‘বাঁচলে নদী বাঁচবে দেশ, বাঁচবে অস্তিত্ব’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশ-পরিবেশ রক্ষা জাতীয় কমিটির উদ্যোগে 'বাঁচলে নদী বাঁচবে দেশ, বাঁচবে অস্তিত্ব' শীর্ষক একটি মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (২৯ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত চবির সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সেমিনার কক্ষে প্রায় ২ ঘণ্টার এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোখলেছুর রহমান, প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশ-পরিবেশ রক্ষা জাতীয় কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক শফিকুর রহমান, ব্রহ্মপুত্র রিভারকিপার ও নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতি ইবনুল সাঈদ রানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের ডেপুটি ডিরেক্টর নাজির আহমেদ সিমাব এবং চবির যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খ. আলী আর রাজিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী।
মোখলেছুর রহমান বলেন, ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গা (পদ্মা) নদীর মাধ্যমে আমাদের এই বাংলাদেশের জন্ম। এজন্য আমরা নদীমাতৃক দেশ। এদেশের প্রথম দু'টি নদী হলো পদ্মা ও ব্রম্মপুত্র। দু'টির অস্তিত্বই আজ হুমকির মুখে। ইতোমধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর প্রায় ৪৭৪বার ভূমিকম্প হয়েছে, গতিপথ পাল্টেছে। তাছাড়া, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দিনদিন নদীগুলোর তলদেশ ভরাট হচ্ছে। এর থেকে উত্তরণ করতে না পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিপদ আরো ঘনীভূত হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা নদীর গুরুত্ব এখনো বুঝতে পারছি না।
তিনি বলেন, যদি নদীকে আমরা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারতাম তাহলে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারাদেশে এত ফ্লাইওভারের প্রয়োজন হতো না। আমরা জানি, যে সিমেন্ট দিয়ে ফ্লাইওভারগুলো বানানো হচ্ছে সেগুলোর মেয়াদ সর্বোচ্চ ৮০ বছর। তার মানে ৮০ বছর পর এগুলো ভাঙার জন্য আবার বাইরে থেকে টাকা ঋণ করে আনতে হতে পারে। নদীপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা করতে পারলে এসবের প্রয়োজন হতো না।
ভারতের কেরালা রাজ্যের দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে তিনি বলেন, সমগ্র ভারতের মধ্যে কেন্দ্র থেকে অনেক দূরবর্তী হলেও রাজ্যটি এগিয়ে আছে। এর কারণ হচ্ছে তারা তাদের রাজ্যটিকে বসবাস উপযোগী করেছে। তারা বিদেশমুখী এমনকি রাজধানীমুখীও হয় না। তাদের রাজ্যে যে ধরনের শিক্ষা প্রয়োজন সেরকম করে তারা শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে। তারা লেখাপড়া করার সময় এটা চিন্তা করে না যে ইউরোপ আমেরিকার কি উপকার হবে বরং তারা চিন্তা করে কেরালার কি উপকার করা যায়। তাদের এইসব চিন্তা থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে। আমরা শিল্প কারখানায় কিছু পণ্য উৎপন্ন করে অল্প লাভে বিদেশে রপ্তানি করছি। আর বর্জের বিশাল একটা ভাগাড় আমাদের নদীগুলোতে ঢেলে দিচ্ছি। এতে করে যেমন আমাদের নদীগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তেমনি পরিবর্তন হচ্ছে জীববৈচিত্র্যের।
মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যার জন্মই হয়েছে নদীর অববাহিকায়। সরকারি হিসেব মতে, দেশে মোট নদীর সংখ্যা ৪০৫টি। যদিও মূল সংখ্যা আড়াই হাজারেরও বেশি। দুঃখের বিষয় ২৬ মাইল দীর্ঘ হবিগঞ্জ বানিয়াচংয়ের শুটকি নদী আদালতের রায়ে ১৯৭৩ সালে নদীর মালিকানা এক ব্যক্তিকে দিয়ে দেওয়া হয়। ফলে একটা নদীর মালিক হয়েছে একজন ব্যক্তি, যেটা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। বর্তমানের অসুস্থ পরিবেশে এসেও যদি আমরা সিদ্ধান্ত না নেই এ অবস্থা পরিবর্তনের, তাহলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম নিঃশ্বাসটা পর্যন্ত নিতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, নদীগুলোকে হুমকির মুখ থেকে রক্ষার জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। উত্তরের হাওয়ায় গণতন্ত্র ভেসে আসবে আমাদের, এই চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। যেই যুবক সমাজ পরিবর্তনের মাধ্যমে রাজনীতির পরিবর্তন হবে, এটা চিন্তা করে তাকেই আমাদের প্রয়োজন। কিন্তু যে যুবক রাজনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তন হয় এই চিন্তা লালন করে তাদের আমাদের প্রয়োজন নেই।'