জো বাইডেন থেকে শেখ হাসিনা : ভবিষ্যতের রাস্তা সহজ নয়



দেবদুলাল মুন্না
জো বাইডেন ও শেখ হাসিনা

জো বাইডেন ও শেখ হাসিনা

  • Font increase
  • Font Decrease

নতুন মেরুকরণ কোন পথে

ফ্রান্সিস ফুকুয়ামো মনে করেন, আধুনিক যুগে গণতন্ত্র সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য রাষ্ট্রব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে দুই কারণে। প্রথমত, মানুষের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা আছে। দ্বিতীয়ত, গণতন্ত্র সকল মানুষকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু ফুকুয়ামোর এ কথা আজকের রাজনৈতিক বাস্তবতায় কতোটুকু সফল এটা সবাই জানেন।

জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ সালের বাৎসারিক গবেষণাপত্রে দেখা যাচ্ছে,২০২০ সালেই প্রায় ৭৫ ভাগ মানুষের দেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার সুযোগ সংকীর্ণ হয়েছে, রাষ্ট্র জরুরি অবস্থার সুযোগ নিয়ে কর্তৃত্ববাদের দিকে ঝুঁকেছে। ২০২১ সালে ৭৫ ভাগ নয় ৮২ ভাগ মানুষের দেশেই দেখা যাচ্ছে গণতন্ত্রের নামে প্রহসন চলছে। খোদ যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে এগিয়ে।

মজার ঘটনা ঘটেছে ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর। এদিন জর্ডানের পার্লামেন্টে অধিবেশন চলাকালে আইনপ্রণেতাদের (এমপি) মধ্যে মারামারি হয়েছে। আমাদের দেশেও সামনের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ছোট ছোট দলের নেতারা সংলাপে গেলেও ২৯ ডিসেম্বর আবার বড় দল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সংলাপে যাবেন না তারা। এ সংলাপ প্রহসনের।

দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে একসময় একচেটিয়া মোড়লগিরি করত যুক্তরাষ্ট্রের অনুগত রাষ্ট্র ভারত। কিন্তু কয়েকবছর থেকে ভারতের প্রভাব কমেছে এবং ২০২১ সালে ভারতের প্রতি কুটনৈতিকভাবে বেশিমাত্রায় ঝুঁকে পড়া থেকে সরে এসেছে বাংলাদেশ।চীন ও আগ্রহ দেখাচ্ছে। বাংলাদেশও চীনের প্রতি ঝুঁকছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা নতুন মেরুকরণ ঘটবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোট বেঁধে আঞ্চলিক ভূরাজনীতির নতুন মেরুকরণ মোকাবেলায় বেশ জোর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে নয়াদিল্লি।

এদিকে ২০২১ সালে চীনে পুঁজি পুঞ্জীভবন ঘটছে দ্রুতগতিতে এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার কারণে ব্যক্তি পুঁজিপতির পাশাপাশি রাষ্ট্রের হাতেও বিপুল বিনিয়োগযোগ্য পুঁজির সমাবেশ ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্র এখন চীনকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছে, ভারত নিজের ও মার্কিন তাগিদে চীনের তত্পরতা বিষয়ে সতর্ক। সিল্ক রোডের বাস্তবায়ন তাই সামনে মসৃণ হবে না। কারণ চীনের মদদপুষ্ট নেপাল, শ্রীলংকা ও আগে থেকে পাকিস্তান সবকটি দেশই ২০২১ সালে ভারতের সঙ্গে বিভন্ন বিরোধে জড়িয়েছে। মিয়ানমার চীনের অনুগত আগে থেকে।

২০২১ সালে বাংলাদেশকে বেশি করে কাছে টানতে পেরেছে চীন এবং এগুলো সবই চীনা বিনিয়োগের কারণে। ফলে ভারত একা হয়ে পড়ছে।

নতুন বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে চীনের বেইজিংয়ে হবে শীতকালীন অলিম্পিক। তবে উইঘুর মুসলিমদের উপর নির্যাতন ও মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগে এ অলিম্পিকে নিজেদের কোন কুটনীতিককে না পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্ক অলিম্পিককে ঘিরে নতুন বছরের শুরুতেই আরেক ধাপের অবনতি দেখা যেতে পারে।এমন খারাপ সম্পর্ক অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রয়েছে রাশিয়ার।

নতুন বছরের শুরুতেই জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া ইউরোপীয় নিরাপত্তা এবং ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে বহু প্রত্যাশিত আলোচনায় বসবে। রাশিয়ার পূর্ব সীমান্তে ন্যাটোর সম্প্রসারণ বন্ধের দাবিসহ মস্কো নিরাপত্তা নিশ্চয়তার দাবি জানানোর পর আলোচনার বিষয়টি উঠে এল।

মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের একজন মুখপাত্র গত ২৮ ডিসেম্বর রাতে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে ১০ জানুয়ারি আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভও তারিখটি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জেনেভায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

গত জুন মাসে এখানেই প্রথম সম্মেলন করেন পুতিন ও বাইডেন।

রাশিয়া বলছে, পশ্চিমা দেশগুলো এবং ন্যাটো রাশিয়ার সীমান্তের কাছাকাছি বিপজ্জনকভাবে অগ্রসর হচ্ছে। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে মস্কো পশ্চিমাদের কাছে ব্যাপক নিরাপত্তার দাবি তুলে ধরে। মস্কোর দাবি, ন্যাটো অবশ্যই সোভিয়েত অঞ্চলের নতুন সদস্যদের স্বীকার করতে পারবে না এবং সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র নতুন ঘাঁটি গাড়বে না। এদিকে ইউক্রেন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাশিয়ার ওপর চাপ কমছেই না। ২৯ ডিসেম্বরও চাপ দিয়েছে , বলেছে, ইউক্রেনের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ যেন না করে রাশিয়া।

এসব কারণে রাশিয়াও চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী একটি জোট তৈরি করতে। গত সেপ্টেম্বরে পলিটিকোকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে পুতিন বলেছিলেন, ভারত ও চীনের মধ্যে শান্তি স্থাপনের চেষ্টা করছি। সক্ষম হলে আমরা তিনশক্তি মিলে যুক্তরাষ্ট্রের সব দেশের ব্যাপারে একচেটিয়া খবরদারি রুখে দিতে পারব।

অতীতে ভ্লাদিমির পুতিন ভারত ও চীনের মধ্যে শান্তি স্থাপনে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করছেন। দুই দেশের সীমান্তে যে বেদনাদায়ক ও দীর্ঘস্থায়ী অচলাবস্থা, তার অবসানে তিনি নরেন্দ্র মোদি ও সি চিন পিংকে মুখোমুখি আলোচনায় বসার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের একজন সহকারীর বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদ সংস্থা তাস এক প্রতিবেদনে জানায়, ১৫ ডিসেম্বর চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের ভিডিও কলে কথা হয়েছে। পুতিন ৬ ডিসেম্বর তাঁর দিল্লি সফরের বিষয়ে সি চিনকে জানিয়েছেন। দুই নেতা খুব কাছাকাছি সময়ের মধ্যে আরআইসি (রাশিয়া-ভারত-চীন) রূপরেখা অনুসারে সম্মেলন করতে সম্মত হয়েছেন।

চীন ও ভারত বন্ধুত্ব দুই দেশই রাশিয়ার নিরাপত্তা সরঞ্জামের প্রধান ক্রেতা। তবে ভারত যুক্তরাষ্ট্র লাইন ছাড়বে না বলেই মনে করছেন ৭৩ ভাগ বিশেষজ্ঞ। এ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে কাউন্টার পাঞ্চ ২৮ ডিসেম্বর।যদিও সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী প্রিমাকভ প্রথম রাশিয়া-চীন-ভারত ত্রিপক্ষীয় কৌশলগত রূপরেখার প্রস্তাব করেন। তাঁর আশা ছিল তিন দেশের মধ্যে একটা টেকসই জোট হবে। কিন্তু আরআইসি গতি পায়নি।

এ ডিসেম্বরে রাশিয়ার সবচেয়ে পুরোনো মানবাধিকার সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল মেমোরিয়াল’ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। ফলে ভারতের মানবাধিকার সংগঠনগুলোও সোচ্চার হয়েছে এ ঘটনায়।

এসব মেরুকরণের কোনটা আদৌ ঘটবে বা ঘটবে না এসবের ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের আগামী দিনের রাজনীতি। নিচে কয়েকটি দেশের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতির কিছু সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা হলো:

যুক্তরাষ্ট্র

২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি ক্ষমতায় বসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এসময় তার প্রশাসন যেসব কিছু প্রতিশ্রুতি দেয়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের অবসান, বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে পুনরায় সম্পর্ক স্থাপন, মার্কিন নেতৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা, চীনের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিরোধ, রাশিয়ার সঙ্গে স্থিতিশীল সম্পর্ক স্থাপন, ইরান পারমাণবিক চুক্তি পুনরুদ্ধার।

কিন্তু বছরশেষে এরমধ্যে অনেকগুলোই অমীমাংসিত থেকে গেছে। ২০১৭ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ও ২০২০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এদুটো অবস্থানকে ঠিক করেন বাইডেন প্রশাসন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফেরার মধ্য দিয়ে নতুন পদক্ষেপ শুরু করেন তিনি। রাশিয়াও চীনের সঙ্গে অবস্থা আগেরই মতোন নয় বরং অবনতি হয়েছে বছরের শেষে। এ বছরটি যুক্তরাষ্ট্র শেষ করেছে ‘গণতন্ত্র সম্মেলন’ দিয়ে।

কিন্তু এটিও সব দেশের অংশগ্রহণে সফল হয়নি। বাইডেনের জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করেছে বলে একটি জরিপ সমীক্ষায় জানিয়েছে হাফিংটনপোস্ট। বাইডেন শারীরিকভাবেও অসুস্থ হয়ে এবছর তিনবার চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন। ফলে বাইডেন না বারাক ওবামার মতো ক্যারিশম্যাটিক না ট্রাম্পের মতো পাগলাটে। তিনি বিশ্ব রাজনীতিকে ভালো’র দিকে আগামীতে নিতে পারবেন না বলে মন্তব্য নোয়ম চমস্কির।

বাংলাদেশ

চলতিবছরের ১৬ ডিসেম্বর বিবিসি ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর: বাংলাদেশের ইতিহাসে মোড় ঘোরানো ১৪টি ঘটনা যেভাবে ঘটেছিল’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে যে ১৪টি ঘটনাকে উল্লেখ করেছে সেগুলো হচ্ছে-

১.বাকশাল গঠন,২.শেখ মুজিব হত্যা,৩. নভেম্বর ১৯৭৫: অভ্যুত্থান, পাল্টা অভ্যুত্থান ও জেল হত্যা ৪. জিয়ার ক্ষমতা গ্রহণ ও হত্যাকাণ্ড ৫. এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণ ও পতন ৬.উনিশ'শ একানব্বই সালের নির্বাচন ৭. খালেদা জিয়ার প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ৮. সংসদীয় ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া ৯. ১৫ই ফেব্রুয়ারি নির্বাচন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১০. একুশ বছর পর ক্ষমতায়আওয়ামী লীগ ১১. এক এগারো ২০০৭, ১২. দু'হাজার আট সালের নির্বাচন ও যুদ্ধাপরাধীর বিচার ১৩. তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল ১৪. দু'হাজার চৌদ্দ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন।

এ প্রতিবেদরে পয়েন্টগুলো উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর খুব মসৃণ পথে এগুতে পারেনি। কারণ দীর্ঘ সমারিক শাসনের পর সংসদীয় ব্যবস্থায় ফিরলেও দোষারুপ ও প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে বেরুতে পারেনি রাজনৈতিক সংস্কৃতি। বর্তমানে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া অসুস্থ ও তার বিদেশ যাত্রা নিয়ে আইনে কি বলে কি বলে না এ নিয়ে বছর শেষ হতে যাচ্ছে। তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মেট্রোরেলের, পদ্মা সেতুর কাজের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে ২০২১ সালে।

আলোচিত হচ্ছে বেশি ডিজিটাল আইন। গত ২৮ ডিসেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের পর প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে কটূক্তির অভিযোগেই ৪০ শতাংশ মামলা হয়েছে বলে দাবি করেছে আর্টিকেল নাইনটিন।

২০২১ সালের শেষ দিকে এসে রাজনীতিতে আবার উত্তাপের পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে।বিএনপি সংলাপে যাচ্ছে না।তারেক তনয়া জাইমাকে নিয়ে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রীর অশালীন মন্তব্য ও পদত্যাগ, এর আগে গাজীপুরের মেয়রকে দল থেকে বহিস্কার করা সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে আওয়ামীলীগের ভেতরে আওয়ামীবিরোধী একটি চক্র সক্রিয় বছরের দ্বিতীয় ভাগে এসে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি রাজনীতি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে পড়ে। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বছরের শেষ দিকে বিএনপি বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি দিচ্ছে।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পুরো বছর জুড়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখা গেছে। বছরশেষের দিকে ইউপি ইলেকশনে বেশ কিছু জায়গায় সরকারি দলটির ভরাডুবি হয়েছে।

২০২১ সালে জামায়াতে ইসলামের জায়গায় ইসলামপন্থী দলগুলোর মধ্যে সবচে আলোচনায় ছিল হেফাজত।হেফাজতের আমীর আহমদ শফীর মৃত্যুর পর জুনায়েদ বাবুনগরী দায়িত্ব নিয়েছিলেন এবং তখনই তিনি হেফাজতকে একটি জঙ্গি রূপে প্রকাশ করেছিলেন। যদিও জুনায়েদ বাবুনগরী মৃত্যুর পর একে একে মৃত্যু হেফাজতকে কোণঠাসা করে ফেলেছে। কিন্তু সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর যে শক্তি সেই শক্তির প্রকাশ ঘটেছে হেফাজতের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশে মোদীর সফরকে ঘিরে হেফাজতের তান্ডব রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে চট্টগ্রাম, ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজত যেভাবে তাণ্ডব চালিয়েছে এটি উদ্বেগের।

অনেকে মনে করেন, জামায়াতের শীর্ষ নেতাদেরকে যুদ্ধাপরাধের কারণে দণ্ডিত করা হলেও সংগঠনটি এখনো টিকে আছে এবং তৃণমূল পর্যায়ে আবার শক্তিশালী হচ্ছে। দূর্গপূজার আগে ও সেসময় মন্দিরে মন্ডপে হামলা –ভাঙচুরের ঘটনা সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। অন্যদিকে সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টি যেমন অকেজো তেমনই বিএনপির অবস্থাও কার্যত রাজপথে সক্রিয় নয়। খালেদা জিয়া সুস্থ, তারেক রহমান বিদেশে, এরকম সময় সামনের নির্বাচনে বিএনপি কিরুপে হাজির হবে সেটিও দেখার বিষয়। অন্য অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগঠনগুলো সংগঠিত হতে পারেনি। এরকম বাস্তবতায় ২০২২ সালের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন হবে সেটি এখনও স্পষ্টত নয়।

মিয়ানমার

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দ্বিতীয় বৃহত্তম সেনাবাহিনী মিয়ানমারের। সবচেয়ে বেশি সময় ধরে সামরিক বাহিনীর শাসন চলেছে দেশটিতে। সর্বশেষ ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে আবারও ক্ষমতা নেয় তাতমাদো নামে পরিচিত সেনাবাহিনী। সর্বশেষ সংবিধান অনুযায়ী, দেশটির সেনাপ্রধান নিজেই নিজের বস। তিনি কারও কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নন।

অস্ট্রেলিয়ার লোয়ি ইনস্টিটিউটের পূর্ব এশিয়াবিষয়ক গবেষক অ্যারন কনেলি ২০২১ সালের ১৮ ডিসম্বর সিএনএনকে বলেন,মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে যদি দেশের নিয়ন্ত্রণ ও আন্তর্জাতিক সম্মান-দুটির একটি বেছে নিতে বলা হয়, তবে তারা দেশ নিয়ন্ত্রণই বেছে নেবে।
মিয়ানমারের সামরিক শাসন গবেষক জার্মানির গিগা ইনস্টিটিউটের ম্যাক্রো বুন্তা লিখেছেন, স্বাধীনতার ছয় বছর আগেই বার্মিজ সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয় এবং দেশটির স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বেও ছিল সেনাবাহিনী। ফলে অফিসার ও সৈনিকদের মধ্যে রাজনৈতিক মনোভাব শুরু থেকেই ছিল।

মিয়ানমারের সঙ্গে জাপান এবং ভারতের সম্পর্ক বরাবরই ভালো ছিল। সামরিক শাসনও তাতে বাধা হতে পারেনি। তবে চীনের সঙ্গে সম্পর্কে কিছুটা শিথিলতা থাকলেও ১৯৮৮ সাল থেকে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়। চীন মিয়ানমারের সামরিক সরকারকে স্বীকৃতি দেয় ১৯৮৮ সালে।এরপর থেকে চীনের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্ক ভালো। মিয়ানমার রোহিঙ্গা ইস্যুতে সবেচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছে এ বছর। রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রেও মিয়ানমার আন্তরিক নয়। জাতিসংঘও কিছুটা উদাসীন। এর কারণে বাংলাদেশ ও একরকম চাপে রয়েছে।

ভারত

২০২১ সালের গত আগস্টে আমেরিকার দ্য আটলান্টিক পত্রিকায় একটি লেখা লেখেন আতিস তাসির। তাঁর মা ভারতের সাংবাদিক, বাবা পাকিস্তানের প্রয়াত শিল্পমন্ত্রী ও পাঞ্জাব প্রদেশের গভর্নর সালমান তাসির। সাংবাদিক আতিস তাসির দীর্ঘ সময় মুম্বাইয়ে কাটিয়েছেন, কাছ থেকে দেখেছেন বলিউডকে। যে জগৎকে সমৃদ্ধ করেছে বিভিন্ন ভাষা, ধর্ম ও জাতের শিল্পীরা। তাঁর লেখা, দ্য ওয়ার অন বলিউড-এ (বলিউডের বিরুদ্ধে যুদ্ধ) তাসির লিখেছেন, ভারতের যে একটা জাতীয় পুরাকথা (মিথ) আছে, নাচে-গানে ভরা বলিউড তাকেই ধারণ করে। তিনি লিখেছেন, ‘কিন্তু বলিউডের কৃতিত্ব অন্যত্র। সামাজিক ন্যায়, নারী থেকে সমকামীদের অধিকার, অন্য ধর্মে বিবাহের মতো সিরিয়াস বিষয়কেও বলিউড বিনোদনের সঙ্গে মেশাতে পারে, তাই বলিউডের ছবি বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক দুই-ই। ভারতের বহুত্ববাদকে ধারণ করে বলিউড। আজকের রাজনৈতিক আবহাওয়ায় সেই কারণেই টার্গেট করা হচ্ছে বলিউডকে। একসময় হলিউডে যেমন শিল্পীদের একটা কালোতালিকা বানানো হয়েছিল, তেমনি হচ্ছে বলিউডে।’

বলিউডের অনেক মুভিতেও কিছু ডায়লগ জনপ্রিয় হয়ে উঠে , তেমনই ভারতের রাজনীতিতে ‘বজরংবলী’ এখন পপুলার। আর ভিলেনের মতো অশ্লীল মন্তব্য তো যেন রাজনীতিতেও স্বাভাবিক ঘটনা বলে মনে করেন সাংবাদিক ও লেখক আতিস তাসির। তিনি উল্লেখ করেছেন, ১৯৯৯ সালের একটি ঘটনা। সেই সময়ের বিজেপি নেতা এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী প্রমোদ মহাজন বলেছিলেন,সোনিয়া গান্ধী যদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন, তাহলে মনিকা লিউইনস্কিই বা পারবেন না কেন?

মোনিকা লিওনেস্কি মানে অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকার সময় বিল ক্লিন্টন যার সঙ্গে যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছিলেন। প্রমোদ যখন এই কথা বলছেন, তার এক বছর আগে সোনিয়া ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভানেত্রী নির্বাচিত হয়েছেন।

সম্প্রতি ডয়েচে ভেলে ভারতের রাজনীতিতে শিষ্টাচার কেমন এ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর বিতর্কের জবাব দিতে গিয়ে বলেছিলেন, মনমোহন সিং ৩৫ বছর ধরে ভারতের আর্থিক সিদ্ধান্ত নেয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এই সময়ে এত কেলেঙ্কারি হয়েছে। কিন্তু তার গায়ে কোনো দাগ লাগেনি। একমাত্র তিনিই জানেন, বাথরুমে রেনকোট পরে কীভাবে স্নান করতে হয়।

রাহুল গান্ধীকেবিজেপি 'পাপ্পু' বলে পুরো ২০২১ সাল ট্রল করেছে। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলেছে, ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’।
অবশ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক গুরু সদ্যপ্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ই প্রথম মমতার উদ্দেশ্যে এ কথা বলেছিলেন।পরে বিজেপি বলতে শুরু করেছে।

ভারতে কৃষক আন্দোলন নিয়ে বেকায়দায় ছিল মোদী সরকার। বাংলাদেশ বেশি চীনের দিকে ভীড়ে যাচ্ছে কি না এ নিয়েও চিন্তিত ভারত।

চীন

চলতি বছরের ১১ ডিসেম্বর বিএনপি এক বিবৃতিতে বলেছে , চীনা রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য দেশের মানুষকে ক্ষুদ্ধ ও আহত করেছে। এর আগে বাংলাদেশে নিযুক্ত গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং তার ফেসবুক পেজে এক ভিডিও বার্তায় বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আয়োজিত গণতন্ত্র শীর্ষ সম্মেলন একটা প্রহসন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অর্ধেক জনগোষ্ঠী সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশের তালিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। গণতন্ত্রকে সংজ্ঞায়িত করার যোগ্যতা যুক্তরাষ্ট্র রাখে কি না।

লি জিমিং আরও বলেন, বাংলাদেশ আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে। যে দেশে একটি সরকারের যখন ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে, তখন তা যদি গণতন্ত্র হিসেবে স্বীকৃত না হয়, তাহলে হয়তো গণতন্ত্রের সংজ্ঞাটি পুনর্মূল্যায়ন করার অথবা এই সংজ্ঞার পেছনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলার সময় এসেছে।

এরপরই বিএনপি এ বিবৃতি দেয়। বিএনপি নিয়ে একটা কথা চালু রয়েছে যে দলটি ভারত বিরোধী ও চীনের মদদপুষ্ট। কিন্তু এখন যতো সময় যাচ্ছে বিএনপি চীনের বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে ও ভারতের সঙ্গেও নাকি যোগাযোগ রক্ষা করছে।

তো, বিএনপির বিবৃতির অংশবিশেষ হুবহু এমন:

‘মহান মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের প্রাণ আর ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের মাতৃভূমির স্বাধীনতার মূল চেতনা হলো গণতন্ত্র, সাম্য, মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচার। জনগণের ম্যান্ডেটবিহীন ক্ষমতাসীন গণবিরোধী এই অবৈধ সরকার গোটা দেশবাসীকে এই সকল অধিকারসমূহ থেকে লাগাতারভাবে যখন বঞ্চিত করে চলছে, বাংলাদেশের জনগণ যখন তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারে সোচ্চার, বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক মহল ও মানবাধিকার সংগঠন যখন লাগাতারভাবে এই সরকারকে হুঁশিয়ারি বার্তা দিয়ে চলছে, ঠিক তখনই গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের পক্ষে দেওয়া এই বাস্তবতা বিবর্জিত বক্তব্য দেশের মানুষকে গভীরভাবে ক্ষুব্ধ ও আহত করেছে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, 'বহু ত্যাগের বিনিময়ে আমরা জনগণের সার্বভৌমত্ব, বহুদলীয় গণতন্ত্র, প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বমূলক সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা, জবাবদিহিতা ও বাক-স্বাধীনতার মতো মৌলিক নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচনে প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে জনগণ চর্চা করেছিল তাদের ভোটাধিকার। কিন্তু, ক্ষমতাসীন এই অবৈধ সরকার তা ধ্বংস করে চলছে প্রতিনিয়ত।

বর্তমানে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ধ্বংসপ্রাপ্ত। অর্জিত সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা ও জবাবদিহিতা আদায়ের সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সমূহকে স্থায়ী প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের পথে বর্তমান ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীই আজ সবচেয়ে বড় বাধা। সরকারের কর্তৃত্ববাদী এই আচরণের কারণে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি আজ একটি গণধিকৃত ফ্যাসিষ্ট রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।'

   

চাকরি ছেড়ে বসের সামনেই ঢোল বাজিয়ে নাচলেন যুবক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নিত্যদিনের অফিসের কর্মপরিবেশে অনেকের মধ্যেই 'বিরক্তি' চলে আসে। তবুও ধৈয্য নিয়ে সব সহ্য করে টিকে থাকার জন্য চালিয়ে যান লড়াই। তবে এ যাত্রায় সকলের দ্বারা টিকে থাকা সম্ভব হয় না। অফিসের 'বিষাক্ত' কর্মপরিবেশে অনেকেই ভোগেন মানসিক সমস্যায় কিংবা ব্যক্তিজীবনে। এমন পরিবেশ থেকে বাঁচতে একেক জন একেক পন্থা অবলম্বন করে থাকেন।

তবে অনিকেত নামের এক যুবক এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে যা করেছেন নেট দুনিয়ায় তা রীতিমতো ভাইরাল। এসব থেকে মুক্তি পেতে চাকরিটাই ছেড়ে দিয়েছেন এই যুবক। এতেই ক্ষান্ত হননি তিনি, বসের সামনেই ঢাকঢোল বাজিয়ে নেচে উদযাপন করেছেন এমন মুহূর্তের।

ঘটনাটি ভারতের পুনে রাজ্যের। অনিকেত নামের ওই যুবক বিক্রয় সহযোগী হিসেবে চাকরি করতেন।

তার এমন উদযাপনের একটি ভিডিও ইন্সটাগ্রাম শেয়ার করেছেন অনীশ ভগত।

ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, গত তিন বছর ধরে এই কোম্পানির সাথে কাজ করেও বেতন খুব একটা বাড়েনি। এছাড়াও অফিসের বসের দ্বারাও তাকে বিভিন্ন সময়ে অপমানিত হতে হয়েছে।

তাই তার কাজের শেষ দিনে বন্ধুরা অফিসের বাইরে ঢোল নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন এবং নেচেছিলেন। ভিডিওতে দেখা গেছে, এ ঘটনায় তার বস অনেক উত্তেজিত হয়েছেন। পাশাপাশি তার বস লোকজনকে ধাক্কা দিয়েছেন এবং চিৎকারও করেছেন।

ভিডিওটির ক্যাপশনে ভগত লিখেছেন, আমি মনে করি আপনারা অনেকেই এর সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারবেন। আজকাল বিষাক্ত কাজের সংস্কৃতি খুব বেশি দেখা যায়। সম্মান এবং অধিকারের অভাব খুবই সাধারণ। অনিকেত তার পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। আমি আশা করি এই গল্প মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।

পোস্ট করা ভিডিওটি এক মিলিয়নেরও (১০ লাখের বেশি) বেশি ভিউ পেয়েছে। পোস্টটিতে অসংখ্য লাইক ও কমেন্টও রয়েছে।

একজন ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি জানি না কেন এটি আমাকে এত সন্তুষ্ট করেছে।'

আরেকজন লিখেছেন, 'নাচটি আমাকে অন্য মাত্রার তৃপ্তি দিয়েছে।'

'আপনি সত্যিই আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে ইতিবাচক এবং উত্সাহী ব্যক্তি'- তৃতীয় একজন ঠিক এভাবেই নিজের অনুভূতি জানিয়েছেন।

তথ্যসূত্র: হিন্দুস্থান টাইমস 

;

অভয়ারণ্যে মানুষ যখন বন্দিখাঁচায়



প্রমা কোয়েল, ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চিড়িয়াখানা, নানানরকম পশুপাখি ও প্রাণীর বন্দিশালা। কেবল রং-বেরঙের চিড়িয়াই নয়; বাঘ, সিংহ, ভালুক, বানর, গণ্ডারসহ কত বন্যপ্রাণীই না খাঁচায় বন্দি থাকে!

চিড়িয়াখানায় রাখতে বন্য প্রাণীদের প্রকৃতির স্বাধীন জীবন থেকে ছিনিয়ে আনা হয়। তাদের খাঁচায় বন্দি করা হয় যেন, মানুষ তাদের দেখে আনন্দ পায়। অনেক প্রাণীর জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি খাঁচাতেই কেটে যায়।

ছোট থেকে বড় সব বয়সের মানুষই চিড়িয়াখানায় ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন। শিশুরা না হয় অবুঝ! তবে যারা প্রাপ্তবয়স্ক তারাও চিড়িয়াখানায় এই বন্দি প্রাণীদের জীবনকে গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারেন না।

এশিয়ার বড় দেশ চীনে রয়েছে, এক অদ্ভুত চিড়িয়াখানা। চংকিংয়ে অবস্থিত সেই চিড়িয়াখানার নাম ‘লেহে লেদু বন্যপ্রাণী চিড়িয়াখানা’। একে ‘রিভার্স জু’ (বিপরীত চিড়িয়াখানা) বলেও ডাকা হয়।

এখানেও মানুষ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে পশু দেখতে আসেন। তবে একেবারেই ভিন্ন উপায়ে। মূলত, একটি খাঁচা রয়েছে, যেখানে মানুষদের সেই খাঁচায় পুরা হয়। তারপর সেই খাঁচাবন্দি মানুষদের নিয়ে রাখা হয়, অভয়ারণ্যে। সেখানে বন্য প্রাণীরা মানুষের খাঁচার চারপাশে অবাধে ঘুরতে থাকে। চিড়িয়াখানায় বন্দি প্রাণীদের বন্দিজীবনের এক প্রতীকী দৃশ্য!

অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষদের জন্য এটি এক নতুন অভিজ্ঞতা!

অভয়ারণ্যে খাঁচায় বন্দি মানুষ, ছবি-সংগৃহীত

খুব কাছে থেকে হিংস্র বন্যপ্রাণীদের মুক্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যেমন লোমহর্ষক, ঠিক তেমনই আতঙ্কজনকও হতে পারে। বিপরীতধর্মী এই চিড়িয়াখানাটি সবার জন্য প্রথম উন্মুক্ত করা হয়, ২০১৫ সালে। তখন বিশ্বের সংবদমাধ্যমের শিরোনাম কেড়েছিল এ চিড়িয়াখানাটি।

একটি শক্ত লোহার খাঁচাবেষ্টিত দর্শনার্থীদের একটি ট্রাকে তুলে অভয়ারণ্যে রেখে দেওয়া হয়। সেখানে তাদের ঘিরে ধরে ঘুরতে থাকে বাঘ, ভালুক, সিংহ ইত্যাদি হিংস্র প্রাণী।

এ বিষয়ে চিড়িয়াখানার প্রধান চ্যান লিয়াং বলেন, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা রক্ষার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। খাঁচার ফাঁকা অংশ দিয়ে হাতের আঙুলও বের না করার নির্দেশনা দেওয়া থাকে।

তবে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই চিড়িয়াখানাটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে অনেক। এর নৈতিকতা নিয়ে অনেকে প্রশ্নও তুলেছেন।

অনেকে মনে করেন, এরকম ব্যবস্থাপনায় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। কারণ, শিকারী প্রাণীগুলো প্রচণ্ড হিংস্র। তাই, সে কারণে যে কোনো সময় বিপজ্জনক ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

আবার এরকম চিন্তাভাবনার প্রশংসাও করেছেন অপর একটি পক্ষ। তাদের বক্তব্য, পৃথিবীটা কেবল মানুষদের নয়। প্রকৃতিতে সব প্রাণীদের একটা ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন। তাদের বন্দি করে রাখা মানুষের উচিত নয়। কারণ, মুক্ত প্রকৃতিতে বিরাজ করার অধিকার সব প্রাণীরই রয়েছে।

তাদের মন্তব্য, আমরা প্রাণীদের আবাসস্থল বনজঙ্গল সব উজাড় করেছি। সে কারণে তাপমাত্রাও অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। আবার প্রাণীদের বন্দি রেখে তাদের জীবন চরম দুর্বিষহ করে তুলি।

চাইলে এবং সুযোগ পেলে এই ধরনের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিতে চিড়িয়াখানাটি ঘুরে আসতে পারেন বৈকি!

তথ্যসূত্র: এনিমেল অ্যারাউন্ড দ্য গ্লোব

;

৫ বছরের শিশুর বিস্ময়কর প্রতিভা!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বয়স সবে ৫ কিংবা ৬। এই বয়সেই তার প্রতিভা দেখে অবাক হবে যে-কেউ!

গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সের (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভিডিওটি ১ মিলিয়নের (১০ লাখের বেশি) বেশি মানুষ দেখেছেন। খবর এনডিটিভি। 

ভিডিওতে রিলি নামের ওই শিশুটিকে প্রথমে শ্বাস নিতে দেখা যায়। তারপর সে একটি শক্তিশালী গর্জন দিয়ে শ্বাস ছাড়ে। ওই গর্জনটি হুবুহ সিংহের গর্জনের অনুরূপ।

রিলির মা অ্যামি ভিডিওটি এক্সে শেয়ারের পরই তা ভাইরাল হয়ে যায়। শিশুটির এমন নিখুত দক্ষতা দেখে মুগ্ধ দর্শকরা। ভিডিওটিতে অনেকেই নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, এত অল্প বয়সে এমন বাস্তবসম্মত গর্জন তৈরি করার রিলির ক্ষমতার বিস্ময় প্রকাশ করে।

আরেকজন লিখেছেন, শিশুরা খুব দ্রুত শিখে। তার এমন প্রতিভা সত্যিই অবাক করার মতো।

;

বান্টি গ্রাম: উড়ছে রং-বেরঙের কাপড়



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বান্টি গ্রামের মাঠে শুকাতে দিচ্ছেন বাটিকের রং করা কাপড়/ছবি: নূর এ আলম

বান্টি গ্রামের মাঠে শুকাতে দিচ্ছেন বাটিকের রং করা কাপড়/ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশেই বান্টি গ্রাম। বাটিকের গ্রাম বলেই এর পরিচিতি। এখানে ঘরে ঘরে বাটিক-ব্লকের কাজ চলে। গ্রামজুড়ে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৫০০ কারখানা। এই গ্রামে দিনরাত কাজ করেন হাজারো শ্রমিক। এই কাজে তাদের সংসার চলে। বান্টি গ্রামের কর্মময় জীবন চিত্র তুলে এনেছেন বার্তা২৪.কম এর ফটো এডিটর নূর এ আলম। 

বান্টি গ্রামে থ্রিপিস, ওড়না, সালোয়ার, কামিজ, বিছানার চাদর ও বালিশের কাভারে বাটিকের কাজ করা হয়/ছবি: নূর এ আলম


 

দূরদূরান্ত থেকে পাইকাররা এসব কিনতে আসেন। তাদের হাত ধরেই এসব কাপড় চলে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে


কাপড় রং করার আগে প্রতিটি কারখানায় গরম পানিতে রং প্রস্তুত করা হয়/ছবি: নূর এ আলম

 

কাপড়ের রং পাকা করতে সেদ্ধ করা হচ্ছে।/ছবি: নূর এ আলম


কয়েক ধাপে চলে কাপড়ে বাটিকের করার কাজ/ছবি: নূর এ আলম


রং মেশানোর প্রক্রিয়াটা ঠিক আছে কিনা হাত দিয়ে দেখছেন একজন/ছবি: নূর এ আলম


গ্রামে কাপড়ে রঙ মেশানোর কাজ ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলে/ছবি: নূর এ আলম


বাটিকের গ্রামের অনেক বাড়িতে বসানো হয়েছে লুম মেশিন। এই মেশিন দিয়ে নানান ধরনের নকশা করা হয়/ছবি: নূর এ আলম


লুম মেশিনে চলছে কাপড় বুননের কাপড়/ছবি: নূর এ আলম


কাপড়ে রঙ করা শেষে শুকাতে দেওয়ার আগে পানি ঝরিয়ে ফেলা হয়/ছবি: নূর এ আলম


রং করা কাপড় শুকাতে দিচ্ছেন এক নারী শ্রমিক/ছবি: নূর এ আলম


বান্টি গ্রামের নারী পুরুষ সবাই ব্লক বাটিক ও প্রিন্টের সঙ্গে জড়িত/ছবি: নূর এ আলম

রং করা কাপড় ছাদে ও মাঠে শুকাতে দেওয়া হয়/ছবি: নূর এ আলম


কড়া রোদে শুকানোর পর তা কারখানায় নিয়ে আসেন শ্রমিকরা।/ছবি: নূর এ আলম


প্রচন্ড তাপদাহে বাটিকের চাহিদা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। /ছবি: নূর এ আলম


;