ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণের জন্য আওয়ামী লীগ নেতা পৌর মেয়রের নিয়ন্ত্রিত চারটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ও সরকারি ছয় কর্মকর্তাকে ভোট গ্রহণের দায়িত্ব না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. মনির হোসেন ।
মঙ্গলবার (১৪ মে) আখাউড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাবেয়া আক্তারের কাছে লিখিতভাবে এই দাবি করেন প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. মনির হোসেন। দাবির চারটি প্রতিষ্ঠানসহ ৮জন কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬জনই সরকারি কর্মকর্তা। আগামী ২১ মে আখাউড়া ও কসবা উপজেলা পরিষদের নির্বাচন।
নির্বাচনে চেয়ারম্যানপদে দুইজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও মোগড়া ইউনিয়ন পরিষদের তিনবারের চেয়ারম্যান মনির হোসেন (ঘোড়া) ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মো. মুরাদ হোসেন ভূইয়া (আনারস)। ইতোমধ্যে মুরাদকে দলীয়ভাবে সমর্থন দিয়েছেন আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আখাউড়া পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা, উপজেলা আওয়ামী লীগসহ অঙ্গসংগঠন। তারা মুরাদকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলে এলাকায় প্রচারণাও চালাচ্ছেন।
লিখিত আবেদনে মো. মনির হোসেন অভিযোগ করেন, আখাউড়ার পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. তাকজিল খলিফা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. মুরাদ হোসেন ভূইয়াকে সমর্থন দিয়ে প্রকাশ্যই সভা-সমাবেশ করছেন। আচরণবিধি ভঙ্গ করে পৌরসভা কার্যালয়েও সভা করছেন তিনি। সভা সমাবেশে মনির হোসেন সম্পর্কে মানহানিকর বক্তব্য দিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ নেতা তাকজিল খলিফা উপজেলার তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি। আওয়ামী লীগ নেতা মেয়রের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকেও মুরাদ হোসেন ভূ্ইয়া’র পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এছাড়া ভোটের দিন নিজেরা যেন সিল মেরে ব্যালট বাক্সে ভরেন সে বিষয়ে চাপ প্রয়োগ করছেন বলে তথ্য রয়েছে। সেসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অনেকে গোপনে এসে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মনির হোসেনের কাছে তথ্য দিচ্ছেন। তারা বিষয়টি নিয়ে বিব্রতবোধ করছেন বলে জানিয়েছেন। পৌর মেয়র নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ও তার ঘনিষ্ঠজনরা ভোট গ্রহণের দায়িত্ব পেলে, নির্বাচনে প্রভাবিত করতে পারেন বলে মনির হোসেন আশঙ্কা করছেন। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে আওয়ামী লীগ নেতা তাকজিল খলিফার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ও তার ঘনিষ্ঠজনকে নির্বাচনের দায়িত্বে না দেওয়ার জন্য সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছেন তিনি। লিখিত আবেদনে উল্লেখ করা হয়, পৌর মেয়র তাকজিল খলিফার নিয়ন্ত্রণাধীন তিনটি প্রতিষ্ঠান হলো আখাউড়া পৌরসভা, জাহানারা স্কুল এন্ড স্কুল, নাছরীন নবী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সিরাজুল হক উচ্চ বিদ্যালয়।
এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তারা হলেন- আখাউড়া পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী তানভীর হাসান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী ফয়ছেল আহাম্মদ খান, নাছরীন নবী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক দেবব্রত বনিক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক কাজী মো. ইকবাল, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. মোসলেহ উদ্দিন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তাপস কুমার চক্রবর্তী, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল হাসেন, উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা ইউসুফ নুরুল্লাহ।
নাম উল্লেখ করা সরকারি ছয় কর্মকর্তার মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন বলেন, বিষয়টি নিয় আমরা বিব্রত। আমরাও চাই না নির্বাচনের দিন আমাদের কোনো দায়িত্বে রাখা হোক। আর রাখা হলেও প্রয়োজনে কন্ট্রোল রুমে কিংবা আমাদের বাদ দেয়া হোক।
অভিযোগকারী চেয়ারম্যান প্রার্থী মনির হোসেন বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মুরাদ হোসেনে পক্ষে প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ। প্রতিনিয়ত সরকারিসহ দলীয় প্রতিষ্ঠানে সভা-সমাবেশ হচ্ছে। ভুরিভোজসহ আচরণবিধির তোয়াক্কা করছেন না উপজেলা আওয়ামী লীগ। এসব বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছি।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এক প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যানপ্রার্থী মনির হোসেন। আমরা অভিযোগ পেয়েছি। বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।