বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা চুল রাখার জন্য ভারতের উত্তরপ্রদেশের নাগরিক স্মিতা শ্রীবাস্তব (৪৬) গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করেছেন। ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি এমন খবর প্রকাশ করেছে।
গণমাধ্যমটি প্রতিবেদনে জানায়, স্মিতা ১৪ বছর বয়স থেকে তার চুল কাটা থেকে বিরত রয়েছেন। এখন তার চুলের দৈর্ঘ্য ৭ ফুট ৯ ইঞ্চি। তিনি ১৯৮০-এর দশকে হিন্দি অভিনেত্রীদের দ্বারা আইকনিক লম্বা চুলের স্টাইলে অনুপ্রাণিত হয়ে চুল বড় রাখার সিদ্ধান্ত নেন। যা তাকে এখন রেকর্ড বইয়ে স্থান করে দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
স্মিতা বলেন, ভারতীয় সংস্কৃতিতে, দেবীদের ঐতিহ্যগতভাবে খুব লম্বা চুল ছিল। আমাদের সমাজে চুল কাটা অশুভ বলে মনে করা হয়, তাই নারীরা চুল কাটতেন না। আর তাছাড়াও লম্বা চুল মহিলাদের সৌন্দর্য বাড়ায়।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুসারে, স্মিতা সাধারণত প্রতি সপ্তাহে দুবার চুল ধুয়ে ফেলেন। ধোয়া, শুকানো, ডিট্যাংলিং এবং স্টাইলিংসহ পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে প্রতিবার তিন ঘণ্টা পর্যন্ত সময় নেন। তিনি এটি ধোয়ার জন্য ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট ব্যয় করেন। তারপর সোজা করার জন্য তার হাত ব্যবহার করার আগে একটি তোয়ালে দিয়ে শুকিয়ে নেন, যা করতে সাধারণত দুই ঘণ্টা সময় লাগে।
বিজ্ঞাপন
স্মিতা আরও বলেন,আমি যখনই চুল ছেড়ে বাইরে বের হই তখন আশেপাশের মানুষ "আশ্চর্য" হয়ে যায়। চুল এত লম্বা করা কঠিন বলে মনে করেন তারা। এবং তার বছরের পর বছর ধরে চুল না কাটার বিষয়টি সবাই অবিশ্বাস করেন।
৪৬ বছরের এই নারী জানান, আমার চুল দেখার পর সবাই কাছে এসে চুলে হাত স্পর্শ করে, অনেকে সেলফি তোলে এবং আমি যে পণ্যগুলো ব্যবহার করি সে সম্পর্কে জানতে চায়। আমি তাদের সে সম্পর্কে বলি এবং তারাও সেসব পণ্য ব্যবহার করার অভিপ্রায় প্রকাশ করেন।
স্মিতা এখন এই গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস খেতাব অর্জন করতে পেরে আনন্দিত, তিনি বলেন, ঈশ্বর আমার প্রার্থনার উত্তর দিয়েছেন।
শববাহী গাড়িটির ভেতরে স্ট্রেচারে শোয়ানো সাদা কাপাড়ে মোড়ানো এক তরুণীর দেহ। সেই নিরব-নিথর-নিস্তব্দ দেহ জড়িয়ে আছেন এক তরুণ। কখনো দেহটিকে বুকে আগলে রাখছেন, কখনো আবার কপালে এঁকে দিচ্ছেন স্নেহের চুম্বন। তরুণের মুখে ক্লান্তি, বিষণ্ণতার ছাপ। একটু পর পর ওই তরুণীর শরীর ভিজে যাচ্ছিল তরুণের চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়া জলে। আবহে বাজছে সেই মন খারাপের সুর, ‘এত রঙিন, এত কাপড়, কিছুই ভালো লাগে না মোর! সাদা কাপড় আমায় পরাই দে, সজনী তোরা..সাজিয়ে গুঁজিয়ে, দে মোরে…!’
অন্তর্জালে ছড়িয়ে পড়া ১৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিওর দৃশ্য এটি। চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে পড়া ওই তরুণীর নাম পিউলি নন্দী। হাসপাতাল থেকে তার মরদেহবাহী গাড়িতে তোলা হয়েছে, একটু পরেই শেষবারের মতো ফিরে যাবেন বাড়িতে। গাড়িটির দু’পাশে সব বয়সের মানুষ দাঁড়িয়ে। অঝোরে কাঁদছেন অনেকেই। তখন ওই তরুণীর স্বামী অনিমেষ চৌধুরী গাড়িতে ওঠে জড়িয়ে ধরেন প্রিয়তমা স্ত্রীকে।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) ছিল অনিমেষ-পিউলি দম্পত্তির বিয়ের দশমাস-পূর্তি। দিনটি ঘিরে ছোটখাটো উৎসবের আয়োজনও ছিল দুজনার। কিন্তু সেই আনন্দোৎসব কিনা ভেসে গেল শোকের-সাগরে। স্বামীকে নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীতে থাকতেন পিউলি। কয়েকদিন আগে বেড়াতে যান বাবার বাড়ি খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে। সেখানে মঙ্গলবার দুপুরে গোসল শেষে বাড়ির উঠানে টানানো তারে কাপড় শুকাতে গেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন তিনি। পরে স্বজনেরা ছুটে এসে দ্রুত পিউলিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যান। কিন্তু শত প্রচেষ্টায়ও বাঁচানো যায়নি ২৫ বছরের তরুণীকে। মৃত্যুর সময় পিউলি ছিলেন ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। মায়ের আকস্মিক মৃত্যু কেড়ে নিল পৃথিবীর মুখ না দেখা সন্তানের প্রাণও।
পিউলি আর অনিমেষ যেন ছিলেন একই বৃন্তে দুটি কুসুম! কয়েকবছর জমিয়ে প্রেম। তারপর সাতপাকে বাঁধা। দিনটি ছিল গত বছরের ১০ নভেম্বর। দুজনের ভরপুর ভালোবাসা একটু একটু করে আরও ডালপালা মেলছিল। অপেক্ষায় ছিলেন নতুন অতিথি আসার। অনাগত সন্তানকে ঘিরে দুজনের কত-শত পরিকল্পনা। সেই স্বপ্ন অনিমেষের জীবনে যে দুঃস্বপ্ন হয়ে ফিরে আসবে কে জানত! পরিস্থিতি তার জীবন থেকে শুধু পিউলিকে কেড়ে নেয়নি, কেড়ে নিয়েছে মায়ের সঙ্গে দূর আকাশের তারা হয়ে যাওয়া সন্তানকেও।
পিউলির ফেসবুক ঘাঁটলেই দেখা মিলে অজস্র হাসিমুখের ছবি। সেই চির হাস্যোজ্জ্বল মেয়েটি এভাবে কাঁদিয়ে বিদায় নেবে মানতে পারছেন না কেউই। অনেকে আবার অনিমেষের মনের অবস্থা কেমন চলছে-তাও বোঝার চেষ্টা করছেন তার এই দুর্দিনে।
জনি দত্ত নামের এক তরুণ পিউলি-অনিমেষের শেষ ভালোবাসার ১৯ সেকেন্ডের ভিডিওটি শেয়ার করেছেন নিজের ফেসবুকে। সেই ভিডিওটি মুহূর্তে নেটদুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। দুদিনে ৯ লাখ ৪৬ হাজার মানুষ দেখে ফেলেছেন ভিডিওটি।
সেই ভিডিও শেয়ার করে রাজিব কুমার সাহা নামের অনিমেষের পরিচিত এক তরুণ লিখেছেন, ‘কতো সুন্দর করে লাইফটা একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছিলো। বিদ্যুৎস্পৃষ্টে পুরো জীবনটাই কেড়ে নিলো। এমন একটি দুর্ঘটনা ঘটে যাবে কল্পনাও করতে পারছি না। বিয়ে হয়েছে বেশিদিন হয়নি। ভগবান এটা কি করলেন, এই ছেলেটা কাকে নিয়ে বাঁচবে? ৭-৮ বছরের প্রেম অতঃপর বিয়ে। আসলে কি সান্ত্বনা দেব বুঝতে পারছি না। ভিডিওটি দেখে নিজের মনকে বোঝাতে পারছি না। এইটুকুই বলবো অনিমেষ নিজেকে শক্ত করো, জানি এটা শক্ত হবার মতো নয়।’
মিঠু দাশ নামের অনিমেষ-পিউলির পরিচিত তরুণের লেখায়ও উঠে আসে দুজনের ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি। মিঠু লেখেন, ‘বিবাহিত জীবনের আজ ১০ মাস পূর্ণ হলো তোমাদের, আর আজই চলে যেতে হলো? ভগবানের কি লীলাখেলা এতো তাড়াতাড়ি কেন তোমাকে নিয়ে গেল জানি না! যেখানে থেকো ভালো থেকো আমার বোন পিউ।’
অল্প কদিনে শ্বশুরবাড়িরও প্রিয়মুখ হয়ে ওঠেছিলেন পিউলি। কিশোর নন্দী নামের আরেক জনের স্মৃতিচারণে ওঠে এলো সেটি, 'অল্পদিনের সংসারে তুই শ্বশুর বাড়ির এত এত প্রিয় হয়ে গিয়েছিলি আজ জানিয়ে দিতে হলো এভাবে! আর অল্প কটা দিন গেলেই তো মাতৃত্বের অমর অনুভূতি পাওয়া হতো, ছোট্ট সুন্দর জীবনটাকে এত ছোট করে চলে গেলি না ফেরার দেশে বোন আমার।'
আর কদিন পরেই দুর্গাপূজার মৌসুম। সেই পূজা ঘিরে সনাতন ধর্মের মানুষদের ঘরে ঘরে এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে আলোর উৎসব। সেই রঙিন আয়োজনের আগেই বিবর্ণ হয়ে ওঠল অনিমেষের জীবন, তিনি যে হারিয়ে ফেললেন নিজের জীবনের কাছের মানুষকে। স্বাভাবিক ভাবেই ভেঙে পড়েছেন অনিমেষ। তাই তার সঙ্গে হলো না কথা।
নিজের আসন্ন মৃত্যু কি জেনেই গিয়েছিলেন পিউলি! না হয় মৃত্যুর দুদিন আগেই কেন বা নিজের ফেসবুকে তিনি শেয়ার করবেন-‘একদিন শ্মশানে হবে পোড়া ছাই ও মন আমার, গৌরব করার কিছুই নাই’ গানটি।
পিউলির জীবনে খুব দ্রুতই গানের কথাগুলো যে সত্যি হয়ে গেল। খুব নির্মভাবে সত্যি হয়ে গেল!
পিউলির এভাবে হাসতে হাসতে চলে যেতে দেখে তাই তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের 'কবি' উপন্যাসের সেই বিখ্যাত উক্তির মতো বলতে ইচ্ছে হয়, 'জীবন এত ছোট কেনে...'
১৬ ফুট দৈর্ঘ্যের অজগর জঙ্গলের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া একটি জীবন্ত বাছুরকে গিলে ফেলার চেষ্টা করছিল। তবে বাছুরটিকে সম্পূর্ণ গিলে ফেলার আগেই এই দৃশ্য রাখলরা দেখতে পায়। তাৎক্ষণিক তারা অজগরের চোয়াল থেকে বাছুরটিকে লাঠির সাহায্য উদ্ধার করে। কিন্তু তাও শেষ রক্ষা হয়নি বাছুরটির। উদ্ধারের আগেই বাছুরটি মারা যায়। পরে অবশ্য এলাকাবাসী সাপটিকে না মেরে জঙ্গলে ছেড়ে দেয়।
এমন ঘটনা ঘটেছে ভারতের উত্তরপ্রদেশের আগ্রার চিত্রহাট এলাকার পারনা গ্রামের যমুনা জঙ্গলে। বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দেশটির গণমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
গ্রামবাসীদের বরাত দিয়ে এনডিটিভি বলছে, ঘটনাটি তারা বন বিভাগকে জানালেও তাদের দল পশুটিকে উদ্ধার করতে সময়মতো পৌঁছায়নি।
তারা অভিযোগ করে বলেন, বন বিভাগের কর্মকর্তারা সঠিক সময়ে পৌঁছালে হয়তো বাছুরটিকে বাঁচানো সম্ভব হতো।
এ ঘটনাটির একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে খুনের অভিযোগে এক ব্যক্তিকে ৩৫ বছরের সাজা ঘোষণা করে আদালত। সাজা ভোগের ১০ বছর পর জানা যায়, তিনি নির্দোষ। তিনি খুন করেননি। বিনা অপরাধে তিনি ১০ বছর ধরে সাজা খেটেছেন।
একটি আইনি সংস্থার লড়াইয়ের ফলে তিনি মুক্তি পেয়েছেন এবং রাষ্ট্র তাকে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়েছে সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর)।
একটি আইনি সংস্থার লড়াইয়ে জানা যায়, পুলিশ ওই ব্যক্তিকে বিভিন্নভাবে অত্যাচার করে ভয় দেখিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করে। এরপর আদালত তাকে ৩৫ বছরের সাজা ঘোষণা করে।
অবশেষে জানা যায়, ভুল রায়ে ওই ব্যক্তি ইতোমধ্যে ১০ বছর সাজা ভোগ করে ফেলেছেন। এর পর তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ প্রত্যাহার করে ১০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দেয় রাষ্ট্র।
২০০৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের একটি আদালত মার্সেল ব্রাউন নামে এক ব্যক্তিকে ১৯ বছরের এক তরুণকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে ৩৫ বছরের সাজা ঘোষণা করে। ১০ বছর সাজা ভোগ করার পর ২০১৮ সালে মার্সেলের বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ প্রত্যাহার করা হলে তিনি মুক্তি পান।
লোয়িভি অ্যান্ড লোয়িভি নামে একটি আইনি সংস্থা মার্সেল ব্রাউনের পক্ষে লড়াই করে অবশেষে জয়ের সাফল্য পায়। পরে ক্ষতিপূরণ দিতে রিট করে। অবশেষে সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) মার্সেল ব্রাউনকে ১০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়ে পুরস্কৃত করেছে রাষ্ট্র।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) লোয়িভি অ্যান্ড লোয়িভি আইনি সংস্থার পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটনার বিস্তারিত জানানো হয়।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আলজাজিরা এ খবর জানায়।
খবরে জানানো হয়, ২ সপ্তাহ শুনানি শেষে শিকাগো শহরের জেলা আদালত মার্সেল ব্রাউনের হাতে ২ মিলিয়ন ডলার তুলে দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লোয়িভি অ্যান্ড লোয়িভির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০০৮ সালে ১৯ বছর বয়েসি এক তরুণ গুলিতে খুন হন। এর পর গুলি করে হত্যার অভিযোগে পুলিশ মার্সেল ব্রাউনকে ধরে এনে জোর করে একটি ঘরে ৩০ ঘণ্টা ধরে আটকে রাখে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করে।
এ সময় তাকে না খাইয়ে রাখা হয়। ফোনে কথা বলতে দেওয়া হয়নি এবং তাকে ৩০ ঘণ্টা ধরে ঘুমাতেও দেওয়া হয়নি।
জিজ্ঞাসাবাদের সময় পুলিশ ব্রাউনকে হুমকি দেয় যে, সে যদি খুনের দায় স্বীকার না করে, তাহলে তাকে অনেক বছরের জন্য জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তাকে সে সময় তার মা এবং কোনো আইনজীবীর সঙ্গেও দেখা করতে দেয়নি পুলিশ।
অবশেষে লোয়িভি অ্যান্ড লোয়িভি নামে আইনি সংস্থা মার্সেল ব্রাউনের সাহায্যে এগিয়ে আসে এবং আইন লড়াই শেষে মিথ্যা অভিযোগ থেকে মার্সেলকে মুক্ত করে।
আইনি সংস্থার মাধ্যমে এক বিবৃতিতে মার্সেল ব্রাউন বলেন, সে সময় (২০০৮ সালে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ ও নির্যাতনের সময়) আমার মনে হচ্ছিল, আমি একজন শিশু! আমাকে অনেক সিংহের মাঝে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে! আমার প্রতি তখন একটুও দয়া দেখানো হয়নি!
উন্নত ও সুশৃঙ্খল দেশ হিসেবে পরিচিত সংযুক্ত আরব আমিরাত। আরব বিশ্বের দেশ হওয়ায় দেশটির রয়েছে ইসলামিক ঐতিহ্য। যে অঞ্চলগুলোতে প্রথম দিকে ইসলামের বিস্তার লাভ করেছে তার মধ্যে এই দেশটি অন্যতম। এখানকার একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন ফুজাইরার আল বিদিয়া মাটির মসজিদ। এটি আরব আমিরাতের প্রাচীনতম মসজিদ ও ঐতিহাসিক প্রত্মতাত্বিক নিদর্শন যা দেশটির উজ্জ্বল অতীতের সাক্ষী হিসেবে এখনো দাঁড়িয়ে আছে।
ফুজাইরা শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার উত্তরে আল বিদিয়া নামক স্থানে ৫৩ বর্গমিটার (৫৭০ বর্গফুট) আয়তন জুড়ে মসজিদটি অবস্থিত। এটি অটোমান (ওসমানীয়) মসজিদ নামেও পরিচিত।
সম্পূর্ণ কাঁচামাটি ও পাথরের তৈরি আল বিদিয়া মসজিদ। চারপাশের দেয়াল ছাড়া একটি মাত্র মাটির পিলারের ওপর ভর করে আছে ৫ শ’ বছরেরও অধিক পুরনো এই প্রাচীন মসজিদটি। কাঁচা মাটি দিয়ে পলেস্তারা করা হয়েছে দেয়ালে। বিভিন্ন সময় সংস্কার করা হলেও বর্তমানে দেয়ালের কিছু কিছু জায়গা থেকে পলেস্তারা খসে পড়েছে। তবে সময়ের সঙ্গে কয়েকবার দেয়ালের রং পরিবর্তন করা হয়েছে। মূল মসজিদে কোনো জানালা নেই। তবে বাতাস যাতায়াতের জন্য মূল ফটকের কিছুটা অংশ প্রায় সময় খোলা থাকে।
২০০৩ সালের মার্চে দুবাই মিউনিসিপ্যালিটি নিজস্ব অর্থায়নে মসজিদের বাহ্যিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও পর্যটকদের সুবিধার্থে নির্মাণ করেছে মহিলা ও পুরুষদের জন্য আলাদা অজুখানা, বিশ্রাম কক্ষ, পাহাড়ের উপরে দূর্গে যাতায়াতের জন্য পাথরের সিঁড়ি, সীমানা প্রাচীরসহ মসজিদের পাশে তৈরি করা হয়েছে একটি বাগান। এ ছাড়া এখানে দুটি দোকানও রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতীয় দিবসে আমিরাতের ঐতিহ্যবাহী জিনিসপত্রের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় এখানে।
জানা যায়, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় ফুজাইরা প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর ১৯৯৭-৯৮ সালে মসজিদটির নির্মাণকাল নিয়ে অনুসন্ধান করে। অনুসন্ধানের রিপোর্টে, মসজিদটি ১৪৪৬ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তবে লোক মুখে শোনা যায়, ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমানের (রা.) সময় ইসলাম প্রচারের জন্য আগত কিছু সাহাবা পাহাড় কেটে এই মসজিদটি তৈরি করেন।
প্রায় ৫৭৩ বছর বয়সী আল বিদিয়া মসজিদ স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের অধিকারী। এর আকর্ষণীয় স্থাপত্যশৈলী সবাইকে অবাক করবে। যাতে অত্যন্ত দক্ষ ডিজাইনারের ছোঁয়া লক্ষ্য করা যায়। মসজিদটি যেখানে অবস্থিত সেই জায়গাটিও এক অনন্য পরিবেশ- একদিকে পর্বতশ্রেণী দ্বারা বেষ্টিত, অপরপাশে সাগর। বড় ও ছোট আকারের পাথর এবং কাদা মাটি দ্বারা মূলত মসজিদটি নির্মিত হয়।
মসজিদের ছাদে ভিন্ন রকমের চারটি গোল গম্বুজ, ছোট মেহরাব ও একটি মিম্বার ভেতরের দেয়ালের কারুকাজ- সব কিছুতেই রয়েছে দারুণ নির্মাণশৈলী। কোরআন রাখার জন্য দেয়ালের চারপাশে বক্স করা আছে। মসজিদের ভেতরে কিছু কোরআন শরিফ, কয়েকটি বাতি, দুটি এসি, মাইক, একটি দেয়ালঘড়ি ও একটি বিদ্যুৎচালিত পাখা রয়েছে। এ ছাড়া এখানে রয়েছে একটি অতি প্রাচীন বরই গাছ।
মসজিদের সামনে একটি পানির কূপ ও পেছনে দুটি দূর্গ আছে। দূর্গ দুটি মসজিদের পেছনের অংশে পাহাড়ের উপরে অবস্থিত। দূর্গ দুটি সম্পর্কেও মতপার্থক্য রয়েছে এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে। কারো মতে আজান দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতো এই দূর্গ, আবার কারো মতে সাহাবারা যুদ্ধের সময় নিরাপত্তার জন্য তৈরি করেছিলেন দূর্গ দুটি। দূর্গের চূড়ায় উঠলে একদিকে আরব উপসাগরের অংশ বিশেষ দেখা যায়। অপরদিকে খেজুর বাগানের নয়নাভিরাম দৃশ্য দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে খুব সহজে। বর্তমানে ফুজিরাহসহ পুরো আমিরাতের অনত্যম দর্শনীয় স্থান এটি। প্রতিদিন আল বিদিয়া মসজিদ প্রাঙ্গণ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত হয়।