রাশিয়ার অর্থায়নে নির্মিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণ ও সুদ পরিশোধ নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। মূলত আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন (সুইফট) সিস্টেম ব্যবহারে রাশিয়ার দশটি ব্যাংক নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকায় ঋণ পরিশোধ প্রক্রিয়া বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বাধ্য হয়ে ব্যাংকটির এসক্রো অ্যাকাউন্টে (লেনদেনের অর্থ ও সম্পদ তৃতীয় পক্ষের অ্যাকাউন্টে জমা রাখা হয়। তারপর চুক্তির সব শর্ত পূরণ হলেই তা সংশ্লিষ্ট পক্ষের কাছে পাঠানো হয়) ডলার জমা করছে।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জড়িত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা একটি গণমাধ্যমকে বলেন, এখন পর্যন্ত এসক্রো একাউন্টে ৮০৯ মিলিয়ন ডলার জমা হয়েছে। যা এক বিলিয়ন ডলারের তিন-চতুর্থাংশের বেশি। আগামীতে এই অর্থ পরিশোধ করা হবে।
কিন্তু এখানে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে কোন দেশের ব্যাংকে অর্থ পাঠানো হবে। এ নিয়ে অবশ্য রাশিয়া চীনের একটি ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর প্রস্তাব করেছে।
এই প্রস্তাবের সম্ভাবত্য যাচাই করা হচ্ছে বলে ওই গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা।
কর্মকর্তারা জানান, এই অর্থ পরিশোধে ঝুঁকি-ঝামেলা মুক্ত উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ নিয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের অংশীদাররা বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার আরোপের আগে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে প্রায় আট থেকে নয়টি কিস্তি পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে লেনদেন স্থবির হয়ে আছে।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানো হলে বিষয়টি আরও সহজ হয়ে যেত।
চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৭ সালের ১৫ মার্চ থেকে মূল টাকা পরিশোধ শুরু হবে। তবে সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই মেয়াদ ২০২৯ সালের ১৫ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে রাশিয়া।
উল্লেখ্য, প্রকল্পটিতে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট নির্মাণ করছে রাশিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট। এতে খরচ হচ্ছে প্রায় ১ হাজার ২৬৫ কোটি ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১০৫ টাকা হিসাবে)। এর ৯০ শতাংশই অর্থায়ন করেছে রাশিয়া।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রায় ৬৯ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। আগামী বছরের ৩১ ডিসেম্বর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।