১৫ বছরে জাবির হলগুলো টর্চার সেলে পরিণত হয়েছে: অধ্যাপক শামছুল



জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা ২৪.কম

ছবি: বার্তা ২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

গত ১৫ বছরে প্রতিটা হল টর্চার সেলে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যে বিচারহীনতা চলছে তার প্রভাব এখানে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামছুল আলম।

মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়া‌রি) সকাল ৯টায় দ্বিতীয় দিনের মতো প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে ৫ দফা দাবিতে নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের অবরোধ কর্মসূচি পালনকালে এসব বলেন তিনি।

শামসুল আলম ব‌লেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে মাদকমুক্ত করতে হবে আর অছাত্রদের সরিয়ে দিতে হবে। প্রশাসন আমাদেরকে বলেছিল, পাঁচ কর্মদিবসে অছাত্রদের বের করে দিবে। কিন্তু তারা সেটা পারেনি। প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ঢাকায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।

'এই প্রশাসন তাদের ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারে না এটাই তারা উপলব্ধি করতে পারছে না' মন্তব্য করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি ও প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, এক পৈশাচিক ঘটনা জাবির অনেকগুলো ব্যাধিকে দায়িত্বশীলদের সামনে তুলে ধরেছে। এই সংক্রামক ব্যাধিগুলো দূর করা যাবে না এটা এমনও না। এটা অবশ্যই দূর করার মত। কিন্তু এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে যে দায়িত্বশীল হতে হবে সেই দায়িত্বশীলতা আমরা দেখিনি। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কোনো তৎপরতাও আমরা দেখতে পাচ্ছি না।

এ সময় নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী কনোজ কান্তি রায় বলেন, এই ক্যাম্পাসে একজন বৈধ শিক্ষার্থী থাকার জায়গা পায় না, পড়ালেখার জন্য টেবিল–চেয়ার পায় না। অন্যদিকে কিছু অবৈধ শিক্ষার্থী ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে তাদের সঙ্গে লেজুড়বৃত্তি করে হলে থাকছে, যার ফলে বৈধ শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের (একাংশ) আহ্বায়ক আলিফ মাহমুদ বলেন, আমাদের যে দাবি তা যৌক্তিক। অছাত্রদের বের না করে বরং প্রশাসন নিয়মিত শিক্ষার্থীদের হয়রানি করছে। নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার নিশ্চিতসহ তাকে সহায়তাকারী, বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের ঘটনার দায়ে প্রক্টরের পদত্যাগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনের সহায়তায় ২০১৭ সাল থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয় মাদকের রাজ্যে পরিণত হয়েছে।

এ সময় সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমেনা ইসলাম, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নূরুল ইসলাম প্রমুখ।

   

রাবিতে কর্মচারীকে মারধর: অভিযুক্তদের শাস্তির সুপারিশ



রাবি করেসপন্ডেট, বার্তা ২৪.কম, রাজশাহী
রাবিতে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনায় তদন্ত কমিটি

রাবিতে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনায় তদন্ত কমিটি

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) কর্মচারীকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তির সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।

মঙ্গলবার (১৪ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ সোহরাওয়ার্দী হল প্রশাসনের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান প্রাধ্যক্ষ ড. জাহাঙ্গীর হোসেন।

প্রাধ্যক্ষ ড. জাহাঙ্গীর জানান, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাবিতে ১১ মে ও ১৩ মে রাতভর ছাত্রলীগের দু'পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা হল প্রশাসনের নজরে আসে। জড়িতদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিকে দুই কার্যদিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া হলের অনাবাসিক সকল শিক্ষার্থীকে আগামী ১৬ মে দুপুর ১২টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়।'

তদন্ত কমিটিতে সোহরাওয়ার্দী হলের আবাসিক শিক্ষক ড. অনুপম হিরা মন্ডলকে আহ্বায়ক এবং ড. ফারুক হোসেন ও তানভীর ভূইয়া সদস্য করা হয়।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. অনুপম হিরা মন্ডল বলেন, 'কর্মচারীর অভিযোগ ও সিসি টিভি ফুটেজ যাচাই করে ঘটনার সত্যতা মিলেছে। ফলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইনে শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে। আবাসিক শিক্ষার্থী না হওয়ায় হল প্রশাসন সরাসরি কোনো শাস্তি দিতে পারেনি। তবে সংশ্লিষ্ট বিভাগে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।'

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১১ মে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের নেতা নিয়াজ মোর্শেদ ও শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্যানেলের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। রাতভর ককটেল বিস্ফোরণ ও অস্ত্রের মহড়া দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনার জেরে সকালে সভাপতি-সম্পাদক প্যানেলের নেতা আতিকুর রহমান এবং শাখা ছাত্রলীগের কর্মী শামসুল আরিফিন খান সানি ও আজিজুল হক আকাশসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজন হলে যান এবং নিয়াজকে তথ্য দেওয়ার অভিযোগ তুলে হলের কর্মচারী মনিরুল ইসলামকে মারধর করে। এঘটনায় সেদিনই হল প্রশাসনকে এই নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন তিনি। সভায় সেই অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের শাস্তির সুপারিশ করা হয়।

;

ডোনাল্ড লু'র আগমনের প্রতিবাদে জাবিতে মানববন্ধন



জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ডোনাল্ড লু'র আগমনের প্রতিবাদে জাবিতে মানববন্ধন

ডোনাল্ড লু'র আগমনের প্রতিবাদে জাবিতে মানববন্ধন

  • Font increase
  • Font Decrease

মার্কিন সরকারের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী 'ডোনাল্ড লু'র ঢাকা আগমনের প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের একাংশের নেতা-কর্মীরা।

মঙ্গলবার (১৪ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন মূল সড়কে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধন শেষে শহীদ মিনার থেকে একটি মিছিল বের হয়ে মূল সড়ক দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবন সংলগ্ন মুরাদ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।

মানববন্ধনে ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকার একদিকে গাল ভরে বলছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রশ্নে আপোষহীন, এই যুদ্ধ বন্ধ হওয়া দরকার। আরেকদিকে হোটেল শেরাটনে বসে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কিভাবে বাণিজ্য করা যায় সেটা নিয়ে কথা বলছে। এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই ইসরাইলের একমাত্র মদদদাতা ও অস্ত্র সরবরাহদাতা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবে ফিলিস্তিনের একের পর এক বোমাবর্ষণ হচ্ছে এবং নারী ও শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। ফিলিস্তিনের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইসরায়েল গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কিভাবে বাণিজ্য করা যায় বাংলাদেশ সেই আলাপ-পরামর্শ করছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকার সারাদেশে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে গণসমর্থন গড়ে তোলার কাজ করছে সেই সরকার আরেকদিকে ইসরায়েলের কাছ থেকে নজরদারির যন্ত্রপাতি কিনছে। আমরা এই দ্বিচারিতার প্রতিবাদ জানাই।

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বুকে দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারকে অগ্রাহ্য করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের স্বার্থে তাদেরকে বিনামূল্যে পড়াশোনার সুযোগ করে দিতে স্কলারশিপ দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদেরকে সমর্থন জানাতে পারে তাহলে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ঐতিহাসিক সংহতিবোধের জায়গা থেকে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন নিশ্চুপ? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন হল ও পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত সুবিধা থাকা সত্বেও প্রশাসন কেন ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ দেওয়ার ব্যাপারে নিশ্চুপ তা আমাদের অজানা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপে পড়ার সুযোগ দিয়ে উদারতা ও সম্মান দেখিয়েছে। আমরা চাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের ডেকে এনে পূর্নাঙ্গ স্কলারশিপে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হোক। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই তাদেরকে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হোক। সম্ভব হলে বিশেষ বিবেচনায় এই শিক্ষাবর্ষেই তাদেরকে সুযোগ দেওয়া হোক।

ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের একাংশের সহ-সভাপতি আশফার রহমান নবীন বলেন, বাংলাদেশের শাসক শ্রেণি কি চায় আমরা সেটি নিশ্চিত নয়। বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে আমরা তাদের দ্বিচারিতা লক্ষ্য করি। তারা একদিকে ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলছি, অন্যদিকে গোপনে ইসরায়েলের কাছ থেকে নজরদারি প্রযুক্তি কিনছে। যাতে তারা বাংলাদেশের গণমানুষের, বিরোধী মতের, বিরোধী পক্ষের ও সরকারের গঠনমূলক সমালোচকদের মুখ চেপে ধরে রাখতে পারে ।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) জবি শাখার সংগঠক সজীব আহমেদ বলেন, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের বর্বর হামলায় প্রতিদিন অসংখ্য নারী ও শিশু নিহত হচ্ছে। ইসরায়েল যুদ্ধের নীতি ভঙ্গ করে হাসপাতালসহ বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালাচ্ছে। মূলত যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধ জারি রেখেছে। ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। আমরা এই মানববন্ধন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরকে সংহতি জানাচ্ছি।

এছাড়াও মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী জাবি শাখার সংগঠক আবিদ ইসলাম, নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফারিয়া জামান ও ইমরান হাসান শুভ।

;

তপ্ত ক্যাম্পাসে কৃষ্ণচূড়া, সোনালু আর জারুলের মুগ্ধতা



আছিয়া খাতুন, রাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম
কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে

কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে

  • Font increase
  • Font Decrease

গ্রীষ্মের তাপদাহে তপ্ত প্রকৃতি। প্রখর রোদে প্রকৃতি যখন পুড়ছে, সেই সময়ে আবির রাঙা রঙে সৌরভ ছড়াচ্ছে রক্তিম কৃষ্ণচূড়া। কেড়ে নিচ্ছে সূর্যের সবটুকু উত্তাপ।

কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে’ গানটির মতো যেন ভুবন ভুলাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরতে পরতে ফুটেছে এই টুকটুকে লাল কৃষ্ণচূড়া।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি খ্যাত এই ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে আরও কয়েকগুন। ঈদের ছুটি শেষে ক্যাম্পাসে আসা শিক্ষার্থীদের প্রকৃতির অপরূপ রূপে রাঙিয়ে দিতেই যেন পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে লাল কৃষ্ণচূড়ার পসরা সেজেছে। নয়নাভিরাম এসব দৃশ্য দেখে দাবদাহের মাঝে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনে এনে দিচ্ছে শিল্পের দ্যোতানা। এ যেন সিঁদূর লাল রঙে শিল্পীর রঙ-তুলিতে রাঙানো ক্যানভাস।

বছর জুড়ে সেজে থাকা মতিহারের ৭৫০ একরের এই সবুজ চত্ত্বরে আগুনঝড়া কৃষ্ণচূড়ায় এক নতুন নান্দনিকতা যোগ করেছে। শুধু কি কৃষ্ণচূড়া! এর সঙ্গে আরও ডানা মেলেছে ‘বাংলার চেরি’ খ্যাত বেগুনি জারুল আর ঝরনার ন্যায় হলদে সোনালি আভা ছড়ানো সোনালু। তপ্ত গ্রীষ্মের প্রখর তাপে সকল রুক্ষতা ছাপিয়ে কৃষ্ণচূড়া, জারুল আর সোনালুতে পুরো ক্যাম্পাস সেজেছে বর্ণিল সাজে। চোখ ধাঁধানো এসব ফুলের বর্ণিল আভায় প্রত্যেকের নয়ন জুড়ায়। এ যেন হলুদ, লাল আর বেগুনি রঙে রাঙানো এক স্বর্গরাজ্য।

সোনালুর দোল লেগে প্রকৃতির প্রাণ দোলে

ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেটের ডান পাশের দুটি গাছে, ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের পেছনে বৃহদাকার প্রায় ১৫টি গাছে, পূর্বপাড়া মসজিদের সামনে, বধ্যভূমি এলাকার পুকুর পাড়ে, নির্মাণাধীন শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান হলের পশ্চিম পাশে, স্টেশন বাজারে, পরিবহণ মার্কেটে, সত্যেন্দ্রনাথ বসু একাডেমিক ভবনের প্রবেশ পথে, শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ সিনেট ভবনের সামনে, উপাচার্য বাসভবনের ভেতরে এবং প্যারিস রোড সংলগ্ন বাইরের প্রাচীরের ধার ঘেষে প্রায় ১১টি গাছে, মন্নুজান হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল, বেগম খালেদা জিয়া হল, তাপসী রাবেয়া হল এবং রোকেয়া হলের সামনেসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ফুটে থাকা লাল কৃষ্ণচূড়া তার আশপাশের এলাকাকে রাঙিয়ে তুলেছে।

কৃষ্ণচূড়া ছাড়াও ক্যাম্পাসের জারুল স্ট্রিট খ্যাত প্যারিস রোড থেকে বেগম খালেদা জিয়া হল হয়ে নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা হলের রাস্তার দুই ধারে এবং চারুকলা থেকে ফ্লাইওভার পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে শোভা পাচ্ছে বেগুনি জারুলের ঝুমকো। এছাড়া ক্যাম্পাসের জুবেরী মাঠের পশ্চিম পাশে ফুটেছে কিছু সোনালু। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী বা দর্শনার্থীদের যেন হৃদয় কেড়ে নিচ্ছে নয়ন জুড়ানো এসব কৃষ্ণচূড়া, জারুল ও সোনালু ফুল। সকালে এসকল গাছের নিচে ঝরে পড়া রক্ত লাল, বেগুনি এবং হলুদ পাপড়ি যেন বর্ণিল পুষ্পশয্যা। এসব গাছের নিচে শিক্ষার্থীরা আড্ডা আর খুনসুটিতেও মেতে উঠার পাশাপাশি বাহারি পোশাকে ফ্রেমবন্দিও করছেন নিজেদেরকে।

কৃষ্ণচূড়ার সাথে নিজেদেরও ফ্রেমবন্দি করছেন শিক্ষার্থীরা

কৃষ্ণচূড়া, জারুল ও সোনালুর এই বর্ণিল সময়টা উপভোগ করছেন জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী পরমা পারমিতা বলেন, ‘বর্তমানে ক্যাম্পাসের বেশিভাগ জায়গায় সবুজের মধ্যে তপ্ত রোদে আগুনের মতো জ্বলছে লাল কৃষ্ণচূড়া। অসম্ভব সুন্দর বেগুনি রঙের থোকা থোকা জারুল ফুলও এসময় ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় দেখি সবুজ পাতা ছাপিয়ে সোনালি রঙের ফুলে সেজেছে সোনালু গাছ। বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে কৃষ্ণচূড়া আর জারুল যে রং ছড়িয়েছে তা চোখে না দেখলে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে সুন্দরভাবে উপভোগ করছি এই সময়টা।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী সুমাইয়া বিনতে নূর বলেন, গ্রীষ্মের তপ্ত রোদে রক্তের মতো টকটকে লাল কৃষ্ণচূড়া আর জারুল ফুল দিয়ে আচ্ছাদিত হয়েছে পুরো ক্যাম্পাস। রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে গেলে মনে হয় এক টুকরো স্বর্গ। এসব দৃশ্য স্বচক্ষে দেখলে, কেউ মুগ্ধ না হয়ে পারবে না। সকালের দিকে মেয়েদের হলের রাস্তাগুলোতে পড়ে থাকা কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ি দেখে যেন পুষ্পশয্যা মনে হয়। এককথায়, কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম আভা আর জারুল ফুলের বেগুনি পাপড়ির নমনীয়তা ক্যাম্পাসকে রাঙিয়ে তুলছে।

উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া। এর আদিনিবাস মাদাগাস্কার হলেও ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, পাকিস্তানসহ অনেকে দেশেই এর বিস্তৃতি। কৃষ্ণচূড়া লাল, হলুদ ও সাদা রঙেরও হয়ে থাকে। তবে আমাদের দেশে লাল ও হলুদ রঙের ফুল দেখা গেলেও সাদা রঙের কৃষ্ণচূড়া দেখা যায় না। জারুল ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম লেজারস্ট্রোমিয়া স্পেসিওসা। জারুল ভারতীয় উপমহাদেশের নিজস্ব বৃক্ষ। বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও চীন, মালয়েশিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে জারুলের সন্ধান মেলে এবং সোনালু ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম ক্যাসিয়া ফিস্টুলা; যা ভারতীয় উপমহাদেশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাওয়া যায়। এটি অমলতাস নামেও পরিচিত।

গাছজুড়ে শুধু ফুল আর ফুল, এ যেন প্রকৃতির অলংকার

বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মাহবুবুর রহমান বলেন, কৃষ্ণচূড়া, সোনালু, ক্যাসিয়া প্রজাতির বেশকিছু ফুলসহ জারুল এবং রুদ্রপলাশ এ সময়ে ফোটে। গ্রীষ্মকালে এসকল ফুল প্রকৃতিকে শোভামন্ডিত করে। এগুলো উদ্ভিদগুলো মূলত শোভাবর্ধনকারী বা অর্নামেন্টাল প্ল্যান্ট। এসব উদ্ভিদের কাঠের তেমন গুরুত্ব নেই। যেহেতু ফুল সকলেরই ভালো লাগে। ফুল দেখলে সকলেরই মন ভালো হয়ে যায়। তাই এই উদ্ভিদের ফুলগুলো গ্রীষ্মকালে সকলের মন প্রফুল্ল রাখে।

শিক্ষার্থী হিসেবে একটাই চাওয়া, বসন্তের শেষে গ্রীষ্মের আগমনী বার্তা নিয়ে বার বার ক্যাম্পাসের প্রকৃতিকে নতুন করে সাজিয়ে তুলুক রক্তিম কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুল ও সোনালী আভা ছড়ানো সোনালু। প্রখর রোদের তপ্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছড়াক নান্দনিক সৌন্দর্য। বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে কঠিন সময়েও কৃষ্ণচূড়া, জারুল আর সোনালুর মতো সুভাস ছড়াক এখানের শিক্ষার্থীরাও।

;

ব্লাড ক্যান্সারে ঝরে গেল ইবির মেধাবী শিক্ষার্থী ‘ফুল’



ইবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। ওই শিক্ষার্থীর নাম সামিয়া আক্তার ফুল। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের প্রথম স্থান অধিকারী শিক্ষার্থী।

মঙ্গলবার (১৪ মে) সকালে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার বাসা পাবনা জেলার সদর উপজেলায়। ৩ ভাইবোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। গণিত বিভাগের সভাপতি তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সহপাঠী সূত্রে জানা যায়, ভর্তি পরীক্ষার সময় থেকেই সামিয়া অসুস্থ ছিল। তবে তখন ক্যান্সার ধরা না পড়লেও এবছর রোজার মাস থেকে সে আবারও অসুস্থ হয়ে যায়। চিকিৎসাকালীন সময়ে তার কাশির সাথে ব্লাড যাচ্ছিলো, রক্তের ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্ত জমাট বাধছিল। সর্বশেষে বমির পাশাপাশি সে শক্ত কোনো খাবারও খেতে পারছিলো না। এছাড়াও সে এনিমিয়াতেও আক্রান্ত ছিল।

সামিয়ার বান্ধুবি জেরিন আক্তার মিম বলেন, সামিয়া আমার ছোটবেলার বান্ধবী। ফুলের মতোই হাসিখুশি মেয়ে হওয়ায় ওর ফুল নামটা সবার পছন্দের ছিল। আমাদের স্কুল, কলেজ একসাথে ছিল। ইবিতেও আমরা একসাথেই এসেছিলাম। আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছিনা যে ও আর নেই। সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন।

সামিয়ার মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিভাগের পক্ষ থেকে শোক জানানো হয়েছে। বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. সজীব আলী বলেন, সে বিভাগের প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিল। রোজার আগে সে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে যাবে বলে জানায়। কিন্তু আজ সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছে। তার মতো এমন এক মেধাবী শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে আমরা গভীর শোকাহত। তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

;