বাস ও ইজিবাইকের সংঘর্ষে রুয়েট শিক্ষার্থীসহ আহত ২



রাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা ২৪.কম

ছবি: বার্তা ২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মেইন গেইট ও কাজলার গেটের মাঝামাঝি রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে বাস ও ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ইজিবাইকের চালক ও রুয়েটের এক ছাত্র (যাত্রী) গুরুতর আহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাত আটটার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহতরা হলেন- নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকার মামুন হোসেনের ছেলে ও ইজিবাইকের চালক মুন্না মিয়া (৩১) এবং নওগাঁ জেলার সাপাহার থানার কুচিন্দা এলাকার আলম হোসেনের ছেলে সোহেল রানা (২২)। সোহেল ৮ নাম্বার এবং মুন্না ৩১ নাম্বার ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। এরমধ্যে সোহেল রানা রুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রাবির কাজলা গেট ও মেইন গেটের মাঝামাঝি জায়গায় রাজশাহী থেকে ঈশ্বরদীগামী মামুন পরিবহন বাসের (রাজ মেট্রো জ- ১১-০০৯৪) সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। রাস্তা সংস্কারের কাজ চলার কারণে একই লেন দিয়ে যাচ্ছিল গাড়ি দুটি। দূর্ঘটনায় ইজিবাইকের চালক ও এক যাত্রী গুরুতর আহত হয়েছেন।

আশপাশের লোকজনের সহযোগিতায় আহতদেরকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এঘটনায় ইজিবাইক দুমড়ে মুচড়ে গেছে এবং বাসের ডান পাশে দুমড়ে যায়। উপস্থিত জনগণ বাসের সামনের গ্লাস ও সাইডের জানালার কিছু গ্লাস ইট মেরে ভেঙে দেয়। বাসের কোনো যাত্রী আহত হননি। বাসের ড্রাইভার পালিয়ে যায়।

এবিষয়ে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. মোবারক পারভেজ বলেন, ঘটনাটি শুনে আমরা তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে যায়। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাস ও ইজিবাইকটি আমাদের হেফাজতে রয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রক্ষীতে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

   

তপ্ত ক্যাম্পাসে কৃষ্ণচূড়া, সোনালু আর জারুলের মুগ্ধতা



আছিয়া খাতুন, রাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম
কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে

কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে

  • Font increase
  • Font Decrease

গ্রীষ্মের তাপদাহে তপ্ত প্রকৃতি। প্রখর রোদে প্রকৃতি যখন পুড়ছে, সেই সময়ে আবির রাঙা রঙে সৌরভ ছড়াচ্ছে রক্তিম কৃষ্ণচূড়া। কেড়ে নিচ্ছে সূর্যের সবটুকু উত্তাপ।

কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে’ গানটির মতো যেন ভুবন ভুলাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরতে পরতে ফুটেছে এই টুকটুকে লাল কৃষ্ণচূড়া।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি খ্যাত এই ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে আরও কয়েকগুন। ঈদের ছুটি শেষে ক্যাম্পাসে আসা শিক্ষার্থীদের প্রকৃতির অপরূপ রূপে রাঙিয়ে দিতেই যেন পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে লাল কৃষ্ণচূড়ার পসরা সেজেছে। নয়নাভিরাম এসব দৃশ্য দেখে দাবদাহের মাঝে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনে এনে দিচ্ছে শিল্পের দ্যোতানা। এ যেন সিঁদূর লাল রঙে শিল্পীর রঙ-তুলিতে রাঙানো ক্যানভাস।

বছর জুড়ে সেজে থাকা মতিহারের ৭৫০ একরের এই সবুজ চত্ত্বরে আগুনঝড়া কৃষ্ণচূড়ায় এক নতুন নান্দনিকতা যোগ করেছে। শুধু কি কৃষ্ণচূড়া! এর সঙ্গে আরও ডানা মেলেছে ‘বাংলার চেরি’ খ্যাত বেগুনি জারুল আর ঝরনার ন্যায় হলদে সোনালি আভা ছড়ানো সোনালু। তপ্ত গ্রীষ্মের প্রখর তাপে সকল রুক্ষতা ছাপিয়ে কৃষ্ণচূড়া, জারুল আর সোনালুতে পুরো ক্যাম্পাস সেজেছে বর্ণিল সাজে। চোখ ধাঁধানো এসব ফুলের বর্ণিল আভায় প্রত্যেকের নয়ন জুড়ায়। এ যেন হলুদ, লাল আর বেগুনি রঙে রাঙানো এক স্বর্গরাজ্য।

সোনালুর দোল লেগে প্রকৃতির প্রাণ দোলে

ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেটের ডান পাশের দুটি গাছে, ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের পেছনে বৃহদাকার প্রায় ১৫টি গাছে, পূর্বপাড়া মসজিদের সামনে, বধ্যভূমি এলাকার পুকুর পাড়ে, নির্মাণাধীন শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান হলের পশ্চিম পাশে, স্টেশন বাজারে, পরিবহণ মার্কেটে, সত্যেন্দ্রনাথ বসু একাডেমিক ভবনের প্রবেশ পথে, শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ সিনেট ভবনের সামনে, উপাচার্য বাসভবনের ভেতরে এবং প্যারিস রোড সংলগ্ন বাইরের প্রাচীরের ধার ঘেষে প্রায় ১১টি গাছে, মন্নুজান হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল, বেগম খালেদা জিয়া হল, তাপসী রাবেয়া হল এবং রোকেয়া হলের সামনেসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ফুটে থাকা লাল কৃষ্ণচূড়া তার আশপাশের এলাকাকে রাঙিয়ে তুলেছে।

কৃষ্ণচূড়া ছাড়াও ক্যাম্পাসের জারুল স্ট্রিট খ্যাত প্যারিস রোড থেকে বেগম খালেদা জিয়া হল হয়ে নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা হলের রাস্তার দুই ধারে এবং চারুকলা থেকে ফ্লাইওভার পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে শোভা পাচ্ছে বেগুনি জারুলের ঝুমকো। এছাড়া ক্যাম্পাসের জুবেরী মাঠের পশ্চিম পাশে ফুটেছে কিছু সোনালু। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী বা দর্শনার্থীদের যেন হৃদয় কেড়ে নিচ্ছে নয়ন জুড়ানো এসব কৃষ্ণচূড়া, জারুল ও সোনালু ফুল। সকালে এসকল গাছের নিচে ঝরে পড়া রক্ত লাল, বেগুনি এবং হলুদ পাপড়ি যেন বর্ণিল পুষ্পশয্যা। এসব গাছের নিচে শিক্ষার্থীরা আড্ডা আর খুনসুটিতেও মেতে উঠার পাশাপাশি বাহারি পোশাকে ফ্রেমবন্দিও করছেন নিজেদেরকে।

কৃষ্ণচূড়ার সাথে নিজেদেরও ফ্রেমবন্দি করছেন শিক্ষার্থীরা

কৃষ্ণচূড়া, জারুল ও সোনালুর এই বর্ণিল সময়টা উপভোগ করছেন জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী পরমা পারমিতা বলেন, ‘বর্তমানে ক্যাম্পাসের বেশিভাগ জায়গায় সবুজের মধ্যে তপ্ত রোদে আগুনের মতো জ্বলছে লাল কৃষ্ণচূড়া। অসম্ভব সুন্দর বেগুনি রঙের থোকা থোকা জারুল ফুলও এসময় ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় দেখি সবুজ পাতা ছাপিয়ে সোনালি রঙের ফুলে সেজেছে সোনালু গাছ। বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে কৃষ্ণচূড়া আর জারুল যে রং ছড়িয়েছে তা চোখে না দেখলে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে সুন্দরভাবে উপভোগ করছি এই সময়টা।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী সুমাইয়া বিনতে নূর বলেন, গ্রীষ্মের তপ্ত রোদে রক্তের মতো টকটকে লাল কৃষ্ণচূড়া আর জারুল ফুল দিয়ে আচ্ছাদিত হয়েছে পুরো ক্যাম্পাস। রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে গেলে মনে হয় এক টুকরো স্বর্গ। এসব দৃশ্য স্বচক্ষে দেখলে, কেউ মুগ্ধ না হয়ে পারবে না। সকালের দিকে মেয়েদের হলের রাস্তাগুলোতে পড়ে থাকা কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ি দেখে যেন পুষ্পশয্যা মনে হয়। এককথায়, কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম আভা আর জারুল ফুলের বেগুনি পাপড়ির নমনীয়তা ক্যাম্পাসকে রাঙিয়ে তুলছে।

উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া। এর আদিনিবাস মাদাগাস্কার হলেও ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, পাকিস্তানসহ অনেকে দেশেই এর বিস্তৃতি। কৃষ্ণচূড়া লাল, হলুদ ও সাদা রঙেরও হয়ে থাকে। তবে আমাদের দেশে লাল ও হলুদ রঙের ফুল দেখা গেলেও সাদা রঙের কৃষ্ণচূড়া দেখা যায় না। জারুল ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম লেজারস্ট্রোমিয়া স্পেসিওসা। জারুল ভারতীয় উপমহাদেশের নিজস্ব বৃক্ষ। বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও চীন, মালয়েশিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে জারুলের সন্ধান মেলে এবং সোনালু ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম ক্যাসিয়া ফিস্টুলা; যা ভারতীয় উপমহাদেশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাওয়া যায়। এটি অমলতাস নামেও পরিচিত।

গাছজুড়ে শুধু ফুল আর ফুল, এ যেন প্রকৃতির অলংকার

বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মাহবুবুর রহমান বলেন, কৃষ্ণচূড়া, সোনালু, ক্যাসিয়া প্রজাতির বেশকিছু ফুলসহ জারুল এবং রুদ্রপলাশ এ সময়ে ফোটে। গ্রীষ্মকালে এসকল ফুল প্রকৃতিকে শোভামন্ডিত করে। এগুলো উদ্ভিদগুলো মূলত শোভাবর্ধনকারী বা অর্নামেন্টাল প্ল্যান্ট। এসব উদ্ভিদের কাঠের তেমন গুরুত্ব নেই। যেহেতু ফুল সকলেরই ভালো লাগে। ফুল দেখলে সকলেরই মন ভালো হয়ে যায়। তাই এই উদ্ভিদের ফুলগুলো গ্রীষ্মকালে সকলের মন প্রফুল্ল রাখে।

শিক্ষার্থী হিসেবে একটাই চাওয়া, বসন্তের শেষে গ্রীষ্মের আগমনী বার্তা নিয়ে বার বার ক্যাম্পাসের প্রকৃতিকে নতুন করে সাজিয়ে তুলুক রক্তিম কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুল ও সোনালী আভা ছড়ানো সোনালু। প্রখর রোদের তপ্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছড়াক নান্দনিক সৌন্দর্য। বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে কঠিন সময়েও কৃষ্ণচূড়া, জারুল আর সোনালুর মতো সুভাস ছড়াক এখানের শিক্ষার্থীরাও।

;

ব্লাড ক্যান্সারে ঝরে গেল ইবির মেধাবী শিক্ষার্থী ‘ফুল’



ইবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। ওই শিক্ষার্থীর নাম সামিয়া আক্তার ফুল। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের প্রথম স্থান অধিকারী শিক্ষার্থী।

মঙ্গলবার (১৪ মে) সকালে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার বাসা পাবনা জেলার সদর উপজেলায়। ৩ ভাইবোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। গণিত বিভাগের সভাপতি তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সহপাঠী সূত্রে জানা যায়, ভর্তি পরীক্ষার সময় থেকেই সামিয়া অসুস্থ ছিল। তবে তখন ক্যান্সার ধরা না পড়লেও এবছর রোজার মাস থেকে সে আবারও অসুস্থ হয়ে যায়। চিকিৎসাকালীন সময়ে তার কাশির সাথে ব্লাড যাচ্ছিলো, রক্তের ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্ত জমাট বাধছিল। সর্বশেষে বমির পাশাপাশি সে শক্ত কোনো খাবারও খেতে পারছিলো না। এছাড়াও সে এনিমিয়াতেও আক্রান্ত ছিল।

সামিয়ার বান্ধুবি জেরিন আক্তার মিম বলেন, সামিয়া আমার ছোটবেলার বান্ধবী। ফুলের মতোই হাসিখুশি মেয়ে হওয়ায় ওর ফুল নামটা সবার পছন্দের ছিল। আমাদের স্কুল, কলেজ একসাথে ছিল। ইবিতেও আমরা একসাথেই এসেছিলাম। আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছিনা যে ও আর নেই। সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন।

সামিয়ার মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিভাগের পক্ষ থেকে শোক জানানো হয়েছে। বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. সজীব আলী বলেন, সে বিভাগের প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিল। রোজার আগে সে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে যাবে বলে জানায়। কিন্তু আজ সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছে। তার মতো এমন এক মেধাবী শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে আমরা গভীর শোকাহত। তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

;

মধ্যরাতে রাবিতে ফের অস্ত্রের মহড়া, হলে পুলিশের তল্লাশি



রাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের দুপক্ষের মধ্যে ফের উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। নেতাকর্মীরা রামদা, রড ও দেশীয় অস্ত্র হাতে ফের মহড়া দিয়েছে।সোমবার (১৩ মে) মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ সোহরাওয়ার্দী ও মাদার বখস হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, 'উদ্ভুত এই সমস্যা একটি সংগঠনের। এই সংগঠন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যা নিরসনের চেষ্টা চলছে। তবে তদন্ত কমিটি গঠন ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার বিষয়টি হল প্রশাসন দেখছে।'

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৩ মে মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ সোহরাওয়ার্দী হলে নেতাকর্মী নিয়ে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মোর্শেদ প্রবেশ করেন। পথে হল ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত নেতা আতিকুর রহমানের সঙ্গে দেখা হয়। আতিকুরের অভিযোগ, 'নিয়াজ মোর্শেদ বহিরাগতদের নিয়ে হলে প্রবেশ করেন এবং আমাকে হত্যার হুমকি দেন। হলে হাত-পা ভেঙে ফেলতে চান। তখন আমি হলের বাহিরে আসি।'

এ ঘটনায় রাত ২টার দিকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারীরা লাঠিসোটা, রড, রামদা সহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হলের সামনে অবস্থান নিয়ে শেষ রাত পর্যন্ত মহড়া দেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অতিরিক্ত পুলিশ এনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং হলে পুলিশসহ তল্লাশি চালিয়ে অনাবাসিক ২০ শিক্ষার্থীকে নামিয়ে দেয় হল কর্তৃপক্ষ।

হুমকির অভিযোগ অস্বীকার করে নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, 'পূর্বপরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এই ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছেন। তারা পরবর্তী সম্ভাব্য পদপ্রার্থীদের বিতাড়িত করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চান। এজন্য তারা হলের চলমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের পরিবর্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার পদ সৃষ্টি করে রাজনৈতিকভাবে অন্যদের হেয় করছেন। আমাদের নেতাকর্মীদের ডেকে ডেকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে অভিযোগ তুললে উল্টো বিভিন্ন ট্যাগ দেয়া হচ্ছে। পরিকল্পিত না হলে এমন হতো না।'

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, 'কাউকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করা হচ্ছে না। বরং তিনিই (নিয়াজ) দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চেষ্টা করছে।'

অস্ত্রের মহড়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বহিরাগত নিয়ে হলে কোনো বিশৃঙ্খলা যাতে না করতে পারে সেজন্য আমরা অবস্থান নিয়েছি। সার্বিক বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে অবিহিত করা হয়েছে। তাদের নির্দেশনা অনুসারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।'

হল প্রাধ্যক্ষ ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, 'পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশসহ হলকক্ষগুলোতে অভিযান চালিয়ে অনাবাসিক ২০ শিক্ষার্থীকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িতদের বিষয়ে বিকেলে হল প্রশাসনের সভা হবে। এতে তদন্ত কমিটি গঠন সহ অন্যান্য সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।'

এর আগে, গত ১১ মে শহিদ সোহরাওয়ার্দী হলে অতিথি কক্ষে বসাকে কেন্দ্র করে রাতভর সংঘর্ষে জড়ায় শাখা ছাত্রলীগের দু'পক্ষ। এতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ সহ ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে সাত ছাত্রলীগকর্মী আহত হয়। এ ঘটনায় ১৩ মে সভা ডেকে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের কথা বলেই ক্ষান্ত থাকেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

;

দূষণরোধ করে পরিবেশকে স্থিতিশীল করে ‘বায়োচার’



শেকৃবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ছে বর্জ্যের পরিমাণ। দৃশ্যমান হচ্ছে বর্জ্যের অব্যবস্থাপনা। বাংলাদেশসহ বিশ্বের এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকভাবে ঢেলে সাজানো গেলে পরিবেশ দূষণ ও বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত সংকট অনেকটা দূর হবে বলে মনে করেন গবেষকরা। সেক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে ‘বায়োচার’। ‘বায়োচার’ হলো বিশেষ ধরনের কয়লা যার মধ্যে ৩৫ থেকে ৫৫ শতাংশ কার্বন থাকে।

বর্জ্য অব্যবস্থাপনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত পরিবেশ দূষণ ও বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি। সম্প্রতি হাইইনডেক্স জার্নালে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ‘বায়োচার এবং টেকসই কৃষি ক্ষেত্রের ব্যবহার’ বিষয়ক রিভিউ আর্টিকেল প্রকাশ করেছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরত মেহেদী আমীন। তার গবেষক দলে যুক্ত ছিলেন সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, সিঙ্গাপুর ও চীনের গবেষকরা।

মেহেদী আমীন বায়োচার সম্পর্কে বলেন, জৈব বর্জ্য বা সবুজ জাতীয় বর্জ্যকে স্বল্প অক্সিজেনযুক্ত নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে নির্দিষ্ট উচ্চ তাপমাত্রা প্রদান করলে চারকোল অনুরূপ উচ্চ সরল কার্বন বিশিষ্ট বস্তু পাওয়া যায় যা ‘বায়োচার’ নামে পরিচিত। জৈব বর্জ্য পদার্থ অর্থাৎ আমাদের চারপাশে যত্রতত্র পড়ে থাকা সবজির খোসা অথবা শস্য জাতীয় গাছের অবশিষ্টাংশ থেকে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসৃত হয়। যার ফলে প্রতিনিয়ত ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদি এই আবর্জনাগুলোকে আমরা বায়োচারে রূপান্তর করতে পারি তাহলে বর্জ্য থেকে একটি সম্পদে পরিণত হবে এবং আমাদের পরিবেশও দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাবে।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন কারণে মাটি থেকে নাইট্রোজেন ক্ষতিগ্রস্ত হয় যা আমাদের দেশে কৃষি সেক্টরের অন্যতম বড় সমস্যা। নাইট্রোজেন লসের ফলে মাটি নাইট্রোজেন ধরে রাখতে পারে না। যার কারণে ফসলের উৎপাদন ধরে রাখতে প্রচুর পরিমাণ ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয়। অন্যদিকে, অতিরিক্ত ইউরিয়া ব্যবহারে মাটি ও পানির পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। আমরা যদি মাটিতে ‘বায়োচার’ যুক্ত করি তাহলে নাইট্রোজেনের উদ্বায়ীকরণ প্রক্রিয়া কমে যায় এবং অনেকাংশে লস রোধ করা যায়। মাটিতে যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মাইক্রো পোর (ছিদ্র) আছে এগুলো দিয়ে পানি, নাইট্রোজেনসহ অন্যান্য খনিজ পদার্থ নিঃসরিত হয়। বায়োচারের ছিদ্র মাটির ছিদ্রের চেয়ে ছোট হওয়ায় এগুলোর নিঃসরণ কমিয়ে দেয়। ফলে বায়োচার ব্যবহারে মাটি বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ ও পানি গাছের ব্যবহার উপযোগী রূপে আটকে রাখতে পারে।

একইভাবে বায়োচার নাইট্রোজেনসহ অন্যান্য প্রকার সারের নিঃসরণ কমিয়ে গাছের সার গ্রহণের দক্ষতা বৃদ্ধি করে। বায়োচার মাটিতে থাকা হেভি মেটাল ও অন্যান্য দূষিত পদার্থকে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বন্ধনের মাধ্যমে আটকে রাখে। যার ফলে এই পদার্থগুলো উদ্ভিদের অভ্যন্তরে প্রবেশে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এছাড়াও লবণাক্ততা ও খরায় গাছের ফলন বৃদ্ধিতে বায়োচার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। বায়োচার উদ্ভিদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় খনিজ পদার্থ ও পানি ধরে রাখতে পারে যা টেকসই ফসল উৎপাদন করে কৃষিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। সর্বোপরি বায়োচারের মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গ্রিন হাউস গ্যাস কমায়, বৈষ্ণিক উষ্ণায়ন কমায় এবং চক্রীয় জৈব চাষাবাদ ও অর্থনীতিকে প্রণোদিত করে।

আর্টিকেলটির সম্পর্কে মেহেদী বলেন, আমরা আর্টিকেলটিতে দেখানোর চেষ্টা করেছি কীভাবে জৈব বর্জ্য থেকে বায়োচার প্রস্তুত করা হয়, এসব বায়োচারের কি কি ধরনের বৈশিষ্ট্য ও উপাদান রয়েছে। এছাড়াও পাইরোলাইসিস তাপমাত্রার পরিবর্তনে বায়োচারের গুণাগুণের কি কি পরিবর্তন হয় এবং টেকসই সার হিসেবে গাছের বৃদ্ধি ও উৎপাদনে কি ধরনের প্রভাব ফেলে তার বৈজ্ঞানিক সত্যতা তুলে ধরেছি।

শেকৃবিতে ‘বায়োচার’ নিয়ে বেশ কয়েকটি গবেষণা আন্তর্জাতিক জার্নালগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে। মেহেদী ও তার গবেষকদল মনে করে আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশে ‘বায়োচার’ নিয়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে গবেষণা হওয়া দরকার।

;