মায়াবী দ্বীপ, মনপুরা



মনিরুল ইসলাম
সমুদ্রে যাওয়ার জন্য অপেক্ষারত ট্রলার, ছবি: লেখক

সমুদ্রে যাওয়ার জন্য অপেক্ষারত ট্রলার, ছবি: লেখক

  • Font increase
  • Font Decrease

১২ নভেম্বর ১৯৭০ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে হামলে পরলো ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার গতিবেগের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় গোর্কি। উপদ্রত এলাকা ঘুরে এসে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন আঁকলেন বিখ্যাত এক ছবি “মনপুরা ৭০”। লোক চক্ষুর অন্তরালে থাকা এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হঠাৎ করেই খবরে চলে এলো ক্ষয়ক্ষতির ভয়াবহতা বিবেচনায়। হাল আমলে মনপুরা নামটি পরিচিত হয়ে উঠেছে গিয়াস উদ্দিন সেলিমের “মনপুরা” সিনেমার কল্যাণে। নানাকাজে দক্ষিণবঙ্গে যাত্রা কালে দূর থেকে অনেকবার দেখলেও কখনো ঘুরে দেখা হয়নি মনপুরা, জানা হয়নি দ্বীপটা আসলে কেমন?

মনপুরা যেতে খুব একটা বেগ পেতে হয় না। বেতুয়া বা হাতিয়াগামী যেকোনো লঞ্চে উঠলেই , সূর্য উঠার আগেই মনপুরা পৌঁছে দেয়। যদিও এযাত্রায় আমাকে কিছুই করতে হবে না। এবার যাচ্ছি অপু নজরুলের সঙ্গে, উনিই  সব ব্যবস্থা করে রাখবেন। অন্যের উপর ভর দিয়ে নিজে নির্ভার হয়ে ভ্রমণ করতে কেমন লাগে এরকম চিন্তা থেকেই উনার সাথে যাওয়া । দক্ষিণবঙ্গের সব যাত্রাই শুরু হয় সদরঘাট থেকে, মনপুরাও এর ব্যতিক্রম নয়। জ্যামের কথা চিন্তা করে সদরঘাটের নাম শুনলেই আগে মুখের মানচিত্র পরিবর্তন হয়ে যেত। তবে আমার বর্তমান অফিস পুরানো ঢাকায় হওয়াতে এযাত্রা ছিলাম চিন্তামুক্ত। রিক্সা করে হাওয়া খেতে খেতে অনুমিত সময়ের আগেই পৌঁছে গেলাম সদরঘাটে।

সদরঘাটের উল্টো দিকে

অনেক লঞ্চের ভিড়ে আমাদের জন্য নির্ধারিত লঞ্চ ফারহান-৩ খুঁজে পেতে সমস্যা হল না। সদর ঘাট আসলে মানুষ দেখে ভিরমি খেয়ে যেতে হয়, সবসময় হাটবার হাটবার ভাব বিরাজমান থাকে। নানা রকমের উদ্দেশ্য নিয়ে মানুষ এখানে আসে। কেউ বা প্রিয়জনের সাথে মিলত হবার উৎকণ্ঠা নিয়ে দৌড় বেড়াচ্ছে, কেউ  এসেছে ব্যবসা কিংবা ভিক্ষা করতে, এমনকি অন্যের টাকা পয়সা হাতিয়ে  নেবার ধান্দায় আসা লোকের সংখ্যায় নেহাত কম হবার কথা না। যথা সময়ে নোঙর তুলে ভেঁপু বাজিয়ে চলতে শুরু করলো আমাদের লঞ্চ । ইতিমধ্যে এক ঝাঁক নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হল, চলল আড্ডাবাজি, একসঙ্গে রাতের খাবার খেয়ে যার যার নির্ধারিত রুমে চলে গেলাম। প্লটুনে লঞ্চের ধাক্কায় যখন ঘুম ভাঙলো বাইরে তখন রামনেওয়াজ ঘাট। তখনও সূর্যের আলো পৃথিবীতে এস পৌঁছায়নি, তারপরও আমাদেরকে নেমে যেতে হলো কারণ লঞ্চের শেষ গন্তব্য হাতিয়ার তমরুদ্দিন ঘাট। মনপুরার প্রধান বাহন মোটর বাইক হলেও আমরা ব্যাটারি চালিত রিক্সা ধরে হাজির হাটে হাজিরা দিলাম। হাজির হাট হল মনপুরার প্রাণ কেন্দ্র। মনপুরা নামটার সঙ্গে কি মনের কোন সম্পর্ক আছে? কিভাবেই বা নামটা এলো?

যেকোনো স্থানের নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন মত চালু থাকবে সেটাই স্বাভাবিক তার মধ্য থেকে গ্রহণযোগ্য বা সর্বাধিক প্রচলিত একটিকে বেছে নিতে হয়। কেউ কেউ বলে থাকেন মনগাজী নামের এক ব্যাক্তি ছিলেন যে কিনা বাঘের আক্রমণে নিহত হয়েছিলেন তার নামানুসরনে এই নাম। মনগাজী নামটা ঠিক থাকলেও ঐতিহাসিক বেভারিজ লিখেছেন অন্য কথা “ অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে, মনগাজী নামের এক ব্যাক্তি সেই সময়ের জমিদারি থেকে মনপুরা চর লীজ নেন । পরবর্তী সময়ে তার নামানুসারে এই দ্বীপটির নামকরণ করা হয় মনপুরা”। প্রায় আটশত বছরেরে পুরানো এই দ্বীপটিকে একসময় আরাকানী, মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুরা তাদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যাবহার করত। কোম্পানি শাসনামলের বহু পূর্বেই পর্তুগিজদের আগমন ঘটে এই অঞ্চলে এবং পূর্বে সন্দীপ ও পশ্চিমে বাকলার মাঝখানে নিরাপদ বিবেচনায় তারা এখানে অবস্থান করত। মোগল আমলে সুবেদার শাহবাজ খান এই জলদস্যুদের বিদায় না করা পর্যন্ত তারা হামলা ও লুটতরাজ চালিয়ে যেতে পেরেছিল। যদিও পর্তুগিজ আমলের কোন স্থাপনার এখন আর কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। হয়তো জলোচ্ছ্বাস অথবা ঘূর্ণিঝড়ে সব নদীবক্ষে বিলীন হয়ে গিয়েছে। তবে পর্তুগিজ বংশোদ্ভূত বড় লোময়ালা কুকুর এখনো দেখা যায়।

লবণ সহিষ্ণু ধান ক্ষেত

আমরা যখন হাজিরহাটে এসে পৌঁছলাম তখনও ভোরের আলো তার আলস্য ভাঙেনি। হোটেলে না ঢুকে চলে গেলাম মনপুরার আইকনিক ল্যান্ডিং স্টেশনে। দীর্ঘ জেটিটি মেঘনার বুক চিড়ে বেশ খানিকটা ভেতরে গিয়ে শেষ হয়েছে। এমনিতেই উত্তাল মেঘনা তার উপর নড়বড়ে এই জেটিটি ঢেউয়ের সাথে বুড়ো মানুষের দাঁতের মত এদিক সেদিক দুলছে। সেই দুলুনির সাথে সমান তালে বুকও কেঁপে উঠে। দৃষ্টিসীমা যতদূরে যায় শুধু পানি আর পানি । মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল আমি যেন নদীর মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি। জেটিটি ব্যস্ত হয়ে উঠার আগেই আমরা ফিরে এলাম আমাদের হোটেলে ।

সকালের ল্যান্ডিং স্টেশন

আজকাল মনপুরাতে অনেক পর্যটক আসলেও থাকার জায়গার তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি। আমাদের একটা গ্রুপ উঠেছিলো হানিফ আবাসিক হোটেলে অন্য গ্রুপ উন্নয়ন সহযোগী কারিতাসের গেস্ট হাউসে। সবাই মিলে দুপরের পর রওয়ানা হলাম সাকুচিয়া সমুদ্র সৈকত যার কেতাবি নাম “দখিনা হাওয়া ”। অবারিত ধান ক্ষেতের মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে পথ , আর পথের দুধারে বাবালা গাছের সাড়ি। ধাগাছগুলো  অবাক করার মত হলুদ, মাঝে মাঝে সরিষা বলে মনে হলে, মনকে দোষ দেওয়া যাবে না কারণ গাছের রঙটাই এরকম। সহজ সরল মানুষের ভালবাসা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু নিজের মত করে গড়তে চেয়েছিলেন দ্বীপটিকে। তাই অবকাশকালীন সময়ে চিত্তবিনোদন ও শান্তির জন্য মনপুরাতে চিন্তানিবাস স্থাপনের পরিকল্পনা করেছিলেন। বর্তমান সরকার জাতির জনকের স্বপ্ন বাস্তবায়নের উদ্যেগ নিলেও তার খুব একটা অগ্রগতি হয়নি। রামনেওয়াজ বাজার সংলগ্ন বড় দীঘির পাশে বঙ্গবন্ধু চিন্তানিবাসের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিলো। যদিও সেই ভিত্তি প্রস্তরেরে কোন অস্তিত্ব এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। বর্তমান ভুঁইয়া হাট সংলগ্ন ব্রিজের পাশের স্থানটিতে চিন্তানিবাশ করার চিন্তা ভাবনা করছে সরকার।

দখিনা হাওয়া সমুদ্র সৈকত

সন্ধ্যার দিকে স্থানীয় বাজার দেখতে বের হলাম। ছোট কিন্ত আলোকিত এক বাজার।  জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ এখানে নেই তবে এক মেগাওয়াটের একটি জেনারেটর দিয়ে পুরো বাজার আলোকিত করা হয়েছে। এই অঞ্চলে মহিষের দুধের দই পাওয়া যায়। মজার ব্যপার হল সারা বাজার খুঁজেও মহিষের দুধের দই পেলাম না। যা পেলাম সবই গরুর দুধের। ঢাকা থেকে আসার পথে লঞ্চযাত্রায় ঘুম আসছিলনা। শত চেষ্টা করেও যখন কাজ হচ্ছিল না, তখন পরিস্থিতির কাছে আত্মসমর্পণ করে নিদ্রাবিহীন রাত কাটিয়ে দিয়েছিলাম। তাই আজ একটু আগে ভাগেই রাত্রিবাসের ঠিকানার দিকে ফিরলাম। ফিরতেই রাতের খাবারের ডাক পরলো।

সম্মলিত প্রস্তাবের কারনে রাতের খাবারের পর আবার সবাই মিলে গেলাম ল্যান্ডিং স্টেশনে। বেশ বড় সাইজের একটি চাঁদ আকাশের সঙ্গে ঝুলে আছে। এখন কি পূর্ণিমা? নাকি দ্বীপের চাঁদ একটু বড়ই হয়?  কল্পনাতীত জ্যোৎস্নায় আলোকিত নদী বক্ষ। নদীতে তখন জোয়ার চলছে সম্ভবত। বড় ঢেউ নেই কিন্ত স্রোত আছে। বড় বড় ঢেউয়ের শব্দ নেই কিন্ত পানি বয়ে চলার নান্দনিক ছন্দ আছে। জেটির উপর গোল হয়ে সবাই বসে থাকলেও কারো মুখে কোন কথা নেই। চুপ করে থেকে সবাই যেন অন্যের অস্তিত্ব কে অস্বীকার করতে চাইছে। খানিকটা অনেক মানুষের ভিতরে থেকেও একাকীত্ব উপভোগ করা, যেন এখানে শুধু আমি আর কেউ নেই। সম্বিৎ ফিরে এলো বেরসিক এক ট্রলারের শব্দে। খানিকক্ষণ বাদে নিশিতে পাওয়া মানুষের মত নিঃশব্দে রওয়ানা হলাম মাথা গোজার ঠাইয়ের দিকে।

ভোর ৬ টায় বের হবো তাই রাতেই এক চাচাকে বলে রেখেছিলাম, যাতে করে পরিবাহনের সমস্যায় পরতে না হয়। হোটেলে থেকে বের হয়ে দেখি চাচা যথারীতি অপেক্ষা করে আছে। তখনও খাবার হোটেলগুলো খোলেনি , অগ্যতা নাস্তা না করেই ব্যাটারি চালিত রিক্সায় চেপে বসলাম আনন্দ বাজার ব্রিজের উদ্দেশ্য। ব্রিজের দুই পাশে অনেকগুলো সমুদ্রগামী ট্রলার সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পরার আগে বিশ্রাম নিচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে চলে যাবে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে তাই শেষ বেলার গোছগাছ চলছে। গ্যাসের সিলিন্ডার, বাজার সদাই ,খাবার পানি এমনকি মাছ ধরার জালের মেরামতির কাজও চলছে সমানতালে।

তুলাতলির চর

৭-৮ দিন পর ট্রলার ভর্তি রুপালী মাছ নিয়ে তীরে এসে নোঙর ফেলবে। মনপুরার মানুষ শুধু মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে তা কিন্তু নয়। সরকারের তথ্য বাতায়নের মতে উপজেলার ৬০ শতাংশ মানুষ মাছ ব্যবসার সাথে জড়িত। আবার এমনও তথ্যও দেয়া আছে যে ৮০ শতাংশ মানুষ কৃষিজীবী। লবণ সহিষ্ণু ধানের চাষ হওয়াতে কৃষি কাজে আগের চেয়ে বেশী মানুষ মনযোগী হয়েছে। লবণ সহিষ্ণু ধানের কারণেই পুরো উপকূল সোনালী হয়ে আছে।

মনপুরাকে কেন যে রুপালী দ্বীপ বলা হয়? এর উত্তর খুঁজে পায়নি। মনপুরা বা চর ফ্যাশন এই দিকটায় নদী দেখে যতটা ভয় লাগে সমুদ্র দেখলেও এতটা ভয় লাগে না আমার। ঠিক সেই ভয়াল দর্শন মেঘনার দেখা পেলাম তুলাতলির চরে এসে। আর একটু সামনে এগিয়েই মেঘনা তার সমস্ত রাগ-অনুরাগ নিয়ে সমুদ্রের বিলীন হয়েছে। জলরাশির ভয়ঙ্কর শব্দাবলী আর ঢেউয়ের উপর সূর্যের আলোর রুপালী ঝিলিক নিরাশ হতে দেয়নি। যতদূরে চোখ যায় শুধু জলরাশি। বেরিবাধের পাশে দুএকটা মাছ ধরা নৌকা বাধা। অদুরে ছোট একটা চায়ের দোকান আর দুটো বাড়ি। কতদিন ধরে আছেন এই বাড়িতে?

“বাজান বেশিদিন হয়নি।আর কতদিন বাস করতে পারবো তাও জানিনা” জিজ্ঞাসা করাতে শংকিত মনের উত্তর পেলাম কোনো এক নদীভাঙ্গা মানুষের।

এরকমই এদের জীবন,কতবার যে ভিটে পরিবর্তন করতে হয় দ্বীপের বাসিন্দাদের তার ইয়ত্তা নেই।একই বাড়িতে কতদিন বসবাস করতে পারবে এর বাসিন্দারাও জানে না। মেঘনা যতদিন চাইবে ততদিন!

   

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;