জল ডুবুডুবু নীল দেশ মালদ্বীপ!



মানসুরা চামেলী, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
জল ডুবুডুবু নীল দেশ মালদ্বীপ!

জল ডুবুডুবু নীল দেশ মালদ্বীপ!

  • Font increase
  • Font Decrease

স্যান্ড ব্যাংক আইল্যান্ড, মালদ্বীপ ঘুরে: হয়ত ভ্রমণ উত্তেজনায় মালদ্বীপের দ্বিতীয় দিনে ঘুমটা সকাল সকালেই ভেঙে গেল। রাতটা কাটে কখনও গভীর ঘুমে কখনও আধো ঘুমে! জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকাতেই সকাল ছয়টাতেও কড়া রোদের ঝাপটা লাগল চোখে। পথঘাট দেখে বোঝা গেল শেষ রাতে বৃষ্টিতে ভিজেছে মালদ্বীপ। তাই হুলুমালে দ্বীপ আরও চকচক করছে। 

ঝটপট রেডি হয়ে নাস্তা সেরে নিলাম! সকাল ৮টায় কোন এক আইল্যান্ডে যাওয়ার প্ল্যান। তখনও আইল্যান্ডের নাম জানতে পারিনি। সাংবাদিকদের বিশাল গ্রুপ নিয়ে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স এই ট্যুরের আয়োজন করেছে। গ্রুপটা বড় হওয়ায় সময় মেইনটেন্ট করতে কিছুটা এদিক-ওদিকে হয়ে যায়। তাই, এই ফাঁকে হুলু মালের হোয়াইট বিচে একটু চক্কর মারলাম।   

হুলু মালের হোয়াইট বিচ

হোয়াইট বিচের সাগরের পানি অতটা নীল না হলেও এর নৈসর্গিক দৃশ্য অতুলনীয়! সৈকতের চকচকে সাদা বালু, সাগরের তীরে নারিকেল গাছসহ পরিকল্পনা করে লাগানো গাছের সারি সবাইকে মুগ্ধ করবে।

স্থানীয় সময় সাড়ে ৯ টায় ডাক আসে আইল্যান্ডে যাত্রার। সাজানো গোছানো শহর হুলুমালের পথ-ঘাট পেরিয়ে জেটিতে পৌঁছাই। এরপরেই চক্ষু ছানাবড়া। সামনে অথৈ নীল সমুদ্র। তখনই মনে পড়ল গিরীন্দ্রনাথ দত্তের সমুদ্র দর্শন কবিতার ‘অনন্ত আকাশ উচে/ অনন্ত সাগর নীচে/ অনন্তে অনন্তে দেখ করে আলিঙ্গন।’ সেই কবিতার সঙ্গে আমিও নীল জলের লহরীতে নিজেকে সমর্পণ করলাম সারা দিনের জন্য!

হুলুমালে জেটি

জেটিতে সারি সারি স্পিড বোট, ফেরি ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা। পিছনে সমুদ্র রেখে মোবাইলের ক্যামেরায় কয়েকটি ক্লিক করলাম। হুলুমালের এই জেটি থেকে স্পিড বোট, ফেরি ও ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে বিভিন্ন আইল্যান্ড ও রিসোর্টে যান পর্যটকরা। ইঞ্জিনচালিত বোটে করে সাগরের নীল মায়ার গালিছা মাড়িয়ে ছুটলাম স্যান্ড ব্যাংক আইল্যান্ডে! ঢেউয়ের তালে তালে ছুটছে বোট। বোটে উঠেই আমি গন্তব্য স্থলের নাম জানলাম। যদিও পূর্ব প্রস্ততি হিসেবে কাপড়-চোপড়ও সঙ্গে নিয়েছিলাম; যাতে করে অন্তত জলকেলি করা যায়। হুলু মালে থেকে স্যান্ড ব্যাংক আইলান্ডে যেতে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। কিন্তু আমি দেখলাম সময় আরও বেশি লেগেছে।

ড্রিম অ্যাভাঞ্জার্সে কর্মরত বাঙালি যুবক বাবু মিয়া সময়ের বিষয়টা পরিষ্কার করে বললেন, স্পিড বোটের হিসেবে সময় গণনা করা।

মালদ্বীপ প্রবাসী বাবু মিয়া, পিছনের তিনজনের মাঝে মাহাদী

প্রবাসে থাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাবু বেশ হাসি-খুশি ছেলে! পুরো পথ জুড়ে তার প্রাণবন্ত চেহারার দিয়ে পর্যটকদের খুশি করার চেষ্টা করেছেন। পাঁচ -ক্লাস পর্যন্ত পড়া বাবু মালদ্বীপে আসা ভ্রমণ প্রেমীদের ভালো হ্যান্ডেল করা শিখেছেন। প্রয়োজনীয় ইংরেজিও বলতে পারেন। তাকে দেখে মনে পড়ে পাশের বাড়ির সহযোগিতা পরায়ণ ছেলেগুলোর কথা।

নৌকা ছুটছে- আর গাঢ় নীল সমুদ্র তার মুগ্ধতা দিয়ে গ্রাস করছে। জল ডুবুডুবু নীল দেশ মালদ্বীপ মায়ার চাদরে জড়িয়ে নিচ্ছে। কোথাও গাঢ় নীল, কোথাও আবার আকাশের নীল রঙের মতো পানি দূর থেকে আহ্বান জানায়। একটু পর পর আকাশে সি প্লেনের গর্জন, পর্যটকদের নিয়ে সাগর ছুঁই ছুঁই করছে প্লেনগুলো।

নয়নাভিরাম রিসোর্ট, এখানে বিলাসবহুল জীবন যাপন করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ

আবার টইটুম্বুর সাগরে চলার পথে কখনও হাতছানি দেয় বিলাসবহুল জাহাজ বা নয়নাভিরাম সারি সারি রিসোর্ট। যেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত হতে হাজারো পর্যটক আসেন একান্ত সময় কাটাতে। সেই সঙ্গে গুণতে হয় কাড়ি কাড়ি ডলারও। শুনেছি, মালদ্বীপের আসল সৌন্দর্য এই দ্বীপগুলোই। যদিও এবার সেই ভাগ্য হল না- তবে অপেক্ষা থাকবে সুপ্রসন্ন ভাগ্যের উপর।

১২’শর বেশি দ্বীপ নিয়ে ভারত মহাসাগরের বুকে ভেসে উঠেছে মালদ্বীপ। এই দ্বীপপুঞ্জের মোট জিডিপির ৭০ শতাংশ আসে পর্যটন শিল্প থেকে। মালদ্বীপকে ধরা হয় বিশ্বের আদর্শ ট্যুরিস্ট স্পট হিসেবে। ঘন নীল আর শ্যাওলা সবুজ ঢেউ খেলানো ভারত মহাসাগরের বুকে দোল খাওয়া এই অনিন্দ্য সুন্দর ভূখণ্ডের কোন তুলনা নেই। এখানে রয়েছে লোকাল আইল্যান্ড; যেগুলোতে স্থানীয়রা বসবাস করেন। আর প্রাইভেট আইল্যান্ড যা পর্যটকদের জন্য।

পানির রঙ এত গাঢ় নীল যে- মনে হবে কেউ কাপড়ে দেওয়ার নীল রঙ ঢেলে দিয়েছে

মালদ্বীপ এসে যাদের ব্যয় নিয়ে চিন্তা তাদের জন্য বেস্ট অপশন হবে হুলু মালে। মালে এয়ারপোর্ট থেকে চায়না-মালদ্বীপ ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজ পার হলেই হুলুমালে দ্বীপ। এখানে অপেক্ষাকৃত কম দামে বিচের অদূরেই হোটেল পাওয়া যায়। যারা বিলাসবহুল রিসোর্টে রাত কাটাতে চান না; তারা এখানে রাতে থেকে স্পিড বোট ও ফেরিতে করে রিসোর্ট ডে ওয়াইজ ঘুরে আসতে পারেন। এতে খরচটা কম হয়- অর্থাৎ ‘রথ দেখাও হল কলাও বেচা হল’।

আরও পড়ুন: নীলাকাশ থেকে নেমেই নীল জলের অভ্যর্থনা!

নৌকার ইঞ্জিন যিনি নিয়ন্ত্রণ করছেন তার নাম মাহাদী! শ্রীলঙ্কান, গাল ভাঙা খটখটে চেহারা, লম্বা বাবরি চুল, গায়ের রঙ তামাটে। তার চোখে পড়লেই ঈষৎ হাসি দেন- কোন প্রয়োজন কিনা ভাঙা ইংরেজিতে জানতে চান। চটপটে মাহাদীকে বেশ ভালো লাগল। যাত্রা পথে তিনি থেকে থেকে সিংহালি গানের সঙ্গে নাচার চেষ্টা করে পর্যটকদের মাতিয়ে রাখছেন।

স্যান্ড ব্যাংক আইল্যান্ড

ঠিক ভরদুপুরে ভারত মহাসাগরের শান্ত নীল ঢেউ পেরিয়ে স্যান্ড ব্যাংক আইল্যান্ডে পৌঁছাই। স্যান্ড স্নানগ্লাস ছাড়া চোখ মেলা দায়! স্যান্ড ব্যাংক মানে বালির তট। চারপাশের নীল জল- মাঝখানে ধপধপে সাদা বালি। দূর থেকে দেখলে মনে হবে এক খণ্ড গোলাকার সাদা মেঘ! বালিতে পড়ে আছে নানা রঙের কোরাল।

বেশি দেরী না করে বোট থেকে দ্রুত নেমে শুরু হল জলের খেলা। কেউ মেতে উঠেছে স্নোরকেলিং। স্বচ্ছ পরিষ্কার পানির গভীরে সামুদ্রিক প্রাণীকূলের জীবন, কোরাল, মাছেদের চলাফেরা ও সৌন্দর্য দেখার জন্য স্নোরকেলিং বেস্ট। অন্যদিকে অনেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন সার্ফিং, বোটিং-এ। আমি ছবি তোলা ও ভিডিওর কাজটিই করে গেলাম।

যে যার মতো ব্যস্ত সবাই, স্যান্ড ব্যাংক আইল্যান্ডে

এমন প্রকৃতির মাঝে আসলে মনটা কেমন জানি পালাই পালাই করে। অস্থির হয়ে ওঠে নানা অনুভূতি! ভালোলাগার মোড়কে আটকা পড়ে- নানা শূন্য ও অমূল্য স্মৃতি। তাই কোলাহলে গা না ভাসিয়ে বালুকাবেলায় মাথা ও নীল জলে পা রেখে গুণগুনিয়ে গেয়ি উঠি- ‘আমি নিরালায় বসে বেঁধেছি আমার স্মরণ বীণ, একি বেদনার মত বেজেছে আবার হারানো দিন।’

প্রায় তিন ঘণ্টার মতো পানি, বালু ও মাছের সঙ্গে খেলা শেষে লাঞ্চ! বোটেই লাঞ্চের ব্যবস্থা ছিল। টুনা ফিশ দিয়ে ফ্রাইড রাইস, নুডুলস, সালাদ এবং জুস দিয়ে সারতে হল মধ্যাহ্নভোজন। লাঞ্চ পর্ব খুব বেশি সুখকর হলো না।

পিছনে তাকালে ভেসে উঠল আকাশি রঙের জলে ঘেরা স্যান্ডব্যাংক আইল্যান্ড

মধ্যাহ্নভোজনের পরেই ফেরার পালা। আবার ঢেউয়ে ভাসলো বোট। এবার যেন আরও গাঢ় নীল সাগরের জল। পিছনে তাকালে ভেসে উঠল আকাশি রঙের জলে ঘেরা স্যান্ডব্যাংক আইল্যান্ড। কিছুক্ষণের জন্য কোলাহলে ভরে ওঠা আইল্যান্ডটি আবারও পড়ে রইলো পর্যটকের অপেক্ষায় নিঃসঙ্গ হয়ে।

স্নোরকেলিং-এ যেতে প্রস্তুত এক পর্যটক

ফেরার পথে– প্রস্তাব আসল সাগরে ডলফিন শো দেখার! ভ্রমণ অভিজ্ঞ বিটিভির সাংবাদিক সাইফুল্লাহ সুমন ভাই জানালেন, ডলফিন দেখতে হলে ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকতে হবে। অনেক সময় ডলফিনের দেখা যায় না। যাই হোক- ভাগ্য দেবীর উপর ভরসা রেখে ডলফিনের দেখার প্রস্তাবে সবাই রাজি হলাম। বোট এসে থামল সাগরের ডলফিনের কর্নারে। একটু পরেই শুরু হলো হুল্লোড়! একটা পর একটা সাগরের স্তন্যপায়ী জলজন্তুটি লাফ দিচ্ছি। কেউ কেউ মাথা উঁচু করে আবারও ডুবে যাচ্ছে। খুব কাছ থেকে না হলেও দেখা তো পেলাম।  

ফেরার পথে – প্রস্তাব আসল সাগরে ডলফিন শো দেখার

সমুদ্রে যাত্রার এই অভিযান শেষে সন্ধ্যার আগেই ফিরলাম জেটিতে। হোটেলে ফেরার আগে হুলুমালের সেন্ট্রাল পার্কে সন্ধ্যাটা হাঁটলাম। এখানে রাতে নানা রঙের জলের নৃত্য দেখা যায়। যেখানে শিশুরা খেলা মেতে উঠে। দিনভর চোখ ‍জুড়ানো মায়াময় প্রকৃতি দেখে ক্লান্তি টের না পেলেও বিছানায় শুইতে গিয়ে টের পেলাম। এরপর এক ঘুমে ক্লান্তি দূর হয়ে সকাল হল।

সমুদ্রে যাত্রার এই অভিযান শেষে সন্ধ্যার আগেই ফিরলাম জেটিতে

মালদ্বীপ আসলে যা জানা জরুরি

মালদ্বীপ এ on arrival visa, সুতরাং ভিসা নিয়ে টেনশন করার কোন দরকার নাই। নিজের কোন কাগজপত্র লাগবে না। ডলার এন্ডোর্সমেন্টসহ পাসপোর্ট; অবশ্যই মিনিমাম ৬ মাসের ভ্যালিডিটি থাকতে হবে। হোটেল বুকিং এর কাগজপত্র, রিটার্ন টিকেট। করোনাভাইরাসের কারণে এখন যোগ হয়েছে- করোনা নেগেটিভ সনদ, টিকা সনদ এবং ইমিগ্রেশন হেলথ ফরম পূরণের কোড।  

মালদ্বীপের অধিবাসীদের প্রায় সবারই স্কুটি বা বাইক রয়েছে। পর্যটকরা মালে শহরে যানবাহন হিসেবে ব্যবহার করেন ট্যাক্সি। মালে শহরের যেই জায়গায় নামেন ৩০ রুপি ভাড়া দিতে হবে। রাজধানী মালেকে ব্রিজ দিয়ে হনুমালের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। ব্রিজ দিয়ে গেলে ট্যাক্সিতে পড়বে ৭৫ রুপি আর বোটে গেলে দশ রুপি।

মালদ্বীপের নীল জলে এক ঘণ্টা সার্ফিংয়ের জন্য ৩০-৪০ রুপি খরচ হবে। সার্ফিং, বোটিংয়ের সঙ্গে কয়েকটি রাইড নিলে প্যাকেজে ২০০-৩০০ রুপির মধ্যেও সম্ভব। মালদ্বীপের আরেকটি আকর্ষণীয় বিষয় প্যারাগ্লেডিং এবং সাবমেরিন। বিলাশ বহুল রিসোর্টের বিচ ভিলা ও ওয়াটার ভিলায় থাকতে হলে সর্বনিম্ন ১২০ ডলার থেকে এমন ভাড়া গুণতে হবে।

মালদ্বীপে মাছ ছাড়া নিজস্ব কোন প্রোডাক্ট নেই কাজেই কেনাকাটা আপনার নিজস্ব সিদ্ধান্ত। চকলেটের দোকান আছে, তবে সেখানে সবই বাইরের চকলেট। এছাড়া ভারতেরও কিছু চকলেট ওখানে পাওয়া যায়। সবশেষে একটা কথা বলি, পর্যাপ্ত টাকা ও সময় না নিয়ে গেলে মালদ্বীপ থেকে দীর্ঘশ্বাস ও আফসোস নিয়ে ফিরতে হবে। তাই ভেবে চিন্তে ট্যুর প্লান করুন।

   

এক ঘরেই তিন বলী



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

  • Font increase
  • Font Decrease

চুল থেকে দাড়ি-সবই সফেদ। হাঁটাচলায় মন্থর। স্বাভাবিকভাবেই প্রবীণের বয়সটা আঁচ করা যায় প্রথম দেখাতেই। কিন্তু তার ষাটোর্ধ্ব বয়সটা যেন কেবল ক্যালেন্ডারের হিসাব। বয়স যতই ছোবল বসানোর চেষ্টা করুক না কেন-তিনি যেন এখনো ২৫ এর টগবগে তরুণ। সেই বলেই তো ফুসফুসের রোগবালাইকে তুড়ি মেরে ঐতিহাসিক আবদুল জব্বারের বলীখেলা এলেই হাজির হয়ে যান রিংয়ে। এক দুবার নয়, এবার কিনা পূর্ণ হলো সুবর্ণজয়ন্তী!

চট্টগ্রামের অন্যতম আবেগের ঠিকানা ঐতিহাসিক এই বলীখেলার বড় বিজ্ঞাপন হয়ে ওঠা এই বলীর নাম খাজা আহমদ বলী। ৫০ বছর ধরে বলীখেলায় অংশ নিয়ে দর্শকদের আনন্দ দিয়ে যাওয়া এই বলীর এখন পড়ন্ত বয়স। ফুসফুসে বাসা বেঁধেছে রোগ। কানেও শোনেন কম। খাজা আহমদ বুঝে গিয়েছেন, তার দিন ফুরাচ্ছে। কিন্তু তিনি যে বলীখেলার স্মৃতি থেকে সহজেই মুছে যেতে চান না। সেজন্যই উত্তরসূরী হিসেবে এরই মধ্যে গড়ে তুলেছেন নিজের দুই ছেলেকে। বাবার পাশাপাশি দুই ভাইও এখন বলীখেলার নিয়মিত প্রতিযোগী।

খাজা আহমেদ বলীর বাবাও বলীখেলায় অংশ নিতেন। বাবার সঙ্গে বলীখেলায় এসে ১৯৭৪ সালে শখের বসে খেলতে নামেন খাজা আহমেদও। বয়স তখন ১২ বছরের আশপাশে। সেই শুরু, আর কোনোদিন মিস করেননি বলীখেলায় অংশ নেওয়া। একবার চ্যাম্পিয়নের গৌরবও অর্জন করেছিলেন। বহু বছর ধরে খাজা আহমেদ বলী ও সত্তরোর্ধ্ব মফিজুর রহমানের ‘বলীযুদ্ধ’ জব্বারের বলীখেলার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে এই দ্বৈরথ হয়তো আর দেখা যাবে না। দুই বছর আগে উৎপত্তি হওয়া ফুসফুসের রোগটা ইদানিং যে খাজা আহমদকে বেশিই ভোগাচ্ছে। সেজন্য গতবছর অবসরের ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এবার দুই ছেলেকে নিয়ে বলীখেলায় এসে আবেগ সামলাতে পারেননি খাজা আহমেদ। ছেলেদের সঙ্গে নিজেও নেমে পড়েন রিংয়ে। সেজন্য আরও একবার মফিজুর রহমান-খাজা আহমেদের লড়াই দেখল হাজারো দর্শক। যদিওবা যৌথ বিজয়ী ঘোষণা করে দুজনের মুখেই হাসি ফুটিয়েছেন রেফারি।

প্রতিপক্ষ মফিজুর রহমানের সঙ্গে বলী-যুদ্ধে খাজা আহমদ

কেন অবসর ভাঙলেন এমন প্রশ্নে হাসি খেলা করে যায় খাজা আহমেদ বলীর মুখে। বলতে থাকেন, ‘বয়সের কারণে শরীর দস্ত। ফুসফুসও ঠিকঠাক কাজ করছে না। সেজন্য অবসর নিয়েছিলাম। কিন্তু বলীখেলায় আসার পর দেখলাম দর্শকেরা সবাই অনুরোধ করছেন। সেজন্য মন বলল, না খেললে দর্শকদের প্রতি অন্যায় হবে। আর আবেগ ও ভালোবাসার কাছে বয়স-রোগ পেরেছে কবে?’

তবে এখানেই সব শেষ, বলে দিয়েছেন খাজা আহমেদ বলী। বলেছেন, ‘বয়স হয়ে গেছে। মনে হয় না আর খেলতে পারব। অসুখটা বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে। সেজন্য মনে মনে মেনে নিয়েছি এটাই আমার শেষ অংশগ্রহণ। বাকিটা আল্লাহর হাতে।’

তিন ছেলে ও এক মেয়ের বাবা খাজা আহমদের বাড়ি চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায়। কৃষিকাজ করেই চলে সংসার। তবে বলীখেলা এলে সব কাজ বাধ। কয়েকদিন ধরে চলে প্রস্তুতি। নিজের স্মৃতি ধরে রাখতে এরই মধ্যে খাজা আহমেদ নিজের দুই ছেলেকে গড়ে তুলেছেন বলী হিসেবে। ২০১২ সাল থেকে বলীখেলায় নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন তার বড় ছেলে মো. সেলিম। গত বছর থেকে যোগ দিয়েছেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। এখন বলীখেলার আগে দুই ছেলেকে নিয়ে চলে খাজা আহমদের প্রস্তুতি।

জানতে চাইলে সেলিম বলেন, ‘বাবার কাছ থেকে আমরা বলীখেলা শিখেছি। বয়সের কারণে বাবা এখন অসুস্থ। হয়তো আর খেলা হবে না। সেজন্য তার উত্তরসূরী হিসেবে আমরা বলীখেলায় অংশ নেব সামনের দিনগুলোতে। এটা শুধু পরিবারের বলীর প্রজন্ম ধরে রাখার জন্য নয়, তরুণদের মাদক-সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেকে দূরে রাখতে উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগও।’

বাবাকে পাশে রেখে একই কথা বললেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। বলেন, ‘হয়তো বাবা আর খেলবেন না। তবে তিনি না খেললেও যতদিন বেঁচে থাকবেন বলীখেলা দেখতে আসবেন। রিংয়ের নিচে দাঁড়িয়ে আমাদের উৎসাহ দিয়ে যাবেন।’

ছেলের কথা শুনে আবেগ খেলে যায় খাজা আহমেদ বলীর মনে। কাঁধের গামছাটা হাতে তুলে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘না খেললেও যতদিন বাঁচি এখানে, এই বলীর মাঠ লালদীঘি ময়দানে ছুটে আসব। এটা থেকে দূরে থাকতে পারব না।’

খাজা আহমেদ যখন কথা বলছিলেন দূরে কোথাও তখন মাইকে বাজছিল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই অমর গান। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় অক্লান্ত গলায় গেয়ে চলেছেন, যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে...

;

চাকরি ছেড়ে বসের সামনেই ঢোল বাজিয়ে নাচলেন যুবক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নিত্যদিনের অফিসের কর্মপরিবেশে অনেকের মধ্যেই 'বিরক্তি' চলে আসে। তবুও ধৈয্য নিয়ে সব সহ্য করে টিকে থাকার জন্য চালিয়ে যান লড়াই। তবে এ যাত্রায় সকলের দ্বারা টিকে থাকা সম্ভব হয় না। অফিসের 'বিষাক্ত' কর্মপরিবেশে অনেকেই ভোগেন মানসিক সমস্যায় কিংবা ব্যক্তিজীবনে। এমন পরিবেশ থেকে বাঁচতে একেক জন একেক পন্থা অবলম্বন করে থাকেন।

তবে অনিকেত নামের এক যুবক এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে যা করেছেন নেট দুনিয়ায় তা রীতিমতো ভাইরাল। এসব থেকে মুক্তি পেতে চাকরিটাই ছেড়ে দিয়েছেন এই যুবক। এতেই ক্ষান্ত হননি তিনি, বসের সামনেই ঢাকঢোল বাজিয়ে নেচে উদযাপন করেছেন এমন মুহূর্তের।

ঘটনাটি ভারতের পুনে রাজ্যের। অনিকেত নামের ওই যুবক বিক্রয় সহযোগী হিসেবে চাকরি করতেন।

তার এমন উদযাপনের একটি ভিডিও ইন্সটাগ্রাম শেয়ার করেছেন অনীশ ভগত।

ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, গত তিন বছর ধরে এই কোম্পানির সাথে কাজ করেও বেতন খুব একটা বাড়েনি। এছাড়াও অফিসের বসের দ্বারাও তাকে বিভিন্ন সময়ে অপমানিত হতে হয়েছে।

তাই তার কাজের শেষ দিনে বন্ধুরা অফিসের বাইরে ঢোল নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন এবং নেচেছিলেন। ভিডিওতে দেখা গেছে, এ ঘটনায় তার বস অনেক উত্তেজিত হয়েছেন। পাশাপাশি তার বস লোকজনকে ধাক্কা দিয়েছেন এবং চিৎকারও করেছেন।

ভিডিওটির ক্যাপশনে ভগত লিখেছেন, আমি মনে করি আপনারা অনেকেই এর সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারবেন। আজকাল বিষাক্ত কাজের সংস্কৃতি খুব বেশি দেখা যায়। সম্মান এবং অধিকারের অভাব খুবই সাধারণ। অনিকেত তার পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। আমি আশা করি এই গল্প মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।

পোস্ট করা ভিডিওটি এক মিলিয়নেরও (১০ লাখের বেশি) বেশি ভিউ পেয়েছে। পোস্টটিতে অসংখ্য লাইক ও কমেন্টও রয়েছে।

একজন ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি জানি না কেন এটি আমাকে এত সন্তুষ্ট করেছে।'

আরেকজন লিখেছেন, 'নাচটি আমাকে অন্য মাত্রার তৃপ্তি দিয়েছে।'

'আপনি সত্যিই আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে ইতিবাচক এবং উত্সাহী ব্যক্তি'- তৃতীয় একজন ঠিক এভাবেই নিজের অনুভূতি জানিয়েছেন।

তথ্যসূত্র: হিন্দুস্থান টাইমস 

;

অভয়ারণ্যে মানুষ যখন বন্দিখাঁচায়



প্রমা কোয়েল, ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চিড়িয়াখানা, নানানরকম পশুপাখি ও প্রাণীর বন্দিশালা। কেবল রং-বেরঙের চিড়িয়াই নয়; বাঘ, সিংহ, ভালুক, বানর, গণ্ডারসহ কত বন্যপ্রাণীই না খাঁচায় বন্দি থাকে!

চিড়িয়াখানায় রাখতে বন্য প্রাণীদের প্রকৃতির স্বাধীন জীবন থেকে ছিনিয়ে আনা হয়। তাদের খাঁচায় বন্দি করা হয় যেন, মানুষ তাদের দেখে আনন্দ পায়। অনেক প্রাণীর জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি খাঁচাতেই কেটে যায়।

ছোট থেকে বড় সব বয়সের মানুষই চিড়িয়াখানায় ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন। শিশুরা না হয় অবুঝ! তবে যারা প্রাপ্তবয়স্ক তারাও চিড়িয়াখানায় এই বন্দি প্রাণীদের জীবনকে গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারেন না।

এশিয়ার বড় দেশ চীনে রয়েছে, এক অদ্ভুত চিড়িয়াখানা। চংকিংয়ে অবস্থিত সেই চিড়িয়াখানার নাম ‘লেহে লেদু বন্যপ্রাণী চিড়িয়াখানা’। একে ‘রিভার্স জু’ (বিপরীত চিড়িয়াখানা) বলেও ডাকা হয়।

এখানেও মানুষ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে পশু দেখতে আসেন। তবে একেবারেই ভিন্ন উপায়ে। মূলত, একটি খাঁচা রয়েছে, যেখানে মানুষদের সেই খাঁচায় পুরা হয়। তারপর সেই খাঁচাবন্দি মানুষদের নিয়ে রাখা হয়, অভয়ারণ্যে। সেখানে বন্য প্রাণীরা মানুষের খাঁচার চারপাশে অবাধে ঘুরতে থাকে। চিড়িয়াখানায় বন্দি প্রাণীদের বন্দিজীবনের এক প্রতীকী দৃশ্য!

অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষদের জন্য এটি এক নতুন অভিজ্ঞতা!

অভয়ারণ্যে খাঁচায় বন্দি মানুষ, ছবি-সংগৃহীত

খুব কাছে থেকে হিংস্র বন্যপ্রাণীদের মুক্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যেমন লোমহর্ষক, ঠিক তেমনই আতঙ্কজনকও হতে পারে। বিপরীতধর্মী এই চিড়িয়াখানাটি সবার জন্য প্রথম উন্মুক্ত করা হয়, ২০১৫ সালে। তখন বিশ্বের সংবদমাধ্যমের শিরোনাম কেড়েছিল এ চিড়িয়াখানাটি।

একটি শক্ত লোহার খাঁচাবেষ্টিত দর্শনার্থীদের একটি ট্রাকে তুলে অভয়ারণ্যে রেখে দেওয়া হয়। সেখানে তাদের ঘিরে ধরে ঘুরতে থাকে বাঘ, ভালুক, সিংহ ইত্যাদি হিংস্র প্রাণী।

এ বিষয়ে চিড়িয়াখানার প্রধান চ্যান লিয়াং বলেন, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা রক্ষার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। খাঁচার ফাঁকা অংশ দিয়ে হাতের আঙুলও বের না করার নির্দেশনা দেওয়া থাকে।

তবে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই চিড়িয়াখানাটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে অনেক। এর নৈতিকতা নিয়ে অনেকে প্রশ্নও তুলেছেন।

অনেকে মনে করেন, এরকম ব্যবস্থাপনায় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। কারণ, শিকারী প্রাণীগুলো প্রচণ্ড হিংস্র। তাই, সে কারণে যে কোনো সময় বিপজ্জনক ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

আবার এরকম চিন্তাভাবনার প্রশংসাও করেছেন অপর একটি পক্ষ। তাদের বক্তব্য, পৃথিবীটা কেবল মানুষদের নয়। প্রকৃতিতে সব প্রাণীদের একটা ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন। তাদের বন্দি করে রাখা মানুষের উচিত নয়। কারণ, মুক্ত প্রকৃতিতে বিরাজ করার অধিকার সব প্রাণীরই রয়েছে।

তাদের মন্তব্য, আমরা প্রাণীদের আবাসস্থল বনজঙ্গল সব উজাড় করেছি। সে কারণে তাপমাত্রাও অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। আবার প্রাণীদের বন্দি রেখে তাদের জীবন চরম দুর্বিষহ করে তুলি।

চাইলে এবং সুযোগ পেলে এই ধরনের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিতে চিড়িয়াখানাটি ঘুরে আসতে পারেন বৈকি!

তথ্যসূত্র: এনিমেল অ্যারাউন্ড দ্য গ্লোব

;

৫ বছরের শিশুর বিস্ময়কর প্রতিভা!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বয়স সবে ৫ কিংবা ৬। এই বয়সেই তার প্রতিভা দেখে অবাক হবে যে-কেউ!

গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সের (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভিডিওটি ১ মিলিয়নের (১০ লাখের বেশি) বেশি মানুষ দেখেছেন। খবর এনডিটিভি। 

ভিডিওতে রিলি নামের ওই শিশুটিকে প্রথমে শ্বাস নিতে দেখা যায়। তারপর সে একটি শক্তিশালী গর্জন দিয়ে শ্বাস ছাড়ে। ওই গর্জনটি হুবুহ সিংহের গর্জনের অনুরূপ।

রিলির মা অ্যামি ভিডিওটি এক্সে শেয়ারের পরই তা ভাইরাল হয়ে যায়। শিশুটির এমন নিখুত দক্ষতা দেখে মুগ্ধ দর্শকরা। ভিডিওটিতে অনেকেই নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, এত অল্প বয়সে এমন বাস্তবসম্মত গর্জন তৈরি করার রিলির ক্ষমতার বিস্ময় প্রকাশ করে।

আরেকজন লিখেছেন, শিশুরা খুব দ্রুত শিখে। তার এমন প্রতিভা সত্যিই অবাক করার মতো।

;