১৫ আগস্ট: বাঙালির  হৃদয়ের আর্তিতে লেখা অশ্রু ঝরানো লিপিকা



বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

আগস্ট। বাঙালি জাতীয় জীবনে অত্যন্ত বেদনা বিদুর, অশ্রু ঝরানো, শোকাবহ মাস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতি হারিয়েছে তার অমূল্য রতন। বাংলার জনপদে নিরলস ছুটে চলায় যিনি বাঙালি জাতিসত্বাকে মুক্তির মোহনায় উপনীত করেছিলেন, জীবনের শ্রেষ্ট সময়টুকু বাঙালির অধিকার আদায়ের কথা বলতে গিয়ে কারান্তরীণ হয়ে কাটিয়েছিলেন, যার তর্জনী হেলনে নিরস্ত্র বাঙালি সশস্ত্র সংগ্রামী ও গেরিলা যোদ্ধা হয়ে ওঠেছিল, এনেছিল স্বাধীনতার লাল সূর্য। সেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করে বাঙালির কপালে কালিমা লেপন করে স্বার্থলোভী ও চাকরিচ্যুত কতিপয় সেনা কর্মকর্তা। তাদের পিছনে কলকাঠি নেড়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার শত্রু দেশী, বিদেশী কুচক্রী মহল। সময়ের পরিক্রমায় সবকিছুই আস্তে আস্তে জাতির কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরপর খন্দকার মোস্তাক স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট ও মেজয় জিয়া সেনা প্রধানের দায়িত্বে এসে তাদের কলুষযুক্ত চেহারা উম্মোচন করে।

১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর খন্দকার মোশতাক আহমেদ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রক্ষায় ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করে। ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমান এ অধ্যাদেশকে আইনে পরিনত করে।

দীর্ঘ ২১বছর নানা ছল ছাতুরী, হামলা, মামলা ও নির্যাতন করে আওয়ামী লীগকে জাতীয় রাজনীতিতে কোনঠাসা করে, ইতিহাস বিকৃতি ঘটিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনি ও স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। শত ঝড়, ঝঞ্ঝা বুকে নিয়ে, রোদ, বৃষ্টি গায়ে মেখে, লাঠি, গুলি, টিয়ার গ্যসকে মোকাবেলা করে দীর্ঘ সংগ্রামে পথ বেয়ে জাতির জনকের কন্যা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে এসে ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর সপ্তম  জাতীয় সংসদে ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচারের অবরুদ্ধ পথ অবমুক্ত করতে সক্ষম হন। এবং স্বাভাবিক বিচারিক প্রক্রিয়ায় ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ১৫ জনকে বঙ্গবন্ধু ও তার সপরিবারের সদস্যদের হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদন্ড প্রদানের রায় ঘোষিত হয়। ২০০১ সালে বিএনপি জামাত জোট রাষ্ট্র ক্ষমতায় এলে এ বিচার প্রক্রিয়া আবারো বাধাগ্রস্ত হয়। দীর্ঘ ৩৪ বছরের বহু বাধা বিপত্তি পেরিয়ে ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু হত্যার ৫ আসামির ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্য

দিয়ে জাতি তার পিতা হত্যার কলঙ্ক হতে মুক্ত হলেও জাতির জীবন থেকে হারিয়ে গেছে সম্ভাবনার দীর্ঘ সময়টুকু।

১৯৭৫ সালের আগস্ট মাস। সেদিনের কিছু স্মৃতিকথা আজ আমি নতুন প্রজন্মের জন্য এখানে তুলে ধরতে চাই। ‘বাংলাদেশ জাতীয় সাংস্কৃতিক আন্দোলন’ এর ব্যানারে চট্টগ্রামে আমরা একটি সাংস্কৃতিক সম্মেলনের আয়োজন নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যে ছিলাম। স্থানীয় মুসলিম হলে ১৭ আগস্ট হতে ১৯আগস্ট তিনদিনব্যাপী এ সম্মেলন হবে ঠিক হল। তপন বৈদ্য ছিলেন এ সম্মেলন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক আর আমি ছিলাম যুগ্ম আহ্বায়ক। ভারত ও বাংলাদেশের খ্যাতিমান শিল্পীদের অনেকেরই এ সম্মেলনে উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছিল। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি শেখ ফজলুল হক মনি ভাই এ ব্যাপারে আমাদেরকে বিশেষ সহযোগিতা করেছিলেন। কথা ছিল, সম্মেলনের প্রত্যেকদিন একটি করে তিনদিনে মোট তিনটি নাটক মঞ্চস্থ করা হবে। আর, নাটক পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন নাট্যকার অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমদ। জাতীয়  সংস্কৃতি ও ক্রীড়ার উন্নয়নে জাতির জনকের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল ছিলেন অন্তপ্রাণ। আমাদের সাংস্কৃতিক সম্মেলনের উদ্বোধক হিসেবে আমরা ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব শেখ কামাল সাহেবকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। ১৪ আগস্ট সন্ধ্যায় আমরা আওয়ামী লীগ নেতা এম এ মান্নান ভাইয়ের বাসায় যাই, তার সাথে আমাদের সম্মেলন প্রস্তুতির নানাদিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি। তিনি আমাদেরকে সম্মেলনের খরচের জন্য ৫০০০টাকা দেন এবং রাতের ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। এরপর আমরা তৎকালীন জেলা প্রশাসক এ.বি. চৌধুরীর সাথে সাক্ষাৎ করি। তিনি আমাদেরকে পরদিন সকালে তার বাসায় যেতে বলেন। সর্বশেষে আমরা তৎকালীন পূর্বদেশ পত্রিকার চট্টগ্রাম প্রতিনিধি নুরুল ইসলাম সাহেবের বাসায় যাই। কাশেম চিশ্তী সাহেবও সেদিন আমাদের সাথে ছিলেন। নুরুল ইসলাম সাহেবের বাসার ল্যান্ড ফোন থেকে আমরা সম্মেলনের উদ্বোধক বঙ্গবন্ধু পুত্র শেখ কামাল সাহেবের সাথে কথা বলি। তিনি ১৭ তারিখে আমাদের সম্মেলনে যথাসময়ে উপস্থিত থেকে উদ্বোধন করার ব্যাপারে আমাদেরকে শতভাগ আশ্বাস প্রদান করেন। নুরুল ইসলাম সাহেবের নন্দনকানস্থ বাসা থেকে বেরিয়ে চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসে পৌঁছাই যখন, তখন রাত ১টা। বেশকিছু কুকুর একসাথে কান্নার রোল তুলে ডাকছিল। মনটা কেমন যেন মোচর দিয়ে উঠল, কেমন যেন বিষন্নতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল শরীর মন। তাছাড়া মুরব্বীদের মুখে শুনেছি, কুকুরের কান্না নাকি অশুভ লক্ষন। কিছুক্ষন চুপ থেকে তপন বৈদ্য বলল দেশে কোথায় কোন অঘটন ঘটতে চলেছে কে জানে? কুকুর গুলো এভাবে কান্না করছে কেন? আমি সান্তনা দিয়ে বললাম, ওসব কিছুই না। এগুলো সব মুরব্বীদের বলা কুসংস্কার। তারপর আমরা  ঘুমোতে যাই। সকালে ওঠে ডিসি সাহেবের বাসায় যাব এমন সময় লেয়াকত নামের জাসদ সমর্থক এক ছাত্র আমাকে জানাল বঙ্গবন্ধুকে নাকি ভোর বেলায় হত্যা করা হয়েছে। আরেকটু পর আরেক ছাত্রনেতা গোলাম মোহাম্মদও একই কথা বলল। আমি তাদের কথা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। প্যারেড কর্ণারের পূর্বপাশে খালেকের বাসায় গিয়ে তাকে ঘুম থেকে উঠালাম। বললাম, তোমাদের রেডিওটা অন কর। রেডিও অন করতেই খুনিদের ঘোষণা শুনতে পেলাম। তবুও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল, এসব কিছু স্বাধীনতা বিরোধীদের অপপ্রচার। আমরা দ্রুত মতিন বিল্ডিং এর ছাত্রলীগের অফিসে গেলাম। সেখানে ছাত্রলীগ নেতা সরফরাজ খান বাবুল, সন্দ্বীপের রফিকুল ইসলাম, ফটিকছড়ির আনোয়ারুল আজিম, শওকত হোসেন, মান্নান, ইসমাইল, কাশেম চিশ্তী, পটিয়ার এম এ জাফর, শামসুজ্জামানসহ বিশ পঁচিশজন ছাত্রনেতাকে একসাথে পেলাম। তৎক্ষণাত বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কে.সি দে রোড, টি এন্ড টি অফিস,  লালদীঘি হয়ে রেয়াজ উদ্দীন বাজার আমতল, তিনপুলের মাথা হতে ঘুরে শহীদ মিনার হয়ে পুনারায় পার্টি অফিসে আসি। কোথাও কোন বাঁধা পাইনি। রাস্তায় তেমন কোন মানুষজন কিংবা পুলিশও ছিলনা। সবদিকে কেমন জানি শুনশান নিরবতা। তপন বৈদ্যর বাসা ছিল ফকির হাট। মিছিলের পর আমরা তার বাসায় যাওয়ার পথে আগ্রাবাদ রেডিও স্টেশনের সামনে নামলাম এবং স্টেশনে ঢুকে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে বক্তব্য রাখার সুযোগ চাইলাম। রেডিও কর্তৃপক্ষ রাজী হলেন না। তারপর তপন বৈদ্যর বাসায় চলে যাই। বাকশাল সাধারন সম্পাদকের সাথে জেলা গভর্নরদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির জন্য নেতৃবৃন্দের প্রায় সকলেই ঢাকায় ছিলেন। অনেক চেষ্টা করেও কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। ঢাকার সাথে সারাদেশের সমস্ত যোগাযোগ মূলত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিকেলে আমরা আবারো বেরিয়ে পড়ি। মুক্তিযোদ্ধা চেঙ্গিস খানের শ্বশুরের কাজীর দেউড়িস্থ বাড়ীর সামনের রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আমরা কয়জন কথা বলছিলাম। বিকেল পাঁচটার দিকে দেখলাম সামরিক বাহিনীর কিছু গাড়ি রাস্তায় বেরিয়ে পথচারীদের হুমকি, ধমকি দিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করছে। আমরা রাস্তার পাশ ছেড়ে কিছুটা ভেতরে গলির দিকে ঢুকে পড়লাম। আমাদের মধ্যে কাশেম চিশ্তীর বাসা ছিল চাক্তাই। আমরা সবাই যে যার বাসায় চলে গেলাম।

১৭ আগস্ট সকালে চট্টগ্রাম কলেজ হোস্টেল থেকে রাউজানের সালাম ও বাবুল আমাদের বহরদার বাড়ীর বাসায় আসে। পরবর্তী করনীয় বিষয়ে আলোচনা করতে ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মী ও কিছু কিছু আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথেও যোগাযোগ করতে লাগলাম।

সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে এস এম ইউসুফ ভাই (মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিব বাহিনীর জেলা প্রধান) আমার বাসায় আসলেন। বললেন, চল বাইরে যাব। মাকে বলে বেরিয়ে পড়লাম (মা অবশ্য বাঁধা দিয়েছিলেন, তবুও) দুজনে। ইউসুফ ভাই আমাকে জামালখানস্থ নজরুলের বাসায় রেখে কোথায় জানি চলে গেলেন। সেই রাতে নজরুলের বাসায় রয়ে গেলাম। সকালে সাতকানিয়ার মুনিরের মারফত ইউসুফ ভাই খবর পাঠালেন। বললেন, তিনি আসবেন। সারাদিন অপেক্ষায় ছিলাম, রাত দশটার দিকে আবারো মনির এসে আমাকে তার সাথে বের হতে বললেন। বললেন, ইউসুফ ভাই আমাদের জন্য অভয় মিত্র ঘাটে অপেক্ষা করছেন। অভয় মিত্র ঘাটের একটি ফিশিং বোটে আনোয়ারুল আজিম, গোলাম রাব্বানী, মো. সেলিম, শওকত হোসেন, রফিক, মনির, কাজী আবু তৈয়ব, মহিউদ্দিন রাশেদ, শামসুজ্জামান, জাফর, দেলোয়ার, মান্নানসহ আমরা ১৪জন ইউসুফ ভাইয়ের সাথে বসলাম। ইউসুফ ভাই বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে করনীয় সম্পর্কে আমাদের উদ্দেশ্যে দীর্ঘক্ষণ বক্তব্য রাখেন এবং যার যা কিছু আছে তা নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। এ বৈঠকের ঠিক পনের দিন পর আমরা নিউ মার্কেট মোড়, আগ্রাবাদ, কাজীর দেউরীসহ চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি জায়গায় গ্রেনেড চার্জ করি। এরপর ইউসুফ ভাইসহ কাজী আবু তৈয়ব ও আমি আমাদের নেতা মান্নান ভাইয়ের বাসায় যাই।  শক্তি সংগ্রহের জন্য ভারতে যাওয়ার ব্যাপারে মান্নান ভাইকে বুঝিয়ে বলি। মান্নান ভাই এতে রাজী হলেন না। কিন্তু ইউসুফ ভাই ঠিকই ভারতে চলে গেলেন। এদিকে কঠোর বিধি নিষেধের যাঁতাকলে পড়ে কোথাও জড়ো হওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ল। তখন নিউমার্কেটে নজরুলের শাহ আমান স্টোর হয়ে উঠল আমাদের যোগাযোগের অন্যতম ক্ষেত্র। এখানে আমরা ক্রেতাবেশে আসতাম এবং পরস্পরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতাম। একসময় সিদ্ধান্ত নিলাম, আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে লিফলেট ছাপিয়ে বিতরন করব। ছাপানোর দায়িত্ব ছিল ফটিকছড়ির এস এম ফারুকের উপর। যথারীতি লিফলেট ছাপানো হল, বিভিন্ন জায়গায় বিতরন করা হল। এভাবে বিক্ষিপ্তভাবে আমরা প্রতিরোধ ও প্রতিবাদ সংগ্রাম চালিয়ে যেতে থাকলাম। নভেম্বর মাসের ৪ তারিখ আমরা জানতে পারলাম, জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজ উদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও কামরুজ্জামানকে কারাগারের ভেতর ঢুকে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করা হয়েছে। সেদিন মুক্তি যোদ্ধা নুরুল বশর ও আমি আমাদের বহরদার বাড়ীর বাসা থেকে বেরিয়ে কাজেম আলী স্কুলের সামনে দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে লিয়াকত (পরবর্তীতে কমিশনার) ও আওয়ামী লীগ কর্মী ফোরক আহমদের সাথে দেখা হয়। ৪ জন মিলে আলাপ করলাম কি করা যায়! লিয়াকত বলল, চল আমরা চট্টগ্রাম কলেজ গিয়ে প্রতিবাদী মিছিল বের করি। যদিও আমি সভাপতি নির্বাচিত হই ১৯৭২ সালে, সম্মেলন না হওয়ায় তখনো আমি চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্বে আছি। আমরা কয়েকজন দ্রুত কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়লাম আর গ্যালারী ২ তে গিয়ে বললাম ক্লাস হবেনা। শিক্ষক আবু তাহের সাহেব তা মানতে রাজী হলেন না। লিয়াকত ক্যাম্পাসের এদিক সেদিক ছুটোছুটি শুরু করেছে, একজন ছাত্র ক্লাস থেকে বেরিয়ে গিয়ে আয়নায় সজোড়ে একটি পাথর ছুঁড়ে মারল। বিকট আওয়াজ আর কাঁচ ভাঙ্গার শব্দ শুনে সাধারণ ছাত্র ছাত্রীরা দিগ্বিদিক ছুটতে আরম্ভ করল। তারপর, প্রতিবাদী ছাত্রদের নিয়ে আমরা মিছিল বের করি এবং মহসীন কলেজ, কাজেম আলী স্কুল ও খাস্তগীর স্কুলের ক্লাশ বন্ধ করে দিই। এরপর মিছিল নিয়ে আন্দরকিল্লা, নজির আহমদ সড়ক, রাইফেল ক্লাব হয়ে শহীদ মিনারে দিকে ঘুরতেই নিউমার্কেটের ঐদিক থেকে পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর কয়েকটি গাড়ী এসে আমাদের উপর হামলে পড়ে। মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। তৎকালীন গ্র্যান্ড হোটেলের গলিতে ঢুকে যাওয়ার পরও দেখি পুলিশ আমার পিছু ছাড়েনি। পাশ্ববর্তী একটি ভবনের সীমানা প্রাচীর টপকে আমি কোন প্রকারে গ্রেপ্তার এড়াতে সক্ষম হলেও অনেকেই পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। রাঙ্গুনিয়ার এমপি মরহুম ক্যাপ্টেন কাশেম সাহেবের একান্ত সহাযোগিতায় পরের দিনই তারা ছাড়া পান। সেদিন বিকেলেই ইউনাইটেড হোটেলের সামনে সিটি কলেজের ছাত্রনেতা জানে আলমের সাথে আমাদের দেখা হয়। হোটেলের কাছেই জানে আলমের বাসা। হোটেল মালিকের শ্যালক যখন বললেন, কক্সবাজারের গোলাম রাব্বান ভাই হোটেলে আছেন তখন আমরা হোটেলের এক কোনার গোপন আস্তানায় তার সাথে দেখা করলাম। তিনি বললেন, আমরা সন্ধ্যায় মশাল মিছিল বের করব তোমরা দ্রুত প্রস্তুতি নাও। চট্টগ্রাম কলেজের হোস্টেলে এসে বেয়ারা বশরকে ৫০টাকা দিয়ে বাঁশ, চট ও কেরোসিন আনতে পাঠালাম। কিছু পরে হোস্টেলের আরেক বেয়ারা চিত্ত এসে বলল মশালের সরঞ্জামসহ বশর পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। আমাদের মশাল মিছিলের পরিকল্পনা এখানে ব্যর্থ হল। এরপর রাব্বান ভাইসহ আমরা পরেরদিন হরতাল কর্মসূচি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিলাম। ফেনীর গোলাম মোস্তফার সাথে যোগাযোগ করলাম। তার একটা ছাপখানা ছিল, এখান থেকে হরতালের সমর্থনে লিফলেট ছাপানো হল। সারা শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঐ লিফলেট বিতরণ করা হল। মুত্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল বশর ও আমি বহরদার হাট, মুরাদপুর, চকবাজার, পাঁচলাইশ ও চান্দগাঁও এলাকার দায়িত্ব নিয়ে লিফলেট বিতরন করি। হরতাল হয়নি, পরিবেশ পরিস্থিতি আমাদের অনুকুলে ছিলনা সেটাতো বুঝতেই পারছেন। আমরা বিচ্ছিন্ন কর্মসূচি দিয়ে সরকার ও প্রশাসনকে আস্তে আস্তে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছিলাম মাত্র। এভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, মহানগরীর বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডে প্রতিবাদী কর্মসূচি দিয়ে তৎপরতা চালিয়ে যাই। সেদিনের কথা মনে হলে হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ হয়। রাতারাতি সবকিছু যেন বদলে গিয়েছিল তখন। চেনা মানুষগুলোর অনেকেই যেন অচেনা হয়ে গেল। বঙ্গবন্ধু থাকাকালীন সময়ে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা লোকগুলো, যাদের সাথে আমাদেরও বেশ সখ্যতা ছিল, আজ তার রঙ বদলে নিয়েছে গিরগিটির মত। তাদের কাছে গেলে তারা আমাদের দূর দূর করে তাড়িয়ে দিতে লাগল। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে নানান কটুক্তি করতেও ছাড়েনি তারা। তাদের এই কটু আচরন, স্বৈরাচার ও স্বাধীনতা বিরুধী অপশক্তি এবং সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাসহ জাতীয় চারনেতা হত্যাকাণ্ডের বেনিফিশিয়ারী গোষ্ঠীর অত্যাচার, নিপীড়ন, প্রলোভনকে পদদলিত করে জীবনবাজী রেখে আমরা মুজিবপ্রেমী জনগন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম করে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে ন্যাস্ত করতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু, বর্ণচোরা গিরগিটির দল আবারো আওয়ামী লীগ ও রাষ্ট্র ক্ষমতার নানান স্তরে জেঁকে বসেছে। নিজেদের প্রভাব বলয়ের বিস্তার ঘটাতে প্রগতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে অবস্থানকারী স্বাধীনতা বিরোধীদেরকেও মুজিবাদর্শের সৈনিক আখ্যা দিয়ে প্রকৃত মুজিপ্রেমীদের কোনঠাসা করে রাখায় অপপ্রয়াসে লিপ্ত।

তারা আজ ভাবতে শুরু করেছে সংগঠনে তারাই শক্তিশালী। তাই, তারা অসম্ভব রকমের বেপরোয়া। এদের আস্ফালন ও বেপরোয়া আচরনে অতিষ্ট হয়ে প্রকৃত আওয়ামী লীগের অনুসারীরা রাজনীতি কর্মকাণ্ডের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। তাদের অভিমানী মন আজ রাজনীতি বিমূখ। এর থেকে ফায়দা লুটছে সুবিধাবাদীরা, তারা ক্ষমতার সুযোগে দিনের পর দিন অঢেল বিত্ত বৈভবের মালিক হচ্ছে। আর এই অর্থের দাপটে আদর্শিক কর্মীরা আজ ক্ষত বিক্ষত।

তাই শোকের মাসে ডাক দিয়ে যাই আসুন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকেরা। আর হতাশা নয়, অভিমান নয়। সুবিধা বাদীদের হটিয়ে, তাদের সকল চক্রান্তকে পদদলিত করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ঝান্ডা উড়াই। মনে রাখতে হবে, বঙ্গবন্ধুর রক্তের কাছে আমরা ঋণী। আমরা দায়বদ্ধ আমাদের অস্তিত্বের প্রতীক, ইতিহাসের শ্রেষ্ট সন্তান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর রক্তের ঋনের কাছে। আসুন জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মানে জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন অভিযাত্রাকে কন্টক মুক্ত করতে ও জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী রাখতে কাজ করে যাই।

সকলকে ধন্যবাদ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয়তু জননেত্রী শেখ হাসিনা।

লেখক- মেয়র, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ।

   

এক ঘরেই তিন বলী



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

  • Font increase
  • Font Decrease

চুল থেকে দাড়ি-সবই সফেদ। হাঁটাচলায় মন্থর। স্বাভাবিকভাবেই প্রবীণের বয়সটা আঁচ করা যায় প্রথম দেখাতেই। কিন্তু তার ষাটোর্ধ্ব বয়সটা যেন কেবল ক্যালেন্ডারের হিসাব। বয়স যতই ছোবল বসানোর চেষ্টা করুক না কেন-তিনি যেন এখনো ২৫ এর টগবগে তরুণ। সেই বলেই তো ফুসফুসের রোগবালাইকে তুড়ি মেরে ঐতিহাসিক আবদুল জব্বারের বলীখেলা এলেই হাজির হয়ে যান রিংয়ে। এক দুবার নয়, এবার কিনা পূর্ণ হলো সুবর্ণজয়ন্তী!

চট্টগ্রামের অন্যতম আবেগের ঠিকানা ঐতিহাসিক এই বলীখেলার বড় বিজ্ঞাপন হয়ে ওঠা এই বলীর নাম খাজা আহমদ বলী। ৫০ বছর ধরে বলীখেলায় অংশ নিয়ে দর্শকদের আনন্দ দিয়ে যাওয়া এই বলীর এখন পড়ন্ত বয়স। ফুসফুসে বাসা বেঁধেছে রোগ। কানেও শোনেন কম। খাজা আহমদ বুঝে গিয়েছেন, তার দিন ফুরাচ্ছে। কিন্তু তিনি যে বলীখেলার স্মৃতি থেকে সহজেই মুছে যেতে চান না। সেজন্যই উত্তরসূরী হিসেবে এরই মধ্যে গড়ে তুলেছেন নিজের দুই ছেলেকে। বাবার পাশাপাশি দুই ভাইও এখন বলীখেলার নিয়মিত প্রতিযোগী।

খাজা আহমেদ বলীর বাবাও বলীখেলায় অংশ নিতেন। বাবার সঙ্গে বলীখেলায় এসে ১৯৭৪ সালে শখের বসে খেলতে নামেন খাজা আহমেদও। বয়স তখন ১২ বছরের আশপাশে। সেই শুরু, আর কোনোদিন মিস করেননি বলীখেলায় অংশ নেওয়া। একবার চ্যাম্পিয়নের গৌরবও অর্জন করেছিলেন। বহু বছর ধরে খাজা আহমেদ বলী ও সত্তরোর্ধ্ব মফিজুর রহমানের ‘বলীযুদ্ধ’ জব্বারের বলীখেলার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে এই দ্বৈরথ হয়তো আর দেখা যাবে না। দুই বছর আগে উৎপত্তি হওয়া ফুসফুসের রোগটা ইদানিং যে খাজা আহমদকে বেশিই ভোগাচ্ছে। সেজন্য গতবছর অবসরের ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এবার দুই ছেলেকে নিয়ে বলীখেলায় এসে আবেগ সামলাতে পারেননি খাজা আহমেদ। ছেলেদের সঙ্গে নিজেও নেমে পড়েন রিংয়ে। সেজন্য আরও একবার মফিজুর রহমান-খাজা আহমেদের লড়াই দেখল হাজারো দর্শক। যদিওবা যৌথ বিজয়ী ঘোষণা করে দুজনের মুখেই হাসি ফুটিয়েছেন রেফারি।

প্রতিপক্ষ মফিজুর রহমানের সঙ্গে বলী-যুদ্ধে খাজা আহমদ

কেন অবসর ভাঙলেন এমন প্রশ্নে হাসি খেলা করে যায় খাজা আহমেদ বলীর মুখে। বলতে থাকেন, ‘বয়সের কারণে শরীর দস্ত। ফুসফুসও ঠিকঠাক কাজ করছে না। সেজন্য অবসর নিয়েছিলাম। কিন্তু বলীখেলায় আসার পর দেখলাম দর্শকেরা সবাই অনুরোধ করছেন। সেজন্য মন বলল, না খেললে দর্শকদের প্রতি অন্যায় হবে। আর আবেগ ও ভালোবাসার কাছে বয়স-রোগ পেরেছে কবে?’

তবে এখানেই সব শেষ, বলে দিয়েছেন খাজা আহমেদ বলী। বলেছেন, ‘বয়স হয়ে গেছে। মনে হয় না আর খেলতে পারব। অসুখটা বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে। সেজন্য মনে মনে মেনে নিয়েছি এটাই আমার শেষ অংশগ্রহণ। বাকিটা আল্লাহর হাতে।’

তিন ছেলে ও এক মেয়ের বাবা খাজা আহমদের বাড়ি চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায়। কৃষিকাজ করেই চলে সংসার। তবে বলীখেলা এলে সব কাজ বাধ। কয়েকদিন ধরে চলে প্রস্তুতি। নিজের স্মৃতি ধরে রাখতে এরই মধ্যে খাজা আহমেদ নিজের দুই ছেলেকে গড়ে তুলেছেন বলী হিসেবে। ২০১২ সাল থেকে বলীখেলায় নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন তার বড় ছেলে মো. সেলিম। গত বছর থেকে যোগ দিয়েছেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। এখন বলীখেলার আগে দুই ছেলেকে নিয়ে চলে খাজা আহমদের প্রস্তুতি।

জানতে চাইলে সেলিম বলেন, ‘বাবার কাছ থেকে আমরা বলীখেলা শিখেছি। বয়সের কারণে বাবা এখন অসুস্থ। হয়তো আর খেলা হবে না। সেজন্য তার উত্তরসূরী হিসেবে আমরা বলীখেলায় অংশ নেব সামনের দিনগুলোতে। এটা শুধু পরিবারের বলীর প্রজন্ম ধরে রাখার জন্য নয়, তরুণদের মাদক-সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেকে দূরে রাখতে উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগও।’

বাবাকে পাশে রেখে একই কথা বললেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। বলেন, ‘হয়তো বাবা আর খেলবেন না। তবে তিনি না খেললেও যতদিন বেঁচে থাকবেন বলীখেলা দেখতে আসবেন। রিংয়ের নিচে দাঁড়িয়ে আমাদের উৎসাহ দিয়ে যাবেন।’

ছেলের কথা শুনে আবেগ খেলে যায় খাজা আহমেদ বলীর মনে। কাঁধের গামছাটা হাতে তুলে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘না খেললেও যতদিন বাঁচি এখানে, এই বলীর মাঠ লালদীঘি ময়দানে ছুটে আসব। এটা থেকে দূরে থাকতে পারব না।’

খাজা আহমেদ যখন কথা বলছিলেন দূরে কোথাও তখন মাইকে বাজছিল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই অমর গান। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় অক্লান্ত গলায় গেয়ে চলেছেন, যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে...

;

চাকরি ছেড়ে বসের সামনেই ঢোল বাজিয়ে নাচলেন যুবক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নিত্যদিনের অফিসের কর্মপরিবেশে অনেকের মধ্যেই 'বিরক্তি' চলে আসে। তবুও ধৈয্য নিয়ে সব সহ্য করে টিকে থাকার জন্য চালিয়ে যান লড়াই। তবে এ যাত্রায় সকলের দ্বারা টিকে থাকা সম্ভব হয় না। অফিসের 'বিষাক্ত' কর্মপরিবেশে অনেকেই ভোগেন মানসিক সমস্যায় কিংবা ব্যক্তিজীবনে। এমন পরিবেশ থেকে বাঁচতে একেক জন একেক পন্থা অবলম্বন করে থাকেন।

তবে অনিকেত নামের এক যুবক এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে যা করেছেন নেট দুনিয়ায় তা রীতিমতো ভাইরাল। এসব থেকে মুক্তি পেতে চাকরিটাই ছেড়ে দিয়েছেন এই যুবক। এতেই ক্ষান্ত হননি তিনি, বসের সামনেই ঢাকঢোল বাজিয়ে নেচে উদযাপন করেছেন এমন মুহূর্তের।

ঘটনাটি ভারতের পুনে রাজ্যের। অনিকেত নামের ওই যুবক বিক্রয় সহযোগী হিসেবে চাকরি করতেন।

তার এমন উদযাপনের একটি ভিডিও ইন্সটাগ্রাম শেয়ার করেছেন অনীশ ভগত।

ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, গত তিন বছর ধরে এই কোম্পানির সাথে কাজ করেও বেতন খুব একটা বাড়েনি। এছাড়াও অফিসের বসের দ্বারাও তাকে বিভিন্ন সময়ে অপমানিত হতে হয়েছে।

তাই তার কাজের শেষ দিনে বন্ধুরা অফিসের বাইরে ঢোল নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন এবং নেচেছিলেন। ভিডিওতে দেখা গেছে, এ ঘটনায় তার বস অনেক উত্তেজিত হয়েছেন। পাশাপাশি তার বস লোকজনকে ধাক্কা দিয়েছেন এবং চিৎকারও করেছেন।

ভিডিওটির ক্যাপশনে ভগত লিখেছেন, আমি মনে করি আপনারা অনেকেই এর সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারবেন। আজকাল বিষাক্ত কাজের সংস্কৃতি খুব বেশি দেখা যায়। সম্মান এবং অধিকারের অভাব খুবই সাধারণ। অনিকেত তার পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। আমি আশা করি এই গল্প মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।

পোস্ট করা ভিডিওটি এক মিলিয়নেরও (১০ লাখের বেশি) বেশি ভিউ পেয়েছে। পোস্টটিতে অসংখ্য লাইক ও কমেন্টও রয়েছে।

একজন ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি জানি না কেন এটি আমাকে এত সন্তুষ্ট করেছে।'

আরেকজন লিখেছেন, 'নাচটি আমাকে অন্য মাত্রার তৃপ্তি দিয়েছে।'

'আপনি সত্যিই আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে ইতিবাচক এবং উত্সাহী ব্যক্তি'- তৃতীয় একজন ঠিক এভাবেই নিজের অনুভূতি জানিয়েছেন।

তথ্যসূত্র: হিন্দুস্থান টাইমস 

;

অভয়ারণ্যে মানুষ যখন বন্দিখাঁচায়



প্রমা কোয়েল, ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চিড়িয়াখানা, নানানরকম পশুপাখি ও প্রাণীর বন্দিশালা। কেবল রং-বেরঙের চিড়িয়াই নয়; বাঘ, সিংহ, ভালুক, বানর, গণ্ডারসহ কত বন্যপ্রাণীই না খাঁচায় বন্দি থাকে!

চিড়িয়াখানায় রাখতে বন্য প্রাণীদের প্রকৃতির স্বাধীন জীবন থেকে ছিনিয়ে আনা হয়। তাদের খাঁচায় বন্দি করা হয় যেন, মানুষ তাদের দেখে আনন্দ পায়। অনেক প্রাণীর জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি খাঁচাতেই কেটে যায়।

ছোট থেকে বড় সব বয়সের মানুষই চিড়িয়াখানায় ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন। শিশুরা না হয় অবুঝ! তবে যারা প্রাপ্তবয়স্ক তারাও চিড়িয়াখানায় এই বন্দি প্রাণীদের জীবনকে গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারেন না।

এশিয়ার বড় দেশ চীনে রয়েছে, এক অদ্ভুত চিড়িয়াখানা। চংকিংয়ে অবস্থিত সেই চিড়িয়াখানার নাম ‘লেহে লেদু বন্যপ্রাণী চিড়িয়াখানা’। একে ‘রিভার্স জু’ (বিপরীত চিড়িয়াখানা) বলেও ডাকা হয়।

এখানেও মানুষ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে পশু দেখতে আসেন। তবে একেবারেই ভিন্ন উপায়ে। মূলত, একটি খাঁচা রয়েছে, যেখানে মানুষদের সেই খাঁচায় পুরা হয়। তারপর সেই খাঁচাবন্দি মানুষদের নিয়ে রাখা হয়, অভয়ারণ্যে। সেখানে বন্য প্রাণীরা মানুষের খাঁচার চারপাশে অবাধে ঘুরতে থাকে। চিড়িয়াখানায় বন্দি প্রাণীদের বন্দিজীবনের এক প্রতীকী দৃশ্য!

অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষদের জন্য এটি এক নতুন অভিজ্ঞতা!

অভয়ারণ্যে খাঁচায় বন্দি মানুষ, ছবি-সংগৃহীত

খুব কাছে থেকে হিংস্র বন্যপ্রাণীদের মুক্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যেমন লোমহর্ষক, ঠিক তেমনই আতঙ্কজনকও হতে পারে। বিপরীতধর্মী এই চিড়িয়াখানাটি সবার জন্য প্রথম উন্মুক্ত করা হয়, ২০১৫ সালে। তখন বিশ্বের সংবদমাধ্যমের শিরোনাম কেড়েছিল এ চিড়িয়াখানাটি।

একটি শক্ত লোহার খাঁচাবেষ্টিত দর্শনার্থীদের একটি ট্রাকে তুলে অভয়ারণ্যে রেখে দেওয়া হয়। সেখানে তাদের ঘিরে ধরে ঘুরতে থাকে বাঘ, ভালুক, সিংহ ইত্যাদি হিংস্র প্রাণী।

এ বিষয়ে চিড়িয়াখানার প্রধান চ্যান লিয়াং বলেন, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা রক্ষার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। খাঁচার ফাঁকা অংশ দিয়ে হাতের আঙুলও বের না করার নির্দেশনা দেওয়া থাকে।

তবে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই চিড়িয়াখানাটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে অনেক। এর নৈতিকতা নিয়ে অনেকে প্রশ্নও তুলেছেন।

অনেকে মনে করেন, এরকম ব্যবস্থাপনায় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। কারণ, শিকারী প্রাণীগুলো প্রচণ্ড হিংস্র। তাই, সে কারণে যে কোনো সময় বিপজ্জনক ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

আবার এরকম চিন্তাভাবনার প্রশংসাও করেছেন অপর একটি পক্ষ। তাদের বক্তব্য, পৃথিবীটা কেবল মানুষদের নয়। প্রকৃতিতে সব প্রাণীদের একটা ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন। তাদের বন্দি করে রাখা মানুষের উচিত নয়। কারণ, মুক্ত প্রকৃতিতে বিরাজ করার অধিকার সব প্রাণীরই রয়েছে।

তাদের মন্তব্য, আমরা প্রাণীদের আবাসস্থল বনজঙ্গল সব উজাড় করেছি। সে কারণে তাপমাত্রাও অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। আবার প্রাণীদের বন্দি রেখে তাদের জীবন চরম দুর্বিষহ করে তুলি।

চাইলে এবং সুযোগ পেলে এই ধরনের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিতে চিড়িয়াখানাটি ঘুরে আসতে পারেন বৈকি!

তথ্যসূত্র: এনিমেল অ্যারাউন্ড দ্য গ্লোব

;

৫ বছরের শিশুর বিস্ময়কর প্রতিভা!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বয়স সবে ৫ কিংবা ৬। এই বয়সেই তার প্রতিভা দেখে অবাক হবে যে-কেউ!

গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সের (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভিডিওটি ১ মিলিয়নের (১০ লাখের বেশি) বেশি মানুষ দেখেছেন। খবর এনডিটিভি। 

ভিডিওতে রিলি নামের ওই শিশুটিকে প্রথমে শ্বাস নিতে দেখা যায়। তারপর সে একটি শক্তিশালী গর্জন দিয়ে শ্বাস ছাড়ে। ওই গর্জনটি হুবুহ সিংহের গর্জনের অনুরূপ।

রিলির মা অ্যামি ভিডিওটি এক্সে শেয়ারের পরই তা ভাইরাল হয়ে যায়। শিশুটির এমন নিখুত দক্ষতা দেখে মুগ্ধ দর্শকরা। ভিডিওটিতে অনেকেই নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, এত অল্প বয়সে এমন বাস্তবসম্মত গর্জন তৈরি করার রিলির ক্ষমতার বিস্ময় প্রকাশ করে।

আরেকজন লিখেছেন, শিশুরা খুব দ্রুত শিখে। তার এমন প্রতিভা সত্যিই অবাক করার মতো।

;