পটুয়াখালীতে জাল ভোটের ৭ মিনিটের ভিডিও ভাইরাল
সহকারী পিসাইডিং অফিসারের উপস্থিতিতে ভোটকেন্দ্রে বসে প্রকাশ্যে অনবরত সিল মেরে ব্যালট বাক্সে ভরছেন দুই ব্যক্তি। ৭ মিনিট ১১ সেকেন্ডের এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি রোববার (৭ জানুয়ারি) নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে সংসদীয় আসন ১১১ পটুয়াখালী-১ (সদর, মির্জাগঞ্জ ও দুমকি) আসনের নির্বাচন চলাকালে একটি ভোট কেন্দ্রের বলে জানা গেছে।
সোমবার (৮ জানুয়ারি) ভিডিওটি বিশ্লেষণ ও খোঁজ খবর নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি দুমকি উপজেলার ২২ নম্বর জামলা গাবতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই কেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে এই সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সামনেই ব্যালট পেপারে সিল মেরে ব্যালট বাক্সে ভরতে দেখা যায়।
একাধিক সূত্রে জানা যায় ভিডিওতে সিল মারা সেই দুই ব্যক্তি হলেন মো. জসীম সিকদার ও মো. আবুল বাশার ডাক্তার। জসীম জাতীয় পার্টির সমর্থক, তবে তিনি মশাল প্রতীকের এজেন্ট হিসেবে ওই কেন্দ্রে ছিলেন। অপরদিকে আবুল বাশার ডাক্তার ওই কেন্দ্রের লাঙ্গল প্রতীকের এজেন্ট ছিলেন।
ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, দুমকি উপজেলার ২২ নম্বর জামলা গাবতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের একটি কক্ষে চেয়ারে বসে আছেন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান। আর তার সামনেই (কালো ব্লেজার পড়া) মো. জসীম সিকদার ব্যালট ও সিল প্যাড নিয়ে গোপন কক্ষে চলে যান এবং সেখানে বসে অনবরত ব্যালট পেপারে টিপসই দেয়। পরে ওই পেপারেই সিল মারতে থাকেন। এ ছাড়া তার সামনেই (পাঞ্জাবি পড়া) আবুল বাশার ডাক্তার ব্যালট পেপার ভাঁজ করে বাক্সে ভরছেন।
অভিযুক্ত জসীম সিকদার বলেন, ‘আমি মশালের এজেন্ট ছিলাম, আমি ক্যান লাঙলে সিল পিডাইতে যামু..? আমি শুধু আমার ভোটটাই দিছি। আর ভাইরাল হওয়া ভিডিওডা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তথ্য প্রযুক্তির যুগে এগুলা এডিট করে কীভাবে বসাইছে জানি না।’ আমিও এটার বিচার চাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আবুল বাশার ডাক্তার বলেন, জসিম আমার কাছে হেল্প চাইছে। আমি যাইয়া খালি কয়েকটা ব্যালট পেপার ভাঁজ কইরা বাক্সে ভরছি। পরে আমার মনে হইছে এইডা ঠিক না, এইডা বেআইনি, তহনই আমি আইয়া পরছি।’
ভোটকেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি তাদের চিনি না, তবে বুঝতে পারছি দুজনই লাঙলের লোক কিন্তু একটু টেকনিক করে একজন লাঙলের এবং আরেকজন মশালের এজেন্ট হয়।
এ ব্যাপারে ওই ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও ২২ নম্বর জামলা গাবতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস ছত্তার এর মুঠোফোনে একাধিক বার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
ভিডিওর বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক নূর কুতুবুল আলম বলেন, ‘আমি বিষয়টি ঠিক জানি না এবং এখন পর্যন্ত আমার কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ ও দেয়নি।’ তবে যদি কোনো অভিযোগ পাই তাহলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।