কামাখ্যাগুড়ির ভাষা বৈচিত্র্য ও ২১শে ফেব্রুয়ারি



ড. রূপ কুমার বর্মণ
কামাখ্যাগুড়ির ভাষা বৈচিত্র্য ও ২১শে ফেব্রুয়ারি

কামাখ্যাগুড়ির ভাষা বৈচিত্র্য ও ২১শে ফেব্রুয়ারি

  • Font increase
  • Font Decrease

 

গত ২১শে ফেব্রুয়ারি সমগ্র বিশ্বজুড়ে প্রতিবছরের মতো এবারেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস”। বাংলা ভাষার অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় ২১শে ফেব্রুয়ারির গুরুত্ব নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে সামাজিক মাধ্যমও। স্বাভাবিকভাবেই, বাংলাভাষা তথা মাতৃভাষার মাহাত্ম নিয়ে বাংলাদেশের মতো ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও অন্যান্য রাজ্যেও অনুষ্ঠিত হয়েছে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অন্যদিকে, বাংলা তথা উপমহাদেশের অন্যান্য ভাষার সংকট নিয়েও অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বস্তুত, ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা-ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক স্তরে ইংরেজি ভাষার প্রাধান্য অক্ষুণ্ণ থাকায় বাংলা ভাষার অবস্থা অনেকটাই করুণ। ‘রাষ্ট্রভাষা’ হিসাবে বাংলাদেশে বাংলাভাষা সংকটের সম্মুখীন হয়নি ঠিকই, কিন্তু (অ-সরকারি সংস্থার পরিচালনায়) ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্রুত বিস্তারও স্পষ্টভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে। বাজার-জনিত চাহিদা বা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের প্রতি সামঞ্জস্য রেখে ইংরেজি ভাষার প্রাধান্যের ফলে পশ্চিমবঙ্গে শহরাঞ্চলে ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে বাংলা মাধ্যমের বেশকিছু সরকারি উচ্চবিদ্যালয়। ছাত্রের অভাবে ধুঁকছে আরোও অনেক বাংলা মাধ্যমের বিদ্যালয়। বাংলা ভাষার এই চিত্র আমাদের সবারই জানা। এই হতাশাজনক পরিস্থিতিতে বাংলা ভাষাকে যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করার লক্ষে প্রতি বছরেই ২১শে ফেব্রুয়ারি হয়ে ওঠে এক মহাসংকল্পের দিন।

পশ্চিমবঙ্গে ২১শে ফেব্রুয়ারি অবশ্য বাংলা ভাষার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। বস্তুত, পশ্চিমবঙ্গের মতো বহু ভাষাভাষি মানুষের রাজ্যে এই দিনটি আরোও অনেক ভাষাগোষ্ঠীর কাছে প্রেরনার উৎস। বিশেষত, ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী (মূলত তপশিলি জনজাতির) কাছে ২১শে ফেব্রুয়ারি ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। এই বিষয়টিকে উপলব্ধি করার জন্য আসুন আমরা একটু ডুয়ার্স অঞ্চলের দিকে একটু দৃষ্টি নিক্ষেপ করি।


ভাষাগত দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ার্স অঞ্চলের জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলা বিশেষভাবে গুরুত্ত্বপূর্ণ। এই জেলাগুলিতে বসবাস করেন অসংখ্য ভাষাগোষ্ঠীর মানুষ। বস্তুত, আলিপুরদুয়ার জেলায় এমন সব ক্ষুদ্র জনজাতি গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করেন যা বৃহত্তর বঙ্গের অন্য কোথাও নেই। উপনিবেশ-পূর্ব যুগ থেকে বসবাস রত বিভিন্ন জনগোষ্ঠী (মেচ, রাভা, টোটো, ভুটিয়া, লেপচা, ডুকপা, রাই, লিম্বু, তামাং, নেপালি, কোচ, রাজবংশী, গারো, ইত্যাদি)  ছাড়াও ঔপনিবেশিক শাসনকালে চা-বাগিচার বিকাশের সূত্র ধরে এখানে আগমন ঘটেছে ঝাড়খণ্ড- বিহার অঞ্চলের বহু জনজাতির। বাগিচা- শ্রমিকের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে আগত বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীর মানুষ (সাঁওতাল, মুন্ডা, ওঁরাও, কুরুখ, চিকবরাইক, মাহালি, ইত্যাদি) আলিপুরদুয়ারের ভাষা বৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করেছে। একইসঙ্গে, ইউরোপীয় মিশনারিদের আগমন, মিশনারি শিক্ষার বিস্তার, উত্তর ও পশ্চিম ভারত থেকে হিন্দি-ভাষীদের আগমন (বিহারি, মৈথিলি, ভোজপুরি, পশ্চিমা, রাজস্থানি, গুজরাটি) এবং বৃহত্তর বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত বাঙালিদের সৌজন্যে  আলিপুরদুয়ারের ভাষা সংস্কৃতির বিকাশের সদর্থক ভূমিকা পালন করেছে। তবে এই জেলার ভাষা  বৈচিত্র্যে বিশাল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে ১৯৪৭ এর বাংলা বিভাজন যার প্রভাব থেকে স্থানীয় জনগোষ্ঠীগুলিও মুক্ত নন। তবে, এই প্রভাব সবসময় নেতিবাচক হয়নি। বরং বৃহৎ ভাষাগোষ্ঠীর মানুষের চাপে খানিকটা কোনঠাসা হয়ে পড়ায় কৌম গোষ্ঠীগুলি তাঁদের মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় উদ্দীপিত হয়েছে। ডুয়ার্সের যে কোন অঞ্চলে দিকে তাকালেই এই বৈশিষ্ট্যটি চোখে পড়বে। চোখে পড়বে কামাখ্যাগুড়ির মতো জনপদের ভাষাগোষ্টির ক্ষেত্রেও।

ভুটান হিমালয়ের পাদদেশে ডুয়ার্সের নদী-বেষ্টিত অঞ্চলে অবস্থিত কামাখ্যাগুড়ি একটি বর্ধিষ্ণু জনপদ। এর উত্তর দিকের ৩১নং জাতীয় সড়ক (National Highway 31) ও উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল (Northeastern Frontier Railways) কামাখ্যাগুড়িকে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের অন্যান্য রাজ্যের প্রবেশদ্বারে পরিণত করেছে। ১নং রায়ডাক ও ২নং রায়ডাক নদী, বৃহত্তর কামাখ্যাগুড়ি জনপদের যথাক্রমে পশ্চিম ও পূর্ব সীমানা দিয়ে কূলকূল করে বয়ে চলেছে। এছাড়াও কামাখ্যাগুড়ির প্রাণকেন্দ্রের মরা রায়ডাক ও ঘোড়ামারা নদী বর্ষার জলে শ্রোতশ্বিনী হয়ে ওঠে। কামাখ্যাগুড়ির দক্ষিণ প্রান্ত, আটিয়ামোচর-বোচামারির জঙ্গলের মধ্যদিয়ে স্পর্শ করেছেকোচবিহার জেলার সীমানা। ভারত-ভুটানের কুমারগ্রাম সীমানা ক্ষেত্র থেকে ৩০ কিমি দক্ষিণে এবং বাংলাদেশ ও ভারতের কুড়িগ্রাম-কোচবিহারের সীমানা থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত কামাখ্যাগুড়ি ও তার পাশ্ববর্তী অঞ্চলের ভাষা-বৈচিত্র্যও বিভিন্ন কারণে অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ।

কামাখ্যাগুড়ির উত্তর দিকের গ্রামগুলোতে (উত্তর কামাখ্যাগুড়ি, পশ্চিম নারারথলি, মধ্য নারারথলি, পূর্ব নারারথলি, পারোকাটা, উত্তর কামাখ্যাগুড়ি) আদিবাসী ও মেচ জনজাতির বসতি ছাড়াও রয়েছে রাজবংশী জনগোষ্ঠির বসবাস। উপনিবেশ-পূর্ব যুগে দক্ষিণ কামাখ্যাগুড়িতে গড়ে উঠেছিল রাভা ও স্থানীয় কোচদের(রাজবংশী) বসতি। কামাখ্যাগুড়ির পাশ্ববর্তী কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ মহকুমাতেও রাভাদের বেশ কয়েকটি গ্রাম গড়ে উঠেছে। কামাখ্যাগুড়ি থেকে সোজা দক্ষিণ দিকে চলতে থাকলে রাভা গ্রামগুলি পাওয়া যাবে বোচামারি, তল্লিগুড়ি, হরিরহাট, বক্সিরহাট এমনকি বাংলাদেশ-সংলগ্ন মেঘালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম গাড়ো পাহাড় জেলার মহেন্দ্রগঞ্জেও।

দক্ষিণ কামাখ্যাগুড়ি (ও পার্শ্ববর্তী তুফানগঞ্জ মহকুমার) রাভা জনজাতির মধ্যে আধুনিকতার প্রভাবে তাদের জীবনধারা ও লোকবিশ্বাসে বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। জনজাতীয়-সংস্কৃতি ও হিন্দু-সংস্কৃতির মিশ্রণে রাভা জনজাতির একটা বড় অংশ নিজেদের হিন্দু হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। দ্বিতীয়ত: এখানকার রাভাদের মধ্যে সাম্প্রতিককালে খ্রিস্টানায়নের (Christianisation) ধারাও সৃষ্টি হয়েছে। একইসঙ্গে রাভাদের কেউ কেউ নিজেদের ‘রাভা’ পদবিরও বদলে ‘দাস’ ও ‘রায়’ পদবি গ্রহণ করে স্থানীয় ‘রাজবংশী’ সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করার চেষ্টা করে চলেছেন। অর্থাৎ হিন্দুয়ায়ন, খ্রিস্টানায়ন ও রাজবংশীয়ায়ন (Rajbanshiyization) একসঙ্গে চলমান। এই ধারাগুলোর অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে দক্ষিণ কামাখ্যাগুড়ির রাভাদের মাতৃকুলানুসারী সমাজে (Matrilineal Society) পিতৃকুলানুসারী ধারার (Patrilineal traditions) জন্ম হচ্ছে। কিন্তু সাধারণভাবে কামাখ্যাগুড়ির রাভা সমাজ এখনও মাতৃকুলানুসারী যা তাঁদের প্রতিবেশী স্থানীয় জনগোষ্টিগুলি (রাজবংশী, মেচ) থেকে আলাদা।

আধুনিকতার সংস্পর্শে এসে কামাখ্যাগুড়ির মেচ জনজাতি মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন এলেও তাঁরা তাঁদের নিজস্ব ভাষা-সংস্কৃতি ও ‘বস্ত্র উৎপাদনের প্রক্রিয়াকে’ সযত্নে বাঁচিয়ে রেখেছেন। এখানকার মেচ জনজাতির বিবর্তনের মধ্যে তিনটি সমান্তরাল ধারা বর্তমান—(১) জনজাতিয় সংস্কৃতি থেকে খ্রিস্টান সংস্কৃতিতে রূপান্তর, (২) জনজাতিয় ভাবধারা থেকে ব্রাহ্ম (হিন্দু) ধর্মে রূপান্তর, ও (৩) আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিতশ্রেণির পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে বিবর্তন।

কামাখ্যাগুড়ি ও তার পাশ্ববর্তী অঞ্চলের রাজবংশী জনগোষ্ঠীর বিবর্তনও আলোচনার দাবি রাখে। স্থানীয় রাজবংশী পরিবার ছাড়াও পূর্ববঙ্গের রংপুর অঞ্চল থেকে বহু রাজবংশী পরিবারের অভিবাসন ঘটেছে এখানে। এখানকার রাজবংশী সমাজ তার নিজস্ব ভাষা, খাদ্যাভ্যাস, লোকচিকিৎসা, সামাজিক রীতিনীতি, নিজস্ব বাদ্যযন্ত্র, কৃষিসরঞ্জাম ও লোকবিশ্বাসের বৈশিষ্ট্যগুলিকে বাঁচিয়ে রেখেছে।

বৃহত্তর কামাখ্যাগুড়ির জনবৈচিত্র্যে বিপুল পরিবর্তন এসেছে দেশ-বিভাজনের (১৯৪৭) পর। পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন জেলা (বিশেষত ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট, ঢাকা, কুমিল্লা, পাবনা ও রংপুর) থেকে ব্যাপকহারে উদ্বাস্তু ও অভিবাসীদের আগমনের ফলে কামাখ্যাগুড়ি হয়ে উঠেছে বাঙালি অধ্যুষিত জনপদ। এই জনপদের বাঙালিরা বেশ কয়েকটি জাতি-বর্ণে বিভক্ত। কামাখ্যাগুড়ির বিভিন্ন ‘পাড়া’ বা রাস্তার নাম থেকে এখানকার জনবৈচিত্র্য  ও পূর্ববঙ্গের সঙ্গে তাঁদের যোগসূত্রের আভাস পাওয়া যায়। ঘোষপাড়া, পালপাড়া, পাবনা কলোনি, ঢাকা কলোনি, চড়কতলা (নমঃপাড়া, মালোপাড়া), মোদকপাড়া, মাহিষ্যপাড়া, ইত্যাদি তার কয়েকটি উদাহরণ।

কামাখ্যাগুড়ির অভিবাসীদের মধ্যে রাজস্থানি (মাড়োয়ারি), বিহারি (বিহার থেকে আগত বিভিন্ন সম্প্রদায়) ও নেপালিদের সংখ্যা কম হলেও তাঁদেরকে বাদ দিয়ে এখানকার সমাজকে ব্যাখ্যা করা যাবে না। ডুয়ার্সের অন্যান্য বাজারের মতই কামাখ্যাগুড়ির (মাড়োয়ারি পট্টির) মাড়োয়ারিরা তাঁদের নিজস্ব ভাষা, খাদ্যভ্যাস, পোষাক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কৃতিকে পরম যত্নের সঙ্গে বাঁচিয়ে রেখেছেন। অন্যদিকে বিহারি অভিবাসীদের সংখ্যা মাড়োয়ারিদের তুলনায় অনেক বেশি। শ্রমিক ও ছোট ব্যবসায়ী ছাড়াও বিহারিরা চর্মকার ও ব্যান্ড পার্টির শিল্পি হিসেবে এখানে কাজ করে চলেছেন। বিয়ে, অন্নপ্রাশন বা অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে ও উৎসবে কামাখ্যাগুড়ির নতুন বাজারের ‘ব্যান্ডপার্টি’ বিশেষ সুনাম অর্জন করেছে। এখানকার বিহারি কর্মকার (লোহার), নাপিত ও মুচি সম্প্রদায়ও তাদের কর্ম দক্ষতার জন্য প্রসিদ্ধ।

কামাখ্যাগুড়ির উত্তর দিকে (ভুটানের সীমানা লাগোয়া অঞ্চলে) অবস্থিত কুমারগ্রাম- শামুকতলায় গড়ে উঠেছে বেশ কিছু চা-বাগান (কুমারগ্রাম, নিউল্যান্ডস, সংকোষ, তুরতুরি, রায়ডাক, চুনিয়াঝোড়া, কার্তিক, ধওলা, কোহিনূর, ইত্যাদি)। বাগিচা অঞ্চল ও কামাখ্যাগুড়ি-সন্নিহিত অঞ্চলে ‘সাদ্রি’ ভাষা (মিশ্র ভাষা) হয়ে উঠেছে বেশ জনপ্রিয়। তাছাড়া নেপালি ও হিন্দির সঙ্গে কুরুখ ও  সান্তালি ভাষারও বিকাশ ঘটেছে এখানে।

কামাখ্যাগুড়ি ও তার সন্নিহিত অঞ্চলের (কুমারগ্রাম, বারোবিশা, তুফানগঞ্জ, বক্সিরহাট, শামুকতলা ও মহাকালগুড়ি) ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সাত দশক অতিক্রম করতে চলেছে। ‘১৯৬০-র দশকের আসামে বাংলা ভাষার অধিকার রক্ষার দাবিতে আন্দোলন’ এখানকার ভাষা আন্দোলনকে উদ্দীপিত করেছিল। ১৯৬৯-এ স্থাপিত উত্তরাখণ্ড দল , রাজবংশী (কামতাপুরী) ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে যে আন্দোলন শুরু করেছিল কয়েক দশক পর তা বাস্তবায়িত হয়েছে (২০১৮ সালে)। কামতাপুরী ও রাজবংশী উভয়েই পেয়েছে পৃথক ভাষার স্বীকৃতি। জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারে স্থাপিত হয়েছে যথাক্রমে ‘কামতাপুরী ভাষা একাডেমী’ ও ‘রাজবংশী ভাষা একাডেমী’। এমনকি কামতাপুরী ও রাজবংশী মাধ্যমে পঠনপাঠনের প্রস্তুতিও চলছে জোরকদমে। শুরু হয়েছে সান্তালি ভাষাতেও পঠনপাঠন। অন্যদিকে দার্জিলিঙের গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের সূত্র ধরে নেপালি ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে ডুয়ার্সেও আন্দোলন হয়েছে কয়েক দশক ধরে। একইসঙ্গে, বড়োল্যান্ড আন্দোলন ও বড়ো (মেচ) ভাষার স্বীকৃতির দাবির সঙ্গে কামাখ্যাগুড়ি তথা তার পাশ্ববর্তী গ্রামগুলোর (মহাকালগুড়ি, খোঁয়াড়ডাঙ্গা, দলদলি,  দোবাশ্রী, হেমাগুড়ি, ইত্যাদি) গভীর সংযোগ ছিল। বড়ো  ও নেপালি উভয়েই সংবিধানের অষ্টম তালিকায় স্থান পাওয়ায় ভাষার অধিকার নিয়ে বড়ো-ভাষী বা নেপালি-ভাষীদের আর আন্দোলন করতে হচ্ছে না।

কিন্তু বাংলা ভাষার মতো নেপালি,  সান্তালি, বড়ো, রাজবংশী বা কামতাপুরীকেও সংগ্রাম করতে হচ্ছে ইংরেজি ও হিন্দির দাপটের সঙ্গে। কামাখ্যাগুড়ি বা ডুয়ার্সের অন্যান্য ক্ষুদ্র জনজাতি বা ভাষাগোষ্ঠীগুলির বাচার লড়াই আরোও কঠিন। তাঁদের সংগ্রাম করতে হচ্ছে প্রভুত্ত্বকারী ভাষার (ইংরেজি, বাংলা, হিন্দি, নেপালি, রাজবংশী, সান্তালি, সাদ্রি, ইত্যাদি) সঙ্গে। একইসঙ্গে নিজেদের ভাষা সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তাঁদের  প্রতিনিয়ত ভাবতে হচ্ছে । আর এই সংগ্রামে, ২১শে ফেব্রুয়ারির উদ্দীপনার মাঝেই কামাখ্যাগুড়ির ভবেশ রাভা ও সহ শিল্পীরা দায়চাঁদ  রাঙাঙের লেখা “রাভা জাতীয় সংগীতে” সুর দিয়েছেন। গেয়ে উঠেছেন:

...... হাসঙাইঙি কোচা সামসিং স্বা...

দে সারায় কোচা নাঙ, সৌঙ হাইমৌন পতকনাঙ

...... হাসঙাইঙি কোচা সামসিং স্বা

তিস্তা, গঙ্গা, বলাঙ বুত্তুর,

রায়ডাক সংকোচ  তোর্ষা।

... হাসঙাইঙি কোচা সামসিং স্বা……

[ও বিশ্বের কোচ মানুষেরা, আর ঘুমিয়ে থেকোনা, হাতে হাত মিলিয়ে জেগে ওঠো। তিস্তা, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, রায়ডাক, সংকোষ, তোর্ষা-তীরের ওগো কোচ জনগণ, গায়ে কামবাঙ ও কেমব্লেট জড়িয়ে তোমরা এগিয়ে চল, আর ঘুমিয়ে থেকোনা।]

২১শে ফেব্রুয়ারির আবহে গানের মাধ্যমে ঘুমন্ত স্বত্তাকে জাগিয়ে তোলার এই প্রয়াস নিঃসন্দেহে  এক গুরুত্ত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আগামী দিনে মাতৃভাষা দিবসের আবহে অন্যান্য ভাষাগোষ্ঠীগুলিও তাঁদের নিজস্ব ভাষা-সংস্কৃতিতে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদ নিয়ে হয়তো এভাবেই এগিয়ে আসবেন।

*. রূপ কুমার বর্মণ কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক আম্বেদকর চর্চা কেন্দ্রের সমন্বয়ক। তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন খলেন্দ্র মোচারি, দেবাশিস ভট্টাচার্য, রাজু সাহা ভবেশ রাভা।

   

এক ঘরেই তিন বলী



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

  • Font increase
  • Font Decrease

চুল থেকে দাড়ি-সবই সফেদ। হাঁটাচলায় মন্থর। স্বাভাবিকভাবেই প্রবীণের বয়সটা আঁচ করা যায় প্রথম দেখাতেই। কিন্তু তার ষাটোর্ধ্ব বয়সটা যেন কেবল ক্যালেন্ডারের হিসাব। বয়স যতই ছোবল বসানোর চেষ্টা করুক না কেন-তিনি যেন এখনো ২৫ এর টগবগে তরুণ। সেই বলেই তো ফুসফুসের রোগবালাইকে তুড়ি মেরে ঐতিহাসিক আবদুল জব্বারের বলীখেলা এলেই হাজির হয়ে যান রিংয়ে। এক দুবার নয়, এবার কিনা পূর্ণ হলো সুবর্ণজয়ন্তী!

চট্টগ্রামের অন্যতম আবেগের ঠিকানা ঐতিহাসিক এই বলীখেলার বড় বিজ্ঞাপন হয়ে ওঠা এই বলীর নাম খাজা আহমদ বলী। ৫০ বছর ধরে বলীখেলায় অংশ নিয়ে দর্শকদের আনন্দ দিয়ে যাওয়া এই বলীর এখন পড়ন্ত বয়স। ফুসফুসে বাসা বেঁধেছে রোগ। কানেও শোনেন কম। খাজা আহমদ বুঝে গিয়েছেন, তার দিন ফুরাচ্ছে। কিন্তু তিনি যে বলীখেলার স্মৃতি থেকে সহজেই মুছে যেতে চান না। সেজন্যই উত্তরসূরী হিসেবে এরই মধ্যে গড়ে তুলেছেন নিজের দুই ছেলেকে। বাবার পাশাপাশি দুই ভাইও এখন বলীখেলার নিয়মিত প্রতিযোগী।

খাজা আহমেদ বলীর বাবাও বলীখেলায় অংশ নিতেন। বাবার সঙ্গে বলীখেলায় এসে ১৯৭৪ সালে শখের বসে খেলতে নামেন খাজা আহমেদও। বয়স তখন ১২ বছরের আশপাশে। সেই শুরু, আর কোনোদিন মিস করেননি বলীখেলায় অংশ নেওয়া। একবার চ্যাম্পিয়নের গৌরবও অর্জন করেছিলেন। বহু বছর ধরে খাজা আহমেদ বলী ও সত্তরোর্ধ্ব মফিজুর রহমানের ‘বলীযুদ্ধ’ জব্বারের বলীখেলার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে এই দ্বৈরথ হয়তো আর দেখা যাবে না। দুই বছর আগে উৎপত্তি হওয়া ফুসফুসের রোগটা ইদানিং যে খাজা আহমদকে বেশিই ভোগাচ্ছে। সেজন্য গতবছর অবসরের ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এবার দুই ছেলেকে নিয়ে বলীখেলায় এসে আবেগ সামলাতে পারেননি খাজা আহমেদ। ছেলেদের সঙ্গে নিজেও নেমে পড়েন রিংয়ে। সেজন্য আরও একবার মফিজুর রহমান-খাজা আহমেদের লড়াই দেখল হাজারো দর্শক। যদিওবা যৌথ বিজয়ী ঘোষণা করে দুজনের মুখেই হাসি ফুটিয়েছেন রেফারি।

প্রতিপক্ষ মফিজুর রহমানের সঙ্গে বলী-যুদ্ধে খাজা আহমদ

কেন অবসর ভাঙলেন এমন প্রশ্নে হাসি খেলা করে যায় খাজা আহমেদ বলীর মুখে। বলতে থাকেন, ‘বয়সের কারণে শরীর দস্ত। ফুসফুসও ঠিকঠাক কাজ করছে না। সেজন্য অবসর নিয়েছিলাম। কিন্তু বলীখেলায় আসার পর দেখলাম দর্শকেরা সবাই অনুরোধ করছেন। সেজন্য মন বলল, না খেললে দর্শকদের প্রতি অন্যায় হবে। আর আবেগ ও ভালোবাসার কাছে বয়স-রোগ পেরেছে কবে?’

তবে এখানেই সব শেষ, বলে দিয়েছেন খাজা আহমেদ বলী। বলেছেন, ‘বয়স হয়ে গেছে। মনে হয় না আর খেলতে পারব। অসুখটা বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে। সেজন্য মনে মনে মেনে নিয়েছি এটাই আমার শেষ অংশগ্রহণ। বাকিটা আল্লাহর হাতে।’

তিন ছেলে ও এক মেয়ের বাবা খাজা আহমদের বাড়ি চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায়। কৃষিকাজ করেই চলে সংসার। তবে বলীখেলা এলে সব কাজ বাধ। কয়েকদিন ধরে চলে প্রস্তুতি। নিজের স্মৃতি ধরে রাখতে এরই মধ্যে খাজা আহমেদ নিজের দুই ছেলেকে গড়ে তুলেছেন বলী হিসেবে। ২০১২ সাল থেকে বলীখেলায় নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন তার বড় ছেলে মো. সেলিম। গত বছর থেকে যোগ দিয়েছেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। এখন বলীখেলার আগে দুই ছেলেকে নিয়ে চলে খাজা আহমদের প্রস্তুতি।

জানতে চাইলে সেলিম বলেন, ‘বাবার কাছ থেকে আমরা বলীখেলা শিখেছি। বয়সের কারণে বাবা এখন অসুস্থ। হয়তো আর খেলা হবে না। সেজন্য তার উত্তরসূরী হিসেবে আমরা বলীখেলায় অংশ নেব সামনের দিনগুলোতে। এটা শুধু পরিবারের বলীর প্রজন্ম ধরে রাখার জন্য নয়, তরুণদের মাদক-সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেকে দূরে রাখতে উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগও।’

বাবাকে পাশে রেখে একই কথা বললেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। বলেন, ‘হয়তো বাবা আর খেলবেন না। তবে তিনি না খেললেও যতদিন বেঁচে থাকবেন বলীখেলা দেখতে আসবেন। রিংয়ের নিচে দাঁড়িয়ে আমাদের উৎসাহ দিয়ে যাবেন।’

ছেলের কথা শুনে আবেগ খেলে যায় খাজা আহমেদ বলীর মনে। কাঁধের গামছাটা হাতে তুলে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘না খেললেও যতদিন বাঁচি এখানে, এই বলীর মাঠ লালদীঘি ময়দানে ছুটে আসব। এটা থেকে দূরে থাকতে পারব না।’

খাজা আহমেদ যখন কথা বলছিলেন দূরে কোথাও তখন মাইকে বাজছিল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই অমর গান। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় অক্লান্ত গলায় গেয়ে চলেছেন, যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে...

;

চাকরি ছেড়ে বসের সামনেই ঢোল বাজিয়ে নাচলেন যুবক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নিত্যদিনের অফিসের কর্মপরিবেশে অনেকের মধ্যেই 'বিরক্তি' চলে আসে। তবুও ধৈয্য নিয়ে সব সহ্য করে টিকে থাকার জন্য চালিয়ে যান লড়াই। তবে এ যাত্রায় সকলের দ্বারা টিকে থাকা সম্ভব হয় না। অফিসের 'বিষাক্ত' কর্মপরিবেশে অনেকেই ভোগেন মানসিক সমস্যায় কিংবা ব্যক্তিজীবনে। এমন পরিবেশ থেকে বাঁচতে একেক জন একেক পন্থা অবলম্বন করে থাকেন।

তবে অনিকেত নামের এক যুবক এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে যা করেছেন নেট দুনিয়ায় তা রীতিমতো ভাইরাল। এসব থেকে মুক্তি পেতে চাকরিটাই ছেড়ে দিয়েছেন এই যুবক। এতেই ক্ষান্ত হননি তিনি, বসের সামনেই ঢাকঢোল বাজিয়ে নেচে উদযাপন করেছেন এমন মুহূর্তের।

ঘটনাটি ভারতের পুনে রাজ্যের। অনিকেত নামের ওই যুবক বিক্রয় সহযোগী হিসেবে চাকরি করতেন।

তার এমন উদযাপনের একটি ভিডিও ইন্সটাগ্রাম শেয়ার করেছেন অনীশ ভগত।

ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, গত তিন বছর ধরে এই কোম্পানির সাথে কাজ করেও বেতন খুব একটা বাড়েনি। এছাড়াও অফিসের বসের দ্বারাও তাকে বিভিন্ন সময়ে অপমানিত হতে হয়েছে।

তাই তার কাজের শেষ দিনে বন্ধুরা অফিসের বাইরে ঢোল নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন এবং নেচেছিলেন। ভিডিওতে দেখা গেছে, এ ঘটনায় তার বস অনেক উত্তেজিত হয়েছেন। পাশাপাশি তার বস লোকজনকে ধাক্কা দিয়েছেন এবং চিৎকারও করেছেন।

ভিডিওটির ক্যাপশনে ভগত লিখেছেন, আমি মনে করি আপনারা অনেকেই এর সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারবেন। আজকাল বিষাক্ত কাজের সংস্কৃতি খুব বেশি দেখা যায়। সম্মান এবং অধিকারের অভাব খুবই সাধারণ। অনিকেত তার পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। আমি আশা করি এই গল্প মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।

পোস্ট করা ভিডিওটি এক মিলিয়নেরও (১০ লাখের বেশি) বেশি ভিউ পেয়েছে। পোস্টটিতে অসংখ্য লাইক ও কমেন্টও রয়েছে।

একজন ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি জানি না কেন এটি আমাকে এত সন্তুষ্ট করেছে।'

আরেকজন লিখেছেন, 'নাচটি আমাকে অন্য মাত্রার তৃপ্তি দিয়েছে।'

'আপনি সত্যিই আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে ইতিবাচক এবং উত্সাহী ব্যক্তি'- তৃতীয় একজন ঠিক এভাবেই নিজের অনুভূতি জানিয়েছেন।

তথ্যসূত্র: হিন্দুস্থান টাইমস 

;

অভয়ারণ্যে মানুষ যখন বন্দিখাঁচায়



প্রমা কোয়েল, ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চিড়িয়াখানা, নানানরকম পশুপাখি ও প্রাণীর বন্দিশালা। কেবল রং-বেরঙের চিড়িয়াই নয়; বাঘ, সিংহ, ভালুক, বানর, গণ্ডারসহ কত বন্যপ্রাণীই না খাঁচায় বন্দি থাকে!

চিড়িয়াখানায় রাখতে বন্য প্রাণীদের প্রকৃতির স্বাধীন জীবন থেকে ছিনিয়ে আনা হয়। তাদের খাঁচায় বন্দি করা হয় যেন, মানুষ তাদের দেখে আনন্দ পায়। অনেক প্রাণীর জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি খাঁচাতেই কেটে যায়।

ছোট থেকে বড় সব বয়সের মানুষই চিড়িয়াখানায় ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন। শিশুরা না হয় অবুঝ! তবে যারা প্রাপ্তবয়স্ক তারাও চিড়িয়াখানায় এই বন্দি প্রাণীদের জীবনকে গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারেন না।

এশিয়ার বড় দেশ চীনে রয়েছে, এক অদ্ভুত চিড়িয়াখানা। চংকিংয়ে অবস্থিত সেই চিড়িয়াখানার নাম ‘লেহে লেদু বন্যপ্রাণী চিড়িয়াখানা’। একে ‘রিভার্স জু’ (বিপরীত চিড়িয়াখানা) বলেও ডাকা হয়।

এখানেও মানুষ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে পশু দেখতে আসেন। তবে একেবারেই ভিন্ন উপায়ে। মূলত, একটি খাঁচা রয়েছে, যেখানে মানুষদের সেই খাঁচায় পুরা হয়। তারপর সেই খাঁচাবন্দি মানুষদের নিয়ে রাখা হয়, অভয়ারণ্যে। সেখানে বন্য প্রাণীরা মানুষের খাঁচার চারপাশে অবাধে ঘুরতে থাকে। চিড়িয়াখানায় বন্দি প্রাণীদের বন্দিজীবনের এক প্রতীকী দৃশ্য!

অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষদের জন্য এটি এক নতুন অভিজ্ঞতা!

অভয়ারণ্যে খাঁচায় বন্দি মানুষ, ছবি-সংগৃহীত

খুব কাছে থেকে হিংস্র বন্যপ্রাণীদের মুক্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যেমন লোমহর্ষক, ঠিক তেমনই আতঙ্কজনকও হতে পারে। বিপরীতধর্মী এই চিড়িয়াখানাটি সবার জন্য প্রথম উন্মুক্ত করা হয়, ২০১৫ সালে। তখন বিশ্বের সংবদমাধ্যমের শিরোনাম কেড়েছিল এ চিড়িয়াখানাটি।

একটি শক্ত লোহার খাঁচাবেষ্টিত দর্শনার্থীদের একটি ট্রাকে তুলে অভয়ারণ্যে রেখে দেওয়া হয়। সেখানে তাদের ঘিরে ধরে ঘুরতে থাকে বাঘ, ভালুক, সিংহ ইত্যাদি হিংস্র প্রাণী।

এ বিষয়ে চিড়িয়াখানার প্রধান চ্যান লিয়াং বলেন, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা রক্ষার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। খাঁচার ফাঁকা অংশ দিয়ে হাতের আঙুলও বের না করার নির্দেশনা দেওয়া থাকে।

তবে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই চিড়িয়াখানাটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে অনেক। এর নৈতিকতা নিয়ে অনেকে প্রশ্নও তুলেছেন।

অনেকে মনে করেন, এরকম ব্যবস্থাপনায় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। কারণ, শিকারী প্রাণীগুলো প্রচণ্ড হিংস্র। তাই, সে কারণে যে কোনো সময় বিপজ্জনক ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

আবার এরকম চিন্তাভাবনার প্রশংসাও করেছেন অপর একটি পক্ষ। তাদের বক্তব্য, পৃথিবীটা কেবল মানুষদের নয়। প্রকৃতিতে সব প্রাণীদের একটা ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন। তাদের বন্দি করে রাখা মানুষের উচিত নয়। কারণ, মুক্ত প্রকৃতিতে বিরাজ করার অধিকার সব প্রাণীরই রয়েছে।

তাদের মন্তব্য, আমরা প্রাণীদের আবাসস্থল বনজঙ্গল সব উজাড় করেছি। সে কারণে তাপমাত্রাও অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। আবার প্রাণীদের বন্দি রেখে তাদের জীবন চরম দুর্বিষহ করে তুলি।

চাইলে এবং সুযোগ পেলে এই ধরনের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিতে চিড়িয়াখানাটি ঘুরে আসতে পারেন বৈকি!

তথ্যসূত্র: এনিমেল অ্যারাউন্ড দ্য গ্লোব

;

৫ বছরের শিশুর বিস্ময়কর প্রতিভা!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বয়স সবে ৫ কিংবা ৬। এই বয়সেই তার প্রতিভা দেখে অবাক হবে যে-কেউ!

গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সের (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভিডিওটি ১ মিলিয়নের (১০ লাখের বেশি) বেশি মানুষ দেখেছেন। খবর এনডিটিভি। 

ভিডিওতে রিলি নামের ওই শিশুটিকে প্রথমে শ্বাস নিতে দেখা যায়। তারপর সে একটি শক্তিশালী গর্জন দিয়ে শ্বাস ছাড়ে। ওই গর্জনটি হুবুহ সিংহের গর্জনের অনুরূপ।

রিলির মা অ্যামি ভিডিওটি এক্সে শেয়ারের পরই তা ভাইরাল হয়ে যায়। শিশুটির এমন নিখুত দক্ষতা দেখে মুগ্ধ দর্শকরা। ভিডিওটিতে অনেকেই নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, এত অল্প বয়সে এমন বাস্তবসম্মত গর্জন তৈরি করার রিলির ক্ষমতার বিস্ময় প্রকাশ করে।

আরেকজন লিখেছেন, শিশুরা খুব দ্রুত শিখে। তার এমন প্রতিভা সত্যিই অবাক করার মতো।

;