আমাজনের ‘ডার্ক আর্থ’



মানসুরা চামেলী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
আমাজন রেইনফরেস্ট

আমাজন রেইনফরেস্ট

  • Font increase
  • Font Decrease

পৃথিবীর বৃহত্তম বনাঞ্চল আমাজন রেইনফরেস্ট। জীববৈচিত্রে ভরপুর এই জঙ্গলকে ঘিরে রয়েছে নানা রহস্য। সম্প্রতি এই রেইনফরেস্ট একটি শহর আবিষ্কার হয়েছে। বিজ্ঞানীরা ভিন্ন ধরনের ভূগর্ভ উন্মোচন করেছে; এখন ব্যবহার হয়ে আসছে।

আমাজনের একবারে গভীরে প্রত্নতত্ত্ববিদ মার্ক রবিনসন। তার হাঁটু পর্যন্ত কাঁদায় ডুবানো। একটি অভিযানে একদল আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীর সঙ্গে রবিনসন ব্রাজিলের সীমান্তের কাছে উত্তর-পশ্চিম বলিভিয়ার ইটেনেজের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বনে যান। সেখানে যাওয়া একবারেই সহজ ছিল না। তারা আমাজনের কাছের গ্রাম ভার্সালেস থেকে ১০ ঘণ্টার নৌকা যাত্রা এড়িয়ে ফ্লাইট ধরেছিলেন। পশু প্রাণী এড়াতে তাদের প্লেনকে রানওয়ের পরিবর্তে ঘাসে ঘুরতে হয়েছে। গাছপালার মোটা শিকড় এবং পিঁপড়ার দল মাড়িয়ে ট্রেকিং করে ঘন রেইনফরেস্টে পৌঁছাতে হয়।

আমাজন রেইনফরেস্ট

এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্বের সিনিয়র অধ্যাপক রবিনসন বলেন, ‘গরম, আর্দ্র ও ভয়ঙ্কর কামড় খেতে খেতে এই পথ পাড়ি দিতে হয়েছিল। তবে এই ভ্রমণ মূল্যবান ছিল। গবেষকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি মিশনও বলা যায়। কারণ তারা আমাজনের অন্ধকার পৃথিবী বা ডার্ক আর্থ; অনেকেই আবার বলেন ‘কালো সোনা বা টেরা প্রেটা নামেও পরিচিত’ সেখানে পৌঁছেছিল। আমাজন অববাহিকার এক ধরনের কালো জৈব সার যার মিশ্রণে মাটির উর্বরতা অবিশ্বাস্যভাবে বাড়ে। এখানে চাষের কাজে এই বিশেষ ধরনের মাটি বহুদিন ধরে ব্যবহার করে আসছেন চাষিরা।

কাঠকয়লা-কালো মাটির এই স্তরটি, ৩ দশমিক ৮ মিটার (১২.৫ ফুট) পুরু। মাটির স্তরটি অ্যামাজন অববাহিকা জুড়ে পাওয়া যায়। মাটি অবিশ্বাস্য উর্বর। ক্ষয়প্রাপ্ত জৈব পদার্থ এবং শস্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় পুষ্টি নাইট্রোজেন, পটাসিয়াম এবং ফসফরাসে সমৃদ্ধ।

রেইনফরেস্টের মাটি সাধারণ বালুকাময় মাটি থেকে পাতলা। এটি প্রাকৃতিকভাবে জমা হয়নি। সমৃদ্ধ এই মাটি বিভিন্ন সময়ের ধ্বংসাবশেষ। একটা সময় আদিবাসীরা এই রেইনফরেস্টে বসতি স্থাপনের চেষ্টা করেছিল।

চলতি জানুয়ারি মাসে, বিজ্ঞানীরা ঘোষণা করেন, তারা একটি বিলুপ্তপ্রায় গার্ডেন সিটি পুনরায় আবিষ্কার করেছেন। ইকুয়েডরের আপানো উপত্যকায় রেইনফরেস্টের পাতার নিচে লুকানো ২ হাজার বছর আগের পুরানো শহর। যেখানে প্লাজা, রাস্তা আবিষ্কার করা হয়। এই গার্ডেন সিটি সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল তার উর্বর মাটির কারণে। তবে আমাজনের আদিবাসী সম্প্রদায়গুলো তাদের জমির উৎপাদন বাড়াতে এডিই-এর (ADE) উপর নির্ভর করত। সম্প্রতি  জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যা মোকাবিলা করে ফসল ফলাতে ইদানিং বিজ্ঞানীরা আদিবাসীদের এই চাষাবাদের পদ্ধতি সমাজকে ফলো করতে বলছেন।

আমাজেনর ডার্ক আর্থ প্রাচীন নিদর্শন

আমাজনের প্রত্যন্ত অঞ্চল ভার্সালেস রেইনফরেস্টের গন্ধ ও শব্দে ঘেরা। রবিসন বলেছেন, অনেক সময় আপনার মনে হবে আপনি আদিম কোন অঞ্চলে আছেন। তবে এমনটা নয়।

‘আমরা গভীরে যাই ততই জানতে পারি। প্রাথমিকভাবে আপনারা মনে হবে এটা গ্রাম নয়; সব জায়গা আমরা দেখেছি- মনে কঠিন একটি ভ্রমণ। আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে আছি যেখানে আমরা প্রাচীন সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব খুঁজে পাই।

বর্তমান সময়ে পশ্চিমা ঔপনিবেশিকদের বহন করা রোগে আমাজনের অনেক আদিবাসী সম্প্রদায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে তাদের চাষাবাদের পদ্ধতিতে আজও রেইনফরেস্টকে আকৃতি দিয়ে যাচ্ছে।

বরিনসন বলেন, পুরো আমাজনে আরেকটি জিনিস আমি খুঁজে পাই। তা হলো এডিই (ADE) পদ্ধতিতে চাষাবাদ।

বিজ্ঞানীরা এই মাটির অবিশ্বাস্য উর্বর ক্ষমতার গোপন রহস্য উদঘাটন করার জন্য মাটির পরীক্ষা করে দেখলেন, এই মূল্যবান স্তরটিতে অজৈব উপাদানের শক্তিশালী মিশ্রণ। যার মধ্যে রয়েছে মৃৎশিল্প, বিশেষ হাড়, মুরগির ছাঁট, মানুষের মল, কাঠকয়লা, ছাই এবং মাছের হাড়। এর মধ্যে রয়েছে জৈব পদার্থ যেমন খাদ্য স্ক্র্যাপ, সার। এটি একই সাথে প্রাচীন আবর্জনার ভান্ডার যা রবিনসনের মতো প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই উর্বর মাটি- রেইনফরেস্টকে সমৃদ্ধ করছে। আজও আদিবাসী সম্প্রদায় এই পদ্ধতি ব্যবহার করে চাষাবাদ করে।

বিজ্ঞানী রবিনসনের ভাষায় ‘এটি সত্যিই সোনার খনি’।

এখানে বহু পুরনো জীবাশ্ম বীজ এবং সিরামিক প্রত্নবস্তুর পাশাপাশি, হাজার হাজার বছর আগে রেইনফরেস্ট কেমন ছিল তার মাইক্রোস্কোপিক সূত্র রয়েছে।

আমাজনের অনেক আদিবাসী বহু আগে বিলুপ্ত হয়েছে। তবে তাদের উত্তরাধিকার রয়ে গেছে

জীবন্ত ইতিহাস

১৮৭০ সালে এডিই পদ্ধতিতে প্রথমে আগ্রহ দেখায় পশ্চিমারা। যখন অনেক বিজ্ঞানীরা স্বাধীনভাবে মাটির কালো স্তর নিয়ে পরীক্ষা করেন। তারা দেখেন- মাটির কালো স্তরকে ফ্যাকাশে ও কালচে ধরনের বস্তু ঘিরে রেখেছে। একটি প্রাথমিক ধারণা মতের বর্ণনায় দেখা যায়, সেখানে সুক্ষ্ম, কালো এবং দোঁআশ মাটি খুঁজে পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে ভারতীয় মৃৎশিল্পের টুকরো পাওয়া যায়, যা মাটিকে প্রায় ঢেকে রাখে।   

যাইহোক, এডিই পদ্ধতিটা অনেকটা রহস্যময়। এই পদ্ধতি দুর্ঘটনাবশত নাকি রেইনফরেস্টকে সমৃদ্ধ ও জমিকে চাষের উপযুক্ত করতে কিনা- সে প্রশ্ন বিজ্ঞানীদের মনেও রয়েছে।

২০২৩ সালে আর্ন্তজাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল বিষয়টি নিয়ে একটি জরিপ করেছেন। তারা মধ্য ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্ব আমাজনে কুইকুরো-তে বসবাসকারী আদিবাসী সম্প্রদায়কে পর্যবেক্ষণ এবং তাদের সঙ্গে কথা বলে এটা নিশ্চিত করেছেন যে, এডিই পদ্ধতি উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হয়েছিল।

মাটির বয়স ও তার চরিত্র দেখে বোঝা যায়- আমাজনের প্রাচীন আদিবাসীর ইতিহাস ও উত্থান সম্পর্কে। এই কালো মাটির প্রাচীনতম স্তরগুলো প্রায় ৫ হাজার বছরের পুরনো। ‘আমরা প্রায় ৪ হাজার বছর আগের আরও অনেক কিছু দেখতে পাচ্ছি।’রবিনসন বলেন। ‘আরও কার্যক্রম, অনেক সাংস্কৃতিক পরিবর্তনও হয়েছে।’

২ হাজার বছর আগের ঘটনা হবে না, তবে এটি শীর্ষে পৌঁছে যায় বলছেন রবিনসন। এটি কালো মাটির গড় বয়সের বিষয়টি আমাজন অববাহিকা জুড়ে বিস্তৃত অঞ্চলে পাওয়া যায়। ওই সময় সম্প্রদায়গুলো অনেক বড় ছিল এবং বিশাল নেটওয়ার্ক গঠন করে।

এর একটি কারণ হতে পারে ADE। জঙ্গলের আবাসস্থলে আদিবাসীরা তাদের প্রয়োজনীয় ফলের গাছ এবং ফসল ফলানোর জন্য সমৃদ্ধ মাটি পেয়েছিল। রবিনসন বিশ্বাস করেন, এডিই পদ্ধতি থাকলে বৃহত্তর আকারের কৃষিতে লোকেদের ফিরে আসার কোন প্রয়োজন ছিল না।

৫০০ বছর আগে কিছু বিষয় একবারে ভুল ছিল। ‘যখন আমরা দেখি চাষাবাদে এডিই পদ্ধতি বন্ধ হয়।’ বলেন রবিনসন।

১৪৯৮ সালের ১ আগস্ট ক্রিস্টোফার কলম্বাস আমিরিকায় পা দেওয়া পর তা আরো প্রতিফলিত হয়।

তিনি যখন ভেনেজুয়েলার পারিয়া উপদ্বীপের মাটিতে স্পেনের লাল এবং গোল্ডেন পতাকা ডুবিয়ে দেয়, তখন এটি একটি "মৃত্যু" এর সূচনা করে। এরপর ১৬০০ সাল পর্যন্ত আমেরিকা জুড়ে প্রায় ৫৬ মিলিয়ন আদিবাসি মানুষকে হত্যা করা হয়। যা পৃথিবীকে শান্ত করেছিল।

প্রাচীন পদ্ধতি ব্যবহার করে এখন অনেক কোম্পানি বায়োচার তৈরি করছে

আমাজনের কার্বন সিঙ্ক

আমাজনের অনেক আদিবাসী বহু আগে বিলুপ্ত হয়েছে। তবে তাদের উত্তরাধিকার রয়ে গেছে। আমাজনের মাটি অত্যন্ত উর্বর যাতে মূলত জৈব বর্জ্য জমে এবং এর কার্বনাইজেশনে আগুনের ব্যবহার দ্বারা উদ্ভূত হয়, যা প্রাচীন আদিবাসী মানুষের কাজের ফলাফল।

আশ্চর্যজনকভাবে, তাদের রেখে যাওয়া ADE পদ্ধতি সব জায়গায় একই নয়; বিভিন্ন স্থানে ব্যবহারের উপর ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে।

‘কিন্তু মাটি তৈরি এবং তাদের সমৃদ্ধ করার জন্য মৌলিক প্রক্রিয়া একই রকম বলে মনে হচ্ছে,’ রবিনসন বলেছেন।

সাম্প্রতিককালে বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলো এই প্রাচীন পদ্ধতিকে পুঁজি করার চেষ্টা করছে। তারা জমির উর্বরতা বাড়াতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে কৃষকদের সহায়তা করছে। কার্বন গোল্ড নিন নামে একটি সংস্থা যা জৈব, পিট-মুক্ত রোপণে সহায়তা করতে বায়োচার উৎপাদন করছে।

ভার্সালেস গ্রামে, আদিবাসী ইটোনামা সম্প্রদায় এখনও ফসল ফলানোর জন্য উর্বর আমাজনীয় কালো মাটি ব্যবহার করছে

এসব উদ্যোগ প্রসঙ্গে রবিনসন মনে করেন, আমাজনে প্রাচীন আদিবাসীদের পদ্ধতি অনুলিপি করা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অপরিহার্য। ভবিষ্যদ্বাণীর দিকে ইঙ্গিত করে রবিনসন বলেছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে মধ্যে, বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে বাস করবে। গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনে প্রচুর পরিমাণে অভিবাসন হবে।

‘সম্প্রদায়ের জন্য তাদের মধ্যে আরও টেকসই হওয়ার উপায় খুঁজে বের করা, আমি মনে করি এটি অপরিহার্য,’ তিনি মনে করেন। ‘অতীত থেকে আমরা এই বিষয়ে কিছু শিখতে পারি।’

সূত্র: বিবিসি

   

এক ঘরেই তিন বলী



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

  • Font increase
  • Font Decrease

চুল থেকে দাড়ি-সবই সফেদ। হাঁটাচলায় মন্থর। স্বাভাবিকভাবেই প্রবীণের বয়সটা আঁচ করা যায় প্রথম দেখাতেই। কিন্তু তার ষাটোর্ধ্ব বয়সটা যেন কেবল ক্যালেন্ডারের হিসাব। বয়স যতই ছোবল বসানোর চেষ্টা করুক না কেন-তিনি যেন এখনো ২৫ এর টগবগে তরুণ। সেই বলেই তো ফুসফুসের রোগবালাইকে তুড়ি মেরে ঐতিহাসিক আবদুল জব্বারের বলীখেলা এলেই হাজির হয়ে যান রিংয়ে। এক দুবার নয়, এবার কিনা পূর্ণ হলো সুবর্ণজয়ন্তী!

চট্টগ্রামের অন্যতম আবেগের ঠিকানা ঐতিহাসিক এই বলীখেলার বড় বিজ্ঞাপন হয়ে ওঠা এই বলীর নাম খাজা আহমদ বলী। ৫০ বছর ধরে বলীখেলায় অংশ নিয়ে দর্শকদের আনন্দ দিয়ে যাওয়া এই বলীর এখন পড়ন্ত বয়স। ফুসফুসে বাসা বেঁধেছে রোগ। কানেও শোনেন কম। খাজা আহমদ বুঝে গিয়েছেন, তার দিন ফুরাচ্ছে। কিন্তু তিনি যে বলীখেলার স্মৃতি থেকে সহজেই মুছে যেতে চান না। সেজন্যই উত্তরসূরী হিসেবে এরই মধ্যে গড়ে তুলেছেন নিজের দুই ছেলেকে। বাবার পাশাপাশি দুই ভাইও এখন বলীখেলার নিয়মিত প্রতিযোগী।

খাজা আহমেদ বলীর বাবাও বলীখেলায় অংশ নিতেন। বাবার সঙ্গে বলীখেলায় এসে ১৯৭৪ সালে শখের বসে খেলতে নামেন খাজা আহমেদও। বয়স তখন ১২ বছরের আশপাশে। সেই শুরু, আর কোনোদিন মিস করেননি বলীখেলায় অংশ নেওয়া। একবার চ্যাম্পিয়নের গৌরবও অর্জন করেছিলেন। বহু বছর ধরে খাজা আহমেদ বলী ও সত্তরোর্ধ্ব মফিজুর রহমানের ‘বলীযুদ্ধ’ জব্বারের বলীখেলার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে এই দ্বৈরথ হয়তো আর দেখা যাবে না। দুই বছর আগে উৎপত্তি হওয়া ফুসফুসের রোগটা ইদানিং যে খাজা আহমদকে বেশিই ভোগাচ্ছে। সেজন্য গতবছর অবসরের ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এবার দুই ছেলেকে নিয়ে বলীখেলায় এসে আবেগ সামলাতে পারেননি খাজা আহমেদ। ছেলেদের সঙ্গে নিজেও নেমে পড়েন রিংয়ে। সেজন্য আরও একবার মফিজুর রহমান-খাজা আহমেদের লড়াই দেখল হাজারো দর্শক। যদিওবা যৌথ বিজয়ী ঘোষণা করে দুজনের মুখেই হাসি ফুটিয়েছেন রেফারি।

প্রতিপক্ষ মফিজুর রহমানের সঙ্গে বলী-যুদ্ধে খাজা আহমদ

কেন অবসর ভাঙলেন এমন প্রশ্নে হাসি খেলা করে যায় খাজা আহমেদ বলীর মুখে। বলতে থাকেন, ‘বয়সের কারণে শরীর দস্ত। ফুসফুসও ঠিকঠাক কাজ করছে না। সেজন্য অবসর নিয়েছিলাম। কিন্তু বলীখেলায় আসার পর দেখলাম দর্শকেরা সবাই অনুরোধ করছেন। সেজন্য মন বলল, না খেললে দর্শকদের প্রতি অন্যায় হবে। আর আবেগ ও ভালোবাসার কাছে বয়স-রোগ পেরেছে কবে?’

তবে এখানেই সব শেষ, বলে দিয়েছেন খাজা আহমেদ বলী। বলেছেন, ‘বয়স হয়ে গেছে। মনে হয় না আর খেলতে পারব। অসুখটা বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে। সেজন্য মনে মনে মেনে নিয়েছি এটাই আমার শেষ অংশগ্রহণ। বাকিটা আল্লাহর হাতে।’

তিন ছেলে ও এক মেয়ের বাবা খাজা আহমদের বাড়ি চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায়। কৃষিকাজ করেই চলে সংসার। তবে বলীখেলা এলে সব কাজ বাধ। কয়েকদিন ধরে চলে প্রস্তুতি। নিজের স্মৃতি ধরে রাখতে এরই মধ্যে খাজা আহমেদ নিজের দুই ছেলেকে গড়ে তুলেছেন বলী হিসেবে। ২০১২ সাল থেকে বলীখেলায় নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন তার বড় ছেলে মো. সেলিম। গত বছর থেকে যোগ দিয়েছেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। এখন বলীখেলার আগে দুই ছেলেকে নিয়ে চলে খাজা আহমদের প্রস্তুতি।

জানতে চাইলে সেলিম বলেন, ‘বাবার কাছ থেকে আমরা বলীখেলা শিখেছি। বয়সের কারণে বাবা এখন অসুস্থ। হয়তো আর খেলা হবে না। সেজন্য তার উত্তরসূরী হিসেবে আমরা বলীখেলায় অংশ নেব সামনের দিনগুলোতে। এটা শুধু পরিবারের বলীর প্রজন্ম ধরে রাখার জন্য নয়, তরুণদের মাদক-সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেকে দূরে রাখতে উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগও।’

বাবাকে পাশে রেখে একই কথা বললেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। বলেন, ‘হয়তো বাবা আর খেলবেন না। তবে তিনি না খেললেও যতদিন বেঁচে থাকবেন বলীখেলা দেখতে আসবেন। রিংয়ের নিচে দাঁড়িয়ে আমাদের উৎসাহ দিয়ে যাবেন।’

ছেলের কথা শুনে আবেগ খেলে যায় খাজা আহমেদ বলীর মনে। কাঁধের গামছাটা হাতে তুলে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘না খেললেও যতদিন বাঁচি এখানে, এই বলীর মাঠ লালদীঘি ময়দানে ছুটে আসব। এটা থেকে দূরে থাকতে পারব না।’

খাজা আহমেদ যখন কথা বলছিলেন দূরে কোথাও তখন মাইকে বাজছিল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই অমর গান। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় অক্লান্ত গলায় গেয়ে চলেছেন, যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে...

;

চাকরি ছেড়ে বসের সামনেই ঢোল বাজিয়ে নাচলেন যুবক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নিত্যদিনের অফিসের কর্মপরিবেশে অনেকের মধ্যেই 'বিরক্তি' চলে আসে। তবুও ধৈয্য নিয়ে সব সহ্য করে টিকে থাকার জন্য চালিয়ে যান লড়াই। তবে এ যাত্রায় সকলের দ্বারা টিকে থাকা সম্ভব হয় না। অফিসের 'বিষাক্ত' কর্মপরিবেশে অনেকেই ভোগেন মানসিক সমস্যায় কিংবা ব্যক্তিজীবনে। এমন পরিবেশ থেকে বাঁচতে একেক জন একেক পন্থা অবলম্বন করে থাকেন।

তবে অনিকেত নামের এক যুবক এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে যা করেছেন নেট দুনিয়ায় তা রীতিমতো ভাইরাল। এসব থেকে মুক্তি পেতে চাকরিটাই ছেড়ে দিয়েছেন এই যুবক। এতেই ক্ষান্ত হননি তিনি, বসের সামনেই ঢাকঢোল বাজিয়ে নেচে উদযাপন করেছেন এমন মুহূর্তের।

ঘটনাটি ভারতের পুনে রাজ্যের। অনিকেত নামের ওই যুবক বিক্রয় সহযোগী হিসেবে চাকরি করতেন।

তার এমন উদযাপনের একটি ভিডিও ইন্সটাগ্রাম শেয়ার করেছেন অনীশ ভগত।

ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, গত তিন বছর ধরে এই কোম্পানির সাথে কাজ করেও বেতন খুব একটা বাড়েনি। এছাড়াও অফিসের বসের দ্বারাও তাকে বিভিন্ন সময়ে অপমানিত হতে হয়েছে।

তাই তার কাজের শেষ দিনে বন্ধুরা অফিসের বাইরে ঢোল নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন এবং নেচেছিলেন। ভিডিওতে দেখা গেছে, এ ঘটনায় তার বস অনেক উত্তেজিত হয়েছেন। পাশাপাশি তার বস লোকজনকে ধাক্কা দিয়েছেন এবং চিৎকারও করেছেন।

ভিডিওটির ক্যাপশনে ভগত লিখেছেন, আমি মনে করি আপনারা অনেকেই এর সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারবেন। আজকাল বিষাক্ত কাজের সংস্কৃতি খুব বেশি দেখা যায়। সম্মান এবং অধিকারের অভাব খুবই সাধারণ। অনিকেত তার পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। আমি আশা করি এই গল্প মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।

পোস্ট করা ভিডিওটি এক মিলিয়নেরও (১০ লাখের বেশি) বেশি ভিউ পেয়েছে। পোস্টটিতে অসংখ্য লাইক ও কমেন্টও রয়েছে।

একজন ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি জানি না কেন এটি আমাকে এত সন্তুষ্ট করেছে।'

আরেকজন লিখেছেন, 'নাচটি আমাকে অন্য মাত্রার তৃপ্তি দিয়েছে।'

'আপনি সত্যিই আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে ইতিবাচক এবং উত্সাহী ব্যক্তি'- তৃতীয় একজন ঠিক এভাবেই নিজের অনুভূতি জানিয়েছেন।

তথ্যসূত্র: হিন্দুস্থান টাইমস 

;

অভয়ারণ্যে মানুষ যখন বন্দিখাঁচায়



প্রমা কোয়েল, ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চিড়িয়াখানা, নানানরকম পশুপাখি ও প্রাণীর বন্দিশালা। কেবল রং-বেরঙের চিড়িয়াই নয়; বাঘ, সিংহ, ভালুক, বানর, গণ্ডারসহ কত বন্যপ্রাণীই না খাঁচায় বন্দি থাকে!

চিড়িয়াখানায় রাখতে বন্য প্রাণীদের প্রকৃতির স্বাধীন জীবন থেকে ছিনিয়ে আনা হয়। তাদের খাঁচায় বন্দি করা হয় যেন, মানুষ তাদের দেখে আনন্দ পায়। অনেক প্রাণীর জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি খাঁচাতেই কেটে যায়।

ছোট থেকে বড় সব বয়সের মানুষই চিড়িয়াখানায় ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন। শিশুরা না হয় অবুঝ! তবে যারা প্রাপ্তবয়স্ক তারাও চিড়িয়াখানায় এই বন্দি প্রাণীদের জীবনকে গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারেন না।

এশিয়ার বড় দেশ চীনে রয়েছে, এক অদ্ভুত চিড়িয়াখানা। চংকিংয়ে অবস্থিত সেই চিড়িয়াখানার নাম ‘লেহে লেদু বন্যপ্রাণী চিড়িয়াখানা’। একে ‘রিভার্স জু’ (বিপরীত চিড়িয়াখানা) বলেও ডাকা হয়।

এখানেও মানুষ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে পশু দেখতে আসেন। তবে একেবারেই ভিন্ন উপায়ে। মূলত, একটি খাঁচা রয়েছে, যেখানে মানুষদের সেই খাঁচায় পুরা হয়। তারপর সেই খাঁচাবন্দি মানুষদের নিয়ে রাখা হয়, অভয়ারণ্যে। সেখানে বন্য প্রাণীরা মানুষের খাঁচার চারপাশে অবাধে ঘুরতে থাকে। চিড়িয়াখানায় বন্দি প্রাণীদের বন্দিজীবনের এক প্রতীকী দৃশ্য!

অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষদের জন্য এটি এক নতুন অভিজ্ঞতা!

অভয়ারণ্যে খাঁচায় বন্দি মানুষ, ছবি-সংগৃহীত

খুব কাছে থেকে হিংস্র বন্যপ্রাণীদের মুক্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যেমন লোমহর্ষক, ঠিক তেমনই আতঙ্কজনকও হতে পারে। বিপরীতধর্মী এই চিড়িয়াখানাটি সবার জন্য প্রথম উন্মুক্ত করা হয়, ২০১৫ সালে। তখন বিশ্বের সংবদমাধ্যমের শিরোনাম কেড়েছিল এ চিড়িয়াখানাটি।

একটি শক্ত লোহার খাঁচাবেষ্টিত দর্শনার্থীদের একটি ট্রাকে তুলে অভয়ারণ্যে রেখে দেওয়া হয়। সেখানে তাদের ঘিরে ধরে ঘুরতে থাকে বাঘ, ভালুক, সিংহ ইত্যাদি হিংস্র প্রাণী।

এ বিষয়ে চিড়িয়াখানার প্রধান চ্যান লিয়াং বলেন, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা রক্ষার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। খাঁচার ফাঁকা অংশ দিয়ে হাতের আঙুলও বের না করার নির্দেশনা দেওয়া থাকে।

তবে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই চিড়িয়াখানাটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে অনেক। এর নৈতিকতা নিয়ে অনেকে প্রশ্নও তুলেছেন।

অনেকে মনে করেন, এরকম ব্যবস্থাপনায় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। কারণ, শিকারী প্রাণীগুলো প্রচণ্ড হিংস্র। তাই, সে কারণে যে কোনো সময় বিপজ্জনক ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

আবার এরকম চিন্তাভাবনার প্রশংসাও করেছেন অপর একটি পক্ষ। তাদের বক্তব্য, পৃথিবীটা কেবল মানুষদের নয়। প্রকৃতিতে সব প্রাণীদের একটা ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন। তাদের বন্দি করে রাখা মানুষের উচিত নয়। কারণ, মুক্ত প্রকৃতিতে বিরাজ করার অধিকার সব প্রাণীরই রয়েছে।

তাদের মন্তব্য, আমরা প্রাণীদের আবাসস্থল বনজঙ্গল সব উজাড় করেছি। সে কারণে তাপমাত্রাও অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। আবার প্রাণীদের বন্দি রেখে তাদের জীবন চরম দুর্বিষহ করে তুলি।

চাইলে এবং সুযোগ পেলে এই ধরনের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিতে চিড়িয়াখানাটি ঘুরে আসতে পারেন বৈকি!

তথ্যসূত্র: এনিমেল অ্যারাউন্ড দ্য গ্লোব

;

৫ বছরের শিশুর বিস্ময়কর প্রতিভা!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বয়স সবে ৫ কিংবা ৬। এই বয়সেই তার প্রতিভা দেখে অবাক হবে যে-কেউ!

গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সের (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভিডিওটি ১ মিলিয়নের (১০ লাখের বেশি) বেশি মানুষ দেখেছেন। খবর এনডিটিভি। 

ভিডিওতে রিলি নামের ওই শিশুটিকে প্রথমে শ্বাস নিতে দেখা যায়। তারপর সে একটি শক্তিশালী গর্জন দিয়ে শ্বাস ছাড়ে। ওই গর্জনটি হুবুহ সিংহের গর্জনের অনুরূপ।

রিলির মা অ্যামি ভিডিওটি এক্সে শেয়ারের পরই তা ভাইরাল হয়ে যায়। শিশুটির এমন নিখুত দক্ষতা দেখে মুগ্ধ দর্শকরা। ভিডিওটিতে অনেকেই নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, এত অল্প বয়সে এমন বাস্তবসম্মত গর্জন তৈরি করার রিলির ক্ষমতার বিস্ময় প্রকাশ করে।

আরেকজন লিখেছেন, শিশুরা খুব দ্রুত শিখে। তার এমন প্রতিভা সত্যিই অবাক করার মতো।

;