ইসলামের ইতিহাসের প্রথম মসজিদ



মো.সুমন, রিয়াদ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

মক্কা শরিফ থেকে ৩২০ কিলোমিটার উত্তরে এবং মসজিদে নববীর দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ বরাবর প্রায় ৩.২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মসজিদে কুবা যা ইসলামের ইতিহাসের প্রথম মসজিদ। এটি মসজিদে নববি থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত।

হিজরতের পর মুহাম্মদ সাল্লেলাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন। এখানে তিনি বেশ কিছুদিন অবস্থান করেছিলেন। আল্লাহর রাসুল মহানবী (সা.) প্রতি শনিবার এই মসজিদে যেতেন।

ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ ও মর্যাদাসম্পন্ন মসজিদ তিনটি। মক্কার মসজিদুল হারাম, মদিনার মসজিদে নববি ও জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদুল আকসা। এরপর হলো মসজিদে কুবা। এই মসজিদে নামাজ আদায় করলে এক ওমরাহর সমপরিমাণ সওয়াব মিলে।

ইসলামের ইতিহাসের প্রথম মসজিদ এটি। মহানবী (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার সময় মদিনার অদূরে কুবায় এ মসজিদ নির্মাণ করেন। এর আগে মক্কায় তিনি কোনো মসজিদ নির্মাণ করেননি। হিজরতের প্রথম দিন কুবা অবস্থানকালে এই মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন। মসজিদের নির্মাণকাজে সাহাবাদের সঙ্গে স্বয়ং রাসুল (সা.) অংশগ্রহণ করেন।

পূর্বে এই মসজিদের আশেপাশে কুবা নামে একটি বিখ্যাত কূপ ছিল। তৎকালীন সময়ে এই কূপকে কেন্দ্র করে একটি জনবসতি গড়ে উঠে, সেই জনবসতি কুবা মহল্লা নামে পরিচিত হয়। এবং কালের পরিক্রমায় মসজিদে কুবা নামকরণ হয়। ধারণা করা হয়, সূরা তওবার ১০৮ নং আয়াতে বলা মসজিদটি মূলত কুবা মসজিদ।

নবীর আমলের পর ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান ( রা.) তার খেলাফতকালে মসজিদে কুবার সংস্কার ও পুনর্নিমাণ করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে আরও বেশ কয়েকবার এই মসজিদের পুনর্নিমাণ ও সংস্কার করা হয়। উমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.), ওসমানি সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ ও তার ছেলে প্রথম আবদুল মাজিদ প্রমুখ শাসকরা মসজিদে কুবার সংস্কারকাজ করেন। ৪৩৫ হিজরিতে আবু ইয়ালি আল-হোসাায়নি কুবা মসজিদ সংস্কার করেন। তিনি মসজিদের মিহরাব তৈরি করেন। ৫৫৫ হিজরিতে কামাল আল-দিন আল-ইসফাহানি মসজিদে আরও বেশ কিছু সংবর্ধনের করেন। পরবর্তী সময়ে ৬৭১, ৭৩৩, ৮৪০ ও ৮৮১ হিজরিতে ওসমানি সাম্রাজ্যকালে মসজিদটি সংস্কার করা হয়। ওসমানি শাসনামলে ১২৪৫ হিজরিতে সর্বশেষ সংস্কার করেন সুলতান আবদুল মজিদ।

১৯৮৬ সালে বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ আলে সৌদের সময় মসজিদটি সর্বশেষ সম্প্রসারণ হয়। তখন পুরো মসজিদে এক ধরণের সাদাপাথর ব্যবহার করা হয়, যা অন্য কোনো মসজিদে সাধারণত দেখা যায় না।

মসজিদে কুবার বর্তমান আয়তন ১৩ হাজার ৫০০ স্কয়ার মিটার। চারটি উঁচু মিনার, ছাদে ১টি বড় গম্বুজ এবং ৫টি ছোট গম্বুজ । এছাড়া ছাদের অন্য অংশে ৫৬টি ছোট গম্বুজের অবয়ব রয়েছে। ২০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে এই মসজিদে।

মূল মসজিদ ছাড়াও এখানে রয়েছে আবাসিক এলাকা, অফিস, অজুখানা, দোকান ও লাইব্রেরি। তবে মসজিদের মূল আকর্ষণ বিশাল গম্বুজ এবং চার কোণায় চারটি সুউচ্চ মিনার। মসজিদের চতুর্দিকের সুবজ পাম গাছের বলয় মসজিদটিক বাড়তি সৌন্দর্য দিয়েছে।

মদিনায় মসজিদে নববীতে যাওয়ার পথে প্রতিদিন প্রচুর মানুষ আসেন এই মসজিদে। এখানে নারী ও পুরুষদের নামাজের জায়গা ও প্রবেশ পথ আলাদা। অজুর জায়গাও ভিন্ন। মসজিদের উত্তর দিক নারীদের জন্য সংরক্ষিত।

মূল মসজিদ ভবনের মাঝে একটি খালি জায়গা আছে, সেখানেও নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে। দামি কারপেট বিছানো মেঝেতে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেন। এছাড়াও রয়েছে জমজম পানির ব্যবস্থা। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মসজিদের ভেতরের কারুকাজও বেশ মনোমুগ্ধকর।

১১২ বর্গমিটার অংশজুড়ে ইমাম ও মুয়াজ্জিনের থাকার জায়গা, একটি লাইব্রেরি, প্রহরীদের থাকার জায়গা এবং সাড়ে ৪শ’ বর্গমিটার স্থানে ১২টি দোকানসমৃদ্ধ একটি বাণিজ্যিক এলাকা।

মসজিদে ৭টি মূল প্রবেশ দ্বার ও ১২টি সম্পূরক প্রবেশ পথ রয়েছে। প্রতিটি ১০ লাখ ৮০ হাজার থার্মাল ইউনিট বিশিষ্ট তিনটি কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র মসজিদকে ঠাণ্ডা রাখছে।

মসজিদের বাইরে এ মসজিদ সম্পর্কে বর্ণিত পবিত্র কোরআনের আয়াত ও হাদিসের বাণীগুলো সুন্দরভাবে লিখে রাখা হয়েছে। ঐতিহাসিক কুবা মসজিদ শ্বেতবর্ণের একটি অনন্য স্থাপত্যকর্ম হওয়ার দরুন বহু দূর থেকে দৃষ্টিগোচর হয়।

   

প্রকৃতিতে শোভা ছড়াচ্ছে ‘সোনালু ফুল’



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সবুজের ফাঁকে উঁকি দিয়ে হলুদ আভায় মুগ্ধতা ছড়ানো ফুল সোনালু। নজরকাড়া সৌন্দর্যে মুখরিত এই ফুল পথিকের মনে এনে দিচ্ছে প্রশান্তির ছোঁয়া। পরিবেশ ও প্রকৃতির শোভা বর্ধনে সোনালু দারুণ এক নিসর্গ মায়া এনে দিয়েছে। এই ফুলের দেখা মিলছে নওগাঁর বিভিন্ন পথে প্রান্তরে।

মঙ্গলবার (৭ মে) বিকেলে সরেজমিন দেখা যায়, নওগাঁ শহরের বরেন্দ্র অফিসের পাশে থোকায়-থোকায় হলুদ আভায় ঝুলে আছে সোনালু। ফুলের মাথা হতে লম্বা লতার মত বড় হয়েছে।

শীতকালে সব পাতা ঝরার পর বসন্তে একেবারেই মৃতের মতো দাঁড়িয়ে থাকে গাছটি। গ্রীষ্মের শুরুতে দু’একটি কচিপাতার সাথে ফুল ফুটতে শুরু করে। হলুদ সোনালি রঙের অসংখ্য ফুল সারা গাছজুড়ে ঝাড় লণ্ঠনের মতো ঝুলতে দেখা যায়।


জানা যায়, সোনালু গাছের পাতাঝরা মাঝারি আকৃতির । এটি আট থেকে ৯ মিটার উঁচু হয়। হলুদ বরণ এ ফুল দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি আছে তার বাহারি নামও। পরিচিত নামগুলো হলো সোনালু, সোনাইল, সোঁদাল, বান্দরলাঠিসহ আরো অনেক। ফুল থেকে ধীরে ধীরে লাঠির মত কালো রঙের ফল হয়ে সেটি কয়েক সেন্টিমিটার অব্ধি লম্বা হয়ে থাকে।

পথচারী আলমগীর বলেন, সোনালু দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আর শহরের মধ্যে চোখে পড়েনা বললেই চলে। যতবার দেখি খুব সুন্দর লাগে। মনের মধ্যে এনে দেয় এক প্রশান্তি। 

স্থানীয় বাসিন্দা মিঠু বলেন, আমি মোবাইল দিয়ে প্রচুর ছবি তুলেছি এই ফুলের। আমার খুব ভালো লাগে সোনালু ফুল। তবে এই ফুল যেন হারিয়ে না যায় সেজন্য আমাদের গাছ লাগানো উচিৎ। আমাদের বাড়ির আশেপাশে অনেক সোনালু গাছ আছে যা আমাদের মুগ্ধ করে।


নওগাঁ সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এনায়েতুস সাকালাইন বার্তা২৪.কমকে বলেন- এটি মূলত সৌন্দর্য বর্ধনে রোপণ করা হয়। গ্রাম বাংলায় এই ফুলকে বাদর লাঠি গাছ বলেও ডাকা হয়। এটির বৈজ্ঞানিক নাম 'কেসিয়া ফিসটুলা (Cassia Fastula)। এই উদ্ভিদ বাংলাদেশে অনেক জাতের আছে। ফুলটার জন্য বেশি খ্যাতি রয়েছে বলে অনেক জায়গায় লাগানো হয়। গাছের কাঠগুলো জ্বালানি কাজে ব্যবহার করা হয়।

;

দৌলতদিয়ায় মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া



সোহেল মিয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজবাড়ী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রখর তাপপ্রবাহের বিরূপ প্রভাবে বিপর্যস্ত প্রকৃতি। কোথাও নেই শান্তি। গ্রীষ্মের রুক্ষতা আর সব ক্লান্তি ছাপিয়ে আপন মহিমায় সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া ফুল। জানান দিচ্ছে শিল্পের দ্যোতনা। পাশাপাশি প্রশান্তির বার্তা বয়ে দিচ্ছে জনমনে।

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় দেখা যায় কৃষ্ণচূড়ার এমন সৌন্দর্য। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া অংশের দুই পাশে শোভাবর্ধন করছে কৃষ্ণচূড়া ফুল। শত কষ্টের মাঝে এই মহাসড়ক পার হওয়ার সময় হাজারো পথচারীদের হৃদয়ে প্রশান্তির হাতছানি দেয় এই কৃষ্ণচূড়া ফুল। দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে প্রতিদিন শত শত যানবাহন এ মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করে।এ সড়কে যাতায়াতকারীদের নজর কাড়ছে লাল কৃষ্ণচূড়া ফুল।


সরেজমিন দেখা যায়, মহাসড়কের দু’পাশের গাছগুলো ছেয়ে গেছে লাল কৃষ্ণচূড়ায়। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন বৈশাখের প্রখর রোদ্দুরের সবটুকু উত্তাপ গায়ে মেখে নিয়েছে রক্তিম পুষ্পরাজি; সবুজ চিরল পাতার মাঝে যেন আগুন জ্বলছে। এই আগুনেই সেলফি তুলতে ব্যস্ত পথচারীরা। নিজেদেরকে কৃষ্ণচূড়ার সাথে একাকার করে স্মৃতিময় করে রাখতে ব্যস্ত সবাই।

দৌলতদিয়া ৭ নম্বর ফেরিঘাটের বাইপাস সড়ক থেকে শুরু করে ক্যানাল ঘাট এলাকার মহাসড়কের দুইপাশে ছেয়ে গেছে লাল কৃষ্ণচূড়া ফুল। গ্রীষ্মের দাবদাহে মানুষ আর পশু পাখি যখন বেসামাল,ঠিক তখনই কৃষ্ণচূড়ার ফুলে বিচিত্র রূপ নিয়েছে দৌলতদিয়ার মহাসড়ক। এ যেন কৃষ্ণচূড়ার রঙে মেতেছে সড়কটি। কৃষ্ণচূড়া ফুলে ভরা গাছগুলো নজর কাড়ছে দর্শনার্থীসহ এই মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রী ও পথচারীদের।


স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছরই দৌলতদিয়া ঘাটের এই অংশটুকুতে (ঢাকা-খুলনা মহাসড়ে) সৌন্দর্য বিলায় কৃঞ্চচূড়া। পুরো এলাকা কৃষ্ণচূড়া ফুলের লাল রঙে রঙিন হয়ে যায়। প্রখর রোদে মনে হয় যেন প্রকৃতিতে আগুন লেগেছে। পড়ন্ত বিকেলে পূর্ব আকাশের রক্তিম আভায় কৃঞ্চচূড়া মিশে যেন একাকার হয়ে যায়। প্রতি বছর এই সময়ে ঘাটের বাইপাস সড়ক নতুন রূপে সাজে। দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এখানে আসেন ছবি তুলতে।

পথচারীরা জানান, ফুলগুলো দেখলে মন প্রশান্তিতে ভরে যায়। গাছের ছায়া ও বাতাসে প্রাণটা জুড়িয়ে যায়। প্রখর রোদের মধ্যেও যেন এখানে একটু সবুজের শান্তি পাওয়া যায়।

;

নগরে ফুলের জলসা, গ্রীষ্মের উত্তাপে সৌরভ, স্বস্তি 



মানসুরা চামেলী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
হাতিরঝিলে নাগরিক পর্যটকদের স্বাগত জানায় উচ্ছল জারুল, রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া ও সোনাইল/ছবি: নূর এ আলম

হাতিরঝিলে নাগরিক পর্যটকদের স্বাগত জানায় উচ্ছল জারুল, রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া ও সোনাইল/ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

চারিদিকে খাঁ খাঁ রোদ্দুর। যেন বইছে গনগনে আগুনের ফুলকি। চারপাশের পরিবেশ ফুটন্ত কড়াইয়ে মতো টগবগে। দাবদাহের তেজে ব্রহ্মতালু ফেটে যাওয়ার উপক্রম। তাপদগ্ধ চরাচর ক্লান্ত, স্তব্ধ, স্থবির। বৈশাখের রুদ্র রূপে বিপর্যস্ত নাগরিক পরিসর আর জনজীবন। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় উচ্চারিত গ্রীষ্মের প্রতিচ্ছবিই দেখা যাচ্ছে রাজধানীর প্রকৃতিতে: 'প্রখর তপনতাপে, আকাশ তৃষায় কাঁপে,/বায়ু করে হাহাকার।’

পরিস্থিতি যখন এমনই খরতাপে পোড়া ও তামাটে, ঠিক তখন একপশলা বৃষ্টির ছোঁয়া ঢাকা নগরীর পথে পথে জাগিয়েছে খণ্ড খণ্ড ফুলের জলসা। গ্রীষ্মের এই রংবাহারের উজ্জ্বলতা এবং সৌরভ; নাগরিক বিড়ম্বনা মুছে বুলিয়ে দিয়েছে অনিন্দ্য স্বস্তির পরশ।

সাদা গোলাপীর মিশলে সোনাইল—দূর থেকে মনে হয় পুষ্পিত পোস্টকার্ড/ছবি: নূর এ আলম


নগরের ইটপাথর, কংক্রিটের কংকালের মধ্যে তাপ ও দূষণের সাম্রাজ্যে নানা রঙের বর্ণিল ফুলের বৃন্ত ও পত্রালীতে খেলা করছে মুক্তি ও স্বাধীনতার আরাম। কৃষ্ণচূড়ার বুনো ঘ্রাণ, টগরের শুভ্রতা এবং সোনালুর স্নিগ্ধ সৌন্দর্য দাবদাহে পীড়িত রাজধানীতে বসিয়েছে ফুলের জলসা। নিয়ে এসেছে রঙের উল্লাস। গন্ধের মাদকতা। ভালোলাগার এক অনির্বচনীয় অনুভূতি।

উচ্ছল জারুল


গ্রীষ্মের তপ্ত রোদের মধ্যেই শুক্রবার ও শনিবার ছুটির জোড়া দিনে হাতিরঝিলের নাগরিক পর্যটকদের স্বাগত জানাল উচ্ছল জারুল, রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া, কনকচূড়া ও সাদা গোলাপীর মিশলে সোনাইল। খুব কাছ থেকে দেখলে মনে হাতিরঝিলে ‘সোনাইল ব্লসম উৎসব’ চলছে। আর দূর থেকে মনে হয় পুষ্পিত পোস্টকার্ড।

কৃষ্ণচূড়ার বুনো ঘ্রাণ, টগরের শুভ্রতা এবং সোনালুর স্নিগ্ধ সৌন্দর্য দাবদাহে পীড়িত রাজধানীতে বসিয়েছে ফুলের জলসা/ছবি: নূর এ আলম


হালকা বাতাসে সোনাইল দুলুনির সমান্তরালে গুঞ্জরিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে বহে কিবা মৃদু বায়' গানের শিহরণ জাগানিয়া আবেশ। হাতিরঝিলের পথে পথে হেঁটে ক্লান্ত হলে ছায়া দিতেও প্রকৃতি তৈরি হয়ে আছে। ফুলে ভরা মেঘশিরীষ গাছ প্রসারিত শাখা ও পল্লবে কাছে টানছে পথিকের মনোযোগ। এখানে জারুলের এমন অপূর্ব রূপ— চলতি পথে গাড়ি থামিয়ে, হাঁটতে হাঁটতে থমকে গিয়ে ক্যামেরাবন্দী করছেন নগরীর মানুষ।

নানা রঙের বর্ণিল ফুলের বৃন্ত ও পত্রালীতে খেলা করছে মুক্তি ও স্বাধীনতার আরাম/ছবি: নূর এ আলম


‘কি বলব- এত গরম, সহ্য করার মতো না। আমার বাসা মধুবাগে। প্রায় হাতিরঝিলে বাতাস খেতে আসি। এত ভালো লাগে বোঝাতে পারব না। তার সঙ্গে বাহারি ফুল তো রয়েছেই। অনেক ফুল চিনি না— কিন্তু ব্যাপারটা অসাম’, বলছিলেন হাতিরঝিলের বেঞ্চ বসা ইরাব নামের এক টগবগে যুবক। এখানকার প্রকৃতি যেন অগোচরে ইরাবের মতো অনেক তরুণ-যুবককে প্রকৃতিপ্রেমী ও ভাবুক বানিয়ে দিয়েছে।

নতুন শহর পূর্বাচলের সড়কে করবী/ছবি: নূর এ আলম


গ্রীষ্মের এই রূপ শুধু ঢাকার পর্যটন-হটস্পট হাতিরঝিলে নয়, প্রাচীন ও রমনীয় রমনা পার্ক, কলোনিয়াল আরবান নস্টালজিয়া মিন্টো রোড, আধুনিক এয়ারপোর্ট রোড, কুড়িল, স্থাপত্যকলার নান্দনিক সংসদ ভবন এলাকা ও ক্রিসেন্ট লেকসহ যেদিকে চোখ যায়- শুধু চোখে পড়ে ফুলের হাসি, রঙের খেলা। ইন্দ্রিয় স্পন্দিত হয় উদ্ভিদজাত গন্ধে ও সৌরভে।

কুড়িলে কৃষ্ণচূড়ার উচ্ছ্বাস/ছবি: নূর এ আলম


নগরীর সর্বাধুনিক সংযোজন মেট্রোরেলে বা এক্সপ্রেস ওয়ে থেকে বিস্তৃত রাজধানীর দিকে তাকালে সুবিশাল দালান-কোঠা আর সবুজের ফাঁকে মাথা চাড়া দিচ্ছে জারুল, কৃষ্ণচূড়া ও গ্রীষ্মকালীন গাছপালার উচ্ছ্বাস। কোথাও কোথাও ছাদবাগানের বিভা। ফুলে ফুলে রঙিন এসব দৃশ্য প্রাচ্যের রোমান্টিক নগরী ঢাকার প্রাচীন স্মৃতি মনে দোলা দেয়। ক্ষণিকের জন্য বর্ণিল ফুলে ছাওয়া এক অন্য ঢাকা হৃদয়ের অলিন্দে জায়গা করে নেয় সুভাষিত আবাহনে।

সবুজ পাতা ছাপিয়ে সোনালি রঙের ফুলে সেজেছে সোনালু গাছ/ছবি: নূর এ আলম


সংসদ ভবন এলাকা ও ক্রিসেন্ট লেকে গেলে তো মনে হবে সুনীল আকাশের পানে চেয়ে কৃষ্ণচূড়া বলছে- ‘কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-/আমি ভুবন ভোলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে’। এখানে চোখে পড়ে লেকের দু’ধারে কৃষ্ণচূড়ার সুদৃশ্য বীথি-  ‘ডাক দিয়ে যায় পথের ধারের কৃষ্ণচূড়ায়।’ বাতাসে কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ি ঝরে রঙিন হয়ে ওঠা চলার পথ।

চন্দ্রিমা উদ্যান; গাছের পাতার সবুজ রঙ আজ যেন আরও গাঢ় হয়েছে


এমন মনোরম প্রকৃতিতে ক্রিসেন্ট লেকে গরম নিবারণে নেমে পড়েছে একদল ডানপিটে কিশোর। যারা কৈশারকাল উদযাপনে মেতেছে। 

পাশেই চন্দ্রিমা উদ্যান; গাছের পাতার সবুজ রঙ আজ যেন আরও গাঢ় হয়েছে। গত রাতে ঝরেছে বহু প্রতীক্ষার বৃষ্টি। দীর্ঘ তাপদাহে পোড়ার পর বৃষ্টির পরশ পেয়ে গাছগুলো যেন- প্রাণ পেয়েছে। চড়া রোদে স্নিগ্ধ হয়ে দেখাচ্ছে সবুজ পাতা। নেতিয়ে পড়া ফুল আড়মোড়া ভেঙে সুভাষ ছড়াচ্ছে। প্রাণবন্ত সবুজ পাতার ফাঁক গলে উঁকি দিচ্ছে হরেক রঙ ও রূপের ফুল।

কংক্রিটের নগরীতে কৃষ্ণচূড়ার স্পর্শ/ছবি: নূর এ আলম


‘শোনো বন্ধু শোনো,/ প্রাণহীন এই শহরের ইতিকথা/ ইটের পাঁজরে, লোহার কাটায়/দারুণ মর্মব্যথা।/এখানে আকাশ নেই,/এখানে বাতাস নেই,/ এখানে অন্ধ গলির নরকে/মুক্তির আকুলতা।/জীবনের ফুল মুকুলেই ঝরে...।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তার গানে নগরীকে তুলনা করেছেন ইটপাথরের প্রাণহীন গলি হিসেবে। যেখানে ব্যস্ততার ফাঁকে লুকিয়ে থাকে নানা কষ্ট। তবে এমন প্রাণহীন নগরীতে প্রশান্তির গান ধরেছে আগুন ঝরা কৃষ্ণচূড়া, সোনালু আর জারুল। সঙ্গে অফুরান শোভা ছড়িয়েছে ডুলি চাপা, বরুণ, নাগলিঙ্গম, মাধবীলতা ও কাঠগোলাপ। গরমে ওষ্ঠাগত জীবনে ঢাকার প্রকৃতির রূপ-রস মনে শান্তির সু-বাতাস বইয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে নগরীর ফুলের নৈসর্গিকতা উপভোগ করার সবচেয়ে ভালো সময় ছুটির দিন।

হাতিরঝিলের পথে দেখা মেলে কাঠগোলাপের


‘উষ্ণ তাপমাত্রার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সবুজ ও মনোরম পরিবেশ তৈরির দিকে জোর দেওয়া প্রয়োজন’ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীমউদ্দিন।

তিনি বলেন, ঢাকার প্রকৃতিকে মনোমুগ্ধকর করতে দেশি ফুলের গাছ দিয়ে সাজালে আরো ভালো হত। পরিকল্পিতভাবে ১০টি প্রধান অ্যাভিনিউকে ফুলের গাছ দিয়ে সাজানো যেতে পারে। তাহলে শোভা বর্ধনের পাশাপাশি মানুষকে প্রশান্তি দিত- এই নগর।

সোনালুর ছায়া মাখানো পথ/ছবি: নূর এ আলম


মাঝে মাঝে এই ঢাকা, একদিন স্বপ্নের দিন হয়ে, ফুলের জলসার মুগ্ধতা দগ্ধ নাগরিক জীবনের সকল গ্লানি মুছে দিয়ে যায়।  

;

হারিয়ে যাওয়া বিয়ের আংটি খুঁজে পেলেন ৫৪ বছর পর!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

৫৪ বছর পর হারিয়ে যাওয়া বিয়ের আংটি খুঁজে পেয়েছেন ম্যারিলিন বার্চ (৭৬)। তিনি যুক্তরাজ্যের ওয়েলসের পন্টারডাউইর বাসিন্দা।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

ম্যারিলিন বার্চ স্কাই নিউজকে বলেন, এতো বছর পর আংটিটি খুঁজে পাওয়া সত্যিই অবাক করা বিষয়। ১৯৭০ সালে পারিবারিক খামারে গরুকে খড় খাওয়ানোর সময় আংটিটি হারিয়ে গিয়েছিল। পরে অনেক খোঁজার পরও না পেয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। ভেবে নিয়েছিলাম এটা আর কখনো পাবো না।

তবে শনাক্তবিদ কিথ ফিলিপসের মনে ছিল অন্য কিছু। তিনি খামারের লোকজনকে বিভিন্ন সময় সেখানকার ভূমি খননের পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। তাঁর হিসাবে, সেখানে মাটির নিচে অনেক মূল্যবান জিনিস থাকতে পারে।

সেখান থেকে পাওয়া বিভিন্ন মুদ্রা এবং বিটের টুকরা আমাদের দেখাতেন। কিন্তু আংটিটির খোঁজ মেলেনি। 

ম্যারিলিন বলেন, ‘এক সন্ধ্যায় ফিলিপস যখন খামার ত্যাগ করছিলেন, আমি তাঁকে ঠাট্টাচ্ছলে বলি, ফিলিপস শোনো, যেসব আবর্জনা তুমি উদ্ধার করেছ এসব ফেলো। যাও, আমার বিয়ের আংটিটি খুঁজে বের করতে পার কি না, দেখো।’

এ কথা শোনার পর তারা দুজনেই তখন হেসেছিল। তবে এক সপ্তাহ বা তারও কিছু সময় পরে ফিলিপস ম্যারিলিনের আংটিটি নিয়ে হাজির হন।

ম্যারিলিন বলেন, আংটিটিকে খামারের মাঠে মাটির প্রায় ৮ ইঞ্চি নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে সেটিকে তিনি ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করেছেন এবং তখন থেকেই তিনি এটিকে আঙ্গুল দিয়ে রেখেছেন।

মিসেস বার্চের স্বামী পিটার বার্চ গত জানুয়ারিতে ৮০ বছরে পা দিয়েছেন। সে উপলক্ষে অনুষ্ঠান করার কথা ছিল। কিন্তু এমন ঘটনার পর সব আয়োজন স্থগিত করা হয়েছে। এখন সবকিছু এই আংটিটি ঘিরেই হচ্ছে।

;