বায়ুদূষণে ঢাকা শীর্ষে!



আলম শাইন
আলম শাইন, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

আলম শাইন, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বৈশ্বিক বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান এয়ার ভিজুয়ালের সর্বশেষ তথ্যমতে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নগরী হচ্ছে ঢাকা। এয়ার ভিজুয়াল প্রতি ঘণ্টায় বিশ্বের ৯১টি বড় শহরের বায়ুদূষণের তথ্য প্রদান করে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী নভেম্বর মাসের ৮দিন কোনো কোনো সময় ঢাকা ছিল বায়ুদূষণের শীর্ষস্থানের শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। অতীতের রেকর্ড অতিক্রম করে ২৫ নভেম্বর (সকাল ৯টা থেকে ১০টা) এক ঘণ্টার জরিপে বেরিয়ে এসেছে বিশ্বের বায়ু দূষিত শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান প্রথমস্থানে। ইতিপূর্বে পঞ্চমস্থানে ছিল ঢাকার অবস্থান। ওই সময় শহরের বায়ুদূষণের পরিমাণ ছিল ১৭১ পিএম। অন্যদিকে মঙ্গোলিয়ার উলানবাটরে ১৮২ পিএম, ভারতের কলকাতায় ১৮৭ পিএম, পাকিস্তানের লাহোরে ১৯২ পিএম ও ভারতের দিল্লিতে ২০৯ পিএম।

প্রচার মাধ্যমে বিষয়টি জানাজানি হলে পরিবেশবিদেরা ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তারা ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য ইটভাটা, মোটরযানের কালোধোঁয়া, কলকারখানার ধোঁয়া, ধুলাবালি ও নির্মাণ কাজের জন্য খোঁড়াখুঁড়িকে দায়ী করেন।

সমীক্ষায় জানা যায়, ঢাকা শহরের বায়ুদূষণের প্রধান উৎস ইটভাটা থেকে নির্গত কার্বন মনোক্সাইড ও অক্সাইড অব সালফার যা নির্গত হওয়ার ফলে রাজধানীর প্রায় ৫৮ শতাংশ বায়ুদূষণ ঘটছে। এছাড়াও রোড ডাস্ট, সয়েল ডাস্ট ১৮ শতাংশ, যানবাহন ১০ শতাংশ, বায়োমাস পোড়ানো ৮ শতাংশ এবং অন্যান্য উৎস ও শিল্প-কারখানার দূষিত ধোঁয়ার মাধ্যমে ঘটছে ৬ শতাংশ।

বিশেষ করে ইটভাটা থেকে নির্গত কার্বন মনোক্সাইডের প্রভাবে ঢাকা এবং আশপাশের বনাঞ্চল ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ইটভাটার প্রভাবে আশপাশে তুলনামূলকভাবে বৃষ্টিপাতও কমে গেছে। এর অন্যতম কারণই হচ্ছে চিমনি দিয়ে নির্গত কালোধোঁয়া প্রবাহিত হওয়া। কালোধোঁয়া এবং অধিক কার্বন মনোঅক্সাইড গ্যাসের প্রভাবে আকাশে কোনো ধরনের মেঘ পুঞ্জীভূত হতে পারে না বরং আকাশের মেঘটাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বৃষ্টিপাতে বিঘ্ন ঘটায়।

ইটভাটার সারি শুধু ঢাকা জেলার সাভার, কেরানীগঞ্জ নয়, এ সারি দেখা যায়, গাজীপুর নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জসহ দেশের অন্য জেলাগুলোতেও। তবে রাজধানীর আশপাশের জেলা-উপজেলাগুলোতে তুলনামূলকভাবে বেশি নজরে পড়ে।

২০১৮ সালের জরিপে জানা গেছে, সমগ্র দেশে ইটভাটার সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার ৯০২টি। তার মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২ হাজার ৪৮৭টি। ভাটাগুলোতে বছরে কয়লা পোড়ানো হয় এক মিলিয়ন টনেরও বেশি। আর এ থেকে প্রতিবছর কার্বন মনোঅক্সাইড নির্গত হয় প্রায় ৬ কোটি ৪০ লাখ টন। এ ছাড়াও ইটভাটা থেকে নির্গত হয় বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ধোঁয়া যা থেকে গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া ঘটে ব্যাপকভাবে। ইটভাটার মালিকরা যদি একটু সতর্ক বা সচেতন হতেন, তাহলে এ ক্ষতিকর দিক থেকে দেশ, জাতি কিংবা পরিবেশকে বাঁচাতে পারেন অবলীলায়, সাশ্রয় করতে পারেন নিজেদের অর্থনৈতিক দিকটাও। এর থেকে উত্তরণের উপায় হচ্ছে ইটভাটাগুলোকে ইট কারখানায় রূপান্তরিত করা।

যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কেন্দ্র ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ পরিচালিত যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার রাস্তার ধুলায় উচ্চমাত্রার ক্যাডমিয়াম, সিসা, দস্তা, ক্রোমিয়াম, নিকেল, ম্যাঙ্গানিজ ও কপারের উপস্থিতি রয়েছে। ফলে ঢাকায় বসবাসরত ২ কোটি মানুষের মধ্যে প্রতিনিয়ত ৬ লাখ মানুষ বায়ুদূষণের শিকার হচ্ছেন। তার মধ্যে শিশু ও বয়স্করা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। অনেকে আবার বেঁচে থাকার লড়াইয়ে হেরেও যাচ্ছেন, তার পরেও রোগের কারণ বুঝতে সক্ষম হননি সর্বসাধারণ। তারা জানেন না, বায়ুদূষণের কারণে মানুষ শ্বাসজনিত সমস্যা, নিউমোনিয়া, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

উল্লেখ্য, বড়দের তুলনায় শিশুরা ৩০ শতাংশ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। গবেষণায় জানা গেছে, মাটির কাছাকাছি বাতাসের সর্বনিম্ন স্তরে থাকে বিষাক্ত ধোঁয়াশা। শিশুরা উচ্চতায় খাটো বিধায় নিশ্বাসের সঙ্গে ওই ধোঁয়াশা দ্রুত ফুসফুসে প্রবেশ করায় রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে।

শুধু ঢাকা নয় বিশ্বের অধিকাংশ বড় শহরগুলো বায়ুদূষণের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, যার ফলে বিশ্বব্যাপী বছরে ৫ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুও ঘটছে। এছাড়াও বায়ুদূষণের কারণে মানুষের গড় আয়ু ১ বছর কিংবা তারও বেশি কমে যাচ্ছে।

উপরোক্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে বলতে হচ্ছে, সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে হলে এই দূষণ থেকে উত্তরণের পদক্ষেপ নিতে হবে দ্রুত। ঢাকার আশপাশের অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দিতে হবে তাৎক্ষণিকভাবে। শহরের রাস্তাগুলোকে দিনে অন্তত ১/২ বার পানি ছিটিয়ে ধুলিদূষণ কমাতে হবে। সম্ভব হলে সপ্তাহে একদিন রাস্তার পাশের গাছপালাকে পানি দিয়ে ধোয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি দায়ী বিষয়গুলোকে শনাক্ত করে নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে হয়তো শতভাগ সমাধান না হলেও খানিকটা নিয়ন্ত্রণে আসবে ঢাকাসহ অন্যান্য শহরগুলোর বায়ুদূষণ।


আলম শাইন: কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।

   

ফারাক্কা লংমার্চের প্রয়োজন আজও ফুরায়নি



প্রফেসর ড. মো: ফখরুল ইসলাম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

১৬ মে, ১৯৭৬। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সুপরিচিত একটি দিন। আজ থেকে প্রায় ৪৯ বছর আগে ফারাক্কা অভিমুখে দীর্ঘ পদযাত্রার দিনটি প্রতিবছর মে মাস এলেই বেশি করে সবার নজরে আসে। সারাদেশে এবছর বৈরী তাপপ্রবাহ চলতে থাকায় প্রতিটি জীব-প্রাণের মধ্যে ত্রাহি অনুভব শুরু হয়েছে।

শহুরে বিত্তশালী মানুষ শীতাতপ যন্ত্রের ঘেরে বসে কিছুটা স্বস্তি খুঁজে পাওয়ার চেষ্ট করছে। কিন্তু শহুরে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ এবং সারা দেশের গ্রামাঞ্চলের রৌদ্রজলা মানুষেরা এবছর বেশি নাকাল হয়ে পড়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কৃষকদের আবাদি জমিতে সেচের পানির আকাল। যারা নদীমাতৃক বাংলাদেশে অভিন্ন নদীর পানি সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাদের কল্যাণের জন্যই আন্দোলনে নেমেছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানি।

মাওলানা ভাসানি কোনো রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন না। তিনি ছিলেন খেটে খাওয়া মানুষের কণ্ঠস্বর, একজন মজলুম জননেতা। তার নেতৃত্বেই সংগঠিত হয়েছিল পদ্মা নদীর পানি সুবিধা থেকে বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে ঐতিহাসিক পদযাত্রা যেটি ‘ফারাক্কা লংমার্চ’ নামে পরিচিত।

বাংলাদেশের মানুষ বহুযুগ আগে থেকে ভারতের পানি আগ্রাসনের শিকার। ভারত আন্তর্জাতিক গঙ্গা নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে উজান-ভাঁটি দুই দেশের মানুষের চরম ক্ষতি সাধন করে চলেছে। তবে এজন্য ভাটির দেশ বাংলাদেশ বেশি হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে।

ফারাক্কায় বাঁধ নির্মাণের শুরু থেকে মাওলানা ভাসানি এর প্রতিবাদে সোচ্চার ছিলেন। ১৯৫২ সালে ভারত ফারাক্কায় বাঁ নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে তৎপরতা শুরু হলে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার এর প্রতিবাদ করে। তখন ভারত বলেছিল এটা অনুসন্ধান পর্যায়ে আছে। এ নিয়ে ১৯৬০ সালে এ বিষয়ে ভারত পাকিস্তান বৈঠক হয়। তবে ১৯৬১-৬২ সালে ভারত গোপনে বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করে। এ কাজে সহায়তাকারী দেশ সোভিয়েত রাশিয়া এবং খরচ ধরা হয় এক বিলিয়ন ডলার। ফিডার খাল খননের কাজ ব্যতিরেকে ১৯৭০ সালে ফারাক্কা ব্যারেজের নির্মাণ কাজ শেষ করে ভারত এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলাকে সংযুক্ত করা ২,২৪০ মিটার দীর্ঘ ফারাক্কা ব্যারেজ নির্মিত হয়ে চালু হওয়ার অপেক্ষায় থাকে।

বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর ভারত ফারাক্কার সংযোগ খালের কাজ দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করে। ১৯৭৪ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কা ব্যারেজ চালু করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর নানা কৌশলে ২১ এপ্রিল থেকে ৪১ দিনের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কা ব্যারেজ চালু করা হয়। যেটি আর বন্ধ হয়নি, আজ প্রায় ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও সেটা পরীক্ষামূলকভাবে চালুই রয়ে গেছে।

মাওলানা ভাসানি ফারাক্কা ব্যারেজ চালু হওয়ার পর থেকে পদ্মায় একতরফা পানি প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলেন।

বাংলাদেশের কৃষি, জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ সবকিছুর উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঠেকানোর জন্য ছিল তার এই আন্দোলন। ভারত প্রতিবছর ফারাক্কা ব্যারেজ দিয়ে বর্ষার অতিরিক্ত পানি আটকাতে না পেরে সব গেইট খুলে দিলে বাংলাদেশের জীবন রেখা পদ্মা নদীতে বর্ষায় ভয়াল রূপ, বন্যা ও নদীভাঙ্গন দেখা দেয়। খরায় গেট বন্ধ করে সামান্য জলধারা ছেড়ে দিলেও শীর্ণ-শুষ্ক নদীর কারণে জীবিকা হারানো দরিদ্র মানুষের দু:খ-দুর্দশা মাওলানা ভাসানির হৃদয়ে দোলা দিতে শুরু করে।

এমতাবস্থায় ১৯৭৬ সালের ১৮ এপ্রিল মাওলানা ভাসানি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে একটি পত্র লিখেন। তিনি ফারাক্কার বিরূপ প্রতিক্রিয়া বর্ণনা করে ‘ফারাক্কা লংমার্চ’ কর্মসূচির বিষয়ে অবহিত করেন। সেই চিঠির উত্তরে ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন, “এটা ভাবতে কষ্ট হচ্ছে, যিনি আমাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও আত্মত্যাগের বেদনাকে একইভাবে সহমর্মিতা দিয়ে দেখেছেন, তিনি আমাদেরকে এত বেশি ভুল বুঝেছেন এমনকি আমাদের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।” (বিবিসি বাংলা নিউজ মে ১৭, ২০১৫)।

এ বিষয়ে মাওলানা ভাসানির প্রত্যুত্তর ছিল, “আপনার ৪ মের পত্র ফারাক্কার উপর সরকারি ভাষ্যেরই পুনরাবৃত্তি। সুবিখ্যাত পূর্বপুরুষ মতিলাল নেহেরুর দৌহিত্রী ও পণ্ডিত জহরলাল নেহেরুর কন্যার কাছ থেকে এরূপ প্রত্যাশা ছিল না।”... “বাংলাদেশের উত্তরের জেলাগুলো সফর করে প্রকৃত চিত্রের প্রতিফলন দেখতে অনুরোধ জানাচ্ছি... সমস্যার ব্যাপকভিত্তিক সমাধান প্রয়োজন। এটি শুধু মৌসুমের দুমাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সারা বছরব্যাপী প্রবাহের যথাযথ বন্টনভিত্তিক হওয়া উচিত।”

এভাবে সময় গড়িয়ে গেলেও প্রকৃত সমস্যা আড়ালে থেকে যায়। যার প্রতিক্রিয়ার প্রতিফলন ঘটে ১৯৭৬ সালের ১৬ মে ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে। মাওলানা ভাসানির দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এক ঘটনার জন্ম দেয় এই লংমার্চ।

এই লংমার্চ কর্মসূচির রুট ছিল পদ্মাতীরের বিভাগীয় নগর রাজশাহীর মাদরাসা ময়দান থেকে ১৬ মে সকাল ১০টায় দীর্ঘ পদযাত্রা শুরু করে প্রেমতলী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পেরিয়ে কানসাট সীমান্ত দিয়ে ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার ফারাক্কা ব্যারেজ এলাকার পয়েন্টে গিয়ে সমাপ্তি হওয়া। রাজশাহীর মাদরাসা ময়দানে বিশাল জনসভায় বক্তব্য দিয়ে তিনি এই যাত্রা শুরু করেন।

এসময় ৯০ বছর বয়সী বর্ষীয়ান নেতা মাওলানা ভাসানি বেশ অসুস্থ ছিলেন। তবুও তিনি দু’জন লোকের কাঁধে ভর দিয়ে মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে বজ্র-কঠোর ভাষায় বক্তব্য দিয়েছিলেন। এটাকে লংমার্চে অংশগ্রহণকারীরা আশ্চর্য ঘটনা মনে করেন।

মাওলানা ভাসানির বক্তব্য ছিল, “শিশুর যেমন মায়ের দুধে অধিকার, পানির উপর তোমাদের তেমনি অধিকার। তোমরা জাগ্রত হও, তোমাদের প্রকৃতি প্রদত্ত অধিকার যে হরণ করেছে, তার বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াও।” তিনি মানুষের এই প্রাকৃতিক অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করাটাকে অত্যন্ত অন্যায় ও জুলুম হিসেবে অভিহিত করেছিলেন এবং “আকাশের দিকে হাত তুলে বলেছিলেন, আল্লাহ নিশ্চয়ই আমাদের বাঁচার পথ করে দিবেন।”

বৃদ্ধ বয়সে অনেক কষ্ট স্বীকার করে লক্ষ লক্ষ মানুষকে সাথে নিয়ে এই দীর্ঘ পদযাত্রা শুরু করেন। লংমার্চকারীদের সাথে নিয়ে তিনি ভারতের অভ্যন্তরে ফারাক্কা পয়েন্টে যাবার ঘোষণা দিলেও সীমান্ত অতিক্রম করার পূর্বে সরকারি পরামর্শে কানসাট স্থলবন্দরে উপনীত হয়ে লংমার্চ সমাপ্ত ঘোষণা করেন।

এর প্রায় কুড়ি বছর পর ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এইচ.ডি দেবগৌড়ার মধ্যে ত্রিশ বছর মেয়াদি গঙ্গা চুক্তি সম্পন্ন হয়। যেটা অদ্যাবধি বলবৎ রয়েছে। তরে গঙ্গা চুক্তির ২৭ বছর পেরিয়ে গেলেও কি পেয়েছে বাংলাদেশ, তা নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। একদিকে ফারাক্কা ব্যারেজের আয়ু ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের সাথে গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ শেষের দিকে। এই চুক্তির নবায়ন কীভাবে করা হবে তা নিয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি।

মেয়াদ উত্তীর্ণ ফারাক্কা ব্যারেজ যেহেতু উজান-ভাঁটি দু’দেশেরই ক্ষতির কারণ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, সেক্ষেত্রে এটাকে ভেঙ্গে ফেলা হবে কি-না তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মধ্যে নানা জল্পনা-কল্পনা শোনা যাচ্ছে। ফারাক্কার কারণে এর উজানে ভারতের মাটিতে জলাবদ্ধতা, ভূমিধস, বন্যা, নদীভাঙ্গন ইত্যাদি ঘটনা সংবাদের শিরোনাম হতে দেখা যায়। ফারাক্কায় যে কোনো বড় দুর্যোগের আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন সেখানকার অধিবাসীরা।

অন্যদিকে ফারাক্কায় একতরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে যে চুক্তি হয়েছে সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি না পাওয়ায় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলার মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দিনাতিপাত করছেন। বাংলাদেশে পদ্মা নদীতে বর্ষায় অকাল বন্যা হলেও শীতের আগেই শুকিয়ে শীর্ণ হয়ে পড়ে পদ্মা। এককালের প্রমত্তা পদ্মানদী যেখানে বড় বড় স্টিমারে চড়ে ঢাকা-কোলকাতা আসা যাওয়া চলতো এখন সেখানে নৌকা চালানোই দায় হয়ে পড়েছে।

পানির অভাবে নৌপথ বন্ধের সাথে পদ্মায় ইলিশ মাছসহ সাধারণ সব মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। এছাড়া নদীকেন্দ্রিক পেশা বন্ধ হয়ে জেলে, মাঝিমাল্লা, নৌশ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছে। পদ্মার শাখা ও উপনদীগুলো শুকিয়ে মরে গেছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত কবিতার চরণ ‘পার হয়ে যায় গরু পার হয় গাড়ি’- এখন পদ্মা ও তার শাখানদীগুলোর জন্য চরম সত্যবাক্যে রূপ নিয়েছে।

ফারাক্কা ব্যারেজের বিরূপ প্রভাবের ফলে বাংলাদেশে সার্বিক ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি, যা বিভিন্ন সেমিনার-কনফারেন্সে উপস্থাপিত গবেষণা রিপোর্ট থেকে প্রায়শই দেশে-বিদেশের সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম হতে দেখা যায়। ফারাক্কা সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে বহু গবেষক পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে নানা সুপারিশ প্রদান করলেও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সেগুলোকে পাত্তা দেয় না। গবেষণার সেসব ফলাফল নিয়ে তাদের কোনো বিকার কোনো কালেই লক্ষ্য করা যায় না।

এমনিকি তিস্তা নদীর পানিবণ্টন সমস্যা নিয়ে শত শত মিটিং-সেনিার, চুক্তি হওয়ার পরও অদ্যাবধি ঝুলে আছে। আন্তর্জাতিক নদীগুলোর পানি ভাগাভাগির ব্যাপারে ভারতের আন্তরিকতার অভাব ও একাই খাব নীতির কাছে ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বঞ্চিত মানুষ যুগ যুগ ধরে শুধু আর্তনাদ করেই চলেছে। এমনকি বাংলাদেশের যথেষ্ট প্রচেষ্টার ফলেও নানা ভূ-রাজনৈতিক হিসেবের গড়মিলে বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।

আন্তরিকতার ঘাটতি, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, চুক্তি নিয়ে দোদুল্যমানতা ও বার বার প্রতারণার শিকার হয়ে বাংলাদেশ অনেকটা অসহায়ভাবে অভ্যন্তরীণ প্রচেষ্টায় পানি সমস্যার মোকাবেলা করে চলেছে। তবে নদীর পানি ভাগাভাগির বর্তমান বাস্তবতা পর্যবেক্ষণ করে একথা কারো অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ফারাক্কা লংমার্চের প্রয়োজন এখন শেষ হয়েছে। বরং মাওলানা ভাসানির সেই ফারাক্কা লংমার্চের বজ্র-কঠিন ভাষণের দৃঢ়তা আজও ফুরায়নি।

আজও হারিয়ে যায়নি বাংলাদেশের চলার পথ, এগিয়ে যাবার দৃঢ় প্রত্যয়। নানা কূটকৌশল ও প্রতারণায় অনেক বঞ্চিত হয়েও মাওলানা ভাসানির মতো নৈতিক শক্তিমান অগ্রজদের দূরদৃষ্টি, দোয়া ও অনুপ্রেরণায় চারদিকের শত বাঁধা পেরিয়ে সামনের দিকে বহুদূর এগিয়ে যাবে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ- সবার সামনে নিকট ভবিষ্যতে।

লেখক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের প্রফেসর ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন।

;

রাজনীতির বিভক্তি: মার্কিন সম্পর্ক মূল্যায়নে যে তাগিদ বিশ্লেষকদের



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

দু’দিনের সফরে মঙ্গলবার ঢাকা এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু। গেল ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ফের ক্ষমতায় আসার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী আইলিন লাউবাখেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের সফরের পর ডোনাল্ড লু’র এই সফর দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। মি. লু’র এই সফরকে ঘিরে ইতিমধ্যেই পরস্পরবিরোধী বাক্যবাণ ছোঁড়াছুড়ি শুরু করেছেন দেশের প্রধান দুই দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপি’র নেতারা।

তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বিধাবিভক্তির নিরিখে ডোনাল্ড লু’র এই সফরকে মূল্যায়ন করা উচিত হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এ ছাড়াও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারও যুক্তরাষ্ট্র। তাই বাংলাদেশকে বিদ্যমান এই সম্পর্ককে ইতিবাচকভাবে আরও সম্প্রসারণের দিকেই জোর দেওয়া উচিত।

সাবেক পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, শিক্ষাবিদ ও কুটনীতিক অ্যাম্বাসেডর ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী ডোনাল্ড লু’র এই সফর নিয়ে বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘নতুন সরকার আসার পর ডোনাল্ড লু’র এটি অফিসিয়াল লেভেল রুটিন ভিজিট। আমার মনে হয় নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করার অংশই এই সফর। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই অর্থে যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম কোন মার্কিন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার এই সফরটা হচ্ছে।’

‘তিনি কি বলবেন এই সফরের পর হয়ত জানা যাবে, তাই পূর্বমূল্যায়ন না করেও দৃশ্যত যেটি বোঝা যাচ্ছে, মি. লু’র এই সফর বাংলাদেশকে নতুন করে স্টাডির অংশ। তারা নিশ্চয়ই বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নেই কাজ করবে। আশা করব, দুই দেশই সম্পর্ক ইতিবাচকভাবে আরও সম্প্রসারণের দিকে জোর দেবে। আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বিধাবিভক্তির নিরিখে একে মূল্যায়ন করা উচিত হবে না’-যোগ করেন সাবেক এই পেশাদার কুটনতিক।

বৈশ্বিক সম্পর্ক নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের আরও পরিণত চর্চার তাগিদ দিয়ে একুশে পদকজয়ী বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ আবুল মোমেন বলেন, ‘নানা বিষয়ে মতামত-মন্তব্য করাটাই রাজনীতিবিদদের কাজ। এখানে কেউ পরিপক্কভাবে দিতে পারে, কেউ পারেন না। আমেরিকা যেহেতু বেশকিছু আন্তর্জাতিক সংস্থারও গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার, বাংলাদেশও সেইসব সংস্থার থেকে সাহায্য নিচ্ছে; তাই সচরাচর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের চেয়েও বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক অনেক বর্ধিত, এটা স্বীকার করতেই হবে। রাজনীতিবিদদের সামগ্রিক পরিস্থিতি ও প্রেক্ষিত বিবেচনায় নিয়ে তাদের রাজনৈতিক চর্চা করা উচিত।’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘একধরণের দৃশ্যমান এজন্ডা তো তাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) আছেই, যেমন-গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন ইত্যাদি। এসব বিষয়ে চাপ প্রয়োগ করাটাও তাদের রীতি। আবার সম্পর্কটাকে চালিয়ে নেওয়াও তাদের বৈশিষ্ট্য। ডোনাল্ড লু এসেছেন হয়ত সেই চাপকে অব্যাহত রাখতেই। তার মানে এই নয় যে-বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের যে চলমান সম্পর্ক সেখানে তাত কোন প্রভাব পড়বে।’

আবুল মোমেন বলেন, ‘ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে চিন্তা করলে যেটি দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে দুটি প্রভাবশালী রাষ্ট্র ভারত ও চীনের সঙ্গে একইসঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্কে রয়েছে। আমেরিকাও তৃতীয় আরেকটি শক্তি-সেই দিক থেকে এটা ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য এক ধরণের সুবিধাও বটে।’

‘বাংলাদেশের তো এখন উপায় নেই-সবার সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই চলতে হবে। বাংলাদেশ যদি মালদ্বীপের মত ক্ষুদ্র দেশ হতো তাহলে হয়ত চীনের সঙ্গে সম্পর্কে ঢুকে গিয়ে চলার কথা ভাবতে পারতো। কিন্তু বাংলাদেশ জনসংখ্যার দিক দিয়ে বড় দেশ। রাজনৈতিক আকাঙ্খাও বহুমুখি। ফলে বাংলাদেশের পক্ষে মালদ্বীপের মত স্ট্যান্ড নেওয়া সম্ভব নয়’-বলেন প্রভাবশালী এই কলামিস্ট ও বিশ্লেষক।

উল্লেখ্য, ডোনাল্ড লু সফরকালে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। এ ছাড়া বৈঠক করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গেও। সফরকালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও মতবিনিময়ের কথা রয়েছে তাঁর।

;

ক্রমবর্ধমান ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের কারণ ও প্রভাব



মো. বজলুর রশিদ
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আধুনিক সমাজে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের ধারণা ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব অর্জন করছে। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ হলো, ব্যক্তির স্বাধীনতা, স্বায়ত্তশাসন এবং আত্মপ্রকাশের ওপর জোর দেওয়ার একটি বিশ্বাস ব্যবস্থা।

এটি ব্যক্তিকে সমাজের নিয়ম ও রীতিনীতির চেয়ে নিজস্ব মূল্যবোধ ও বিশ্বাস অনুসরণ করার অধিকার প্রদান করে।

ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ বৃদ্ধির অনেকগুলি কারণ রয়েছে। আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়া ব্যক্তির জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। শিক্ষা, প্রযুক্তি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ব্যক্তির আরো স্বাধীন ও আত্মনির্ভর হতে সাহায্য করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ইন্টারনেটের প্রসার ব্যক্তির তথ্য ও জ্ঞানের অভূতপূর্ব ‘অ্যাক্সেস’ প্রদান করেছে, যা তার নিজস্ব মতামত গঠন এবং তার নিজস্ব পছন্দ অনুসরণ করতে সাহায্য করে।

বিশ্বায়ন বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ধারণার সংস্পর্শে আসার সুযোগ করে দিয়েছে। এর ফলে ব্যক্তি তার নিজস্ব পরিচয় ও মূল্যবোধ সম্পর্কে আরো সচেতন হয়ে উঠেছেন। উদাহরণস্বরূপ, বিভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যক্তি ঐতিহ্যবাহী নিয়মকানুন ও রীতিনীতি সম্পর্কে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন এবং তার নিজস্ব মূল্যবোধ অনুসারে জীবনযাপন করার জন্য আরো বেশি স্বাধীনতা চাইতে শুরু করেছেন।

আধুনিক সমাজে ব্যক্তিগত সম্পদ ও সাফল্যের ওপর জোর দেওয়া হয়। এর ফলে ব্যক্তি নিজস্ব লক্ষ্য ও স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে শেখেন। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষা ও কর্মজীবনের ওপর জোর দেওয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি তার নিজস্ব জীবন নিয়ন্ত্রণ করতে এবং তার নিজস্ব স্বপ্ন পূরণ করতে আরো বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

'নারীবাদ', 'হিজড়া' অধিকার আন্দোলন ইত্যাদির মতো সামাজিক আন্দোলনগুলি ব্যক্তির স্বাধীনতা ও সমতা ধারণার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই আন্দোলনগুলি ব্যক্তি তার নিজস্ব পরিচয় গ্রহণ করতে এবং তার নিজস্ব অধিকারের জন্য দাঁড়াতে উৎসাহিত করেছে।

ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধ, যেমন পারিবারিক মূল্যবোধ, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং সামাজিক রীতিনীতি, অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও আত্মপ্রকাশের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ হতে পারে। এর ফলে অনেকেই ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধের প্রতি হতাশাবোধ করতে পারেন এবং ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের ধারণার দিকে ঝুঁকে পড়তে পারেন।

প্রযুক্তির অগ্রগতি ব্যক্তির তথ্য ও জ্ঞানের অভূতপূর্ব ‘অ্যাক্সেস’ প্রদান করেছে। এর ফলে ব্যক্তি বিভিন্ন ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে জানতে সক্ষম হয়েছেন, যা তার নিজস্ব মূল্যবোধ ও বিশ্বাস গঠনে সাহায্য করেছে।

মানুষ স্বাভাবিকভাবেই স্বাধীনতা পছন্দ করে। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ ব্যক্তির নিজস্ব জীবনযাপন এবং নিজস্ব পছন্দ অনুসরণ করার স্বাধীনতা প্রদান করে। এর ফলে অনেকেই ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের ধারণার প্রতি আকৃষ্ট হন। তবে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের অনেক ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকও রয়েছে।

ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ ব্যক্তির নিজস্ব পছন্দ ও বিশ্বাস অনুসরণ করার স্বাধীনতা প্রদান করে। এটি সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন এবং ব্যক্তিগত বিকাশকে উৎসাহিত করে।

ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ বিভিন্ন ধারণা ও জীবনধারার প্রতি সহনশীলতাকে উৎসাহিত করে। এটি একটি আরো বৈচিত্র্যময় এবং গ্রহণযোগ্য সমাজ তৈরিতে সাহায্য করে। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ ব্যক্তিকে নিজস্ব পছন্দ ও কর্মের জন্য দায়িত্বশীল করে তোলে। এটি ব্যক্তিগত উন্নয়ন এবং সামাজিক উন্নয়নের দিকে পরিচালিত করতে পারে। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ ব্যক্তির নিজের ওপর জোর দেওয়ার ফলে সমাজের মধ্যে সংযোগ ও বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।

ব্যক্তিগত স্বার্থের ওপর অতিরিক্ত জোর দেওয়ার ফলে সামাজিক অস্থিরতা ও সংঘাত বৃদ্ধি পেতে পারে। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ ব্যক্তির মধ্যে একাকী ও বিচ্ছিন্নতাবোধ তৈরি করতে পারে।

‘নারীবাদ’ আন্দোলন ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের ধারণার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল এবং এর ফলে নারীদের জন্য ব্যাপক সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে অতিরিক্ত ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ পারিবারিক মূল্যবোধের দুর্বলতা এবং পারিবারিক বিচ্ছেদের দিকে পরিচালিত করতে পারে।

ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ আধুনিক সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, যার ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় ধরনেরই প্রভাব রয়েছে। ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, সৃজনশীলতা এবং বৈচিত্র্যকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি এটি সামাজিক বন্ধন দুর্বল করতে পারে এবং ব্যক্তিগত বিচ্ছিন্নতা বৃদ্ধি করতে পারে।

ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের সুবিধাগুলি কাজে লাগানো এবং এর সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাবগুলি প্রশমিত করার জন্য ব্যক্তি, সমাজ, বেসরকারি সংস্থা এবং সরকারের পক্ষ থেকে সচেতন প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

মো. বজলুর রশিদ: সহকারী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা।

;

আইএমএফের তৃতীয় কিস্তি ও আমাদের চ্যালেঞ্জ



ইরাজ নূর চৌধুরী
আইএমএফের তৃতীয় কিস্তি ও আমাদের চ্যালেঞ্জ

আইএমএফের তৃতীয় কিস্তি ও আমাদের চ্যালেঞ্জ

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশকে দেওয়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের তৃতীয় কিস্তি অনুমোদনে গ্রাউন্ড স্টাফ লেভেলে চুক্তি হয়েছে। বাংলাদেশকে এই কিস্তিতে আইএমএফ পূর্ব নির্ধারিত কিস্তির প্রায় দ্বিগুণ ১.২ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে চলমান অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও রিজার্ভ সংকট মোকাবেলায় ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ বাংলাদেশকে প্রদান করে। বাংলাদেশে বিভিন্ন ইস্যুতে পিছিয়ে পড়া সামাজিক গোষ্ঠীর সুরক্ষা প্রদান, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিতে এই ঋণ দেওয়া হয়েছে বলে সংস্থাটি জানায়। ৪২ মাসে সাতটি কিস্তির মাধ্যমে এই ঋণ বাংলাদেশকে দেওয়া হবে বলে জানায় সংস্থাটি। এই কিস্তি পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে বলেও তখন জানানো হয়।

বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে এর আগে আরও দুই কিস্তিতে ঋণ পেয়েছে। এসময় সরকার আইএমএফের শর্তগুলো আংশিক পূরণ করতে পারলেও রিজার্ভ বাড়ানো, কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধির মতো শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। গত জুনে আইএমএফের ঋণ পাওয়ার জন্য শর্ত আলোচনার ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে আইএমএফের একটি দল ১৫ দিনের সফরে এসে সরকারের সাথে তাদের ঋণের শর্তগুলো পূরণ ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অস্থিরতা মোকাবেলায় সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছে।

আইএমএফের এই দল ঋণের কিস্তির অনুমোদনের জন্য সরকারকে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ জানায়। এর মধ্যে ডলারের মান বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া, সেবা, শিক্ষা ও কৃষিখাতে কর আরোপ, ৩ কোটি টাকার বেশি রেভিনিউ উৎপাদনকারী ব্যবসায় ১৫ শতাংশ কর আরোপ অন্যতম। এছাড়া আইএমএফ বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ ও মুদ্রাস্ফীতি রিজার্ভ বাড়াতে সরকারের কর্মপরিকল্পনা ও জ্বালানি বিল নিষ্পত্তিতে সরকারের পরিকল্পনা জানতে চেয়েছে।

আইএমএফের এমন শর্তাবলির কারণে আসন্ন বাজেটে জনগণের উপর নতুন করে নানামুখী কর-এর খড়গ নেমে আসতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। আইএমএফের শর্তাবলির কারণে ইতোমধ্যে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষেরা। মূল্যস্ফীতি, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, তেল ও গ্যাসের বৃদ্ধিসহ নানা কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত। ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে সিংহভাগ মানুষের। এরই মধ্যে সেবা, শিক্ষা, কৃষিতে ১৫ শতাংশ কর আরোপ করা হলে দ্রব্যমূল্যসহ সব কিছুর দাম বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া ব্যাংকে আর্থিক অনিয়মের কারণে আমানতে যে মন্থরতা দেখা গিয়েছিল, ঠিক সেই ধরনের মন্থরতা দেখা যাবে বিনিয়োগে। ফলে সরকার নির্বাচনে কর্মসংস্থান সৃষ্টির যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেই প্রতিশ্রুতি অনেকটাই বিঘ্নিত হবে।

২০২৩ সালে বিদেশি বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এ বছরও এমন অস্থিরতায় বিদেশি বিনিয়োগ কম হবে বলে ধারনা করা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে রিজার্ভ অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় কম রয়েছে। সরকার আমদানি কমিয়ে রিজার্ভ রক্ষার যে চেষ্টা করেছিল সেটি তেমন কাজে আসছে না। ডলারের বিনিময় হার বেঁধে দেওয়া হলে সেই বিনিময় হার কম হওয়ায় ২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে বৈধ উপায়ে বৈদেশিক মুদ্রা কম এসেছে। হুন্ডি ও অবৈধ পথে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানোর প্রবণতা বেশি দেখা গেছে। সরকার রেমিট্যান্স প্রদানকারীদের যে প্রণোদনা দিয়েছিল সেটিও খুব বেশি কাজে দেয়নি। দেশে প্রথম দশ মাসে ১৯.১১ বিলিয়ন ডলার এসেছে।

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে বাংলাদেশ এই অর্থবছরেও ২৩ বিলিয়ন ডলার পাবে। যা রিজার্ভ বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট নয়। এমন মুহূর্তে আইএমএফ ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছে এবং সরকার ডলারের দামও বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে দেশে হুন্ডি ও অবৈধ পথে টাকা পাঠানো বন্ধ হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। এছাড়াও চলমান অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও গত বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বৈদেশিক বিনিয়োগ কম হয়েছিল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদেশি বিনিয়োগ ১৬ শতাংশ কমেছে। তা বাড়ার তেমন কোন সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না।

এছাড়াও দেশে কর ছাড়ের প্রবণতার কারণে পোশাক শিল্প ছাড়া আর তেমন রপ্তানিমুখী শিল্প গড়ে উঠেনি। ফলে রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্যের অভাবেও দেশের রিজার্ভ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এছাড়া আইএমএফ তার ঋণের কিস্তির পরিমাণ দ্বিগুণ করা ও প্রয়োজনীয় রিজার্ভ ২০.১০ বিলিয়ন থেকে ১৪.৭৬ বিলিয়ন ডলার করা ইঙ্গিত দেয় যে খুব সহসা এই বৈদেশিক মুদ্রার সংকট হবে। এই সমস্যা সমাধানে একটি দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

আবার জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি তুলে নেওয়া হয়েছে একবছর আগে। ফলে নিম্ন ও মধ্যবিত্তেতে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন বছরে চার বার আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করে সেই দাম নির্ধারণ করার কথা বলেছে আইএমএফ। এছাড়াও ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে শিল্প উৎপাদন হুমকির মধ্যে পড়েছে। মফস্বল ও গ্রামে নিয়মিত লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। এই সমস্যার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ জ্বালানি সংকটকে দায়ী করছে। রিজার্ভ সংকটের কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণ জ্বালানি আমদানি করা যাচ্ছে না। এই জ্বালানি তেলের সংকট সরকারের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আকুর বিল পরিশোধের পর দেশের রিজার্ভ আরও কমবে। 

সরকার রাজস্ব বাড়ানোর জন্য কর বৃদ্ধি ও কর আরোপের মত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যার ফলে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে বটে। তবে এতে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ আর থাকছে না। দেশে বিনিয়োগ হ্রাসের কারণে কর্মসংস্থান কম হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে বেকারত্বের পরিমাণ ৩.৫১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দেশের চলমান জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ আদায় নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এছাড়াও দেশের খেলাপি ঋণ আদায়ে তেমন কোন উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। দুই শতাংশ ডাউন-পেমেন্টে ঋণ পুনঃতফসিল করার মাধ্যমে ঋণখেলাপিদের যে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে তাতে দেশের ব্যাংকিং খাত আরও বেশি বিপন্ন হবে বলে ধারনা করা যাচ্ছে। তথাপি ঋণ আদায় হলে দেশের মুদ্রাস্ফীতি পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণে আসবে। এতে করে আইএমএফের ঋণ শর্তাবলি পূরণ করাও যেমন সহজ হবে তেমনই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের উপর চাপও প্রশমিত হবে।

দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সরকারকে আইএমএফের সকল শর্ত পূরণ করতে হবে। এই সকল শর্তের চাপ থেকে নিম্ন আয়ের মানুষকে মুক্ত রাখতে সরকারকে উচ্চশ্রেণি ও ব্যবসায়ী মহলের প্রতি কঠোর হতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য অবৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স আসা বন্ধ করা, বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও ভবিষ্যতে রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। এছাড়াও মুদ্রা পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তাহলে এই অর্থনৈতিক সংকট থেকে দেশ মুক্তি লাভ করতে পারবে।

লেখক: ইরাজ নূর চৌধুরী, শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

;