নতুন বছরে সাগরের জলতরঙ্গে উদ্ভাসিত উচ্ছ্বাস
জাহাজটি তখন মাঝ নদীতে। পেছনে ২০২১ সালের শেষ সূর্যোদয়ের আলোকরশ্মি নাফ নদীর জলে বিম্বিত। জাহাজ সেন্ট মার্টিন প্রবাল দ্বীপের পথে। সেখানে অপেক্ষমাণ বঙ্গোপসাগরের অতলান্ত গভীরে বিদায়ী ২০২১ সালের শেষ সূর্যাস্ত আর নতুন বছর ২০২২ সালের সূর্যোদয়।
বর্ষ বিদায় আর বরণের মাহেন্দ্রক্ষণে দেশের সর্বদক্ষিণ জলসীমায় যারা চলেছেন, তারা করোনার মধ্যে সামাজিক স্বাস্থ্যবিধির কারণে গতানুগতিক অনুষ্ঠানের পক্ষে নন। বরং প্রকৃতির সান্নিধ্যে এমন ঐতিহাসিক আবহকে উদযাপনে আগ্রহী। যে দলের অন্যতম একজন রাশিদা জাহান, শিক্ষক ও ভ্রামণিক। সুযোগ পেলেই যিনি পরিবারসহ ঘুরে আসেন প্রাকৃতিকভাবে সৌন্দর্যে ভরপুর কোনো নান্দনিক স্থানে।
রাশিদা জাহান নিজের কাজে ও চিন্তায় প্রকৃতি আর মানুষকে প্রাধান্য দেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী হিসাবে ধরে রেখেছেন ক্যাম্পাসের পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে অটুট বন্ধন। উদ্যোগী এই নারী সুযোগ পেলেই নিজে ড্রাইভ করে সপরিবারে চলে যান নানা দৃষ্টিনন্দন স্থানে। সমুদ্রের অতলে নীল জলরাশিতে ঘেরা সবুজ দ্বীপে বছরের শেষ আর শুরুকে উপভোগের পরিকল্পনার অন্যতম রূপকারও তিনিই।
বার্তা২৪.কম’কে পুরনো ও নতুন বছরের সন্ধিক্ষণের অভিনব ও রোমাঞ্চকর ভ্রমণের বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, 'করোনার ভয় নিয়ে শুরু আর ভয়ে-ভয়েই শেষ হয়েছে বছর। ভয়কে নিয়েই এসেছে নতুন বছর। তথাপি ভয়কে জয় করেই চলেছে মানব সভ্যতা। মানুষের জীবনে ভয়, ভীতি, গ্লানি দূর করে নবতর প্রাণশক্তির বিকাশ ঘটে প্রকৃতির পরশে। আমরা তাই সুযোগ পেলেই চলে আসি প্রকৃতিক নৈকট্যে।'
'বিদ্যমান মহামারির সঙ্কুল পরিস্থিতি আমাদের খুব হুঁশিয়ার ও সতর্ক করেছে। সর্বক্ষণ সাবধানবাণী শুনিয়ে শুনিয়ে আমাদেরকে শিখিয়েছে সংযত হতে, মাস্ক পরতে, অকারণ উল্লাসে গা ভাসিয়ে ঝুঁকি না বাড়াতে। এসব চ্যালেঞ্জে বিষ নিয়ে বিশ সাল শুরু হয়েছিল, একুশ-শেষেও তার ক্ষয় নেই। বাইশেও রয়েছে বিপদের ঘনঘটা। বরং নতুন গোত্রের ভাইরাসে নতুন ভাবে শক্তি সঞ্চয় করে অতিমারির দাপট আমাদের ধাওয়া করেই চলেছে। বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। ফলে শঙ্কা, উদ্বেগ, অনিশ্চয়তা সঙ্গে নিয়েই আরো একটি বছর পেরোতে হচ্ছে আমাদের। অবস্থা তাই খুব সুখের বলা যাবে না। তথাপি জীবনকে আনন্দঘন করতে সবারই চেষ্টা করা উচিত', বলেন রাশিদা জাহান।
রাশিদার বন্ধু, সহপাঠী ও স্বামী সাইদুর রহমান মিন্টু অনেক গুণে গুণান্বিত ব্যবসা প্রশাসক ও সামাজিক মানুষ। অবসরে তারও ঝোঁক ভ্রমণের। স্ত্রী আর দুই পুত্রকে নিয়ে গাড়িতে বের হন সুযোগ পেলেই। অধুনা তার আগ্রহ সামাজিক মাধ্যমে ভিজুয়াল কন্টেন্ট নির্মাণে। একটি অনলাইন টিভি চ্যানেলে সাক্ষাতকার ও প্রতিবেদনে মানুষ ও প্রকৃতিকে তুলে ধরছেন তিনি।
বার্তা২৪.কম'কে তিনি বলেন, 'শত বিরূপতাতেও আনন্দ জাগানোই জীবনের মর্ম। হতাশা নয়, আশা হলো জীবনের মূলমন্ত্র। যখন দেখি, ফেলে আসা বছরের খাতায় বাংলা ও বাঙালির প্রাপ্তির পরিমাণ নেহাত শূন্য নয়। যা কোনও না কোনও ভাবে এগিয়ে চলার প্রেরণাও বটে। তখন নিজের গতিও বেড়ে যায়।'
বিপদ ও বিঘ্ন পেরিয়ে নিজের, সমাজের, মানুষের উৎকর্ষ ও বিকাশে পথ বেছে নিয়েছেন রাশিদা আর মিন্টু। বৃহত্তর চট্টগ্রামের অপার সম্ভাবনাগুলো তুলে ধরছেন তারা। জীবনকে সুন্দর করে জগতকে আলোকিত করার সারণি ধরে তাদের যাত্রা বিদায়ী বছর থেকে আশার নতুন বছরের দিকে চলেছে সাগরের জলতরঙ্গে উদ্ভাসিত নতুন আলোকমালার উচ্ছ্বাসে।