প্রাকৃতিক বস্তুর কাছে ছোট পাখিদের ঋণ

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মাকড়সার জাল দিয়ে বাসা তৈরি করছে মৌটুসি। ছবি: এবি সিদ্দিক

মাকড়সার জাল দিয়ে বাসা তৈরি করছে মৌটুসি। ছবি: এবি সিদ্দিক

পাখি নিয়ে তো ইতোপূর্বে অনেক আলোচনা হয়েছে। একটা একটা পাখিকে কেন্দ্র করে চেষ্টা করা হয়েছে তাদের স্বভাব-পরিচিত তুলে ধরে সম্মানিত পাঠকদের মাঝে পাখির প্রতি, প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা-মমত্ববোধ তৈরিতে। কেননা, আমরা বিশ্বাস করতে চাই- যারা প্রকৃতি ভালোবাসেন, পাখিসহ প্রকৃতির উপাদানগুলো ভালোবাসেন তাদের দ্বারাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমাদের চারপাশের বিপন্ন প্রকৃতি আবার তার পুনঃজীবন লাভ করবে।

প্রকৃতির পরতে পরতে রয়েছে রহস্যের ছোঁয়া। সেই রহস্য ভেদ করেই প্রকৃতির ছোট ছোট প্রাণীগুলো খুঁজে পায় তাদের টিকে থাকার আশ্রয়। দিনের পর দিন এভাবেই তারা ব্যবহার করে চলেছে বেঁচে থাকার নানান কলাকৌশল। 

বিজ্ঞাপন

আমাদের প্রকৃতির গভীর এক রহস্যের উপাদান ‘পাখি’। যারা মূলতই তাদের বিশ্বস্থ ডানা ভর করে আমাদের প্রকৃতিকে চির সবুজ করার কাজে সদা ব্যস্ত। প্রকৃতির নিয়মেই তাদের মাঝে দেখা দেয়- প্রজননকাল। অর্থাৎ তার পরবর্তী প্রজন্মকে টিকিয়ে রাখার দায়। সেই দায়ের উপর ভর করেই প্রজননকালকে সার্থক করতে ওরা সদ্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে।    

টুনটুনি বাসা তৈরি জন্য সংগ্রহ করেছে শুকনো খড়কুটো। ছবি: এবি সিদ্দিক

তাই, প্রজনন মৌসুমে পাখিদের প্রয়োজন পড়ে নতুন বাসা তৈরির। প্রকৃতিতে দুইটি পাখির যুগলমিলনের পর লতাপাতা দিয়ে নিজের বসবাসের ঘরটি তৈরি জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ে তারা। সেই বাসা তৈরিতে তারা ব্যবহার করে মাকড়সার জাল। কারণ, এর মাঝে আঠাজাতীয় পদার্থ আছে। সেই আঠা শুকনো-কাচা পাতা বা খড়কুটোর মাঝে সহজে আটকে থাকতে সাহায্য করে।  

বিজ্ঞাপন

তবে প্রজননের পর্বটা এতো সহজলভ্য নয়। পুরুষ পাখিটি ক্রমাগত গান গেয়ে গেয়ে জয় করতে হয় স্ত্রী পাখিটির মন। তারপর আসে সফলতা এবং ব্যর্থতা দুটোই থাকে। পুরুষ গায়ক পাখিটিকে স্ত্রী পাখিটির পছন্দ না হলে সে আবার অন্য পুরুষ সঙ্গী খুজতে থাকে। এই হলো পাখিদের সঙ্গী নির্বাচন। সঙ্গী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে তখন প্রয়োজন পড়ে ঘর তৈরির।

সে ক্ষেত্রে কোনো কোনো ছোট পাখি মাকড়সার জালকে এতো সুন্দর করে শৈল্পিকভাবে ব্যবহার করে যে তা খুবই কার্যকর এবং নান্দনিক হয়ে ফুটে উঠে। 

মাকড়সা ধরে খাচ্ছে ছোট-মাকড়মার পাখি। ছবি: এবি সিদ্দিক

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যায়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং বন্যপ্রাণী গবেষক ড. কামরুল হাসান বলেন, বিশেষত ছোট পাখিরা তাদের বাসা তৈরিতে মাকড়সার জাল ব্যবহার করে থাকে। যেমন- ছোট পাখির মধ্যে বেগুনি-মৌটুসি (Purple Sunbird), টুনটুনি (Tailorbird) প্রভৃতি পাখি রয়েছে। প্রজনন মৌসুমে এই বাসা তৈরি তাদের প্রধান কাজে রূপে নেয়।

মাকড়সার জাল দিয়ে পাখি তার বাসা তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে এ গবেষক বলেন, ছোট ছোট পাতার অংশ বা ঘাসের অংশ এনে মেইনলি জয়েনিং এর কাজটা করে। মাকড়সার জাল কিন্তু অনেকটা আঠালো টাইপের হয়ে থাকে। এই আঠালো জালটা যখন পাতা বা ঘাসের অংশগুলোতে লাগিয়ে দেয় তখন সে বাসাটি শক্ত এবং মসৃণ হয়। এমন সব কলাকৌশল অবলম্বন করে পাখিরা প্রকৃতিতে যুগযুগ ধরে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। শুধু মাকড়সার জালই নয়, শুকনো খড়কুটো বা শুকনো লম্বা ঘাস প্রভৃতি তারা তাদের বাসা তৈরির কাজে দারুণভাবে ব্যবহার করে থাকে।

শুধু মাকড়সার জাল পেঁচানোই নয়, কোনো কোনো পাখি তো মাকড়সা খেয়েই বাঁচে। যেমন- Little Spiderhunter। এর বাংলা নাম ছোট-মাকড়মার। এ পাখির প্রধান খাবারই হচ্ছে মাকড়সা। এর ঠোঁট বেশ লম্বা। এরা মাকড়সা খেয়েই বাঁচে। এটি ছোট আকারের পাখি বলে জানান প্রফেসর ড. কামরুল হাসান।