মোগল আমলের ঐতিহ্যের নিদর্শন ত্রিশালের জমিদার বাড়ি
ময়মনসিংহের ত্রিশালের কানিহারী ইউনিয়নের আহাম্মদাবাদ (সেনবাড়ী) গ্রামে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন এই জমিদার বাড়ি। নকশা ও কারুকার্যের পরিবর্তন হলেও ত্রিশালের ঐতিহ্যের নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই পুরাতন জমিদারবাড়ি। যদিও কিছুদিন আগে এর অবস্থা ছিল বেহাল।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সংস্কার কাজ করার পর এই রাজবাড়িটি দৃষ্টিনন্দন রূপ ফিরে পায়। এটি এখন দর্শনার্থীদের জন্য দেখার মতো জায়গা হয়ে উঠেছে। কারণ এটি যেমন দৃষ্টিনন্দন তেমনই রয়েছে এর সমৃদ্ধ ইতিহাস।
রাজবাড়িটি ব্রহ্মপুত্র নদের খুব কাছে হওয়ায় দর্শনার্থীরা একসঙ্গে রাজবাড়ি ও ব্রহ্মপুত্র নদ উপভোগ করতে পারেন। এ এলাকায় যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় নিয়মিতই দর্শনার্থীরা মোগল আমলের এ রাজবাড়ি দেখতে আসেন। ঈদসহ বড় কোনো উৎসব এলে দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত থাকে এই এলাকা। প্রায় দেড়শ বছর আগে সেনবংশের হাতে গড়ে ওঠা এই জমিদারবাড়ির মোগল আমলের নকশা ও কারুকার্যের পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে।
তবে ভেঙে ফেলা হয়েছে কয়েদখানাসহ নিপুণ হাতে গড়া শৈল্পিক অনেক স্থাপনা। নকশা ও কারুকার্যের পরিবর্তন করা হলেও ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে আরও বহু বছর দাঁড়িয়ে থাকবে দৃষ্টিনন্দন এই জমিদারবাড়ি। একসময় ১০ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা ওই জমিদারবাড়ির কারুকার্য ও নির্মাণশৈলী দেখে দর্শনার্থীরা মুগ্ধ হন।
ব্রিটিশ শাসনামলে ল্যান্ড লর্ড সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক সুবেন্দ্রনাথ সেন এ তল্লাটের সরাসরি খরিদ্দার ছিলেন। সেনদের জমিদারির শেষদিকে দেবেন্দ্রনাথ সেনের ছেলে রবীন্দ্রনাথ সেন জমিদারির দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই অর্থাৎ সত্তরের দশকের দিকে রবীন্দ্রনাথ সেনের ছেলে স্বাধীনাকান্ত সেন ও বাদল সেন জমি বিক্রি শুরু করেন। ১৯৭৫ সালের দিকে মূল ভবনটি ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জের পীরের কাছে বিক্রি করে তিনি সপরিবারে ভারত চলে যান।
বর্তমানে দৃষ্টিনন্দন এ জমিদারবাড়ির মালিকানায় রয়েছেন ঢাকার ফার্মগেটের খাজাবাবা জাকির শাহ কুতুববাগী। তবে ঐতিহ্যের সাক্ষী এ বাড়ির নকশা ও কারুকার্যের পরিবর্তন-পরিবর্ধন করায় পর্যটকদের প্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে অনেক কিছুই জানার সুযোগ থাকবে না বলে মত প্রকাশ করেন পর্যবেক্ষকরা।
দৃষ্টিনন্দন এই জমিদার বাড়িতে যেভাবে যাবেন: ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল বাসস্টেশন থেকে সিএনজি অটোরিকশা দিয়ে যেতে হবে কানিহারী ইউনিয়নের আহাম্মদাবাদ বাজারে। বাজার থেকে মিনিট পাঁচেক হাঁটলেই মোঘল আমলের সেন বাড়ী।
সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া পড়বে ৪০-৫০ টাকা। আহাম্মদাবাদ রেলস্টেশন লোকাল ট্রেনের স্টপিজ থাকায় লোকাল ট্রেনে করে আসতে পারেন। কমলাপুর রেলস্টেশন অথবা ময়মনসিংহ রেলস্টেশনে থেকে যে কোন লোকাল ট্রেনে আসতে পারেন সে ক্ষেত্রে কমলাপুর রেলস্টেশনে থেকে ভাড়া পড়বে ৬০-৭০ টাকা এবং ময়মনসিংহ রেলস্টেশন থেকে ভাড়া পড়বে ২০ টাকা।
খাওয়া দাওয়া: গ্রামীণ খাবার ছাড়া তেমন ভালো মানের কোন খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। সেই সাথে এখানে রাতে থাকার কোন ব্যবস্থা নেই।