মারা গেলেন বিশ্ব রেকর্ড করা সেই ডরোথী হফনার



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মারা গেলেন বিশ্ব রেকর্ড করা সেই ডরোথী হফনার

মারা গেলেন বিশ্ব রেকর্ড করা সেই ডরোথী হফনার

  • Font increase
  • Font Decrease

মাত্র এক সপ্তাহ আগে স্কাই ডাইভ দিয়েছিলেন প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার ফুট (৪১১৪ মিটার) উঁচু থেকে। নাম লিখিয়েছিলেন গিনিস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের পাতায়। রোববার (৮ অক্টোবর) রাতে ঘুমের মধ্যেই মৃত্যু হয় ১০৪ বছর বয়সী এই দুঃসাহসিক নারীর। প্রতিবেদন- ইউএসএ টুডে।

জো কন্যান্ট নামে ডরোথির এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু জানান, সোমবার সকালে ব্রুকডেল লেক ভিউ সিনিয়র কমিউনিটিতে মৃত অবস্থায় তাকে পাওয়া গেছে। ঘুমের মধ্যেই ডরোথির মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করেছেন তারা।

ডরোথী একজন প্রাণবন্ত নারী ছিলেন। তিনি সব সময় নতুন নতুন অভিজ্ঞতা নিতে চাইতেন। স্কাই ডাইভিং এর মতো দুঃসাহসিক অভিজ্ঞতা নিতে তিনি প্রায় ১৩ হাজার ফুট উঁচু থেকে লাফিয়ে পড়েছিলেন।

ডরোথী সব সময় আনন্দ করে সময় কাটাতেন। তিনি কখনো কোন অনুষ্ঠানে যাওয়া থেকে বিরত থাকতেন না। এমনকি বিকালে তিনি ঘুমাতেনও না। বয়স যার কাছে ছিল একটি সংখ্যা মাত্র সেই উচ্ছল নারী এত তাড়াতাড়ি পরপারে চলে যাবেন এটি প্রত্যাশিত ছিল না বলে জানান তার বৃদ্ধাশ্রমের এক নার্স। তাঁর মৃত্যুতে পুরো বৃদ্ধাশ্রম শোকার্ত বলে তিনি।

এদিকে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ডরোথীর মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করেছে স্কাই ডাইভ শিকাগো ও যুক্তরাষ্ট্র প্যারাসুট অ্যাসসিয়েশন। 

১৯১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে জন্মগ্রহণ করেন ডরোথী। ছোটবেলা থেকেই ভীষণ সাহসী ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি প্রথম ১০ হাজার ফুট থেকে স্কাইডাইভ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর গত ১ লা অক্টোবর ১০৪ বছর বয়সে সাড়ে ১৩ হাজার ফুট উঁচু থেকে দ্বিতীয়বার লাফ দিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েন।

   

গ্রামীণ শিল্প মৃৎশিল্প

নওগাঁয় হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্প: দইয়ের ভাঁড়ই একমাত্র ভরসা!



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁ জেলার বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে মৃৎশিল্পীদের আবাস। এসব গ্রামে প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার মৃৎশিল্পী মাটির জিনিসপত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

এসব এলাকা থেকে তৈরি মৃৎশিল্পের মনকাড়া পণ্যগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে জায়গা করে নিয়েছিল একসময়। কিন্তু প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও বাজারের অভাবে এ শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। এক সময় হয়ত এর স্থান হবে জাদুঘরে। সে সময় আর বেশি দূরে নয়!

পূর্বপুরুষদের এ পেশাটিকে টিকিয়ে রাখতে প্রতিনিয়ত চলছে মৃৎশিল্পীদের জীবনসংগ্রাম। দইয়ের ভাঁড় তৈরি করে সংসারের হাল ধরে রেখেছেন গ্রামীণ নারীরা কিন্তু মৃৎশিল্পকে ধরে রাখতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে কারিগরদের। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে স্বল্প কিংবা বিনা সুদে ঋণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এ পেশার সঙ্গে জড়িত মৃৎশিল্পীরা।

এক সময় বেশ কদর ছিল মাটির তৈরি জিনিসপত্রের কিন্তু বর্তমানে দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম এবং প্লাস্টিক থেকে তৈরি জিনিসপত্রের সঙ্গে টিকে থাকতে পারছে না মৃৎশিল্প। সে কারণে এ পেশার সঙ্গে জড়িতদের জীবন-যাপন হয়ে পড়েছে কষ্টসাধ্য।

নওগাঁর বিভিন্ন উপজেলার গ্রামগুলোতে মাটির হাড়ি তেমন একটা চোখে পড়ে না। এছাড়া মৃৎশিল্প তৈরির উপকরণ মাটির সংকট, জ্বালানির দাম বেশি হওয়ায় এর দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে, মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদাও কমে গেছে।

সরেজমিন নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার পালপাড়া গ্রামে দেখা যায়, প্রায় শতাধিক নারী ও পুরুষ মাটির দইয়ের হাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ মাটিকে নরম করছেন, কেউ ভাঁড়ের আকার দিচ্ছেন আবার কেউ আগুনে পোড়াচ্ছেন। এভাবেই বিশাল এক কর্মযজ্ঞ চলছে সেখানে।

পালপাড়া গ্রামের চন্দনা রানী বার্তা২৪.কমকে বলেন, মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা কমেছে বলে গ্রামের নারীরা এখন দইয়ের হাড়ি তৈরি করে রোজগার করছেন। দইয়ের হাড়ি ছাড়া আমাদের আর কোনো কাজ নেই তেমন একটা।

তিনি বলেন, বিভিন্ন স্থান থেকে আঁঠালো মাটি কিনে আমরা এ কাজগুলো করি তবে আমাদের যদি সরকারিভাবে সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া হয়, তাহলে এ ব্যবসাটাকে আরো বড় করা যেতো।

গৃহবধূ দীপালী মহন্ত বলেন, এ কাজের মাধ্যমে আমাদের সংসার চলে। দইয়ের হাড়ি বানানোর মাধ্যমে যা রোজগার হয়, সেটা দিয়ে স্বামীকে সহযোগিতা করি। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালাই। ব্যবসাকে বড় করতে চাই। এজন্য যদি সহযোগিতা পাওয়া যেতো, তাহলে আরো বড় পরিসরে কাজগুলো করা যেতো।

নওগাঁয় হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্প: দইয়ের ভাঁড়ই কেবল ভরসা, ছবি- বার্তা২৪.কম

ব্যবসায়ী তপন কুমার পাল বলেন, কাঁচা অবস্থায় আমরা প্রতিটি দইয়ের হাড়ি ৫ থেকে ৬ টাকা করে কিনি। পরে সেটা পুড়িয়ে ৯ থেকে ১০ টাকা দরে বিক্রি করে থাকি। এক সময় সব ধরনের মাটির জিনিসপত্র তৈরি হতো কিন্তু এখন দইয়ের হাড়িই একমাত্র ভরসা!

তপন কুমার বলেন, মৃৎশিল্পের জন্য নদীর আঁঠালো মাটির দরকার হয়। সারাবছরই এ কাজ করা হয় তবে বর্ষা মৌসুমে এ মাটি সংগ্রহ করা ব্যয়বহুল এবং কষ্টসাধ্য। সারাবছর কাজ করার জন্য চৈত্র ও বৈশাখ মাসে মাটি কিনে সংগ্রহ করতে হয়। সুনিপুণভাবে হাড়ি, ঢাকনা, কাঁসা, পেয়ালা, মাইসা, সাতখোলা, ব্যাংক, কলস, ডাবর, পানি রাখার পাত্রসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা হয় এখানে। এগুলোর তেমন একটা চাহিদা না থাকলেও দইয়ের হাড়ির বেশ চাহিদা রয়েছে।

এ বিষয়ে বিসিক (বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন) জেলা কার্যালয়ের উপব্যবস্থাপক শামীম আক্তার মামুন বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা সব সময় উদ্যোক্তাদের পাশে আছি। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য শতকরা ৫ শতাংশ এবং পুরুষ উদ্যোক্তাদের জন্য শতকরা ৬ শতাংশ বিনা সুদে খুব সহজ পদ্ধতিতে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। তারা চাইলে আমাদের কাছ থেকে ঋণ নিতে পারেন।

;

আইসক্রিমের মধ্যে কাটা আঙুল



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
আইসক্রিমের মধ্যে কাটা আঙুল

আইসক্রিমের মধ্যে কাটা আঙুল

  • Font increase
  • Font Decrease

অনলাইনে কোনো অ্যাপ থেকে খাবার অর্ডার করলেন। সময়মতো অর্ডার এলো, অনেক আগ্রহে খাবারের প্যাকেট খুললেন। যেই না খাবার খেতে যাবেন ঠিক সেই মুহূর্তেই এমন এক ঘটনা ঘটলো, যার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না। খেতে যাওয়ার মুহূর্তে খাবারের মধ্যে যদি কোনো মানুষের শরীরের অংশ পান কেমন বোধ করবেন?

নিশ্চয়ই মনে হচ্ছে কোনো সিনেমা বা নাটকের দৃশ্য। এখন তো দেশি-বিদেশী নানারকম কনটেন্টেই এরকম দৃশ্য দেখা যায়! তবে না, এই ঘটনা একেবারেই বাস্তব। ভারতের এক নারী তার আইসক্রিমের মধ্যে পেলেন মানুষের কেটে যাওয়া একটি আস্ত আঙুল।

চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটেছে ভারতের বাণিজ্য এবং বিনোদনের শহর মুম্বাইতে। মালাডের শহরতলীতে বসবাসকারী একজন নারী ‘ইউম্মো আইসক্রিম’ থেকে খাবার আনান। অনলাইনে একটি কোণ আইসক্রিম অর্ডার করেছিলেন তিনি। আইসক্রিমটির মোড়ক খুলতেই হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। আইসক্রিমের উপরের অংশে মানুষের একটি কাটা আঙুল দেখা যাচ্ছে।

স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় তিনি আতঙ্কিত এবং বিরক্ত হয়েছেন। শুধু তাই নয়, এমন একটি ঘটনা যথেষ্ট সন্দেহজনকও। সেই নারী অতিসত্তর অভিযোগ করতে মালাড থানায় যান। আইসক্রিমটিকে নিয়ে যান প্রমাণ হিসেবে। তার ভিত্তিতে খাদ্যে ভেজাল এবং মানুষের জীবন বিপন্ন করার অভিযোগ লেখা হয়। এখন ইউম্মোর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই আইসক্রিমটির ছবি ছড়িয়ে যেতে শুরু করেছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি মানুষের আঙুল আইসক্রিমের ওপরে আটকে আছে। পুলিশ তদন্তের জন্য আইসক্রিমটি পরীক্ষা করছে। তাছাড়া আঙুলটিও ফরেনসিকে পাঠানো হয়েছে। এর পেছনের রহস্য উদঘাটনে পুলিশ এই ব্যাপারটি নিয়ে পুরোদমে তদন্ত চালাচ্ছে।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি 

;

শত বছর পর শখের মুদ্রা নিলামে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

শখের বশে মানুষ কত কিছুই না করে। তেমনি একজন ডেনমার্কের বাসিন্দা লার্স ইমিল ব্রান। তার শখ ছিল মুদ্রা সংরক্ষণ করা। এবার তার মৃত্যুর শত বছর পর সেই শখের মুদ্রা নিমালে উঠতে যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ১৮৫২ সালে লার্স ইমিল ব্রান ডেনমার্কে জন্ম নেন। পেশায় তিনি ছিলেন দুগ্ধপণ্য ব্যবসায়ী। ছোট বেলা থেকেই তিনি মুদ্রা সংগ্রহ করেন। বড় হয়েও এই শখের কাজ ছেড়ে দেননি। বরং আরও জোরালো হয়ে ধরে রেখেছেন। নতুন পুরোনো সব মুদ্রাই তিনি জমিয়েছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার সংগ্রহে মুদ্রার সংখ্যা দাঁড়ায় ২০ হাজারে। সেই মুদ্রাই নিলামে তুলছে নিউইয়র্কভিত্তিক নিলামঘর স্টেকস বোয়ার্স।

ইমিলের মৃত্যুর এত বছর পর কেন এখন নিলামে উঠছে এসব মুদ্রা এমন প্রশ্নের জবাবে সংশ্লিষ্টরা গণমাধ্যমকে জানান, মৃত্যুর আগে ইমিল উইল করেন। যেখানে বলা হয়, তার মৃত্যুর পর শত বছর পর্যন্ত এসব মুদ্রা সংরক্ষিত করে রাখতে হবে। এসব মুদ্রার শত বছর পুরোনো না হলে তা বিক্রি করা যাবে না।

ইমিল আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ছিলেন। ১৮ শতকে দুগ্ধপণ্যের ব্যবসা করে তিনি ব্যাপক অর্থ উপার্জন করেন। শখ পূরণে দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন। সেখান থেকে মুদ্রা সংগ্রহ করেছেন। ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইডেনের বহু পুরোনো মুদ্রা, ব্যাংক নোট এবং মেডেলও তার সংগ্রহে রয়েছে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় শখের মুদ্রাগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন ইমিল। এরপরই যুদ্ধ শেষে সংগ্রহের অমূল্য মুদ্রাগুলোর নিরাপত্তায় উইল করেন। যেখানে শর্ত দেন, এক শত বছর পূর্ণ না হলে এসব মুদ্রা বিক্রি করা যাবে না। ইমিলের মৃত্যুর পর এসব মুদ্রা ডেনমার্কের এক রাজপ্রাসাদে সংরক্ষণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ডেনমার্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে মুদ্রা ও ব্যাংকনোটগুলো তুলে দেওয়া হয়। যা এখন নিলামের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।

নিউইয়র্কভিত্তিক নিলামঘর স্টেকস বোয়ার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিকেন ইয়েগপারিয়ান জানান, সংরক্ষিত এসব মুদ্রায় এমন কিছু রয়েছে যা শত বছর ধরে বাজারে পাওয়া যায় না।

এদিকে ইমিলের সংগ্রহ থেকে ছয়টি স্বর্ণমুদ্রা ও একটি রৌপ্যমুদ্রা কিনে নিয়েছে ডেনমার্কের জাতীয় জাদুঘর। যা সর্বসাধারণের প্রদর্শণীর জন্য় উন্মুক্ত করা হবে। ছয়টি মুদ্রা কিনতে এক মিলিয়ন ইউরো (১০৯ মিলিয়ন ডলার) খরচ করেছে ডেনমার্কের জাতীয় জাদুঘর।

জাতীয় জাদুঘরের মুদ্রা ও পদক সংগ্রহ বিভাগের প্রধান হেলি হর্সনেস এএফপিকে বলেন, এই মুদ্রার মান অতুলনীয়। এই মুদ্রা ঠিক এক শতাব্দী ধরে ঘুমানো রাজকুমারীর মতো কিংবদন্তী হয়ে উঠেছে।

;

ঘড়িয়ালের ডিম ফোটানোতে ব্যর্থতা অব্যাহত : কী বলছেন গবেষকরা?



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, রাজশাহী।
ঘড়িয়ালের ডিম / ছবি: বার্তা২৪

ঘড়িয়ালের ডিম / ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

৬ বছর আগে ২০১৭ সালে দুটি ঘড়িয়ালের জুটি বাঁধা হয়। উদ্দেশ্য ছিল এই প্রাণিটির বংশবৃদ্ধি করা। ঘড়িয়ালের প্রজনন উপযোগী পরিবেশও তৈরি করা হয়েছে। রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেনে নেওয়া হয়েছিল এই পদক্ষেপ। তবে এত প্রচেষ্টার সত্ত্বেও ঘড়িয়ালের বংশবৃদ্ধি এখনো স্বাভাবিকভাবে হচ্ছেনা। আবারও ডিম দিয়েছে এই বিলুপ্তপ্রায় প্রাণি, তবে তা ফোটাতে ব্যর্থ হয়েছে। এই অব্যাহত ব্যর্থতা নিয়ে গবেষকরা বিভিন্ন কারণ অনুসন্ধান করছেন এবং সমাধানের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। এই ছয় বছরের মধ্যে ৬ দফায় ডিম দিলেও কোনোবারই তা থেকে বাচ্চা ফোটানো সম্ভব হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘ডিম ফোটাতে ব্যর্থ হওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে ডিমের সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখা, আর্দ্রতার মাত্রা, ডিম রাখার স্থান, পুষ্টি ঘাটতি এবং প্রজনন স্বাস্থ্য অন্যতম। গবেষকরা মনে করেন, ঘড়িয়ালের ডিম ফোটানোর জন্য নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার মাত্রা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব শর্ত পূরণ না হলে, ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো সম্ভব হয় না। তাছাড়া, প্রজনন উপযোগী পরিবেশ তৈরি করলেও ডিমের যত্ন ও সঠিক পদ্ধতি অবলম্বনে কিছু ঘাটতি থাকতে পারে।‘

ঘড়িয়ালের ডিম / ছবি: বার্তা২৪

বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে আরও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং সফল প্রজননের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি পরীক্ষা করে দেখছেন। তাদের মতে, এসব সমস্যার সমাধান পাওয়া গেলে ঘড়িয়ালের বংশবিস্তার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। বিলুপ্তপ্রায় প্রাণিটির সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে সেই সমাধান। তারা আরও বলেন, ‘ঘড়িয়ালের প্রজনন না করানো গেলে দেশে এই প্রাণীটি একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে আবারও ঘড়িয়ালের বংশ বিস্তারের চেষ্টা করানো হচ্ছে।’

দুই মাস আগে সরীসৃপ গবেষক বোরহান বিশ্বাস রুমন স্বেচ্ছায় ঘড়িয়ালের প্রজনন বিষয়ক কাজ শুরু করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘ডিম ফোটানোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশের অভাব এখানে প্রধান সমস্যা। প্রজনন মৌসুমে ডিম দেয়ার অন্তত তিন মাস আগেই ঘড়িয়ালরা পলি মিশ্রিত মাটি এবং নরম ঘাস সমৃদ্ধ স্থান নির্বাচন করে। এরকম মাটি দিনে তাপ ধরে রাখে এবং রাতেও উষ্ণতা বজায় রাখে। তবে এখানে সেই পরিবেশ অনুপস্থিত।’

বোরহান বিশ্বাস রুমনের পরামর্শে পুকুরের এক পাশের মাটি পরিবর্তন করা এবং ঘাস লাগানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রজনন মৌসুমে ঘড়িয়ালগুলোকে দর্শনার্থীদের থেকে আড়ালে রাখার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। তার মতে ঘড়িয়ালগুলো যাতে নিরিবিলি পরিবেশে থাকতে পারে, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

বোরহান বিশ্বাস রুমন আরও জানান, ‘গত ১০ বছরে দেশের বড় নদীগুলো থেকে অন্তত ২৮টি ঘড়িয়াল উদ্ধার করা হয়েছে, যেগুলো সবই ছোট বাচ্চা। ধারণা করা হচ্ছে, বন্যার কারণে এই ঘড়িয়ালগুলো তাদের মূল স্থান থেকে ভেসে এসেছে। মিঠা পানির এই প্রাণীগুলো বয়সের আকার অনেক বড় হয়।’

তিনি আরও বিস্তারিত বলেন, ‘প্রাপ্তবয়স্ক ঘড়িয়ালের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং তাদের প্রজনন সফল করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র পরিবেশ উপযুক্ত হলেই, ডিমগুলো নিরাপদে ফোটানো সম্ভব হবে। এভাবে নতুন ঘড়িয়ালের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, যা এই প্রজাতির সুরক্ষার জন্য অপরিহার্য।‘

গবেষক আশা করেন, প্রজননে সফল হলে নদীতে এদের ছেড়ে দিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব। তবে তার আগে নিরাপদ ও দুষণমুক্ত নদী গড়ার ওপর জোর দিয়েছেন বোরহান। তার মতে, এখান থেকে অন্তত ২টি ঘড়িয়ালের বাচ্চা উৎপাদন করা গেলে, আগামী অর্ধশত বছরের জন্য হলেও প্রাণীটি টিকে থাকবে।’

রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান উদ্যানে কর্মরত শরিফুল ইসলাম জানান, ‘১৯৯০ সালে রাজশাহীর পদ্মা নদী থেকে উদ্ধার হওয়া ঘড়িয়াল এই উদ্যানে রাখা হয়। তবে সেই দুটি নারী প্রজাতির হওয়ায় পদ্মা নামের একটি ঘড়িয়ালকে রেখে অন্যটিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানায় পাঠানো হয়। তার বিনিময়ে ২০১৭ সালে ঢাকা থেকে আনা হয় গড়াই নামে একটি ছেলে (নর) ঘড়িয়ালকে।’

ঘড়িয়াল / ছবি: বার্তা২৪

শরিফুল বলেন, ‘দীর্ঘ সময় পর তাদের দাম্পত্য সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। ফলে পদ্মা অন্তত ৬ বার ডিম পেড়েছে। কিন্তু সেগুলো কোনোভাবেই বাচ্চা ফোটানোর জন্য সফল হয়নি। অধিকাংশ ডিম পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। চলতি বছরের মার্চ মাসে পদ্মা অন্তত ৩২টি ডিম পেড়েছিল। কিন্তু সেগুলোও পানিতে নষ্ট হয়ে ভেসে উঠেছে। এর আগেও একইভাবে ঘড়িয়ালের ডিমগুলো নষ্ট হয়েছে। গত বছর কিছু ডিম পানির পাশে বালিতে পাওয়া গিয়েছিল, কিন্তু সতর্কতার সাথে বালিতে পুতে রাখলেও তা সফল হয়নি। অনেক ক্ষেত্রেই ঘড়িয়াল নিজেই ডিমগুলো নষ্ট করে ফেলছে। ‘

জানা গেছে, ঘড়িয়ালের গড় আয়ু প্রায় ৬০ বছর। এদের সর্বাধিক দৈর্ঘ্য ২০ ফুট এবং ওজন ১৬০ কেজি পর্যন্ত পৌঁছায়। বয়স্ক ঘড়িয়ালদের রঙ সাধারণত কালচে ধূসর হলেও, বাচ্চাগুলোর রঙ উজ্জ্বল হয়। মার্চ ও এপ্রিল মাস ঘড়িয়ালের প্রজনন ঋতু হিসেবে পরিচিত। এসময় মা ঘড়িয়াল নদীর বালিয়াড়িতে ডিম পেড়ে তা বালি দিয়ে ঢেকে রাখে। একসঙ্গে ২০ থেকে ৯৫টি ডিম পাড়তে সক্ষম। সাধারণত ৭১ থেকে ৯৩ দিনের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।

রাজশাহীর পদ্মা ও গড়াই নদীর ঘড়িয়ালের বয়স প্রায় ৪০ বছর। ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের আগে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে মিঠা পানির ঘড়িয়াল দেখা যেত। তবে, বাঁধ নির্মাণের পর নদীতে পরিবর্তন আসায় এই প্রাণীটি ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে চলে যায়।

;