বন্ধুত্ব, সমর্থন ও সহযোগিতার এক অনন্য নজির



ড. দেলোয়ার হোসেন
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক একটি অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উপর প্রতিষ্ঠিত, যা এক শক্তিশালী বন্ধন হতে দুই দেশকে সহায়তা করছে। উভয় দেশের ভাষা, সাহিত্য, উত্সব, খেলাধুলা, শিল্প, ঐতিহ্যবাহী পোশাক এবং ধর্ম সহ অনেকগুলো সাধারণ সাংস্কৃতিক অনুশীলনে ব্যাপক সামঞ্জস্য দেখা যায়। এই সাধারণ সাংস্কৃতিক অনুশীলনগুলি একটি অভিন্ন পরিচয় এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক, যা উভয় জাতির একে অপরের ঐতিহ্য এবং মূল্যবোধগুলি বোঝা এবং সম্মান প্রদান করাকে সহজ করে তুলেছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও গভীর ও বিস্তৃত হয়। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ইতিহাসের অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত ছিল ১৯৭১ সালে, যখন ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তার অবিচল সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দেয়। এই সমর্থন বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল এবং এটি দুই দেশের মধ্যে গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের ভিত্তি গঠন করেছে।

বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল কারিগর। তিনি সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন বাংলাদেশের জনগণকে তাদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করার ক্ষেত্রে একত্রিতকরনের সময়। তিনি বাঙালি সংস্কৃতির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এবং এর বাইরেও এর ব্যাপ্তি বৃদ্ধির চেষ্টা করেছিলেন। গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের নীতির উপর ভিত্তি করে তাঁর একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বপ্ন ছিল যেখানে সংস্কৃতির বিচরন হবে মুক্ত ও নির্ভয়। জাতিসংঘে তার বাংলায় ভাষণ তার এক অনন্য নজির।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরের সময়টি ছিল দুই দেশের জন্য এক স্বর্ণযুগ। বাংলাদেশ সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অবকাঠামোতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করে, যা তার নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সহায়তা করে। বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সঙ্গীতের প্রসারের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও দেশটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করে এই সময়ে। বাংলাদেশ ও ভারত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে গিয়েছে বহুদূর। তবে ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে অগ্রগতির এই সময়কাল সংক্ষিপ্ত হয়ে যায়। সামরিক অভ্যুত্থান, রাজনৈতিক সংকট অস্থিতিশীলতা যা ১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে মারাত্মকভাবে সংকুচিত করে সাথে সাংস্কৃতিক সম্পর্কের পরিব্যপ্তি হয়েছিল বাধাগ্রস্ত।

১৯৯৬ সালে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা চুক্তিসহ বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়, এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল শান্তি চুক্তি ও গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের ব্যাপক উন্নতি ঘটে এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের দিকে নতুন করে মনোনিবেশ করা হয়। ভারতীয় শিল্পী ও সংগীতশিল্পীরা বাংলাদেশ সফর শুরু করেন এবং ভারতে বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি ক্রমবর্ধমান আগ্রহ দেখা দেয়। আবারও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে সম্পর্কের ক্রমোন্নতির ধারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বিশেষ করে ২০০১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড হ্রাস পায় এবং বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সহযোগিতার মাত্রাও হ্রাস পায়।

দুদেশের সম্পর্কের ধারাবাহিক বিস্তৃত অংশীদারিত্ব এবং গভীর বোঝাপড়া প্রচারের ক্ষেত্রে তাই অন্যতম কারণ হয়েছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গতিপথের একটি দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন এবং সম্পর্ককে একটি নতুন দিকে নিয়ে যাওয়া উচ্চতা যা বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপক উদ্যোগের মাধ্যমে প্রদর্শিত হয়েছে যার খাতসমূহ - নিরাপত্তা, অর্থনীতি, সংযোগ, কূটনীতি, সীমান্ত সম্পর্ক, পানি বণ্টন, এবং সংস্কৃতি। একের পর এক সম্মেলন এবং বৈঠকের পর বৈঠকের পর, ২০০৯ সাল থেকে সম্পর্ককে তার বর্তমান অবস্থায় নিয়ে আসা এবং গভীর আস্থায় রূপান্তরিত করেছে সহযোগিতা। এর পেছনে হাত ছিল সংস্কৃতির, তা বলাই বাহুল্য।

তবে উভয় দেশের গভীর সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক শিকড় রয়েছে ১৯৭১ সালের আগে থেকেই। মহান স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ ও ভারত বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তাদের সাংস্কৃতিক সহযোগিতা জোরদারকরণের ক্ষেত্রে। একটি সাংস্কৃতিক সহযোগিতা চুক্তি ১৯৭২ সালের ৩০ ডিসেম্বর, দু'দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির আওতায় উভয় দেশ সাংস্কৃতিক বিনিময় (সি ই পি) পরিচালনা করতে সম্মত হয়। শিল্প ও সংস্কৃতি, গণমাধ্যম, চলচ্চিত্র ও সংবাদমাধ্যম, যুব ক্রিয়াকলাপ, প্রত্নতত্ত্ব, জাদুঘর, গ্রন্থাগার এবং শিক্ষা কার্যক্রম এইসবই এই চুক্তির আওতাভুক্ত ছিল। ত্রয়োদশ অনুচ্ছেদের অধীনে চুক্তির উভয় পক্ষের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি যৌথ কমিশন সিইপির অগ্রগতি পর্যালোচনা করার জন্য পর্যায়ক্রমে সভা করবে, এই মর্মেই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়।

উল্লেখ্য এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ৫০ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মানুষে মানুষে যোগাযোগ, বাণিজ্য, ব্যবসা এবং সংযোগকে অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছেন তিনি সবসময়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক বিবৃতিতে বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারত দুটি পৃথক সার্বভৌম দেশ হলেও সাংস্কৃতিক সংযোগ দ্বারা সংযুক্ত যা বিভিন্ন সরকারী উদ্যোগের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়ে থাকে।

ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (আইজিসিসি) ভারতীয় কাউন্সিলের একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র যা ১১ মার্চ ২০১০ উদ্বোধন করা হয়।  সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক সেমিনার, কর্মশালা এবং প্রশিক্ষণের আয়োজনের মাধ্যমে উভয় দেশের বিশেষজ্ঞ এবং পেশাদারদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সাংস্কৃতিক সংযোগকে উত্সাহিত করে এই কেন্দ্র। উভয় দেশ শিক্ষার্থী বিনিময়েও অংশগ্রহণ করে জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর প্রচেষ্টা হিসাবে। এর জন্য রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম। ভারত সরকার ২০০ টি বৃত্তি প্রদান করে আইসিসিআর স্কলারশিপ স্কিমের মাধ্যমে প্রতি বছর বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য। উভয় দেশ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষা সংলাপ প্রতিষ্ঠায় সম্মত হয়েছে। প্রায় ৩০০০ ভারতীয় শিক্ষার্থী বাংলাদেশে মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন।

উভয় দেশ সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণকল্পে। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মানে বাংলাদেশের শততম জন্মদিন ও ৫০তম বার্ষিকী, প্রখ্যাত ভারতীয় সংগীতশিল্পী এ আর রহমান বাংলাদেশের গীতিকার জুলফিকার রাসেলের সুরে 'জয় বাংলা' গানটি গেয়েছেন। এটি নির্দেশ করে বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের মধ্যে গভীর বন্ধন। যোগাযোগ উন্নত করা হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণকে আরও কাছাকাছি আনার প্রচেষ্টায় এবং এটি একটি শীর্ষ অগ্রাধিকার। গত এক দশকে, দুই দেশ বেশ কয়েকটি সংযোগ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। যেমন কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা এবং গুয়াহাটি-শিলং-ঢাকা বাস সার্ভিস চুক্তি এবং কলকাতা-খুলনা ট্রেন সার্ভিস ২০১৫ সালের চুক্তি। এছাড়াও বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল, এবং ভারত (বিবিআইএন) চুক্তি সাক্ষর করেছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুপারিশ করেছেন ১০ বছরের কম বয়সী সকল বাংলাদেশী নাগরিকের জন্য ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকার এবং ভিসা-অন-অ্যারাইভাল যাদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি। এছাড়া বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করে “Liberation War Honour Award” যা মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানকে স্বর্ণাক্ষরে লিখে রেখেছে।

বিশ্ব ইতিহাসে দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত একই ব্যক্তির দ্বারা লেখা খুব বিরল। তবে বাংলাদেশ ও ভারতের ক্ষেত্রে এটা সত্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উভয় দেশের জাতীয় সঙ্গীত রচনা করেছিলেন। ২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠাকুর চেয়ার প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১১-১২ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫০তম জন্মবার্ষিকী এবং কাজী নজরুল ইসলামের 'বিদ্রোহী' কবিতা প্রকাশের ৯০তম বার্ষিকী উভয় দেশ একত্রে সম্মানিত করে। এর বাইরেও কিছু নিয়ামক আছে যা বুঝতে সহায়তা করে দুই দেশের সম্পর্কের গভীরতাকে।

সম্মোহনী নেতৃত্বের ইতিহাস

দুই দেশের সম্মোহনী নেতৃত্বের ইতিহাসও রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা এবং বাংলা ভাষা আন্দোলনের একজন অগ্রণী ব্যক্তিত্ব। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতায় সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাটি পালন করেন। একইভাবে, মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহেরু, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী, অটল বিহারী বাজপায়ী সহ ভারতে অনেক সম্মোহনী নেতা ছিলেন। উভয় দেশের নেতৃত্ব তাদের সম্পর্ক গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

ইতিহাসের দীর্ঘ পথ-পরিক্রমা

বাংলাদেশ ও ভারতের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে যা খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীর দিকে মোটামুটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। এই সময়ে, বর্তমানে বাংলাদেশ নামে পরিচিত অঞ্চলটি বিভিন্ন বৌদ্ধ এবং হিন্দু রাজবংশ দ্বারা শাসিত হয়েছিল। এই অঞ্চলটি ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মুসলিম তুর্কিদের নিয়ন্ত্রণে আসে এবং পরে ষোড়শ শতাব্দীতে মুঘল সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে আসে। এই সময়ে, এই অঞ্চলে হিন্দু ও ইসলামী সংস্কৃতির একটি অনন্য মিশ্রণ আবির্ভূত হয়েছিল, যা আধুনিক বাংলাদেশে ও ভারতে এখনও স্পষ্ট।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধের এক অনন্য নিয়ামক। এটি পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের কাছে সংবাদ ও তথ্য সম্প্রচারে ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, তাদের পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। রেডিও স্টেশনটি ভারতের কলকাতায় থেকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করত। একদল বাঙালি সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী এবং সাংস্কৃতিক কর্মীদের দ্বারা পরিচালিত ছিল এই কেন্দ্রটি। এই কেন্দ্রের জন্য ভারত সরকারের সাহায্য ও এর মাধ্যমে বাংলাদেশীদের পরিচালিত কার্যক্রম নির্দেশ করে দুই দেশের মধ্যকার এক অটুট বন্ধনের।

অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, বিমূর্ত মূল্যবোধ ও ভাষা বাংলা

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক একটি অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং বিমূর্ত মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠায় বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধা, অহিংসা, শিক্ষা, সহিষ্ণুতা, লিঙ্গ সমতা, পারিবারিক মূল্যবোধ, সামাজিক ন্যায়বিচার, দেশপ্রেম, পরিবেশবাদ এবং মানবাধিকার তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের মধ্যে প্রতিফলিত গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধ। এই মূল্যবোধগুলি দুই দেশের মধ্যে বিশ্বাস এবং বোঝাপড়া গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে এবং ভবিষ্যতের সহযোগিতার ভিত্তি তৈরি করেছে। এটি অপরিহার্য যে উভয় দেশ এই মূল্যবোধগুলি প্রচার অব্যাহত রাখবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরও বিকশিত হতে পারে এবং উভয় দেশই লাভবান হতে পারে।

এছাড়াও, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক উন্নয়নে ভারত সরকারের ভূমিকা অগ্রগণ্য। ভারত বাঙালি সংস্কৃতির একনিষ্ঠ সমর্থক এবং এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে উল্লেখযোগ্য সহায়তা প্রদান করেছে। ভারতীয় শিল্পী এবং সংগীতশিল্পীরা নিয়মিত বাংলাদেশ সফর করেন এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় প্রোগ্রামরয়েছে যা উভয় দেশের শিল্পী এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ধারণা এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের অনুমতি দেয়। তাছাড়া, দুই দেশের মধ্যে অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক বন্ধন হলো তাদের অভিন্ন ভাষা বাংলা। বাংলা বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা এবং আসামের কিছু অংশের সরকারী ভাষা। এটি বিশ্বের পঞ্চম সর্বাধিক কথ্য ভাষা এবং এর সমৃদ্ধ সাহিত্য এবং কবিতার জন্য বেশ সুপ্রসিদ্ধ। বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশসহ বেশ কয়েকজন শ্রেষ্ঠ লেখক ও কবি রচিত হয়েছে।

বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধা, অহিংসার চর্চা ও শিক্ষা মূল্যায়ন

উভয়ই সংস্কৃতি, ভাষা এবং ধর্মের দিক থেকে বিস্তৃত দেশ। উভয় জাতির বৈচিত্র্যকে সম্মান করার এবং আন্তঃসাংস্কৃতিক বোঝাপড়া প্রচারের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এই মূল্যবোধ তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে, যেখানে উভয় দেশ একে অপরের সাংস্কৃতিক অনুশীলন এবং বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে আসছে। বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের সংস্কৃতিতে অহিংসা একটি অপরিহার্য অংশ। মহাত্মা গান্ধীর শিক্ষার মধ্যে এই মূল্যবোধের মূল রয়েছে, যিনি ভারতের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করার হাতিয়ার হিসেবে অহিংসাকে ব্যবহার করেছিলেন। এখনও দুই দেশ এই মূল্যবোধকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। এমনকি আমাদের পররাষ্ট্র নীতির মূল বক্তব্য পর্যন্ত- “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়।” দুই দেশেই শিক্ষা বেশ সমাদৃত এমনকি কিছু ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক। উভয় দেশই সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিক্ষার গুরুত্বকে স্বীকার করে। দুই দেশের শিক্ষার্থীরা একে অপরের দেশে অধ্যয়নের সুযোগ পেয়েছে বলেই শিক্ষা দুই দেশের মধ্যে আন্তঃসাংস্কৃতিক বোঝাপড়া প্রচারের একটি হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।

সহিষ্ণুতার দীর্ঘ ইতিহাস

বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশেই সহিষ্ণুতা একটি মৌলিক মূল্যবোধ। উভয় জাতির বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং ধর্মের মানুষের সাথে সহাবস্থানের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। উভয় দেশই একে অপরের বিশ্বাস এবং সাংস্কৃতিক অনুশীলনের প্রতি সহনশীলতা এবং শ্রদ্ধা দেখিয়েছে। ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে আরেকটি দিক, উভয় দেশই প্রধানত হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং শিখদের নিয়ে গঠিত। বাংলাদেশ ও ভারতের হিন্দু মন্দির ও মুসলিম মসজিদ দুই দেশের অভিন্ন ধর্মীয় ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে। তদুপরি, উভয় দেশ দুর্গা পূজা, ঈদ এবং দীপাবলির মতো ধর্মীয় উত্সব উদযাপনের ঐতিহ্য ভাগ করে নেয়।

নারীর ক্ষমতায়ন, পারিবারিক মূল্যবোধ, সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার রক্ষা উভয় দেশই নারীর ক্ষমতায়ন এবং লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। এই মূল্যবোধ তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের মধ্যেও প্রতিফলিত হয়, যেখানে উভয় দেশ নারী অধিকার প্রচার এবং লিঙ্গ-ভিত্তিক বৈষম্য মোকাবেলায় প্রতিশ্রুতি দেখিয়ে আসছে একযোগে। পারিবারিক মূল্যবোধ বাংলাদেশী এবং ভারতীয় উভয় সংস্কৃতির একটি অপরিহার্য অঙ্গ। দুই দেশেই পারিবারিক মূল্যবোধের একটি শক্তিশালী চর্চা পরিলক্ষিত হয়। এই মূল্যবোধ দুই দেশের সংস্কৃতির মাঝে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। উভয়ই সামাজিক বৈষম্য মোকাবেলা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন সময় পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। এর মাধ্যমেই নিশ্চিত হয়, এক দেশের জনগণের প্রতি অন্য দেশের জনগণের ভ্রাতৃত্ব অনুভব করা, কেননা এর চর্চা যে তারা পায় একেবারে শৈশব থেকেই।

দেশপ্রেম, টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশবাদ

বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশেই দেশপ্রেম একটি মৌলিক মূল্যবোধ। উভয় দেশেরই তাদের দেশের প্রতি গভীর ভালবাসা এবং শ্রদ্ধা রয়েছে এবং জাতীয় পরিচয়ের একটি শক্তিশালী অনুভূতি রয়েছে। এই বোধ তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের মধ্যে প্রতিফলিত হয়, যেখানে উভয় দেশ তাদের দেশের স্বার্থ এবং মূল্যবোধপ্রচারের পাশাপাশি সম্মান দেখায় অপরের অনুভুতিরও। উভয় দেশেই পরিবেশবাদ গুরুত্ব পায় ব্যপক পরিসরে। সাথে যুক্ত আছে টেকসই উন্নয়নের ওপর জোর প্রদান। এই বিষয়দুটি তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের মধ্যেও প্রতিফলিত হয়, যেখানে উভয় দেশ পরিবেশগত সমস্যাগুলি মোকাবেলা এবং টেকসই উন্নয়নে একযোগে কাজ করে চলেছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে বিস্তৃত। দুই দেশের মধ্যে একটি ইতিহাস, রীতিনীতি, মূল্যবোধ এবং সাংস্কৃতিক অনুশীলন রয়েছে যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলে এসেছে। তাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও, উভয় দেশ বছরের পর বছর ধরে একটি শক্তিশালী বন্ধন বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। এখানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাংস্কৃতিক বন্ধনের আরও কিছু নিয়ামক অন্বেষণ করা যায়, তাদের সম্পর্ককে রূপ দানকারী অভিন্নতাগুলকেও নেয়া হবে যাচাইয়ের ছাঁচের ভেতর দিয়ে।

ধর্মীয় সহিষ্ণুতা

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আরেকটি সাধারণ সাংস্কৃতিক অনুশীলন হ'ল তাদের রন্ধনপ্রণালী। উভয় দেশই মশলাদার এবং স্বাদযুক্ত খাবারের প্রতি ভালবাসা ভাগ করে নেয়, ভাত তাদের প্রধান খাবার। সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবারগুলির মধ্যে রয়েছে বিরিয়ানি, সামোসা এবং ডাল। সরিষার তেল, জিরা এবং ধনিয়া সহ মশলার অনন্য ব্যবহারের জন্য বাঙালি রন্ধনপ্রণালী পরিচিত। উপরন্তু, উভয় দেশ চায়ের প্রতি ভালবাসাও দেখাতেও কুণ্ঠাবোধ করে না, তাই চা উভয় দেশে একটি জনপ্রিয় পানীয়।

সঙ্গীত ও নৃত্য বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্কের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। বাউল সঙ্গীত ও  যাত্রা এর মতো লোকসংগীত এবং নৃত্য উভয় দেশেই জনপ্রিয়। ভরতনাট্যম, কত্থক এবং মণিপুরী শাস্ত্রীয় নৃত্যও বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশেই জনপ্রিয়। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার মতো অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দুই দেশ একযোগে কাজ করেছে। বাংলাদেশ ও ভারত দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) এবং বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের (বিমসটেক) মতো উদ্যোগের মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারে একসাথে কাজ করে যাচ্ছে।

এ যেন এক অনন্য বন্ধন: বন্ধুত্ব, সমর্থন ও সহযোগিতা

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাংস্কৃতিক বন্ধনের একটি অনন্য ও শক্তিশালী ইতিহাস রয়েছে যা প্রাচীন। এই সম্পর্কটি বন্ধুত্ব, সমর্থন, সহযোগিতা এবং গৌরবের মুহুর্তগুলির সাথে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। এই সম্পর্ক একটি গভীর ও স্থায়ী বন্ধুত্বেরও প্রতীক, যা অভিন্ন সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং এই অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রচারের জন্য পারস্পরিক অঙ্গীকারের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা। দুই দেশের সরকার এই সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে এবং প্রয়োজনের সময় একে অপরের পাশে থেকেছে অবিচল সমর্থন প্রদানের মাধ্যমে।

এছাড়াও তাদের মধ্যকার বন্ধুত্ব পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার অঙ্গীকারের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দুই দেশ এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য একসাথে কাজ করেছে। অবধারিতভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে হাজার বছরেরও বেশি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। উভয় দেশ অভিন্ন ইতিহাস, রীতিনীতি, মূল্যবোধ এবং সাংস্কৃতিক অনুশীলনের উপর ভিত্তি করে একটি শক্তিশালী বন্ধন বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক জাতিসমূহের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা ও সহযোগিতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক কূটনীতির শক্তির সাক্ষ্য বহন করে।

১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতার পর ভারতই প্রথম বৃহৎ রাষ্ট্র যেটি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। সাথে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সম্পর্কের পুনরুজ্জীবন একটি ইতিবাচক লক্ষণ, এবং আশা করা যায় যে উভয় দেশ তাদের সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রচারের জন্য একসাথে কাজ চালিয়ে যাবে যেখানে সংস্কৃতি পালন করবে মুখ্য ভুমিকা, যা বলাই বাহুল্য। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ কিংবা কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারী উত্তর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা কিংবা বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যকার বিরাজমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা, অনাস্থা ও বৈরিতা বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীর বন্ধন আরও সুদৃঢ় করবে এবং একসঙ্গে এগিয়ে চলার পথকে করবে আরও মসৃন ও সুন্দর।

লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এবং পররাষ্ট্রনীতি ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী বিশেষজ্ঞ।

   

ভোটে ফেরাতে হবে মানুষকে



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা বাদে নির্বাচন ছিল মোটামুটি শান্তিপূর্ণ। নির্বাচনে জাল ভোট হয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের অনেকের প্রভাব ছিল সত্য, তবে মোটাদাগে বড়ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এ-ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সন্তুষ্টির কারণ রয়েছে। তবে বিব্রত হওয়ার প্রধান কারণ ভোটার উপস্থিতি। অনেক আলোচনার মধ্যেও এবারের নির্বাচনে আশানুরূপ ভোটার আসেননি।

ভোটগ্রহণের পরের দিন বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, প্রথম ধাপের নির্বাচনে ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ ভোট পড়েছে। ইলেকট্রেনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হয়েছে ২২ উপজেলায় এবং বাকি ১১৭ উপজেলায় হয়েছে ব্যালট পেপারে। ইভিএমে ভোটের হার ৩১ দশমিক ৩১ শতাংশ আর ব্যালটে ৩৭ দশমিক ২২ শতাংশ। সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে সোনাতলা, মীরসরাই ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলায়। সেসব জায়গায় ভোট পড়েছে মাত্র ১৭ শতাংশ। সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলায়। সেখানে ভোট পড়েছে ৭৩ দশমিক ১ শতাংশ।

সবচেয়ে বেশি ভোট পড়া এলাকা জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলায় মোট ভোটার ৯৫ হাজার ১৯১ জন। এর মধ্যে ৬৪ হাজার ৭৩০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ওখানে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দুলাল মিয়া সরদার ৩০ হাজার ৩৯০ ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ নেতা তাইফুল ইসলাম তালুকদার পান ২২ হাজার ৯০১ ভোট।

কম ভোট পড়া এলাকাগুলোর মধ্যে বগুড়া সোনাতলায় ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৬৪ হাজার ৩৩২ জন। এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ২৮ হাজার ২৭৮ জন। ওখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিনহাদুজ্জামান লিটন ২০ হাজার ৪৮৩ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান পদে পুনরায় বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. জাকির হোসেন পান ৭ হাজার ৩৪৫ ভোট। মিনহাদুজ্জামান লিটন সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নানের ছোট ভাই। আওয়ামী লীগের এই এমপির ভাইই কেবল নির্বাচনে বিজয়ী হননি, জেলার অপর এক উপজেলা সারিয়াকান্দিতে বিজয়ী হয়েছেন তার ছেলে সাখাওয়াত হোসেন সজল।

কম ভোট পড়া আরেক উপজেলা কুষ্টিয়া সদর। এখানে ৪ লাখ ২০ হাজার ৮৩৩ জন ভোটারের মধ্যে মাত্র ৭৩ হাজার ২৯৯ জন ভোটার ভোট দেন। কুষ্টিয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের চাচাতো ভাই আতাউর রহমান আতা ৬৭ হাজার ৪৮১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী আবু আহাদ আল মামুন পেয়েছেন ৩ হাজার ৫৬৪ ভোট।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেওয়া তথ্যের আরেক কম ভোট পড়া উপজেলা হচ্ছে চট্টগ্রামের মীরসরাই। ৩ লাখ ৭২ হাজার ২৫৭ জন ভোটারের ওই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে এনায়েত হোসেন নয়ন ৩৩ হাজার ৭০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ মোহাম্মদ আতাউর রহমান পান ২০ হাজার ৭৬৭ ভোট।

নির্বাচন কমিশনের ভাষ্যমতে, ভোট কম পড়ার কারণ হচ্ছে ধান কাটার মৌসুম, ঝড়বৃষ্টি, জনপ্রিয় প্রার্থীর অভাব, শহর এলাকায় ছুটি থাকায় মানুষের বাড়ি চলে যাওয়া, এবং বড় রাজনৈতিক দলের ভোটে অংশগ্রহণ না করা। এগুলোকে কারণ হিসেবে বললেও এটা যে স্রেফ অজুহাত দাঁড় করানো সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নির্বাচন কমিশন ভোট কম পড়ার যে ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছে সেটাই কি আসল কারণ মূলত? ধান কাটার মৌসুম, ঝড়বৃষ্টির ওপর মানুষের হাত নেই, কিন্তু বাকিগুলো নির্ভর করে মানুষের ওপরই। ইসি যেভাবে ঝড়বৃষ্টিকে কারণ হিসেবে দাঁড় করাতে চাইছে সেটা মোটেও মূল কারণের মধ্যে পড়ে না, কারণ নির্বাচনের দিন কোথাও উল্লেখের মতো ঝড়বৃষ্টি হয়নি। ধান কাটার মৌসুমেও মানুষ আগে ভোট দিয়েছে, নির্বাচনের দিন প্রতিবারই ছুটি থাকে, এবং একদিনের এই ছুটিতে সচরাচর মানুষ গ্রামে চলে যায় না, বিশেষত ঠিক পরের দিন যেখানে আর কোন ছুটি নাই।

ইসি বলতে চাইছে, জনপ্রিয় প্রার্থীর অভাব ছিল নির্বাচনে। এটা কীভাবে মেনে নেওয়া যায়? দলীয় প্রতীকে এবার নির্বাচন না হলেও ক্ষমতাসীন দলের নেতারাই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, অংশ নিয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যানরাও। যে তিন উপজেলায় সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে বলছে ইসি, সেই তিন উপজেলার অন্তত দুই উপজেলায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় দুই সংসদ সদস্যের নিকটাত্মীয় হয়েছেন বিজয়ী। তাহলে ইসি কি বলতে চায় নির্বাচন বর্জন করছে যে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নেতারাই মূলত কেন্দ্রে ভোটার টানার মতো প্রার্থী?

ইসিও বলছে, নির্বাচনে ভোটার স্বল্পতার অন্যতম কারণ বিএনপির অংশ না নেওয়া। এটা এমনই অপ্রিয় সত্য যা অস্বীকারের উপায় নাই। হ্যাঁ, নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপির সকল বা বেশিরভাগ নেতাই বিজয়ী হয়ে যেতেন এমন না, তবে তাদের নির্বাচন বর্জনের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় দলটির সমমনাদের কেউ অংশ নেয়নি। এমনকি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যে সকল রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল তাদের কেউও নির্বাচনে অংশ নেয়নি।

দলের মধ্যকার কোন্দলকে প্রকাশ্য রূপ না দিতে আওয়ামী লীগ না হয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেয়নি; কিন্তু কোথায় জাতীয় পার্টি, কোথায় ১৪-দলের শরিক দলগুলো, কোথায় সেই ‘কিংস পার্টি’ যারা বিগত সময়ে হঠাৎ গজিয়ে ওঠে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল? জাতীয় পার্টি জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধীদলের স্বীকৃতি পেলেও প্রান্তিক পর্যায়ে এই দলটির অস্তিত্ব যে আদতে নেই, এটা স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে তাদের অংশগ্রহণের ইতিহাস দেখলে সহজেই অনুমেয়। সরকারের অনুকম্পায় টিকে থাকা দলটি নেতাকর্মী সংকটে তা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপ সেটা আরও একবার প্রমাণ করল।

প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অনুমিতভাবে নির্বাচিতদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের। স্থানীয় সরকারের নির্বাচন অথচ নির্বাচনে নেই উল্লেখের মতো ভোটার উপস্থিতি। এবারের ভোট প্রদানের হার বিগত সংসদ নির্বাচনের ভোটের হারের চাইতেও কম। এর দ্বারা কি প্রমাণ হচ্ছে না আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী-প্রার্থীরা ভোটারদের আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হচ্ছেন? এই ব্যর্থতা কি তবে অনাস্থার বিমূর্ত প্রকাশ?

ধান কাটা মৌসুম, ঝড়বৃষ্টিসহ হালকা-ঢঙের যতই অজুহাত দাঁড় করাক না কেন নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত সত্যি কি ভোটের হাওয়া বইছিল নির্দিষ্ট ওই ১৩৯ উপজেলাজুড়ে? বাস্তবতা বলছে, কখনই মনে হয়নি ভোট এসেছে। ভোটের প্রতি মানুষের এই অনাগ্রহ কী কারণে ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে সেটা বের করা জরুরি।

যারা ভোট দিতে যায়নি, তাদের সকলেই যে বিএনপির নেতাকর্মী-সমর্থক, এমনটা ভাবার কারণ নাই। দেশে এত এত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী তারাও কি ভোট দিতে গেছে? ভোটার উপস্থিতির হার বলছে, তারাও নির্বাচনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে বসেছে। মানুষ ভোট দিতে যায়নি মূলত ‘ভোট দিয়ে কী হবে’ এমন একটা ধারণা কিংবা বিশ্বাস থেকেই।

ব্যক্তিগতভাবে অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি, এবং বেশিরভাগেরই অভিন্ন মতামত। এটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকার-রাখার হুমকিসম। মানুষ দিন দিন ভোটে অনাগ্রহী হয়ে পড়ার কারণে ‘অন্ধকারের আততায়ীরাও’ যদি কখনও ক্ষমতার কেন্দ্রের কাছাকাছি পৌঁছায়, তবে এখান থেকে মুক্তির পথ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়ত হতে থাকবে। নির্বাচন এককালে ছিল আমাদের অন্যতম এক উৎসব। ভোট ও প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলত সবখানে, কিন্তু এখন সে দিন হারিয়ে গেছে অনেকটাই।

ভোটবিমুখ মানুষকে ভোটে ফেরাতে হবে, দিতে হবে অভয়, গড়তে হবে সম-মর্যাদা ও সম-সুযোগের মাঠ। ভোট যে অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার; এই বোধের জাগরণ দরকার। দরকার কেন্দ্র আর প্রান্তের মধ্যে যোগাযোগ ও আস্থার পরিবেশ। আস্থার পরিবেশ না ফিরলে মানুষ ভোট ও গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বিমুখ হতেই থাকবে!

;

স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রশ্নে ছাত্র সংহতি: অন্যরা ঘুমিয়ে কেন?



আশরাফুল ইসলাম পরিকল্পনা সম্পাদক, বার্তা২৪কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

পশ্চিমা মদদ আর আরব বিশ্বের আশ্চর্যজনক নীরবতায় ফিলিস্তিনের হতভাগ্য নাগরিকদের ওপর যুগ যুগ ধরে চলা ইহুদীবাদী ইসরায়েলের অব্যাহত বর্বরতায় বিশ্ব নতুন করে জেগে উঠেছে। এই ‘বিশ্ব’ বলতে আপামর বিশ্ববাসী বললে ভুল হবে, মূখ্যত সাম্প্রতিক সময়ের নজিরবিহীন নারকীয়তায় যারপারনাই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে বিশ্বের ছাত্র-তরুণ আর মুক্তিকামী মানুষদের একটি অংশ, যারা তাদের বিবেক দ্বারা চালিত হচ্ছেন। কৌশল বা কোন সমীকরণের ধার ধারছেন না তারা।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, বিশ্বজুড়ে মানবতার মেকি সবক দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর ছাত্র-তরুণরাও তাদের শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তীব্র ক্ষোভে মজলুম ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশে পথে নেমে এসেছেন। খোদ যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী-তরুণদের থামাতে বলপ্রয়োগ আর ভীতি প্রদর্শনের কিছুই অবশিষ্ট রাখছে না দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরিণতিতে বহু ছাত্র-তরুণ এমনকি শিক্ষকরাও গ্রেপ্তারবরণ করছেন।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মার্কিন মুলুকে ফিলিস্তিন সংহতির এই প্রকাশ ঘটছে ইউরোপসহ বিশ্বের নানাপ্রান্তে। ঐতিহাসিকভাবে ফিলিস্তিনের জনগণের পাশে থাকা বাংলাদেশের ছাত্র-তরুণরাও গেল কয়েকদিন ধরে ‘স্বাধীন ফিলিস্তিন’ এর পক্ষে ও ইসরাইলি বর্বরতা বন্ধের দাবিতে পথে নেমেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকটি সমাবেশের ধারাবাহিকতায় আজ বৃহস্পতিবারও একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্মলাভ করা বাংলাদেশের কাছে পরাধীনতার গ্লানি অচেনা নয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিসহ রাজনৈতিক মেরুকরণের নানা বাস্তবতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের মানুষের মনে পীড়িত ফিলিস্তিনের মজলুম জনতার জন্য ভালোবাসা আর সংহতির কোন কমতি নেই। আমরা লক্ষ্য করছি, বর্তমান সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও ফিলিস্তিনে বর্বরতার বিরুদ্ধে জোরাল অবস্থান নিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতার জন্যই যে এই অবস্থান তা অনেকে বলবার চেষ্টা করলেও আমরা মনে করি, দলমত নির্বিশেষে নিপীড়িত ফিলিস্তিনের জন্য সকলের একাট্টা হওয়াই উচিত। অভ্যন্তরীণ রাজনীতির নিরিখে এই সংহতি প্রকাশে অবস্থান গ্রহণে তারতম্য থাকা উচিত নয়। সেই সঙ্গে সংহতি প্রকাশে কাজ করা উচিত নয় ধর্মীয় বিবেচনাও।

মুক্তিসংগ্রামের ঐতিহ্যিক পরম্পরাকে লালন করা একটি দেশ হিসাবে আমাদের বিশ্বের যেকোন প্রান্তের নির্যাতিত মানুষের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করাই কর্তব্য হওয়া উচিত। মুক্তিকামী মানুষের অনুভূতি যে অভিন্ন তা আমরা ১৯৪৭ সালে ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণার সময়ে ব্রিটিশ শেষ ভাইসরয় লর্ড মাউন্ট ব্যাটেনের কণ্ঠেও ধ্বনিত হতে শুনেছি। সেদিন তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাবে স্বীকার করেছিলেন, `Freedom Loving People Everywhere’.

কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি, অভ্যন্তরীণ রাজনীতির মেরুকরণে স্বাধীন ফিলিস্তিনের সংহতি প্রকাশে এখানকার রাজনৈতিক দলগুলির দ্বিধাবিভক্ত অবস্থান। সরকার বিরোধিতায় কোন কোন দলের পশ্চিমাশক্তির মদদপ্রাপ্তির আকাঙ্খা, ফিলিস্তিন নিয়ে তাদের আশ্চর্যরকম নীরবতার কারণ বলে অভিযোগ আছে। ধর্মীয় উন্মাদনার জিগির তুলে ইসলামী দলগুলো অনেক অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে তুলকালাম বাধিয়ে দিলেও ফিলিস্তিনের উপর চলমান বর্বরতায় তাদের উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি দৃশ্যমান নয়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের এ নিয়ে মূল্যায়ন এরকম যে, দলীয় ও গোষ্ঠীগত স্বার্থে এসকল দল ও সংগঠন একাট্টা হলেও নিপীড়িত মানুষের জন্য তাদের অবস্থান অস্পষ্ট।

অন্যদিকে আমরা গভীর বেদনার সঙ্গে লক্ষ্য করছি, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি ফিলিস্তিনের উপর যুগ যুগ ধরে চলা বর্বরতার বিরুদ্ধে বিস্ময়কর নীরবতা প্রদর্শনের ধারাবাহিকতায় চলমান ইসরাইলি ধ্বংসযজ্ঞেও তাদের কৌশলগত রক্ষণশীলতা অব্যাহত। মুখে মুসলিম সংহতি, পশ্চিমাবিষোদগার আর ইসরাইলের নিন্দা করে গেলেও তাদের পক্ষ থেকে জোরাল কোন পদক্ষেপ নেই। দেশগুলি তাদের নিজস্ব ব্যবসায়িক ও নিরাপত্তা স্ট্রাটেজিকেই সর্বাগ্রে প্রধান্য দিয়ে চলছেন।

প্রতিদিন শত শত নিরীহ ফিলিস্তিনি শিশু, নারী-বৃদ্ধ এমনকি চিকিৎসাধীনরা ইসরাইলি হামলার নিশানা হলেও আরববিশ্বের ঘুম ভাঙছে না। ইরানের সক্রিয় অবস্থানে যখন ইসরাইলসহ পশ্চিমারা নড়েচড়ে বসছেন সেই সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি যদি মিনমিনে নিন্দার বদলে অস্ত্রের ভাষায় কথা বলতো তবে এক সপ্তাহে দৃশ্যপট বদলে যেতে পারত। মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা বিশ্লেষকরা বলছেন, ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস যদি ইসরাইলি বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে না তুলতো তবে আরও বহুদূর বিস্তৃত হতো ইসরাইলি আস্ফালন ও ধ্বংসযজ্ঞ।

যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রসংবরণের যে আহ্বান তাকে যদি মেকিও ধরে নিই তারও যে একটা তাৎপর্য রয়েছে, বলা যায় স্পষ্টতই তা হামাসসহ অন্যান্য স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠনের জেগে উঠার ফলশ্রুতি। নানামূখি মেরুকরণে সুর মিলিয়ে কিংবা কৌশলী প্রতিবাদ-নিন্দায় যারা ‘ফিলিস্তিন সংহতি’তে সীমিত থাকছেন তাদের সেখান থেকে বেরিয়ে আসার বিকল্প নেই। বলাবাহুল্য, জোরদার বিশ্ব জনমতেরও একটি অবধারিত মূল্য রয়েছে। সব মতপার্থক্য ও ধর্মীয় পরিচয় ব্যতিরেকেই ফিলিস্তিনের জন্য নিরঙ্কুশ সংহতি সময়ের দাবি।

;

আলো ঝলমলে শহর ও বাইক চালকের অসহায় মুখ



আশরাফুল ইসলাম পরিকল্পনা সম্পাদক, বার্তা২৪.কম
অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

তখন সন্ধ্যা ছুঁই ছুই। কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউতে হেটে কর্মস্থলে আসছিলাম। বাংলামটর মোড়ে রাস্তা পেরিয়ে পা বাড়াতেই মোটরসাইকেলে বসা এক তরুণ ডাক দিলেন, ‘ভাই যাবেন?’

অপ্রস্তুত ও খানিকটা বিরক্ত হয়েই জবাব দিলাম, ‘আমি কি আপনাকে জিজ্ঞেস করেছি?’

ওই তরুণ নিরুত্তর থাকেন, মলিন মুখে অন্যদিকে তাকায়। খানিকটা এগিয়ে থমকে দাঁড়াই এই ভেবে যে, মনে হয় তাকে অনেকটা কষ্ট দিয়ে ফেলাম। ভাবলাম, এভাবে না বললেও হতো। অনুশোচনায় ফিরে এসে, ‘দুঃখিত’ বলে জানতে চাইলাম, ‘অনেকক্ষণ যাত্রী পাচ্ছেন না বোধহয়?’

বেশ কষ্ট নিয়েই বাইক চালক জানালেন প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন, নিয়ে যাওয়ার মতো কাউকেই পাচ্ছেন না। অনেক অপেক্ষার পর কেউ যেতে চাইলে তাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বাইকচালকদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলে। সেই সুযোগ নেন যাত্রীও। কম ভাড়ায় যেতে সম্মত হয়ে যান কেউ, তাই পথচারী কাউকে হেটে যেতে দেখলেও যেচে তাকে জিজ্ঞেস করেন বাইক চালকরা। ওই চালক জানালেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাশ করে চাকুরি জুটাতে পারেননি, তাই বাধ্য হয়ে বাইক চালাতে নেমেছেন। বললেন, ‘এভাবে কাউকে ডাকতে যে সংকোচ হয় না তা নয়, তবে ক্ষুধা আর বেঁচে থাকার চেয়ে কিছুই বড় নয়।’

কর্মস্থলে আসতে রোজ একইভাবে বাইকচালকদের এভাবে মলিনমুখে দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। বলতে গেলে গোটা ঢাকা শহরজুড়েই তাদের এভাবে বেকার বসে থাকা চোখে পড়ে। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)সহ বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, রাজধানী ঢাকা শহরে ১০ লাখেরও বেশি মোটরবাইক চলে। ধারণা করা যায়, তাদের একটি বড় অংশই বিভিন্ন রাইড শেয়ারিং অ্যাপে সংযুক্ত হয়ে পথে নেমেছেন ভাড়ায় যাত্রী পরিবহণের জন্য। রাইড শেয়ারিং অ্যাপে কানেক্ট হলেও অধিকাংশ বাইকচালক এখন পথেই আগ্রহী যাত্রীদের সঙ্গে দরকষাকষি করে কাঙ্খিত গন্তব্যে যেতে সম্মত হয়ে যান।

২০২২ সালের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৩২ লাখেরও বেশি নিবন্ধিত মোটর সাইকেল রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও মোটর সাইকেলে ভাড়ায় যাত্রী পরিবহণের প্রচলন অনেক আগেই শুরু হয়েছে। ২০১০ সালে সুন্দরবনে বেড়াতে গিয়ে মোংলায় এক বাইকে দু’জন-তিনজন নিয়েও চলতে দেখেছি। পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দেশের শিক্ষিত তরুণদের একটি বৃহৎ অংশ কাঙ্খিত চাকুরি না পেয়ে কিংবা চাকুরির আবেদন করে অপেক্ষায় থেকে থেকে জীবিকার প্রয়োজনে এই মোটর সাইকেলে যাত্রী পরিবহণে নেমেছেন। কিন্তু এই হুজুগে জাতির একজন কিছু করতে দেখলে বা কোন একটা সম্ভাবনার খবর পেলে সবাই তাতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। চিরাচরিত এই রেওয়াজে প্রয়োজনেরও অনেক বেশি বাইক চালক যাত্রী পরিবহণে নেমেছেন। তাই জীবিকার আশায় পথে নামলেও যাত্রীর দেখা পাচ্ছেন না, কাঙ্খিত আয় করতেও ব্যর্থ হচ্ছেন। তরুণ জনশক্তির একটি বড় অংশ এভাবে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে অনেক সময় পথ দুর্ঘটনায় পড়ছেন। কখনো কখনো জড়িয়ে পড়ছেন নানা সামাজিক অপরাধেও।

দ্রব্যমূল্যের চরম উর্ধ্বগতিতে জনজীবনে যে নাভিশ্বাস তা নীতিনির্ধারকরা অনেকেই আমলে নিতে চান না। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তাদের অনেককেই বলতে শোনা যায়, ‘বাজারে তো কোন জিনিসের সংকট নেই’ কিংবা ‘মানুষের ক্রয় ক্ষমতা এখন বেড়েছে’ ইত্যাদি। কিন্তু সমাজে যেই মানুষেরা শিক্ষা অর্জন করে এক ধরণের আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন হয়েছেন, যাঁরা চরম দারিদ্রেও নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশে কুণ্ঠিত-সেই শ্রেণীর জন্য বর্তমানে টিকে থাকা কতটা কঠিন তা দীর্ঘসময় যাত্রীর জন্য দাঁড়িয়ে থাকা সেই বাইকচালকের মুখাবয়ব দেখে সহজেই বুঝে নেওয়া যায়। বর্তমানে স্যোশাল মিডিয়ার কল্যাণে সমাজের ভেতরকার ক্ষোভ-উত্তাপ আন্দাজ করা যায় কঠিন নয়। আমরা লক্ষ্য করি, উঠতি ধণাঢ্য হয়ে একটি শ্রেণির বেপোরোয়া চাকচিক্যময় জীবনযাপন অন্যদিকে চরম হতাশায় দিনশেষে ক্ষুধার অন্ন জোগাড় করতে না পারার দুঃখ কিংবা মাস শেষে মেসের সামান্য কয়টা টাকা দিতে না পারায় ম্যানেজারের গঞ্জনা।

বাইকে যাত্রী পরিবহণ করে জীবন চালাতে না পারা এমন তরুণদের মতো বিভিন্ন পেশার আরও বহু তরুণদের আমরা দেখি যাদের অবস্থার আরও করুণ। ক’দিন আগে স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ঘটনা নিয়ে পরবর্তীতে মূলধারার সংবাদপত্রেও খবর হতে দেখেছি-কাওরানবাজারে বড় মাছ কিনে কাটিয়ে নেওয়ার পর মাছের অন্ত্রনালী, পাখনাসহ অন্যান্য ফেলে দেওয়া যেসব অংশ থাকে তাও ভাগা দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। মুখ ঢেকে তাও কিনে নিয়ে যাচ্ছেন এক শ্রেণির মানুষ। প্রকাশিত খবরের তথ্য অনুযায়ী, তারা ভিখারি কিংবা ছিন্নমূল কেউ নন। যারা মাছের ওইসব ফেলে দেওয়া অংশের ভাগ কিনে নিচ্ছেন তারা অবস্থার পাকে পড়ে জীবনসংকটে থাকা শিক্ষিত বেকার মানুষ। ৭-৮শ’ টাকা কেজিতে মাছ কেনার সমার্থ্য তাদের নেই।

বর্তমানে দেশের অকাঠামোগত ও কিছু মানুষের বিপুল প্রতিপত্তি দেখে তথাকথিত ‘উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা’র সরলীকরণ করা যাবে না। এই উন্নয়ন যে সামগ্রিকভাবে আর্থ-সমাজিক অসমতাকে দূর করতে পারেনি তা আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবেই বলতে পারি। বাংলামটর মোড়ে দেড় ঘন্টা ধরে যাত্রীর জন্য দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষিত ওই তরুণটির কাছে এই আলোঝলমলে এই শহর যেমন একরাশ হতাশা ছাড়া কিছুই নয় তেমনি প্রত্যন্ত কোন গ্রামে ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া কৃষকের কাছেও ধূসর জীবনের সবই নিরানন্দ।

;

প্রতিষ্ঠার ১০ বছর সময়কাল দেশীয় বিমানসংস্থার জন্য ‘অশনি’ না ‘শুভ’ সংকেত!



মো. কামরুল ইসলাম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

দশ বছর খুব কি বেশী সময় এভিয়েশনের কিংবা এয়ারলাইন্সের ইতিহাস বলার জন্য? কিন্তু বাংলাদেশ এভিয়েশনের জন্য ১০ বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা মাইল ফলক হয়ে আছে। এই সময়টা সাফল্যের সঙ্গে অতিক্রম করতে পেরেছে কয়টি এয়ারলাইন্স? যার ফলাফল খুঁজতেই বাংলাদেশ এভিয়েশনের ছোট্ট অধ্যায়ের পাতা উল্টালেই খুব বেশি সুখকর স্মৃতি খুঁজে পাওয়া যাবে না। স্মৃতির পাতায় মোড়ানো বাংলাদেশ এভিয়েশনের ইতিহাসে দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলোর ১০ বছর সময়কাল কি ‘অশনি না শুভ সংকেত’ তা বোঝার চেষ্টা করেছি।

বাংলাদেশ এভিয়েশনে উত্থান আর পতনের মধ্য দিয়েই অগ্রসর হওয়ার গল্প লুকিয়ে আছে। এক ঘণ্টার আন্তর্জাতিক ফ্লাইট করে এসে ২ থেকে ৩ ঘণ্টার অপেক্ষা লাগেজের জন্য, নয়টার প্লেন কয়টায় যাবে যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা, এয়ারক্রাফট এসি নাকি নন-এসি, ফ্লাইট আদৌ যাবে তো ইত্যাদি ইত্যাদি, যা হরহামেশা শুনা যেত যাত্রীদের কাছ থেকে। সেই সব বাক্যগুলো আজ ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। আর সেই বাক্যগুলোকে ইতিহাসের পাতায় স্থান দিতে সহায়তা করেছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।

আজ বাংলাদেশ এভিয়েশনের প্রায় ৫২ বছরের গল্প, যেখানে সুখকর গল্পের স্থান খুবই সামান্য। প্রাইভেট এয়ারলাইন্সের ইতিহাস তো আরো নাজুক। জিএমজি, ইউনাইটেড, রিজেন্ট, বেস্ট এয়ারের মতো প্রায় ৮ থেকে ৯টি এয়ারলাইন্স বন্ধ হওয়ার মিছিলে যুক্ত হয়েছে। বর্তমানে মাত্র তিনটি বেসরকারি বিমানসংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার ও এয়ারঅ্যাস্ট্রা জাতীয় বিমানসংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর সাথে বাংলাদেশে আকাশ পরিবহন ব্যবসায় জড়িয়ে আছে।

১০ বছর সময়কাল বাংলাদেশের বেসরকারি বিমানসংস্থার জন্য অনেকটা চ্যালেঞ্জিং বছর। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ১০ বছর অতিক্রমকালীন সময়ে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। জিএমজি এয়ারলাইন্স ১০ বছর পর ব্যবসায় নিম্নমূখী প্রবণতা দেখা গেছে যা ১৪ বছরের সময় একেবারেই বন্ধ করে দিতে হয়েছে। বর্তমানে নভোএয়ার ১১ বছরের অধিক সময়কাল অতিক্রম করছে।

পরিকল্পনা আর বাস্তবায়নকে সাথে নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট শুরু করার পর থেকেই ব্যবসা থেকে সেবাকেই প্রাধান্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে ইউএস-বাংলা। ইতিমধ্যে যাত্রীদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ১৭ জুলাই ২০১৪ সালে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে ১০ বছর সময় অতিক্রম করছে। যাত্রা শুরুর পর থেকে দেশের মানুষকে আকাশ পথে সেবা দেয়ার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলো। সেই প্রতিজ্ঞাকে বাস্তবে রূপ দিতেই ইউএস-বাংলা প্রতিনিয়ত কাজ করছে। লক্ষ্য একটাই সেবার মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকরা বিশ্বের যেসকল গন্তব্যে অবস্থান করছে, দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখছে, সেই সকল রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সেবা দেয়ার মানসে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স প্রতিমূহুর্তে বিমানবহরে নতুন নতুন উড়োজাহাজ যোগ করছে, যোগ করছে দেশের নাগরিকদের কাছে আকর্ষণীয় সকল গন্তব্য।

বেশ কিছু রুট পরিচালনার জন্য ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সকে বাংলাদেশ এভিয়েশন সব সময়ই মনে রাখবে। বিশেষ করে ভারতের চেন্নাই, চীনের গুয়াংজু, মালদ্বীপের রাজধানী মালে রুটগুলো অন্যতম। যেখানে জাতীয় বিমানসংস্থাও পরিকল্পনা সাজাতে পারেনি, সেখানে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স বাস্তব রূপ দিতে সক্ষম হয়েছে। ইউএস-বাংলাকে অনুসরণ করে অন্য এয়ারলাইন্সগুলো সেইসব রুটে ফ্লাইট শুরু করেছে। কিন্তু মালেতে দেশীয় একমাত্র ইউএস-বাংলাই ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এছাড়া কলকাতা, দুবাই, শারজাহ, আবুধাবি, মাস্কাট, দোহা, সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, ব্যাংকক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১৫ মিলিয়ন প্রবাসী বাংলাদেশিরা অবস্থান করছে, যার মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশ প্রবাসী তথা রেমিট্যান্স যোদ্ধারা বাস করছে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, ওমান, কাতার, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপ। উল্লেখিত প্রতিটি দেশেই ফ্লাইট পরিচালনা করছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। সম্প্রতি সৌদি আরবের জেদ্দায় ফ্লাইট পরিচালনা করতে যাচ্ছে।

২টি ড্যাশ ৮-কিউ৪০০ নিয়ে যাত্রা শুরু করা ইউএস-বাংলার বহরে বর্তমানে রয়েছে ৪৩৬ আসন বিশিষ্ট দুইটি এয়ারবাস ৩৩০-৩০০, নয়টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০, দশটি ব্র্যান্ডনিউ এটিআর ৭২-৬০০ ও তিনটি ড্যাশ৮-কিউ৪০০ এয়ারক্রাফট। এখানে উল্লেখ্য সংখ্যার বিচারে দেশের সরববৃহৎ এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ রুটে সর্বপ্রথম ব্র্যান্ডনিউ এয়ারক্রাফট দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করেছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।

দেশের এভিয়েশনের অগ্রযাত্রায়, বেকার সমস্যা দূরীকরণে, অর্থনীতির চালিকা শক্তিতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখছে।

প্রতিষ্ঠার ১০ বছর সময়কাল যেন বাংলাদেশ এভিয়েশনে বেসরকারি বিমানসংস্থাগুলো নিকট অশনি সংকেত না হয়ে শুভ সংকেত রূপে স্থায়ী হয়, তা সকলের কাম্য।

লেখক
মো. কামরুল ইসলাম
মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স

;