সরকারের বড় সাফল্য বিদ্যুতেই গলার কাঁটা হতে পারে!



সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

  • Font increase
  • Font Decrease

গ্যাসের বর্তমান সংকট সামাল দিলে বিপদজনক পথে হাটছে পেট্রোবাংলা এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। অতিরিক্ত উৎপাদন গ্যাস ক্ষেত্র ফিল্ডগুলোর মারাত্বক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

সাঙ্গু ও বাখরাবাদের মতো পরিণতি হলে, সামাল দেওয়ার মতো বিকল্প নেই সরকারের হাতে। সেই ধাক্কা ২০২৩ সাল নাগাদ আশঙ্কা করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। যখন দেশ থাকবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনমূখী। আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য ঘরে ঘরে বিদ্যুতই এতে গলার কাঁটা হয়ে উঠতে পারে।

আন্তর্জাতিক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী খন্দকার সালেক সূফী বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, গ্যাস কুপগুলোর সাধারণত একটি ক্যাপাসিটি নির্ধারণ করা থাকে। বাংলাদেশের কূপগুলোর গ্যাস উত্তোলনের ক্যাপাসিটি রয়েছে প্রায় ৩০ এমএমসিএফডির মতো। কিন্তু কিছু কূপ থেকে দ্বিগুণ পর্যন্ত উত্তোলন করা হচ্ছে। বিষয়টি গ্যাস ফিল্ডের জন্য ভয়ানক হতে পারে। এ্মনকি স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার অনেক নজির রয়েছে। আর এই নজির পেতে বিদেশ যেতে হবে না। বাংলাদেশের সাঙ্গু গ্যাস ফিল্ড এভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। সাঙ্গুর উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১২০ এমএমসিএফডি, সেখানে ১৫০এমএমসিএফডি পর‌্যন্ত উত্তোলন করা হয়। অতিরিক্ত উত্তোলনের কারণে প্রথমে পানি পরে বালি আসতে থাকে। তারপরও বিষয়টিতে মনযোগ না দেওয়ায় ২০১৩ সালে বন্ধ হয়ে যায় সাঙ্গু। বাখরাবাদ গ্যাস ফিল্ডও এক সময় বসে যেতে ধরেছিল।

তিনি বলেন, নিকট অতিতে এতো কিছুর পরও কোনই শিক্ষা গ্রহণ করেনি পেট্রোবাংলা। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস রিজার্ভ বিবিয়ানা। বর্তমানে দৈনিক উত্তোলিত গ্যাসের মধ্যে ৪৭.৫ শতাংশ (২৩ মে ২০২১) গ্যাস আসছে এই ফিল্ড থেকে। বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন এই ফিল্ড থেকে অনেকদিন ধরে অতিরিক্ত গ্যাস উত্তোলন করছে। এতে গ্যাসের চাপ কমে এসেছে, সাঙ্গুর মতো বিবিয়ানাতেও পানি আসা শুরু করেছে। যে কোনো সময় ফিল্ডটির গ্যাস উৎপাদন ব্যাপক আকারে কমে যেতে পারে। কি হারে হ্রাস পাবে তা ধারনাতীত হতে পারে।

শেভরন অনেকদিন ধরেই বাংলাদেশ ছাড়তে চায়, বছর তিনেক আগে চীনা কোম্পানির কাছে বিক্রি করে চলে যেতে চেযেছিল। গ্যাস ফিল্ড বন্ধ হয়ে গেলে তাদের কিছু যায় আসে না। কিন্তু বাংলাদেশের বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন সালেক সূফী।

তিনি বলেন, একই অবস্থা বাঙ্গুরা গ্যাস ফিল্ডেরও। এখানেও অতিরিক্ত গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে করে গ্যাসের সঙ্গে পানি আসা শুরু হয়েছে। এই ফিল্ডটিও ঝূঁকির মধ্যে রয়েছে। সরকারের উচিত হবে ফিল্ডগুলোর উপর স্ট্যাডি করে পরিকল্পনা নেওয়া। কূপের চাপ, রিজার্ভ ও চাহিদা রিভিউ করে পরিকল্পনা করা। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত উৎপাদন করে তাদের মুনাফা দ্রুত তুলে নিতে চায়। কারণ যতো বেশি গ্যাস তুলবে ততো দ্রুত তাদের বিনিয়োগ উঠে আসবে।

তিনি বলেন, এখনই গ্যাসের উৎপাদন কমতে শুরু করেছে। এক সময় ২৭০০ এমএমসিএফডি পর‌্যন্ত উৎপাদন হয়েছে। এখন ২৫০০ এমএমসিএফডির নিচে নেমে এসেছে। ২০২৩ সাল নাগাদ গ্যাস উৎপাদন বড় ধরণের হ্রাস পেতে পারে। তেমন পরিস্থিতির জন্য পেট্রোবাংলার কোনো প্রস্তুতি ‍দৃশ্যমান নয়। তারা এখনই গ্যাসের যোগান দিতে পারছে না। এলএনজি আমদানি করেও ঘাটতি সামাল দিতে পারছে না। গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে দ্রুত গতিতে, সেখানে যদি দেশীয় গ্যাস হ্রাস পায় তা সামাল দেওয়া কঠিন হবে। বর্তমানে এলএনজি আমদানি করে ঘাটতি মোকাবেলা করার চেষ্টা চলছে। এলএনজি আমদানির সক্ষমতা বাড়ানো বিষয়টিও সময় সাপেক্ষ এবং ব্যায় বহুল।

বর্তমানে ১০০০এমএমসিএফডি এলএনজি আমদানি করার সক্ষমতা অর্জণ করেছে। এই এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা ছিল ২০১৪ সালে। বাস্তবায়ন হতে আর ৫ বছর বেশি সময় লেগে যায়, ২০১৮ সালের আগস্টে প্রথম ইউনিট ৫০০ এমএমসিএফডি আনতে সক্ষম হয়। দ্বিতীয় ইউনিট এসেছে ২০১৯ সালের এপ্রিলে। মাতারবাড়িতে ১০০০ এমএমসিএফডি ক্ষমতা সম্পন্ন ল্যান্ড বেজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা। মাত্র কনসালটেন্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে নির্ধারিত সময়ে আসবে সে কথা বলা জটিল। পূর্বের অভিজ্ঞতা নেগেটিভ উত্তর দেয়। অর্থাৎ ঘাটতি বেড়ে গেলেও বাড়তি এলএনজি আমদানির ‍পথ প্রায় বন্ধ।

অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণে ২০২৩ সালের দিকে গ্যাসের সম্ভাব্য উৎপাদন হ্রাস মোকাবেলায় কি পরিকল্পনা রয়েছে। এমন প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার পরিচালক (পরিকল্পনা) আইয়ুব খান চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, এ বিষয়ে পরিচালক (অপরেশন এন্ড মাইনস) ভালো বলতে পারবেন। তার সঙ্গে কথা বলেন।

পরিচালক (অপরেশন এন্ড মাইনস) প্রকৌশলী আলী মোঃ আল মামুন  বার্তা২৪.কমকে বলেন, পিএসসির (উৎপাদন বন্টন চুক্তি) মতামত নিয়েই অতিরিক্ত গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। যে পরিমাণ বাড়তি উৎপাদনে টেকনিক্যালি সমস্যা হওয়ার কথা না সেই পরিমাণ তোলা হচ্ছে, এতে সমস্যা হওয়ার কথা না। ২০২৩ সাল নাগাদ উৎপাদন হ্রাস মোকাবেলায় কি উদ্যোগ রয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি নতুন এসেছি, এ বিষয়ে ভালো করে না জেনে মন্তব্য করতে চাই না।

বাংলাদেশে এখন পর্য‌ন্ত ২৭টি গ্যাস ফিল্ড আবিষ্কৃত হয়েছে। এসব ফিল্ডে প্রমাণিত মজুদের পরিমাণ ২১ দশমিক ৪ টিসিএফ, আরও ৬ টিসিএফ রয়েছে সম্ভাব্য মজুদ। এরমধ্যে প্রায় সাড়ে ১৮ টিসিএফ উত্তোলন করা হয়েছে। সে হিসেবে প্রমাণিত মজুদ অবশিষ্ট রয়েছে মাত্র ৩ টিসিএফ, আর সম্ভাব্য মজুদ রয়েছে আরও ৭ টিএসএফ’র মতো। আর প্রতি বছরে উত্তোলিত হচ্ছে প্রায় ১ টিসিএফ’র মতো।

গ্যাসের ঘাটতি কারণে এখনই হিমশিম খেতে হয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগকে। গ্যাসের সরবরাহ কমে গেলে, বিদ্যুতের উৎপাদন কমে গিয়ে বেড়ে যেতে পারে লোডশেডিং। জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের এমন শঙ্কা সঠিক হলে সরকারের সবচেয়ে বড় সফলতা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ গলার কাঁটায় পরিণত হতে পারে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন এক সেমিনারে বলেছেন, আমাদের গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে ১১ হাজার মেগাওয়ার্ট। এসব কেন্দ্রে ১৫শ এমএমসিএফডি চাহিদার বিপরীতে গ্যাস সরবরাহ পাচ্ছি ১২শ এমএমসিএফডি (আগস্ট ২০২০)। যা দিয়ে ৬ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করতে পারি। প্রায় ২৫ শতাংশ গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসে থাকছে। গ্যাস থেকে পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৮২৫০ মেগাওয়াটের মতো।

গ্যাসের ঘাটতি মোকাবিলায় সবচেয়ে ভালো উপায় হতে পারতো কয়লা উত্তোলন ও বেশি বেশি কূপ খনন করা। কিন্তু সেই ট্রেন মিস করেছে বলে মনে করে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। কয়লা এখনই না তোলার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। আর বেশি কূপ খনন থেকেও রয়েছে অনেকটা পিছিয়ে। সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধ্যানও হতাশাজনক। জ্বালানি বিভাগের যখন বেহাল অবস্থা, তখন বিদ্যুৎ বিভাগ নতুন নতুন গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়ন করে চলেছে। ২০১৬ সালের রিভাইস মাস্টারপ্লান অনুযায়ী ২০২১ সালে ২৬৬১ মেগাওয়াট ও ২০২২ সালে ১১৮৮ মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র যুক্ত হওয়ার কথা।

মতামত নেওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেও বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সাক্ষাৎ পাওয়া যায় নি। ফোন করলেও রিভিস করেন নি। অন্যদিকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব আনিসুর রহমানকে প্রথমে ফোন করে পরে এসএমএস দিলেও সাড়া দেন নি।

   

বিদ্যুৎকেন্দ্র ৬০ শতাংশই বসে বসে টাকা গুনছে



সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের (ক্যাপটিভ ছাড়া) সক্ষমতা রয়েছে ২৪ হাজার ৯১১ মেগাওয়াট। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রকৃত উৎপাদন হয়েছে মাত্র ১০ হাজার ৯৭ মেগাওয়াট, যা মোট উৎপাদন ক্ষমতার মাত্র ৪০.৫৩ শতাংশ মাত্র।

অলস বসে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্র ৬০ শতাংশ হলেও। উৎপাদনের সঙ্গে তুলনা করলে এই হার দাঁড়ায় ১৫০ শতাংশে। শঙ্কার কারণ হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে থাকলেও ক্যাপাসিটি পেমেন্টের জন্য কাড়ি কাড়ি টাকা ঠিকই গুনতে হচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিতে হয়েছে ১৮ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। এ কারণে লাফিয়ে বাড়ছে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ ছিল ২.১৩ টাকা, ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৩.১৬ টাকা আর ২০২২ সালে সাড়ে ৮ টাকার মতো, এখন গড় উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এতে করে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি গুনতে হচ্ছে সরকারকে।

এখনই ৬০ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র বেকার থাকছে, প্রাক্কলন অনুযায়ী বাড়ছে না বিদ্যুতের চাহিদা। অন্যদিকে পাইপলাইনে রয়েছে অনেকগুলো বড় বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র। নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র চলে আসার অর্থ হচ্ছে অলসের অনুপাত বেড়ে যাওয়া। আর বসে থাকা মানেই গড় উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি।

পরিকল্পনা কি বলছে?

সংশোধিত পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যানে (আরপিএসএমপি-২০১৬) ২০২৩ সালে বিদ্যুৎ চাহিদার ৩ ধরনের (অর্থনীতির উচ্চ, মধ্যম ও নিম্ন গতি অনুযায়ী) প্রাক্কলন করা হয়। মধ্যম বা বেজড কেস অনুযায়ী চাহিদার প্রাক্কলন ছিল ২৩ হাজার ৪১৭ মেগাওয়াট। চাহিদার প্রাক্কলনের সঙ্গেও বাস্তবতার খুব একটা মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

বিপিডিবি মনে করছে, নানা কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। দাম বেড়ে গেলে তেলের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বসিয়ে রাখা হয়। যে কারণে বর্তমান চিত্রকে প্রকৃত অবস্থা বিবেচনা করার সুযোগ নেই। চাহিদা অনুযায়ী পুরোপুরি সরবরাহ (পিক আওয়ারে) দিলে সর্বোচ্চ চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াট হতে পারে। বর্তমানে চাহিদা ১১ থেকে ১৮ হাজার মেগাওয়াটে ওঠা-নামা করছে। এই চিত্র হচ্ছে গ্রীষ্ম মৌসুমের, শীতকালে চাহিদা কখনও কখনও ১০ হাজারের নিচে নেমে আসছে। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ড রয়েছে ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট (১৯ এপ্রিল ২০২৩)। বিপিডিবি দাবি করছে ওই সময়ে কোন লোডশেডিং ছিল না।

বিপিডিবির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, সমন্বয়হীনতাসহ নানান কারণে লোডশেডিং মুক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। অঞ্চল ও সময় ভেদে নানা ধরণের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কোথাও সঞ্চালনে, কোন অঞ্চলে বিতরণ ও উৎপাদনেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পুরোমাত্রায় সরবরাহ দেওয়া গেলে গ্রীষ্মকালে পিকের চাহিদা ১৯ হাজার মেগাওয়াট হতে পারে। সে বিবেচনায় রিজার্ভ মার্জিন যথাযথ রয়েছে। তবে শীতকালে পিকের চাহিদা নেমে আসে ১০ হাজারের নিচে। এই বিষয়টি হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

চাহিদার প্রাক্কলন, উৎপাদন ক্ষমতা ও বাস্তবতায় বিশাল ব্যবধান থাকায় সংকটের শঙ্কা দেখছেন অনেকেই। নানা কারণেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ছে, চাহিদা বাড়ছে কি। চাহিদা না বাড়লে অলস বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বোঝা কিভাবে টানবে বিদ্যুৎ খাত। শতভাগ বিদ্যুতায়ন হয়েছে, এখন আবাসিক সম্প্রসারণ করে ব্যবহার বাড়ানোর সুযোগ সীমিত। গ্রাহকের জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে, বাসা-বাড়িতে এসি, ফ্রিজ স্থাপন করবে, এতে যা চাহিদা বাড়বে। সেখানেও এনার্জি সাশ্রয়ী লাইট, ফ্যান, এসি ব্যবহার বাড়ছে।

পাওয়ার সেল’র এক গবেষণায় বলা হয়েছে, সংশোধিত পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যানে (২০১৬) অনুযায়ী ২০৩০ সালে বিদ্যুতের চাহিদার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩৭ হাজার ২৪ মেগাওয়াট, আর যদি সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহার (ইইএন্ডসি) নিশ্চিত করা যায় তাহলে চাহিদা নেমে আসবে ১৯ হাজার ৬১৯ মেগাওয়াটে।

পাওয়ার সেল’র ২০১৮ সালে ওই রিপোর্টে বলা হয়, স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্র সমূহের নেট উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে ২০১৮ সালে (ডিসেম্বর পর্যন্ত) ১৬ হাজার ৯১৪ মেগাওয়াট। পর্যায়ক্রমে বেশকিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র অবসরে যাবে। এতে করে ২০৩০ সালে পুরাতন বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে ৯ হাজার ২৮৯ মেগাওয়াট। পাইপলাইনে থাকা বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো থেকে ২০৩০ সালে নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে আসবে ৩৪ হাজার ৭২৩ মেগাওয়াট। একই সময়ে বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে ২ হাজার ৩৩৬ মেগাওয়াট। আমদানি, নতুন-পুরাতন মিলে মোট উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়াবে ৪৬ হাজার ৩৪৮ মেগাওয়াট। আর ঠিক সেই সময়ে সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে চাহিদা দাঁড়াবে ২৯ হাজার ৬১৯ মেগাওয়াট। অর্থাৎ বর্ধিত উৎপাদন ক্ষমতা হবে ১৬ হাজার ৭১৯ মেগাওয়াট। অর্থাৎ প্রাক্কলন অনুযায়ী সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০৩০ সালে চাহিদার তুলনায় প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে।

পিএসএমপি-২০১৬ কমিটি তাদের সুপারিশে বলেছে, রিজার্ভ মার্জিনের (বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও আপোদকালীন মজুদ) আন্তর্জাতিক মানদণ্ড হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। বাংলাদেশে ২০২৬ সাল পর্যন্ত ২৮ শতাংশ থাকবে। ২০২৬ সালের পর থেকে কমতে থাকবে, ২০৪১ সালে ১০ শতাংশে নেমে আসবে। রিজার্ভ মার্জিন বেশি না রেখে এলাকা ভিত্তিক ছুটির দিন ভিন্ন করে চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করার সুপারিশ দেওয়া হয়।

পিএসএমপিতে ২০২২ সালে বিদ্যুতের প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয় ১১.৩ শতাংশ এবং ২০২৩ সালে ১০.৫ শতাংশ। বিপিডিবির বার্ষিক রিপোর্ট অনুযায়ী যথাক্রমে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬.৪৫ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে মাত্র ৩.৩২ শতাংশ।

পিএসএমপিতে ২০২৩ সালে ১ লাখ ১০ হাজার ৬২৬ মিলিয়ন কিলোওয়াট আওয়ার (এমকেএইচ) বিদ্যুৎ ‍উৎপাদনের প্রাক্কলন করা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রকৃত উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৮৮ হাজার ৪৫০ এমকেএইচ । ২১-২২ অর্থবছরে ৮৫ হাজার ৬০৭ এমকেএইচ, এবং ২০-২১ অর্থবছরে ৪০ হাজার ৪২৩ এমকেএইচ।

সম্প্রতি বাঁশখালী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদন শুরু করেছে, উদ্বোধনের দ্বারপ্রান্তে মাতারবাড়ি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সামনের বছর উৎপাদনে আসবে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এই ৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রায় ৫ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন হবে। আরও চলমান বৃহৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গ্রাহককে।

বিদ্যুৎ বিভাগের প্রথম উত্তর হচ্ছে শিল্পায়ন, নতুন নতুন শিল্পায়ন হচ্ছে, হবে সেখানে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুতের চাহিদা তৈরি হবে। সরকার ১০০টি অর্থনৈতিক জোন স্থাপনের কাজ হতে নিয়েছে। সেখানে দেশী-বিদেশি অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করছে। একেকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান কয়েকটি উপজেলার সমান চাহিদা সৃষ্টি করে।

সরল অংকে শিল্পায়নের এই হিসাব অনেকটা সঠিক মনে হবে, কিন্তু শিল্পপতিরা কি সেই বিদ্যুতের ভরসা করছেন! পরিসংখ্যান বলছে মোটেই না। যারাই শিল্প স্থাপন করবেন, আগে ভাগেই ক্যাপটিভ বিদ্যুতের অনুমোদন নিয়ে রাখছেন। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের হিসেবে বলা হচ্ছে জুন ২০২৩ পর্যন্ত ৯১৭টি ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে ৩৭৬৭ মেগাওয়াট। এছাড়া ১ মেগাওয়াটের কম ২৬৮৬টি লাইসেন্স ওয়েভার সনদ ইস্যু করা হয়েছে। যেগুলোর মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে ১৮৯৭ মেগাওয়াট। বিদায়ী অর্থবছরে নতুন ১৯৯ মেগাওয়াট এবং লোডবৃদ্ধি অনুমোদন করা হয়েছে আরও ৪০ মেগাওয়াটের মতো।

১০ মেগাওয়াটের বেশি ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে বিদ্যুৎ বিভাগের পূর্বানুমতি আবশ্যক। সেখানেও আইনের ফাঁক গলতে ভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে শিল্প মালিকরা। একই কারখানায় একাধিক আইডি দিয়ে গ্যাস সংযোগ নেওয়া হচ্ছে। ২৫ মেগাওয়াট চাহিদাকে ভেঙে পৃথক ৩টি সংযোগ দেখিয়ে অনুমোদন নিচ্ছেন। সম্প্রতি ভালুকার জামিরদিয়ায় অবস্থিত এনআর গ্রুপকে ভিন্ন তিনটি গ্রাহক সংকেত নম্বর দিয়ে ২৪.৯২ মেগাওয়াট ক্যাপটিভ সংযোগ দিয়েছে তিতাস গ্যাস।

বিদ্যুৎ বিভাগের উন্নয়ন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেল’র মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসাইন বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো এখনই বন্ধ করা দরকার এগুলোতে গ্যাসের অপচয় হচ্ছে। ক্যাপটিভের গ্যাস বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দিলে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। ক্যাপটিভে গ্যাস দেওয়ায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসে থাকছে। আমরা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে প্রস্তুত আছি। আমরা এমনও বলেছি, চুক্তি থাকবে বিতরণ কোম্পানি যদি নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে তারা জরিমানা দেবে। তারপরও তারা আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

তবে সরকারের এসব কথায় আগ্রহ দেখাচ্ছে না শিল্পপতিরা। তাদের প্রয়োজন নিরবিচ্ছিন্ন এবং মানসম্মত বিদ্যুৎ, সেই জায়গায় এখনও অনেক ঘাটতি দেখছেন তারা। যে কারণে অনেকেই ঘুষ দিয়ে হলেও ক্যাপটিভ নিতে দৌড়-ঝাপ করছেন।

এক সময় ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকটের কারণে শিল্প কারখানায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে ক্যাপটিভ (শিল্প কারখানায় স্থাপিত বিদ্যুত উৎপাদন জেনারেটর) বিদ্যুৎ কেন্দ্র অনুমোদন দেওয়া হয়। এখন সেই চিত্র অনেকটাই বদলে গেছে, সরকার চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) তথ্য অনুযায়ী গত ২৬ সেপ্টেম্বর সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৬৩২ মেগাওয়ার্ট (রাত ৮)। ওই সময়ে চাহিদা ছিল মাত্র ১৪ হাজার ৭৫০ মেগাওয়াট, তখন লোডশেডিং ছিল মাত্র ১১৮ মেগাওয়াট। ২৬ সেপ্টেম্বর ২৪ ঘণ্টায় ৩০৫.৫৩৫ মিলিয়ন কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে। অর্থাৎ গড়ে ১২ হাজার ৭৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎেউৎপাদন হয়েছে। ওই দিনও অর্ধেকের বেশি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বেকার বসে থেকেছে।

এতে বর্ধিত বিদ্যুৎ বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের সবচেয়ে বড় বিপদ হচ্ছে, দিনে-রাত ও পিক-অফপিকের বিশাল ফারাক। এ কারণে বসিয়ে রেখে রেখে অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। শীত মৌসুমে এই চিত্র ভয়াবহ। সরকার অবশ্য শীতকালে বিদ্যুৎ নেপালে রফতানি নিয়ে অনেক দিন ধরেই বলাবলি করছে। কিন্তু এখনও আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে কার্যক্রম।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক সদস্য জ্বালানি বিশেষজ্ঞ মকবুল ই-এলাহী চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, বিদ্যুৎ কয় ঘণ্টা থাকে। কোন কোন এলাকায় দিনের অনেক সময় বিদ্যুৎ থাকে না। তাহলে প্রকৃত উৎপাদন বাড়বে কিভাবে। জেনারেশন ক্যাপাসিটি কতটুকু, এগুলো কি প্রয়োজন। বিইআরসিতে থাকার সময় একটি অর্ডার দিয়েছিলাম তৃতীয় দফায় রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নবায়ন না করার জন্য। তারপরও সেগুলো নবায়ন করা হলো। এভাবে বোঝা টানার কোন মানে হয় না।

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এখনই সংকট শুরু হয়ে গেছে বলে স্বীকার করেছেন। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমরা আগামী বছরে ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে অবসরে পাঠাচ্ছি। এরমধ্যে ব্যয়বহুল তেলভিত্তিক ও কিছু পুরনো গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ক্যাপটিভ থেকে বের হয়ে আসার জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আমরা অনেক এলাকায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ডাবল লাইন স্থাপন করা হচ্ছে।

;

ইন্টারকন্টিনেন্টাল চ্যাম্পিয়নশিপ বেল্ট জিতলেন বক্সার সুর কৃষ্ণ চাকমা



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রথমবারের মতো এশিয়ান বক্সিং ফেডারেশনের সুপার লাইটওয়েট ইন্টারকন্টিনেন্টাল চ্যাম্পিয়নশিপ বেল্ট জিতেছেন বাংলাদেশের পেশাদার বক্সিংয়ের অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন বক্সার সুর কৃষ্ণ চাকমা। ঢাকায় শনিবার অনুষ্ঠিত প্রো-বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ ২.০ ফাইট নাইটে নেপালের মহেন্দ্র বাহাদুর চাঁদকে হারিয়ে এই শিরোপা জেতেন সুর কৃষ্ণ চাকমা।

অদম্য ইচ্ছাশক্তি, কঠোর পরিশ্রম আর এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে পেশাদার বক্সিংয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের জন্য এই গৌরবজ্জ্বল অর্জন নিয়ে এসেছেন সুর কৃষ্ণ চাকমা। এবারের আসরে লড়াইটি ছিল তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। তবে আট রাউন্ডের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অপরাজেয় থাকার ছন্দটা ধরে রাখেন সুর কৃষ্ণ এবং পৌঁছে যান সাফল্যের শিখরে। বাংলাদেশের প্রো-বক্সিংয়ের আয়োজক এক্সেল স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট এন্ড প্রমোশন ও বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশন (বিবিএফ) এর উদ্যোগে হয়েছে এবারের চ্যাম্পিয়নশিপ। তাতে বাংলাদেশ ছাড়াও অংশ নেন রাশিয়া, ফ্রান্স, তুরস্ক, নেপাল ও ভারতের বক্সাররা। ৬টি ভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১৬জন প্রতিযোগী অংশ নিয়েছেন।

বাংলাদেশের কোনো পেশাদার বক্সারের জন্য সর্বোচ্চ এই অর্জন প্রসঙ্গে সুর বলেন, “বাংলাদেশের হয়ে বক্সিংয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া আমার স্বপ্ন। সাউথ এশিয়া থেকে এবার এশিয়ার শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছানোটা সেই স্বপ্নের কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করা। এই জয়গুলো আমাকে সাহস দিচ্ছে, প্রেরণা যোগাচ্ছে। আগামীতে বিশ্ব বক্সিংয়ে বাংলাদেশের নাম আরো উজ্জ্বল করতে পারবো বলে আমি আশাবাদী।”

বিকাশের ব্র্যান্ড এনডোর্সার সুর কৃষ্ণ চাকমা। বিকাশ নির্মিত ‘আমার বিকাশ ঠেকায় কে’ গানে প্রতীকীভাবে ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের অদম্য শক্তির বিকাশ। দেশের মানুষদের উজ্জীবিত করতে অদম্য শক্তির প্রতীক হিসেবে ‘আমার বিকাশ ঠেকায় কে’ গানের ভিডিওর প্রধান চরিত্র হিসেবে অংশ নেন সুর কৃষ্ণ চাকমা।

বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপি-র ছাত্র এই বক্সার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে। রাঙ্গামাটিতে জন্মগ্রহণ করা সুর কৃষ্ণ চাকমা বক্সিং ক্যারিয়ারের ধাপে ধাপে সফলতার যাত্রায় এগিয়ে চলেছেন।

 

;

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের উলুখোলা শাখা নতুন ঠিকানায় স্থানান্তর



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের উলুখোলা শাখা ০১ অক্টোবর ২০২৩ তারিখ হতে নতুন ঠিকানা শাহিনূর ম্যানশন, উলুখোলা, নাগরী, কালীগঞ্জ, গাজীপুর-এ আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেছে। পূর্বে এই শাখার কার্যক্রম আবদুল ওয়াহাব সরকার শপিং কমপ্লেক্স, নাগরী, কালীগঞ্জ, গাজীপুর হতে পরিচালিত হতো।

ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো: গোলাম সরওয়ার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অনলাইন মাধ্যমে শাখাটির কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ সময় ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মশিউর রহমান জেহাদ, উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউস সামাদ ও সামি করিম, প্রধান কার্যালয়ের বিভাগীয় প্রধান, শাখা ব্যবস্থাপক, ব্যাংকের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাসহ আমন্ত্রিত সম্মানিত অতিথি ও গ্রাহকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও বিশ^স্ত ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক দেশব্যাপী স্বকীয়তা বজায় রেখে সেবা প্রদান করবে বলে অনুষ্ঠানে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।

;

জনবল সংকটে বিদ্যুতের সংস্থা-কোম্পানি, পদ শূন্য ১০৪৩৬



সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

জনবল সংকটে ধুঁকছে বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন দফতর, সংস্থা ও কোম্পানিগুলো। ১৬ প্রতিষ্ঠানে ১০ হাজার ৪৩৬টি পদ শূন্য পড়ে রয়েছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা রয়েছে প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শকের দফতর।

প্রতিষ্ঠানটির ৭২ শতাংশ পদই শূন্য পড়ে রয়েছে। দফতরটির মূল দায়িত্ব হচ্ছে বিদ্যুৎ সঞ্চালণ, বিতরণ, সরবরাহ ও ব্যবহারের প্রতিটি ক্ষেত্রে জনজীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে নিরাপদ বিদ্যুৎ ব্যবহার নিশ্চিত করা। মাত্র ২৮ শতাংশ লোকবল দিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে দফতরটির কার্যক্রম।

মিশন হচ্ছে ‘জন নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে শিল্প কল-কারখানাসহ ৫০কিলোওয়াট বা তদুর্ধ্ব ক্ষমতাসম্পন্ন সকল উচ্চ ও মধ্যম চাপের নতুন বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র ও স্থাপনা পরিদর্শন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষান্তে বিদ্যুৎ সংযোগের অনুমোদন প্রদানের পাশাপাশি বৈদ্যুতিক কাজে পেশাজ্ঞান সম্পন্ন উপযুক্ত ঠিকাদার, প্রকৌশলী ও ইলেকট্রিশিয়ানদের চিহ্নিতপূর্বক তাদের অনুকূলে বৈদ্যুতিক ঠিকাদারি লাইসেন্স, সুপারভাইজারী সার্টিফিকেট ও কারিগরি পারমিট ইস্যুকরণ।

বলা চলে পুরো নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায় দায়িত্ব যাদের উপর নির্ভর করছে। মাঠ পরিদর্শন থাকলো দূরের কথা অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালনাই দূরহ হয়ে পড়েছে জনবল সংকটে।

প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শকের দফতরের সিনিয়র বিদ্যুৎ পরিদর্শক ও সদস্য সচিব প্রকৌশলী মো. আতোয়ার রহমান মোল্লা বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। নিচের দিকে ৪৪টি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড থেকে একজনকে প্রেষণে দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট শূন্যপদ পরণ করতে হলে নিয়োগ বিধিমালা অনুমোদিত হতে হবে। আমরা ১ বছর আগে নিয়োগ বিধি বিদ্যুৎ বিভাগে প্রেরণ করেছি। সেই ফাইল চলতি মাসের শুরুতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে গেছে। আমরা যোগাযোগ করেছিলাম, তারা বলেছে প্রায় তিন-শতাধিক ফাইল পড়ে রয়েছে, ধারাবাহিকভাবে এগুলো শেষ করা হবে।

প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শকের দফতরের পরেই রয়েছে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড। কোম্পানিটির অনুমোদিত পদের বিপরীতে মাত্র ৩৩ শতাংশ জনবল রয়েছে। জনবল কাঠামো অনুযায়ী ৫৭৫ পদের বিপরীতে লোকবল রয়েছে মাত্র ১৮৯ জন। আর পদ শূন্য রয়েছে ৩৮৬টি।

বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলে অনুমোদিত জনবলের সংখ্যা রয়েছে ৫৫টি। এরমধ্যে মাত্র ২৫টি পদে লোকবল রয়েছে, শূন্য পড়ে রয়েছে ৩০টি পদ। অর্থাৎ ৫৫ শতাংশ পদ খালি রয়ে গেছে গবেষণা কাউন্সিলের। বি-আর পাওয়ারজেন লিমিটেডে ৩০৯টি পদের বিপরীতে ২১৭ জন লোকবল রয়েছে। শূন্য পড়ে রয়েছে ৯২টি পদ। ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশে (ইজিসিবি) ৫৭২ পদের বিপরীতে শূন্য পড়ে রয়েছে ৬৫টি। বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো বিদ্যুৎ উৎপাদন হাব আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি (এপিএসসিএল) । বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীন থেকে পৃথক কোম্পানিতে রূপান্তরিত এপিএসসিএল’র লোকবল রয়েছে মাত্র ৮২৮ জন। আর শূন্য পড়ে রয়েছে ৫৫৫টি।

বিদ্যুৎ খাতের সবচেয়ে পুরনো এবং বড় প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। এক সময় একক আধিপত্য থাকলেও, এখন তাকে ভেঙে অনেকগুলো বিতরণ, উৎপাদন ও একটি সঞ্চালন কোম্পানি গঠন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে এখনও পাইকারি বিদ্যুতের একক ক্রেতা ও বিক্রেতা হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে বিপিডিবি। আবার বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার তার হাতেই রয়েছে। বিপিডিবিতে ৫ হাজার ১০৭টি পদ শূন্য পড়ে রয়েছে। ১৭ হাজার ৫৮৪টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে লোকবল রয়েছে মাত্র ১১ হাজার ৮৮৩ জন। তবে এই প্রতিষ্ঠানটির যেহেতু কর্ম এলাকা কমে এসেছে তাই বিষয়টিকে জরুরি বিবেচনা করেন না অনেকেই।

নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার, আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্পখাতে জ্বালানি সাশ্রয়, সংরক্ষণ ও দক্ষ ব্যবহারের মাধ্যমে জ্বালানির অপচয় রোধকল্পে ২০১২ সালে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) গঠন করা হয়। ২০১৪ সালের মে মাসে স্রেডার কার্যক্রম শুরু হয়। অতিরিক্ত সচিব পদ মর‌্যাদায় সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তার পদবী হচ্ছে চেয়ারম্যান। নাম, কাজ ও উদ্দেশ্যে বিশাল হলেও বাস্তবতায় খুবই অনালোচিত সংস্থাটি। অনুমোদিত পদ রয়েছে মাত্র ৪০টি, তারমধ্যে ১০টি এখনও শূন্য পড়ে রয়েছে। পরিচালক ১টি ও উপ-পরিচালক ১টি পদের বিপরীতে প্রেষণে নিয়োগ দেওয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে স্রেডা। এখন পর্যন্ত সাড়া মেলেনি।

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) অনুমোদিত পদ রয়েছে ৫ হাজার ৭১৮টি। শূন্য পদের সংখ্যা রয়েছে ৩৪৫ টি। কোম্পানিটিতে সরাসরি নিয়োগযোগ্য পদ রয়েছে ৮৫টি। ঢাকার আরেক বিতরণ কোম্পানি ডেসকোর ( ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি) ২২১১টি পদের বিপরীতে শূন্য রয়েছে ২২১টি। পদোন্নতিযোগ্য ১১৪ জনকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওছার আমীর আলী বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, শূন্যপদে লোকবল নিয়োগ প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। পদোন্নতির জন্য যোগ্য না হওয়ায় ১১৪ জনকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যোগ্য হলেই তাদের পদোন্নতি দেওয়া হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, লোকবল ঘাটতি থাকায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংকট হয়, অনেকের উপর বাড়তি চাপ হয়ে যায়। আমাদের সেবার পরিধি বেড়েছে, বছরে ১ লাখের উপরে গ্রাহক বাড়ছে। আগে ছিল ১৬টি ডিভিশন এখন ২৪টি ডিভিশনে উন্নীত করা হয়েছে।

ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ২০১১ পদের বিপরীতে শূ্ন্য রয়েছে ৪৮৬টি। নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) ২৬১৯ অনুমোদিত পদের বিপরীতে শূন্য রয়েছে ৫৩৫টি। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বাপবিবো) পদ শূন্য রয়েছে ২৬৬টি। দেশের একমাত্র সঞ্চালন কোম্পানি পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এর ৪৬৭৭টি পদের বিপরীতে লোকবল রয়েছে মাত্র ৩২৭৩জন।

বিদ্যুৎ বিভাগের অন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় শূন্য পদে জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য তাগাদা দিয়েছেন সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান।

;