বাবা নাই, কষ্ট এটাই!



কবির য়াহমদ
বাবা নাই, কষ্ট এটাই!

বাবা নাই, কষ্ট এটাই!

  • Font increase
  • Font Decrease

 

এবারের বাবা দিবসের এক সপ্তাহ আগে ছিল আমার বাবার তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিক। বাবা নামের যে আকাশ সমান ছায়া তার অনুপস্থিতি টের পাচ্ছি গত তিন বছর ধরে। ২০১৯ সালের জুন। ক্যালেন্ডারের হিসাবে দিনটা ছিল শুক্রবার, ১৪ তারিখ। বিকালে আমার বাবা যাকে আমরা ‘আব্বা’ বলে ডাকতাম তিনি শেষ ঘুমে মগ্ন হয়েছিলেন। শেষ ঘুমের আগে প্রকৃতির নিয়মে জাগতিক অনেক ঘুমে যেতেন তিনি। আমরা কেউ জানতাম না সেদিনের সেই ঘুম ছিল তাঁর শেষ ঘুম। আগের দিন থেকেই তীব্র জ্বর ছিল তাঁর। খানিক বিরতি দিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন, জেগেও ওঠছিলেন। কিন্তু শুক্রবারের দুপুরের পর থেকে যে ঘুমে মেতেছিলেন তার পর থেকে আর জাগেননি। এই ঘুমের সময়েই তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছিলেন। বারবার তাঁর শরীরের তাপমাত্রা মাপতে এসে একটা সময়ে টের পেলাম সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তাঁর। জাগাতে চেয়েও পারিনি। শেষমেশ যখন তীব্র ঠান্ডা জমেছিল তাঁর শরীরে তখন পায়ের তলার মাটিগুলো সরে গিয়েছিল আমার, আমাদের।

বাবাহীন হতে পারি আমরাও—এমন ভাবনা তাঁর অসুস্থ হওয়ার ক্ষণে ক্ষণে মনে পড়লেও বিপদ ভেবে সেটা দূরে সরিয়ে রাখছিলাম। কেন আমরা বাবা-হারা হবো; আমাদের কী বাবার আশ্রয়ের দরকার নেই—এমন ভাবনায় তাঁর কাছাকাছি থেকেছিলাম শেষ কবছর। এর মধ্যিখানে কোথাও জরুরি প্রয়োজনে গেলেও তিনি ফোন দিয়ে ‘কখন ঘরে ফিরছি’ এমনটা জানতে চাইতেন বারবার। সন্ধ্যা হলেই এমন হতো নিয়মিত। ফিরে এসে খোঁজ করার কারণ জানতে চাইলে প্রতিবারই বলতেন—‘ঘরে থাকলে ভরসা পাই, মনে শক্তি পাই’। প্রথম প্রথম একথাগুলোর গুরুত্ব বুঝতে না পারলেও একটা সময়ে বুঝতে পারি কতটা ভরসা আর ভালোবাসা থাকলে এমন প্রশ্ন, কাছে রাখার এমন আকুতি ঝরত তাঁর। স্বজনদের কাছ থেকে শুনেছি এবং ছেলেবেলার যতটুকু মনে পড়ে আব্বা আমাকে ‘অন্ধের যষ্টি’ বলে ডাকতেন। এ কারণেই বুঝি সেই ছোটকালের যে স্বপ্ন বড়কালেও এসে সেটার ছাপ রয়ে গিয়েছিল পুরোটাই, যদিও জানি অন্ধের যষ্টি হওয়ার মত যোগ্যতা অর্জন করতে পারিনি আমি।

আব্বার একাধিকবার স্ট্রোক করেছিলেন, হাই ব্লাড প্রেসার ছিল, কোলেস্টেরল সমস্যা ছিল, হার্টে রিঙ পরানো ছিল তাঁর। শেষ সময়ে এসে মৃত্যুর বেশ কয়েক বছর আগে থেকে কিডনিজনিত রোগ ছিল। ওটাই ভুগিয়েছে তাঁকে। ঢাকায়-সিলেটে একাধিকবার তাঁর কিডনি ডায়ালাইসিস করতে হয়েছিল। শেষবার যখন হাসপাতালে ছিলেন তখন ১০ দিনের বেশি সময় ছিলেন আইসিইউতে। আইসিইউতে থাকাকালে ওই ইউনিটে সবসময় ঢোকা যেত না, বাইরে পায়চারি করতাম। রাতের পর রাত ঘুমহীন থেকে থেকে তাঁর সামান্য চোখ মেলার অপেক্ষা করতাম। সামান্য নড়লে-চড়লে মনে হতো প্রাণ ফিরেছে আমারও দেহে। আইসিইউ থেকে কেবিনে নেওয়ার পর সামনাসামনি থাকার সুযোগ হয়েছিল। অসুস্থ তবু মনে শান্তি ফিরত, সামনে ত আছেনই। এরপর বাড়িতে নিয়ে আসার সময়ে মনে হচ্ছিল যেন যুদ্ধজয় করে ফিরছি। তাঁর চিকিৎসাকালে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের করার কিছু ছিল না, কিন্তু ফিরিয়ে নিয়ে আসার সময়ে সত্যি সত্যি যুদ্ধজয়ের সেনাপতি ভাবছিলাম। এভাবে কয়েকবার, বেশ কয়েকবার। প্রতিবারই একই অনুভূতি হতো।

আব্বাকে প্রতিদিন একগাদা ওষুধ খেতে হতো। ডা. ফয়সল আহমদ, ডা. নাজমুস সাকিব, ডা. আবদুল লতিফ রেণুসহ অনেক চিকিৎসক আব্বাকে চিকিৎসা দিয়েছেন। বিভিন্ন সময় হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসার পর যখনই দরকার পড়েছে চিকিৎসকবন্ধু ডা. এনামুল হক এনাম, ডা. আলিম আল রাজি, ডা. সুমন দে, ডা. জোবায়ের আহমেদদের কাছে নানা পরামর্শ পেয়েছি। তাদের কারণে মনে হতো আমার আব্বা পুরোটা সময়ই আছেন চিকিৎসকের পরামর্শাধীন। তাদের সকলের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নাই।

আমার আব্বার সঙ্গে আমার ছেলে রাইআনের দুরন্ত সম্পর্ক ছিল। কিডনি রোগ তাই টক জাতীয় কিছু খেতে ডাক্তারের বারণ ছিল। তবু মাঝে মাঝে দেখতাম আব্বা আর রাইআন দুজনে মিলে আমের আচার, বরইয়ের আচারসহ বিবিধ আচার খাচ্ছেন। দাদা-নাতির এই আচার খাওয়ার সময়টাতে অনেকবার বাধা দিয়েছি মূলত চিকিৎসকের পরামর্শের কারণে। আব্বা রাইআনকে ‘দাদা’ সম্বোধনে ডাকতেন। রাইআন যখন খুব ছোট ছিল তখন তার সামান্য কান্নাতে আব্বা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়তেন। রাইআনের খাবারদাবারের সমস্যা হচ্ছে কি-না এনিয়ে সতর্ক দৃষ্টি ছিল তাঁর। রাইআনের দুধসহ খাবারদাবারের টাকাগুলো আব্বাই দিতেন। সময়ে সময়ে জিজ্ঞেস করতেন তার কিছুর দরকার কি না, আবার সামান্য অথচ বাচ্চাদের স্বাভাবিক কান্নাকাটিতেও ভাবতেন তার বুঝি খাবারদাবারের সঙ্কট! স্কুলে ভর্তির টাকা তিনিই দিয়েছিলেন। রাইআন-আয়ানের মাসে-মাসে স্কুলের বেতনের টাকা তিনিই দিতেন। এত বেশি কেয়ারিং ছিলেন তাদের প্রতি।

আব্বা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বঙ্গবন্ধুর সময়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন, ছিলেন সাবেক জনপ্রতিনিধি। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-মসজিদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তাঁর। ছিলেন সালিশ ব্যক্তিত্ব। নিজেদের উপজেলাসহ আশপাশের এলাকার মাঝেও পরিচিত ছিলেন তিনি। যেকোনো প্রয়োজনে এলাকায় কিংবা দূরে কোথাও গেলেও মুরুব্বিদের কারও সঙ্গে দেখা হলে এলাকার নাম বললে স্বাভাবিক প্রশ্ন ছিল—‘আজিজ উদ্দিন চৌধুরী ভাইস চেয়ারম্যান সাহেবের কিছু হই কি-না?’ পরিচয় দেওয়ার পর বিভিন্ন এলাকার মানুষদের কাছ থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছি সেটা ভুলার মত নয়। এগুলো আদতে অর্জন। আব্বা নেই আজ তিন বছরের বেশি সময় হয়ে গেছে, অথচ সেই একই পরিচিতি, একই ভালোবাসা আমরা পেয়ে যাচ্ছি। এগুলো দেখে মনে হয় আব্বা দৈহিকভাবে হয়ত নেই কিন্তু তাঁর পরিচিতি এখনও রয়ে গেছে। এগুলো দেখে একদিকে গর্ব হয়, আবার অন্যদিকে নিজেকে পিতৃহীন ভেবে বুকটা হাহাকার করে ওঠে! এই হাহাকারের যন্ত্রণা যে কতটা ভারী সেটা ঠিক ঠিক টের পাই; আমি নিশ্চিত জগতের অধিকাংশ পিতৃহীনেরাই টের পায়।

আব্বা খেলাধুলা-ভক্ত ছিলেন। দেশে যখন ক্রিকেট এত বেশি জনপ্রিয় ছিল না, তখন টেলিভিশনে ক্রিকেট খেলা দেখালে সেগুলো দেখতেন। আমরাও তাঁর সঙ্গী হতাম। ফুটবলের প্রতি গভীর অনুরাগ ছিল তাঁর। রাত জেগে বিশ্বকাপের খেলাও দেখতেন। টেলিভিশনে খেলার আওয়াজ শুনলে যোগ দিতেন আমাদের সঙ্গে। পত্র-পত্রিকা পড়তেন, বইপত্র পড়তেন। সে কারণে ছোটবেলা থেকে বইয়ের প্রতি আমাদের অনুরাগও জন্মেছিল। আব্বা মারা যাওয়ার পর এবার প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবল আসছে। এবার খেলাগুলো দেখা হবে না তাঁর। ব্রাজিল যদি বিশ্বকাপ জেতে সে সংবাদও জানা হবে না তাঁর!

সিলেট ভাসছে বানের জলে। আব্বার জীবদ্দশায় একাধিকবার আমরা বন্যা আক্রান্ত হয়েছিলাম। ১৯৯১ সালের বন্যায় আমাদের ঘরে পানিও উঠেছিল। তিন-রুমের পুরনো সেই ঘর এখন নেই। সে ঘরের কেবল একটি রুম ছাড়া বাকি দুই রুমে পানি উঠে পড়েছিল। সেই বন্যায় গাদাগাদি করে আমরা থেকেছিলাম সবাই একটা মাত্র ঘরে। চারদিকে পানি, উঠানে পানি; আব্বা খাবারদাবার নিয়ে আসতেন নৌকায় করে। সেই স্মৃতি এখনও ভাসে। ভাসে পরম মমতার এক পিতৃছবি যেখানে সন্তান এবং সন্তানের হাসিই মুখ্য। দেশের নানা দুর্যোগ-দুর্বিপাকে আব্বা এলাকার মানুষদের সহায়তা দিতে আমাদের ভাইবোনদের উদ্বুব্ধ করতেন। দেশের বাইরে থাকা তাঁর সন্তানদের বলতেন কিছু করতে। তারা কখনই তাঁকে হতাশ করেনি। টাকা হাতে এলে ডেকে এনে দিতেন, অথবা আমাদের কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দিতেন। তাঁর মৃত্যুর পর এখনও মানুষ সে স্মৃতি রোমন্থন করে। আব্বার মৃত্যুর পর আমাদের ভাইবোন ও বোনদের স্বামীরা মিলে প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা রাখে। বেশ কিছু টাকা একত্র হলে সেগুলো দেশে পাঠায় মানুষের জন্যে। মানুষকে ভালোবাসার-সহায়তা করার আব্বার যে চেষ্টা সেটাই ধরে রাখা উদ্দেশ্য আমাদের।

আমরা বৃষ্টিপ্রবণ অঞ্চলের মানুষ বলে ঝড়বৃষ্টি নিয়মিত ঘটনাই। টিনের চালে ঝড়ের ধাক্কা লাগত নিয়মিত। ঝড় শুরু হলেই আব্বা আমাদের সাত ভাইবোনকে ঘুম থেকে ডেকে তুলতেন। আমরা সবাই তাঁর কাছে গিয়ে আশ্রয় নিতাম। ঝড়ে তাঁর ছিল প্রচণ্ড ভয়, তাই ওই সময়টা সবাইকে একত্র করতেন; ঘুম থেকে তোলে হলেও! এখনও ঝড় হয়, কিন্তু আগের মতো সেভাবে টের পাই না, আগের মতো কেউ আর ঝড়ে অভয় দিতে ডেকে তোলে না!

আজ বাবা দিবস। দেশে দেশে আছে এর দিবসী আয়োজনও। দিবসী এসব আয়োজন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে যত মত-প্রতিমতই থাকুক না কেন ‘বাবা’ শব্দটাই স্বতন্ত্র আবেগের, নির্ভরতা আর আশ্রয়ের। ২০১৯ সালের ১৪ জুন আমার বাবা, আমার আব্বাকে হারিয়ে আমি এবং আমরা যে নির্ভরতা আর আশ্রয় হারিয়েছি সেটা অব্যাখ্যেয়। বাবাকে হারানোর সোয়া দুইবছরের মাথায় আম্মাকেও হারিয়েছি ২০২১ সালের ২ নভেম্বর; অনেক কিছু থাকা আমাদের ঘরে মা নেই, বাবা নেই—এরচেয়ে কষ্টের আর কিছু থাকতে পারে না!

কবির য়াহমদ: সাংবাদিক, কলাম লেখক, ইমেইল: [email protected]

   

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

  • Font increase
  • Font Decrease

‘পথের কেনারে পাতা দোলাইয়া করে সদা সঙ্কেত/ সবুজে হদুদে সোহাগ ঢুলায়ে আমার ধানের ক্ষেত/ ছড়ায় ছড়ায় জড়াজড়ি করি বাতাসে ঢলিয়া পড়ে/ ঝাঁকে আর ঝাঁকে টিয়ে পাখিগুলে শুয়েছে মাঠের পরে/ কৃষাণ কনের বিয়ে হবে, তার হলদি কোটার শাড়ী/ হলুদে ছোপায় হেমন্ত রোজ কটি রোদ রেখা নাড়ি/ কলমী লতার গহনা তাহার গড়ার প্রতীক্ষায়/ ভিনদেশী বর আসা যাওয়া করে প্রভাত সাঁঝের নায়।’ পল্লীকবি জসীম উদদীনের ‘ধান ক্ষেত’ কবিতার অপূর্ব চিত্রায়ন কৃষকের শ্রম-ঘাম আর প্রকৃতির তরফে। কাব্যে-পঙক্তির বিমূর্ত চিত্র মূর্ত হয়েছে বিস্তীর্ণ মাঠে। কিষান-কিষানির বুক ভরা আশার সার্থক রূপায়ন হতে চলেছে এ-মৌসুমে।

এখন ভরা বৈশাখ। এ-সময়টা বোরো ধানের। বোরো ধান দেশের খাদ্যচাহিদার অন্তত ৫৫ শতাংশ মিটিয়ে থাকে। দেশের হাওরভুক্ত ৭টি জেলা সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওরে এই বোরোর চাষ বেশি হয়ে থাকে। এই ধান অতিবৃষ্টি, বন্যা ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে দেশের খাদ্যচাহিদায় ঘাটতি পড়ে না। তাই এই ধান চাষ থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তোলা পর্যন্ত অনুকূল আবহাওয়া, বিশেষ করে রোদের উপস্থিতি অতি জরুরি। বর্তমানে সে পরিস্থিতি চলছে।

সিলেট অঞ্চলের মানুষ বলে এই অঞ্চলের মানুষের চাওয়া-পাওয়া, হতাশা-উচ্চাশার সঙ্গে আমি পরিচিত। তাদেরকে উদাহরণ হিসেবে টানছি। তাদের সঙ্গে থেকে জেনেছি, বোরো মৌসুমে নির্বিঘ্নে ঘরে ফসল তোলা কতটা জরুরি। গবাদি পশুর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে জরুরি খড় সংরক্ষণও। তীব্র রোদ এখানে সমস্যার নয়, এটা বরং আনন্দের। কারণ এই রোদ গা পোড়ালেও বুক ভরা আশার সার্থক বাস্তবায়নের পথ দেখায়। দেশের যে খাদ্যচাহিদা, যে খাদ্যনিরাপত্তা সেটা এই বোরো ধানের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই চাষ থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে দরকার হয় প্রকৃতির সহায়তা। এবার এখন পর্যন্ত সে সহায়তা আছে, যদিও এ মাসের শুরুর দিকে একবার ঝড়বৃষ্টিসহ শঙ্কার কালমেঘ হাতছানি দিয়েছিল। সেটা আপাতত দূরে সরেছে।

কিষান-কিষানির দরকার এখন তীব্র রোদ। তারা এটা পাচ্ছে। দেশে তীব্র তাপদাহ। এখানেও এর ব্যতিক্রম নয়। তবু তারা এই রোদের প্রার্থনায় রয়েছে। বৃষ্টি এখন তাদের কাছে দুর্যোগ-সম। কারণ এই বৃষ্টি এবং অতি-বৃষ্টিসৃষ্ট বন্যা তাদের স্বপ্নসাধ গুঁড়িয়ে ভাসিয়ে নিতে পারে সব। ২০১৭ সালের দুঃসহ স্মৃতি এখনও বিস্মৃত হয়নি সুনামগঞ্জের কৃষকেরা। সে বছর সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ১৩৭ হাওরের ফসল বন্যায় এবার ভেসে গিয়েছিল। গতবার কৃষক নির্বিঘ্নে ফসল ঘরে তুলেছেন। এরআগের বছর অন্তত ২০টি হাওরের ফসলহানি হয়েছিল বন্যায়।

প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল ক্ষেতের ফসল, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা। এখানে প্রচণ্ড তাপদাহ তাই প্রভাব ফেলে সামান্যই। রোদে পুড়ে, প্রয়োজনে ছাতা মাথায় দিয়ে কিষান-কিষানিরা স্বপ্ন তোলেন ঘরে। তারা বৃষ্টির জন্যে প্রার্থনা না করে বরং রোদ আরও কিছুদিন অব্যাহত রাখার প্রার্থনায় বসেন। কৃষকেরা পরিমিত বৃষ্টি চায় চৈত্র মাসে, বৈশাখে চায় খাঁ খাঁ রোদ্দুর, কারণ এই রোদে সোনালী ধান ঘরে ওঠে। লোককথার প্রচলিত, ধান তোলার মৌসুমে ঝড়বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য হাওরবাসীরা তন্ত্রসাধক বা ‘হিরাল’ ও ‘হিরালি’-দের আমন্ত্রণ জানাতেন। তারা এসে মন্ত্রপাঠ করে ঝড়বৃষ্টি থামানোর জন্য চেষ্টা করতেন। লোকায়ত বিশ্বাস থেকে আগেকার মানুষজন এমন আচার পালন করতেন। এসবে সত্যি কাজ হতো কিনা সেটা বিতর্ক এবং ব্যক্তি-বিশ্বাসসাপেক্ষ, তবে এই হিরাল-হিরালিদের আমন্ত্রণ বলে বৈশাখে একদম বৃষ্টি চায় না হাওরের কৃষক।

হাওরপারের মানুষেরা যখন রোদ অব্যাহত থাকার প্রার্থনায়, তখন দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহে পুড়তে থাকা মানুষেরা আছেন বৃষ্টিপ্রার্থনায়। দেশের জায়গায়-জায়গায় বৃষ্টি প্রার্থনায় ইস্তিস্কার নামাজ পড়া হচ্ছে, গণমাধ্যমে সচিত্র সংবাদ আসছে এর। কোথাও প্রবল বিশ্বাসে কেউ কেউ ‘ব্যাঙের বিয়ে’ দিচ্ছেন, এটাও বৃষ্টি প্রার্থনায়। সামাজিক মাধ্যমে গরমের তীব্রতার আঁচ মিলছে, বৃষ্টি নাকি ধান—কোনটা জরুরি এই প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ। কেবল তাই নয়, বাংলাদেশের প্রচণ্ড তাপদাহ নিয়ে বিশ্বমিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে দেশের মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, এএফপি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া। গণমাধ্যমগুলো বলছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে টানা দ্বিতীয় বছর বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের ঘোষণাও এসেছে। বৃষ্টি-প্রার্থনায় নামাজের আয়োজনের কথাও এসেছে বিশ্বমিডিয়ায়।

একদিকে প্রচণ্ড তাপদাহ, অন্যদিকে খাদ্যনিরাপত্তার প্রধান উপকরণ ধান ঘরে তোলার অনিশ্চয়তা—তবু অনেকের কাছে সাময়িক স্বস্তিই যেন মুখ্য। অথচ আর দিন দশেক বেরো আবাদ-এলাকায় বৃষ্টি না নামলে ধানগুলো ঘরে ওঠত কৃষকের। নিশ্চিত হতো খাদ্যনিরাপত্তার।

প্রকৃতির ওপর আমাদের হাত নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই; তবু মনে করি আমাদের আকাঙ্ক্ষার প্রকাশে কৃষকদের গুরুত্ব থাকা উচিত। আমাদের চাওয়ায় হয়তো প্রকৃতির রীতি বদলাবে না, তুমুল রোদ্দুরের দেশে হঠাৎ বৃষ্টি নামবে না, তবে ধান ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত রোদ্দুর কামনায় কৃষক স্বস্তি পাবে; ভাবতে পারবে এই দেশ আছে তাদের সঙ্গে।

কৃষকের জয় হোক। অন্তত বোরো-এলাকায় প্রকৃতি কৃষকের সঙ্গে থাকুক।

;

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;