‘অনুপস্থিত’ অর্থমন্ত্রী যদি অব্যাহতি নিতেন!



কবির য়াহমদ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

আবুল মাল আবদুল মুহিত সাবেক অর্থমন্ত্রী। সবচেয়ে বেশিবার বাজেট উপস্থাপন করে রেকর্ড গড়া অর্থমন্ত্রী তিনি। দীর্ঘ চাকরিজীবন শেষে রাজনৈতিক জীবন এবং স্বেচ্ছায় রাজনীতি থেকে অবসর− সব ছিল তার বর্ণাঢ্য জীবনে। তার পর অর্থমন্ত্রী হয়েছেন আবু হেনা মোহাম্মদ মুস্তাফা কামাল (আ হ ম মুস্তাফা কামাল)। তিনি তার পূর্বসূরির মতো সফল হতে পারেননি। বরং বর্তমান অর্থমন্ত্রীর সময়ে দেশ পড়তে যাচ্ছে অনিশ্চয়তায়।

আবুল মাল আবদুল মুহিত সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদেরও অর্থমন্ত্রী ছিলেন। গণতন্ত্রে দেশকে ফেরানো হবে এই শর্তে তিনি এরশাদের মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। এরপর বছরখানেক দিন শেষে দেখেন এরশাদ তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছেন না, তখন তিনি স্বেচ্ছায় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ের পর যে মন্ত্রিসভা গঠন করে সেখানে শেখ হাসিনা তাকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। প্রবল প্রতিকূল দেশীয় ও বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেওয়া আবুল মাল আবদুল মুহিত বৈশ্বিক মন্দা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতিকে যে জায়গায় নিয়ে গেছেন তার সুফল দীর্ঘদিন ভোগ করেছে দেশ। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্পসহ আরও অনেক প্রকল্প তার আমলে শুরু হয়। তিনি আর্থিক ব্যবস্থাপনার দিকটি সুনিপুণভাবে করে গেছেন। তার দায়িত্বকালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের যে ঊর্ধ্বগতি হয়েছিল সেখান থেকে দেশ একটা সময়ে ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছায়।

মাথাপিছু আয়, জিডিপি, রিজার্ভ, মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনীতির নানা খাতের ব্যবস্থাপনায় তিনি যে সাফল্যের সাক্ষর রেখেছেন তার পথ ধরে পরের অর্থমন্ত্রীকে যেখানে টেনে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল সেটা এখন হচ্ছে না। টালমাটাল বিশ্ববাজার, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধজনিত পরিস্থিতিতে বিশ্বের দেশে-দেশে অর্থনৈতিক দুরবস্থা চলছে সত্য, তবে প্রতি দেশ যেখানে পরিকল্পনা ধরে এগুচ্ছে সেখানে আমাদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছুই জানা যাচ্ছে না। অভ্যন্তরীণ বাজার পরিস্থিতি, মূল্যস্ফীতিতে মানুষের জীবন যখন দুর্বিষহ তখন আমাদের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামালকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারের পরিকল্পনা নিয়ে তিনি যেখানে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করার কথা সেখানে তিনি নিজেই সবকিছুতে অনুপস্থিত।

গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, অর্থমন্ত্রী মুস্তাফা কামাল সচিবালয়ে নিয়মিত আসেন না। একনেকের বৈঠকের উপস্থিত হন না। মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও অংশ নেন না। নিজের বাসায় কাজ করেন বলে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দাবি করেছেন। ক্রান্তিকালে সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী যখন নিজেকে প্রায় গুঁটিয়ে নিয়েছেন তখন দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়তে নৈরাশ্যবাদী হওয়া লাগে না; আপনা থেকেই এটা ভর করে।

ক্রান্তিকাল না হোক, স্বাভাবিক সময়েও অর্থমন্ত্রীর মতো দায়িত্বশীল জায়গার কারও এমন অবস্থা মেনে নেওয়া যায় না। কিন্তু তা-ই হচ্ছে। সরকারপ্রধান অর্থমন্ত্রীর অনুপস্থিতিকে গ্রাহ্য করছেন। ঝঞ্ঝামুখর এই সময়ে একজন অর্থমন্ত্রী কিছুতেই নেই, এটা আর যাই হোক স্বাভাবিক কিছু নয়। অর্থমন্ত্রী কিছুতেই নেই, কিন্তু মন্ত্রী হিসেবে তিনি সরকারি সকল সুবিধা ভোগ করে যাচ্ছেন। কিছুদিন আগেও সরকারি খরচে চিকিৎসার জন্যে বিদেশ সফর করেও এসেছেন। এটা তার রুটিন স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়তো। যদি রুটিন স্বাস্থ্য পরীক্ষার বাইরে গুরুতর অসুস্থতার কারণে বাইরে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন, যদি তিনি অসুস্থতার কারণে অর্থমন্ত্রীর মতো গুরুদায়িত্ব পালনে সক্ষম না হয়ে থাকেন তবে তার উচিত হবে পদ আঁকড়ে না থাকা। কারণ সরকারপ্রধান তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন কাজের জন্যে, দেশের জনগণ তার কাছ থেকে কাজ আশা করে; তিনি কাজের জন্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শারীরিক অসুস্থতা কিংবা অন্য কোন কারণে তিনি যদি অক্ষম হয়ে থাকেন তবে পদ আঁকড়ে থাকা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের নামান্তর। এটা তিনি করতে পারেন না, এটা কেউ করতে পারে না।

অর্থমন্ত্রী অসুস্থ হয়ে থাকলে তার সুস্থতা কামনা করি। সুস্থতা-অসুস্থতায় কারও হাতে থাকে না, কিন্তু দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়া নিশ্চয়ই সুস্থতা-অসুস্থতার মতো প্রকৃতিপ্রদত্ত কিছু নয়। এটা কাজ করার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে না পারার সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত। তবে অসুস্থতায় স্বাভাবিকভাবে কাজ না করেও পদ ধরে রাখার প্রচেষ্টা কেবল সুবিবেচনা পরিপন্থিই নয়, এটা রাষ্ট্র-সরকার ও নাগরিকের সঙ্গে প্রতিশ্রুতিভঙ্গের অংশও কি হয়ে যায় না?

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিচ্ছেন না, এদিকে সরকারপ্রধানও তাকে অব্যাহতি নিতে বলছেন না−এটা বিস্ময়ের। নির্বাচনের এক বছর আগে দেশের ভবিষ্যৎ ও অর্থনৈতিক দুরবস্থা নিয়ে শঙ্কার আলোচনার এই সময়ে অর্থমন্ত্রী পদত্যাগ করলে মানুষ কী বলবে এটাই কি ভয়? কিছুদিন আগে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে এমন একটা আলোচনা বেশ হাওয়া পেয়েছিল। বৈদেশিক রিজার্ভ কমতির দিকে, বাজার পরিস্থিতি যেকোনো সময়ের চাইতে ভয়াবহ, তেলের দাম বৃদ্ধিতে দিশেহারা মানুষ। আসছে বছরে দুর্ভিক্ষ আঘাত হানতে পারে এমনই বক্তব্য নিয়মিত দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। বিদ্যুতের লোডশেডিং পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ কবে সেটাও সঠিকভাবে বলতে পারছে না সরকার। এমন অবস্থায় অর্থমন্ত্রী পদত্যাগ করলে সরকার দল আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষ বিরূপ হবে এমনই কি শঙ্কা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার? হতে পারে। তবে এই শঙ্কার পথ ধরে অনেক কিছুতে অনুপস্থিত অর্থমন্ত্রীকে পদে টিকিয়ে রাখা কি দেশের জনগণের স্বার্থের পরিপন্থী নয়?

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাজ আর অন্য মন্ত্রণালয়গুলোর কাজ এক নয়। সকল মন্ত্রণালয়ের কাজের কেন্দ্রেও থাকে এ মন্ত্রণালয়, এখানে দরকার তাই কর্মক্ষম ও দক্ষ মন্ত্রী। কোনোমতে কাউকে দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়ার মত ক্ষেত্র এটা নয়। অসুস্থতায় পদে রেখে ‘সহানুভূতি’ দেখানোর জায়গা এটা নয়। এটা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার জায়গা, পদ-পদবি দখলের জায়গা মোটেও নয়। আর সারাবিশ্বের মতো আমরাও যখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি তখন এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বও বেশি।

আমরা দেখছি আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতার কারণে ব্রিটেনে একাধিকবার প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। বরিস জনসন, লিজ ট্রাস কেউ টিকতে পারেননি। নতুন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন ঋষি সুনাক। বদলেছে মন্ত্রিসভা। মূল্যস্ফীতিসহ প্রবল অর্থনৈতিক দুরবস্থায় দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে অর্থমন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রীরা সেখানে টিকতে পারছেন না। দেশ এবং কেবলই দেশের জনগণকে গুরুত্ব দিয়ে সরকারপ্রধানসহ মন্ত্রিসভার পরিবর্তন হচ্ছে সেখানে। এমন না যে তাদের অর্থমন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রীরা কাজ করেননি, তবু পদত্যাগ করতে হয়েছে জনগণের স্বার্থে। কিন্তু আমাদের দেশের চিত্র ভিন্ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করছেন, এটা সন্দেহাতীতভাবে সত্য। কিন্তু তার মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল যখন সচিবালয়েই আসেন না, মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বৈঠকসহ বিদেশিদের সঙ্গে বৈঠকে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন না তখনও তিনি টিকে আছেন, তাকে টিকিয়ে রাখা হচ্ছে। কেন, কীসের জন্যে, কার স্বার্থে, কোন যুক্তিতে?

মুস্তাফা কামাল তার পূর্বসূরি আবুল মাল আবদুল মুহিতের মতো অর্থনীতিবিদ নন। তিনি বিএনপি সরকারের অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের মতো চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট। পাশাপাশি ব্যবসায়ী তিনি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতো মহাগুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় সামলাতে তিনি কতটা সক্ষম সে প্রমাণ পেয়ে গেছে দেশ। বাজেট নিয়েও তিনি কোন সংসদ সদস্যের মতামতকে পাত্তা দিতেন না বলে সংসদেও এনিয়ে অভিযোগ এসেছিল। আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী একবার সংসদে বাজেট বক্তৃতায় বলেছিলেন, অর্থমন্ত্রী বাজেট নিয়ে কারও কথা শোনেন না। সাবের হোসেন চৌধুরী স্মৃতি রোমন্থন করে বলেছিলেন, আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থমন্ত্রী থাকাকালে বাজেট-পূর্ব বিভিন্ন বৈঠকে এবং বাজেট আলোচনায় সকলের মতামত/প্রস্তাবকে নোট করতেন, গুরুত্ব দিতেন।

দেশের অর্থনৈতিক এই জরুরি পরিস্থিতিতে যেখানে অর্থমন্ত্রীকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা সেখানে তিনি নিজেই অনুপস্থিত। হতে পারে তিনি অসুস্থ, কিন্তু তার ব্যক্তিগত এই অসুস্থতায় কেন বলী হবে দেশ? দেশকে প্রবল অনিশ্চয়তায় রেখে কেন তিনি পদ আঁকড়ে থাকবেন? তিনি কিংবা মন্ত্রিসভার কেউ অসুস্থতায় কিংবা কোনো কারণে কর্মক্ষমতা হারালে তার/তাদের নিজ থেকেই সরে যাওয়া উচিত। দেশ ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে সরে যাওয়া উচিত। মন্ত্রিত্বের শপথের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সরে যাওয়া উচিত। কিন্তু তা না করে পদ আঁকড়ে থাকা দৈহিক অসুস্থতার আলোচনা ছাপিয়ে নৈতিক অসুস্থতার আলোচনায় রূপ নেয়।

আমরা যখন দুর্দিনের মুখোমুখি, যখন উত্তরণে দরকার সঠিক নেতৃত্ব, কাজ এবং কাজ; তখন অর্থমন্ত্রীকে টিকিয়ে না রেখে তাকে অব্যাহতি দেওয়া উচিত। সরকার ও জনগণ আ হ ম মুস্তাফা কামালের প্রতি দায়বদ্ধ নয়, বরং মুস্তাফা কামালই জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। অর্থমন্ত্রী ব্যক্তি নয়, প্রতিষ্ঠানের অন্যতম ব্যক্তি। ব্যক্তি এখানে কাজের জন্যে শপথ নিয়েছেন। কাজ করার ক্ষমতা হারালে সরে যাওয়া নৈতিক দায়িত্ব তার। প্রধানমন্ত্রী তাকে নিয়োগ দিয়েছেন। কাজ ছাড়া সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীকে কেন টিকিয়ে রাখছেন প্রধানমন্ত্রী?

শুরু করেছিলাম সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে দিয়ে। মুহিতের মৃত্যুতে দেশ যে প্রাজ্ঞজনকে হারিয়েছিল তার প্রভাব এখন স্পষ্ট। তিনি কী ছিলেন বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামালকে দিয়েই আমরা টের পাচ্ছি। চৌদ্দ বছর আগে দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও বিশ্বমন্দা পরিস্থিতি সত্ত্বেও আবুল মাল আবদুল মুহিত যেখানে বাংলাদেশকে পথ দেখিয়েছিলেন সেখানে বর্তমান টালমাটাল বিশ্বে চাপ সইতে না পারা অর্থমন্ত্রী মুস্তাফা কামাল দেশকে অনিশ্চয়তার পথেই নিয়ে যাচ্ছেন। এই মুহূর্তে তিনি হয়তো একমাত্র সমস্যা নন, কিন্তু অন্যতম সমস্যা হয়ে ওঠেছেন।

আ হ ম মুস্তাফা কামাল আপনি অসুস্থ। আপনার নিরবচ্ছিন্ন বিশ্রাম দরকার। শারীরিক অসুস্থতায় বহুবিধ চাপ আপনাকে আরও অসুস্থ করে দিচ্ছে হয়তো। শারীরিক অসুস্থতার কারণে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিলে নতুন কেউ অন্তত আপনার জায়গায় এসে কাজ করার চেষ্টা করতে পারত। দয়া করে দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিন। মন্ত্রিত্ব নয়, দেশই হোক অগ্রাধিকার!

কবির য়াহমদ: সাংবাদিক, কলাম লেখক।
ইমেইল: [email protected]

   

ভোটে ফেরাতে হবে মানুষকে



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা বাদে নির্বাচন ছিল মোটামুটি শান্তিপূর্ণ। নির্বাচনে জাল ভোট হয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের অনেকের প্রভাব ছিল সত্য, তবে মোটাদাগে বড়ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এ-ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সন্তুষ্টির কারণ রয়েছে। তবে বিব্রত হওয়ার প্রধান কারণ ভোটার উপস্থিতি। অনেক আলোচনার মধ্যেও এবারের নির্বাচনে আশানুরূপ ভোটার আসেননি।

ভোটগ্রহণের পরের দিন বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, প্রথম ধাপের নির্বাচনে ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ ভোট পড়েছে। ইলেকট্রেনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হয়েছে ২২ উপজেলায় এবং বাকি ১১৭ উপজেলায় হয়েছে ব্যালট পেপারে। ইভিএমে ভোটের হার ৩১ দশমিক ৩১ শতাংশ আর ব্যালটে ৩৭ দশমিক ২২ শতাংশ। সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে সোনাতলা, মীরসরাই ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলায়। সেসব জায়গায় ভোট পড়েছে মাত্র ১৭ শতাংশ। সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলায়। সেখানে ভোট পড়েছে ৭৩ দশমিক ১ শতাংশ।

সবচেয়ে বেশি ভোট পড়া এলাকা জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলায় মোট ভোটার ৯৫ হাজার ১৯১ জন। এর মধ্যে ৬৪ হাজার ৭৩০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ওখানে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দুলাল মিয়া সরদার ৩০ হাজার ৩৯০ ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ নেতা তাইফুল ইসলাম তালুকদার পান ২২ হাজার ৯০১ ভোট।

কম ভোট পড়া এলাকাগুলোর মধ্যে বগুড়া সোনাতলায় ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৬৪ হাজার ৩৩২ জন। এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ২৮ হাজার ২৭৮ জন। ওখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিনহাদুজ্জামান লিটন ২০ হাজার ৪৮৩ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান পদে পুনরায় বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. জাকির হোসেন পান ৭ হাজার ৩৪৫ ভোট। মিনহাদুজ্জামান লিটন সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নানের ছোট ভাই। আওয়ামী লীগের এই এমপির ভাইই কেবল নির্বাচনে বিজয়ী হননি, জেলার অপর এক উপজেলা সারিয়াকান্দিতে বিজয়ী হয়েছেন তার ছেলে সাখাওয়াত হোসেন সজল।

কম ভোট পড়া আরেক উপজেলা কুষ্টিয়া সদর। এখানে ৪ লাখ ২০ হাজার ৮৩৩ জন ভোটারের মধ্যে মাত্র ৭৩ হাজার ২৯৯ জন ভোটার ভোট দেন। কুষ্টিয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের চাচাতো ভাই আতাউর রহমান আতা ৬৭ হাজার ৪৮১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী আবু আহাদ আল মামুন পেয়েছেন ৩ হাজার ৫৬৪ ভোট।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেওয়া তথ্যের আরেক কম ভোট পড়া উপজেলা হচ্ছে চট্টগ্রামের মীরসরাই। ৩ লাখ ৭২ হাজার ২৫৭ জন ভোটারের ওই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে এনায়েত হোসেন নয়ন ৩৩ হাজার ৭০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ মোহাম্মদ আতাউর রহমান পান ২০ হাজার ৭৬৭ ভোট।

নির্বাচন কমিশনের ভাষ্যমতে, ভোট কম পড়ার কারণ হচ্ছে ধান কাটার মৌসুম, ঝড়বৃষ্টি, জনপ্রিয় প্রার্থীর অভাব, শহর এলাকায় ছুটি থাকায় মানুষের বাড়ি চলে যাওয়া, এবং বড় রাজনৈতিক দলের ভোটে অংশগ্রহণ না করা। এগুলোকে কারণ হিসেবে বললেও এটা যে স্রেফ অজুহাত দাঁড় করানো সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নির্বাচন কমিশন ভোট কম পড়ার যে ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছে সেটাই কি আসল কারণ মূলত? ধান কাটার মৌসুম, ঝড়বৃষ্টির ওপর মানুষের হাত নেই, কিন্তু বাকিগুলো নির্ভর করে মানুষের ওপরই। ইসি যেভাবে ঝড়বৃষ্টিকে কারণ হিসেবে দাঁড় করাতে চাইছে সেটা মোটেও মূল কারণের মধ্যে পড়ে না, কারণ নির্বাচনের দিন কোথাও উল্লেখের মতো ঝড়বৃষ্টি হয়নি। ধান কাটার মৌসুমেও মানুষ আগে ভোট দিয়েছে, নির্বাচনের দিন প্রতিবারই ছুটি থাকে, এবং একদিনের এই ছুটিতে সচরাচর মানুষ গ্রামে চলে যায় না, বিশেষত ঠিক পরের দিন যেখানে আর কোন ছুটি নাই।

ইসি বলতে চাইছে, জনপ্রিয় প্রার্থীর অভাব ছিল নির্বাচনে। এটা কীভাবে মেনে নেওয়া যায়? দলীয় প্রতীকে এবার নির্বাচন না হলেও ক্ষমতাসীন দলের নেতারাই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, অংশ নিয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যানরাও। যে তিন উপজেলায় সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে বলছে ইসি, সেই তিন উপজেলার অন্তত দুই উপজেলায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় দুই সংসদ সদস্যের নিকটাত্মীয় হয়েছেন বিজয়ী। তাহলে ইসি কি বলতে চায় নির্বাচন বর্জন করছে যে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নেতারাই মূলত কেন্দ্রে ভোটার টানার মতো প্রার্থী?

ইসিও বলছে, নির্বাচনে ভোটার স্বল্পতার অন্যতম কারণ বিএনপির অংশ না নেওয়া। এটা এমনই অপ্রিয় সত্য যা অস্বীকারের উপায় নাই। হ্যাঁ, নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপির সকল বা বেশিরভাগ নেতাই বিজয়ী হয়ে যেতেন এমন না, তবে তাদের নির্বাচন বর্জনের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় দলটির সমমনাদের কেউ অংশ নেয়নি। এমনকি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যে সকল রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল তাদের কেউও নির্বাচনে অংশ নেয়নি।

দলের মধ্যকার কোন্দলকে প্রকাশ্য রূপ না দিতে আওয়ামী লীগ না হয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেয়নি; কিন্তু কোথায় জাতীয় পার্টি, কোথায় ১৪-দলের শরিক দলগুলো, কোথায় সেই ‘কিংস পার্টি’ যারা বিগত সময়ে হঠাৎ গজিয়ে ওঠে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল? জাতীয় পার্টি জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধীদলের স্বীকৃতি পেলেও প্রান্তিক পর্যায়ে এই দলটির অস্তিত্ব যে আদতে নেই, এটা স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে তাদের অংশগ্রহণের ইতিহাস দেখলে সহজেই অনুমেয়। সরকারের অনুকম্পায় টিকে থাকা দলটি নেতাকর্মী সংকটে তা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপ সেটা আরও একবার প্রমাণ করল।

প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অনুমিতভাবে নির্বাচিতদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের। স্থানীয় সরকারের নির্বাচন অথচ নির্বাচনে নেই উল্লেখের মতো ভোটার উপস্থিতি। এবারের ভোট প্রদানের হার বিগত সংসদ নির্বাচনের ভোটের হারের চাইতেও কম। এর দ্বারা কি প্রমাণ হচ্ছে না আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী-প্রার্থীরা ভোটারদের আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হচ্ছেন? এই ব্যর্থতা কি তবে অনাস্থার বিমূর্ত প্রকাশ?

ধান কাটা মৌসুম, ঝড়বৃষ্টিসহ হালকা-ঢঙের যতই অজুহাত দাঁড় করাক না কেন নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত সত্যি কি ভোটের হাওয়া বইছিল নির্দিষ্ট ওই ১৩৯ উপজেলাজুড়ে? বাস্তবতা বলছে, কখনই মনে হয়নি ভোট এসেছে। ভোটের প্রতি মানুষের এই অনাগ্রহ কী কারণে ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে সেটা বের করা জরুরি।

যারা ভোট দিতে যায়নি, তাদের সকলেই যে বিএনপির নেতাকর্মী-সমর্থক, এমনটা ভাবার কারণ নাই। দেশে এত এত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী তারাও কি ভোট দিতে গেছে? ভোটার উপস্থিতির হার বলছে, তারাও নির্বাচনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে বসেছে। মানুষ ভোট দিতে যায়নি মূলত ‘ভোট দিয়ে কী হবে’ এমন একটা ধারণা কিংবা বিশ্বাস থেকেই।

ব্যক্তিগতভাবে অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি, এবং বেশিরভাগেরই অভিন্ন মতামত। এটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকার-রাখার হুমকিসম। মানুষ দিন দিন ভোটে অনাগ্রহী হয়ে পড়ার কারণে ‘অন্ধকারের আততায়ীরাও’ যদি কখনও ক্ষমতার কেন্দ্রের কাছাকাছি পৌঁছায়, তবে এখান থেকে মুক্তির পথ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়ত হতে থাকবে। নির্বাচন এককালে ছিল আমাদের অন্যতম এক উৎসব। ভোট ও প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলত সবখানে, কিন্তু এখন সে দিন হারিয়ে গেছে অনেকটাই।

ভোটবিমুখ মানুষকে ভোটে ফেরাতে হবে, দিতে হবে অভয়, গড়তে হবে সম-মর্যাদা ও সম-সুযোগের মাঠ। ভোট যে অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার; এই বোধের জাগরণ দরকার। দরকার কেন্দ্র আর প্রান্তের মধ্যে যোগাযোগ ও আস্থার পরিবেশ। আস্থার পরিবেশ না ফিরলে মানুষ ভোট ও গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বিমুখ হতেই থাকবে!

;

স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রশ্নে ছাত্র সংহতি: অন্যরা ঘুমিয়ে কেন?



আশরাফুল ইসলাম পরিকল্পনা সম্পাদক, বার্তা২৪কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

পশ্চিমা মদদ আর আরব বিশ্বের আশ্চর্যজনক নীরবতায় ফিলিস্তিনের হতভাগ্য নাগরিকদের ওপর যুগ যুগ ধরে চলা ইহুদীবাদী ইসরায়েলের অব্যাহত বর্বরতায় বিশ্ব নতুন করে জেগে উঠেছে। এই ‘বিশ্ব’ বলতে আপামর বিশ্ববাসী বললে ভুল হবে, মূখ্যত সাম্প্রতিক সময়ের নজিরবিহীন নারকীয়তায় যারপারনাই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে বিশ্বের ছাত্র-তরুণ আর মুক্তিকামী মানুষদের একটি অংশ, যারা তাদের বিবেক দ্বারা চালিত হচ্ছেন। কৌশল বা কোন সমীকরণের ধার ধারছেন না তারা।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, বিশ্বজুড়ে মানবতার মেকি সবক দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর ছাত্র-তরুণরাও তাদের শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তীব্র ক্ষোভে মজলুম ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশে পথে নেমে এসেছেন। খোদ যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী-তরুণদের থামাতে বলপ্রয়োগ আর ভীতি প্রদর্শনের কিছুই অবশিষ্ট রাখছে না দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরিণতিতে বহু ছাত্র-তরুণ এমনকি শিক্ষকরাও গ্রেপ্তারবরণ করছেন।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মার্কিন মুলুকে ফিলিস্তিন সংহতির এই প্রকাশ ঘটছে ইউরোপসহ বিশ্বের নানাপ্রান্তে। ঐতিহাসিকভাবে ফিলিস্তিনের জনগণের পাশে থাকা বাংলাদেশের ছাত্র-তরুণরাও গেল কয়েকদিন ধরে ‘স্বাধীন ফিলিস্তিন’ এর পক্ষে ও ইসরাইলি বর্বরতা বন্ধের দাবিতে পথে নেমেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকটি সমাবেশের ধারাবাহিকতায় আজ বৃহস্পতিবারও একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্মলাভ করা বাংলাদেশের কাছে পরাধীনতার গ্লানি অচেনা নয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিসহ রাজনৈতিক মেরুকরণের নানা বাস্তবতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের মানুষের মনে পীড়িত ফিলিস্তিনের মজলুম জনতার জন্য ভালোবাসা আর সংহতির কোন কমতি নেই। আমরা লক্ষ্য করছি, বর্তমান সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও ফিলিস্তিনে বর্বরতার বিরুদ্ধে জোরাল অবস্থান নিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতার জন্যই যে এই অবস্থান তা অনেকে বলবার চেষ্টা করলেও আমরা মনে করি, দলমত নির্বিশেষে নিপীড়িত ফিলিস্তিনের জন্য সকলের একাট্টা হওয়াই উচিত। অভ্যন্তরীণ রাজনীতির নিরিখে এই সংহতি প্রকাশে অবস্থান গ্রহণে তারতম্য থাকা উচিত নয়। সেই সঙ্গে সংহতি প্রকাশে কাজ করা উচিত নয় ধর্মীয় বিবেচনাও।

মুক্তিসংগ্রামের ঐতিহ্যিক পরম্পরাকে লালন করা একটি দেশ হিসাবে আমাদের বিশ্বের যেকোন প্রান্তের নির্যাতিত মানুষের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করাই কর্তব্য হওয়া উচিত। মুক্তিকামী মানুষের অনুভূতি যে অভিন্ন তা আমরা ১৯৪৭ সালে ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণার সময়ে ব্রিটিশ শেষ ভাইসরয় লর্ড মাউন্ট ব্যাটেনের কণ্ঠেও ধ্বনিত হতে শুনেছি। সেদিন তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাবে স্বীকার করেছিলেন, `Freedom Loving People Everywhere’.

কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি, অভ্যন্তরীণ রাজনীতির মেরুকরণে স্বাধীন ফিলিস্তিনের সংহতি প্রকাশে এখানকার রাজনৈতিক দলগুলির দ্বিধাবিভক্ত অবস্থান। সরকার বিরোধিতায় কোন কোন দলের পশ্চিমাশক্তির মদদপ্রাপ্তির আকাঙ্খা, ফিলিস্তিন নিয়ে তাদের আশ্চর্যরকম নীরবতার কারণ বলে অভিযোগ আছে। ধর্মীয় উন্মাদনার জিগির তুলে ইসলামী দলগুলো অনেক অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে তুলকালাম বাধিয়ে দিলেও ফিলিস্তিনের উপর চলমান বর্বরতায় তাদের উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি দৃশ্যমান নয়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের এ নিয়ে মূল্যায়ন এরকম যে, দলীয় ও গোষ্ঠীগত স্বার্থে এসকল দল ও সংগঠন একাট্টা হলেও নিপীড়িত মানুষের জন্য তাদের অবস্থান অস্পষ্ট।

অন্যদিকে আমরা গভীর বেদনার সঙ্গে লক্ষ্য করছি, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি ফিলিস্তিনের উপর যুগ যুগ ধরে চলা বর্বরতার বিরুদ্ধে বিস্ময়কর নীরবতা প্রদর্শনের ধারাবাহিকতায় চলমান ইসরাইলি ধ্বংসযজ্ঞেও তাদের কৌশলগত রক্ষণশীলতা অব্যাহত। মুখে মুসলিম সংহতি, পশ্চিমাবিষোদগার আর ইসরাইলের নিন্দা করে গেলেও তাদের পক্ষ থেকে জোরাল কোন পদক্ষেপ নেই। দেশগুলি তাদের নিজস্ব ব্যবসায়িক ও নিরাপত্তা স্ট্রাটেজিকেই সর্বাগ্রে প্রধান্য দিয়ে চলছেন।

প্রতিদিন শত শত নিরীহ ফিলিস্তিনি শিশু, নারী-বৃদ্ধ এমনকি চিকিৎসাধীনরা ইসরাইলি হামলার নিশানা হলেও আরববিশ্বের ঘুম ভাঙছে না। ইরানের সক্রিয় অবস্থানে যখন ইসরাইলসহ পশ্চিমারা নড়েচড়ে বসছেন সেই সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি যদি মিনমিনে নিন্দার বদলে অস্ত্রের ভাষায় কথা বলতো তবে এক সপ্তাহে দৃশ্যপট বদলে যেতে পারত। মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা বিশ্লেষকরা বলছেন, ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস যদি ইসরাইলি বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে না তুলতো তবে আরও বহুদূর বিস্তৃত হতো ইসরাইলি আস্ফালন ও ধ্বংসযজ্ঞ।

যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রসংবরণের যে আহ্বান তাকে যদি মেকিও ধরে নিই তারও যে একটা তাৎপর্য রয়েছে, বলা যায় স্পষ্টতই তা হামাসসহ অন্যান্য স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠনের জেগে উঠার ফলশ্রুতি। নানামূখি মেরুকরণে সুর মিলিয়ে কিংবা কৌশলী প্রতিবাদ-নিন্দায় যারা ‘ফিলিস্তিন সংহতি’তে সীমিত থাকছেন তাদের সেখান থেকে বেরিয়ে আসার বিকল্প নেই। বলাবাহুল্য, জোরদার বিশ্ব জনমতেরও একটি অবধারিত মূল্য রয়েছে। সব মতপার্থক্য ও ধর্মীয় পরিচয় ব্যতিরেকেই ফিলিস্তিনের জন্য নিরঙ্কুশ সংহতি সময়ের দাবি।

;

আলো ঝলমলে শহর ও বাইক চালকের অসহায় মুখ



আশরাফুল ইসলাম পরিকল্পনা সম্পাদক, বার্তা২৪.কম
অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

তখন সন্ধ্যা ছুঁই ছুই। কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউতে হেটে কর্মস্থলে আসছিলাম। বাংলামটর মোড়ে রাস্তা পেরিয়ে পা বাড়াতেই মোটরসাইকেলে বসা এক তরুণ ডাক দিলেন, ‘ভাই যাবেন?’

অপ্রস্তুত ও খানিকটা বিরক্ত হয়েই জবাব দিলাম, ‘আমি কি আপনাকে জিজ্ঞেস করেছি?’

ওই তরুণ নিরুত্তর থাকেন, মলিন মুখে অন্যদিকে তাকায়। খানিকটা এগিয়ে থমকে দাঁড়াই এই ভেবে যে, মনে হয় তাকে অনেকটা কষ্ট দিয়ে ফেলাম। ভাবলাম, এভাবে না বললেও হতো। অনুশোচনায় ফিরে এসে, ‘দুঃখিত’ বলে জানতে চাইলাম, ‘অনেকক্ষণ যাত্রী পাচ্ছেন না বোধহয়?’

বেশ কষ্ট নিয়েই বাইক চালক জানালেন প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন, নিয়ে যাওয়ার মতো কাউকেই পাচ্ছেন না। অনেক অপেক্ষার পর কেউ যেতে চাইলে তাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বাইকচালকদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলে। সেই সুযোগ নেন যাত্রীও। কম ভাড়ায় যেতে সম্মত হয়ে যান কেউ, তাই পথচারী কাউকে হেটে যেতে দেখলেও যেচে তাকে জিজ্ঞেস করেন বাইক চালকরা। ওই চালক জানালেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাশ করে চাকুরি জুটাতে পারেননি, তাই বাধ্য হয়ে বাইক চালাতে নেমেছেন। বললেন, ‘এভাবে কাউকে ডাকতে যে সংকোচ হয় না তা নয়, তবে ক্ষুধা আর বেঁচে থাকার চেয়ে কিছুই বড় নয়।’

কর্মস্থলে আসতে রোজ একইভাবে বাইকচালকদের এভাবে মলিনমুখে দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। বলতে গেলে গোটা ঢাকা শহরজুড়েই তাদের এভাবে বেকার বসে থাকা চোখে পড়ে। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)সহ বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, রাজধানী ঢাকা শহরে ১০ লাখেরও বেশি মোটরবাইক চলে। ধারণা করা যায়, তাদের একটি বড় অংশই বিভিন্ন রাইড শেয়ারিং অ্যাপে সংযুক্ত হয়ে পথে নেমেছেন ভাড়ায় যাত্রী পরিবহণের জন্য। রাইড শেয়ারিং অ্যাপে কানেক্ট হলেও অধিকাংশ বাইকচালক এখন পথেই আগ্রহী যাত্রীদের সঙ্গে দরকষাকষি করে কাঙ্খিত গন্তব্যে যেতে সম্মত হয়ে যান।

২০২২ সালের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৩২ লাখেরও বেশি নিবন্ধিত মোটর সাইকেল রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও মোটর সাইকেলে ভাড়ায় যাত্রী পরিবহণের প্রচলন অনেক আগেই শুরু হয়েছে। ২০১০ সালে সুন্দরবনে বেড়াতে গিয়ে মোংলায় এক বাইকে দু’জন-তিনজন নিয়েও চলতে দেখেছি। পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দেশের শিক্ষিত তরুণদের একটি বৃহৎ অংশ কাঙ্খিত চাকুরি না পেয়ে কিংবা চাকুরির আবেদন করে অপেক্ষায় থেকে থেকে জীবিকার প্রয়োজনে এই মোটর সাইকেলে যাত্রী পরিবহণে নেমেছেন। কিন্তু এই হুজুগে জাতির একজন কিছু করতে দেখলে বা কোন একটা সম্ভাবনার খবর পেলে সবাই তাতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। চিরাচরিত এই রেওয়াজে প্রয়োজনেরও অনেক বেশি বাইক চালক যাত্রী পরিবহণে নেমেছেন। তাই জীবিকার আশায় পথে নামলেও যাত্রীর দেখা পাচ্ছেন না, কাঙ্খিত আয় করতেও ব্যর্থ হচ্ছেন। তরুণ জনশক্তির একটি বড় অংশ এভাবে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে অনেক সময় পথ দুর্ঘটনায় পড়ছেন। কখনো কখনো জড়িয়ে পড়ছেন নানা সামাজিক অপরাধেও।

দ্রব্যমূল্যের চরম উর্ধ্বগতিতে জনজীবনে যে নাভিশ্বাস তা নীতিনির্ধারকরা অনেকেই আমলে নিতে চান না। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তাদের অনেককেই বলতে শোনা যায়, ‘বাজারে তো কোন জিনিসের সংকট নেই’ কিংবা ‘মানুষের ক্রয় ক্ষমতা এখন বেড়েছে’ ইত্যাদি। কিন্তু সমাজে যেই মানুষেরা শিক্ষা অর্জন করে এক ধরণের আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন হয়েছেন, যাঁরা চরম দারিদ্রেও নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশে কুণ্ঠিত-সেই শ্রেণীর জন্য বর্তমানে টিকে থাকা কতটা কঠিন তা দীর্ঘসময় যাত্রীর জন্য দাঁড়িয়ে থাকা সেই বাইকচালকের মুখাবয়ব দেখে সহজেই বুঝে নেওয়া যায়। বর্তমানে স্যোশাল মিডিয়ার কল্যাণে সমাজের ভেতরকার ক্ষোভ-উত্তাপ আন্দাজ করা যায় কঠিন নয়। আমরা লক্ষ্য করি, উঠতি ধণাঢ্য হয়ে একটি শ্রেণির বেপোরোয়া চাকচিক্যময় জীবনযাপন অন্যদিকে চরম হতাশায় দিনশেষে ক্ষুধার অন্ন জোগাড় করতে না পারার দুঃখ কিংবা মাস শেষে মেসের সামান্য কয়টা টাকা দিতে না পারায় ম্যানেজারের গঞ্জনা।

বাইকে যাত্রী পরিবহণ করে জীবন চালাতে না পারা এমন তরুণদের মতো বিভিন্ন পেশার আরও বহু তরুণদের আমরা দেখি যাদের অবস্থার আরও করুণ। ক’দিন আগে স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ঘটনা নিয়ে পরবর্তীতে মূলধারার সংবাদপত্রেও খবর হতে দেখেছি-কাওরানবাজারে বড় মাছ কিনে কাটিয়ে নেওয়ার পর মাছের অন্ত্রনালী, পাখনাসহ অন্যান্য ফেলে দেওয়া যেসব অংশ থাকে তাও ভাগা দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। মুখ ঢেকে তাও কিনে নিয়ে যাচ্ছেন এক শ্রেণির মানুষ। প্রকাশিত খবরের তথ্য অনুযায়ী, তারা ভিখারি কিংবা ছিন্নমূল কেউ নন। যারা মাছের ওইসব ফেলে দেওয়া অংশের ভাগ কিনে নিচ্ছেন তারা অবস্থার পাকে পড়ে জীবনসংকটে থাকা শিক্ষিত বেকার মানুষ। ৭-৮শ’ টাকা কেজিতে মাছ কেনার সমার্থ্য তাদের নেই।

বর্তমানে দেশের অকাঠামোগত ও কিছু মানুষের বিপুল প্রতিপত্তি দেখে তথাকথিত ‘উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা’র সরলীকরণ করা যাবে না। এই উন্নয়ন যে সামগ্রিকভাবে আর্থ-সমাজিক অসমতাকে দূর করতে পারেনি তা আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবেই বলতে পারি। বাংলামটর মোড়ে দেড় ঘন্টা ধরে যাত্রীর জন্য দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষিত ওই তরুণটির কাছে এই আলোঝলমলে এই শহর যেমন একরাশ হতাশা ছাড়া কিছুই নয় তেমনি প্রত্যন্ত কোন গ্রামে ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া কৃষকের কাছেও ধূসর জীবনের সবই নিরানন্দ।

;

প্রতিষ্ঠার ১০ বছর সময়কাল দেশীয় বিমানসংস্থার জন্য ‘অশনি’ না ‘শুভ’ সংকেত!



মো. কামরুল ইসলাম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

দশ বছর খুব কি বেশী সময় এভিয়েশনের কিংবা এয়ারলাইন্সের ইতিহাস বলার জন্য? কিন্তু বাংলাদেশ এভিয়েশনের জন্য ১০ বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা মাইল ফলক হয়ে আছে। এই সময়টা সাফল্যের সঙ্গে অতিক্রম করতে পেরেছে কয়টি এয়ারলাইন্স? যার ফলাফল খুঁজতেই বাংলাদেশ এভিয়েশনের ছোট্ট অধ্যায়ের পাতা উল্টালেই খুব বেশি সুখকর স্মৃতি খুঁজে পাওয়া যাবে না। স্মৃতির পাতায় মোড়ানো বাংলাদেশ এভিয়েশনের ইতিহাসে দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলোর ১০ বছর সময়কাল কি ‘অশনি না শুভ সংকেত’ তা বোঝার চেষ্টা করেছি।

বাংলাদেশ এভিয়েশনে উত্থান আর পতনের মধ্য দিয়েই অগ্রসর হওয়ার গল্প লুকিয়ে আছে। এক ঘণ্টার আন্তর্জাতিক ফ্লাইট করে এসে ২ থেকে ৩ ঘণ্টার অপেক্ষা লাগেজের জন্য, নয়টার প্লেন কয়টায় যাবে যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা, এয়ারক্রাফট এসি নাকি নন-এসি, ফ্লাইট আদৌ যাবে তো ইত্যাদি ইত্যাদি, যা হরহামেশা শুনা যেত যাত্রীদের কাছ থেকে। সেই সব বাক্যগুলো আজ ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। আর সেই বাক্যগুলোকে ইতিহাসের পাতায় স্থান দিতে সহায়তা করেছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।

আজ বাংলাদেশ এভিয়েশনের প্রায় ৫২ বছরের গল্প, যেখানে সুখকর গল্পের স্থান খুবই সামান্য। প্রাইভেট এয়ারলাইন্সের ইতিহাস তো আরো নাজুক। জিএমজি, ইউনাইটেড, রিজেন্ট, বেস্ট এয়ারের মতো প্রায় ৮ থেকে ৯টি এয়ারলাইন্স বন্ধ হওয়ার মিছিলে যুক্ত হয়েছে। বর্তমানে মাত্র তিনটি বেসরকারি বিমানসংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার ও এয়ারঅ্যাস্ট্রা জাতীয় বিমানসংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর সাথে বাংলাদেশে আকাশ পরিবহন ব্যবসায় জড়িয়ে আছে।

১০ বছর সময়কাল বাংলাদেশের বেসরকারি বিমানসংস্থার জন্য অনেকটা চ্যালেঞ্জিং বছর। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ১০ বছর অতিক্রমকালীন সময়ে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। জিএমজি এয়ারলাইন্স ১০ বছর পর ব্যবসায় নিম্নমূখী প্রবণতা দেখা গেছে যা ১৪ বছরের সময় একেবারেই বন্ধ করে দিতে হয়েছে। বর্তমানে নভোএয়ার ১১ বছরের অধিক সময়কাল অতিক্রম করছে।

পরিকল্পনা আর বাস্তবায়নকে সাথে নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট শুরু করার পর থেকেই ব্যবসা থেকে সেবাকেই প্রাধান্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে ইউএস-বাংলা। ইতিমধ্যে যাত্রীদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ১৭ জুলাই ২০১৪ সালে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে ১০ বছর সময় অতিক্রম করছে। যাত্রা শুরুর পর থেকে দেশের মানুষকে আকাশ পথে সেবা দেয়ার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলো। সেই প্রতিজ্ঞাকে বাস্তবে রূপ দিতেই ইউএস-বাংলা প্রতিনিয়ত কাজ করছে। লক্ষ্য একটাই সেবার মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকরা বিশ্বের যেসকল গন্তব্যে অবস্থান করছে, দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখছে, সেই সকল রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সেবা দেয়ার মানসে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স প্রতিমূহুর্তে বিমানবহরে নতুন নতুন উড়োজাহাজ যোগ করছে, যোগ করছে দেশের নাগরিকদের কাছে আকর্ষণীয় সকল গন্তব্য।

বেশ কিছু রুট পরিচালনার জন্য ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সকে বাংলাদেশ এভিয়েশন সব সময়ই মনে রাখবে। বিশেষ করে ভারতের চেন্নাই, চীনের গুয়াংজু, মালদ্বীপের রাজধানী মালে রুটগুলো অন্যতম। যেখানে জাতীয় বিমানসংস্থাও পরিকল্পনা সাজাতে পারেনি, সেখানে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স বাস্তব রূপ দিতে সক্ষম হয়েছে। ইউএস-বাংলাকে অনুসরণ করে অন্য এয়ারলাইন্সগুলো সেইসব রুটে ফ্লাইট শুরু করেছে। কিন্তু মালেতে দেশীয় একমাত্র ইউএস-বাংলাই ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এছাড়া কলকাতা, দুবাই, শারজাহ, আবুধাবি, মাস্কাট, দোহা, সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, ব্যাংকক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১৫ মিলিয়ন প্রবাসী বাংলাদেশিরা অবস্থান করছে, যার মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশ প্রবাসী তথা রেমিট্যান্স যোদ্ধারা বাস করছে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, ওমান, কাতার, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপ। উল্লেখিত প্রতিটি দেশেই ফ্লাইট পরিচালনা করছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। সম্প্রতি সৌদি আরবের জেদ্দায় ফ্লাইট পরিচালনা করতে যাচ্ছে।

২টি ড্যাশ ৮-কিউ৪০০ নিয়ে যাত্রা শুরু করা ইউএস-বাংলার বহরে বর্তমানে রয়েছে ৪৩৬ আসন বিশিষ্ট দুইটি এয়ারবাস ৩৩০-৩০০, নয়টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০, দশটি ব্র্যান্ডনিউ এটিআর ৭২-৬০০ ও তিনটি ড্যাশ৮-কিউ৪০০ এয়ারক্রাফট। এখানে উল্লেখ্য সংখ্যার বিচারে দেশের সরববৃহৎ এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ রুটে সর্বপ্রথম ব্র্যান্ডনিউ এয়ারক্রাফট দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করেছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।

দেশের এভিয়েশনের অগ্রযাত্রায়, বেকার সমস্যা দূরীকরণে, অর্থনীতির চালিকা শক্তিতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখছে।

প্রতিষ্ঠার ১০ বছর সময়কাল যেন বাংলাদেশ এভিয়েশনে বেসরকারি বিমানসংস্থাগুলো নিকট অশনি সংকেত না হয়ে শুভ সংকেত রূপে স্থায়ী হয়, তা সকলের কাম্য।

লেখক
মো. কামরুল ইসলাম
মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স

;