খুবই কম দেখা মেলে লম্বাপা-তিসাবাজ
হিজল-তমালের বনে রাখা আছে সেই পাখির স্মৃতি! সেই স্থানে বারবার গিয়ে সেই পাখিকে আর দেখা যায় না, স্মরণে ভেসে আসে তার স্মৃতি। প্রায় এক দশক পূর্বে এই পাখিটিকে বাইক্কা বিল বা হাকালুকি হাওরে দেখা গেলেও এখন আর দেখা যায় না।
বিরল হয়ে পড়েছে তারা। কোথায় যেনো হারিয়ে গেছে তারা। এভাবে হারিয়ে যাওয়া বা খুবই কম দেখার মাঝে একটি বেদনা লুকায়িত থাকে বুকের গভীরে!
পাখিটির নামই বলে দেয়- তার শারীরিক বর্ণনার টুকরো অংশ। ‘লম্বাপা-তিসাবাজ’ অর্থাৎ লম্বা পায়ের অধিকারী সে। যদিও বাজ পাখিরা দারুণ শিকারে পাখি। লম্বা পা হওয়াতে শিকারে অতিরিক্ত সুবিধাভোগ করে থাকে সে। এর ইংরেজি নাম Long-legged Buzzard এবং বৈজ্ঞানিক নাম Buteo rufinus।
এমনিতে নিঃসঙ্গ স্বভাবের শিকারী পাখি ‘লম্বাপা-তিসাবাজ’। প্রজনন মৌসুমে সঙ্গীকে আকৃষ্ট করতে পরিস্কারভাবে বিড়ালের মতো ‘মিইইই-ইউ’ স্বরে ডাকে। এরা আমাদের দেশের একসময়ের সুলভ আবাসিক পাখি হলেও এদের কম দেখা মেলে। যাযাবর হিসেবে এদের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
বিলাশাকৃতি বা উঁচু গাছের অভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এ জাতীয় পাখিদের প্রজনন। আমাদের প্রকৃতির চারপাশ থেকে যেভাবে প্রাচীন, বিশালাকৃতি এবং দীর্ঘদেহী বৃক্ষগুলোকে ধ্বংস করা হচ্ছে এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে আমাদের দেশের মূল্যবান জীববৈচিত্র্যের উপর।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং বন্যপ্রাণী গবেষক ড. মনিরুল এইচ খান বলেন, এরা মোটামুটি অবস্থানে আছে; কম দেখা মেলে। তবে এতোটা কমন এরা কখনোই ছিল না। আবার খুব যে ভেরি-রেয়ার (অতি বিরল) সেটাও বলা যাবে না। শীতে এরা নদীতীরে থাকে, তবে কম দেখা মেলে।
তিনি আরো বলেন, লম্বা-পা তিসাবাজ আকারে চিলের মতো। প্রায় ৬১ সেন্টিমিটার। তাদের দেহে কালচে বাদামি আভা রয়েছে। ঘাড়, গলা আর মাথায় হলুদ রঙের ছাপ। লালচে-বাদামি রঙ রয়েছে পেট এবং লেজে। বাদামি ডানার প্রাপ্ত কালো। নিচ থেকে দেখলে ডানার পিছনে কালো পাড় এবং ত্রিকোণ অংশ কালচে বাদামি। গিরায় কালো পট্টি। পা ফিকে লেবু-বাদামি। অপরিপূর্ণ বয়স্ক পাখিদের দেহ অল্প কালচে রঙের ছাপ রয়েছে।
এরা পাহাড়ি এলাকা কিংবা জলাভূমি আশেপাশে বসবাস করে থাকে। পাহাড়ে এরা দুর্বল পাখি, পাখির ডিম, বাচ্চা প্রভৃতি খায়। এছাড়াও ইঁদুর জাতীয় কোনো ছোট সরীসৃপ দেখলে ছোঁ মেরে ধরে খায়। মাছ-ব্যাঙও ধরে খেয়ে থাকে বলে জানান ড. মনিরুল এইচ খান।