ছাপা পত্রিকা পড়ার নেশায় আসক্ত সত্তরোর্ধ্ব অমলেন্দু
পচাত্তর বছর বয়স অমলেন্দু রায়ের। বয়সের ভারে ঠিকমতো হাঁটতে-চলতে পারেন না। তারপরেও মনের শক্তিতে হেঁটে চলেন তিনি। এমনকি এই বয়সে মাঝে মাঝে বাইসাইকেল চালিয়েও ঘুরে বেড়ান তিনি। বয়সে বৃদ্ধ নয় মনের দুর্বলতায় বৃদ্ধের দিকে ঠেলে দেয় বলে অভিমত তার। আর তাই তো তিনি মনকে শক্ত রেখে এখনও দিব্যি সুস্থ রয়েছেন বলে দাবি করেন।
তবে বাস্তবতা ও প্রকৃতির কাছে সবাইকে একদিন ধরা দিতেই হবে এমনটাও বিশ্বাস করেন তিনি। তাই যেটুকু সময় পর্যন্ত সম্ভব হয় সেই সময়টুকু তিনি সৃষ্টিকর্তার প্রার্থনা, পরিবার-পরিজন আর বইয়ের মধ্যেই নিজেকে ব্যস্ত রাখেন এই বৃদ্ধ। এর প্রমাণও পাওয়া গেল সেদিন। এই ৭৫ বছর বয়সে দাঁড়িয়েও তিনি নিয়মিত দেশের ছাপা পত্রিকা পড়ে যাচ্ছেন। চোখে ঝাপসা দেখা অমলেন্দু চশমার ফাঁকে ঠিকই চোখ বুলান পত্রিকার পাতায়। ছাপা পত্রিকা পড়ার প্রতি তার এক ধরণের নেশার জন্ম হয়েছে বলেও জানান।
অমলেন্দুর জন্মস্থান রাজবাড়ির বালিয়াকান্দির জঙ্গল ইউনিয়নের সীমান্তে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের জিনিসনগর গ্রামে। বালিয়াকান্দির জঙ্গল ইউনিয়নের সীমান্তে হওয়ায় তার বেড়ে ওঠা সমাধীনগর বাজারে।
গত শুক্রবার (৮ এপ্রিল) বিকালে গড়াই নদী ঘেঁষা সমাধীনগর মহাশশ্মানে দেখা মেলে তার। পড়ন্ত বিকালে একটি নক্কর-ঝক্কর বাইসাইকেল ঠেলে এসে সরাসরি বসে পড়েন গড়াই নদীর কূলে। হাতে একটি পত্রিকা। অমলেন্দুর বসার কিছু সময় পরই সেখানে এসে হাজির হন সমবয়সী আরেক বৃদ্ধ। তার নাম শ্রীশ বিশ্বাস। একই গ্রামের দু’জন। কিছু সময় গল্প করে কাটালেন তারা। তারপর অমলেন্দু তার হাতে থাকা পত্রিকা একটু শব্দ করে পড়তে থাকেন। আর সেটা শুনতে থাকে পাশে বসে থাকা শ্রীশ বিশ্বাস।
কৌতূহলের বশে কথা বলি তাদের সাথে। কথোপকথনের এক পর্যায়ে অমলেন্দু বলতে থাকেন তার জীবনের এই শেষ বয়সের গল্প। তিনি জানান, ১৯৬৮ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন তিনি। এরপর দেশ স্বাধীনের পর যোগ দেন খাদ্য বিভাগে উচ্চমান সহকারী হিসেবে। চাকরি সুবাদে দেশের বিভিন্ন জেলাতে তিনি ঘুরে বেরিয়েছেন। ২০০৫ সালে মাগুরা ফুড অফিস থেকে অবসরে যান তিনি। চাকরি চলাকালীন সময় থেকেই তিনি আসক্ত হয়ে পড়েন পত্রিকা পড়ায়। অবসরে আসার পরেও তিনি নিয়মিত বাড়িতে পত্রিকা রাখেন। অবসরের জীবন থেকে কিছুটা স্বস্তির আশায় তিনি নিয়মিত ছাপা পত্রিকা পড়েন। শুধু নিজেই না, তার সমবয়সের প্রায় ৭-৮ জন বৃদ্ধকে নিয়ে সে কখনো নদীর পার আবার কখনো বাজারের খোলা জায়গায় বসে পত্রিকা পড়েন। অন্যদের শোনান দেশ-বিদেশের খবর।
অমলেন্দু রায় বার্তা২৪.কম-কে বলেন, অবসর জীবন একটা বিব্রতকর জীবন। এ বয়সে কোন ধারাবাহিক কাজ নেই। সময় যেন কাটতে চায় না। এই বিব্রতকর নিঃসঙ্গ জীবনে অনেকটাই শান্তির পরশ বয়ে দেয় পত্রিকা। পত্রিকা পড়লে মনটা বেশ ভালো হয়ে যায়। প্রতিদিন পত্রিকা না পড়লে পাগলের মতো হয়ে যায়। ঘুম থেকে জেগেই অপেক্ষায় থাকি পত্রিকার।
অনলাইন পত্রিকার গুরুত্ব তুলে ধরে অমলেন্দু বলেন, বয়সের ভারে আমি ডিজিটাল কোন ডিভাইস ব্যবহার করতে পারি না। তবে যে যুগ আসছে তাতে আগামী প্রজন্মকে অনলাইনের ওপর নির্ভর হতে হবে। ঘটনার সাথে সাথেই খবর জানা যায় অনলাইনে। যদি অনলাইন পত্রিকা ব্যবহার করতে পারতাম তাহলে আরও ভালো লাগত। জানি না অনলাইন ব্যবহার করার সুযোগ পাবো কিনা? তবে চেষ্টা চালাব।
অমলেন্দুর সহপাঠি শ্রীশ বিশ্বাস বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমাদের সময় কাটতে চায় না। বন্ধু অমলেন্দু প্রতিদিন বিকালে পত্রিকা নিয়ে এসে আমাদের দেশের খবরা-খবর শোনায়। বেশ উপভোগ করি আমরা। কিছুটা সময় হলেও আমরা একসঙ্গে বসে গল্প করতে পারছি, সময়ও ভালো কাটছে।