গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার কি নিয়ন্ত্রণের আধুনিক হাতিয়ার?



শরিফুল হাসান সুমন
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশ যতই সমৃদ্ধি, উন্নতি আর জনগণের জন্য উন্নত জীবনমান নিশ্চিত করুক না কেন আইন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের নামে বাংলাদেশকে চোখ রাঙানি দিচ্ছে উন্নত বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলো। তাদের চোখ রাঙানি কখনো উন্নত গণতন্ত্রের নামে, কখনও মানবাধিকারের নামে, কখনও দারিদ্র আর বৈষম্যের নামে।

একদা চাষাভুষার দেশ, তলাবিহীন ঝুড়ি স্বাধীনতার ৫০ বছরে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এমনভাবে আনয়ন করেছে যে মানুষের পার ক্যাপিটা ইনকাম ২ হাজার ৪৭১ মার্কিন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। যে বাংলাদেশ ব্রিফকেস হাতে আইএমএফের কনফারেন্সে ছুটে বেড়াত বৈদেশিক অনুদান, মিডল ইস্টের যাকাত-ফেতরা এনে মানুষের ক্ষুধা মেটাতে, সেই বাংলাদেশকে এখানে বৈশ্বিক সংস্থাগুলো বিনা দ্বিধায়, শর্ত ছাড়াই ঋণ দেয়। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র বুক চিতিয়ে মোকাবিলা করে পদ্মা সেতুর মতো প্রকল্প করেছে, কোনভাবেই বাংলাদেশের সম্ভাবনা আর সমৃদ্ধি দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না বঙ্গবন্ধুর সেই উক্তির মতো, ‘আমাদের কেউ দাবায়া রাখতে পারবা না’।

ঠিক তখনই বাংলাদেশকে শাসন আর শোষণ করার, দমিয়ে রাখার নতুন নতুন হাতিয়ারের খুঁজে ব্যস্ত পশ্চিমা বিশ্ব। মানবাধিকার তেমনই একটি নতুন হাতিয়ার, যার প্রয়োগ এতদিনে এসে শুরু হয়েছে বাংলাদেশের উপর। অথচ ১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে সমূলে নিশ্চিহ্ন করা, ১৯৭৭-৭৮ এ বাংলাদেশের হাজারে হাজারে মুক্তিযুদ্ধপন্থী সামরিক অফিসারদের হত্যা করা ২০০১ সালে নির্বাচনোত্তর বাংলাদেশে নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে দুই বছরে ২০ হাজার সংখ্যালঘু আর দলীয় কর্মীকে হত্যার সময় পশ্চিমা-মানবাধিকার ঘুমিয়ে ছিল। এটা তখনই জেগে উঠেছে যখন বিশ্বব্যাংক আর দালাল গংদের চ্যালেঞ্জ দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশ পদ্মা সেতুর মতো মেগা স্ট্র্যাকচার করে ফেলল। তখন এসে ২০১৮-১৯/২০ সালে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং এর জন্য র‍্যাবকে নিষিদ্ধ করা হলো, আর বাংলাদেশকে চোখ রাঙানো শুরু হলো মানবাধিকার দিয়ে।

২০১৮-১৯-২০ সালের আইন বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের বিভিন্ন সালের রিপোর্টগুলো থেকে সাধারণত জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনগুলো তাদের বাৎসরিক ডাটা নেয়। অধিকারের আদিলুর রহমানও তথ্য দেয়। আদিলুর রহমান যেমন ২০১৩ সালের হেফাজতের সমাবেশে হতাহতের মিথ্যা তথ্য আর নাম সম্বলিত রিপোর্ট দিয়েছিল, সেটা ব্যতিরেকেই ধরে নেওয়া যাক আইন ও সালিশ কেন্দ্র যেই তথ্য তাদের বাৎসরিক রিপোর্টে উল্লেখ করেছে তা সত্য ও নির্ভুল, এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সেই ডাটার ভিত্তিতেই আজকের এই বিশ্লেষণ।

কী হয়েছিল ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে যে এই তিন বছরে প্রায় ১ হাজার মানুষকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয় বাংলাদেশে?

এই হত্যাকাণ্ডের বেশিরভাগই ঘটেছিল টেকনাফ আর বার্মা সীমান্তবর্তী এলাকায়। ইয়াবা আর মাদকদ্রব্য চোরাচালান আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছিল সেই সময়ে। টেকনাফে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল। ইয়াবা আর মাদক চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছিল টেকনাফ কক্সবাজার এলাকা, আর সেই মাদক ছড়িয়ে পড়েছিল ঢাকাসহ দেশের সকল প্রান্তে।

গ্রাফ

এই গ্রাফ মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্রে প্রাপ্ত। ইয়াবা আর মাদক চোরাচালান রোধে বিশেষ অভিযান চালানো হয় টেকনাফসহ মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে। তার ফলে ২০১৮-১৯-২০ সাল মিলে প্রায় হাজারের অধিক লোক আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অপারেশনে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যার শিকার হয়। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় চোরাকারবারিদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে প্রতিরোধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী প্রতি-আক্রমণ চালিয়েছে, তাতেই মৃত্যুর সংখ্যাটা অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি হয়েছে। এই উদ্যোগ ইয়াবা ও মাদক চোরাকারবারের মেরুদণ্ড ভাঙতে সক্ষম হয়েছিল। এখনও টেকনাফে রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ি দেখা যায় যেগুলোতে ইয়াবা’ ব্যবসায়ী গডফাদাররা বসবাস করতো। শত শত মানুষে জাঁকজমক ছিলো সেই প্রাসাদগুলো, কিন্তু বর্তমানে সেগুলো জনমানুষহীন।

গণতন্ত্র, আইনের শাসন বনাম বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড

পশ্চিমা বিশ্বের ভাষায় বাংলাদেশের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আইনের শাসনের অন্তরায়, যা গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করে। গার্ডিয়ান পত্রিকায় গত ৫/৬ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে আইন বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের লাইভ ট্র্যাকিং করে আসছে। সেই তথ্য মতে দেখা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৩ থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বরের ১৬ তারিখ পর্যন্ত আইন বহির্ভূতভাবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক হত্যার শিকার হয়েছে ১২ হাজার ৯৯ জন। এত বড় গণতন্ত্রের দেশে এত হত্যাকাণ্ড তো তাহলে আইনের শাসনকে সমূলে উৎপাটন করে দিয়েছে, এবং গণতন্ত্র সেখান থেকে ধূলিসাৎ হয়ে গেছে! তেমনই তো অর্থ দাঁড়ায়!

সাল ভিত্তিক পরিসংখ্যান

অথচ সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের ধারক আর আইনের শাসক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বছরে যে পরিমাণ হত্যাকাণ্ড ঘটে, সেটা বাংলাদেশের ১০ বছরের আইন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সমান।

আনুপাতিক হার

এখানে একটা ব্যাখ্যা আসতে পারে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বড় দেশ। সেই কারণেই একটা আনুপাতিক হারের তুলনা করা দরকার। প্রতি ১০ লক্ষ মানুষের অনুপাতে যদি দেখা হয় তাহলে দেখা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গত ১১ বছরের প্রতি ১ মিলিয়ন মানুষের মাঝে ৩.৪৮ জন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক হত্যার শিকার হয়। তার বিপরীতে গত ১১ বছরে বাংলাদেশে প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে বছরে ১ জনের কাছাকাছি মানুষ এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিংয়ের শিকার হয়েছে।

যদিও ২০১৭/১৮/১৯ সালের মাদকবিরোধী অভিযানের কারণে আনুপাতিক হারটা বেশি কারণ ঐ ৩ বছর গড়ে প্রতি মিলিয়নে ২ জন বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিল বাংলাদেশে। স্পেশাল অপারেশনের ঐ ৩ বছর বাদ দিলে, বাংলাদেশের গড় দাঁড়ায় বছরে প্রতি ১ মিলিয়নে ১ জনেরও কম।

আনুপাতিক হার


 

গত ৩ বছরে বাংলাদেশে সেই অনুপাত নেমে এসেছে অর্ধেকেরও নিচে। আমেরিকায় যেখানে গত বছরে ২০২২-এ আইন বহির্ভূতভাবে হত্যার সংখ্যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১ হাজার ২০১ জন, সেখানে ২০২২ সালে বাংলাদেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মারা যায় মাত্র ১৯ জন। যার মধ্যে ৪ জন অসুস্থতাজনিত কারণে হাসপাতালে মারা যায়, আর দুইজন পুলিশ কাস্টডিতে সুইসাইড করে। এই সংখ্যা বাদ দিলে ২০২২ সালে আমেরিকায় যেখানে ইতিহাসের সর্বোচ্চ হত্যাকাণ্ড ঘটে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা সেখানে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বনিম্ন হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যার সংখ্যা ১৩ জন। ২০২৩ সালের এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ১১ জন হত্যার শিকার হয়েছে, অথচ আমেরিকায় সংখ্যাটা আজকের তারিখেই ১ হাজার ৯৩ জন।

মৃতের সংখ্যা

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডেও বর্ণবাদী বৈষম্য

সংখ্যাগুরু সাদাদের দেশ আমেরিকা। যেখানে জনসংখ্যার প্রায় ৬০ ভাগ সাদা চামড়ার বসবাস। অন্যদিকে ব্ল্যাকদের বসবাস ১৩% প্রায়। হিস্পানিক ১৯%, এশিয়ান ৬.৩% আর শংকর জাতির বাস ৩.০%। জাতিগত নির্মূলের শিকার আমেরিকার আদিবাসীদের অবস্থান কমতে কমতে এখন এসে থেমেছে ১.৩% এ।

গণতান্ত্রিক দেশ, মানবাধিকার দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সংখ্যালঘুরাই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক সবচেয়ে বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হচ্ছে। ২০১৩ থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ১২ হাজার ৯৯ জন এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং এর মধ্যে সাদা ৫ হাজার ৩৪৮ জন, কালো ৩ হাজার ৩৯ জন, হিস্পানিক ২ হাজার ২১২ জন, এশিয়ান ২১৫ জন, আদিবাসী ১৬৭ জন, এবং মিশ্র জাতি ১ হাজার ৭১ জন।

যুক্তরাষ্ট্রে জনসংখ্যার জাতিগত অনুপাতের ভিত্তিতে হিসাব করলে দেখা যায় পুলিশ কর্তৃক হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রেও সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি নিগ্রহ আর হত্যার শিকার হচ্ছে।

 

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডেও বর্ণবাদী বৈষম্য


 

এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সংখ্যালঘুরা বিশেষ করে পুলিশি জুলুম আর রাষ্ট্র কর্তৃক হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে।

বাংলাদেশে যে সকল সংস্থা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকাণ্ড নিয়ে গবেষণা চালায়, তাদের কোন রিপোর্টে দেখা যায়নি বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর আইন ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে ধর্ম, জাতিসত্তা, সংখ্যালঘু শোষণ বা রাজনৈতিক মতাদর্শ কোন ভূমিকা রেখেছে। অথচ মানবাধিকার, আইনের শাসন আর গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় দিকপাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে শতাব্দী আগে নেটিভ আমেরিকান আদিবাসীদের সমূলে উৎপাটন করেছে, সেই ধারা অক্ষুণ্ণ রেখে এখনও সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতন আর শোষণ চালিয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদে।

বিচারহীনতা

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট ও ২০২০ সালে র‍্যাবের ওপর স্যাংশনের পর বাংলাদেশের সরকার নড়চড়ে বসে আইন বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে। র‍্যাব পুলিশ বিডিআর থেকে শুরু করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সকল বিভাগে বড়সড় রদবদল থেকে শুরু করে সার্বিক তত্ত্বাবধান এবং ডিসিপ্লিনারি সাজার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। যার প্রভাবে ২০২১ সাল থেকে আশা জাগানিয়া হারে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পরিসংখ্যান কমতে থাকে। জবাবদিহি এখানে সবচেয় বড় নিয়ামক হিসাবে কাজ করেছে। এর সাথে যোগ হয় কক্সবাজারে মেজর সিনহা হত্যায় পুলিশের দায়। সেই মামলার বিচার হয়, ওসি প্রদীপসহ তার সহকারী পরিদর্শককে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয় আদালত। এছাড়াও র‍্যাবের সহায়তায় নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর ৭ জনের হত্যাকাণ্ডে র‍্যাব অফিসারসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। এছাড়াও আরও অনেকগুলো বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মামলা আদলতে চলমান যেখানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্র অভিযোগ দায়ের করেছে এবং মামলা পরিচালনা করছে যেখানে কোন বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়া অপরাধীদের হত্যা করে বা পুলিশ কাস্টডিতে নির্যাতনের কারণে আসামি মারা যায়।

বিচারহীনতা


 

কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিত্রটা একেবারেই ভিন্ন। আইনের আর মানবাধিকারের রক্ষক ও বিজয় কেতন উত্তোলনকারী যুক্তরাষ্ট্রে গত ১১ বছরের হওয়া ১২ হাজার ৯৯টি এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিংয়ে মাত্র ৪টি ঘটনায় বিচার শুরু করেছে, যা চলছে বছরের পর বছর ধরে। যা মোট অপরাধের মাত্র ১.৯%। বাকি ৯৮.১% বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কোন সাজা তো দূর, কোন একশনই নেয়নি মার্কিন আদালত আর প্রশাসন।

বিচার আর জবাবদিহির মধ্যে আনলে যে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা কমে যায়, সেটা গত ৩ বছরে বাংলাদেশ আর যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায়। বাংলাদেশে বিচার বিভাগের হস্তক্ষেপ আর সরকারের সদিচ্ছার কারণে যেখানে গত ৩ বছরের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা ৮০, ১৯ আর ১১-তে নেমে এসেছে। সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিচারহীনতার কারণে এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং এর সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। গত তিন বছরে এই হত্যার সংখ্যা যথাক্রমে ১ হাজার ১৪৫, ১ হাজার ২০২, ১ হাজার ৯৩ (২০২৩ এর ১১ মাসে)।

অপরাধের মাত্রা

২০১৭-১৮-১৯ সালে বাংলাদেশের হওয়া আইন বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণ যেখানে ছিল মাদক চোরাচালানকারীদের সাথে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ আর বন্দুকযুদ্ধ, সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাফিক রুল ভায়োলেশনের কারণেও ৮% লোক পুলিশের হাতে মারা যায়, অর্থাৎ গত ১১ বছরে ৯৬৮ জন লোক শুধুমাত্র ট্রাফিক রুল অমান্য করার কারণে পুলিশের হাতে হত্যার শিকার হয়।

আর কোন অপরাধের অভিযোগ ছাড়াই ২১% লোক, মানে মোটের উপর ২ হাজার ৫৪০ জন লোক পুলিশি হামলায় মারা গেছে গত ১১ বছরে, যারা কোন অপরাধ করেনি বা যাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ ছিলো না পুলিশের। সহিংস অপরাধ করে হত্যার শিকার হয়েছে ৩ হাজার ৭৫০ জন মার্কিন নাগরিক যা মোট সংখ্যার মাত্র ৩১%

অপরাধের মাত্রা


 

“যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা”। পশ্চিমা দেশগুলোর যখন উন্নয়নশীল দেশের ওপর মানবাধিকার, গণতন্ত্র, বর্ণবৈষম্যের দোহাই দিয়ে সেই সকল দেশকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তখন এটাই সবার মনে আসে, সম্ভবত তারা বাংলাদেশের উন্নতিকে পছন্দ করছে না, অথবা আঞ্চলিক রাজনীতিতে বাংলাদেশের উত্থানকে তারা নিজেদের জন্য হুমকি দেখছে। মানব সভ্যতার ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, কোন জাতি উন্নত হতে থাকলে সেই জাতির নৈতিক অবস্থাও ধীরে ধীরে উন্নত হয়। অথচ ধর্ম পালন না করার অজুহাতে মানুষ পুড়িয়ে মেরে ফেলা, ডাইনি নিধনের নামে হাজার হাজার নারীদের পুড়িয়ে মারা দেশগুলো তো উন্নয়নের যাত্রা শুরু করেছে আরও কয়েক শতাব্দী আগে, তারা কেন পারল না উন্নয়নের সাথে সাথে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড থামাতে বা অপরাধের মাত্রা কমাতে?

আসলে অপরাধ দমনের নামে হত্যাকাণ্ড, দখলদারিত্ব মুক্ত করতে যুদ্ধ, সবাই করে, নাম দেয় শান্তি রক্ষার জন্য বা সন্ত্রাসবাদ দমনে অভিযান। তবে এই তারাই যখন যুদ্ধাপরাধী, নৃশংস দেশবিরোধী রাজাকারদের পাশেও মানবতার বুলি নিয়ে দাঁড়ায়, তখন নিশ্চিত সন্দেহ জাগে, তাদের উদ্দেশ্য কি আসলে মানুষের জীবন বাঁচানোর অধিকার, নাকি মানবতার নামে দেশকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা!

   

বিদেশনির্ভরতা ও বাংলাদেশের সমকালীন রাজনীতি



মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ
বিদেশনির্ভরতা ও বাংলাদেশের সমকালীন রাজনীতি

বিদেশনির্ভরতা ও বাংলাদেশের সমকালীন রাজনীতি

  • Font increase
  • Font Decrease

গণতান্ত্রিক চর্চা ধরে রাখতে হলে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাটা হলো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটি অংশ। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা বা না করাকে যদি রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয় তখন আমার বিবেচনায় সেটি ভুল রাজনৈতিক কৌশল। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হয়েছে। নির্বাচনে যাওয়ার জন্য যে শঙ্কাটা তৈরি হয়েছে সেটি হল এটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে কি হবে না? যারা বিরোধী মতবাদের লোক আছেন তারা বলছেন, বিএনপিকে বাদ নির্বাচন করলে সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। আর সরকারের কথা হলো নির্বাচনে কোন দল অংশগ্রহণ করল কি করল না সেটি বিষয় না, বিষয় হলো জনগণ অংশগ্রহণ করছে কিনা। সেক্ষেত্রে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলো কিনা তা দেখতে হবে-যাচাই করতে হবে জনগণের অংশগ্রহণের উপর ভিত্তি করে। বিএনপি’র নির্বাচন বিমূখতা তৈরি হয়েছে, তারা মনে করছে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তাদের আর অন্য কোনো রাস্তা আছে কিনা। আমার কাছে মনে হয়েছে, সেই রাস্তা খুঁজতে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  এবং পশ্চিমা বিশ্বের ওপর একটু বেশিই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে তারা। বিএনপি’র সঙ্গে তাদের সখ্যতা দেখা যাচ্ছে এবং পশ্চিামাদের সঙ্গে সে সখ্যতার কারণে নির্বাচন অবাধ, অংশগ্রহণমূলক করার অজুহাতে মার্কিনিরা আমাদের এই নির্বাচনে নগ্ন হস্তক্ষেপ করতেও উদ্যত হয়েছে, যা এরই মধ্যে দৃশ্যমান।

যদি আমরা দেখি অতীতে যেখানে মার্কিন হস্তক্ষেপমূলক নির্বাচন হয়েছে সেখানে বিএনপি সুবিধা পেয়েছে। পুরনো পথে দলটির সেই রাজনৈতিক কৌশল ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সেটি হল নির্বাচনে তারা সরাসরি যেতে প্রস্তুত না। তাদের রাজনৈতিক কৌশল হচ্ছে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপমূলক পরিস্থিতির মধ্যে তারা নির্বাচনে যেতে চায়, যাতে করে তাদের ক্ষমতায় যাওয়া নিশ্চিত হয়। সেক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়ার একটি গুরুতর অভিযোগ, বাংলাদেশের বিরোধী দলের সাম্প্রতিক সংঘাতমূলক অবরোধ-হরতাল সহিংসতার রাজনীতির পরিকল্পনায় বিএনপি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় রাষ্ট্রদূতকে জড়িয়ে ফেলেছেন। এটি নিশ্চিতভাবেই একটি দেশের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় ধরণের হুমকি। কারণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়কে প্রভাবিত করার জন্য যদি কোনো বিদেশি রাষ্ট্রদূত আমাদের রাজনীতিবিদদের নিয়ে একসঙ্গে পরিকল্পনা করেন বা সরকার উৎখাত এর পরিকল্পনা করেন; তাহলে তা জাতীয় নিরাপত্তাকে প্রচন্ডভাবে আঘাত করে। সেরকম একটা বাস্তবতার ভেতর আমরা দেখতে পাচ্ছি, ২৮ অক্টোবর সমাবেশের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্টের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ। সেই দৌড়ঝাঁপ থেকে মানুষের মনে বিএনপি’র মার্কিন সংযোগের বিষয়ে এই বিশ্বাস আরও প্রবল হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে সমর্থন করছে, এই কারণে বিএনপি ক্ষমতায়িত হবে-এটা যখন মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছে তখন অনেক মিথস্ক্রিয়া তৈরি হতে দেখব জনগণের মধ্যে।

নির্বাচনে কেবলমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের বন্ধু রাষ্ট্ররা হস্তক্ষেপমূলক আচরণের মাধ্যমে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ প্রশস্ত হতে পারে না। অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ‘নিষেধাজ্ঞা অস্ত্র’ ব্যবহার করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। বলা যেতে পারে এই অস্ত্রগুলো বাংলাদেশের রাজনীতির একাংশকে ভয় দেখানোর জন্যই হয়তো ব্যবহার করা হয়েছে। ভয়-ভীতি দেখিয়ে যখন কোনো নির্বাচনকে প্রভাবিত করা হয় তখন সেটাকে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে কোনো সহায়ক ভূমিকা বলে মনে করা যায় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই অপতৎপরতার বিপরীতে বাংলাদেশের অন্য ব্ন্ধু রাষ্ট্ররা পাশে দাঁড়িয়েছে। তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এরকম হস্তক্ষেপ সর্মথন করে না। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিশ্ব মোটামুটি বিভাজিত, এক রকম স্নায়ুযুদ্ধের মতো।

আমরা মনেকরি, বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়টি হচ্ছে সম্পূর্ণ আমাদের জনগণের বিষয়। এর কোনো সংকট তৈরি হলে সেই সংকট নিরসনে বাংলাদেশের জনগণ বা রাজনৈতিক দলগুলো ভূমিকা রাখবে। এখানে বিদেশিদের ভূমিকা রাখার কোনো সুযোগ নেই। আমরা যেটা দেখছি, প্রথমে তারা মনে করেছিল, বিদেশি হস্তক্ষেপের হুমকি দেখে হয়তো বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পিছিয়ে দেবে। এই উত্তেজনার মধ্যে যখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েই গেল তখন তারা মনে করল তফসিল তো বন্ধ করা গেল না! যদি নির্বাচন সময় মত না হয় তবে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে। ২৯ জানুয়ারি হচ্ছে সর্বশেষ সময়, এর ভিতরে নির্বাচন না হওয়ার জন্য একটি রাজনৈতিক অপকৌশল হয়তো চলছিল আন্তর্জাতিকে যোগসাজশে।

নির্বাচন যদি না হয় তখন সৃষ্ট সাংবিধানিক সংকট উত্তরণ ঘটানোর জন্য একটি অনির্বাচিত সরকার দেশের ক্ষমতা নেবেন-এই রকম চিন্তাধারা থেকেই এই রাজনৈতিক কৌশল ‘নির্বাচনে না যাওয়া’। প্রথম যে ধাপটি আছে আমার মনে হয়, যারা নির্বাচনের পক্ষে নন, তারা এখানে তাদের যে রাজনৈতিক অস্ত্র ব্যবহার করেছেন সেগুলো ব্যর্থ হয়েছে। এখন দ্বিতীয় পর্যায় হলো এই নির্বাচনের আগে দেশের যে শান্তিশৃঙ্খলার বিপর্যয় ঘটানো। সেই জন্য আমরা দেখতে পাচ্ছি, হরতাল-অবরোধের নামে সহিংসতা করা হচ্ছে। গাড়ি পোড়ানো হচ্ছে, মানুষের মৃত্যু ঘটছে, ট্রেনে আগুন দেওয়া হচ্ছে। এগুলো সবই হচ্ছে সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে। তবে জনগণের কাছে তা একেবারেই সর্মথন পায়নি। ফলশ্রুতিতে এসব কর্মসূচির প্রভাব অনেকটাই কমে গেছে। আন্দোলন-কর্মসূচির নামে সহিংসতার এই অস্ত্রটি আগামী দিনে খুব সফল থাকবে বলে মনে হয় না।

এখন তৃতীয় ধাপ হলো নির্বাচন নির্বাচনকে প্রতিহত করা। সেই প্রতিহত করতে গেলে বড় ধরণের সহিংসতা করতে হবে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে। সেই কৌশল চরিতার্থ করতে বাংলাদেশে যে একটা বড় ধরণের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে তা দ্ব্যর্থহীন ভাবেই বলা যায়। বাংলাদেশের নির্বাচনকে ঘিরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিভাজিত হয়ে পড়েছে তা আমরা ইতিমধ্যেই দেখতে পাচ্ছি। একপক্ষ নির্বাচনকে অবাধ এবং সুষ্ঠু করার জন্য তারা তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন। তারা এটি সুসম্পন্ন করতে সহায়তাও করছেন। আরেক পক্ষ বিভিন্ন অজুহাতে নির্বাচনের পরিবেশকে জটিল করে তুলতে উদ্যত। তবে অতীতের ইতিহাস থেকে আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের ভাগ্য নির্ধারণে দেশের জনগণ নিজেরাই ভূমিকা রেখেছে। ১৯৭১ সাল থেকে যতগুলো ক্রাইসিস বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে সবগুলোতেই জনগণের স্বতোস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। সেখানে বিদেশের ওপর ভর করে রাজনৈতিক কৌশল তৈরি করা ভোটের রাজনীতি নয়। যারা ভোটের রাজনীতিতে না গিয়ে বিদেশনির্ভর রাজনীতির কৌশল করছেন তারা ভোটের পক্ষে থাকবেন না সেটাই স্বাভাবিক। 

যারা বাংলাদেশের নির্বাচনের অতি আগ্রহ দেখিয়ে এখানে একটি অচলাবস্থা তৈরি করার পক্ষে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছে, তাদের বিপরীতে রাশিয়ার পররাষ্ট্র দপ্তরের সাম্প্রতিক স্টেটমেন্ট মানুষ বিশ্বাস করছে। আমরা এও দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশের একটি মতাদর্শের রাজনৈতিক শক্তি পশ্চিমাদের যেসব তথ্য সরবরাহ করেছিল বলে শোনা গেছে, এর অনেক কিছুরই সত্যতা নেই তা বিলম্বে হলেও তারা (পশ্চিমারা) হয়তো বুঝতে পারছে। এখানে অনেক গল্প হয় এবং নির্বাচন কেমন হয়েছে-এসমস্ত আলোচনা হয়। আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থায় ভোটাধিকার প্রয়োগের যে অধিকার সেটি যদি থামিয়ে দেওয়া হয় তাহলে সেটি আমাদের ভবিষ্যতে সংকট তৈরি করবে। 

সেক্ষেত্রে জনগণ এবং যে-সব রাজনৈতিক দল দেশের কথা চিন্তা করেন, স্বার্থের কথা চিন্তা করেন তাদেরকে অবশ্যই দেশের মানুষ ভালোভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করুক-এটি নিশ্চিত করেই তার পক্ষে হাঁটতে হবে। এখন ভোটের সমর্থন থাকলেও ভোটের ফলাফল উল্টে দেওয়ার যে ঘটনার কথা বলা হয় সেটিতো আমরা ১৯৭০ এর নির্বাচন যদি দেখি, যেটি পাকিস্তান সামরিক জান্তার মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছিল-সেই ঐতিহাসিক নির্বাচনেই তার উত্তর মিলবে । ভোটের সুনামি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ছিল বলেই তিনি ঐ অবস্থাতে নির্বাচনে গেছেন। সেখানে নির্বাচনে যাওয়ার রীতি থেকে বুঝা যায়, জনসমর্থনের সংকটের একটা ভীতি রয়েছে, সেই ভীতি থেকেই নির্বাচন বানচালের একটা রাজনীতির উপস্থিতি আমরা দেখতে পাচ্ছি। এই  রাজনীতিকে বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করছে। এগুলোর মাধ্যমেই সহিংসতার জন্ম হয়েছে। আমি মনে করি, সহিংসতা থেকে বেরিয়ে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথ প্রশন্ত করার মধ্য দিয়ে দেশের নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও প্রগতির দিকে আমরা ধাবিত হবো। সেজন্য এটি বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করা।  জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচনে ভোটারদের স্বাধীনতায় কোনো হস্তক্ষেপ যেমন কাম্য নয়, তেমনি নির্বাচন প্রতিরোধে সহিংসতার ব্যবহারও সমানভাবে পরিত্যাজ্য। এবং গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের বিকল্প নেই বলেই মনে করি।

নিঃসন্দেহে প্রত্যেকটি দেশ চায় তার পার্শ্ববর্তী এলাকা, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের কথা যদি বলি; বিশেষ করে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে-সেখানে দেখব কিভাবে অতীতে বাংলাদেশের মাটিকে ব্যবহার করে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ভারতের বিরুদ্ধে অস্থিরতা তৈরি করেছে। সম্ভবত সেই নিরাপত্তা ক্ষেত্রে, পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে যদি দুই দেশ শান্তিপূর্ণ অগ্রগতির পথে হাঁটতে চায় তাহলে অবশ্যই প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বিকল্প নেই। আমরা দেখে আসছি, ভারত এ বিষয়ে বরাবরই সচেষ্ট থেকেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ, জঙ্গিমুক্ত এবং বিদেশি উপস্থিতি মুক্ত একটি দেশ। এরকম একটা বাংলাদেশ বন্ধুপ্রতীম ভারত প্রত্যাশা করে। বিশেষ করে যখন নতুন করে কোনো সরকার গঠন হয় তখন সর্বাগ্রে সেখানে বিদেশিদের উপস্থিতির ঝুঁকি বেড়ে যায়। তৃতীয় শক্তির উপস্থিতি ভারতীয় সীমানা বা আধিপত্য এলাকার মধ্যে হলে নিশ্চিতভাবেই এটি ভারতের ঝুঁকি তৈরি করবে। 

আরেকটি হলো, ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চল বা সেভেন সিস্টারের উন্নয়নে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশটির জন্য। শুধু বাংলাদেশ এগিয়ে গেলে হবে না, ভারতের এই পিছিয়ে পড়া অঞ্চলকে এগিয়ে নিতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশের সাথে কাজ করতে হবে। এবং এই অতীতের বেশ কিছু ঘটনা যদি আমরা পর্যবেক্ষণ করি তাহলে আমরা দেখব, বাংলাদেশ-ভারত সুসম্পর্ক বজায় রেখে উন্নয়নের পথে যে কৌশল তৈরি করেছে সেটি দু’দেশেরই প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটা বড় ধরণের ভূমিকা রেখেছে। অহেতুক সামরিক শক্তিতে অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে না। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ভারতের একটা ভূমিকা থাকলেও পরবর্তীতে আমাদের সাথে ভারতের যে অমিমাংসিত বিষয় আছে। সেই অমিমাংসিত বিষয় নিয়ে কোনো বিপাক সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে বড় ইস্যুতে বাংলাদেশ-ভারত শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে পেরেছে। এখানে কোনো ধরনের সমস্যা তৈরি হয়নি। ছোট যে বিষয়গুলো আছে সেসব বিষয়গুলো ক্রমান্বয়ে শান্তিপূর্ণ পথে সমাধান হবে বলেই আশা করা যায়। এগুলোকে ইস্যু করে বিবাদের একটা সূত্র হিসেবে গণ্য করার যে রাজনীতি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দেখা যায় সেটিও কিন্তু ভুল রাজনীতি।

কারণ যদি ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করি সেখানে আমি দেখেছি পাকিস্তানে ভারতের ইতিবাচক সম্পর্ক না থাকার ফলে দেশটি একটি পঙ্গু রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা এবং ভারত যদি একসাথে উন্নয়নের কৌশল নিই এবং পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে যদি আন্তরিক থাকি তাহলে সেটি উভয় দেশের জন্য মঙ্গল হবে। বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের মতামত প্রকাশের সময় সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে এ অঞ্চলে তারা দ্বিতীয় পক্ষের কোনো হস্তক্ষেপ চায় না এবং বাংলাদেশের নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এখানে নির্বাচনকালে কোনো সংকট তৈরি হলে সমাধান করার দায়িত্ব বাংলাদেশের জনগণের-এটাতে তারা বিশ্বাস করে। সেই বিশ্বাসটা বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে একটা ভিত্তি দিয়েছে তা বলাই বাহুল্য। বন্ধু রাষ্ট্রগুলি যখন শান্তিপূর্ণ ও অবাধ নির্বাচনের পক্ষে ভূমিকা নেয় তখন সম্ভবত সেটি অভ্যন্তরীন রাজনীতিতে একটি মাত্রা তৈরি করে। সেখানে প্রভাবশালী অন্য দেশগুলির হস্তক্ষেপের জায়গাটি সংকুচিত হয়ে যায়।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও আমরা দেখছি, বিদেশিনির্ভর রাজনীতি ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। ফলে যেসব রাষ্ট্র বাংলাদেশ নিয়ে একধরণের হস্তক্ষেপের চেষ্টা করে আসছিল, তারা সেই জায়গা থেকে অবস্থান পরিবর্তনের চেষ্টায় রয়েছে। তা হয়ত বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক দলের পক্ষে দুঃসংবাদই বয়ে আনতে পারে। অবস্থার বাস্তবতায় বিদেশনির্ভর রাজনীতি দিয়ে ক্ষমতার পরিবর্তন অলীক কল্পনা বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। সম্প্রতি আমরা দেখতে পেলাম দেশের প্রধান তিন দলকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চিঠি দিয়ে শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে। এতে প্রতীয়মান হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হয়তো বাংলাদেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপট সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারছে না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস এবং এর আগামী দিনের পথচলার ম্যাপ সঠিকভাবে পড়তে পারেনি । এর কারণ হয়তো-যারা তাদের বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছিল, তাদের তথ্য পক্ষপাতদুষ্ট। এবং এ পক্ষপাতদুষ্ট তথ্যের শিকার হয়েই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেকেই অ্যাক্ট বা রিয়্যাক্ট করেছে। সেক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি, নির্বাচন সঠিকভাবে হওয়ার ক্ষেত্রে হঠাৎ করে ২৮ অক্টোবরের ঘটনার পরে যে চিঠি আসলো, উন্মুক্ত আলোচনার যে রিকোয়েস্ট, এটা কোনো দলকে খাদ দিয়ে উঠিয়ে আনার রিকভারি প্ল্যান ছিল হয়তো, যদিও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এই উপলব্ধিটা দেশের সব রাজনৈতিক দলের নিজেদের স্বার্থেই বিবেচনায় নেওয়াটা জরুরি।

লেখক: সামরিক ও ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং নির্বাহী পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট, ‘ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (আইসিএলডিএস)

;

আওয়ামী লীগের জন্য সম্ভাবনা নাকি নতুন চ্যালেঞ্জ? 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য এই মুহূর্তে বড় চ্যালেঞ্জ কি? নির্বাচনকে বহির্বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে উপযোগি পরিবেশ তৈরি, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, দল ও জোটে সমন্বয় নাকি নাাজুক অর্থনৈতিক অবস্থা সামাল দেওয়া? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে অন্ততঃ আজকের দিনে ক্ষমতাসীন দলের জন্য এর চেয়ে বড় এক নতুন চ্যালেঞ্জ দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক, এমনকি দলের অনেক নেতাকর্মীদের কাছেও আওয়ামী লীগের এই মুহূর্তের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখা। কারণ কমবেশি প্রতিটি আসনেই এবার ক্ষমতাসীন দলের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছেন। অতীতের নির্বাচনগুলোর চেয়ে এবার দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা অনেক বেশি।  

নির্বাচনে দলের চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণার আগে রোববার সকালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মতবিনিময় করেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী মোট ৩ হাজার ৩৬২ জনের সঙ্গে। এদিন সকাল থেকেই আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গণভবনের প্রবেশ পথে দেখা গেছে তাদের দীর্ঘ লাইন।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ যেন নির্বাচিত হতে না পারেন, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, কেউ বিনা ভোটে (প্রতিদ্বন্দ্বিতায়) নির্বাচিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে দলীয় ডামি প্রার্থী রাখার নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর বরাত দিয়ে গণমাধ্যমগুলো এই খবর দিয়েছে।

নির্বাচনের প্রাক্কালে আওয়ামীলীগের এই স্ট্যান্ড ও সাম্প্রতিক বছরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলিতে ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীন রাজনীতিতে সহিংসতার যে স্মৃতি তা পর্যালোচনা করলে সামনের সময়গুলোতে স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ আছে বৈকি! আজকের মতবিনিময়ে অংশ নেওয়া মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে যে অনুভূতি প্রকাশ করেছেন তাতে তারা স্ব-স্ব এলাকায় এমপি হওয়ার লড়াইয়ে মনোনীত প্রার্থীর সঙ্গে সম্ভাব্য বিবাদের সমূহ সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে বলেই ধারণা তাদের। যেখানে অন্য সময়ে দল মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে যাওয়াকে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করা হতো সেখানে খোদ দলীয় প্রধানের এমন নির্দেশনা তাদের হতবাকই করেছে।

আমরা ইতিপূর্বে একাধিক স্থানীয় সরকার নির্বাচন বা সংসদীয় উপ-নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় অনেক নেতাকে বহিষ্কার হতে দেখেছি। এমন ‘অপরাধে’ অনেক দলীয় এমপি বা মন্ত্রীকেও সতর্ক করতে দেখেছি হাইকমান্ডকে। সেখানে দলীয় সভাপতির এই নির্দেশনায় পূর্বের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীরা এখন দলের ডামি প্রার্থী হিসেবে দায়মুক্তি লাভ করলে ‘চেইন অব কমান্ড’ ভেঙে পড়ার আশঙ্কাও করছেন তৃণমূলের অনেক কর্মী। 

দ্বাদশ নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার তাগিদ দিয়ে সরকার ও দলীয় প্রধান বলেছেন, ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ পাশ করে আসতে পারবেন না’ এমনকি তিনি এও বলেছেন, ‘অন্য দলের প্রার্থী না থাকলে প্রত্যেক প্রার্থীকেই একজন করে দলীয় ডামি প্রার্থী রাখতে হবে’।

এই বক্তব্যের মাধ্যমে দলের অবস্থান পরিস্কার করা হয়েছে বটে কিন্তু স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণে সুযোগে আরও যারা প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতায় নামতে পারেন, সেখানে দলীয় অনৈক্যের ফসল ক্ষমতাসীন দলই পাবে-এমনটাও নিশ্চিত করে বলা মুশকিল।

অপরদিকে, দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার কারণে আওয়ামীলীগে স্থানীয় আধিপত্য রক্ষার লড়াই কতটা তীব্র হয়েছে তা সংবাদপত্রগুলো দেখলে বোঝা যাবে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া দলীয় অন্তর্কোন্দোল নেই এমন সংসদীয় আসন খোঁজে পাওয়া কঠিন। দলের অনেক শীর্ষ নেতা একে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা বললেও বাস্তবে এটি যে আধিপত্য ও স্বার্থ রক্ষার লড়াই তা অরাজনৈতিক যে কেউ স্বীকার করবেন। এমন বাস্তবতায় নেতৃত্বের এই প্রতিযোগিতা যদি ‘বৈধ’ বলেই গণ্য হয় তবে নির্বাচনের পূর্বে আধিপত্য ও গোষ্ঠিগত দ্বন্ধ বৃদ্ধির সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।

নির্বাচনে দলের অভ্যন্তরীন এই সংঘাত বৃদ্ধি পেলে সমাজবিরোধী অপশক্তিগুলো ভোটের মাঠে সাবোটাজ করবে না তা হলফ করে কে বলতে পারবে? এবং এই কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে এর দায় ক্ষমতাসীনরা এড়াতে পারবেন না। তাতে করে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের প্রতিদ্বন্ধিতায় নামিয়ে আওয়ামীলীগ লাভের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনাই কি বাড়লো না?

;

হোচিমিন, নর্থ সাউথ এবং ‘আমরা’



ড. শামীম আহমেদ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে এত পরিমাণ শিক্ষার্থী হোচিমিন ইসলামকে অতিথি হিসেবে মেনে নিতে আপত্তি জানিয়েছে, বিষয়টি আমাকে বিস্মিত করেছে। আমি নিজে কখনও নর্থ সাউথে পড়িনি, বরঞ্চ দেশের সেরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় - ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং নর্থ সাউথের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী অন্যতম সেরা প্রাইভেট ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। নর্থ সাউথে না পড়েও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আমার এক ধরনের শ্রদ্ধা কাজ করে। দেশের প্রথম প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে তারা একটি শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়েছে এবং পশ্চিমা বিশ্বে হাতে গোণা দু'চারটা বাংলাদেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একই কাতারে নর্থ সাউথ আর ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে গণ্য করা হয়। আমার ঢাকা ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির মাস্টার্সকে ক্যানাডায় মাস্টার্সের সমমান গণ্য করা হয়নি, কিন্তু ব্র্যাকের পাবলিক হেলথের মাস্টার্সকে ক্যানাডার মাস্টার্সের সমমান গণ্য করা হয়েছিল। নর্থ সাউথের ডিগ্রিকেও পশ্চিমা বিশ্বে যথেষ্ট মূল্যায়ন করা হয়।

এখন হোচিমিনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে আসতে না দিতে চাওয়া বিস্ময়কর হলেও তার প্রতিক্রিয়ায় নর্থ সাউথের বিরুদ্ধে মানুষের উল্লাস, গালিগালাজ আমাকে বিস্মিত করেছে। অর্ধেক মানুষ হোচিমিনকে মারতে চায়, অর্ধেক মানুষ মারতে চায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়কে।

খেয়াল করে দেখেছি জাতি হিসেবে আমরা কোন কিছু সমাধান করতে চাই না, আমাদের মূল আগ্রহ সবকিছু ভেঙেচুরে ধ্বংস করে ফেলায়। লালনের গান ভাল লাগে না, তার ভাস্কর্য ধ্বংস করে ফেলো, সরকার ভাল লাগে না, নিজেদের ট্যাক্সের টাকায় কেনা বাস পুড়িয়ে ফেলো। প্রতিবেশীকে ভাল লাগে না, তার পুকুরের মাছ বিষ ছড়িয়ে মেরে ফেলো। কর্মক্ষেত্রে কারও মতাদর্শ ভাল লাগে না, তার ক্যারিয়ার ধ্বংস করে ফেলো। নিজেরা খেলতে পারো না, অন্যের ব্যর্থতায় উৎসব করো। জীবনে সফলতা আনতে পারো না, নিরীহ পশু-পাখির উপর অত্যাচার করো।

চারিদিকে কেবল ধ্বংস আর ধ্বংস। হোচিমিনকে কেন্দ্র করে যে বিবাদ, তার প্রতিক্রিয়ায় এত সামাজিক মাধ্যমে শত শত পোস্ট দেখলাম, একটাতেও উল্লেখ করতে দেখলাম না, চলুন হোচিমিন আর প্রতিবাদরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে বসি। সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করি। চিন্তার উন্মেষ ঘটাই।

আমি হোচিমিনের সাথে ফেসবুকে সংযুক্ত আছি অনেকদিন। তার জীবনদর্শন, বিশ্বাসকে আমি সম্মান জানাই। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজকরা যে তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তাদেরও আমি স্বাগত জানাই। কই, কয়টা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, টিভি চ্যানেল, পত্রিকা অফিস, করপোরেট হাউজ, হোচিমিনকে তাদের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানায়? হতে পারে কিছু, কিন্তু সবাই কি? যারা সমালোচনা করছেন নর্থ সাউথের, তাদের ক'জন তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন?
যার যার ধর্ম তার তার কাছে এই যে একটা বিশ্বাস ছিল আমাদের সমাজে, যেটি প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। আমার বিশ্বাস নিয়ে আমি থাকি, তোমারটা নিয়ে তুমি থাকো—এর চাইতে সাদাসিধে জীবনদর্শন আর কী হতে পারে? তা না, আমাদের সবাইকে নিজেদের বিশ্বাসে নিয়ে আসতে হবে। না হলে দা-কুমড়া নিয়ে ঝাঁপিয়ে কল্লা ফেলে দিতে হবে।

আমার সাথে আরেকজনের দ্বিমত মানেই আমাদের শত্রু হতে হবে? সবাইকেই ব্রাজিলের সাপোর্টার হতে হবে? কেউ আর্জেন্টিনা করবে না? সবাইকেই অস্ট্রেলিয়ার সাপোর্টার হতে হবে? কেউ ওয়েস্ট ইন্ডিজ হবে না? কেউ আস্তিক, কেউ নাস্তিক; কেউ হিন্দু, কেউ খ্রিস্টান—এটাই তো একটা আদর্শ সমাজের চিত্র হবার কথা। অন্যকে আঘাত না করে হোচিমিন কীভাবে তার জীবনকে গোছাবেন সেটা নিয়ে কেন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এতটা প্রতিক্রিয়াশীল হবে? তাদের এইসব প্রতিক্রিয়া কি চার বছরের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে জন্ম নিতে পারে?

মানুষের মনে একটা বিশ্বাস জন্মাতে, সেটি বেড়ে উঠতে ও গেড়ে বসতে বছরের পর বছর লাগে। সে শিশুকালে কোন পরিবেশে বড় হয়, স্কুলে কী শেখে, বাড়িতে কী শেখে, তার বাসায় রাতের খাবারের টেবিলে কী আলোচনা হয়, সেগুলো তার অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান; কিংবা ঘৃণা, বিতৃষ্ণা জন্মাতে ও বেড়ে তুলতে সাহায্য করে।

নর্থ সাউথের কিছু শিক্ষার্থীর মধ্যে যে অসহিষ্ণু আচরণ, তা দুর্ভাগ্যজনক, কিন্তু কেবল নর্থ সাউথের চিত্র নয়; আপনি দেশের যে কোন সরকারি, বেসরকারি স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি যান, একই চিত্র দেখবেন। মূলত আমাদের সমাজে সর্বক্ষেত্রে যে বিভাজন; হয় এই পক্ষ নাহলে ওই পক্ষ, হয় কালো নাহলে শাদা—এই যে অবস্থান, এটি আমাদের আজকের যুদ্ধের ময়দানে নিয়ে এসেছে। যারা সরাসরি কারও বিরুদ্ধাচরণ করে না, তাদের বলা হয় সুবিধাবাদী! ডিপ্লোম্যাসিকে আমাদের সমাজে বিবেচনা করা হয় কুটিলতা হিসেবে!

হোচিমিন, যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আপনি গেছেন, তা আপনি ডিজার্ভ করেন না। একটি পতিত সমাজের প্রতিক্রিয়াশীলতার শিকার আপনি। পশ্চিমা বিশ্বে মানুষের বন্ধু কম থাকে, পরিবার থাকে আরও ছোট, সামাজিক জীবন হয় প্রায় অদৃশ্য। ছোট থাকতে আমাদের শেখানো হয়েছে পশ্চিমারা স্বার্থপর, কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, বুঝতে পারছি; এটিই আরাধ্য জীবন। মানুষ অন্যের জীবনে যত নাক গলানো বন্ধ করবে, সমাজ ততই সুন্দর হবে। আমাদের নাক আর আঙুলটা আমরা অন্যের কাছে ইজারা দিয়ে রাখি বলেই, এত হানাহানি।

আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, পরিবর্তন আসবে। বড় ধরনের পরিবর্তনের আগে একটা ভাঙচুর হয়, আমাদের সমাজে এখন সেই কাঙ্ক্ষিত ভাঙচুরটা চলছে। হোচিমিনসহ অনেকেই সেই আরাধ্য পরিবর্তন আনতে সহায়তা করবেন। সেই পথে বাধাও থাকবে অনেক। তবে একসময় সেইসব বাধা কেটে যাবে; অন্যের জীবন থেকে নিজের নাক ও আঙুল মানুষ নিজের ঘরে ফিরিয়ে আনবে। কিছুটা সময় লাগবে, কিন্তু হবে। আমি বিশ্বাস করি অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয় এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় খুব শীঘ্রই হোচিমিনকে তাদের ক্যাম্পাসে বক্তা হিসেবে নিয়ে আসবেন। শুধু হোচিমিনই নন, যে কোন ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গে বিশ্বাসী মানুষ তার মত প্রকাশ করবে দ্বিধাহীনচিত্তে, এটি স্বাধীনতার জন্য ৩০ লক্ষ মানুষের জীবন দিয়ে দেওয়া দেশে খুব বড় কোন স্বপ্ন হওয়ার কথা নয়; তাই এর বাস্তবায়ন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

এই চলমান প্রক্রিয়ায় হোচিমিন আরও আত্মবিশ্বাসী হবেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজকরা আরও সাহসী হবেন এবং যারা কলম হাতে লিখে যান তারা সমাজে রক্ত না ঝরিয়ে, বিরোধিতা ও হানাহানি না বাড়িয়ে, যুক্তি, ভালোবাসা ও সমাধানের পথ বাতলাবেন, এই কামনা করি।

;

শান্তি, সম্প্রীতি, উন্নয়নের পাহাড়ে গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের প্রত্যাশা



ড. মাহফুজ পারভেজ
শান্তি, সম্প্রীতি, উন্নয়নের পাহাড়ে গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের প্রত্যাশা

শান্তি, সম্প্রীতি, উন্নয়নের পাহাড়ে গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের প্রত্যাশা

  • Font increase
  • Font Decrease

 

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির ২৬ বছর পূর্তির প্রাক্কালে সেখানে বিরাজমান শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের পালে গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের হাওয়া লেগেছে। ভোটকে সামনে রেখে রাজনৈতিক প্রত্যাশা জেগেছে মানুষের মধ্যে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সমগ্র পাহাড়ে বইছে সরগরম নির্বাচনী আমেজে।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ সংঘাতের অবসানে শান্তি চুক্তি চূড়ান্ত হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ২ ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিটি পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের স্বতন্ত্র জাতিসত্তা এবং বিশেষ মর্যাদাকে স্বীকৃতি দেয় এবং পার্বত্য অঞ্চলের তিনটি জেলার স্থানীয় সরকার পরিষদের সমন্বয়ে একটি আঞ্চলিক পরিষদ প্রতিষ্ঠা করে।

শান্তিচুক্তির পর দুর্গম ও অবহেলিত পাহাড়ে সূচিত হয় নবযুগের। ভ্রাতৃঘাতী লড়াইয়ের পর দেখা পাওয়া যায় শান্তি ও সম্প্রীতির। মানবিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের ছোঁয়ায় আলোকিত হয় পার্বত্যভূমি।

বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গ্রুপগুলো চলে আসে মূলস্রোতের রাজনীতিতে। তরুণ ও যুব প্রজন্ম শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মবিকাশের পথ খুঁজে পায়। কোটা ও অন্যবিধ সুবিধার কারণে উচ্চশিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে নিজেদের ন্যায্য অধিকার ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতেও সক্ষম হয় পাহাড়ের মানুষ।

শান্তিচুক্তি-পরবর্তী বহুমাত্রিক অগ্রগতির প্রভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের মাটি ও মানুষের উপর যে ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, তার প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে সেখানকার রাজনৈতিক সচেতনতায়, অংশগ্রহণে এবং গতিশীলতায়। সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক রাজনীতির আলোকে প্রতিটি নাগরিক নিয়মতান্ত্রিকতার পথে সামনের দিকে এগিয়ে চলতে দৃঢ় প্রত্যয়ী হয়ে কাজ করছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উষ্ণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে পার্বত্য জনপদে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের মূলকেন্দ্র রাঙামাটির নির্বাচনী পরিস্থিতিতে তেমনটিই দেখা গেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯নং পার্বত্য রাঙামাটি আসনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে নৌকা প্রতীকে লড়ার জন্য আওয়ামী লীগ থেকে সর্বমোট ১১টি ফরম মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন আগ্রহী প্রার্থীরা। তফসিল অনুযায়ী অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি বাজারে বুধবার (২২ নভেম্বর) বিকালের জমজমাট ভিড়ে কানে আসে নির্বাচনী আলাপ-আলোচনা। শহরের চেয়ে পাহাড়ে শীতের আমেজ আগে চলে আসার অনুভূতিও টের পাওয়া গেলো। সন্নিকটস্থ পাহাড়ের শরীরে দেখা গেলো শীতের আগমনী কুয়াশার প্রলেপ। সবকিছু ছাপিয়ে সেখনকার মানুষের কথাবার্তার মধ্যে বিরাজ করছিল নির্বাচনী উত্তাপ।

'আমাদের কাছে নির্বাচন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় ইস্যুর পাশাপাশি পাহাড়ে বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য নির্বাচনের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি হওয়া প্রয়োজন, যারা পাহাড়ের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করবেন', জানালেন প্রসূন ত্রিপুরা।

তার সাথে কথা হয় একটি টি স্টলের সামনে। মধ্যবয়সী লোকটি বেঞ্চে বসেছিলেন। খোলামেলা আলাপে জানালেন নির্বাচন নিয়ে তার মনোভাব। বললেন, 'যোগ্য নেতৃত্ব পাহাড়ে শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য সহায়ক হবে। তারা মানুষের জন্য কাজ করতে পারবে। আমরা তেমন কাউকেই ভোট দেবো।'

বাজারের নানা প্রান্তে নির্বাচনী প্রচারণার ছাপ দেখা গেলো। সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের সমর্থনকারীদের পোস্টার, ফেস্টুন শোভা পাচ্ছে। জটলা ও আড্ডায় সমবেত মানুষের আলোচনায় স্থান পাচ্ছে নির্বাচন প্রসঙ্গ।

প্রধানত নির্বাচন নিয়েই কথা বললেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সুশীল চাকমা। ছুটিতে বাড়িতে অবস্থানকারী এই শিক্ষার্থীর সঙ্গে দেখা হয় 'এপিবিএন' কমপ্লেক্সের পাশের সড়কে। তার মতে, 'তরুণরা এবারের নির্বাচনে অনেক বেশি উৎসাহী। অনেকেই জীবনে প্রথম ভোটার হয়েছে। তাদের সংখ্যাই বেশি। তারা চায় এমন নেতা নির্বাচিত হোক, যিনি মানুষের সমস্যা সমাধানে যোগ্য ও উদ্যমী হবেন।' তার মতে, 'পার্বত্য চট্টগ্রামের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে দলগুলোর উচিত সঠিক ব্যাক্তিকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া।'

সূর্যাস্তের আবছা আলোয় শীতের পরশমাখা পার্বত্য প্রকৃতি ছেড়ে চলে আসার সময় কানে বাজছিল মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে সঞ্চারিত কথাগুলো। আর তাদের প্রত্যাশার ধ্বনি-প্রতিধ্বনিগুলো। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির ২৬ বছর পূর্তি কালে যখন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, তখন তা পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের মধ্যে আশার নতুন প্রেরণা হয়ে দেখা দিয়েছে।

ড. মাহফুজ পারভেজ, প্রফেসর, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম; নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওনাল স্টাডিজ, বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি)।

;