না.গঞ্জ-৩: বিদ্রোহী কায়সারে বেকায়দায় খোকা
নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও সাবেক সাংসদ কায়সার হাসনাত এখনো নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। ফলে মহাজোটের মনোনীত জাতীয় পার্টির (জাপা) লাঙ্গল মার্কার প্রার্থী বর্তমান সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা বেশ বেকায়দায় রয়েছেন।
জানা গেছে, ভোটের সমীকরণে জাতীয় পার্টির অবস্থান একেবারে তলানিতে রয়েছে। অন্যদিকে ধানের শীষ প্রতীকের জনপ্রিয়তাও কোনো অংশে কম নয়। এর ফলে সার্বিক হিসাব কষে জাপা প্রার্থী খোকা একেবারে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।
এবার মনোনয়ন দৌড়ে মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টিকে এই আসনটি ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। এতে করে মহাজোট থেকে এই আসনে মনোনয়ন পান লিয়াকত হোসেন। তবে এই আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও সাবেক সাংসদ কায়সার হাসনাত এ বিষয়টিকে মেনে নিতে পারেননি। তাই তিনি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন।
অন্যদিকে মনোনয়ন দৌড়ে অনেকটা ফাঁকা মাঠে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান প্রার্থী হয়ে যান।
তবে ভোটের লড়াইয়ে জাতীয় পার্টির অবস্থান খুব একটা ভালো না। তাই বেশ শঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে তারা। আর আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী কায়সার হাসনাত বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়ে নির্বাচনটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। তাছাড়া এই নির্বাচনে পরাজয় ঘটলে কায়সারকে দুকূল হারাতে হবে। সেই বিষয়টিকে মাথায় রেখে ভোটের হিসাব কষছেন। অপরদিকে বিএনপিও চায় আসন্ন নির্বাচনে আসনটিকে ফের পুনরুদ্ধার করতে।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫০ হাজার ৭৬৯ ভোট পেয়ে জয়ী হন বিএনপি দলীয় প্রার্থী অধ্যাপক রেজাউল করিম। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আবুল হাসনাত পেয়েছিলেন ২৯ হাজার ৬১৩ ভোট। তৃতীয় অবস্থানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আহমেদ হোসেন ভূঁইয়া বুলবুল পেয়েছিলেন ৮ হাজার ১৬৬ ভোট।
১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সোনারগাঁ আসনে আবারো ৫০ হাজার ৭৯১ ভোট পেয়ে জয়ী হন বিএনপির দলীয় প্রার্থী অধ্যাপক রেজাউল করিম। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আবুল হাসনাত ৩৮ হাজার ৫২৯ ভোট পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো পরাজিত হয়েছিলেন। তৃতীয় অবস্থানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবু নূর মোহাম্মদ বাহাউল হক পেয়েছিলেন ২৪ হাজার ৩৯৯ ভোট।
২০০১ সালে অনুষ্ঠিত ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সোনারগাঁ আসনে চতুর্থবারের মতো ৮৪ হাজার ১ ভোট পেয়ে জয়ী হন বিএনপির দলীয় প্রার্থী অধ্যাপক রেজাউল করিম। ওই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু নূর মোহাম্মদ বাহাউল হক ৫৪ হাজার ৬৮৩ ভোট পেয়ে পরাজিত হন। তখন জাতীয় পার্টির প্রার্থী গোলাম মসীহ পেয়েছিলেন ৭ হাজার ৪০২ ভোট।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ ও সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী অধ্যাপক রেজাউল করিমকে ৮৫ হাজার ৭৫৭ ভোটে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মহাজোটের মনোনীত আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। ওই নির্বাচনে কায়সার পেয়েছিলেন ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ ভোট। অপরদিকে বিএনপির প্রার্থী রেজাউল পেয়েছিলেন ১ লাখ ৪ হাজার ২৪২ ভোট।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতীয় পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব লিয়াকত হেসেন খোকা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি।
এদিকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠের যুদ্ধ না হলেও এবারই প্রথম ভোটারদের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা। তবে বিগত তিন দশকে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোর সমীকরণে দেখা যাচ্ছে, এ আসনে জাতীয় পার্টির ভোট তলানিতেই রয়েছে। এছাড়া কায়সার হাসনাত প্রার্থী হওয়ার ফলে মহাজোটের ভোট ভাগ হয়ে যাবে।
অপরদিকে কায়সার ও খোকা দ্বন্দ্বে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মান্নান সুযোগ নেবে বলে মনে করছে স্থানীয়রা।