সম্রাট অশোক ও তার শাসনব্যবস্থা



শরীফুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইতিহাস খুললে আমরা দেখতে পাই, বহু রাজার গৌরবময় গল্প বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে আছে। তেমনি এক গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে ভারত বর্ষের মৌর্য সম্রাজ্যের রাজা সম্রাট অশোকের। যিনি মৌর্য সাম্রাজ্যকে এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী রাজ্য হিসেবে গড়েছিলেন।

সম্রাট অশোক এবং তার শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে জানা যায় কৌটিল্যের “অর্থশাস্ত্র” থেকে। অশোকের জীবনে এমন কিছু ঘটনা রয়েছে যা গোটা বিশ্বের রাজতন্ত্রকে আশ্চর্য করে দেয়। অশোকের জীবনী থেকে জানা যায়, শুরুর দিকে অশোক খুবই নির্দয় এবং হিংস্র ছিলেন। চীনা লেখক ফা হিয়ান এ সম্পর্কে বলেছেন, ‘অশোককে প্রথম জীবনে এমন মনে হয়, যেন সে নরক থেকে মানুষকে যন্ত্রণা দেওয়ার পন্থা শিখে এসেছে।‘ প্রকৃত অর্থেই অশোক শুরুর দিকে নৃশংস একজন যোদ্ধা এবং রাজা ছিলেন।

মৌর্য বংশের প্রথম রাজা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের ছেলে বিন্দুসার। পাটালিপুত্র ছিল মৌর্য বংশের রাজধানী। বাবা বিন্দুসার এবং মা সুবোধরাঙ্গীর ছেলে ছিলেন অশোক। তার আসল নাম ছিল দেবাঙ্গপ্রিয় প্রিয়দর্শী আশোক।

অশোকসহ বিন্দুসারের মোট ১০১ জন পুত্র ছিল। কুৎসিত চেহারার জন্য অশোক বাবার অপ্রিয় হলেও যোদ্ধা হিসেবে ছিলেন সবার শ্রেষ্ঠ। অশোকের এই বীরত্ব বাবা বিন্দুসারের ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ তিনি চাইতেন না অশোক তার পরবর্তী সম্রাট হোক। বিন্দুসারের শাসনামলে ভারতের বহু অংশ মৌর্য বংশের অধীনে চলে আসে। এই মৌর্য বংশের অধীনে থাকা তক্ষশীলা এক সময় বিদ্রোহ করে। সুযোগে বিন্দুসার অপ্রিয় পুত্র অশোককে পাঠান বিদ্রোহীদের দমন করতে। কিন্তু সেই যুদ্ধে পুত্রকে সেনা দিলেও দেননি কোনো অস্ত্র। অশোক বাবার ষড়যন্ত্র বুঝতে পারেন। কৌশলে পৌঁছান তক্ষশীলায় এবং কথার মাধ্যমে বিদ্রোহীদের দমন করতে সক্ষম হন। 

প্রাচীন তক্ষশীলা নগরী 

বিন্দুসার চেয়েছেন বড় ছেলে সুশীমা হবে তার পরবর্তী সম্রাট। কিন্তু সুশীমাকে অনেক সভাসদরা পছন্দ করতে পারতেন না। কারণ তার আচরণ ছিল অনেক রুক্ষ্ম। সভাসদদের অমতে সুশীমাকে রাজা করতে গেলে চানক্যের পরামর্শে অশোক তাতে বিদ্রোহ করে। সিংহলী বই ‘মহাবংশ’ থেকে জানা যায় অশোক তার ১০০ ভাইয়ের মধ্যে ৯৯ জনকেই হত্যা করেছিলেন। যে কারণে তাকে চণ্ডাশোক বলা হতো। 

২৬৮ খ্রিষ্টপূর্বে মৌর্য বংশের ২য় সম্রাট এবং ৩য় শাসক হিসেবে অশোকের রাজ্যাভিষেক হয়। ধীরে ধীরে তিনি বহু রাজ্য দখল করেন। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য যখন মগদে তার শাসনামল শুরু করেন তখন ভারত ১৬টি জনপদে বিভক্ত ছিল। চাণক্য চেয়েছিলেন এই ১৬টি জনপদকে মৌর্য বংশের অধীনে আনার। কিন্তু মৌর্য গুপ্ত তার সাম্রাজ্যকে বেশি বিস্তার করতে পারেননি। তার ছেলে বিন্দুসার মৌর্য বংশকে অনেক বিস্তৃত করেন এবং তার পরে সম্রাট অশোক সেই সাম্রাজ্য সমগ্র ভারতবর্ষের পরিণত করেন। আফগানিস্তান, ইরান থেকে আসাম সমগ্র ভারতবর্ষই তার দখলে চলে আসে। অশোকের সেনাবাহিনীতে প্রায় ৬ লাখ পদাতিক সেনা ছিল। এছাড়া ৩০ হাজার অশ্বারোহী, ৯ হাজার হাতি এবং কয়েক হাজার জাহাজও ছিল। 

মৌর্য সাম্রাজ্য 

২৬১ খ্রিষ্টপূর্বে কলিঙ্গের সাথে মগদের বিধ্বংসী যুদ্ধ হয়। এই সাম্রাজ্যটি অনেক শক্তিশালী ছিল বলে তার পূর্বসূরিরা এটি দখল করতে পারেনি। অশোক প্রথমে রাজনৈতিকভাবে চেষ্টা করেন। তাতে ব্যর্থ হয়ে তিনি যুদ্ধের পথ বেছে নেন। এই যুদ্ধে প্রায় ১ লাখ সৈনিক নিহত এবং প্রায় ২ লাখ সাধারণ মানুষ প্রাণ হারায়। যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে অশোক বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন। তখন থেকেই অশোক বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার শুরু করেন এবং যুদ্ধ করা ছেড়ে দেন। এজন্য অশোককে বৌদ্ধ ধর্মের কনস্ট্যানটাইন বলা হয়।

সম্রাট আশোক নতুন রাজতন্ত্রের সূচনা করেন। প্রজাদের কল্যাণে গাছ লাগান, হাসপাতাল নির্মাণ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। তার বানানো শাসনব্যবস্থা বর্তমানে প্রায় সব দেশে দেখা যায়। তার অধীনে থাকা ছোট ছোট রাজ্যগুলোতে একজন করে দায়িত্ব দেন। তাদের উপরে মন্ত্রী এবং সম্রাট থাকতেন। অশোকের বিচার ব্যবস্থা দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। তিনি বিভিন্ন ধরনের সৈনিক ব্যবস্থা এবং তাদের জন্য আলাদা আলাদা প্রধান নির্ধারণ করেন। যা বর্তমান শাসন ব্যবস্থায় দেখা যায়। ভারতের সংবিধানে বহু অধ্যায় সম্রাট অশোকের শাসন ব্যবস্থা থেকেই গৃহীত। দুর্নীতি কমানোর জন্য অশোক গুপ্তচর বৃত্তি নিষিদ্ধ করেন।

অশোকের শাসনকাল ভারতে ইতিহাসে এক স্বর্ণযুগ ছিল। বৌদ্ধধর্মের প্রচারের জন্য তিনি নিজের সন্তানদের দেশ-বিদেশে পাঠান। তার শাসনামলে বৌদ্ধধর্ম অনেক বিস্তৃতি লাভ করে। ইতিহাসে অশোকই প্রথম সম্রাট ছিলেন, যিনি বিশ্বব্যাপী অহিংসার বাণী ছড়ান।

ন্যায়পরায়ণ এই সম্রাটের শেষ জীবন সুখের ছিল না। যুদ্ধ না করার ফলে তার সেনারা দুর্বল হয়ে পড়ে। বিভিন্ন রাজ্যে বিদ্রোহ দেখা দেয়। অশোকের অতিরিক্ত দান তার উত্তারাধিকারদের পছন্দ ছিল না। ফলে এক সময় তারা অশোককে বন্দী করেন। তখন অশোক নিজের সোনার থালাও দান করে দেন

২৩২ খ্রিষ্টপূর্বে সম্রাট অশোক বিভিন্ন রোগে জর্জরিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পরে মৌর্য বংশের সূর্য অস্তমিত হতে শুরু করে।

সম্রাট অশোক একজন অহিংস রাজা হিসেবে স্বীকৃত। তার চক্র যাকে ধর্ম চক্র বলা হয় তা ভারতের পতাকার মধ্যখানে রয়েছে। অশোক স্তম্ভ ভারতের জাতীয় প্রতীক। যাতে সিংহ, হাতি, ঘোড়া ও গরুর মূর্তি দেখা যায়।

অশোক স্তম্ভ সম্বলিত ভারতের জাতীয় প্রতীক 

৫৫ বছর পর ডুবে যাওয়া জাহাজের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

৫৫ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৬৯ সালের ২৫ আগস্ট একটি দুর্যোগ বার্তা দিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ডুবে যায় অস্ট্রেলিয়ার 'এমভি নুনগাহ' জাহাজ। পরে তাৎক্ষণিক উদ্ধার তৎপরতায়ও জাহাজে থাকা মানুষদের জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তখন থেকেই জাহাজটির নিখোঁজ হওয়া দেশটির নাগরিকদের কাছে রহস্য হয়ে ছিল। 

এবার সেই রহস্যের উদঘাটনের দ্বারপ্রান্তে দেশটির বিজ্ঞান সংস্থা কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশন (সিএসআইআরও)। বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, ডুবে যাওয়া জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া গেছে।

ওই ঘটনায় জাহাজে থাকা ২৬ জনের মধ্যে ক্রুসহ ২১ জনের মারা যাওয়ার খবর গণমাধ্যমে উঠে এসেছিল।  

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়ার তথ্য জানায়।

বিবিসি জানায়, ৭১ মিটার (২৩৩ ফুট) দৈর্ঘ্যের ওই মালবাহী জাহাজটি নিউ সাউথ ওয়েলসের উপকূল থেকে ইস্পাত নিয়ে যাচ্ছিল। পরে ঝড়ের কবলে পরে জাহাজটি ডুবে যায়। এমন ঘটনা তখন অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। 

জাহাজটি ডুবে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাঁচজনকে জীবিত ও ২০ জনের মরদেহ তুলে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু একঝনের লাশ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

ডেরওয়েন্ট নদীতে ১৯৫৬ সালে তোলা 'এমভি নুনগাহ'
 

গণমাধ্যমটি জানায়, অস্ট্রেলিয়া তাদের উচ্চ রেজোলিউশন সমুদ্রতল ম্যাপিং এবং ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে ধ্বংসাবশেষের অবস্থান নিশ্চিত করেছে।

তবে সিডনি থেকে প্রায় ৪৬০ কি.মি (২৮৬ মাইল) উত্তরে সাউথ ওয়েস্ট রকসের উপকূলের গভীর জলে স্থানীয়রা এক বছর আগে একটি ধ্বংসাবশেষ দেখেছিল। পরে তারা এ সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে অবগত করার পর বিজ্ঞানীরা সন্ধান চালিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে। 

স্থানীয়দের তথ্যের পর বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহ করেছিল এটি ডুবে যাওয়া জাহাজটি হতে পারে। তবে প্রয়োজনীয় কোন প্রযুক্তি বা ডাইভিং জ্ঞান না থাকার কারণে সেটিই যে ডুবে যাওয়া জাহাজ নুনগাহ তা নিশ্চিত করতে পারেনি তারা।

গত মাসে সিএসআইআরও উচ্চ প্রযুক্তি নিয়ে জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজতে শুরু করে।

পরে তারা ওই স্থানের ১৭০ মিটার নিচে এর ধ্বংসাবশেষ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে।

সিএসআইআরও'র কর্মকর্তা ম্যাট কিম্বার বলেন, এই ট্র্যাজেডি এখনও অনেকের স্মৃতিতে রয়েছে। তবে ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কারের বিষয়টি জানার ফলে সবার জন্যই কিছুটা স্বস্তির কারণ হবে। 

নিহত ক্রুদের পরিবারের সদস্যরা অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনকে জানিয়েছেন, আবিষ্কারটি একটি স্বস্তির বিষয়।

;

বিশ্বের সবচেয়ে ‘কুৎসিত কুকুর’ এটি!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর কুকুরের তথ্য যেমন রয়েছে তেমনি এবার সবচেয়ে কুৎসিত আকৃতির কুকুরেরও তথ্য মিলেছে।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজ এ তথ্য জানিয়েছে।

স্কাই নিউজ বলছে, চলতি বছরের ২১ জুন (শুক্রবার) যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে বিশ্বের সবচেয়ে কুৎসিত কুকু্রের প্রতিযোগিতা বসেছে। ওই প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা ওয়াইল্ড থাং নামে আট বছর বয়সী একটি কুকুর এ তকমা পেয়েছে।

তবে এবারই ওয়াইল্ড থাং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেনি। এর আগেও ৫ বার এমন প্রতিযোগিতায় প্রাণীটি অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু প্রতিবারই নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে।

ওয়াইল্ড থাং এবং তার মালিক অ্যান লুইস। ছবি: সুমিকো মুটস / এনবিসি নিউজ

ওয়াইল্ড থাং এর মালিক অ্যান লুইস বলেন, ওয়াইল্ড থাং কুকুরছানা হিসাবে একটি ভয়ানক রোগ ক্যানাইন ডিস্টেম্পারে সংক্রমিত হয়েছিল। কোন ক্ষতি ছাড়াই অনেক চিকিৎসার পর বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তার দাঁত বেশি বৃদ্ধি না পাওয়ায় জিহ্বা বাইরে থাকে এবং তার সামনের ডান পা ২৪/৭ প্যাডেল আকারে থাকে।

পুরস্কার হিসেবে তাদেরকে ৫ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৫১১ টাকা) দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, বিশ্বের সবচেয়ে কুৎসিত কুকুর প্রতিযোগিতা প্রায় ৫০ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিযোগিতাটি আকর্ষণীয় করার জন্য কুকুরগুলোকে বিশেষ এবং অনন্য করে সাজিয়ে তোলা হয়।

;

ট্যাক্সি চালকের অনর্গল ইংরেজি বলার দক্ষতা!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

এই সংবাদটি পড়তে হলে আপনাকে ভুলে যেতে হবে শুধু শিক্ষিতরাই সাবলীলভাবে ইংরেজি বলতে পারেন! কারণ সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায় এক ট্যাক্সি চালক তার যাত্রীর সাথে অনর্গল ইংরজিতে কথা বলছেন।

ঘটনাটি প্রতিবেশী দেশ ভারতের মহারাষ্ট্রে ঘটেছে। দেশটির গণমাধ্যম এনডিতিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

এনডিটিভি বলছে, ওই ট্যাক্সি চালক তার যাত্রীদের সাথে ইংরেজি কথা বলার পাশাপাশি কিভাবে আরও দক্ষ হওয়া যায় সে বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন।

মহারাষ্ট্রের অমরাবতীতে ধারণ করা ভিডিওটি ভূষণ নামে একজন ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী শেয়ার করেছেন। ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, "এমন ঘটনা দেখে আমি কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। পরে তার সাথে কথা বলার সময় কিছুটা তোতলা হয়েছিলাম। তার ইংরেজিতে সাবলীলতা দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম।"

পরে তার সাথে এ নিয়ে কিছুক্ষণ আলাপ হলো।

ট্যাক্সি চালক বলেন, ইংরেজি শেখা থাকলে আপনি লন্ডন এবং প্যারিসের মতো উন্নত দেশে যেতে পারবেন। এটা বিশ্বব্যাপী ভাষা। এ কারণে ইংরেজি শেখা গুরুত্বপূর্ণ।

ভিডিওটিতে একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, "তার কথা বলার ধরণ ডক্টর এপিজে আবদুল কালামের মতো শোনাচ্ছেন"।

অপর একজন লিখেছেন, "১৬ বছরের শিক্ষার পর তার ইংরেজি আমার চেয়ে অনেক ভালো।"

;

‘প্রিয় স্বাধীনতা’ কবিতার মেঘনা নদীর দেখা মেলে চুনা নদীতে



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: মৃত্যুঞ্জয় রায়, বার্তা২৪, সাতক্ষীরার শ্যামনগরের চুনা নদীর তীরের জীবন

ছবি: মৃত্যুঞ্জয় রায়, বার্তা২৪, সাতক্ষীরার শ্যামনগরের চুনা নদীর তীরের জীবন

  • Font increase
  • Font Decrease

মেঘনা নদী দেব পাড়ি
কল-অলা এক নায়ে।

আবার আমি যাব আমার
পাড়াতলী গাঁয়ে।

গাছ-ঘেরা ঐ পুকুরপাড়ে
বসব বিকাল বেলা।

দু-চোখ ভরে দেখব কত
আলো-ছায়ার খেলা।

বাঁশবাগানে আধখানা চাঁদ
থাকবে ঝুলে একা।


ঝোপে ঝাড়ে বাতির মতো
জোনাক যাবে দেখা।

ধানের গন্ধ আনবে ডেকে
আমার ছেলেবেলা।

বসবে আবার দুচোখে জুড়ে
প্রজাপতির মেলা।

হঠাৎ আমি চমকে উঠি
হলদে পাখির ডাকে।

ইচ্ছে করে ছুটে বেড়াই
মেঘনা নদীর বাঁকে।

শত যুগের ঘন আঁধার
গাঁয়ে আজো আছে।

সেই আঁধারে মানুষগুলো
লড়াই করে বাঁচে।

মনে আমার ঝলসে ওঠে
একাত্তরের কথা,

পাখির ডানায় লিখেছিলাম-
প্রিয় স্বাধীনতা।

কবি শামসুর রাহমানের প্রিয় স্বাধীনতা কবিতার লাইনের সঙ্গে মিল রেখে বলতে হয়-

শ্যামনগরের চুনা নদীর তীরে থাকা মানুষগুলোর কথা।
চুনা নদী পাড়ি দেবো, ডিঙ্গি নৌকা দিয়া।

আবার আমি যাবো আমার উপকূলের গাঁয়ে।
কাজের জন্য ছুটে বেড়াই, চুনা নদীর বাঁকে।

বনে বাঘ, জলে কুমির আর ডাঙ্গায় লোনা পানির ক্ষত।
সেই চরের মানুষগুলো, এখনো লড়াই করে বাঁচে।

বর্ষাকালের দুপুর বেলা। আকাশে কালো মেঘ খেলা করছে! নদীতে পানি ঢেউ খেলছে! ভেসে আসছে, গেট থেকে জল আসার শব্দ। নদীর এপার ওপার হচ্ছেন ডিঙা নৌকা দিয়ে পাড়ে থাকা মানুষগুলো। ছুটে চলেছেন নারী-পুরুষ একে একে চুনা নদীর তীরে কাজের সন্ধানে। সন্ধ্যা হলেই দেখা মেলে বাড়ি ফেরার তাড়া। রাতের আঁধারে পশুপাখি, জীবজন্তু, পোকামাকড়ের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচেন এই চুনা নদীর পাড়ের মানুষগুলো।

সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগরের চুনা নদীর তীরে বসবাস নিত্যসংগ্রামী মানুষদের, ছবি- মৃত্যুঞ্জয় রায়, বার্তা২৪.কম


এখানকার মানুষজন লড়াই সংগ্রাম করে এখনো টিকে আছেন। টিকে থেকে তাদের রোজ কাজের সন্ধানে অবিরাম ছুটে চলতে হয়। বর্তমানে ভাঙাগড়ার জীবনে অনিশ্চিত এক ভবিষ্যত নিয়ে বসবাস করছেন তারা। শ্যামনগর উপজেলার কলবাড়ি এলাকায় অবস্থিত চুনা নদীর চরটি। ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়-সম্বল হারানো ২০-২৫টি জেলে পরিবারের ঠাঁই হয়েছে এখানে। বছরের পর বছর এই চরকে আগলে বসবাস করলেও সব সময় লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয় তাদের।

তাদের একজন ৩৫ বছর বয়েসি রমেশ চন্দ্র মণ্ডল। দুর্যোগে সহায়-সম্পদ হারিয়ে আশ্রয় নেন চরের এক কোণে। সেখানে মাটির ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস তার। শারীরিকভাবে অসুস্থ হলেও ভর করে থাকতে হয়, স্ত্রীর ওপর। তার কষ্টের বিনিময়ে জোটে তাদের একমুঠো ভাত। স্ত্রী একাই লড়াই সংগ্রাম করে বেঁচে আছেন তাদের নিয়ে এই চরে।

বনে পশুপাখির, জলে কুমির আর স্থলে বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে এভাবে তাদের জীবন প্রবহমান। তাদের জীবন চলার পথে নেই কোনো বিরাম। সংগ্রাম করে টিকে থাকেন সবাই। একে একে সব কিছু হারিয়েও এখানো টিকে থাকতে হয় তাদের।

রমেশের মতো একই অবস্থা ষাটোর্ধ্ব ফকির বিশ্বাসের। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়লেও পেটের দায়ে কাজ করতে হয় তাকে। একবেলা কাজ করলে অপর বেলা কাটে অসুস্থতায়!

ফকির বিশ্বাস বার্তা২৪কমকে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়-সম্বল হারিয়ে এই চরে আশ্রয় নিয়েছিলাম। আশ্রয়ের দুই যুগ লড়াই সংগ্রাম করে টিকে থাকলেও ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারিনি। বরং প্রতিবছর ছোটবড় দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছি। লড়াই-সংগ্রাম করতে হয়েছে বারংবার!

জীবন কাটে যুদ্ধ করে, ঝড়-ঝঞ্ঝা মাথায় পেতে...চুনা নদীর তীরের মানুষের জীবন, ছবি- মৃত্যুঞ্জয় রায়, বার্তা২৪.কম

চুনা নদীর চরে মাছের পোনা গুনতে দেখা যায় নমিতা রাণী রায়কে। নমিতা রাণী রায় বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্বামী-সন্তান নিয়ে সবসময় চিন্তার ভেতরে থাকতে হয় আমাকে। নদীতে কুমির আর বনে বাঘের আতঙ্ক! তারপর ডাঙায় লোনা পানির ক্ষত। লবণাক্ততায় ভরা জীবনকাল। তারপর চরটি নদীর ধারে হওয়াতে একটু জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় বসতবাড়ি। এই লড়াই-সংগ্রাম করেই বেঁচে আছি সেই প্রথম থেকে। মাছের পোনা বিক্রি করে চলে আমাদের সংসার। আমরা সবাই এখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংগ্রাম করে টিকে আছি।

নমিতা রাণী রায় বলেন, যখন বসতবাড়ি নদীর পানিতে তলিয়ে যায়, তখন স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। ওই সময় অনেক কষ্টে চর এলাকার সবার দিন কাটে। শিশু সন্তানদের সবসময় নজরে রাখতে হয়। অন্যথায় নদীতে পড়ে গিয়ে ঘটতে পারে ছোট-বড় দুর্ঘটনা!

নিত্যদিনের লড়াই-সংগ্রাম

লড়াই সংগ্রামের শেষ নেই উপকূলে থাকা মানুষজনের। সর্বশেষ, ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’-এর আঘাতে নদীর জোয়ারের জলে তলিয়ে যায় তাদের বসতঘর। ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ বলে কথা না! যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জোয়ারের পানিতে তাদের বসতঘর তলিয়ে যায়। তখন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না তাদের। এমনও অনেক সময় গেছে যে, দিনের পর দিন উনুনে আগুন দিতে পারেননি তারা। ওই সময় শুকনো খাবার খেয়ে থাকতে হয়েছে তাদের। এমনও দিন গেছে, যেদিন তাদের শুধুমাত্র পানি পান করে বেঁচে থাকার জন্য লড়তে হয়েছে।

ঘরছোঁয়া জলের বানের দিকে তাকিয়ে থাকেন চুনা নদীর তীরের মানুষজন আর ভাবেন আর কত সংগ্রাম, ছবি- মৃত্যুঞ্জয় রায়,বার্তা২৪.কম

সত্যি, তাদের ভাষ্যের সঙ্গে বড়ই মিল কবি শামসুর রাহমানের ‘প্রিয় স্বাধীনতা’ কবিতার! ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকাটা একটা বড় প্রশ্নেরই বটে! জঙ্গল, বন্যা, নদীভাঙনের সঙ্গে অবিরাম সংগ্রাম করে টিকে থাকা একটা অকল্পনীয় ব্যাপার। অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট আর অভাবে চরের মানুষদের দৈনন্দিন জীবন। তাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাঁধ ভাঙন, জলোচ্ছ্বাসসহ ঘূর্ণিঝড়। প্রতিবছর এসব দুর্যোগে শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে প্রতিনিয়ত সর্বস্বান্ত হচ্ছেন তারা। আবারও লড়াই-সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার তাগিদে ঘুরেও দাঁড়ান তারা।

;