চাকরির বাজারে অচল শিক্ষা



প্রফেসর ড. মো: ফখরুল ইসলাম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

অবাধ তথ্য প্রবাহ ও মুক্তবাজার অর্থনীতির যুগে আমাদের দেশের শতকরা ৭১ ভাগ শিক্ষার্থীর পড়াশুনার খরচের যোগান দেন তাদের অভিভাবকরা। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে এই হার অনেক অভিভাবককে অসহায় করে তোলে। কারণ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গেলে শতকরা ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী বাড়ি ছেড়ে হোস্টেলে গিয়ে প্রতিমাসে অভিভাবকের পাঠানো টাকার জন্যে হা করে চেয়ে থাকে। অভিভাবকের উপর নির্ভরশীল এসব শিক্ষার্থীরা অনেকেই বর্তমান চাকরির বাজারে অচল উচ্চশিক্ষা গ্রহণে রত। অথচ আমাদের দেশীয় চাকরির বাজারে হাজার হাজার টেকনিক্যাল পদ দখল করে আছে ভারত, চীনসহ নানা দেশের নাগরিকরা। সেকথা আমাদের শিক্ষার্থী বা অভিভাবকগণ অনেকেই ভালভাবে জানেন না।

নির্ভরশীল এসব শিক্ষার্থীরা পাস করার পর প্রায় সবাই শহরে থাকতে পছন্দ করে। বড় চাকরি পেতে চায়। অনেকে গ্রামে ফেরত যেতে অনীহা। এমনকি অনেকেই ভাল চাকরি পেলেও রাজধানী ঢাকা অথবা বিভাগীয় শহরের বাইরে সে চাকরি করতে যেতে চায় না। কেউ কেউ একবার শহরে এসে আর গ্রামের বাড়ির দিকে ফিরে তাকাতে চায় না। কারণ, আমাদের দেশে গ্রাম ও শহরের নাগরিক সুবিধাদির মধ্যে বিস্তর ফাঁরাক বিদ্যমান। এই ফাঁরাক দিন দিন আরো বেশি ঘনীভূত হচ্ছে। এখনও উচ্চশিক্ষা হোক বা বড় কোন রোগের চিকিৎসার প্রয়োজন হোক বা কোন চাকরির ইন্টারভিউ হোক, ঢাকা শহরে না গেলে তার উপায় বা বিকল্প কোনটাই নেই। একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে, বিয়ের শাাড়ি-গহনা কিনতে বা হাইকোর্টে মামলার হাজিরা দিতেও ঢাকায় আসতে হয়। মার্কেটের ছাদে গড়ে উঠেছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও সেগুলোর আবাসিক হল। এভাবে ঢাকা হয়েছে জনবহুল, গাড়িবহুল, শব্দবহুল, দূষণবহুল, মশকবহুল, জলজট-যানজটে নাকাল বিশ্বের ১নং বসবাসের অনুপযোগী শহর।

এ থেকে পরিত্রাণের চেষ্টার কমতি নেই। খরচেরও কমতি নেই। আর তাতে এটি হয়ে উঠছে দালান ও উড়াল সড়কের কংক্রীটের এক ভয়াবহ বস্তি। একটি দালান কাত হয়ে গেলে বা বহুতলে আগুন লাগলে একটি রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তার উপর আরো ভারী স্থাপনা নির্মাণের মহাপরিকল্পনা আমাদেরকে কোন ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে সেদিকে কর্তৃপক্ষের নজরদারী আছে বলে মনে হয় না। ক’ছর আগে জাকার্তা অথবা জাপানের কোবে শহরের ভূমিকম্পে একটি কংক্রীটের উড়াল রাস্তা উল্টে বিপর্যয়ের কথা কারো কি মনে পড়ে না?

সেগুলো মানবতার বিপর্যয়ের জন্য কিছু উদাহরণের শিক্ষা বই বেশি কিছু নয়। তাই বিলিয়ন টাকা খরচ করে ঢাকাকে আর বেশি ভারাক্রান্ত না করে জাপানের মতো পরিবহন ব্যবস্থা করে সকল জেলা শহরের সাথে দ্রুতগামী শিঙ্কানসেন বা বুলেট ট্রেনের মাধ্যমে আমাদের জেলাগুলোর সংগে কানেকটিভিটি বাড়ানোর জন্য মেগা প্রকল্প দ্রুত হাতে নেয়া দরকার। তাহলে সময় বেঁচে যাবে, দেশের উন্নয়নে ভারসাম্য আসবে এবং সবকুল রক্ষা হবে।

এজন্য আমাদের জ্ঞানের লেভেল কোথায় থাকা উচিত এবং সেটা কিভাবে অর্জিত হবে তা নিয়ে চিন্তা করা উচিত। তা-না করে আমাদের রাজনীতিবিদগণ একদল ছাত্রদের দিয়ে অপর ছাত্রদলের মারাকাটা অবস্থা তৈরি করে ক্লাস-পড়াশুনা থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছেন। রাস্তার কোনায় তাদেরকে পরস্পরের সহিংস কাজের পাহারায় বসিয়ে রেখে মারামারি করার পরিবেশ তৈরি করে দিচ্ছেন। তাদের মারমুখী অবস্থাসৃষ্ট পরিস্থিতি পাহারা দেবার জন্য দিনরাত আইনশৃংখলা বাহিনীকে ব্যবহার করছেন। এত ঘন ঘন লক্ষ মানুষের এতবেশি জনসভা পাহারা দেয়া-পুলিশের এটাই কি মূল কাজ? তাহলে একটি গণতান্ত্রিক দেশে পুলিশ সাধারণ জনগণের সেবা দিবে কখন?

আমাদের উচ্চশিক্ষায় এসে এক শ্রেণির তরুণরা চরম হতাশ। তাদেরকে অচল শিক্ষায় দীক্ষা গ্রহণের সুযোগ দিয়ে মূলত: ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টকে অপব্যবহার করা হচ্ছে। এসব তরুণরা সবাই নেতা হতে চায়। ক’দিন আগে এক জনসভামঞ্চ উল্টে গিয়ে সেখানকার প্রধান অতিথি আক্ষেপ করে বলেছিলেন কিছু আবেগভরা কথা। যেখানে বেশি সংখ্যক নেতার নেতাগিরি করার ইচ্ছার দৈন্যতাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

মনে পড়ে, প্রায় ত্রিশ বছর আগে জাপানের এক ল্যাবে বসে সেদিনের জাতীয় নির্বাচনে সেখানকার শিক্ষার্থী বন্ধুদেরকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম আজ তোমাদের ভোট হচ্ছে -তোমরা ভোট দিতে যাবে না? তারা আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে অনেকটা অনীহা ছিল। একজন উত্তরে বলেছিল, আমাদের দেশে নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এত আগ্রহ নেই। সাড়ে পাঁচ বছর সময়ে সেখানে আমি দেখিনি কোন মাইকিং, কোন জটলা বা কোন বৃহৎ জনসভা। শিক্ষার্থীরা কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য কি-না সেটা তাদের কথা বা আচরণে বুঝার উপায় নেই। রাজনীতির কারণে তারা নিজেদের পড়াশুনা ও ক্লাস ফাঁকি দিতে পারে না।

শুধু একদিন একজন প্রার্থী তাঁর একজন সঙ্গীকে সাথে নিয়ে বাসার দরজায় এসে ডাকবাক্সে একটি ছোট্ট লিফলেট দিয়ে গেছেন। সেটাও নি:শব্দে! আরেকদিন একজন প্রার্থী গেটের সামনে হ্যান্ডশেক করেছিলেন। তাঁর হাতে সাদা গ্লাভস্ পরা ছিল। তারা আমাদের মতো চেহারার বিদেশীদের স্বকীয় কালচার বুঝেন। সেজন্য হ্যান্ডশেক করেন। কিন্তু সেই প্রার্থী যেহেতেু সেদিন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন সেহেতু তার হাত থেকে কোন সংক্রমণ যেন ভোটারদের শরীরে না ছোঁয়-সেজন্য প্যাকেট থেকে নতুন ওয়ানটাইম গ্লাভস পরে নিয়েছিলেন! সেটা করোনার বহু আগের কথা। যারা ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন না তাদের জন্য ডাকযোগে আগেই ভোট দেয়ার ব্যবস্থা ছিল। আমাদের দেশের মত ভোট নিয়ে ওদের প্রার্থী বা ভোটার কারো মধ্যে এত মাতামাতি বা উত্তেজনা ছিল না।

পিএইচডির আগে পরিবেশ বিজ্ঞানে মাস্টার্সের ছাত্র থাকাকালীন লক্ষ্য করতাম আমার কিছু ক্লাসমেট অনেকটা অগোছালোভাবে দ্রুতগতিতে ক্লাসে ঢুকতো। লেকচার শুনতে শুনতে কেউ কেউ ঘুমিয়ে যেত। কিন্তু শিক্ষক তাদেরকে কিছুই বলতেন না। একদিন লাঞ্চের সময় ক্লাশে ঘুমানো এক বন্ধুকে বললাম, তুম মাঝে মাঝে ক্লাশে ঘুমাও, রাতে ঘুম হয়না নাকি?

সে উত্তরে বলেছিল, বন্ধু তুমি তো স্কলারশীপ পাও সেজন্য বিষয়টা বুঝবে না। আমার জমানো টাকা দিয়ে সেমিষ্টার ফি দিয়েছি। আগামী সেমিষ্টার ফি দিতে হবে তাই আমাকে রাতে কাজ করতে হয়। আমার বাবা-মা অথবা অবিভাবকরা কোন টাকা দেয় না। ওদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়ারা পরিবার থেকে টাকা নিতে লজ্জাবোধ করে। তারা সাধারণত: নিজের উপার্জিত অর্থ দিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে। বেশীরভাগ শিক্ষার্থী আন্ডারগ্রাজুয়েট শেষ করে চাকরি করে টাকা জমায়। তারপর অফিস থেকে ছুটি নিয়ে দুই বছরের মাস্টার্স পড়ে। ওদের দেশে সবাই মাস্টার্স পড়তে যায় না। শুধু যাদের চাকরিক্ষেত্রে প্রয়োজন অথবা একান্ত ইচ্ছে তারাই বড় ডিগ্রী করে।

অথচ আমাদের দেশে উল্টো। এখানে আন্ডারগ্রাজুয়েট শেষ করে চাকরি নেই। তাই বসে না থেকে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী মাস্টার্স পড়ে। মেয়েদেরকে ঘরে বসে না রেখে পড়ানো হয়। সেটা প্রয়োজন হোক বা না হোক। ছেলেদের ক্ষেত্রে সমাজে এখনও এমএ পাশ জামাইয়ের ব্যাপক কদর।

আরেকটি বিষয় হলো- এখানে একবছরের গবেষণাবিহীন টট্ কোর্সের মাস্টার্স ডিগ্রীর প্রচলন থাকা। গবেষণাসহ কমপক্ষে দুই বছরের মাস্টার্স ডিগ্রী কোর্স প্রচলিত নয় আমাদের দেশের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। আমাদের কলেজগুলোতে অবস্থা আরো খারাপ। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য সেখানে সিনিয়র ও অভিজ্ঞ শিক্ষকের বড় অভাব।

এভাবে চাকরির বাজারে অচল ও অসম্পূর্ণ শিক্ষায় দীক্ষা দিচ্ছি আমরা। কিছু কিছু বিষয়ে পড়ানো হয় যেগুলোর জ্ঞান চাকরির বাজারে কাজে লাগে না। অধিকাংশ সরকারী কলেজে সেইসব বিষয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। তাদেরকে গবেষণার জন্য ল্যাবে আসতে হয়না। এমনকি পরীক্ষা প্রদানের শর্তের জন্য ক্লাসে উপস্থিতির দরকারও হয় না।

একজন চাকরিদাতা সেদিন বড় আক্ষেপ করে বলেছেন, ধরুন আমি আমার আর্থিক প্রতিষ্ঠানে একটি বড় পদের জন্য দরখাস্ত আহবান করেছি। দেখা গেছে সেখানকার আবেদনকারীদের ৮০ ভাগ এই জবের জন্য একাডেমিক ফিট করে না।

তিনি আরো বললেন, ধরুন মাগরিবের নামাজের জন্য চারজন উপস্থিত হয়েছেন। একজনকে ইমামাতি করতে দায়িত্ব দিতে হবে। সেখানে যদি একজন অংকের, একজন বাংলার, একজন আরবীর ও একজন রসায়নের ডিগ্রীধারী হন তাহলে ইমামতির ভার কাকে দিলে যৌক্তিক হবে বলে মনে করেন? নিশ্চয়ই আরবীতে ডিগ্রী থাকা ব্যক্তির জন্য ইমমিতি করতে দেয়াটা সঠিক হবে।

তিনি বলতে লাগলেন, ‘তেমনি আজকাল চাকরির ইন্টারভিউ নিতে গিয়ে এমন বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছি আমরা। আরেকটি বিষয় হলো- কোন কোন ক্ষেত্রে এমন প্রার্থী চাকরিতে যোগদান করতে আসেন যিনি কোথাও কোন লিখিত বা মৌখিক কোন পরীক্ষাই দেননি। অথচ তার হাতে নিয়োগপত্র। এরা স্বজন বা মহারথীদের সুপারিশে নিয়োগপত্র পাওয়া প্রার্থী। তারা একাডেমিক অযোগ্যতা নিয়েও যোগদান করেন এবং অফিস ও প্রতিষ্ঠানের অনেক ক্ষতি সাধন করেন। এক্ষেত্রে ঘুষ-দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এসব আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এতকিছু দেখে বলা যেতে পারে আমাদের দেশে চাকরির বাজারে অচল শিক্ষা ও দীক্ষার ব্যাপক প্রচলণ দেশের সুস্থ ভবিষ্যৎকে গহীন অন্ধকারে তলিয়ে দিচ্ছে। ওপেন সিক্রেট এসব বিষয় কাউকে বলার উপায় নেই- আপনাকে শুধু বললাম।’

এত জটিল বক্তব্য শুনে মনে মনে ভাবলাম- আমরা কি পড়াই আর ওরা কি পড়ে। আমরা কি বলি আর ওরা কি অনুশীলন করতে বাধ্য হয়। আমরা শ্রেণিকক্ষে শুধু তত্ত্বীয় জ্ঞান দিই। আর চারদিকে প্রচলিত নিষ্ঠুর বাস্তবতায় এই জটিল পরিবেশ ওদেরকে চাকরি পাবার ভাবনা অস্থির করে তোলে। বিসিএসে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ররা পুলিশ হবার জন্য ১ নম্বর পছন্দ দেয় কেন- সেটাও গভীর চিন্তার বিষয়। কারণ, ফাইন্যান্স ও ব্যাংকিং পাশ করে কেউ তো ডাক্তার হতে ১ নম্বর বা শেষ পছন্দক্রমও দিতে পারে না! ভাবলাম চাকরির বাজারে অচল শিক্ষা ও রুটি-রুজি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এই দৃশ্যমান অচলায়তন ভাঙ্গবে কবে, কিভাবে?

*লেখক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের প্রফেসর ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডীন। E-mail: [email protected]

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের নতুন উদ্যোগ – প্রত্যাশা টেকসই সমাধান



ব্রি. জে. (অব.) হাসান মো. শামসুদ্দীন
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্প ও ভাসানচরে অবস্থান করছে। দীর্ঘ প্রায় ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকে ও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। ২০১৭ সালের নভেম্বরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নেওয়া প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

চীনের মধ্যস্থতায় ২০১৯ সালে আবার প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। ফলশ্রুতিতে গত প্রায় ছয় বছরে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া থেমে ছিল। ২০২০ সাল থেকে স্বল্প পরিসরে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা শুরু না হওয়ায় চীন মিয়ানমারকে চাপ দিয়ে আসছিল। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আসিয়ান দেশগুলোও ছোট পরিসরে প্রত্যাবাসন শুরু করার বিষয়ে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল।

সম্প্রতি মিয়ানমার পাইলট প্রকল্পের আওতায় এক হাজারের কিছু বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে গত ৮ মার্চ মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও আসিয়ানের কয়েকটি দেশসহ আট দেশের কূটনীতিকদেরকে রাখাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। ৮ দেশের ১১ কূটনীতিককে মিয়ানমারের মংডু ও সিটওয়ে শহরে অন্তর্বর্তীকালীন ক্যাম্পসহ আশপাশের এলাকা দেখানো হয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নেওয়া প্রস্তুতির অগ্রগতি দেখাতে এই কূটনীতিকদের সেখানে পরিদর্শনে নেওয়া হয়েছে।মিয়ানমার দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে চায় বলে তাদেরকে জানানো হয়েছে।কূটনৈতিক সূত্রগুলোর থেকে জানা যায়, চীনের চাপে মিয়ানমার এ উদ্যোগ নিয়েছে।

কূটনীতিকরা রাখাইন থেকে ফিরে এসে রাখাইনের চলমান পরিস্থিতি ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের তুলনায় এখন কিছুটা ভালো বলে জানিয়েছে। মিয়ানমারের সিটওয়ের কাছে অভ্যন্তরীণ ভাবে বাস্তুচ্যুত (আইডিপি) ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গারা এখন সিটওয়ে শহরে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে, আগে রোহিঙ্গাদেরকে ক্যাম্প থেকে বের হতে দেওয়া হত না।

প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, রোহিঙ্গারা সেখানে স্বল্পপরিসরে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে যা এতদিন ছিল না। রাষ্ট্রদূতরা নাফ নদীর পাড়ের নকুইয়া গ্রামে পাঁচ বছর আগে বানানো অন্তর্বর্তীকালীন ক্যাম্পের সংস্কার কাজ দেখেন। নাফ নদীপথে যে সব রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে তাদেরকে প্রথম কিছুদিন এই ক্যাম্পে রাখা হবে। এরপর তারা মংডুর লাপুখা ক্যাম্পে স্থানান্তরিত হবে। সেখানে তারা মাসখানেক থাকবে এবং সবশেষে তাদেরকে মংডু এবং সিটওয়ের কাছে নির্মাণাধীন ক্যাম্পগুলোতে স্থায়ীভাবে স্থানান্তর করা হবে।কূটনীতিকদের চকপিউ এলাকায় ২০১২ সাল থেকে বসবাসরত আই ডি পি’দের ক্যাম্প ও দেখানো হয়। এই ক্যাম্পগুলো বন্ধ করে পাশের গ্রামে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে স্থানান্তর করা হবে বলে তাদেরকে জানানো হয়। চকপিউ একটা গুরুত্বপূর্ণ এলাকা এখানে চীনের বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত তেল কোম্পানি এবং গভীর সমুদ্রবন্দর রয়েছে।

বিভিন্ন মিডিয়া থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, বর্তমানে রাখাইনের পরিস্থিতি ভালো। কয়েক মাস আগে রাখাইনে আরাকান আর্মি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। পরবর্তীতে নিপ্পন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাসাকাওয়ার মধ্যস্থতায় সেখানে সাময়িক অস্ত্র বিরতি চলছে এবং আপাত শান্তি বিরাজ করছে। এ অবস্থায় হাজারখানেক রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে প্রত্যাবাসন শুরু করা যেতে পারে। প্রত্যাবাসন শুরু হলে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ কিছুটা কমবে এবং সামরিক সরকারের গ্রহণযোগ্যতা কিছুটা বাড়বে বলে চীন মনে করে। আগামী ২৪ এপ্রিল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলায় মিয়ানমারকে তাদের যুক্তি পেশ করতে হবে, প্রত্যাবাসনের এই উদ্যোগের সাথে আইসিজে’র সম্পর্ক থাকতে পারে বলে অনেকে মনে করে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকার আইসিজেকে জানাবে যে তারা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পদক্ষেপ নিচ্ছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে ৮ লাখ ৮৮ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের দেওয়া এই তালিকা যাচাই-বাছাই শেষে প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছিল মিয়ানমার। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ওই তালিকা থেকে পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে পরিবারভিত্তিক প্রত্যাবাসনের জন্য প্রাথমিকভাবে ১১৪০ জনকে বাছাই করা হয়। এর মধ্যে ৭১১ জন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমার সম্মতি দেয়। বাকি ৪২৯ জনের ব্যাপারে তাদের আপত্তি থাকায় তাদের তথ্য যাচাই-বাছাই করতে ১৫ মার্চ মিয়ানমারের মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্সের মংডুর আঞ্চলিক পরিচালক অং মাইউ’র নেতৃত্বে ১৭ সদস্যর প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসে। প্রতিনিধি দলটি সাত দিনে ৪২৯ রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য যাচাই শেষে ২২ মার্চ বাংলাদেশ ত্যাগ করে।

মিয়ানমার পাইলট প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৫০০ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার মধ্য দিয়ে প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায়। প্রত্যাবাসনের বিষয়ে তারা যে আন্তরিক এই প্রকল্পের মাধ্যমে তারা সেটা বোঝানোর চেষ্টা করবে। পরিবারভিত্তিক প্রত্যাবাসনের আওতায় প্রথমে এক হাজারের কিছু বেশি রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। মিয়ানমারের তথ্য উপমন্ত্রী মেজর জেনারেল জাও মিন তুন এপ্রিলের মাঝামাঝি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ক পাইলট কর্মসূচি শুরু হতে পারে বলে জানায়। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের আবাসনের জন্য ৭৫০টি প্লটের ওপর ১৫টি নতুন গ্রাম তৈরি করতে একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ফেরত নেওয়া রোহিঙ্গাদেরকে প্রথমে দুই মাসের জন্য হ্লা ফো খাউং অন্তর্বর্তী ক্যাম্পে রাখা হবে। সেখান থেকে মংডু শহরের তাউং পিয়ো লেটওয়ে ও নাগার খু ইয়া ক্যাম্পে তাদের যাচাই করার পর তাদেরকে নতুন এই গ্রামগুলোতে পাঠানো হবে। ২৩ মার্চ মিয়ানমার জানিয়েছে যে, এই পাইলট প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে আরও পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা ফেরত নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে তাদের নিজ গ্রামে ফিরতে ইচ্ছুক। তবে নিজ গ্রামে ফেরত না যেতে পারলে তারা প্রত্যাবাসনে আগ্রহী নয়। নাগরিক অধিকার, ভ্রমণ স্বাধীনতা কিংবা অন্যান্য জাতিসত্তার সমান অধিকারের নিশ্চয়তা পেলে তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে।

ইউএনএইচসিআর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি মূল্যায়নের পর সেখানকার পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুকূল নয় বলে জানায়।বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় পাইলট প্রকল্পের আওতায় মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে ইউএনএইচসিআর জানায় যে, রোহিঙ্গাদের সম্ভাব্য প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের এই আলোচনায় তারা জড়িত নয়। ইউএনএইচসিআর রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করছে বলে জানিয়েছে। রোহিঙ্গারা যাতে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনে অংশ নেয় সেজন্য তারা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে। ইউএনএইচসিআর, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরির প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে। বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এবং তাদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা অব্যাহত রাখবে ইউএনএইচসিআর।

যেসব রোহিঙ্গাদের তথ্য যাচাই বাছাই করা হয়েছে তাদের অনেকে এখনই মিয়ানমার ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী নয় বলে জানা যায়। তারা মিয়ানমার ফেরার ব্যাপারে যথেষ্ট ভরসা পাচ্ছেন না। মিয়ানমারে থাকা রোহিঙ্গারা সেখানে ভালো আছে এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচার বন্ধ হওয়ার বিষয়ে সেখানে থাকা রোহিঙ্গারা তাদেরকে আশ্বস্ত করলে তারা নিজেরাই মিয়ানমারে ফিরে যাবে জানায়। মিয়ানমারে ক্যাম্পগুলোতে অবস্থানরত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। চলমান সহিংসতায় জাতিসংঘ ও অন্যান্য সাহায্য সংস্থাগুলো মিয়ানমারে ত্রাণ কার্যক্রম সঠিকভাবে চালাতে না পারার কারণে রোহিঙ্গারা সেখানে শোচনীয় অবস্থায় রয়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সে সব ক্যাম্পে ত্রাণ কার্যক্রম অবিলম্বে চালু করার ব্যবস্থা করতে হবে।

এই পাইলট প্রকল্পে মিয়ানমার জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে সাথে রাখেনি। গত ছয় বছর ধরে এই সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সহায়তা দিয়ে আসছে। জাতিসংঘ রাখাইনের পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনের সহায়ক নয় বলে জানিয়েছে। ত্রাণ সহায়তা ছাড়া রোহিঙ্গারা আবার মানবিক বিপর্যয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই উদ্যোগে তাই তাদেরকে সাথে রাখার দরকার ছিল বলে অনেকে মনে করে।

বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গারা বিভিন্ন সময় দাবি জানিয়ে আসছে যে, নাগরিকত্ব না পেলে তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবেন না। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের বিষয়ে কিছু জানায়নি এবং রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে তাদের মনোভাবের পরিবর্তনের বিষয়টিও স্পষ্ট নয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে অগ্রগতির কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদেরকে তাদের জনগণ মনে করে বলে জানিয়েছে। তবে এই প্রকল্পে তাদেরও কোন সম্পৃক্ততার কথা জানা যায়নি। একই সাথে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক মনোভাবের পরিবর্তন সম্পর্কে নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়েও কিছু জানা যায়নি এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার পরিবর্তনের ইঙ্গিতও স্পষ্ট নয়।

রোহিঙ্গা অধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে যে, নাগরিকত্বের স্বীকৃতি ছাড়া প্রত্যাবাসন হলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি তৈরি হবে। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার পর নতুন বানানো গ্রামে স্থানান্তরিত করবে বলে জানিয়েছে কিন্তু রোহিঙ্গারা তাদের নিজ গ্রামে ফিরতে চায়। মিয়ানমারের ক্যাম্পগুলোতে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের তাদের আগের বাড়িঘর ও গ্রামগুলোতে পুনর্বাসন করা শুরু হলে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হবে ও রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরে যাবে এবং এর ফলে সার্বিক প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া টেকসই হবে বলে আশা করা যায়।

রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের ওপর বোঝার মত চেপে আছে। বিরাজমান বৈশ্বিক সংকটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ রোহিঙ্গা সংকট থেকে সরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর্থিক সংকটের কারণে রোহিঙ্গাদের জন্য বাজেট কমানো হয়েছে। এর পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি হচ্ছে। চলমান এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ চাইছে, সংখ্যায় কম হলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হোক। বাংলাদেশ সরকার টেকসই প্রত্যাবাসনের ওপর জোর দিয়ে তা চলমান রাখার ব্যাপারে আগ্রহী। এ বিষয়ে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সক্রিয় সহযোগিতা আশা করে।রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য নেওয়া মিয়ানমারের এই উদ্যোগ ইতিবাচক। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদেরকে তাদের নিরাপত্তা ও পুনর্বাসনের বিষয়ে আশ্বস্ত করে টেকসই পরিকল্পনার মাধ্যমে এই কার্যক্রম চলমান রাখবে এটাই প্রত্যাশা।

লেখক: ব্রি. জে. (অব.) হাসান মো. শামসুদ্দীন, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, এম ফিল, মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা বিষয়ক গবেষক।

;

বিমানবন্দর দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখে



মো. কামরুল ইসলাম
বিমানবন্দর দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখে

বিমানবন্দর দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখে

  • Font increase
  • Font Decrease

আকাশপথে ভ্রমণ আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম আকর্ষণ। সারাবিশ্বে শতশত বিমানসংস্থা হাজার হাজার বিমানবন্দরকে সংযুক্ত করে আছে। এই সংযুক্তি শুধুমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করছে তা কিন্তু নয়। আকাশ পথের যোগাযোগ বিশ্বের সার্বিক অর্থনীতির চিত্রকে বদলে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত।

অষ্টম বৃহত্তর জনগোষ্ঠির দেশ আমাদের বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশে রয়েছে মাত্র তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়া আছে আরো পাঁচটি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর।

মাত্র ৮টি বিমানবন্দর দিয়ে দেশে আকাশপথে সংযোগ স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৫১ বছর এর অধিক সময়। দেশের আকাশ পরিবহন সংস্থাও গঠিত হয়েছে প্রায় একই সময় ধরে। স্বাধীনতার পূর্বে দেশে ১২টি বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ উঠা-নামা করতো। কিন্তু বর্তমানে ৮ টি বিমানবন্দর চালু আছে।

ব্যবসায়িকভাবে বর্তমানে চালুকৃত অনেকগুলো বিমানবন্দরে আয়ের সাথে ব্যয়ের একটা সাংঘর্ষিক অবস্থা বিরাজ করছে। বরিশাল, রাজশাহী কিংবা যশোর বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনা থেকে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ খুব একটা লাভবান হচ্ছে না। কিন্তু সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকছে বিমানবন্দরগুলো সচল থাকার কারনে।

সারাদেশের প্রায় ৫০টির মতো জেলা ৮টি বিমানবন্দর দিয়ে আকাশপথের সংযোগ স্থাপন করেছে। অব্যবহৃত বিমানবন্দরগুলো চালু হলে দেশের আকাশ পরিবহনে সার্বিক চিত্র আমুল পরিবর্তন সাধিত হবে। বিশেষ করে ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, ঈশ্বরদী, শমশেরনগর, বগুড়া, বাগেরহাট, কুমিল্লা বিমানবন্দর চালু হলে দেশের অর্থনীতি তথা আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সাধিত হবে।

সারাদেশে ৩১টি এয়ারস্ট্রিপ রয়েছে যেগুলোতে কখনই বিমান চলাচল করেনি। সেইসব এয়ারস্ট্রিপগুলো পুনরুদ্ধার করে স্টল এয়ারপোর্ট কিংবা হেলিপোর্ট নির্মাণ করলে আকাশপথে যোগাযোগ আরো সুসংহত হবে। উল্লেখযোগ্য এয়ারস্ট্রিপগুলোর মধ্যে টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, বাজিতপুর, আড়াইহাজার, ফেনীসহ আরো অনেক।

দেশে ১০ টি হেলিকপ্টার কোম্পানীর প্রায় ৩০টির অধিক হেলিকপ্টার রয়েছে যা দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছে। ক্ষুদ্র পরিসরে আকাশ পরিবহন ব্যবসায় ভূমিকা রাখছে। দেশে অধিকসংখ্যক হেলিপোর্ট নির্মান করলে হেলিকপ্টার ব্যবসায় সফলতা আসতে পারে।

বন্ধ হওয়া বা অব্যবহৃত বিমানবন্দরগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে চালু করার পরিকল্পনা করছে সরকার। ফলে দেশের বেশী সংখ্যক জনগণের আকাশ পরিবহন থেকে সেবা পাওয়ার সুযোগ তৈরী হবে। 

প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটি বিমানবন্দর চালু হলে বিমানবন্দরকেন্দ্রিক শহর সৃষ্টি হয়। বেকার সমস্যা দূরীকরণে ভূমিকা রাখে। শিল্প কারখানা গড়ে উঠে। গ্রামীণ অর্থনীতি তথা সার্বিক আর্থ সামাজিক উন্নতি দেখা যায়। বিমানবন্দর কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পের বিকাশ সাধিত হয়। সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতির উপর পজিটিভ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

লেখক: মোঃ কামরুল ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক- জনসংযোগ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স

;

যাত্রীবান্ধব এয়ারলাইন্স: ইউএস-বাংলা



মো. কামরুল ইসলাম
ছবি; বার্তা২৪.কম

ছবি; বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

যাত্রা শুরুর পর দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থেকে একটি এয়ারলাইন্স যাত্রীদের চলার পথে যাত্রীবান্ধব হয়ে উঠে। যাত্রীবান্ধব হয়ে উঠতে অন-টাইম পারফর্মেন্স জরুরী হয়ে উঠে। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই যাত্রা শুরুর পর থেকে ৯০ শতাংশের উপর ফ্লাইট অন-টাইম বজায় রেখে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে আসছে।

এয়ারক্রাফটের পর্যাপ্ততা একটি এয়ারলাইন্স এর এগিয়ে চলার পথে বড় নিয়ামক। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স দু’টি ড্যাশ ৮-কিউ৪০০ এয়ারক্রাফট দিয়ে যাত্রা শুরু করে এখন বহরে যুক্ত করেছে ১৯টি এয়ারক্রাফট। যার মধ্যে ৮টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০, ৮টি এটিআর ৭২-৬০০ ও ৩টি ড্যাশ৮-কিউ৪০০ এয়ারক্রাফট রয়েছে। চলতি বছরের মে-জুন মাসে ৪৩৯ আসনের দু’টি এয়ারবাস ৩৩০ ওয়াইড বডি এয়ারক্রাফট যোগ করার পরিকল্পনা নিয়েছে ইউএস-বাংলা।

অন-টাইম পারফর্মেন্স বজায় রেখে অভ্যন্তরীণ সকল রুটে ফ্লাইট পরিচালনার পর আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রীদের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। ২০১৬ সালের ১৫ মে ঢাকা থেকে কাঠমুন্ডু রুটে ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে যাত্রা শুরু করে। একের পর এক নতুন নতুন আন্তর্জাতিক গন্তব্য শুরু করতে থাকে ইউএস-বাংলা।

যাত্রীদের চাহিদাকে পূর্ণতা দিয়ে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ফ্লাইট সিডিউল ঘোষণা করছে। নূন্যতম ভাড়ায় ভ্রমণ করার সুযোগ করে দিচ্ছে। পর্যটকদের ভ্রমণকে আরো বেশী আকর্ষণীয় করতে নানা ধরনের ভ্রমণ প্যাকেজ ঘোষণা করছে। দেশে কিংবা বিদেশে টিকেট কিনলে হোটেল ফ্রি অফার রাখছে। ইএমআই সুবিধা দিয়ে প্যাকেজ ঘোষণা পর্যটকদের ভ্রমণ পরিকল্পনাকে সহজতর করে দিচ্ছে। কলকাতা কিংবা চেন্নাইয়ে চিকিৎসার জন্য ভ্রমণ করলে এ্যাপোলো হাসপাতালে ডিসকাউন্ট অফার দিচ্ছে ইউএস-বাংলা। 

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গন্তব্য মালদ্বীপের রাজধানী মালের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করেছে। যার ফলে ভারত মহাসাগরের নীলাভ সৌন্দর্য দর্শনে পর্যটকরা ঢাকা থেকে মালে ভ্রমণ করছে। বিভিন্ন ধরণের প্যাকেজ সুবিধা নিয়ে মালদ্বীপের আকর্ষণীয় দ্বীপগুলোতে ভ্রমণ করছে।

মধ্যপ্রাচ্যে পর্যটকদের আকর্ষণীয় গন্তব্য দুবাই ভ্রমণে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স প্রতিদিন ঢাকা থেকে দু’টি করে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এবং শারজাহ-তেও প্রতিদিন একটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশী অধ্যুষিত মাস্কাট ও দোহাতে ফ্লাইট পরিচালনা করছে ইউএস-বাংলা।

সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, ব্যাংকক কিংবা গুয়াংজু রুটে বাংলাদেশী যাত্রীদের পছন্দক্রমে ইউএস-বাংলা অগ্রগণ্য। যাত্রী বিবেচনায় প্রবাসী শ্রমিকবান্ধব এয়ারলাইন্স হওয়ায় ইউএস-বাংলা যাত্রীদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে।

অভ্যন্তরীণ রুটে ঢাকা থেকে সিলেটে ৬টি, সৈয়দপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ৮টি করে ফ্লাইট, যশোরে ৩টি, রাজশাহীতে ২টি, বরিশালে ১টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে ইউএস-বাংলা। যা দেশের অভ্যন্তরে যাত্রীদেরকে সেবা দেয়ার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

দেশের অভ্যন্তরে ব্র্যান্ডনিউ এটিআর ৭২-৬০০ এয়ারক্রাফট দিয়ে সর্বপ্রথম ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় দেশে সর্বপ্রথম সেলফ চেক-ইন করার ব্যবস্থা রেখেছে ইউএস-বাংলা। 

অনলাইন ও অফলাইন ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে টিকেট ক্রয়ের সুবিধা থাকার পরও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স দেশে এবং দেশের বাহিরে ৪১টি নিজস্ব আউটলেটের মাধ্যমে সরাসরি টিকেট ক্রয়ের সুবিধা রেখেছে যাত্রীদের জন্য।

বাংলাদেশে প্রাইভেট এয়ারলাইন্সগুলোর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দশ বছর অতিক্রমকালীন সময়টা এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য অনেকটাই নাজুক অবস্থা বিরাজমান সেখানে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স বাংলাদেশকে ব্র্যান্ড হিসেবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত এয়ারলাইন্স এর বিমান বহরে নতুন নতুন এয়ারক্রাফট যুক্ত করে নতুন নতুন গন্তব্যে নিজেদের পেখম মেলে ধরছে। বর্তমানে ২৫০০ এর অধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে ইউএস-বাংলায়। যা দেশের বেকার সমস্যা দূরীকরণে কাজ করছে।

দেশের ট্রাভেল এজেন্সি, ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রি ও হোটেল ইন্ডাস্ট্রিকে গতিশীল রাখতে ইউএস-বাংলা যাত্রার শুরু থেকেই কাজ করছে। যাত্রীদের আস্থাই ইউএস-বাংলার এগিয়ে চলার পথে পাথেয়।   

লেখক: মোঃ কামরুল ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স

;

ইসলামে স্বাধীনতা ও দেশপ্রেমের গুরুত্ব



মাহমুদ আহমদ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

 

আজ ২৬ মার্চ। মহান স্বাধীনতা দিবস। স্বাধীনতা মহান সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রের জন্য এক বিশেষ নেয়ামত।

আমাদের মাতৃভূমি বাংলাকে স্বাধীন করার জন্য ত্যাগ করতে হয়েছে অনেক কিছু, দিতে হয়েছে লাখ প্রাণের তাজা রক্ত। আল্লাহপাকের জমিনে তিনি পরাধীনতা পছন্দ করেন না। যেখানে স্বাধীন ভূখণ্ড নেই সেখানে ধর্ম নেই আর যেখানে ধর্ম নেই সেখানে কিছুই নেই। তাই ইসলামে দেশ প্রেম এবং স্বাধীনতার গুরুত্ব অতি ব্যাপক। সৃষ্টির প্রতিটি জীব স্বাধীনতা পছন্দ করে। পৃথিবীতে এমন কোন জাতি বা জীব পাওয়া যাবে না যারা পরাধীন থাকতে চায়। তাই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সবাই কতই না চেষ্টাপ্রচেষ্টা করে থাকে। আর এই স্বাধীনতার জন্যই মহানবী (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করে মক্কাকে করেছিলেন স্বাধীন।

ইসলামের ইতিহাস পাঠে জানা যায়, পৃথিবীতে এ পর্যন্ত যত নবীর আগমণ হয়েছে তারা সবাই সমাজ, দেশ ও জাতির স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছেন। আর এই স্বাধীনতা অত্যাচারী শাসকের দাসত্ব থেকে জাতিকে স্বাধীন করার ক্ষেত্রেই হোক বা ধমীর্য় স্বাধীনতার ক্ষেত্রে হোক। এক কথায় বলা যায়, সব ধরণের দাসত্ব ও পরাধীনতা থেকে মুক্ত করাই হচ্ছে আল্লাহতায়ালার প্রেরিত নবীদের কাজ।

আমরা জানি, গোলাম মুক্ত করে এবং সর্ব ক্ষেত্রে স্বাধীনতার জন্য যিনি আজীবন লড়াই করে গেছেন এবং শতভাগ সফল হয়েছেন তিনি হলেন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি হচ্ছেন স্বাধীনতার উজ্জল সূর্য। যাঁর কিরণ দূরদূরান্তে বিস্তার লাভ করেছে, যিনি নিজের মাঝে সব ধরণের স্বাধীনতাকে ধারণ করেছিলেন। যিনি মানুষকে শুধু বাহ্যিক দাসত্ব থেকেই স্বাধীনতা দেননি, বরং সমাজ ও দেশ থেকে সব ধরণের নৈরাজ্য দূর করে সবাইকে করেছিলেন স্বাধীন। বিশ্বের এক বিশাল জনগোষ্ঠী অবলোকন করেছে, কিভাবে বিশ্বনবী (সা.) সমাজ, দেশ তথা সর্বত্রে স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

পরাধীনতার অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্ত করার জন্য মহানবী (সা.) যেমন লড়েছেন তেমনি তিনি সকলকে করেছিলেনও স্বাধীন। কিন্তু এটি বড়ই পরিতাপের বিষয়, অনেক জাতি স্বাধীনতার প্রকৃত পতাকাবাহীদের অস্বীকার করে এবং সর্বোত্তম শাসকের (আল্লাহর) শাসনের ওপর জাগতিক শাসকের দাসত্বকে অগ্রাধিকার প্রদান করার ফলে তারা কেবল নিজেরাই প্রকৃত স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত হয় নি বরং বহু জাতি আল্লাহর আজাবগ্রস্থ হয়ে ধ্বংসও হয়েগেছে। একান্তই সত্য যে, বিভিন্ন দেশে স্বাধীনতা সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাওয়ার কারণে স্বাধীনতা কেবল তাদের হাতছাড়া হয়নি বরং সে জাতির ইহ ও পরকাল উভয়ই ধ্বংস হয়ে গেছে।

প্রকৃতিগতভাবে আল্লাহপাক মানুষকে স্বাধীন করে সৃষ্টি করেছেন। প্রত্যেক মানুষ মাতৃগর্ভ থেকে স্বাধীন হয়ে জন্মগ্রহণ করে। আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য এটাই স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। আল্লাহতায়ালা সবাইকে বিবেক ও বিশ্বাসেরও স্বাধীনতা দিয়েছেন। কাউকে পরাধীন করেননি। যেভাবে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে ‘তোমার প্রভুপ্রতিপালক ইচ্ছা করলে পৃথিবীতে যারা আছে তারা সবাই অবশ্যই এক সাথে ঈমান নিয়ে আসত। তবে কি তুমি মোমেন হওয়ার জন্য মানুষের ওপর বল প্রয়োগ করবে?’ (সুরা ইউনুস, আয়াত: ৯৯)।

এই আয়াত স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছে যে, আল্লাহ সবার স্বাধীনতা চান। তিনি চাইলে সবাইকে একসাথে মোমেন বানাতে পারেন কিন্তু তা তিনি করেননি। তিনি চেয়েছেন মানুষ যেন স্বাধীনভাবে বুঝেশুনে ঈমান আনে। ইসলাম সর্বশ্রেষ্ঠ এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ ধর্ম হওয়া সত্ত্বেও ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে ইসলাম ধর্ম বা বিশেষ কোনো ধর্মগ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের দমননীতি অনুমোদন করে না। মাদানী যুগেও আমরা আল কোরআনের এই বিস্ময়কর প্রকাশ দেখতে পাই, ‘ধর্মের ক্ষেত্রে জবরদস্তি নেই’ (সুরা আল বাকারা: ২৫৬)। এই আয়াত থেকেই বিষয়টি স্পষ্ট যে, ইসলাম স্বাধীনতাকে কতটা পবিত্র করেছে এবং একে কতটা মর্যাদা দিয়েছে।

স্বাধীনতাকে ইসলাম যেমন গুরুত্ব দিয়েছে তেমনি দেশপ্রেম ও দেশাত্মবোধকেও অতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং একে ঈমানের অংশ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মহানবী (সা.)এর হৃদয়ে স্বদেশ প্রেম যেমন ছিল তেমনি তাঁর সাহাবায়ে কেরামদের মাঝেও বিদ্যমান ছিল। ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য তারা যেমন আন্তরিক ছিলেন, তেমনি নিবেদিত প্রাণ ছিলেন দেশপ্রেম ও দেশের স্বাধীনতা রক্ষায়।

প্রিয় নবী (সা.) মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এমনকি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও স্বাধীনতার চেতনাকে জাগ্রত করে, তাদেরকে মানুষ হিসেবে নিজের পরিচয়, সম্মান, আত্মমর্যাদাবোধ প্রতিষ্ঠা করে দুনিয়ার ইতিহাসে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। তিনি যেমন অসংখ্য দাসকে নিজ খরচে মুক্ত করেছেন তেমনি সমগ্র বিশ্বকে দিয়েছিলেন স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ।

মহান স্বাধীনতা দিবসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (২৬ মার্চ) ‘মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস’ উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে পরিদর্শন বইয়ে প্রত্যয়দীপ্ত এ মন্তব্য করে সই করেন তিনি। আমরাও ইনশাআল্লাহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশা পুরণে যার যার স্থান থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিব। 

আসুন, নিজ দেশের প্রতি, দেশের সম্পদের প্রতি, সকল ধর্মের অনুসারীদের প্রতি আমাদের হৃদয়ে অনেক বেশি ভালোবাসা সৃষ্টি করি আর ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তোলার আন্দলনে নিজেকে সম্পৃক্ত করি। 

লেখক: ইসলামী গবেষক ও কলাম লেখক

;