দুবাই থেকে ইউরোপ যাওয়ার সহজ উপায়!



তোফায়েল আহমেদ (পাপ্পু্‌), বার্তা২৪.কম, সংযুক্ত আরব আমিরাত (দুবাই)
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইউরোপে ভ্রমণ বা বসবাস আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো। আমাদের জীবনের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য এবং নিরাপদ জীবনের জন্য প্রায়ই ইউরোপের দেশগুলোর দিকে ছুটতে থাকি। কেননা, সেই দেশ গুলোতে জীবিকার মান অনেক উন্নত। আর আপনি যদি সেই দেশ গুলোতে গিয়ে কাজ করতে পারেন। তাহলে আপনি উন্নত জীবন উপভোগ করার পাশাপাশি ভালো বেতনের সুবিধা নিতে পারবেন।

ইউরোপে ছুটার পেছনে আমাদের অনেক প্রতিবন্ধকতা থেকে থাকে। যেমন আমাদের অনেকের টাকার অভাব থাকে, অনেকের কাছে যথেষ্ট পরিমাণে অর্থ থাকা সত্ত্বে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ যাওয়ার উপায় সম্পর্কে না জানার কারণে ইউরোপে যেতে পারে না।

ইউরোপে যাওয়ার জন্য অন্যতম মাধ্যম দেশ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতকে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারতসহ এশিয়ার দেশসমূহের লোকজন সংযুক্ত আরব আমিরাত অর্থাৎ দুবাইকে বেছে নেন। কেননা দুবাই থেকে ইউরোপ যাওয়ার প্রসেসিং সিস্টেম সহজতর হওয়ায় ভিসা পাওয়া সম্ভব হয়। আজ আপনাদের সাথে আলোচনা করবো যারা দুবাই থেকে ইউরোপে ট্যুরিস্ট ভিসায় যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন তাদের জন্য পরামর্শ।

আপনি যদি চিন্তা-ভাবনা করে থাকেন যে দুবাই থেকে ইউরোপে প্রবেশ করবেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে প্রথমত দুবাইয়ে প্রবেশ করা লাগবে। সেখানে আপনি ভিজিট ভিসা অথবা সরাসরি এমপ্লয়মেন্ট ভিসা নিয়ে খুব সহজে যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে কোনো রকমের সমস্যা হয় না। বর্তমানে দুবাই ভিজিট ভিসা পাওয়া অনেকটা সহজ একটি ব্যাপার। সে ক্ষেত্রে কিছু টাকা খরচ করলেই আপনি দুবাইয়ের ভিজিট ভিসা পেয়ে যাবেন। কোন রকমের ঝামেলা হবে না।

যদি ভিজিট ভিজিট ভিসায় দুবাইতে এসে থাকেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই যেকোনো একটি রেসিডেন্সিয়াল ভিসার জন্য কাজে নিয়োজিত হতে হবে। এই ক্ষেত্রে আপনি আপনার ফ্রেন্ড অথবা পরিচিত কারো মাধ্যমে এই সুযোগটা করে নিতে পারবেন। যদি সরাসরি এমপ্লয়মেন্ট ভিসা নিয়ে আসেন তাহলে এই ভিসাতেই হবে রেসিডেন্সি ভিসা যা দুই বছর মেয়াদ। আপনার ভিসার প্রফেশন অবশ্যই ম্যানাজার ক্যাটাগরির হতে হবে। আপানি যে ভিসা নিবেন তাতে যেন আপনার মাসিক বেতন হিসাবে যেন ৫ হাজার দিরহাম এর বেশি বেতন উল্লেখ করা থাকে তা মনে রাখবেন। আর প্রতিমাসে যে আপনার বেতন ব্যাংকে ট্রান্সফার করা যায় সে বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। তবে কাজ পাওয়াটা দুবাইয়ে একটু কঠিন ব্যাপার কিন্তু চেষ্টা করলে সম্ভব। যখন আপনি দুবাইয়ে কাজে নিয়োজিত হয়ে যাবেন এবং আপনার দুই বছর মেয়াদী একটি ভিসা পেয়ে যাবেন তখন কিন্তু আপনি এক বছর থাকার পরেই ইউরোপে যাওয়ার জন্য আপনি প্রস্তুত হতে পারবেন। এর আগে দুবাইয়ের যেকোন একটি ব্যাংকে আপনাকে একাউন্ট খুলতে হবে।

ভিসা প্রস্তুত ও ব্যাংক একাউন্ট হওয়ার জন্য অবশ্যই আপনাকে ট্রাভেল হিস্ট্রি করা লাগবে। প্রথমে আপনাকে ছোট দেশগুলোতে ভ্রমণ করা লাগবে। দুবাই থেকে সহজে ছোট ছোট দেশগুলোর ভিসা পাওয়া সহজ। যেমন ওমান, কুয়েত, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, জর্জিয়া, আজারবাইজান, মিশরসহ অন্যান্য ছোট ছোট দেশ গুলোতে আপনাকে ভ্রমণ করে ট্রাভেল হিস্ট্রি তৈরি করতে হবে।

এইভাবে আপনি ইউরোপের ভিসা পাবার জন্য এই কাজগুলো করে নিবেন। তাহলে ভিসা পাওয়া সহজ একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। কারণ ইউরোপে যাওয়ার জন্য এই বিষয়গুলো দেখা হয়। এর পাশাপাশি আপনার ব্যাংক একাউন্ট স্ট্রং করতে হবে। প্রতি মাসে স্যালারি একাউন্টে ডব্লিউপিএস করতে হবে। এইভাবে এক বছর অতিক্রম হওয়ার পর ও যখন রেসিডেন্সি ট্রাভেল হিস্ট্রি, ব্যাংক স্টেটমেন্ট সবকিছু ঠিকঠাক থাকবে তারপর আপনি নিজে অথবা ভাল কোন ট্রাভেল এজেন্সির সহযোগিতায় ইউরোপের ভিসার জন্য ফাইল প্রসেসিং করতে হবে।

ইউরোপের ভিসার জন্য যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন হবে লাগবে সেগুলো হলো:

ছয় মাস মেয়াদি আপনার পাসপোর্ট কপি এবং এম্বেসিতে মেইন পাসপোর্ট সাথে নিতে হবে, দুবাই রেসিডেন্সি ভিসার কপি, এমিরেটস আইডি কার্ডের কপি
তিন অথবা ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট, এনআইডি কার্ডের ফটোকপি (যদি থাকে), দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, হোটেল বুকিং এর প্রমাণপত্র
বিমান টিকিট, পূর্বে ট্রাভেল করেছেন তার প্রমাণ অর্থাৎ যেসব দেশে আপনি ভ্রমন করেছেন সেগুলোর ফটোকপি, যে কোম্পানিতে আপনি ভিসা নিয়েছেন, সেখান থেকে একটা এনওসি লেটার, কী উদ্দেশ্যে ইউরোপ যাচ্ছেন তার একটি বিবরন দিয়ে কভার লেটার।

এই রিকোয়ারমেন্ট গুলো সাধারণত আপনার যখন হয়ে যাবে তখন এজেন্সীর মাধ্যমেই তারা ভিসা কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। সমস্ত ডকুমেন্টস নিয়ে তারাই কাজকর্ম করবে। তবে এক্ষেত্রে কিন্তু আপনি চাইলে নিজেও এজেন্সি অথবা দূতাবাসের মাধ্যমে এগুলোর জন্য কাজ করতে পারবেন। যদি আপনি নিজেই পারেন তাহলে সরাসরি নিজে গিয়ে করা ভালো হবে। এক্ষেত্রে দালালের মাধ্যম এড়িয়ে চলবেন এবং অবশ্যই বৈধ পথে চলার চেষ্টা করবেন। তাহলেই আশা করা যায় সফল হতে পারবেন।

   

'রিমাল'-এর ধ্বংসযজ্ঞ সয়ে কেমন আছে সুন্দরবন!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সুন্দরবনে মৃত হরিণ / ছবি: বার্তা২৪

সুন্দরবনে মৃত হরিণ / ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বঙ্গোপসাগর থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে ঘণ্টাপ্রতি ৮০ কিলোমিটারের চেয়ে বেশি বেগে ধেয়ে আসছিল ঘূর্ণিঝড় রিমাল। সাগরে ঢেউয়ের উত্তাল রূপ এবং প্রচণ্ড শক্তিশালী বাতাসের ধাক্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েই উপকূলীয় এলাকার মানুষজন। শনিবার (২৫ মে) থেকেই পাওয়া পূর্বাভাসে মানুষ বেশ বুঝতে পারছিল, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি বয়ে আনবে 'রিমাল'।

সৌভাগ্যবশত, বাংলাদেশকে বেষ্টিত করেছে আমাদের সুন্দরবন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় নোনাপানি উপকূলের ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন অতিক্রম করে যাওয়ার সময় রিমালের বেগ অনেকটাই শিথিল হয়ে আসে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপের দণ্ড নিজ মাথায় পেতে নিয়েছে সুন্দরবন। এতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে বনের অভ্যন্তরীণ চিত্র। পানিরে আধিক্যে ছেয়ে রয়েছে পুরো বন। ভাঙা-আধভাঙা গাছ লুটিয়ে পড়ে আছে। মিঠাপানির পুকুরে সমুদ্রের নোনাজল মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বন অফিসের অধিকাংশ টহল ফাঁড়ি ও বোট এবং সেইসঙ্গে যাতায়োতের পোল। ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে রয়েছে চালাঘরের টিন, দরজা, জানালা, সোলার প্যানেলসহ অবকাঠামোর বিভিন্ন অংশ।

এমনকী রিমালের ক্ষতির মূল্য দিতে হয়েছে বনে বসবাসকারী প্রাণীদেরও। ঘূর্ণিঝড়ের প্রবল তাণ্ডবে কেবল মানুষ নয়, প্রাণ হারিয়েছে অনেক অবলা প্রাণী।সর্বশেষে তথ্যমতে, সুন্দরবন থেকে ২৮টি মৃত হরিণ এবং ১ টি বন্য শুকরের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। 

রবি-সোমবার (২৬ ও ২৭মে) রিমাল-এর তাণ্ডব চলে টানা ২০ ঘণ্টা। ঝড় শান্ত হওয়ার পর বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ পশুদের আহত এবং নিহতের এই সর্বশেষ খবর মঙ্গলবার নিশ্চিত করেছে। বনে বসবাসকারী অন্যান্য বহু পশু-পাখিরও মৃত্যু হয়েছে এই দুর্যোগে। এখনো অনেক আহত প্রাণী উদ্ধার কার্যে ব্যস্ত রয়েছেন বনরক্ষা কর্মীরা। এ পর্যন্ত ১৭ টি আহত হরিণ উদ্ধার করে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে বনরক্ষীরা। এরপর তাদের নিরাপদে বনে ফেরত পৌঁছে দেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি আরও পশু আহত হয়েছে কিনা খোঁজ করা অব্যাহত রয়েছে। 

ঝড়ে অনবরত ভারী বর্ষণে তলিয়ে যায় সুন্দরবনের ভূমি। তাছাড়া, ঝড়ো হাওয়ার দাপটে উপড়ে গেছে বহু গাছ। প্রকৃতির এরকম পরিবেশের কারণেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে অবলা প্রাণীগুলো!

;

উপকূলে ঝড়ের বিপদ সংকেত, ঢাকায় চিত্রকরের নীল মেঘ!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

উপকূলে চলছে ৩ নম্বর বিপদ সংকেত। দমকা বাতাসের তোড়ে সমুদ্রে উত্তাল ঢেউ। আকাশে হৈ হৈ রব তুলে দখল করেছে কালো মেঘ। ছড়িয়ে দিচ্ছে গুড়ুম গুড়ুম ডাক! কয়েক ঘণ্টা বাদেই প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আসার সম্ভাবনা। তবে কথায় বলে, বাজ পড়ার আগে আকাশ শান্ত হয়ে যায়!

ঠিক যেন প্রকৃতি তার সেই রূপটিই মেলে ধরলো। উপকূল অঞ্চলগুলোতে মানুষজনকে সতর্ক করা হচ্ছে। ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ অথচ রাজধানীর আকাশ স্নিগ্ধ-কোমল!

শুধু কী তাই! ছবি আঁকার পর শিল্পী তার রঙ মাখা তুলিগুলো এলোমেলো করে ফেলে রাখে যেমন, সেই ছবি যেন আকাশে সেঁটে দিয়েছে কেউ। লাল, গোলাপি, কমলা, নীল, বেগুনি রঙের মিশ্রণে অপূর্ব সুন্দর এক এলোমেলো চিত্র উঁকি দিচ্ছে আকাশে। তার মাঝে ধূসর মেঘ ঘোলা জলে মাছের মতো দুরন্তপনায় ছুটে যাচ্ছে বহুদূর।

শনিবার (২৫ মে) গোধুলি লগ্নে ঢাকার আকাশ ঠিক এভাবেই রঙিন হয়ে ওঠে। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ রংধনুর ছোঁয়া ছাড়াই রঙিন পটচিত্রের রূপ মেলে ধরে গগন, যেন আকাশ নয়, কোনো চঞ্চলা কিশোরীর উৎফুল্ল মন! প্রকৃতি এখন স্তব্ধ হয়ে আছে। গাছের একটি পাতাও যেন নড়ছে না। অন্যদিকে, বঙ্গোপসাগরের অথৈ উম্মাদনা। স্থানীয়দের ভয়, জলোচ্ছ্বাসে যেন তাদের জনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এমনি করেই প্রকৃতির বহুরূপী লীলাখেলা চলতে থাকে অবলীলায়।

;

বিখ্যাত মিমের ভাইরাল কুকুর কাবোসু আর বেঁচে নেই



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ভাইরাল কুকুর কাবোসু / ছবি: সংগৃহীত

ভাইরাল কুকুর কাবোসু / ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যখন মানুষ জুড়তে শুরু করলো ইন্টারনেটে নতুন অনেক নতুন উদ্ভাবনার দেখা মিললো। এমন এক ব্যাপার হলো মিম। বর্তমান সময়ে সেন্স অব হিউমারের (রসবোধ) এক অন্যতম মাধ্যম এই মিম। বিশেষত কোনো ছবি ব্যবহার করে তাতে হাস্যরসাত্মক কিছু জুড়ে দিয়ে এইসব মিমগুলো বানানো হয়।

২০১৩ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমনই একটি ছবি ভাইরাল হয়। পরবর্তী সময়ে যা একটি বিখ্যাত ‘মিম ম্যাটেরিয়াল’-এ পরিণত হয়। কমলা-সোনালী এবং সাদা রঙের সম্বনয়ে বাহারি লোমের এই কুকুরটির নাম কাবোসু। কাবোসুর বয়স ১৯ বছর।

দুর্ভাগ্যবশত কুকুরটি আর বেঁচে নেই। ২৪ মে (শুক্রবার) দীর্ঘদিন ধরে রোগাক্রান্ত থাকার পর অবশেষে দেহ ত্যাগ করে কুকুরটি। কুকুরটির মালিক আতসুকো সাতো (৬২) জাপানের চিবা প্রিফেকচারের সাকুরা শহরের একটি কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক।শুক্রবার তার প্রকাশিত ব্লগে একটি দুঃখের কবিতা আবৃত্তির পর তিনি এই খবরটি নিশ্চিত করেছেন।

ভাইরাল কুকুর কাবোসু / ছবি: সংগৃহীত

১৯ বছর বয়সেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। ২৬ মে রবিবার কাবোসুর স্মরণে একটি স্মরণ সভার আয়োজনও করা হবে। কুকুরটির মারা যাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সকলে দুঃখ প্রকাশ করছে।

২০২২ সালে ক্রোানক লিম্ফোমা লিউকুমিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল। সেই থেকেই কাবোসুর চিকিৎসা চলছিল। তবে দুঃখের বিষয়, সে আর সুস্থ হয়ে ফিরতে পারলো না।

কাবোসুর ত্যাড়া চোখে দৃষ্টির একটি ছবি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। এটি ইন্টারনেটে সবচেয়ে আইকনিক এবং স্বীকৃত ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এমনকি ক্রিপ্টো কারেন্সির দুনিয়াতেও তার নাম ছিল।

;

বুদ্ধ পূর্ণিমার তাৎপর্য



অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা। বুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এক মহান দিন এটি। এই দিনে গৌতম বুদ্ধ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেন। একই দিনে মহাজ্ঞানী বুদ্ধত্ব এবং বুদ্ধ মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। এই তিথিকে বলা হয় বৈশাখী পূর্ণিমা, যা আজ বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক ভেসাক ডে হিসেবে পালন করা হয়। বৈশাখ মাসের এই তিথিতে মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংগঠিত হয়েছিল। ত্রি-স্মৃতিবিজড়িত এ তিথির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অত্যন্ত বিশাল।

খ্রিস্টপূর্ব ৬২৩ অব্দে এই দিনে আড়াই হাজার বছর আগে মহামতি গৌতম বুদ্ধ ভারতবর্ষের তৎকালীন কপিলাবস্তু দেবদহ নগরের মধ্যবর্তী লুম্বিনী কাননে মাতা রানী মায়াদেবীর পিতৃগৃহে যাবার পথে শালবৃক্ষের নিচে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৮ অব্দে ৩৫ বছর বয়সে বোধিবৃক্ষমূলে কঠোর সাধনা বলে তিনি বুদ্ধত্ব লাভ করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৫৪৩ অব্দে ৮০ বছর বয়সে একই দিনে ৪৫ বছর দুঃখ মুক্তির ধর্ম প্রচার করে কুশীনগরে যুগ্মশাল তরুণমূলে চিরনির্বাসিত হয়ে মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন অর্থাৎ তিনি দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ করেছেন। পৃথিবীতে আর জন্মলাভ করবেন না। গৌতম বুদ্ধের পিতার নাম ছিল রাজা শুদ্ধধন ও গৃহী নাম ছিল সিদ্ধার্থ। ২৫২৭ বছর আগে ভারতবর্ষে যখন ধর্মহীনতা মিথ্যা দৃষ্টি সম্পন্ন বিশ্বাস্বে ধর্মে সমাজের শ্রেণি বৈষম্যের চরম দুরবস্থা ও কুসংস্কারে নিমজ্জিত, প্রাণী হত্যায় চরম তুষ্টি ,তখন শান্তি মৈত্রী অহিংস সাম্য ও মানবতার বার্তা নিয়ে মহামতি বুদ্ধের আবির্ভাব ঘটে।

গৌতম বুদ্ধ অহিংস ও মৈত্রীর বাণী প্রচার করেছেন। এই জীবজগৎ অনিত্য দুঃখ অনাত্মাময় প্রাণমাত্রই প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। অস্থায়ী বা অনিত্য কার্যতকারণের অধীন। তিনি জীবনের প্রগাঢ় খাটি চার আর্যসত্য আবিষ্কার করলেন। জগতে দুঃখ আছে, দুঃখের অবশ্যই কারণ আছে, দুঃখের নিবৃত্তি আছে, দুঃখ নিবৃত্তির উপায় আছে। দুঃখ নিবৃত্তির উপায় হলো নির্বান লাভ। এই নির্বান লাভের ৮টি মার্গ আছে। যেমন সম্যক বা সঠিক দৃষ্টি , সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম, সম্যক জীবিকা, সম্যক প্রচেষ্টা, সম্যক স্মৃতি, সম্যক সমাধি। এই পথ পরিক্রমায় শীল সমাধি প্রত্তোয় নির্বাণ লাভের একমাত্র উপায়। সব প্রাণী সুখী হোক, পৃথিবীর সবচেয়ে পরম, মহৎ বাণী তিনি প্রচার করেছেন। শুধু মানুষের নয়, সব প্রাণ ও প্রাণীর প্রতি, প্রেম, ভালোবাসা, অহিংসা, ক্ষমা, মৈত্রী, দয়া, সহনশীলতা, সহমোর্মিতা, সহানুভূতি, মমত্ববোধ, প্রীতি, সাম্য, সম্প্রীতির কথা তিনি বলেছেন।

১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ৫৪/১১৫ রেজুলেশন এ দিনটিকে আন্তর্জাতিক ভেসাক ডে হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। সেই থেকে এই দিনটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ “ভেসাক ডে” হিসেবে পালন করে আসছে। বুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত পবিত্র এই দিনকে বিভিন্ন নামে পালন করা হয়। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, নেপালে বুদ্ধ পূর্ণিমা, লাওসে বিশাখ পূজা, ইন্দোনেশিয়া হারি ওয়াইসাক ডে, মালয়শিয়ায় ওয়েসাক ডে, মায়ানমারে ফুল ডে অব কাসন, সিঙ্গাপুরে হারি ভেসাক ডে নামে পালন করে থাকে আবার কেউ বুদ্ধ জয়ন্তী দিবস হিসেবেও পালন করে থাকে।

জাতিসংঘের মহাসচিব এস্তেনিও গুতেরেজ ভেসাক ডে উপলক্ষে বলেছেন, “On the day of Vesak, Let us celebrate Lord Buddha’s wisdom by taking action for others with compassion and solidarity and by renewing our commitment to build a peaceful world.”

ফিলিস্তিনে আজ চরমভাবে মানবতা বিপন্ন হচ্ছে। অশান্তিময় এই পৃথিবীতে বুদ্ধের মৈত্রী, সংহতি, সাম্য, মানবতা ও শান্তির বাণী বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আজও প্রাসঙ্গিক এবং খুব প্রয়োজন। বিশ্ব আজ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি। পরিবেশ দূষণ, গ্লোবাল ওয়ার্মিং, জলাবদ্ধতা, বৃক্ষ নিধন, বন উজাড়, জীব বৈচিত্র্য হ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তন এই সবুজ গ্রহের ইতিহাসে নজিরবিহীন। গৌতম বুদ্ধই প্রথম বৃক্ষকে এক ইন্দ্রিয় বিশিষ্ট জীবরূপে আখ্যায়িত করেছেন। বুদ্ধ ছিলেন বিশুদ্ধ পরিবেশবাদী দার্শনিক। পরিবেশ রক্ষা ও সংরক্ষণে তিনি সব সময় সোচ্চার ছিলেন। তাই বুদ্ধের জন্ম বুদ্ধত্ব লাভ ও মহা পরিনির্বাণ বৃক্ষের পদমূলের বিশুদ্ধ পরিবেশ মন্ডিত পরিবেশে সংগঠিত হয়েছিল।

এই পবিত্র দিনে বৌদ্ধরা বিভিন্ন দেশে দেশে সব প্রাণীর সুখ শান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা করেন। অশান্ত পৃথিবীতে পরিবেশ সংরক্ষণে বুদ্ধের বাণী নীতি ও আদর্শ বিশ্ব মানবতার শিক্ষা, দর্শন, চিন্তা চেতনা ,ভাবনা সুন্দর, শান্ত, সাম্যময় পৃথিবী গড়ার বিকল্প নাই। সব প্রাণী সুখী হোক, দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ করুক।

অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া
চিকিৎসক, লেখক, সংগঠক ও গবেষক

;