ঢাকা অভিমুখে ছুটছে অ্যাম্বুলেন্স



আনিসুর বুলবুল
গ্রাম থেকে ছুটছে ঢাকায়, মহাসড়কে বাজছে সাইরেন। ছবি: মো. হাসান, বার্তা২৪

গ্রাম থেকে ছুটছে ঢাকায়, মহাসড়কে বাজছে সাইরেন। ছবি: মো. হাসান, বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলা ব্রিজ চেকপোস্ট এলাকায় ডিউটি করছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ সার্জেন্ট মুহাম্মদ সোহরাব হুসাইন। তিনি বললেন, আজ আবহাওয়া খারাপ থাকার পরও একটু পর পরই সাইরেন বাজিয়ে অ্যাম্বুলেন্সগুলো ঢাকা অভিমুখে ছুটছিল। সবগুলোর ভেতরেই রোগী-স্বজন। সবার মুখেই আতঙ্কের ছাপ।

শুধু রাজধানীর এই বছিলা ব্রিজ চেকপোস্ট নয়, ঢাকার প্রবেশদ্বার গাবতলী, ডেমরা, আব্দুল্লাহপুর ও সাইনবোর্ড এলাকার চেকপোস্টেরও একই অবস্থা। দেশের বিভিন্ন স্থানে থেকে সাইরেন বাজিয়ে রাজধানী অভিমুখে ছুটে আসছে অ্যাম্বুলেন্স। ছুটে আসছেন মুমূর্ষু রোগীরা। এসব রোগীদের বড় অংশ করোনা আক্রান্ত। তবে কিডনি, হার্ট ফেইলিওরসহ অন্যান্য রোগীও ছিলেন।

 

ঢাকায় কোভিড রোগী আসছে বেশি বাইরে থেকে। ছবি: বার্তা২৪

 

আজ শুক্রবার (৩০ জুলাই) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত রাজধানীর সাইনবোর্ড চেকপোস্ট এলাকা পার হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করেছে ৩০টি অ্যাম্বুলেন্স, বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত মোহাম্মদপুরের বছিলা চেকপোস্ট পার হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করেছে ১২টি অ্যাম্বুলেন্স, দুপুর ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত গাবতলী চেকপোস্ট দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করেছে প্রায় ২৫টি অ্যাম্বুলেন্স।

সঙ্কটাপন্ন বা গুরুতর রোগীরা জেলা বা বিভাগীয় শহরে চিকিৎসাসেবা না পেয়ে ছুটে আসছেন ঢাকায়। একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স এসে রাজধানীর কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোর সামনে করছে ভিড়। ঢাকার সরকারি কোনো হাসপাতালে আইসিইউ বেড খালি নেই। বাইরে থেকে ঢাকায় এসে রোগীরা ঘুরছেন সেই অ্যাম্বুলেন্সে অ্যাম্বুলেন্সে। হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে। হাসপাতালগুলো রোগীতে ঠাসা। আগের রোগী ছাড়া পেলেই কেবল নতুন রোগী ভর্তি সম্ভব। চিকিৎসকরাও রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

 

শহরে-গ্রামে এখন শুধু অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন। ছবি: বার্তা২৪

 

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, দেশের অর্ধেক জেলায় আইসিইউ নেই। উপজেলা হাসপাতালগুলোতে জনবল সংকটে চিকিৎসা সেবার বেহাল দশা বিরাজ করছে। বিভাগীয় হাসপাতালগুলোতে সক্ষমতার বাইরে চলে গেছে রোগী। অনেক হাসপাতালে অক্সিজেনের সংকট দেখা দিয়েছে। রোগীরা জেলা-উপজেলায় চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ঢাকায় ছুটছে। সারাদেশ থেকে এভাবে ঢাকায় রোগী আসা অব্যাহত থাকলে সামনে মহাবিপদ অপেক্ষা করছে।

মোহাম্মদপুরের বছিলা ব্রিজ চেকপোস্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সার্জেন্ট সোহরাব হুসাইন বলেন, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি অ্যাম্বুলেন্সের যাতায়াত চোখে পড়ছে। আজ শুক্রবার আবহাওয়া খারাপ থাকার পরও বসিলা চেকপোস্ট দিয়ে মাত্র দুই ঘণ্টায় ১২টি অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। 

তিনি বলেন, কিছুক্ষণ আগেও (বিকাল ৫টা) আব্দুল জলিল (৬৮) নামের একজন কোভিড রোগীকে কুর্মিটোলা হাসপাতালের উদ্দেশে যেতে দেখেছি। তাকে নবাবগঞ্জ মুক্তি ক্লিনিক থেকে রেফার্ড করেছে। তার অবস্থা খুব একটা ভালো ছিলো না।

 

রোগী নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে এইসব অ্যাম্বুলেন্স আসে কাঙ্ক্ষিত হাসপাতালে। ছবি: বার্তা২৪

 

এদিকে বার্তা২৪-এর ফটোগ্রাফার মো. হাসান বলেন, মাত্র তিন ঘণ্টায় ৩০টি অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় প্রবেশ করতে দেখেছি। আর কয়েকটি ঢাকা ছেড়ে যেতে দেখেছি। সবগুলোর মধ্যেই রোগী ছিলেন। এদের মধ্যে আল-আমিন (৩৫) কুমিল্লা থেকে ঢাকা মেডিক্যালের উদ্দেশে এসেছেন, কাকলি (২৯) ফেনী থেকে মুগদা হাসপতালের উদ্দেশে আর বকুল (৪৫) সোনারগাঁ থেকে ঢাকা মেডিক্যালের উদ্দেশে এসেছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর মিরপুর, ভাষাণটেক, ধানমন্ডি, আসাদগেট ও শ্যামলীর সড়কে বের হলেই চোখে পড়ছে রোগী অথবা লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সের চলাচল। এসব এলাকায় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সামনেও অ্যাম্বুলেন্সের উপস্থিতি বেড়েছে। এসব এলাকার বাসা থেকেও অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দ শোনা যায়।

উত্তর ভাষাণটেকের বাগানবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সেলিনা আফরোজ বলেন, রাস্তার পাশেই বাসা। আগে এতো অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দ কানে আসতো না। এখন এতো এতো শব্দ কানে আসে যে মাঝে মধ্যে আঁতকে উঠতে হয়। গভীর রাতে সাইরেনের শব্দকে মনে হয় অ্যাম্বুলেন্স কান্না করছে।

 

সাইরেন বাজিয়ে ছুটে মুমূর্ষু রোগীরা। ছবি: বার্তা২৪

 

বাংলাদেশ সোসাইটি অব এনেসথেসিওলজিস্টের সভাপতি অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বণিক গণমাধ্যমকে বলেছেন, করোনা রোগীদের আইসিইউ পর্যন্ত যাতে যেতে না হয় সেই উদ্যোগ নিতে হবে। উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা সঠিক সময়ে পেলে করোনা রোগীদের আইসিইউয়ের কোনো প্রয়োজন হয় না। বর্তমানে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যন্ত হাসপাতালগুলো পুরোপুরি সচল থাকলে করোনা রোগীদের উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। তবে জনবল সংকটে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার বেহাল দশা বিরাজ করছে। জনবল নিয়োগ নিয়ে এগুলো সচল করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, মে মাসের মাঝামাঝি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ কমিটি সীমান্ত জেলাগুলোতে লকডাউনের সুপারিশ করেছিল। কিন্তু সরকার তা আমলে নেয়নি। এরপর ধাপে ধাপে বিস্তার ঘটিয়ে সংক্রমণ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ঈদের সময় বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। এতে সংক্রমণের আরও বিস্তার ঘটে। এখন প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজারের ওপরে আক্রান্ত এবং দুইশর বেশি রোগী মৃত্যুবরণ করছেন। হাসপাতালে শয্যা মিলছে না। পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। সুতরাং জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে চিকিৎসাসুবিধা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিতে হবে।

 

জেলা বা বিভাগীয় শহরে চিকিৎসাসেবা না পেয়ে রোগী আসছে ঢাকায়। ছবি: বার্তা২৪

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে তাতে হাসপাতালে রোগীর শয্যা পাওয়া দুস্কর হয়ে পড়বে। প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজার মানুষ আক্রান্ত হলে আগামী ১০ দিনে সংখ্যাটি দেড় লাখ হবে। তাদের মধ্যে ১০ শতাংশ মানুষের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন পড়লেও শয্যা দেওয়া সম্ভব হবে না। তখন ভারতের মতো অবস্থার সৃষ্টি হবে। রোগী বাড়লে চিকিৎসা না পেয়েই হয়তো মৃত্যুবরণ করতে হবে। কারণ ইতোমধ্যে ৭৫ শতাংশের মতো শয্যা পূরণ হয়ে গেছে। রোগী বাড়তে থাকলে বাকি শয্যাও পূর্ণ হয়ে যাবে। এই মুহূর্তে প্রয়োজন জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ করা। সেটি না হলে বিপর্যয় ঘটতে পারে।

দেশে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২০ হাজার ২৫৫ জন মানুষ। এরমধ্যে পুরুষ ১৩ হাজার ৭৫০ জন এবং মহিলা ৬ হাজার ৫০৫ জন। যা অদ্যবধি শতকরা হিসেবে যথাক্রমে ৬৭.৮৮ শতাংশ ও ৩২.১২ শতাংশ। করোনা আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন ঢাকা বিভাগে ৯ হাজার ৩৪৯ জন। এরপর চট্টগ্রামে ৩ হাজার ৭৫৩ জন, খুলনায় ২ হাজার ৬৯০ জন, রাজশাহীতে ১ হাজার ৫৬১ জন, রংপুরে ১ হাজার জন, সিলেটে ৭৩৬ জন, বরিশালে ৬৩৫ জন এবং ময়মনসিংহে ৫৩১ জন।

এছাড়া দেশে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ২৬ হাজার ২৫৩ জন। এরমধ্যে ঢাকা বিভাগের বাসিন্দাই ৭ লাখ ৪২ হাজার ৩৭৬ জন। এরপর চট্টগ্রামে ১ লাখ ৭৩ হাজার ১৩৪ জন, খুলনায় ৯১ হাজার ৪০০ জন, রাজশাহীতে ৮১ হাজার ৪৩৯ জন, রংপুরে ৪৩ হাজার ৯ জন, সিলেটে ৩৭ হাজার ৮২৮ জন, বরিশালে ৩২ হাজার ১২৫ জন এবং ময়মনসিংহে ২৪ হাজার ৯৪২ জন।

   

এক ঘরেই তিন বলী



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

  • Font increase
  • Font Decrease

চুল থেকে দাড়ি-সবই সফেদ। হাঁটাচলায় মন্থর। স্বাভাবিকভাবেই প্রবীণের বয়সটা আঁচ করা যায় প্রথম দেখাতেই। কিন্তু তার ষাটোর্ধ্ব বয়সটা যেন কেবল ক্যালেন্ডারের হিসাব। বয়স যতই ছোবল বসানোর চেষ্টা করুক না কেন-তিনি যেন এখনো ২৫ এর টগবগে তরুণ। সেই বলেই তো ফুসফুসের রোগবালাইকে তুড়ি মেরে ঐতিহাসিক আবদুল জব্বারের বলীখেলা এলেই হাজির হয়ে যান রিংয়ে। এক দুবার নয়, এবার কিনা পূর্ণ হলো সুবর্ণজয়ন্তী!

চট্টগ্রামের অন্যতম আবেগের ঠিকানা ঐতিহাসিক এই বলীখেলার বড় বিজ্ঞাপন হয়ে ওঠা এই বলীর নাম খাজা আহমদ বলী। ৫০ বছর ধরে বলীখেলায় অংশ নিয়ে দর্শকদের আনন্দ দিয়ে যাওয়া এই বলীর এখন পড়ন্ত বয়স। ফুসফুসে বাসা বেঁধেছে রোগ। কানেও শোনেন কম। খাজা আহমদ বুঝে গিয়েছেন, তার দিন ফুরাচ্ছে। কিন্তু তিনি যে বলীখেলার স্মৃতি থেকে সহজেই মুছে যেতে চান না। সেজন্যই উত্তরসূরী হিসেবে এরই মধ্যে গড়ে তুলেছেন নিজের দুই ছেলেকে। বাবার পাশাপাশি দুই ভাইও এখন বলীখেলার নিয়মিত প্রতিযোগী।

খাজা আহমেদ বলীর বাবাও বলীখেলায় অংশ নিতেন। বাবার সঙ্গে বলীখেলায় এসে ১৯৭৪ সালে শখের বসে খেলতে নামেন খাজা আহমেদও। বয়স তখন ১২ বছরের আশপাশে। সেই শুরু, আর কোনোদিন মিস করেননি বলীখেলায় অংশ নেওয়া। একবার চ্যাম্পিয়নের গৌরবও অর্জন করেছিলেন। বহু বছর ধরে খাজা আহমেদ বলী ও সত্তরোর্ধ্ব মফিজুর রহমানের ‘বলীযুদ্ধ’ জব্বারের বলীখেলার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে এই দ্বৈরথ হয়তো আর দেখা যাবে না। দুই বছর আগে উৎপত্তি হওয়া ফুসফুসের রোগটা ইদানিং যে খাজা আহমদকে বেশিই ভোগাচ্ছে। সেজন্য গতবছর অবসরের ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এবার দুই ছেলেকে নিয়ে বলীখেলায় এসে আবেগ সামলাতে পারেননি খাজা আহমেদ। ছেলেদের সঙ্গে নিজেও নেমে পড়েন রিংয়ে। সেজন্য আরও একবার মফিজুর রহমান-খাজা আহমেদের লড়াই দেখল হাজারো দর্শক। যদিওবা যৌথ বিজয়ী ঘোষণা করে দুজনের মুখেই হাসি ফুটিয়েছেন রেফারি।

প্রতিপক্ষ মফিজুর রহমানের সঙ্গে বলী-যুদ্ধে খাজা আহমদ

কেন অবসর ভাঙলেন এমন প্রশ্নে হাসি খেলা করে যায় খাজা আহমেদ বলীর মুখে। বলতে থাকেন, ‘বয়সের কারণে শরীর দস্ত। ফুসফুসও ঠিকঠাক কাজ করছে না। সেজন্য অবসর নিয়েছিলাম। কিন্তু বলীখেলায় আসার পর দেখলাম দর্শকেরা সবাই অনুরোধ করছেন। সেজন্য মন বলল, না খেললে দর্শকদের প্রতি অন্যায় হবে। আর আবেগ ও ভালোবাসার কাছে বয়স-রোগ পেরেছে কবে?’

তবে এখানেই সব শেষ, বলে দিয়েছেন খাজা আহমেদ বলী। বলেছেন, ‘বয়স হয়ে গেছে। মনে হয় না আর খেলতে পারব। অসুখটা বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে। সেজন্য মনে মনে মেনে নিয়েছি এটাই আমার শেষ অংশগ্রহণ। বাকিটা আল্লাহর হাতে।’

তিন ছেলে ও এক মেয়ের বাবা খাজা আহমদের বাড়ি চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায়। কৃষিকাজ করেই চলে সংসার। তবে বলীখেলা এলে সব কাজ বাধ। কয়েকদিন ধরে চলে প্রস্তুতি। নিজের স্মৃতি ধরে রাখতে এরই মধ্যে খাজা আহমেদ নিজের দুই ছেলেকে গড়ে তুলেছেন বলী হিসেবে। ২০১২ সাল থেকে বলীখেলায় নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন তার বড় ছেলে মো. সেলিম। গত বছর থেকে যোগ দিয়েছেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। এখন বলীখেলার আগে দুই ছেলেকে নিয়ে চলে খাজা আহমদের প্রস্তুতি।

জানতে চাইলে সেলিম বলেন, ‘বাবার কাছ থেকে আমরা বলীখেলা শিখেছি। বয়সের কারণে বাবা এখন অসুস্থ। হয়তো আর খেলা হবে না। সেজন্য তার উত্তরসূরী হিসেবে আমরা বলীখেলায় অংশ নেব সামনের দিনগুলোতে। এটা শুধু পরিবারের বলীর প্রজন্ম ধরে রাখার জন্য নয়, তরুণদের মাদক-সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেকে দূরে রাখতে উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগও।’

বাবাকে পাশে রেখে একই কথা বললেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। বলেন, ‘হয়তো বাবা আর খেলবেন না। তবে তিনি না খেললেও যতদিন বেঁচে থাকবেন বলীখেলা দেখতে আসবেন। রিংয়ের নিচে দাঁড়িয়ে আমাদের উৎসাহ দিয়ে যাবেন।’

ছেলের কথা শুনে আবেগ খেলে যায় খাজা আহমেদ বলীর মনে। কাঁধের গামছাটা হাতে তুলে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘না খেললেও যতদিন বাঁচি এখানে, এই বলীর মাঠ লালদীঘি ময়দানে ছুটে আসব। এটা থেকে দূরে থাকতে পারব না।’

খাজা আহমেদ যখন কথা বলছিলেন দূরে কোথাও তখন মাইকে বাজছিল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই অমর গান। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় অক্লান্ত গলায় গেয়ে চলেছেন, যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে...

;

চাকরি ছেড়ে বসের সামনেই ঢোল বাজিয়ে নাচলেন যুবক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নিত্যদিনের অফিসের কর্মপরিবেশে অনেকের মধ্যেই 'বিরক্তি' চলে আসে। তবুও ধৈয্য নিয়ে সব সহ্য করে টিকে থাকার জন্য চালিয়ে যান লড়াই। তবে এ যাত্রায় সকলের দ্বারা টিকে থাকা সম্ভব হয় না। অফিসের 'বিষাক্ত' কর্মপরিবেশে অনেকেই ভোগেন মানসিক সমস্যায় কিংবা ব্যক্তিজীবনে। এমন পরিবেশ থেকে বাঁচতে একেক জন একেক পন্থা অবলম্বন করে থাকেন।

তবে অনিকেত নামের এক যুবক এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে যা করেছেন নেট দুনিয়ায় তা রীতিমতো ভাইরাল। এসব থেকে মুক্তি পেতে চাকরিটাই ছেড়ে দিয়েছেন এই যুবক। এতেই ক্ষান্ত হননি তিনি, বসের সামনেই ঢাকঢোল বাজিয়ে নেচে উদযাপন করেছেন এমন মুহূর্তের।

ঘটনাটি ভারতের পুনে রাজ্যের। অনিকেত নামের ওই যুবক বিক্রয় সহযোগী হিসেবে চাকরি করতেন।

তার এমন উদযাপনের একটি ভিডিও ইন্সটাগ্রাম শেয়ার করেছেন অনীশ ভগত।

ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, গত তিন বছর ধরে এই কোম্পানির সাথে কাজ করেও বেতন খুব একটা বাড়েনি। এছাড়াও অফিসের বসের দ্বারাও তাকে বিভিন্ন সময়ে অপমানিত হতে হয়েছে।

তাই তার কাজের শেষ দিনে বন্ধুরা অফিসের বাইরে ঢোল নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন এবং নেচেছিলেন। ভিডিওতে দেখা গেছে, এ ঘটনায় তার বস অনেক উত্তেজিত হয়েছেন। পাশাপাশি তার বস লোকজনকে ধাক্কা দিয়েছেন এবং চিৎকারও করেছেন।

ভিডিওটির ক্যাপশনে ভগত লিখেছেন, আমি মনে করি আপনারা অনেকেই এর সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারবেন। আজকাল বিষাক্ত কাজের সংস্কৃতি খুব বেশি দেখা যায়। সম্মান এবং অধিকারের অভাব খুবই সাধারণ। অনিকেত তার পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। আমি আশা করি এই গল্প মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।

পোস্ট করা ভিডিওটি এক মিলিয়নেরও (১০ লাখের বেশি) বেশি ভিউ পেয়েছে। পোস্টটিতে অসংখ্য লাইক ও কমেন্টও রয়েছে।

একজন ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি জানি না কেন এটি আমাকে এত সন্তুষ্ট করেছে।'

আরেকজন লিখেছেন, 'নাচটি আমাকে অন্য মাত্রার তৃপ্তি দিয়েছে।'

'আপনি সত্যিই আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে ইতিবাচক এবং উত্সাহী ব্যক্তি'- তৃতীয় একজন ঠিক এভাবেই নিজের অনুভূতি জানিয়েছেন।

তথ্যসূত্র: হিন্দুস্থান টাইমস 

;

অভয়ারণ্যে মানুষ যখন বন্দিখাঁচায়



প্রমা কোয়েল, ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চিড়িয়াখানা, নানানরকম পশুপাখি ও প্রাণীর বন্দিশালা। কেবল রং-বেরঙের চিড়িয়াই নয়; বাঘ, সিংহ, ভালুক, বানর, গণ্ডারসহ কত বন্যপ্রাণীই না খাঁচায় বন্দি থাকে!

চিড়িয়াখানায় রাখতে বন্য প্রাণীদের প্রকৃতির স্বাধীন জীবন থেকে ছিনিয়ে আনা হয়। তাদের খাঁচায় বন্দি করা হয় যেন, মানুষ তাদের দেখে আনন্দ পায়। অনেক প্রাণীর জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি খাঁচাতেই কেটে যায়।

ছোট থেকে বড় সব বয়সের মানুষই চিড়িয়াখানায় ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন। শিশুরা না হয় অবুঝ! তবে যারা প্রাপ্তবয়স্ক তারাও চিড়িয়াখানায় এই বন্দি প্রাণীদের জীবনকে গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারেন না।

এশিয়ার বড় দেশ চীনে রয়েছে, এক অদ্ভুত চিড়িয়াখানা। চংকিংয়ে অবস্থিত সেই চিড়িয়াখানার নাম ‘লেহে লেদু বন্যপ্রাণী চিড়িয়াখানা’। একে ‘রিভার্স জু’ (বিপরীত চিড়িয়াখানা) বলেও ডাকা হয়।

এখানেও মানুষ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে পশু দেখতে আসেন। তবে একেবারেই ভিন্ন উপায়ে। মূলত, একটি খাঁচা রয়েছে, যেখানে মানুষদের সেই খাঁচায় পুরা হয়। তারপর সেই খাঁচাবন্দি মানুষদের নিয়ে রাখা হয়, অভয়ারণ্যে। সেখানে বন্য প্রাণীরা মানুষের খাঁচার চারপাশে অবাধে ঘুরতে থাকে। চিড়িয়াখানায় বন্দি প্রাণীদের বন্দিজীবনের এক প্রতীকী দৃশ্য!

অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষদের জন্য এটি এক নতুন অভিজ্ঞতা!

অভয়ারণ্যে খাঁচায় বন্দি মানুষ, ছবি-সংগৃহীত

খুব কাছে থেকে হিংস্র বন্যপ্রাণীদের মুক্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যেমন লোমহর্ষক, ঠিক তেমনই আতঙ্কজনকও হতে পারে। বিপরীতধর্মী এই চিড়িয়াখানাটি সবার জন্য প্রথম উন্মুক্ত করা হয়, ২০১৫ সালে। তখন বিশ্বের সংবদমাধ্যমের শিরোনাম কেড়েছিল এ চিড়িয়াখানাটি।

একটি শক্ত লোহার খাঁচাবেষ্টিত দর্শনার্থীদের একটি ট্রাকে তুলে অভয়ারণ্যে রেখে দেওয়া হয়। সেখানে তাদের ঘিরে ধরে ঘুরতে থাকে বাঘ, ভালুক, সিংহ ইত্যাদি হিংস্র প্রাণী।

এ বিষয়ে চিড়িয়াখানার প্রধান চ্যান লিয়াং বলেন, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা রক্ষার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। খাঁচার ফাঁকা অংশ দিয়ে হাতের আঙুলও বের না করার নির্দেশনা দেওয়া থাকে।

তবে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই চিড়িয়াখানাটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে অনেক। এর নৈতিকতা নিয়ে অনেকে প্রশ্নও তুলেছেন।

অনেকে মনে করেন, এরকম ব্যবস্থাপনায় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। কারণ, শিকারী প্রাণীগুলো প্রচণ্ড হিংস্র। তাই, সে কারণে যে কোনো সময় বিপজ্জনক ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

আবার এরকম চিন্তাভাবনার প্রশংসাও করেছেন অপর একটি পক্ষ। তাদের বক্তব্য, পৃথিবীটা কেবল মানুষদের নয়। প্রকৃতিতে সব প্রাণীদের একটা ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন। তাদের বন্দি করে রাখা মানুষের উচিত নয়। কারণ, মুক্ত প্রকৃতিতে বিরাজ করার অধিকার সব প্রাণীরই রয়েছে।

তাদের মন্তব্য, আমরা প্রাণীদের আবাসস্থল বনজঙ্গল সব উজাড় করেছি। সে কারণে তাপমাত্রাও অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। আবার প্রাণীদের বন্দি রেখে তাদের জীবন চরম দুর্বিষহ করে তুলি।

চাইলে এবং সুযোগ পেলে এই ধরনের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিতে চিড়িয়াখানাটি ঘুরে আসতে পারেন বৈকি!

তথ্যসূত্র: এনিমেল অ্যারাউন্ড দ্য গ্লোব

;

৫ বছরের শিশুর বিস্ময়কর প্রতিভা!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বয়স সবে ৫ কিংবা ৬। এই বয়সেই তার প্রতিভা দেখে অবাক হবে যে-কেউ!

গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সের (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভিডিওটি ১ মিলিয়নের (১০ লাখের বেশি) বেশি মানুষ দেখেছেন। খবর এনডিটিভি। 

ভিডিওতে রিলি নামের ওই শিশুটিকে প্রথমে শ্বাস নিতে দেখা যায়। তারপর সে একটি শক্তিশালী গর্জন দিয়ে শ্বাস ছাড়ে। ওই গর্জনটি হুবুহ সিংহের গর্জনের অনুরূপ।

রিলির মা অ্যামি ভিডিওটি এক্সে শেয়ারের পরই তা ভাইরাল হয়ে যায়। শিশুটির এমন নিখুত দক্ষতা দেখে মুগ্ধ দর্শকরা। ভিডিওটিতে অনেকেই নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, এত অল্প বয়সে এমন বাস্তবসম্মত গর্জন তৈরি করার রিলির ক্ষমতার বিস্ময় প্রকাশ করে।

আরেকজন লিখেছেন, শিশুরা খুব দ্রুত শিখে। তার এমন প্রতিভা সত্যিই অবাক করার মতো।

;