছে।

এছাড়াও আলঝেইমার্স এবং ভাস্কুলার ডিমেনশিয়াতে মস্তিষ্কের যথেষ্ট সংকোচন দেখতে পাই।– বলেন গারফিল্ড।

তবে মস্তিষ্ক বড় হওয়ার ফলাফল শুধুমাত্র যারা নিয়মিত ন্যাপ নেন তাদের ক্ষেত্রে ঘটেছে। এজন্য নিয়মিত ন্যাপ নেওয়াকে জোর দেন এই চিকিৎসাবিজ্ঞানী।

ন্যাপ নেওয়ার সঙ্গে স্বাস্থ্য সুবিধাও রয়েছে। পাঁচ থেকে ১৫ মিনিটের ন্যাপের ফলে মানসিকভাবে আমরা ভালো কাজ করতে পারি। এই সামান্য ঘুম তিন ঘণ্টা পর্যন্ত মানসিক প্রশান্তি দেবে।

যুক্তরাজ্যের লাফবোরো বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং ঘুম বিশেষজ্ঞ কেভিন মরগান বলেছেন, এই মুহূর্তে ক্রীড়া বিজ্ঞানে ঘুম একটি বিশাল ব্যাপার। একজন ক্রীড়াবিদদের পারফরম্যান্সে উন্নত করতে পারে ঘুম।

বর্তমানে কোচরা খেলোয়ারদের ন্যাপ নেওয়ার সময় দেন। তারা এটিকে খাদ্যতালিকার পরিপূরক হিসাবে বিবেচনা করছেন- বলেন মরগান।

গবেষণায় দেখা গেছে, দুপুর একটা থেকে বিকাল চারটার মধ্যে ন্যাপ নিলে শরীর ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মেজাজও ভালো থাকে।

ন্যাপিং কী প্রতিদিনের রুটিন হওয়া উচিত

ন্যাপ নেওয়া যেহেতু শরীরের জন্য ভালো। তাহলে এখন প্রশ্ন হচ্ছে- তাহলে কি প্রতিদিন আমাদের ন্যাপ নেওয়া উচিত?

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ন্যাপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ তবে তা রাতের ঘুমের বিকল্প হতে পারে না।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘুমের ওষুধ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কলিন এস্পি বলেছেন, সাধারণত ন্যাপ একটি লক্ষণ যে আপনি পর্যাপ্ত ঘুম পাচ্ছেন না।

‘আপনি যদি মনে করেন আপনার প্রায়ই দিনের বেলা ন্যাপ প্রয়োজন, তাহলে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন আপনি ঘুমের সমস্যার জন্য ক্ষতিপূরণ দিচ্ছেন নাকি আপনার রাতে পর্যাপ্ত ঘুমাতে পারছেন না। সবার আগে আমাদের উচিত রাতের ঘুমটাকে নিশ্চিত করা- বলেছেন এস্পি।

১৫ থেকে ২০ মিনিট স্থায়ী ন্যাপ- মানুষকে গভীর ঘুমে নেয় না। এটি তখন হয় যখন শরীর টিস্যু মেরামত করে এবং পুনরায় পেশী তৈরি করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে এবং অনেক আগের স্মৃতিকে ফিরিয়ে আনে এবং নতুন তথ্য মস্তিষ্কে প্রক্রিয়াজাত করে।

ঘুম বিশেষজ্ঞ এস্পি বলেছেন, ঘুম প্রকৃতির ওষুধ। যা আমাদের বিকশিত ও মস্তিষ্কের শক্তির জন্য প্রয়োজন। সেজন্য রাতে পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।

যে সব মানুষের রাতে ঘুমাতে কষ্ট হয়, সম্ভবত দিনে তারা ন্যাপ নিলে বেশি উপকৃত হবেন। কিন্তু অনেকেই অল্প সময়ের মধ্যে ঘুমিয়ে যেতে পারেন না। আবার কেউ কেউ দিনের বেলা ন্যাপ নেন না কারণ তারা এটাকে সহজ মনে করে না। তবে ন্যাপ যারা নিতে পারেন- তাদের কাছে এটি একটি সম্পদের মতো- মরগান বলেছেন।

কতক্ষণ ন্যাপ নেওয়া উচিত

কোন সময় ও কতক্ষণ ন্যাপ নেবেন তা বাছাই করাই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ! মর্গান বলেন, কেউ যদি ন্যাপ নিতে চায় তাহলে সেটা দুপুরে নিতে হবে এবং ২০ মিনিটের বেশি নেবেন না। দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে ন্যাপ নেওয়া শরীরের জন্য অনেক ভালো। এই সময় শরীরের তাপমাত্রা কমতে থাকে। যদি সকালে ন্যাপ নিতে চান, তখন শরীরের তাপমাত্রা বাডতে থাকে, এজন্য না নেওয়াটাই ভালো। আবার যদি দিনের শেষে  ন্যাপ নেন তাহলে রাতে ঘুমাতে লড়াই করতে হবে। ২০ মিনিটের বেশি ঘুম হলে গভীর ঘুমে চলে যেতে হবে।  তখন জড়তা তৈরি হবে। জাগানো কঠিন হবে।

মর্গান বলেন, ঘুম আপনার পছন্দের জিনিস না- এটি একটি অভ্যাস। আপনি যেভাবে অভ্যাস করবেন। মস্তিষ্ক আপনার সাথে সেভাবে চলবে।

   

এক ঘরেই তিন বলী



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

  • Font increase
  • Font Decrease

চুল থেকে দাড়ি-সবই সফেদ। হাঁটাচলায় মন্থর। স্বাভাবিকভাবেই প্রবীণের বয়সটা আঁচ করা যায় প্রথম দেখাতেই। কিন্তু তার ষাটোর্ধ্ব বয়সটা যেন কেবল ক্যালেন্ডারের হিসাব। বয়স যতই ছোবল বসানোর চেষ্টা করুক না কেন-তিনি যেন এখনো ২৫ এর টগবগে তরুণ। সেই বলেই তো ফুসফুসের রোগবালাইকে তুড়ি মেরে ঐতিহাসিক আবদুল জব্বারের বলীখেলা এলেই হাজির হয়ে যান রিংয়ে। এক দুবার নয়, এবার কিনা পূর্ণ হলো সুবর্ণজয়ন্তী!

চট্টগ্রামের অন্যতম আবেগের ঠিকানা ঐতিহাসিক এই বলীখেলার বড় বিজ্ঞাপন হয়ে ওঠা এই বলীর নাম খাজা আহমদ বলী। ৫০ বছর ধরে বলীখেলায় অংশ নিয়ে দর্শকদের আনন্দ দিয়ে যাওয়া এই বলীর এখন পড়ন্ত বয়স। ফুসফুসে বাসা বেঁধেছে রোগ। কানেও শোনেন কম। খাজা আহমদ বুঝে গিয়েছেন, তার দিন ফুরাচ্ছে। কিন্তু তিনি যে বলীখেলার স্মৃতি থেকে সহজেই মুছে যেতে চান না। সেজন্যই উত্তরসূরী হিসেবে এরই মধ্যে গড়ে তুলেছেন নিজের দুই ছেলেকে। বাবার পাশাপাশি দুই ভাইও এখন বলীখেলার নিয়মিত প্রতিযোগী।

খাজা আহমেদ বলীর বাবাও বলীখেলায় অংশ নিতেন। বাবার সঙ্গে বলীখেলায় এসে ১৯৭৪ সালে শখের বসে খেলতে নামেন খাজা আহমেদও। বয়স তখন ১২ বছরের আশপাশে। সেই শুরু, আর কোনোদিন মিস করেননি বলীখেলায় অংশ নেওয়া। একবার চ্যাম্পিয়নের গৌরবও অর্জন করেছিলেন। বহু বছর ধরে খাজা আহমেদ বলী ও সত্তরোর্ধ্ব মফিজুর রহমানের ‘বলীযুদ্ধ’ জব্বারের বলীখেলার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে এই দ্বৈরথ হয়তো আর দেখা যাবে না। দুই বছর আগে উৎপত্তি হওয়া ফুসফুসের রোগটা ইদানিং যে খাজা আহমদকে বেশিই ভোগাচ্ছে। সেজন্য গতবছর অবসরের ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এবার দুই ছেলেকে নিয়ে বলীখেলায় এসে আবেগ সামলাতে পারেননি খাজা আহমেদ। ছেলেদের সঙ্গে নিজেও নেমে পড়েন রিংয়ে। সেজন্য আরও একবার মফিজুর রহমান-খাজা আহমেদের লড়াই দেখল হাজারো দর্শক। যদিওবা যৌথ বিজয়ী ঘোষণা করে দুজনের মুখেই হাসি ফুটিয়েছেন রেফারি।

প্রতিপক্ষ মফিজুর রহমানের সঙ্গে বলী-যুদ্ধে খাজা আহমদ

কেন অবসর ভাঙলেন এমন প্রশ্নে হাসি খেলা করে যায় খাজা আহমেদ বলীর মুখে। বলতে থাকেন, ‘বয়সের কারণে শরীর দস্ত। ফুসফুসও ঠিকঠাক কাজ করছে না। সেজন্য অবসর নিয়েছিলাম। কিন্তু বলীখেলায় আসার পর দেখলাম দর্শকেরা সবাই অনুরোধ করছেন। সেজন্য মন বলল, না খেললে দর্শকদের প্রতি অন্যায় হবে। আর আবেগ ও ভালোবাসার কাছে বয়স-রোগ পেরেছে কবে?’

তবে এখানেই সব শেষ, বলে দিয়েছেন খাজা আহমেদ বলী। বলেছেন, ‘বয়স হয়ে গেছে। মনে হয় না আর খেলতে পারব। অসুখটা বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে। সেজন্য মনে মনে মেনে নিয়েছি এটাই আমার শেষ অংশগ্রহণ। বাকিটা আল্লাহর হাতে।’

তিন ছেলে ও এক মেয়ের বাবা খাজা আহমদের বাড়ি চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায়। কৃষিকাজ করেই চলে সংসার। তবে বলীখেলা এলে সব কাজ বাধ। কয়েকদিন ধরে চলে প্রস্তুতি। নিজের স্মৃতি ধরে রাখতে এরই মধ্যে খাজা আহমেদ নিজের দুই ছেলেকে গড়ে তুলেছেন বলী হিসেবে। ২০১২ সাল থেকে বলীখেলায় নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন তার বড় ছেলে মো. সেলিম। গত বছর থেকে যোগ দিয়েছেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। এখন বলীখেলার আগে দুই ছেলেকে নিয়ে চলে খাজা আহমদের প্রস্তুতি।

জানতে চাইলে সেলিম বলেন, ‘বাবার কাছ থেকে আমরা বলীখেলা শিখেছি। বয়সের কারণে বাবা এখন অসুস্থ। হয়তো আর খেলা হবে না। সেজন্য তার উত্তরসূরী হিসেবে আমরা বলীখেলায় অংশ নেব সামনের দিনগুলোতে। এটা শুধু পরিবারের বলীর প্রজন্ম ধরে রাখার জন্য নয়, তরুণদের মাদক-সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেকে দূরে রাখতে উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগও।’

বাবাকে পাশে রেখে একই কথা বললেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। বলেন, ‘হয়তো বাবা আর খেলবেন না। তবে তিনি না খেললেও যতদিন বেঁচে থাকবেন বলীখেলা দেখতে আসবেন। রিংয়ের নিচে দাঁড়িয়ে আমাদের উৎসাহ দিয়ে যাবেন।’

ছেলের কথা শুনে আবেগ খেলে যায় খাজা আহমেদ বলীর মনে। কাঁধের গামছাটা হাতে তুলে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘না খেললেও যতদিন বাঁচি এখানে, এই বলীর মাঠ লালদীঘি ময়দানে ছুটে আসব। এটা থেকে দূরে থাকতে পারব না।’

খাজা আহমেদ যখন কথা বলছিলেন দূরে কোথাও তখন মাইকে বাজছিল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই অমর গান। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় অক্লান্ত গলায় গেয়ে চলেছেন, যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে...

;

চাকরি ছেড়ে বসের সামনেই ঢোল বাজিয়ে নাচলেন যুবক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নিত্যদিনের অফিসের কর্মপরিবেশে অনেকের মধ্যেই 'বিরক্তি' চলে আসে। তবুও ধৈয্য নিয়ে সব সহ্য করে টিকে থাকার জন্য চালিয়ে যান লড়াই। তবে এ যাত্রায় সকলের দ্বারা টিকে থাকা সম্ভব হয় না। অফিসের 'বিষাক্ত' কর্মপরিবেশে অনেকেই ভোগেন মানসিক সমস্যায় কিংবা ব্যক্তিজীবনে। এমন পরিবেশ থেকে বাঁচতে একেক জন একেক পন্থা অবলম্বন করে থাকেন।

তবে অনিকেত নামের এক যুবক এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে যা করেছেন নেট দুনিয়ায় তা রীতিমতো ভাইরাল। এসব থেকে মুক্তি পেতে চাকরিটাই ছেড়ে দিয়েছেন এই যুবক। এতেই ক্ষান্ত হননি তিনি, বসের সামনেই ঢাকঢোল বাজিয়ে নেচে উদযাপন করেছেন এমন মুহূর্তের।

ঘটনাটি ভারতের পুনে রাজ্যের। অনিকেত নামের ওই যুবক বিক্রয় সহযোগী হিসেবে চাকরি করতেন।

তার এমন উদযাপনের একটি ভিডিও ইন্সটাগ্রাম শেয়ার করেছেন অনীশ ভগত।

ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, গত তিন বছর ধরে এই কোম্পানির সাথে কাজ করেও বেতন খুব একটা বাড়েনি। এছাড়াও অফিসের বসের দ্বারাও তাকে বিভিন্ন সময়ে অপমানিত হতে হয়েছে।

তাই তার কাজের শেষ দিনে বন্ধুরা অফিসের বাইরে ঢোল নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন এবং নেচেছিলেন। ভিডিওতে দেখা গেছে, এ ঘটনায় তার বস অনেক উত্তেজিত হয়েছেন। পাশাপাশি তার বস লোকজনকে ধাক্কা দিয়েছেন এবং চিৎকারও করেছেন।

ভিডিওটির ক্যাপশনে ভগত লিখেছেন, আমি মনে করি আপনারা অনেকেই এর সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারবেন। আজকাল বিষাক্ত কাজের সংস্কৃতি খুব বেশি দেখা যায়। সম্মান এবং অধিকারের অভাব খুবই সাধারণ। অনিকেত তার পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। আমি আশা করি এই গল্প মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।

পোস্ট করা ভিডিওটি এক মিলিয়নেরও (১০ লাখের বেশি) বেশি ভিউ পেয়েছে। পোস্টটিতে অসংখ্য লাইক ও কমেন্টও রয়েছে।

একজন ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি জানি না কেন এটি আমাকে এত সন্তুষ্ট করেছে।'

আরেকজন লিখেছেন, 'নাচটি আমাকে অন্য মাত্রার তৃপ্তি দিয়েছে।'

'আপনি সত্যিই আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে ইতিবাচক এবং উত্সাহী ব্যক্তি'- তৃতীয় একজন ঠিক এভাবেই নিজের অনুভূতি জানিয়েছেন।

তথ্যসূত্র: হিন্দুস্থান টাইমস 

;

অভয়ারণ্যে মানুষ যখন বন্দিখাঁচায়



প্রমা কোয়েল, ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চিড়িয়াখানা, নানানরকম পশুপাখি ও প্রাণীর বন্দিশালা। কেবল রং-বেরঙের চিড়িয়াই নয়; বাঘ, সিংহ, ভালুক, বানর, গণ্ডারসহ কত বন্যপ্রাণীই না খাঁচায় বন্দি থাকে!

চিড়িয়াখানায় রাখতে বন্য প্রাণীদের প্রকৃতির স্বাধীন জীবন থেকে ছিনিয়ে আনা হয়। তাদের খাঁচায় বন্দি করা হয় যেন, মানুষ তাদের দেখে আনন্দ পায়। অনেক প্রাণীর জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি খাঁচাতেই কেটে যায়।

ছোট থেকে বড় সব বয়সের মানুষই চিড়িয়াখানায় ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন। শিশুরা না হয় অবুঝ! তবে যারা প্রাপ্তবয়স্ক তারাও চিড়িয়াখানায় এই বন্দি প্রাণীদের জীবনকে গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারেন না।

এশিয়ার বড় দেশ চীনে রয়েছে, এক অদ্ভুত চিড়িয়াখানা। চংকিংয়ে অবস্থিত সেই চিড়িয়াখানার নাম ‘লেহে লেদু বন্যপ্রাণী চিড়িয়াখানা’। একে ‘রিভার্স জু’ (বিপরীত চিড়িয়াখানা) বলেও ডাকা হয়।

এখানেও মানুষ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে পশু দেখতে আসেন। তবে একেবারেই ভিন্ন উপায়ে। মূলত, একটি খাঁচা রয়েছে, যেখানে মানুষদের সেই খাঁচায় পুরা হয়। তারপর সেই খাঁচাবন্দি মানুষদের নিয়ে রাখা হয়, অভয়ারণ্যে। সেখানে বন্য প্রাণীরা মানুষের খাঁচার চারপাশে অবাধে ঘুরতে থাকে। চিড়িয়াখানায় বন্দি প্রাণীদের বন্দিজীবনের এক প্রতীকী দৃশ্য!

অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষদের জন্য এটি এক নতুন অভিজ্ঞতা!

অভয়ারণ্যে খাঁচায় বন্দি মানুষ, ছবি-সংগৃহীত

খুব কাছে থেকে হিংস্র বন্যপ্রাণীদের মুক্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যেমন লোমহর্ষক, ঠিক তেমনই আতঙ্কজনকও হতে পারে। বিপরীতধর্মী এই চিড়িয়াখানাটি সবার জন্য প্রথম উন্মুক্ত করা হয়, ২০১৫ সালে। তখন বিশ্বের সংবদমাধ্যমের শিরোনাম কেড়েছিল এ চিড়িয়াখানাটি।

একটি শক্ত লোহার খাঁচাবেষ্টিত দর্শনার্থীদের একটি ট্রাকে তুলে অভয়ারণ্যে রেখে দেওয়া হয়। সেখানে তাদের ঘিরে ধরে ঘুরতে থাকে বাঘ, ভালুক, সিংহ ইত্যাদি হিংস্র প্রাণী।

এ বিষয়ে চিড়িয়াখানার প্রধান চ্যান লিয়াং বলেন, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা রক্ষার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। খাঁচার ফাঁকা অংশ দিয়ে হাতের আঙুলও বের না করার নির্দেশনা দেওয়া থাকে।

তবে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই চিড়িয়াখানাটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে অনেক। এর নৈতিকতা নিয়ে অনেকে প্রশ্নও তুলেছেন।

অনেকে মনে করেন, এরকম ব্যবস্থাপনায় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। কারণ, শিকারী প্রাণীগুলো প্রচণ্ড হিংস্র। তাই, সে কারণে যে কোনো সময় বিপজ্জনক ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

আবার এরকম চিন্তাভাবনার প্রশংসাও করেছেন অপর একটি পক্ষ। তাদের বক্তব্য, পৃথিবীটা কেবল মানুষদের নয়। প্রকৃতিতে সব প্রাণীদের একটা ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন। তাদের বন্দি করে রাখা মানুষের উচিত নয়। কারণ, মুক্ত প্রকৃতিতে বিরাজ করার অধিকার সব প্রাণীরই রয়েছে।

তাদের মন্তব্য, আমরা প্রাণীদের আবাসস্থল বনজঙ্গল সব উজাড় করেছি। সে কারণে তাপমাত্রাও অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। আবার প্রাণীদের বন্দি রেখে তাদের জীবন চরম দুর্বিষহ করে তুলি।

চাইলে এবং সুযোগ পেলে এই ধরনের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিতে চিড়িয়াখানাটি ঘুরে আসতে পারেন বৈকি!

তথ্যসূত্র: এনিমেল অ্যারাউন্ড দ্য গ্লোব

;

৫ বছরের শিশুর বিস্ময়কর প্রতিভা!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বয়স সবে ৫ কিংবা ৬। এই বয়সেই তার প্রতিভা দেখে অবাক হবে যে-কেউ!

গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সের (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভিডিওটি ১ মিলিয়নের (১০ লাখের বেশি) বেশি মানুষ দেখেছেন। খবর এনডিটিভি। 

ভিডিওতে রিলি নামের ওই শিশুটিকে প্রথমে শ্বাস নিতে দেখা যায়। তারপর সে একটি শক্তিশালী গর্জন দিয়ে শ্বাস ছাড়ে। ওই গর্জনটি হুবুহ সিংহের গর্জনের অনুরূপ।

রিলির মা অ্যামি ভিডিওটি এক্সে শেয়ারের পরই তা ভাইরাল হয়ে যায়। শিশুটির এমন নিখুত দক্ষতা দেখে মুগ্ধ দর্শকরা। ভিডিওটিতে অনেকেই নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, এত অল্প বয়সে এমন বাস্তবসম্মত গর্জন তৈরি করার রিলির ক্ষমতার বিস্ময় প্রকাশ করে।

আরেকজন লিখেছেন, শিশুরা খুব দ্রুত শিখে। তার এমন প্রতিভা সত্যিই অবাক করার মতো।

;