আশেক-কমলের হ্যাটট্রিক, ইবরাহিমের প্রথম ও শাহীনের দ্বিতীয় জয়

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম কক্সবাজার
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারে ৪ টি সংসদীয় আসনে টানা তৃতীয় মেয়াদে বিজয়ী হয়ে হ্যাটট্রিক করেছেন কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক ও কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল।

এছাড়া সিমান্ত এলাকা কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে দ্বিতীয় বারের মতো বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য আব্দু রহমান বদির স্ত্রী শাহীন আক্তার এবং ৭৫ বছরে শেষ বয়সে এসে প্রথমবারের মতো সংসদে যাওয়ার স্বাদ পাবেন কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম।

বিজ্ঞাপন

রোববার (০৭ ডিসেম্বর) সকাল ৮ টায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হয় বিকেল ৪ টায়। সমুদ্র নগরী কক্সবাজারেও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে ভোটগ্রহণ। তবে ভোটে অনিয়মের অভিযোগে এনে কক্সবাজার ১, ৩ ও ৪ আসনের ৪ জন সংসদ সদস্য প্রার্থী ভোট বর্জন করে।

আশেক-কমলের হ্যাটট্রিক: মহেশখালী-কুতুবদিয়া দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-২ আসন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত (নৌকা) আশেক উল্লাহ রফিকের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয়তাবাদী আন্দোলন- বিএনএম মনোনীত (নোঙর) মো. শরীফ বাদশা। এই আসনে ১১৮টি কেন্দ্রে নৌকার প্রাপ্ত ভোট ৯৭৩৯৮ এবং নোঙরের প্রাপ্ত ভোট ৩৪৪৯৬। দুই উপজেলায় মোট ভোটার ৩৪৮১২৭ ভোট। মোট ফলাফলে ৬২৯০২ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন নৌকা প্রতীকের আশেক উল্লাহ রফিক। আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হলে কক্সবাজার-২ আসন থেকে টানা তিন মেয়াদের সংসদ সদস্য হয়ে হ্যাটট্রিক করবেন এই সংসদ সদস্য। এর আগে দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে একবারও হারেননি আশেক।

বিজ্ঞাপন

তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় আশেক উল্লাহ রফিক বার্তা২৪.কম-কে বলেন,"মহেশখালীতে সরকারের বড় বড় মেগা প্রকল্পগুলো হচ্ছে। এছাড়া দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় প্রথম বিদ্যুৎ এর আলোয় আলোকিত হয়েছে। এগুলোর কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মার্কা, উন্নয়নের মার্কা নৌকাকে ভোট দিয়ে মানুষ জয়যুক্ত করেছে"।

কক্সবাজার সদর-রামু-ঈদগাঁও উপজেলা নিয়ে কক্সবাজার-৩ আসন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত (নৌকা) সাইমুম সরওয়ার কমলের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল) ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ। তবে অনিয়মের অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করে নেন তিনি। এই আসনে ১৭৬টি কেন্দ্রে নৌকার প্রাপ্ত ভোট ১৬৭০২৯ এবং ঈগলের প্রাপ্ত ভোট ২১৯৪৬। দুই উপজেলায় মোট ভোটার ৪৮৯৬১০। মোট ফলাফলে ১৪৫০৮৩ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন নৌকা প্রতীকের সাইমুম সরওয়ার কমল। আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হলে কক্সবাজার-৩ আসন থেকে টানা তিন মেয়াদের সংসদ সদস্য হয়ে হ্যাটট্রিক করবেন এই সংসদ সদস্য। এর আগে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী থেকে হারলেও দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

টানা তৃতীয় মেয়াদে বিজয়ী হওয়া জনপ্রিয় এই সংসদ সদস্য বার্তা২৪.কম-কে বলেন,"আমার এ জয় আমার এলাকার মানুষ এবং জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উৎসর্গ করলাম। আমি এই মানুষ জন্য সারাজীবন কাজ করেছি। আমার সবকিছু মানুষের জন্য বিলিয়ে দিয়েছি। একারণে মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছে। আমি মানুষের গোলাম হিসেবে থাকতে চাই"।

বদীর বধূ শাহীনের দ্বিতীয় জয়: সীমান্ত উপজেলা উখিয়া-টেকনাফ নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-৪ আসন। এই আসনে একচ্ছত্র আধিপত্য সাবেক আলোচিত সংসদ সদস্য আব্দু রহমান বদির। বদি আইনি জটিলতায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেলেও ঠিকই তার স্ত্রী শাহীন আক্তারকে দেওয়া দ্বিতীয় বারের মতো মনোনয়ন। শাহীন আক্তার সংসদ সদস্য হলেও এই আসনে অঘোষিত সংসদ সদস্য যেন আব্দু রহমান বদি। এবারও নৌকা নিয়ে টানা দ্বিতীয় বার বিজয়ী হয়েছেন শাহীন আক্তার। এর মাধ্যমে প্রথম কোন নারী দ্বিতীয় বারের মতো সরাসরি ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। যদিও তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল) নুরুল বশর নির্বাচন বর্জন করেছেন। এছাড়া জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল) নুরুল আমিন সিকদার ভুট্টোও নির্বাচন বর্জন করে নেন।

এই আসনে ১০৪টি কেন্দ্রে নৌকার প্রাপ্ত ভোট ১২৫৭২৫ এবং ঈগলের প্রাপ্ত ভোট ২৯৯২৯। দুই উপজেলায় মোট ভোটার ৩২৬৯৭১। মোট ফলাফলে ৯৫৭৯৬ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন নৌকা প্রতীকের শাহীন আক্তার। আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হলে কক্সবাজার-৪ আসন থেকে টানা দ্বিতীয় মেয়াদের সংসদ সদস্য হবেন এই সংসদ সদস্য। এর একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে টানা দ্বিতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

৭৫ বছর বয়সে প্রথম সংসদে যাওয়ার স্বাদ পাবেন ইবরাহিম: চকরিয়া-পেকুয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-১ আসন। নিজ এলাকার সংসদ নির্বাচনে হেরে জামানত হারালেও এই আসনে বিজয়ী হয়ে ৭৫ বছর বয়সে সংসদে যাওয়ার স্বাদ পাবেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। কক্সবাজারে এর মাধ্যমে দ্বিতীয় কোন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে মহেশখালী- কুতুবদিয়া থেকে বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত উইংস কমান্ডার জহিরুল ইসলাম এরশাদ আমলে সংসদ সদস্য ছিলেন। যদিও তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক) বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম। তিনি অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচন বর্জন করেন।

এই আসনে ১৫৮টি কেন্দ্রের মধ্যে তিনটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয় ১৫৫ কেন্দ্রে হাতঘড়ির প্রাপ্ত ভোট ৮১৯৫৫ এবং ট্রাকের প্রাপ্ত ভোট ৫২৮৯৬। দুই উপজেলায় মোট ভোটার ৪৮৬২৫২। মোট ফলাফলে ২৯০৫৯ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন হাতঘড়ি প্রতীকের সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হলে কক্সবাজার-১ আসন থেকে প্রথম বারের মতো সংসদ সদস্য হবেন তিনি।

হাতঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী কল্যান পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, চকরিয়া পেকুয়ার মানুষ সন্ত্রাস এবং দখলবাজাদের হাত থেকে রেহাই পাবে। চকরিয়াকে সাজাতে আমি বদ্ধ পরিকর। চকরিয়া পেকুয়ার মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, এই অঞ্চলের মানুষ আমাকে যে সম্মান দেখিয়েছে আমি আমৃত্যু তা মনে রাখবো এবং এখানের শিশু, তরুন, যুবক, বৃদ্ধ এবং নর নারীর জন্য কাজ করে যাবো। এই অঞ্চলের উন্নয়ন করাই হবে আমার প্রধান কাজ"।

কক্সবাজার জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন শেষ করতে পেরেছি। তবে তিনটি কেন্দ্রে গণ্ডগোল হয়েছে বলে সেগুলো স্থগিত করা হয়েছে।