চবিতে আয়োজিত হল পিঠা উৎসব
ক্লাস, পরীক্ষা, টিউটোরিয়াল, এসাইনমেন্ট, শাটল ট্রেনে সিট ধরা এরকম নানা চিন্তা নিয়ে শুরু হয় ক্যাম্পাস জীবনের একটি দিন। ছোট ভাই-বোনের সাথে দুষ্টুমি, মা-বাবার বকুনি এবং বেলা শেষে মায়ের হাতের নানা রকম মুখরোচক খাবার সামনে বেড়ে দেওয়ার স্মৃতি গুলো এ সময় কল্পনাতেই থাকে।
শীতকাল আসলেই ধুম পড়তো নানারকম পিঠাপুলি উৎসবের। মাটির চুলার পাশে বসে মায়ের হাতে তৈরি করা নাম জানা-অজানা পিঠা খাওয়ার স্মৃতি কমবেশি সকলেই রোমন্থন করে। কিন্তু ক্যাম্পাস জীবনে এমন ভাগ্য কয়জনেরই বা জোটে! তাই এই এবার একদল তরুণের উদ্যোগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসে হয়ে গেল পিঠা উৎসব।
রোববার (২৮ জানুয়ারি) সকাল ১০ টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার বাংলাদেশের সম্প্রীতি শাখা 'সমান্তরাল' এর উদ্যোগে আয়োজিত হয় এই পিঠা উৎসব।
এ সময় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ২০ টি স্টলে কমপক্ষে ৫০ জন ক্ষুদে উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে সাজানো হয় পিঠা উৎসবটি। এজন্য তাদের পূর্ব থেকেই রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে বরাদ্দ করতে হয় নিজের স্টলটি। সকাল থেকেই দেখা যায় পিঠা প্রেমীদের ভিড়। কয়েকজন উদ্যোক্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা আশানুরূপ সাড়া পেয়েছেন পিঠা প্রেমীদের কাছ থেকে।
উৎসবে প্রায় ১০ রকমের পিঠা বানিয়ে নিয়ে এসেছিলেন রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাদিয়া শরীফ শান্তা, সমাজতত্ত্বের সুমাইয়া ও আই এম এল এর খুকি। তিন বন্ধু মিলে দিয়েছেন একটি স্টলও।
নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে শান্তা বলেন, 'আমরা এখানে যে পিঠাগুলো নিয়ে এসেছি সবগুলো ছিল বাড়িতে বানানো। এটা ছিল আমাদের প্রথম আয়োজন তারপরও আমরা আশানুরূপ সাড়া পেয়েছি। আজকে খুব সুন্দর একটা মুহূর্ত কাটালাম। মধুপুলি, ক্ষীরের পাটিসাপটা, পাউরুটির ঝাল লাড্ডু, তালের পিঠা, খেজুর পিঠা, গুড় নারিকেল পুলি, নারিকেল পাটিসাপটা, পাকন পিঠা, পুডিং, পায়েস সহ আরো কয়েক ধরনের পিঠা ছিল আমাদের কাছে।'
ব্যাংকিং এন্ড ইন্সুরেন্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী রুনজিলা ইসলাম মিতুল জানায়, 'আমাকে এই পিঠা বানানোর কাজে আমার খালা, মনি, সুমা, সায়েম সহায়তা করেছেন। আমি প্রায় ৮-৯ প্রকার পিঠা নিয়ে এসেছি। এমন একটা উৎসবে আমাদের হাতে বানানো শীতের পিঠা সবার মাঝে পৌছাতে পারছি যেটা আমার খুব ভালো লাগছে।'
সমান্তরালের কো-অর্ডিনেটর আরমান সাকিব পিঠা উৎসবের ব্যাপারে বলেন, 'বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের মানুষদের মধ্যে সম্প্রীতি প্রচারের জন্যই আমাদের এই সম্প্রীতির উৎসব। আজকে এখানে অনেক শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্ন রকমের পিঠা নিয়ে এসেছে। এর মাধ্যমে যেমন তারা নিজেদের হাতে তৈরি পিঠা অন্যদের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে পারছে, অনুরূপভাবে তাদের মনের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার মনোবাসনা রোপন হচ্ছে। আমাদের এই সংগঠন বিভিন্ন সম্প্রীতিমূলক কাজ করে থাকে আজকের উৎসবটি তার মধ্যে অন্যতম একটি কার্যক্রম।'
এ সময় বন্ধুদের নিয়ে পিঠা উৎসব উপভোগ করতে আসেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নওরিন তাবাসসুম। তিনি জানান, 'পিঠা উৎসব আমার কাছে মহা আনন্দের একটি দিন। আমি বন্ধুদের সাথে এখানে এসেছি। বেশ কয়েকটি স্টল ঘুরে পিঠা খেয়ে দেখেছি। এখানে কিছু ব্যতিক্রমী পিঠা উপভোগ করার সুযোগ হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে পিঠা খাওয়ার চাইতে বন্ধুদের সাথে সময়টা উপভোগ করা।'
বিকালে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হয় এই উৎসব।