বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি মুছার দায়ে দুই নেতা বহিষ্কার, ছাত্র ইউনিয়নের বিক্ষোভ

  • জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

বঙ্গবন্ধুর গ্রাফিতি মুছে ধর্ষণ বিরোধী গ্রাফিতি অঙ্কনের ঘটনায় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) সংসদের দুই নেতাকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে মশাল মিছিল করেছে সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শহীদ মিনার চত্বর থেকে মশাল মিছিল শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে ট্রান্সপোর্ট চত্ত্বর হয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সম্মুখে গিয়ে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নেয়।

বিজ্ঞাপন

এ সময় বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সংগঠক সোমা ডুমরি বলেন, ‘এ বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্ট রুম, র‍্যাগ কালচার বন্ধ হয় না; বিচার হয় না৷ তিন বছর আগের ক্ষয়ে যাওয়া প্রতিকৃতির জায়গায় না হয় একটা গ্রাফিতি এঁকেছে। সেখানে এত দ্রুত তদন্ত কমিটি করে এত দ্রুত বহিষ্কার দিয়ে দিল! আমরা এ ঘটনায় ধিক্কার জানাই। তাদের বহিষ্কার বাতিল না করা পর্যন্ত আন্দোলনের দাবানল দাও দাও করে জ্বলবে৷’

ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সাদিয়া মুন বলেন, প্রশাসন ভেবেছে তাদের বহিষ্কার দিয়ে দিলে সকল যৌক্তিক আন্দোলন রুখে দেয়া সম্ভব হবে। তাহলে গাছ কাটা যাবে, দালান তোলা যাবে, মাস্টারপ্ল্যান ছাড়াই; কোনো দায়বদ্ধতা ছাড়াই কাজ করা সহজ হবে। যারা ন্যায়ের পক্ষে কথা বলছে তাদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী প্রাপ্তি তাপসী বলেন, ক্যাম্পাসে যেখানে ধর্ষণ-সন্ত্রাস-মাদকের মত অভিযোগ আছে, সেখানে স্বৈরাচার থেকে আজাদি গ্রাফিতি আঁকার কারণে বহিষ্কার হয়ে যায়! একুশের চেতনা আমাদের বাকস্বাধীনতার কথা বলে৷ ধর্ষণের বিরুদ্ধে কথা বলায় সেখানে দুইজন ছাত্রের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা করতে চায়। প্রশাসন কতটা অথর্ব তা এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়।

ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সহ-সভাপতি আশফার রহমান নবীন বলেন, এ অথর্ব প্রশাসন নিয়মবহির্ভুত ও অনায্যভাবে দু'জন বৈধ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছে। এর চেয়ে অবিচার-জুলুম কমই ঘটেছে। সংবিধানের ৪(ক) ধারায় যে প্রতিকৃতির কথা বলা হয়েছে তাতে প্রতিষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। এখানে ক্ষয়ে যাওয়া গ্রাফিতি বা দেয়ালে অঙ্কিত গ্রাফিতির ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি।

একপর্যায়ে ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের অনড় অবস্থানে রাত সাড়ে ৮ টায় উপাচার্য অসুস্থ্য থাকায় সেখানে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম আসেন। এসময় উপ-উপাচার্যকে ছাত্র ইউনিয়নের নেতাদের মামলার বিষয়টি মানবিক বিবেচনার অনুরোধ জানান শিক্ষার্থীরা।

এসময় উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ বলেন, এটা আসলে উপাচার্যের একক সিদ্ধান্ত নয়৷ তদন্ত কমিটির সুপারিশের উপর ভিত্তি করে সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে অনুসারে রেজিস্ট্রার অফিস তা বাস্তবায়ন করবে৷ এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয় আইনে মামলা করবে কিনা সেটা তাদের বিষয়। এসময় পরদিন রেজিস্ট্রার অফিসে এসে কথা বলার অনুরোধ করেন তিনি।

উপ-উপাচার্যের কথায় আশ্বস্থ হতে না পেরে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের সাথে কথা বলার প্রত্যয় নিয়ে ভিসি ভবনের সামনে অনড় অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা। একপর্যায়ে রাত সাড়ে ৯টায় উপাচার্যের সাথে দেখা করতে আন্দোলনকারীদের কয়েকজন ভিতরে যায়।

এসময় উপাচার্য তাদের আশ্বস্ত করে সকালে উপাচার্য অফিসে দেখা করে তাদের লিখিত দাবিগুলো পেশ করতে বলেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মামলা করার ক্ষেত্রে তাদের দাবি পুনর্বিবেচনায় রাখাবেন বলে আশ্বাস দিলে তারা ফিরে যায়।