হাকালুকি হাওরের বৃষ্টিদিন



মোস্তফা মহসীন 
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

হাওরের হৃদয়কাড়া রূপে চীনা পর্যটক হিউয়েন সাং বিমোহিত হয়েছিলেন। আমেরিকার সাবেক রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা হাওরকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘উড়াল পঙ্খির দেশ‘ বলে। প্রাচীন গ্রন্থসম্ভারের পসরা খুলে বসলে আপনার মনোজগতে পূর্ববঙ্গ হয়ে যাবে এক ‘উড়াল পঙ্খির দেশ’। উপরে নীল আকাশ আর নীচে অথৈ স্বচ্ছ জলরাশির সরোবর…জলের উপর বয়ে চলেছে ছো্ট, বড়, মাঝারি নানা সাইজ ও মাত্রার নৌকা। জলরাশির মধ্যে নিমজ্জিত না হয়েও জেগে ওঠা হিজল, করচ, কলমিতে জলকেলি করতে করতে আপনি হয়তো পেয়ে যাবেন নয়নকাড়া সবুজ জলজ বনের রাজ্য এক। কোনো এক ভরদুপুরে বিস্মিত হতে হতে আপনি হয়তো ভাববেন; এই বনের রাজাধিরাজ তাহলে কোথায়?

লেখকের ফ্যামিলি

এশিয়ায় সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ হাওর বোধহয় ‘হাকালুকি হাওর’। কেননা পূর্বে পাথারিয়া ও মাধব পাহাড় এবং পশ্চিমে ভাটেরা পাহাড় পরিবেষ্টিত হাকালুকি হাওর মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার পাঁচটি উপজেলায় বিস্তৃত হয়ে তার রূপের নহর ছুটিয়েছে। বলা হয় কুলাউড়া অঞ্চলে এই হাওর মেলে ধরেছে তার রূপের ১৫ ভাগ শান-শওকত। আমরা এক্ষণে আছি যে অঞ্চলে, এখানে নাকি হাওরের সৃজনশীল রূপ সবচেয়ে বেশি প্রতিভাত। কুলাউড়া এটা শুধু জল, জোছনা, চা বাগানের ছায়াঘেরা শহরই নয় দেশের অন্যতম সীমান্ত শহরও; যার একবাহু জুড়ে ত্রিপুরা প্রদেশ। এখানে শহর ছাড়িয়ে অনতিদূরে গ্রামের লোকেরা লোকগানের পসরা নিয়ে বসেন। তাদের কণ্ঠে হাছন রাজা, রাধারমণ, শাহ আব্দুল করিম সম্প্রীতির বন্ধনে লীন হয়ে অমরত্বের ঠিকানা খুঁজে নেয়।

হাওরের অতিথি পাখি

কেমন যেন অন্যমনস্কতার ভেতর বয়ে যাচ্ছে নিঃশব্দ মর্মর এক। এই ভরা বর্ষায় পরিবার সমেত আমরা বেরিয়েছি….পাহাড় ও ঝরনার সাথে যাকে আমরা আমাদের অধিকতর নিকটতম প্রতিবেশী বলেই জানি; সেই ‘হাকালুকি হাওর’ দর্শনে। যাত্রাসঙ্গী আমার পুত্রও দেখছে চঞ্চল স্বচ্ছ জলের গোলক ধাঁধা, প্রশ্নোত্তর না পেয়ে তার শিশুমনে যখনই ধরা পড়ছে বাউলিয়ানা; মাঝি যেন তখনই ছোটালেন সিলেটী লোকগীতির এক হৃদয়-বিস্ফোরণ: 

হাওরের পদ্মফুল

কারে দেখাব মনের দুঃখ গো আমার বুক চিরিয়া

অন্তরে তুষেরই আগুন জ্বলে রইয়া রইয়া

কারে দেখাব মনের দুঃখ গো আমার বুক চিরিয়া

অন্তরে তুষেরই আগুন জ্বলে রইয়া রইয়া

আমার অন্তরে তুষেরই আগুন জ্বলে রইয়া রইয়া।

দুর্লভ রানিমাছ

হাওরের বালিহাঁস ঠোঁটের আগায় বয়ে বেড়াচ্ছে বিশ্বপ্রাণের স্পর্শরস। শরশর শিশুকঞ্চিপাতা যেন রোদের সাথে বাজিগর সাজে। মনের ভেতর প্লাবন আনতে ছুটছি ভাটিস্রোতে…। হরিৎসন্ধানী চোখে অরণ্যঘ্রাণের আদিম- মৃগয়া। সংস্কৃত শব্দ ‘সাগর’ থেকে ‘হাওর‘ শব্দের উৎপত্তি বলে গণমানুষের ধারণা। কালক্রমে হাওর শব্দের উৎপত্তি হয়েছে এভাবে সাগর-সাওর-হাওর। পুরো সিলেট বিভাগটাই চা বাগান, পাহাড়, মনোলোভা প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের সাথে হাওর অঞ্চল হিসাবেও জনপ্রিয়। সেই অর্থে আমরা সৌভাগ্যবান যে হাওরের ভূমিপুত্র আমরা। সুতরাং চিত্ত মেলে দিয়ে হাওরের রূপে মত্ত হয়ে লুটোপুটি খাবো না; এটা কি হয়! শুধুমাত্র হাকালুকি হাওরই নয়; বঙ্গভূমিতে টাঙুয়ার হাওর, শনির হাওর, টগার হাওর, মাটিয়ান হাওর, দেখার হাওর, হালির হাওর, সানুয়াডাকুয়া হাওর, শৈলচকরা হাওর, বড় হাওর, হৈমান হাওর, কড়চা হাওর, ধলা পাকনা হাওর, আঙ্গরখালি হাওর, নখলা হাওর, চন্দ্রসোনার থাল হাওর, ডিঙ্গাপুতা হাওর…. বাংলার রূপে ডানা মেলেছে আরও কত কত নাম।

শারমিন বলেছিলো কোনো একদিন; ধরো লোকালয়ের শব্দপুঞ্জে যদি কখনো তোমার বিরক্তি আসে, নৈশঃব্দ্যপ্রিয়তাকে আলিঙ্গন করতে এক ভরা বর্ষায় হাওরের শান্ত জলের সাথে প্রশান্ত বৃষ্টির জল একিভূত করে ধুয়ে নিও তোমার বিহ্বল মন! বর্ষাকে অন্তরে স্থায়ী রূপ দিতে তাই আজকের এই নৌ- বিহার।

ওয়াচ টাওয়ার

হাকালুকি হাওরের এই পূর্বদিক থেকে সূর্যাস্তও নাকি দারুণ উপভোগ্য। ডিঙ্গি নৌকার মাঝি ধীরে ধীরে জিরো পয়েন্টের দিকে যাচ্ছেন। জানালেন, এখনই শুরু হবে মাছ এবং নানা জাতের পাখির মেলা। মাছগুলোও লম্ফঝম্প করে ক্রীড়া প্রদর্শন করে হঠাৎ করে নৌকার পাশে বিপরীত দিকে হারিয়ে যাচ্ছে। অতিদূরে দেখা যায়, বিশাল বিশাল মহিষের পাল নিয়ে গ্রামের পথে রাখালেরা ছুটছেন। কোনো কোনো রাখাল মহিষের মুথে তুলে দিচ্ছেন ঘাস। দেশ এবং এশিয়ার বৃহত্তম এই হাওর, যাকে আমরা একই সাথে জানি দেশের অন্যতম বৃহৎ মিঠা পানির জলাভূমি বলেও। এখানে যে জায়গায় জলের গভীরতা একটু বেশি; সেখানে ডানপিঠে ছেলে মেয়েরা ডুবিয়ে ডুবিয়ে দিনান্তের লাফালাফিতে সেকি মত্ত! আরোও খানিকটা সীমিত জলে দেখা গেল ভেসে বেড়াচ্ছে হাঁসের পাল।

হাওরে নৌকায় ফ্যামিলি নিয়ে লেখক

শীত মৌসুমে পরিযায়ী পাখিদের আগমনে হাওর যেন পরিণত হয় স্বর্গোদ্যানে। আর এ সময় অতিথি পাখিদের সাথে মিতালি গড়তে ক্যামেরা ট্রাইপড নিয়ে মানুষের জনঘনত্বও বাড়ে হাওর পারে। তবে বর্ষা মওসুমেও দেখা পেলাম বেশ কিছু অতিথি পাখির।

ছোট-বড় ২৪০ টি বিল ও ছোট-বড় ১০ টি নদীর মেলবন্ধন। হাওরের নীলাকাশে সাদা মেঘের গল্পে ভেসে যায় বিষণ্ন বৃষ্টিরেখা। জলের ভেতর উঁকি দেয় আইড়, চিতল, বাউশ, পাবদা, মাগুর, শিং, কৈসহ আরও নানা প্রজাতির দেশীয় বিলুপ্তি পথের মাছগুলো। চারিধারে জেগে থাকা সবুজ ঘাসের গালিচায় মোড়া কিঞ্চিত উঁচুভূমি বিলের পানিতে প্রতিচ্ছবি ফেলে সৃষ্টি করে অপরূপ দৃশ্যকল্পের। বোরো ধানের ফাঁকা মাঠে সুখের পরশ।

পাখিকুলের সাথে বাউলগানের মুখরতায় তৃপ্তি নিতে নিতে গোধূলিবেলায় আকাশকে পরখ করি। ভাটি বাংলার রূপে আচ্ছন্ন শারমিনের ঘোর কাটতে কিছুটা দেরি হয়। রোদ ঝলমল আকাশের চেয়ে মেঘে ধৌত আকাশটাই কেন জানি তার বেশি পছন্দ!

ভাবছি, ডিনার হিসাবে পূর্বেই প্রস্তুতকৃত ডিমভুনা, খিচুড়ির কথা। এরজন্যই কি সে বাসায় ফিরতে তেমন তাড়না অনুভব করছে না? নদী বাওয়া বাতাস, ঠান্ডা ভিজে মাটি নৌকার মাঝি সবরু খাঁকেও এতক্ষণে রোমাঞ্চিত করে তুলেছে। তিনি বেশ আয়েশি ভঙ্গিতে কোমরে থাকা ডার্বি সিগারেটের প্যাকেট খুললেন।

রোঁয়া ওঠা নরম ফুল নৌকা থেকে কচি হাতে কুঁড়িয়ে বেশ বিনোদিত আমার পুত্র। আমার শৈশবকে মনে করিয়ে দেয়! মনের মাঝে বেঘোরে ঘুমিয়ে থাকা সেই শিশুটিও যেন কঁকিয়ে ওঠে,হাত-পা নাড়ে। কিছু একটা হারিয়ে ফেলে খুঁজে পাওয়ার উল্লাসে লিখে ফেললাম- আস্ত একটি কবিতা! নাম- ‘হাওরের দাগ‘।

কৈশোরের আকুল আগুন

ছুঁয়েছিল জলমন্ত্র...

যে হাওরে স্রোত বেশি

সে হাওর জুড়ে নাকি; প্রেতিনী-ডাকিনী?

হাসে অন্তরাত্মা

হাওরের কলস্তরে কথকতা...

একেক ঋতুতে একেক যাপন

জ্যোতির্ময় লীলাময়, প্রভু পরম

বলি; হাকালুকি হাওর কি তোমার-আমার

ইচ্ছাজলে সুগঠিত

শীতল-আশ্রম?

ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিদের মুক্তির বাহাস

মানুষের ঠোঁটে ক্রুশবিদ্ধ

অতিথি পাখির মতোই লাফাচ্ছে

হাওরেররানিমাছ’; নয়নাভিরাম!

ভাবতে গেলেই অ্যাবসার্ড

হাওরের ফসলি ভূমিতে না তাকিয়ে

দিগন্তরেখায় খুঁজি

দুষ্কর্মের দাগ।।

   

এক ঘরেই তিন বলী



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

  • Font increase
  • Font Decrease

চুল থেকে দাড়ি-সবই সফেদ। হাঁটাচলায় মন্থর। স্বাভাবিকভাবেই প্রবীণের বয়সটা আঁচ করা যায় প্রথম দেখাতেই। কিন্তু তার ষাটোর্ধ্ব বয়সটা যেন কেবল ক্যালেন্ডারের হিসাব। বয়স যতই ছোবল বসানোর চেষ্টা করুক না কেন-তিনি যেন এখনো ২৫ এর টগবগে তরুণ। সেই বলেই তো ফুসফুসের রোগবালাইকে তুড়ি মেরে ঐতিহাসিক আবদুল জব্বারের বলীখেলা এলেই হাজির হয়ে যান রিংয়ে। এক দুবার নয়, এবার কিনা পূর্ণ হলো সুবর্ণজয়ন্তী!

চট্টগ্রামের অন্যতম আবেগের ঠিকানা ঐতিহাসিক এই বলীখেলার বড় বিজ্ঞাপন হয়ে ওঠা এই বলীর নাম খাজা আহমদ বলী। ৫০ বছর ধরে বলীখেলায় অংশ নিয়ে দর্শকদের আনন্দ দিয়ে যাওয়া এই বলীর এখন পড়ন্ত বয়স। ফুসফুসে বাসা বেঁধেছে রোগ। কানেও শোনেন কম। খাজা আহমদ বুঝে গিয়েছেন, তার দিন ফুরাচ্ছে। কিন্তু তিনি যে বলীখেলার স্মৃতি থেকে সহজেই মুছে যেতে চান না। সেজন্যই উত্তরসূরী হিসেবে এরই মধ্যে গড়ে তুলেছেন নিজের দুই ছেলেকে। বাবার পাশাপাশি দুই ভাইও এখন বলীখেলার নিয়মিত প্রতিযোগী।

খাজা আহমেদ বলীর বাবাও বলীখেলায় অংশ নিতেন। বাবার সঙ্গে বলীখেলায় এসে ১৯৭৪ সালে শখের বসে খেলতে নামেন খাজা আহমেদও। বয়স তখন ১২ বছরের আশপাশে। সেই শুরু, আর কোনোদিন মিস করেননি বলীখেলায় অংশ নেওয়া। একবার চ্যাম্পিয়নের গৌরবও অর্জন করেছিলেন। বহু বছর ধরে খাজা আহমেদ বলী ও সত্তরোর্ধ্ব মফিজুর রহমানের ‘বলীযুদ্ধ’ জব্বারের বলীখেলার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে এই দ্বৈরথ হয়তো আর দেখা যাবে না। দুই বছর আগে উৎপত্তি হওয়া ফুসফুসের রোগটা ইদানিং যে খাজা আহমদকে বেশিই ভোগাচ্ছে। সেজন্য গতবছর অবসরের ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এবার দুই ছেলেকে নিয়ে বলীখেলায় এসে আবেগ সামলাতে পারেননি খাজা আহমেদ। ছেলেদের সঙ্গে নিজেও নেমে পড়েন রিংয়ে। সেজন্য আরও একবার মফিজুর রহমান-খাজা আহমেদের লড়াই দেখল হাজারো দর্শক। যদিওবা যৌথ বিজয়ী ঘোষণা করে দুজনের মুখেই হাসি ফুটিয়েছেন রেফারি।

প্রতিপক্ষ মফিজুর রহমানের সঙ্গে বলী-যুদ্ধে খাজা আহমদ

কেন অবসর ভাঙলেন এমন প্রশ্নে হাসি খেলা করে যায় খাজা আহমেদ বলীর মুখে। বলতে থাকেন, ‘বয়সের কারণে শরীর দস্ত। ফুসফুসও ঠিকঠাক কাজ করছে না। সেজন্য অবসর নিয়েছিলাম। কিন্তু বলীখেলায় আসার পর দেখলাম দর্শকেরা সবাই অনুরোধ করছেন। সেজন্য মন বলল, না খেললে দর্শকদের প্রতি অন্যায় হবে। আর আবেগ ও ভালোবাসার কাছে বয়স-রোগ পেরেছে কবে?’

তবে এখানেই সব শেষ, বলে দিয়েছেন খাজা আহমেদ বলী। বলেছেন, ‘বয়স হয়ে গেছে। মনে হয় না আর খেলতে পারব। অসুখটা বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে। সেজন্য মনে মনে মেনে নিয়েছি এটাই আমার শেষ অংশগ্রহণ। বাকিটা আল্লাহর হাতে।’

তিন ছেলে ও এক মেয়ের বাবা খাজা আহমদের বাড়ি চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায়। কৃষিকাজ করেই চলে সংসার। তবে বলীখেলা এলে সব কাজ বাধ। কয়েকদিন ধরে চলে প্রস্তুতি। নিজের স্মৃতি ধরে রাখতে এরই মধ্যে খাজা আহমেদ নিজের দুই ছেলেকে গড়ে তুলেছেন বলী হিসেবে। ২০১২ সাল থেকে বলীখেলায় নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন তার বড় ছেলে মো. সেলিম। গত বছর থেকে যোগ দিয়েছেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। এখন বলীখেলার আগে দুই ছেলেকে নিয়ে চলে খাজা আহমদের প্রস্তুতি।

জানতে চাইলে সেলিম বলেন, ‘বাবার কাছ থেকে আমরা বলীখেলা শিখেছি। বয়সের কারণে বাবা এখন অসুস্থ। হয়তো আর খেলা হবে না। সেজন্য তার উত্তরসূরী হিসেবে আমরা বলীখেলায় অংশ নেব সামনের দিনগুলোতে। এটা শুধু পরিবারের বলীর প্রজন্ম ধরে রাখার জন্য নয়, তরুণদের মাদক-সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেকে দূরে রাখতে উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগও।’

বাবাকে পাশে রেখে একই কথা বললেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। বলেন, ‘হয়তো বাবা আর খেলবেন না। তবে তিনি না খেললেও যতদিন বেঁচে থাকবেন বলীখেলা দেখতে আসবেন। রিংয়ের নিচে দাঁড়িয়ে আমাদের উৎসাহ দিয়ে যাবেন।’

ছেলের কথা শুনে আবেগ খেলে যায় খাজা আহমেদ বলীর মনে। কাঁধের গামছাটা হাতে তুলে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘না খেললেও যতদিন বাঁচি এখানে, এই বলীর মাঠ লালদীঘি ময়দানে ছুটে আসব। এটা থেকে দূরে থাকতে পারব না।’

খাজা আহমেদ যখন কথা বলছিলেন দূরে কোথাও তখন মাইকে বাজছিল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই অমর গান। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় অক্লান্ত গলায় গেয়ে চলেছেন, যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে...

;

চাকরি ছেড়ে বসের সামনেই ঢোল বাজিয়ে নাচলেন যুবক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নিত্যদিনের অফিসের কর্মপরিবেশে অনেকের মধ্যেই 'বিরক্তি' চলে আসে। তবুও ধৈয্য নিয়ে সব সহ্য করে টিকে থাকার জন্য চালিয়ে যান লড়াই। তবে এ যাত্রায় সকলের দ্বারা টিকে থাকা সম্ভব হয় না। অফিসের 'বিষাক্ত' কর্মপরিবেশে অনেকেই ভোগেন মানসিক সমস্যায় কিংবা ব্যক্তিজীবনে। এমন পরিবেশ থেকে বাঁচতে একেক জন একেক পন্থা অবলম্বন করে থাকেন।

তবে অনিকেত নামের এক যুবক এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে যা করেছেন নেট দুনিয়ায় তা রীতিমতো ভাইরাল। এসব থেকে মুক্তি পেতে চাকরিটাই ছেড়ে দিয়েছেন এই যুবক। এতেই ক্ষান্ত হননি তিনি, বসের সামনেই ঢাকঢোল বাজিয়ে নেচে উদযাপন করেছেন এমন মুহূর্তের।

ঘটনাটি ভারতের পুনে রাজ্যের। অনিকেত নামের ওই যুবক বিক্রয় সহযোগী হিসেবে চাকরি করতেন।

তার এমন উদযাপনের একটি ভিডিও ইন্সটাগ্রাম শেয়ার করেছেন অনীশ ভগত।

ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, গত তিন বছর ধরে এই কোম্পানির সাথে কাজ করেও বেতন খুব একটা বাড়েনি। এছাড়াও অফিসের বসের দ্বারাও তাকে বিভিন্ন সময়ে অপমানিত হতে হয়েছে।

তাই তার কাজের শেষ দিনে বন্ধুরা অফিসের বাইরে ঢোল নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন এবং নেচেছিলেন। ভিডিওতে দেখা গেছে, এ ঘটনায় তার বস অনেক উত্তেজিত হয়েছেন। পাশাপাশি তার বস লোকজনকে ধাক্কা দিয়েছেন এবং চিৎকারও করেছেন।

ভিডিওটির ক্যাপশনে ভগত লিখেছেন, আমি মনে করি আপনারা অনেকেই এর সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারবেন। আজকাল বিষাক্ত কাজের সংস্কৃতি খুব বেশি দেখা যায়। সম্মান এবং অধিকারের অভাব খুবই সাধারণ। অনিকেত তার পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। আমি আশা করি এই গল্প মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।

পোস্ট করা ভিডিওটি এক মিলিয়নেরও (১০ লাখের বেশি) বেশি ভিউ পেয়েছে। পোস্টটিতে অসংখ্য লাইক ও কমেন্টও রয়েছে।

একজন ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি জানি না কেন এটি আমাকে এত সন্তুষ্ট করেছে।'

আরেকজন লিখেছেন, 'নাচটি আমাকে অন্য মাত্রার তৃপ্তি দিয়েছে।'

'আপনি সত্যিই আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে ইতিবাচক এবং উত্সাহী ব্যক্তি'- তৃতীয় একজন ঠিক এভাবেই নিজের অনুভূতি জানিয়েছেন।

তথ্যসূত্র: হিন্দুস্থান টাইমস 

;

অভয়ারণ্যে মানুষ যখন বন্দিখাঁচায়



প্রমা কোয়েল, ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চিড়িয়াখানা, নানানরকম পশুপাখি ও প্রাণীর বন্দিশালা। কেবল রং-বেরঙের চিড়িয়াই নয়; বাঘ, সিংহ, ভালুক, বানর, গণ্ডারসহ কত বন্যপ্রাণীই না খাঁচায় বন্দি থাকে!

চিড়িয়াখানায় রাখতে বন্য প্রাণীদের প্রকৃতির স্বাধীন জীবন থেকে ছিনিয়ে আনা হয়। তাদের খাঁচায় বন্দি করা হয় যেন, মানুষ তাদের দেখে আনন্দ পায়। অনেক প্রাণীর জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি খাঁচাতেই কেটে যায়।

ছোট থেকে বড় সব বয়সের মানুষই চিড়িয়াখানায় ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন। শিশুরা না হয় অবুঝ! তবে যারা প্রাপ্তবয়স্ক তারাও চিড়িয়াখানায় এই বন্দি প্রাণীদের জীবনকে গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারেন না।

এশিয়ার বড় দেশ চীনে রয়েছে, এক অদ্ভুত চিড়িয়াখানা। চংকিংয়ে অবস্থিত সেই চিড়িয়াখানার নাম ‘লেহে লেদু বন্যপ্রাণী চিড়িয়াখানা’। একে ‘রিভার্স জু’ (বিপরীত চিড়িয়াখানা) বলেও ডাকা হয়।

এখানেও মানুষ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে পশু দেখতে আসেন। তবে একেবারেই ভিন্ন উপায়ে। মূলত, একটি খাঁচা রয়েছে, যেখানে মানুষদের সেই খাঁচায় পুরা হয়। তারপর সেই খাঁচাবন্দি মানুষদের নিয়ে রাখা হয়, অভয়ারণ্যে। সেখানে বন্য প্রাণীরা মানুষের খাঁচার চারপাশে অবাধে ঘুরতে থাকে। চিড়িয়াখানায় বন্দি প্রাণীদের বন্দিজীবনের এক প্রতীকী দৃশ্য!

অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষদের জন্য এটি এক নতুন অভিজ্ঞতা!

অভয়ারণ্যে খাঁচায় বন্দি মানুষ, ছবি-সংগৃহীত

খুব কাছে থেকে হিংস্র বন্যপ্রাণীদের মুক্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যেমন লোমহর্ষক, ঠিক তেমনই আতঙ্কজনকও হতে পারে। বিপরীতধর্মী এই চিড়িয়াখানাটি সবার জন্য প্রথম উন্মুক্ত করা হয়, ২০১৫ সালে। তখন বিশ্বের সংবদমাধ্যমের শিরোনাম কেড়েছিল এ চিড়িয়াখানাটি।

একটি শক্ত লোহার খাঁচাবেষ্টিত দর্শনার্থীদের একটি ট্রাকে তুলে অভয়ারণ্যে রেখে দেওয়া হয়। সেখানে তাদের ঘিরে ধরে ঘুরতে থাকে বাঘ, ভালুক, সিংহ ইত্যাদি হিংস্র প্রাণী।

এ বিষয়ে চিড়িয়াখানার প্রধান চ্যান লিয়াং বলেন, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা রক্ষার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। খাঁচার ফাঁকা অংশ দিয়ে হাতের আঙুলও বের না করার নির্দেশনা দেওয়া থাকে।

তবে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই চিড়িয়াখানাটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে অনেক। এর নৈতিকতা নিয়ে অনেকে প্রশ্নও তুলেছেন।

অনেকে মনে করেন, এরকম ব্যবস্থাপনায় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। কারণ, শিকারী প্রাণীগুলো প্রচণ্ড হিংস্র। তাই, সে কারণে যে কোনো সময় বিপজ্জনক ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

আবার এরকম চিন্তাভাবনার প্রশংসাও করেছেন অপর একটি পক্ষ। তাদের বক্তব্য, পৃথিবীটা কেবল মানুষদের নয়। প্রকৃতিতে সব প্রাণীদের একটা ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন। তাদের বন্দি করে রাখা মানুষের উচিত নয়। কারণ, মুক্ত প্রকৃতিতে বিরাজ করার অধিকার সব প্রাণীরই রয়েছে।

তাদের মন্তব্য, আমরা প্রাণীদের আবাসস্থল বনজঙ্গল সব উজাড় করেছি। সে কারণে তাপমাত্রাও অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। আবার প্রাণীদের বন্দি রেখে তাদের জীবন চরম দুর্বিষহ করে তুলি।

চাইলে এবং সুযোগ পেলে এই ধরনের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিতে চিড়িয়াখানাটি ঘুরে আসতে পারেন বৈকি!

তথ্যসূত্র: এনিমেল অ্যারাউন্ড দ্য গ্লোব

;

৫ বছরের শিশুর বিস্ময়কর প্রতিভা!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বয়স সবে ৫ কিংবা ৬। এই বয়সেই তার প্রতিভা দেখে অবাক হবে যে-কেউ!

গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সের (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভিডিওটি ১ মিলিয়নের (১০ লাখের বেশি) বেশি মানুষ দেখেছেন। খবর এনডিটিভি। 

ভিডিওতে রিলি নামের ওই শিশুটিকে প্রথমে শ্বাস নিতে দেখা যায়। তারপর সে একটি শক্তিশালী গর্জন দিয়ে শ্বাস ছাড়ে। ওই গর্জনটি হুবুহ সিংহের গর্জনের অনুরূপ।

রিলির মা অ্যামি ভিডিওটি এক্সে শেয়ারের পরই তা ভাইরাল হয়ে যায়। শিশুটির এমন নিখুত দক্ষতা দেখে মুগ্ধ দর্শকরা। ভিডিওটিতে অনেকেই নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, এত অল্প বয়সে এমন বাস্তবসম্মত গর্জন তৈরি করার রিলির ক্ষমতার বিস্ময় প্রকাশ করে।

আরেকজন লিখেছেন, শিশুরা খুব দ্রুত শিখে। তার এমন প্রতিভা সত্যিই অবাক করার মতো।

;