বিএনপি নির্বাচনে না এলে পোয়াবারো আ.লীগের শরিকদের

  • কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বিএনপি নির্বাচনে না এলে পোয়াবারো আ.লীগের শরিকদের

বিএনপি নির্বাচনে না এলে পোয়াবারো আ.লীগের শরিকদের

সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে অটল থেকে বিএনপি শেষ পর্যন্ত যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে ভাগ্য খুলবে আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলোর। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে আওয়ামী লীগ তখন তার নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোকে বেশ কিছু আসনে ছাড় দেবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকগণ। বিভিন্ন সরকারি সংস্থার তরফেও ১৪ দলের শরিক দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থিদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। যাচাই করে দেখা হচ্ছে তাদের জনপ্রিয়তা ও বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কেও।

বিশ্বস্ততার সাথে মতাদর্শিক রাজনীতির ঐকমত্যের ভিত্তিতে ১৪ দলীয় জোটের দলগুলো আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে একটানা ১৯ বছর নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ রয়েছে। এই দীর্ঘ সময়কালে শরিকদের মধ্যে মতপার্থক্য ও অন্তর্বিবাদ হলেও জোট সচল থেকেছে। বিভিন্ন সময়ের ভোটবদ্ধ কোনও দলে  ভাঙনের ঘটনা ঘটলেও এর প্রভাব জোটের ঐক্যে পরিলক্ষিত হয়নি। বরং অতীতে বিদ্যমান শরিকদের মধ্যে পারস্পরিক টানাপোড়েন কাটিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে জোটের ঐক্য সবচেয়ে বেশি বলে দাবি করেছেন জোটের নেতারা। বার্তা২৪.কম'র কাছে একাধিক নেতা স্বীকার করছেন যে, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৪ দলীয় জোটের শরিক ছোট ও নিষ্ক্রিয় দলগুলোও সরব হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগ ছাড়া ১৪ দলীয় জোট বলতে প্রধানত রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন ওয়ার্কার্স পার্টি, হাসানুল হক ইনুর জাসদ, দিলীপ বড়ুয়ার সাম্যবাদী দল, ব্যারিস্টার আরশ আলী ও ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলনের নেতৃত্বাধীন গণতন্ত্রী পার্টিকেই রাজনৈতিকভাবে কার্যকর দেখা গেছে। কিন্তু এবার বিএনপি নির্বাচনে না এলে জোটের শরিকদের পোয়াবারো। তাই মাঠে নেমেছে ১৪ দলের সবগুলো দলই। এদিকে জোটের প্রার্থীদের কারণে টেনশনে আছে আওয়ামী লীগে অনেক হেভিওয়েট প্রার্থী।

পর্যবেক্ষকগণ বলছেন, ১৪ দলীয় জোট শুধু ভোটের রাজনীতি করছে না। আদর্শিক রাজনীতি করছে। সে কারণেই মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র এবং অসাম্প্রদায়িক আদর্শের ভিত্তিতে ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত হয় ১৪ দলীয় জোট। বিশেষত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অটুট থেকে সেই জোট আজও টিকে আছে। শুধু তাই নয়, বর্তমান সময়ে এসে জোটের বন্ধন আরও শক্তিশালী হয়েছে। পারস্পরিক সমঝোতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এসবই সম্ভব হয়েছে চাওয়া-পাওয়ার বদলে আদর্শগত রাজনীতিকে প্রাধান্য দেওয়ার কারণে। এমনকি, দলীয় ভাঙনের ঘটনা ঘটলেও জোটের ঐক্যে আঁচ পড়তে দেন নি জোটের নেতারা।

বার্তা২৪.কম'র অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৪ দলীয় জোট ১৯ বছর পাড়ি দিয়েছে সঙ্কুল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে। এই দীর্ঘ সময়কালে শরিক কোনও কোনও দলে নানা ইস্যুতে অন্তর্বিবাদ ও দল ভাঙার মতো ঘটনা ঘটেছে। সময়ে সময়ে শরিকদের মধ্যে পারস্পরিক টানাপোড়েনও দেখা গেছে। জোটের অন্যতম প্রধান শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির ক্ষেত্রে নানা উত্থান-পতন ঘটলেও মূল নেতৃত্ব থেকেছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোটের অধীনেই।  জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু), গণতন্ত্রী পার্টিতে নেতৃত্বের পালাবদল হলেও জোট রাজনীতিতে এর কোনও প্রভাব পড়েনি। বিশেষ করে, ২০১৬ সালের ৯ মার্চ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ থেকে বেরিয়ে শরীফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন একটি অংশ বাংলাদেশ জাসদ নামে আরেকটি দল গঠন করে। তাদের রেজিস্ট্রেশন না দেয়ার অভিযোগে ২০২২ সালের ২৮ মার্চ জোট ত্যাগ করে জাসদের খণ্ডিত এ দলটি।

বার্তা২৪.কম'কে ১৪ দলের শরিক গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন বলেন, 'বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শরিক দলগুলোর মধ্যে নিবিড় যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক বিরাজমান। তাছাড়া আদর্শিক জায়গা থেকে শরিকদের সঙ্গে সম্পর্ক সবসময়ই ভালো।  জোটের মূল দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ ও বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে কখনও কোনও ব্যত্যয় ঘটে নি।'

তিনি বলেন, '২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার পর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল দলগুলোকে নিয়ে জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ওই বছরই ২৩ দফা ঘোষণা দিয়ে ১৪ দলীয় জোটের যাত্রা শুরু হয়, যাতে আমরা সবাই আদর্শিকভাবে যুক্ত থেকে জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত উদার, ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় রাজনৈতিক লড়াই করছি।'

প্রথমে আওয়ামী লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ও ১১ দল মিলে জোট গঠিত হয়। কিন্তু জোট গঠনের পর পরই ১১ দল ভেঙে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)সহ কয়েকটি দল বেরিয়ে যায়। রয়ে যায় ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণফোরামসহ কয়েকটি দল। তারপরও জোটটি ১৪ দল নামেই পরিচিত।

২০০৭ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম জোট ত্যাগ করে। পরের বছর জাতীয় নির্বাচনের আগে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জেপি) ও নজিবুলবশর মাইজভাণ্ডারীর নেতৃত্বাধীন তরিকত ফেডারেশন জোটে যোগ দেয়।

এছাড়া গণতন্ত্রী পার্টি, সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ-রেজাউর), গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণআজাদী লীগ ও ন্যাপ (মোজাফফর) আগে থেকেই ১৪ দলের শরিক। আর জোটের মুখপাত্র এবং সমন্বয়ক হিসেবে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রাক্কালে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে অংশ নেওয়ার আগ্রহ জানিয়েছে। অতীতে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে শরিক দলগুলো এমন মনোভাব প্রকাশ করেছে। উল্লেখ্য, বিএনপির ৭ সংসদ সদস্য পদত্যাগ করলে সেসব শুন্য আসনের উপ-নির্বাচনকে জাসদ বগুড়া-৪ এবং ওয়ার্কার্স পার্টি ঠাকুরগাঁও-৩ আসন দাবি করলে আওয়ামী লীগ তাদের সেই দাবি মেনে নেয়। বগুড়ায় জাসদের প্রার্থী বিজয়ী হন। কিন্তু ঠাকুরগাঁওয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরে যান ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী ইয়াসিন আলী। তিনি ওয়ার্কার্স পার্টির কাস্তে প্রতীকে প্রার্থী হয়ে সুবিধা করতে পারেন নি। এজন্য শরিকরা এবার নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে আগ্রহী।