আত্মসমর্পণ পরবর্তী কয়েক দিনে যা ঘটেছিল



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক, বার্তা২৪.কম
আত্মসমর্পণ পরবর্তী কয়েক দিনে যা ঘটেছিল

আত্মসমর্পণ পরবর্তী কয়েক দিনে যা ঘটেছিল

  • Font increase
  • Font Decrease

ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর মিলিত প্রাণপণ সমরপ্রচেষ্টায় কোঁণঠাসা হয়ে বর্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণে বাধ্য হলেও পরবর্তী কয়েকটি দিন বেশ ঘটনাবহুল ভাবেই কাটে। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ পরবর্তী কয়েকটি দিনে ঘটে যাওয়া অনেক খবরই প্রকাশ্যে আসেনি। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে সংবাদপত্রগুলিতে ধ্বংসলীলা ও সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবীদের নির্বিচার হত্যার ফলে আত্মসমর্পণ পরবর্তী দিনগুলির ঘটনাপ্রবাহ দেশিয় গণমাধ্যমে সেভাবে তুলে ধরা সম্ভব হয়নি। কিন্তু ভারতীয় গণমাধ্যম মুক্তিযুদ্ধের প্রধান মিত্র দেশ হওয়ায় সেখানকার গণমাধ্যমে, বিশেষ করে প্রতিবেশি রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে বহু আঙ্গিকে সেই সময়কার ঘটনাপ্রবাহকে ধারণ করতে সচেষ্ট ছিল।

অন্বেষণ করার চেষ্টা করেছি, আত্মসমর্পণ পরবর্তী দিনগুলিতে কলকাতার সংবাদপত্র কি ধরণের খবর দিয়েছিল। অত্যন্ত আশার কথা হচ্ছে, নির্মোহ ইতিহাসের চর্চার জন্য সেই সময়কার ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো এতোটাই নিবেদিত ছিল যে পত্রিকাগুলির প্রায় পুরো সংবাদ আয়োজনই ছিল সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে নিয়ে। আমরা তাতে দেখতে পাচ্ছি, যুদ্ধে সব ধরণের আন্তর্জাতিক রীতিনীতি লঙ্ঘন করে কিভাবে মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত করেছিল হানাদার বাহিনী। নির্বিচার সেই গণহত্যার যে বিবরণ বিভিন্ন সময় উঠে এসেছে, ভারতীয় গণমাধ্যমে বিধৃত বিবরণের তুলনায় তা নেহায়েতই সামান্য। 


মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রামে গ্রামে চলে যাওয়ার নির্দেশ

২১ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ কলকাতার প্রভাবশালী দৈনিক যুগান্তর (অধূনালুপ্ত) ‘যুদ্ধ শেষ, এখন পুনর্বাসন/মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রামে গ্রামে চলে যাওয়ার নির্দেশ’ শীর্ষক এক খবরে জানায়, ‘পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর অত্যাচারে বাংলাদেশের যে লক্ষ লক্ষ লোক নিরাশ্রয় হয়ে ভারতের মাটিতে চলে গিয়েছেন, তাদের পুনর্বাসনের কাজ ত্বরান্বিত করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সকল ছাত্র মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রামে গ্রামে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।’

‘এক আবেগময় পরিবেশে অনুষ্ঠিত এই সভায় উপস্থিত ছাত্রছাত্রী মুক্তিযোদ্ধারা দীর্ঘদিন পরে একে অপরকে দেখে অশ্রুবর্ষণ করতে থাকেন। দীর্ঘ এই ন’মাসে অনেকের আপনজন, ভাই বোন বন্ধু প্রাণ হারিয়েছেন।’

‘মুজিবরকে জেল থেকে শীঘ্রই ছেড়ে দেওয়া হবে’

একই দিনে দৈনিকটি রাওয়ালপিন্ডির রয়টার্স এর বরাত দিয়ে অপর এক খবরে জানায়, পাকিস্তানে কারা অন্তরীন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন নতুন ক্ষমতা নেওয়া জুলফিকার আলি ভুট্টো।

‘মুজিবকে মুক্তি দেওয়া হবে/মিঃ ভুট্টোর ঘোষণা’ শিরোনামে ওই খবরে জানানো হয়, ‘আজ রাত্রে মিঃ ভুট্টো জানিয়েছেন, শেখ মুজিবরকে জেল থেকে শীঘ্রই ছেড়ে দেওয়া হবে এবং তাকে গৃহবন্দী ধরণে অন্তরীণ রাখা রাখা হবে। এখানে বিদেশি সংবাদদাতাদের জন্য আয়োজিত এক সংবর্ধনা-সভায় মিঃ ভুট্টো এ ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, মুজিব এখনও জেলে আছেন।’


ইতিহাসের নৃশংস্যতম বর্বরতা চালানোর পরও যুদ্ধবন্দী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে মানবিক আচরণের ধৃষ্ঠতা সেই সময়ের বিশ্বসম্প্রদায়কে বাঙালির মানবিক সত্ত্বার পরিচয় মেলে ধরে। পাক বন্দিরা কি কি সুবিধা পাবে-এ বিবরণও প্রকাশ করেছিল যুগান্তর।

বাঙালি কর্মচারীদের সঙ্গে বৈষম্য কতটা প্রকট ছিল তাও তুলে ধরেছিল দৈনিকটি। তাতে লেখা হয়, ‘ঢাকা পুলিশ লাইনস এর বাঙালি ডি এস পি শামসুর রহমান, ইনসপেক্টর আবদুর রশিদ চৌধুরী আমাকে বলেন যে, এই অবাঙালি পুলিশ কনস্টেবলরা কেউ বাঙালি অফিসারদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিলেন না। বাঙালি এসপি, এডিশনাল এসপি কেউ এদের কোথাও মোতায়েন করতে পারতেন না। বাঙালি পুলিশদের কম পয়সার রেশন দেওয়া হত। কিন্তু অবাঙালি পুলিশদের দেওয়া হত বিনামূল্যের রেশন। এছাড়া অবাঙালি পুলিশরা বাজারে ঢুকে প্রায়ই দাম না দিয়ে জিনিসপত্র নিয়ে চলে যেত। সেখানে কিছু করার ক্ষমতা বাঙালি পুলিশদের ছিল না।

পাকিস্তান পুলিশের আনুগত্য ছেড়ে কিভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পুলিশের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল তা জানিয়ে খবর বেরিয়েছিল। খবরে বলা হয়, ‘‘ঢাকা ডিআইজি আবুল কাদের শরকুদ্দিন, ডিআইজি সিআিইডি মেসবাউদ্দিন, এডিশনাল এসপি সেকান্দার আলি-এঁরা সকলেই তাদের পোশাকের কাঁধ থেকে ‘ইস্ট পাকিস্তান পুলিশ’ (ই পি পি) প্রতীক তুলে দিয়েছেন। প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন যে, তাঁরা এখন বাংলাদেশ পুলিশ। সেকান্দার আলির কাঁধে দেখলাম ‘বি পি’ লাগানো হয়েছে। অর্থাৎ ‘বেঙ্গল পুলিশ’ লাগানো হয়েছে। অবিভক্ত বাংলাদেশে পুলিশের চাকুরির সময় এটি লাগাতেন। এখন থেকে তিনি ‘বাংলাদেশ পুলিশ’ এর প্রতীক চিহ্ন হিসেবে এই ‘বি পি’ ব্যবহার করছেন।

এক পাকিস্তানি পুলিশ সদস্যকে ঘিরে হৃদয়স্পর্শী ঘটনা

খবরে বলা হয়, ‘অস্ত্র জমা নেওয়ার পর অবাঙালি পুলিশদের ‘যুদ্ধবন্দী’ হিসেবে ভারতীয় ও মুক্তিবাহিনীর সামরিক প্রহরায় ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় রাখা হবে। কিন্তু সীমান্ত প্রদেশের কোহাট জেলার বাস্তান খানকে নিয়ে অসুবিধা দেখা দিয়েছে। তাকে নিরস্ত্র করা হয়নি। সে খুব ভালো বাংলা বলতে পারে এবং বাঙালিদের সঙ্গে তাঁর অনেক দিনের বন্ধুত্ব। সে কোথায় যেতে চায়, সে জন্য তাকে মনস্থির করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।


ইউ এন আই এর বিবরণ

ঢাকা থেকে ইউ এন আই প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীল প্রায় এক লক্ষ অফিসার ও সৈন্য আজ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ভারতীয় কমান্ডারদের হাতে অস্ত্র সমর্পণ করেছে। উল্লেখযোগ্য, বাংলাদেশে নিযুক্ত পাক বাহিনীরে সেনাধ্যক্ষ এ এ কে নিয়াজি তিন দিন আগে নিজে আত্মসমর্পণ করেন এবং সমগ্র পাক বাহিনীকে আত্মসমর্পণ করার কথা বলেন।

বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘৃণ্য কারিগর ফরমান আলি

২০ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ যুগান্তরে প্রকাশিত সুখরঞ্জন সেনগুপ্তের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘আত্মসমর্পণের দিন পাকিস্তানি সৈন্যরা ঢাকার দুই শতাধিক বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করার ঘটনায় ঢাকা নগরী কাল থেকে বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে এবং শহরের রাস্তায় ইতস্তত অনেকগুলো মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। রাত্রে মাঝে মাঝে মেশিনগানের গুলির শব্দও কানে ভেসে আসে।’

সেই সময়ই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অনেকের নাম প্রকাশ করে দৈনিকটি। তাতে উল্লেখ করা হয়, ‘ঢাকার যে দুই শতাধিক বুদ্ধিজীবীকে নৃশংস্যভাবে হত্যা করা হয়েছে, তাদের মধ্যে আছেন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যক্ষ মুনীর চৌধুরী, ইত্তেফঅক পত্রিকার কার্যনির্বাহক সম্পাদক সিরাজউদ্দীন হোসেন, সংবাদ পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সার, পি পি আই’র নিজামউদ্দিন আহমদ, বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকার সংবাদদাতা সৈয়দ নাজমুল হক, সাপ্তাহিক ললনার মহম্মদ আখতার, অবজারভার পত্রিকার এস এ মান্নান, পূর্বদেশের গোলাম মোস্তফা, অধ্যাপক মোকাবুল হায়দার চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ডঃ আবুল খায়ের, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমদ, গণিতের অধ্যাপক সাদউদ্দিন, ড. মণিরুজ্জামান, ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডা. ফজলে রাব্বি, ডা. আলিম চৌধুরী প্রভৃতি।’

সামরিক অফিসার এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত,  তাদের কয়েকজনের নাম তাঁরা পেয়েছেন। সেগুলি তাঁরা দু’একদিনের মধ্যে প্রকাশ করবেন। ঐ লোকদের নিশ্চিহ্ন করা প্রয়োজন বলে মিত্রবাহিনীর এক মুখপাত্র মনে করেন।’

একজন বিভাগীয় সেক্রেটারি প্রতিবেদককে বলেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনীর মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি এই হত্যাকাণ্ডের নায়ক। ফরমান আলি, সেক্রেটারি পর্যায়ের কর্মকর্তাদের খুন করার পরিকল্পনা করে তাঁদের সবাইকে ১৪ ডিসেম্বর ক্যান্টনমেন্টে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা কেউ উপস্থিত হননি। সকলেই অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন। বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে ঢাকার অবাঙালি এলাকা রায়ের বাজারের কাছে জলঅ জমিতে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। নিহতের মধ্যে একজন মেয়ে আছেন, তাঁর চোখ উপড়ে নেওয়া হয়েছে। বেয়নেট দিয়ে তাঁর মুখ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তাঁর পরিচয় জানা যায়নি। অধিকাংশ মৃতদেহের বুকে, পেটে, মাথায় গুলি ও বেয়নেটের চিহ্ন।’

পাকিস্তানের ক্ষমতার পটপরিবর্তনের খবরও স্থান পেয়েছিল দৈনিকটির খবরে। ‘ইয়াহিয়া গেলেন, এবার প্রেসিডেন্ট ভুট্টো (সেই সঙ্গে চিফ মার্শাল ল’এডমিনিস্ট্রেটর)’ শীর্ষক খবরে জানা যায়, ‘পাকিস্তান পিপলস পার্টির সভাপতি জেড এ ভুট্টো আজ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক প্রশাসকরূপে কার্যভার গ্রহণ করেছেন বলে পাক বেতারে ঘোষণা করা হয়। ১৩ বছর পরে একজন অসামরিক ব্যক্তি পাকিস্তানের প্রশাসক হলেন। ভারতের কাছে পাকিস্তানের অপমানজনক পরাজয়ের দরুণ জেনারেল ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে দেশব্যাপি বিক্ষোভে ফেটে পড়ায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া গকাল প্রতিনিধিত্বমূলক একটি সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের এবং পদত্যাগের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার জরুরি আহ্বানে মিঃ ভুট্টো বিদেশ থেকে ইসলামাবাদে পৌছানোর অল্পক্ষণ পরই জেনারেল ইয়াহিয়া তাঁর হাতে ক্ষমতা অর্পণ করেন।’

‘আজ রাতে প্রেসিডেন্ট জেড এ ভুট্টো ঘোষণা করেছেন যে, জেনারেল ইয়াহিয়া খান এবং তাঁর সামরিক চক্রের অপর কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি অবসর গ্রহণ করেছেন। তিনি আরও বলেছেন যে, লেঃ জেনারেল গুলহাসান খাঁ সেনাবাহিনীর অধ্যক্ষ হয়েছেন। পাকিস্তানের প্রধান সামরিক প্রশাসকরূপে শপথগ্রহণের পরই জেড এ ভুট্টো উচ্চ পদস্থ অসামরিক ও সামরিক অফিসারদের সঙ্গে বৈঠবে বসেন বলে পাকিস্তান রেডিওর সংবাদে প্রকাশ।’

প্রথম ভাষণেই ভারতের বিরুদ্ধে বদলা নেওয়ার হুক্কার ভুট্টোর

দিল্লি থেকে বার্তা সংস্থা পি টি আই ও ইউ এন আই এর বরাতে এক প্রতিবেদনে যুগান্তর জানায়, ‘নয়া পাক প্রেসিডেন্ট মিঃ জেড এ ভুট্টো আজ রাত্রে তাঁর বেতার ভাষণে বলেছেন, বাংলাদেশ পাকিস্তানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। দেশবাসীর কাছে তাঁর আবেদন, ‘আমাকে কিছু সময় দিতে হবে।’

ফরমান আলি ও নিয়াজি ফোর্ট উইলিয়ামে?

আরেক খবরে প্রকাশ, পাক হানাদার বাহিনীর দুই সেনা কর্তা নিয়াজি আর ফরমান আলিকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের সদর দপ্তর ফোর্ট উইলিয়াম-এ নেওয়ার খবরও জানায় দৈনিকটি।

তাতে উল্লেখ করা হয়, ‘সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্রকে এই প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। এ দিকে এ দিন বিশেষ বিমানে করে দমদম বিমানঘাটিতে আনা হয়েছিল বলে আমাদের রিপোর্টার মনে করেছেন। তবে ঐ রিপোর্টারকে কাছে যেতে দেওয়া হয়নি। ভারতীয় সেনারা কিছুক্ষণের মধ্যেই এই দুই যুদ্ধবন্দীকে হেলিকপ্টারে করে এক অজ্ঞাত স্থানে পাঠিয়ে দিয়েছেন।’

‘রিপোর্টার দূর থেকে অনুমান করেছেনঃ এদের মধ্যে একজন পাক জেনারেল নিয়াজি ও অন্যজন মেজর জেনারেল ফরমান আলি। যুগান্তরের কাছে অবশ্য খবর আছে যে, নিয়াজি ও ফরমান আলিকে ফোর্ট উইলিয়ামে রাখা হয়েছে।’

   

সাংবাদিকের ফেসবুকে পোস্ট: মিললো আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর, ইজিবাইক



রাকিবুল ইসলাম রাকিব, বার্তা২৪.কম, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) করেসপন্ডেন্ট
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

৭৭ বছরের বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানের স্ট্রোক হয়েছে একাধিকবার। এই বয়সে যখন তার বিছানায় শুয়ে-বসে বিশ্রাম করার কথা, তখন তাকে একটি রিকশার প্যাডেল মেরে অবিরাম ছুটে চলতে হয় ঢাকার রাস্তা-ঘাটে।

দিন শেষে যা আয় হয়, তার একটা অংশ নিজের জন্য রেখে, বাকিটা পাঠাতেন গ্রামে থাকা বৃদ্ধ স্ত্রীর কাছে। জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় এসে এভাবেই চলছিল তার দিনকাল।

হাবিবুরের ইচ্ছে ছিল, শেষ বয়সের সময়টা তিনি শহর ছেড়ে গ্রামে থাকা স্ত্রীর সঙ্গে কাটাবেন। কিন্ত সেখানে থাকার মতো ঘর ও জীবিকার নিশ্চয়তা না থাকায় বাধ্য হয়েই ঢাকায় রিকশা চালাতে হতো তাকে।

হাবিবুরের দুরবস্থার খবর জানার পর সে বিষয়ে ঢাকায় কর্মরত সাংবাদিক জ. ই. মামুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন।

সে পোস্টটি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেনের দৃষ্টিগোচর হয়। এরপর তার উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর উপহারের সুখবর পান হাবিবুর। পাশাপাশি হাবিবুরের কর্মসংস্থানের জন্য ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী তাকে একটি ইজিবাইক উপহার দেন।

এতে করে গ্রামের ফেরার ইচ্ছা ও গ্রামেই কর্মসংস্থানের সুযোগ মিলেছে এই অসহায় বৃদ্ধের।

হাবিবুর রহমানের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের সহনাটি ইউনিয়নে সোনাকান্দি গ্রামে।

বৃহস্পতিবার (২ মে) বিকেলে গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাকিল আহমেদ উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে জেলা প্রশাসকের দেওয়া উপহারের ইজিবাইকের চাবি হাবিবুর রহমানের হাতে তুলে দেন। পাশাপাশি সোনাকান্দি গ্রামে এই বৃদ্ধের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ কাজও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, বাবার মৃত্যুর পর জীবিকার তাগিদে ১৯৬৯ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে ঢাকায় এসে রিকশা চালানো শুরু করেন হাবিবুর রহমান। সংসারে তার স্ত্রী ও চার মেয়ে রয়েছে। মেয়েদের সবাই গরিব ঘরে বিয়ে হওয়ায় বাবাকে দেখার সামর্থ্য নেই তাদের। স্ত্রী থাকেন গ্রামের বাড়িতে। সেখানে মাত্র আধা শতাংশ ভিটে ছাড়া আর কিছু নেই হাবিবুর রহমানের। সে কারণে বাধ্য হয়েই ঢাকায় রিকশা চালাতেন তিনি। ঢাকায় মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় রাত্রিযাপন করতেন রাস্তায় রাস্তায়।

এদিকে, রিকশাচালক হাবিবুর রহমানের দুরবস্থা নিয়ে গত ২৫ এপ্রিল সাংবাদিক জ.ই. মামুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। পোস্টটি নজরে আসে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেনের। এরপরই নির্দেশনা আসে হাবিবুরকে তার এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার।

ওপর থেকে নির্দেশনা আসার পর গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাকিল আহমেদ সোনাকান্দি গ্রামে গিয়ে হাবিবুর রহমানের বাড়ি পরিদর্শনে করে দেখেন, তার মাত্র আধা শতাংশ জমি রয়েছে। এটুকু জমিতে ঘর নির্মাণ করা সম্ভব না হওয়ায় বিপত্তি বাধে। এ সময় হাবিবুর রহমানের জমির পাশেই দুই শতাংশ জমি দানের ঘোষণা দেন সহনাটি ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. দুলাল আহমেদ। ইতোমধ্যে, জমির দলিল সম্পাদন হয়ে গেছে। শিগগিরই ঘরের নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

হাবিবুর রহমান বলেন, সারাজীবন কষ্ট করেছি। আধা শতাংশ ভিটে ছাড়া নিজের আর কিছুই ছিল না আমার। সাংবাদিক মামুন ভাইয়ের লেখালেখির কল্যাণে এখন বাড়ি ও একটি ইজিবাইক হয়েছে। এখন স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আমার দিন ‘রাজার হালে’ কাটবে। আমি অনেক আনন্দিত ও খুশি। সেইসঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাসহ যারা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাকিল আহমেদ বলেন, বৃদ্ধ বয়সে হাবিবুর রহমানের রিকশা চালানো নিয়ে বিশিষ্ট সাংবাদিক জ.ই. মামুনের একটি পোস্ট প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মহোদয়ের দৃষ্টিগোচর হয়। তার প্রেক্ষাপটে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে হাবিবুরকে নিজ গ্রামে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তার কর্মসংস্থানের জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয় একটি ইজিবাইক উপহার দিয়েছেন। এছাড়াও হাবিবুর ও তার স্ত্রীকে বয়স্ক ভাতা দেওয়ারও উদ্যোগ নে্ওয়া হয়েছে।

 

;

টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম: রসে সেরা, স্বাদে সেরা!



আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, টাঙ্গাইল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

চমচমের কথা শুনলে কার না জিভে জল আসে! তারপরে যদি হয় সেই টাঙ্গাইলের চমচম! তাহলে তো কথাই নেই! ছোট-বড় সব বয়েসি মানুষের পছন্দের তালিকায় থাকে- টাঙ্গাইলের চমচম।

কথায় আছে, ‘চমচম, টমটম ও শাড়ি, এই তিনে টাঙ্গাইলের বাড়ি।’

টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচমের কথা তো সবারই জানা। কেবল নামেই নয়, আকৃতি আর স্বাদ-গন্ধেও এই মিষ্টি সেরাদের সেরা। ঐতিহ্য আর বাংলার লোক-সংস্কৃতির ইতিহাসের উত্তরাধিকার টাঙ্গাইল জেলা। জানা যায়, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচমের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আনুমানিক প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো ইতিহাস।

ইতিহাস বলছে, দশরথ গৌড় নামে এক ব্যক্তি ব্রিটিশ আমলে আসাম থেকে টাঙ্গাইলের যমুনা নদীর তীরবর্তী সদর উপজেলার পোড়াবাড়িতে আসেন। তিনি যমুনার পানি ও গরুর দুধ দিয়ে প্রথমে চমচম তৈরি শুরু করেন। পরে সেখানেই মিষ্টির ব্যবসা শুরু করেন তিনি। ধীরে ধীরে পোড়াবাড়িতে প্রায় অর্ধশত চমচম তৈরির কারখানা গড়ে ওঠে। এখন পোড়াবাড়ির সে জৌলুস আর নেই।

বর্তমানে ‘টাঙ্গাইল মিষ্টিপট্টি’ হিসেবে খ্যাতি পাওয়া শহরের পাচঁআনি বাজরের মিষ্টির দোকানগুলোতেও চমচম তৈরি ও বিক্রি হচ্ছে। এখানকার প্রতিটি মিষ্টির দোকানেই এখন নির্ভেজাল পোড়াবাড়ির চমচম পাওয়া যায়।

টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চম চম, স্বাদে সেরা, মানে সেরা, ছবি-বার্তা২৪.কম

এই পাঁচআনি বাজারে প্রায় অর্ধশত মিষ্টির দোকান রয়েছে। শহরের বিভিন্ন স্থানেই এখন গড়ে উঠেছে, চমচমের দোকান। চমচমের গড়ন অনেকটা লম্বাটে। হালকা আঁচে পোড় খাওয়া বলে রঙটা তার গাঢ় বাদামি। বাইরে থেকে দেখতে অনেকটা পোড়া ইটের মতো। বাইরেটা একটু শক্ত হলেও এর ভেতরের অংশ একেবারে নরম আর রসে টইটম্বুর। লালচে গোলাপি আভাযুক্ত ভেতরের নরম অংশের প্রতিটি কোষ কড়া মিষ্টিতে পূর্ণ। ঘন রস আর টাটকা ছানার গন্ধমাখা এ মিষ্টির স্বাদ অতুলনীয়। সুস্বাদু চমচম তৈরির মূল উপাদান দুধ, চিনি, পানি, সামান্য ময়দা ও এলাচ দানা।

বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশে এই পোড়াবাড়ির মিষ্টির সুনাম রয়েছে। বড় বড় মিষ্টির দোকানগুলোতে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ থেকে ১০ মণ চমচম তৈরি হয়। বর্তমানে মিষ্টি শিল্পে টাঙ্গাইলের ঘোষ ও পাল সম্প্রদায় বংশানুক্রমিকভাবে নিয়োজিত আছে। তবে দে, নাগ ইত্যাদি উপাধিধারী অনেকেও মিষ্টান্ন তৈরিতে নিয়োজিত হয়েছেন।

টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের ভৌগলিক নিদের্শক ইউনিট ভৌগলিক নিদের্শক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন-২০১৩ অনুয়ায়ী, চলতি বছরের (৯ জানুয়ারি) টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচমকে জিআই (জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এ স্বীকৃতি পাওয়ায় খুশি চমচম ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিন দেখা যায়, এই সুস্বাদু চমচম তৈরির কাজে জড়িত শত শত কারিগর কাজ করছেন। আগুনের তাপে তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে জ্বাল হচ্ছে চমচমের। নিজেদের তৈরি চমচম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় কারিগররাও খুশি।

বর্তমানে চমচম বিক্রি হচ্ছে, মান ভেদে তিনশ থেকে চারশ টাকা কেজি দরে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা লোকজন ছুটে আসেন মিষ্টির দোকানগুলোতে ঐতিহ্যবাহী চমচমের স্বাদ নিতে।

মিষ্টি কিনতে আসা সাগর বার্তা২৪.কমকে বলেন, টাঙ্গাইলের মিষ্টি আমাদের ঐতিহ্য ও আমাদের গর্বের। টাঙ্গাইলের পাঁচআনি বাজারে আসলে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের জন্য মিষ্টি কিনে নিয়ে যাই। ছোট বড় সবাই টাঙ্গাইলের মিষ্টি পছন্দ করেন।

মিষ্টি কিনতে আসা আরেকজন হরিপদ সরকার বলেন, টাঙ্গাইলের মিষ্টির সুনাম শুধু দেশেই নয়, সারাবিশ্বে ছড়িয়ে গেছে। আমি যেমন টাঙ্গাইলের মিষ্টির জন্য এসেছি, আমার মতো অনেকেই টাঙ্গাইলের মিষ্টি নিতে এসেছেন। এই মিষ্টির স্বাদ অন্যরকম! না-খেলে বোঝা যাবে না।

মিষ্টি ব্যবসায়ী গৌরাঙ্গ কর্মকার বলেন, আমাদের টাঙ্গাইলের ঐতিহ্য পোড়াবাড়ির চমচম। প্রায় দুইশ বছর আগে থেকেই টাঙ্গাইলে পোড়াবাড়ির মিষ্টি তৈরি হয়ে থাকে। টাঙ্গাইলের মিষ্টির সুনাম দেশ ও দেশের বাইরে রয়েছে। আমাদের পোড়াবাড়ির চমচমে ভেজাল কোনো কিছু যুক্ত করা হয় না। চমচম স্বাদ হওয়ার কারণ খাঁটি দুধ, ছানা ও ময়দা দিয়ে পোড়াবাড়ির চমচম তৈরি করা হয়। এজন্য এত স্বাদ! প্রতিদিন দোকানগুলিতে ৫ থেকে ১০ মণ মিষ্টি তৈরি করা হয়।

টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম তৈরিতে ব্যস্ত কারিগরেরা, ছবি- বার্তা২৪.কম 

মিষ্টি ব্যবসায়ী কালাচাঁদ বলেন, আমি ৪০-৪৫ বছর ধরে মিষ্টি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

তিনি বলেন, টাঙ্গাইলের মিষ্টি স্বীকৃতি পাওয়ায় আমাদের জন্য ভালো হয়েছে। মিষ্টির স্বীকৃতি পাওয়ায় আমাদের সুনাম সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। আমাদের মিষ্টি দেশের বাইরে পাঠাতে পারবো। আমাদের মিষ্টি চাহিদা আরো বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে আমাদের আগ্রহও বেড়ে যাবে।

সরকারের কাছে দাবি, বিদেশে এই মিষ্টি রফতানি করার ব্যবস্থা করলে আমাদের বিক্রি আরোও বাড়বে। তখন আমরা আরো বেশি বেশি মিষ্টি তৈরি করতে পারবো।

টাঙ্গাইল জেলা রেস্তোরাঁ ও মিষ্টি ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি স্বপন ঘোষ বলেন, সারাদেশে এই পোড়াবাড়ির মিষ্টির সুনাম রয়েছে। জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা মিষ্টি ব্যবসায়ীরা অনেক খুশি। এই মিষ্টি যদি বিদেশে রফতানি করা যায়, তাহলে আমাদের ব্যবসা আরো প্রসার পাবে।

তিনি বলেন, আমার বাবা মিষ্টির ব্যবসা শুরু করেন। বাবার হাত ধরেই মিষ্টির ব্যবসায় আসা। আমি করছি। আমার ছেলেও এই পেশায় আছে। পোড়াবাড়ির চমচমের ইতিহাস প্রায় দুইশ বছরের। টাঙ্গাইলের চমচম সুস্বাদু হওয়ার একটা কারণ হচ্ছে, গাভির দুধ চরাঞ্চল থেকে আসে। এখানকার দুধ অনেক ভালো হয় আর জলেরও একটা বিষয় আছে! দুধ, জল ও কারিগরের সমন্বয়েই এই মিষ্টির স্বাদ হয় অন্যরকম। মিষ্টিগুলো খুবই প্রাকৃতিক। এই মিষ্টি তৈরিতে কোনো ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না।

;

আধুনিকতার ছোঁয়ায় কমেছে শ্রমিকের কদর, কমেছে আয়

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’



অভিজিত রায় কৌশিক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
আধুনিকতার ছোঁয়ায় কমেছে শ্রমিকের কদর, কমেছে আয়/ছবি: নূর এ আলম

আধুনিকতার ছোঁয়ায় কমেছে শ্রমিকের কদর, কমেছে আয়/ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও কৃষি কাজে ও কলকারখানায় ব্যবহৃত হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। প্রযুক্তি ছোঁয়া বিভিন্ন সেক্টরে আমুল পরিবর্তন ঘটেছে। তবে পরিবর্তন হয়নি শ্রমজীবী মানুষের জীবনমানে। বরং কর্মক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহারে কমছে তাদের কাজের সংকুলান। কমেছে আয়-রোজগারও।

রাজধানীর গাবতলী ও আমিনবাজার সংলগ্ন তুরাগ নদী। এই নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে বালি ও কয়লা ভিত্তিক ব্যবসা। এক সময়ের জনপ্রিয় ও বহু লোকের কর্মসংস্থানের এই ব্যবসাতেও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। মানুষের পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে উন্নত প্রযুক্তির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। বালু লোডিং-আনলোডিং-এ যান্ত্রিকীকরণের কারণে কাজ হারিয়েছেন শ্রমিক। ফলে কমেছে শ্রমজীবী মানুষের কদর; প্রসার ঘটেছে উন্নত যন্ত্রাংশের।

কুমিল্লার বাসিন্দা মো. হান্নান। দীর্ঘদিন ধরে গাবতলীতে বালু ও কয়লা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। হান্নান জানালেন আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার তার উপার্জনের প্রভাব ফেলেছে।

যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ায় বেড়েছে শ্রমিকের কদ/ছবি: নূর এ আলম


এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘চার বছর এখানে এই কাজ করি। আগে ভালই ইনকাম হতো। এখন আর সেরকম ইনকাম হয় না। আগে এতো মেশিন ছিলো না সব কাজ আমরা করতাম। আর এখন সব মেশিনে করা হয়। শুধু যেগুলো মেশিন দিয়ে করা যায় না সেগুলো আমরা করি।’

তিনি আরও যোগ করেন, তাছাড়া আগে শ্রমিক কম ছিল। তখন মেশিনও ছিলো না। শ্রমিকদের চাহিদা ছিলো। কিন্তু এখন শ্রমিক বেশি, মেশিনও এসেছে। এক মেশিনে অনেক কাজ হয়; তাই চাহিদা কম। ইনকামও কম।

‘আগে দৈনিক দিন ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা ইনকাম করতে পারতাম। আর এখন সারাদিন কষ্ট করে কোন দিন ৫০০ কোন দিন ৬০০ টাকা ইনকাম করি। আবার কোন কোনদিন এর থেকে কমও ইনকাম হয়।’- বলেন এই শ্রমিক।

পাবনার বেড়ার কামরুজ্জামান ২০০৮ সালে ঢাকায় আসেন। টানা ১৬ বছর ধরে গাবতলী বালু ও কয়লার ঘাটে খালাসি শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন।

কঠোর পরিশ্রমের পর দিনশেষে যে মজুরি পান তা দিয়ে কোন রকমে চলে তাদের সংসার/ছবি: নূর এ আলম

‘এক একটা টালি মেরে ২ টাকা ৪ আনা হিসেবে টাকা পাই। এখন যন্ত্র আসাতে লেবারের কোন কাজ কাম নেই। সব মাল এখন মেশিনে ওঠায়। এজন্য লেবারের কাজ কমে গেছে। টালির এখন আর রেট নেই। কাজ না করেও উপায় নেই কি করবো? ঢাকা শহরে আছি কাম না করলে চলবো ক্যামনে।’- বলেন কামরুজ্জামান।

তিনি বলেন, এখন দিনে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা ইনকাম করতে পারি। আগে ভালোই ইনকাম হতো। কিন্তু এখন ৫০০ টাকা ইনকাম করতেই কষ্ট হয়ে যায়। হবে না আগে যেখানে একটি বাল্কহেড থেকে বালু খালাস করতে ১৫০ জন শ্রমিকের দুই দিন সময় লাগতো। সেখানে শুধুমাত্র একজন ক্রেন অপারেটর এবং চার-পাঁচজন শ্রমিক কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই করে ফেলে।’

মেহনতি এই মানুষটার কাছে শ্রমিক দিবস সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, আমাদের সব দিবসই সমান। কাম করলে টাকা, না করলে কোন টাকা নাই। এই জন্য আমাগো কোন ছুটির দিনও নেই। কাম করাই লাগে। এমনও মানুষ আছে ঘুম থেকে উঠে ভোরে কামে আসে। কাম না করলে সংসারই চলে না।

মূল্যস্ফীতি এখন লাগামহীন অবস্থায় আছে বলে মনে করে দেশের অন্যতম বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাচ্ছে। জিনিসপত্রের বাড়তি দাম মানুষের ওপর বোঝা হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় শ্রমজীবী মানুষের জীবন ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

তীব্র রোদ ও গরমে মাথায় করে বালু টানছে শ্রমিকরা/ছবি: নূর এ আলম


তীব্র রোদ ও গরমে মাথায় করে বালু টানছে নাজমা বেগম। তার ও স্বামীর উপার্জনে কোন রকমে সংসার চলে নাজমার।

এই নারী শ্রমিক বলেন, ‘এই গরমে কাজ করা যায় না। সারাদিন কাজ করলেও খুব বেশি ইনকাম হয় না। জিনিসের যা দাম বেড়েছে তাতে। এই ইনকামের টাকায় পরিবার চালানো অনেক কষ্টের। তাই আপনাগো ভাই সারাদিন রিকশা চালায় আর আমি এই কয়লা-বালি টানার কাজ করি।’

আগের মতো আয় নেই জানিয়ে শ্রমজীবী এই নারী বলেন, ‘আগেতো ভালই ইনকাম করতাম। কিন্তু এখন আর পারি না। এখন বেশিরভাগ মালিক মেশিন দিয়ে মালামাল নামায় তাই আমাদের লাগে না। আর সেভাবে ইনকামও হয় না। এখন কোন দিন ৩০০ টাকা, কোন দিন ৪০০ টাকা ইনকাম করি।’

এ বিষয়ে শ্রমিক নেতা ও ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের সদস্য সিরাজুল ইসলাম রনি বার্তা২৪.কম বলেন, ‘বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি, সে হারে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়েনি। সব সেক্টরে ন্যূনতম মজুরি অনুযায়ী বেতন-ভাতা না দিলে শ্রমিক বাঁচবে না। বিশেষ করে দিনমজুরদের অবস্থা করুণ। তাদের শ্রমের দামের বিষয়টি নিয়ে কেউ ভাবে না।’

;

দাবদাহে দিনমজুররা বঞ্চিত শ্রম অধিকার থেকে

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’



সাদিকুর রহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
দাবদাহে দিনমজুররা, ছবি: নূর এ আলম

দাবদাহে দিনমজুররা, ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকার আমিন বাজার ল্যান্ডিং স্টেশনের কাছে তুরাগ নদীর তীরে নোঙর করা বালু‌ বহনকারী চারটি লোহার তৈরি বাল্কহেড মধ্যাহ্নের প্রখর রোদে উত্তপ্ত হয়ে আছে। এগুলোর উপর দিয়ে হেঁটে প্রায় ১০০ জন পুরুষ ও নারী শ্রমিক দলবেঁধে মাথায় করে প্রত্যেকে প্রায় ২৫ কেজি ওজনের ভেজা বালু বাঁশের তৈরি টুকরিতে বহন করে নিয়ে নদীর তীরে একটি নির্ধারিত স্থানে ফেলছেন। আশ্চর্যের বিষয়, এত পরিশ্রম করেও তাদের মুখ ও‌ শরীর ঘামে ভেজেনি।

“অতিরিক্ত গরমে আমাদের ঘাম বাষ্প হয়ে গেছে,” বলেন ৫৮ বছর বয়সী আব্দুল খালেক। তিনি দুই দশক আগে নেত্রকোনা জেলা থেকে ঢাকায় এসে দিনমজুর হয়েছিলেন।

প্রখর রোদে পরিশ্রম করেও শ্রমিকদের মুখ ও‌ শরীর ঘামে ভেজেনি/ছবি: নূর এ আলম


গরমে হাঁপিয়ে ওঠা শ্রমিকরা কাজের ফাঁকে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিচ্ছেন। কেউ কেউ নিকটস্থ এক মসজিদ থেকে আনা বোতলে ভরা পানি‌তে চুমুক দিচ্ছেন।

গত কয়েক বছরের মতো, ২০২৪ এর গ্রীষ্মকাল এমন দিনমজুরদের কাছে এক প্রকার জুলুম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তারা তাপপ্রবাহ মোকাবেলা করতে হিমশিম খাচ্ছেন। কিন্তু বেশিদিন কর্মহীন হয়ে বাড়িতে বসেও থাকতে পারছেন না। তারা যে বালু খালাস করেন, তার বাজারমূল্য বাড়লেও তাদের মজুরি বাড়েনি‌। এমনকি অপ্রাতিষ্ঠানিক দিনমজুর হওয়ায় তাদের কোন শ্রম অধিকারও নেই।

“ঈদের ছুটি শেষে এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহেই বেশির ভাগ কর্মচারী ঢাকায় ফিরেছেন। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে সোমবার (২৯ এপ্রিল) সকালে আমিন বাজারে বালু খালাস শুরু হয়। গরম আবহাওয়ার মধ্যে শ্রমিকরা আসেনি,” বললেন শ্রমিকদের সর্দার (আসলে বালুর ঠিকাদারের ম্যানেজার) মশিউর রহমান।

গ্রীষ্মকাল যেন দিনমজুরদের কাছে এক প্রকার জুলুম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে/ছবি: নূর এ আলম


সাধারণত এক বাল্কহেড থেকে সাড়ে নয়শো স্কয়ার ফুট বালু নামাতে ১৫০ জন শ্রমিক দুই দিন সময় নেন, অথচ মশিউর পেয়েছেন প্রয়োজনের এক- চতুর্থাংশ লোকবল।

মশিউরের কথায় মনে পড়ল আমেরিকার ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণার বার্তা। গবেষণায় বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতি বছর বাংলাদেশের মানুষ ৭ বিলিয়ন কর্মঘণ্টা হারাচ্ছে। চরম তাপপ্রবাহে মানুষের, বিশেষ করে যারা দিনের বেলায় খোলা আকাশের নিচে কাজ করেন, তাদের কাজের ক্ষমতা কমে যায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী কর্মঘণ্টার ২.২ শতাংশ বা ৮০ মিলিয়ন নিয়মিত চাকরি ফুরিয়ে যাবে‌ শুধুমাত্র বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে।

এক নারী শ্রমিক মাথায় করে ভেজা বালু বাঁশের টুকরিতে করে  নদীর তীরে একটি নির্ধারিত স্থানে নিচ্ছেন/ছবি: নূর এ আলম


ভূতাত্ত্বিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ চরম তাপপ্রবাহের ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ুতে এমনিতেই এখানকার তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা বেশি থাকে।‌ এরপর যদি বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ে তবে অবধারিত ভাবে তাপপ্রবাহ সংক্রান্ত ক্ষতিকর প্রভাব বাড়বে।

২০১৯ সালে আইএলও জানিয়েছিল, ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে তাপপ্রবাহে বাংলাদেশ মোট কর্মঘণ্টার ৪.৮৪ শতাংশ হারাবে।

কম মজুরির কর্মই যাদের নিয়তি

জামালপুর থেকে আসা চল্লিশ বছর বয়সী নার্গিস বেগম ১২ বছর আগে আমিন বাজারে খালাসি শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। সে সময় তাকে ১০ টুকরি বালু খালাসের জন্য ১০ টাকা দেওয়া হত। বর্তমানে সাত টুকরি বালু খালাসের জন্য তিনি একই পরিমাণ মজুরি পেয়ে থাকেন। ১২ বছরে এই পার্থক্য খুবই নগণ্য। অন্যদিকে বালুর দাম বেড়েছে বহুগুণ।

“এক ট্রাক ভর্তি সাদা বালুর (নদী খননে প্রাপ্ত পলি) দাম ছিল ২ হাজার টাকা, যা এখন ৫ হাজার টাকা। গত ১০ বছরে সিলেটের লাল বালুর দাম ৫ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ১৪ হাজার টাকা হয়েছে,” বলেন শ্রমিক সর্দার মশিউর।

বালুর দাম বেড়েছে বহুগুণ, তবে শ্রমিকের মজুরি বাড়েনি/ছবি: নূর এ আলম


তাহলে শ্রমিকদের মজুরি কেন বাড়েনি, তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বালুর বাজার এখন অনেক। অনেক ব্যবসায়ী এ কাজে যুক্ত হয়েছেন। ফলে আমিন বাজারের মহাজনদের (যারা শ্রমিকদের মজুরি দেন) আয় কমে গেছে। যদি তারা ভাল উপার্জন করত তবে শ্রমিকদের ভাল মজুরি দেওয়া হত”; মশিউর তার মহাজনের পক্ষ নিলেন।

লোডিং-আনলোডিং সেক্টরে যান্ত্রিকীকরণেও শ্রমিকদের মজুরি বাড়েনি। এমনকি অনেক শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন।

আমরা যখন শ্রমিকদের সাথে কথা বলছিলাম, তখন আমিন বাজার ল্যান্ডিং স্টেশনে অন্তত পাঁচটি বেসরকারি ক্রেন দেখা গেছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল দুই।

“একটি বাল্কহেড থেকে বালু খালাস করতে ১৫০ জন শ্রমিকের দুই দিন সময় লাগতো। সেখানে শুধুমাত্র একজন ক্রেন অপারেটর এবং চার-পাঁচজন শ্রমিক পাঁচ ঘণ্টায় একই কাজ করতে পারে”; শ্রমিক খালেক ব্যাখ্যা দিলেন যন্ত্রায়ন কীভাবে তাদের জীবিকার উপর প্রভাব ফেলছে।

অসহনীয় আবহাওয়া এবং ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ অনেক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, খালেকের মতো শ্রমিকরা শুধুমাত্র তাদের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য এই কাজটি চালিয়ে যাচ্ছেন।

তুরাগের তীরে কয়লার স্তুপ/ছবি: নূর এ আলম


খালেকের স্ত্রী একজন ঠিকা গৃহকর্মী এবং একমাত্র ছেলে মোসলেম উদ্দিন একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। কিন্তু তাদের মজুরি পারিবারিক চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট নয়।

শ্রমনীতি বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে বেশ কিছু পরিকল্পনা এবং নীতি আছে, যেমন জাতীয় পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য নীতি, যেগুলো শ্রমিকের স্বাস্থ্য রক্ষার লক্ষ্যে প্রণীত হয়েছিল। বিশেষ করে, ন্যাশনাল অ্যাডাপ্টেশন প্রোগ্রাম অব অ্যাকশন এ শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকিকে স্বীকৃতি দেয়া আছে। কারণ, তাপপ্রবাহে মৃত্যুহার বৃদ্ধি বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব থেকে শ্রমিকরা যাতে সুরক্ষিত থাকে তা নিশ্চিত করতে কী করতে হবে তা পরিষ্কার নয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের পরিচালক কোহিনুর মাহমুদ বলেন, দিনমজুরদের নিয়োগকর্তাদের উচিত তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা, যাতে তারা তাপপ্রবাহের ঝুঁকি মোকাবিলা করতে পারেন।

"দুর্ভাগ্যবশত, নিয়োগকর্তাদের ওপর কোন আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। কারণ, বালু খালাসিদের মতো অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের কোন শ্রম অধিকার নেই”, কোহিনুর বলেন।

তিনি শ্রমিকদের নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন।

;